এপার-ওপার
মাঝখানের দরজাটা টুক করে খুলে জিনা ওদিকে গিয়ে দাঁড়াল। চুলগুলো খুলে দিয়েছে। গতকাল খালি মাথার পেছনে একটা পুঁটলি বেঁধে বেঁধে ঘুরে বেড়িয়েছে। কারও সামনে আসেনি। আজ একটু সাহস বেড়েছে, মন খারাপ কমেছে।
‘মাম্পি-ই’ —নাঃ মনে হচ্ছে মাম্পি এ তল্লাটে নেই।
ও কী! ও কী করেছিস রে!—সিঁড়ির তলায় মল্লিকা দাঁড়িয়ে ঊর্ধ্বমুখ। একটা সাধারণ করে পরা নীল খড়কে ডুরে! চুলগুলো পেছন দিকে জড়ো করে একটা না-বড় না-ছোট হাতখোঁপা করা, কয়েকটা ঘুণ্টিওয়ালা রুপোর কাঁটা গোঁজা তাতে, কপালে একটা সিঁদুরের টিপ। এত সুন্দর দেখাচ্ছে যে হঠাৎ যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সৌন্দর্য, সাবলীলতা, অকৃত্রিমতা, কেমন একটা জ্যোতির্মণ্ডল যেন দিদিভাইকে ঘিরে, যার বাইরে সে বোধহয় চিরনির্বাসিত। সে চেয়ে থাকে রুদ্ধবাক যেন কোনও দেবীর দিকে চেয়ে আছে। সত্যি দেবী কি না জানে না, আর কারও দেবী কি না জানে না, কিন্তু তার উপাস্য দেবী। হয়তো শুধু তারই। কেননা ক্রমশই তার ধারণা হচ্ছে সে ছাড়া দিদিভাইয়ের পূর্ণ তাৎপর্য আর কেউই বুঝতে পারেনি। সম্পন্ন পরিবারে একটি মোটামুটি সুন্দর-সুশ্রী বধূর দরকার হয়। তার উৎস বড় ঘর হলে ভাল, না হলে আরও ভাল। সে ক্ষেত্রে তাকে বিনা বাধায় ভোগ করা যায়। বেচারি দিদিভাইয়ের বাপের বাড়ি যাওয়া নেই। দিদি থাকেন সুদূর চেন্নাই, বাবা মারা গেছেন, কাকা কাকিমা ছাড়া কোনও আত্মীয়স্বজনের কথা আজ পর্যন্ত শোনেনি সে। বৃন্তহীন একটা মানুষ। তর্ক, ঝগড়া, নিজের মতামত জোরদার করে প্রকাশ করা—এসব নেই। তাই বলে কি ও বোবা? না মূর্খ! কোনওটাই নয়। একদিন তার অসীম ধৈর্য নিয়ে জিনা নালিশ করেছিল, তাতে মল্লিকা প্রথমে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে প্রশ্নটা, বলে—তোরই বা ধৈর্য কি কম? আমি তো বুঝি তুই কতটা সইছিস! সবই তো শান্তির জন্যে?
জিনা তারপরেও তাকে চেপে ধরে, বলে, কথা ঘুরিয়ো না দিদিভাই, আমার কথার জবাব দাও।
মল্লিকা বলেছিল, আমি মতামত জাহির করবার মতো করে দিলে কে শুনবে সে মত? কে আমি? কী আমার পরিচয়? গ্রামের কলেজে পড়েছি, বি.এ-টা কমপ্লিট করিনি, সব সময়ে কারও না কারও দয়ায় বেঁচেছি। হ্যাঁ পেতাম তোর মুকুটের মতো কাউকে, তা হলে হয়তো অনেক দিন আগেই কনফিডেন্স আসত। এখন কেউ শুনবে না, আমার অন্য কোনও উপায়ও নেই। কিন্তু একটা না-একটা দিন আসবেই যেদিন আমি বলব, অন্যে শুনবে। ঝুম্পা মাম্পিকে বড় হতে দে।
—কিন্তু তুমি তো এই বাড়ির বড় বউ, গৃহিণী!
—আমার গৃহিণীত্ব ভীষণ ঠুনকো জিনা! সবাই ভাবতে ভালবাসে আমি অক্ষম, আমার জোর কম।
—বাবাও? বাবা যে তোমাকে এত ভালবাসেন!
—ঠিকই, বাবা খুব ভালবাসেন, দিদিভাই দুঃখিত গলায় বলে, কিন্তু ভালবাসা অনেক রকমের হয় জিনা, বাবার ভালবাসাটাতে করুণা মেশানো আছে। বাবার দোষ নেই। মা ছিলেন প্রবল ব্যক্তিত্বের মানুষ, তিনিও ভালবাসতেন। অমনি করুণা মেশানো ভালবাসতেই ভালবাসতেন, সেটাই উনি বাবার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন।
—তা হলে তোমার এই চুপচাপ থাকা, মুখ বুজে কাজ করে যাওয়া, তোমার এত ভুল… তুমি নিজেই বল তুমি অগোছালো… এ সবই তোমার একটা পলিসি?
—দুর, তুইও যেমন…একটু চুপ করে থেকে মল্লিকা বলেছিল,আমার কিছু ভাল লাগে না জিনা। সেই ভাল-না-লাগাটাকে বাগ মানাতেই মানাতেই আমার সময় কেটে যায়। জীবনও কেটে যাচ্ছে।
ভাল-না-লাগাকে বাগ মানাতে মানাতে একটা অদ্ভুত ধরনের বিষণ্ণ ব্যক্তিত্ব এক এক সময়ে ভীষণ প্রকট হয়ে ওঠে মল্লিকার চেহারায়। খুব মাঝে মাঝে। তখন তাকে চেনা যায় না। সেই চেহারা এখন। কথা বলছে পরিচিত অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে। ঘরোয়া ভাষা, ভাব। যেন কিচ্ছুটি জানে না। কিন্তু আসলে সে যেন এক আমূল রহস্যময়ী, ছায়াবৃতা। মল্লিকা শুধু দিদিভাই নয়।
নিজের ঘোরটাকে কাটাতে জিনা তরতর করে নেমে আসে৷ হঠাৎ গলা জড়িয়ে ধরে, দিদিভাই! যাচ্ছেতাই দেখাচ্ছে, না?
—যাচ্ছেতাই দেখাবে কেন? অন্যরকম দেখাচ্ছে! শুধু চুলের জন্যে এমন পালটে যায় চেহারা! আশ্চর্য!
—বদলটা কীরকম বলবে তো?
—তোর মধ্যে একটা দুষ্টু সরস্বতী দুষ্টু সরস্বতী ভাব ছিল, বুঝলি? এখন একটা ক্লিওপেট্রা ক্লিওপেট্রা ভাব এসেছে।
—বাপ রে! তা সে-ও তো দুষ্টুই!
—দুষ্টু কি না জানি না, একটা ক্ষমতা… প্রতাপ৷ ধর যেন ঘরের মেয়ে ছিলি, এখন রাজদণ্ড হাতে নিয়েছিস… গোছের।
—জান তো দিদিভাই— জিনা অমনি গলে জল— ক্লিওপেট্রা শুনলে আর কে না জল হবে! জলের চেয়েও তরল কিছু থাকত তো তাই হত।
—জান। দেড়দিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছি। বাবা কী ভাববেন?
—কী আবার ভাববেন? আর, কিছু যে বলবেন না সেটা তো তুই জানিস।
—বলবেন না। কিন্তু অদ্ভুত চোখে তাকাবেন, তাতেই আমার লজ্জা করবে। তোমাদের এ বাড়ি বড্ড জটিল যাই বল। আমাদের বাড়িতে বড়রা যা বলবার সোজাসুজি বলে, ধমকায় সেটা বুঝি…।
—তা যদি বলিস, এত বড় মেয়েকে ধমকানোই কি ভাল? তার যদি চুল কাটতে ইচ্ছে হয়! এটুকু ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে না!
—ধমকানো মানে কি আর সেরকম সিরিয়াস কিছু? আমার বাবা হলে বলত— ক’দিন আসিসনি আমার সামনে। একটু সয়ে নিতে দে। জেঠিমা হলে বলত—এই যে রূপের ধুচুনি এলেন। এগুলো তো ইচ্ছেয় বাধা দেওয়া নয়। কিন্তু বেশ স্পষ্ট সমালোচনা।
মল্লিকা হেসে বলল, হয়েছে হয়েছে, আমি তো যথেষ্ট সোজাসুজি ধমকালুম! তাতেও হয়নি!
—তুমি তো আর এ বাড়ির নও! —কেমন অভিমানে বলল জিনা, যাই হোক দেখো তো তোমার ফ্রিজে গোটাদুই ডিম আছে কিনা! আমার দেখছি ডিম ফুরিয়ে গেছে। আচ্ছা দুটো কেন ছ’টা থাকলে ছ’টাই দাও। সবটাই করি। —বলতে বলতেই সে চমকে ওঠে। —ওই বেল বাজছে। মুকুট বোধহয় এসে গেল। —দাঁড়াও দিদিভাই… জিনা ছুট লাগাল।
মুকুট এসেছে শুনেই মল্লিকার একটা দুরন্ত আহ্লাদ হয়। কেন যে মেয়েটাকে তার এত ভাল লাগে, কেন যে এত আশ্বাস ওর সান্নিধ্যে তা সে বলতে পারে না। ‘আধুনিকা’, মুকুট আগাগোড়া ‘আধুনিকা’। সে কি মল্লিকার ইচ্ছাপূরণ? আধুনিকা নানান প্রকারের হয়। সাজ-পোশাক-প্রসাধনে চলাফেরায় আধুনিকা একরকম। কথায়বার্তায় মতামতে আধুনিকা সে আরেকরকম। কিন্তু মুকুটের আধুনিকতা একদম স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে ওঠা একটা গাছের মতো। প্রথম যেদিন এল—প্রচণ্ড একটা দুঃস্বপ্নের শেষে! জিনস্ আর শার্ট পরা। সোজা চুল কানের তলা পর্যন্ত ছেঁটে নিয়েছে, পায়ে স্পোর্টস শু। হাতগুলো খালি, শুদ্ধ, নির্মল, ঘাম চকচকে মুখটা রুমাল দিয়ে মুছে নিচ্ছিল। কানে ছোট ছোট রিং। সোজা ভুরু, আকাশের মতো চোখ, একটু থ্যাবড়া নাক। বেশ পুরু, সুন্দর, গোলাপি ঠোঁট। মুখটা যেন ভাবুক বালিকার মতো, পুরো পুরুষ পুরুষ পোশাক সত্ত্বেও কোথাও কোনও উগ্রতা নেই। আসলে ও তো এ দেশের বাইরে বহুদিন কাজ করেছে। এই পোশাকে অভ্যস্ত। এটাতে ওর সুবিধে হয়, তাই অতশত ভাবেনি, এরকমই পরে। বাইরেটা সম্পর্কে এই একেবারে না ভাবা, সোজাসুজি ভেতরে পৌঁছে যাওয়ার অভ্যাসটা কী অদ্ভুত আরামের! যখন মল্লিকার সঙ্গে আলাপ হল, সোজা চোখের দিকে চাইল। —আপনি স্বপ্ন দেখে খুব ভয় পেয়েছিলেন? জিনা বলছিল!
—হ্যাঁ আর বলো না! দুপুরবেলা ঘুমিয়ে পড়লে বড্ড স্বপ্ন দেখি।
—চিৎকার করেন?
—করি। আওয়াজ ফোটে না— বলতে বলতে মল্লিকা হেসে ফেলল, কেন? চিকিৎসা করবে?
—করতেও পারি একটা ব্যবস্থা—হাসিমুখে বলল মুকুট, আমার কিছু ট্রেনিংও আছে কিন্তু…।
এইজন্যে জিনা ডিম চাইছিল? কী করবে? কী? চট করে ভেবে নিল মল্লিকা। একটা বাটি করে ডিমগুলো নিয়ে মাঝের দরজা দিয়ে সোজা চলে গেল জিনার রান্নাঘরে। ওর ফ্রিজে কী আছে? টোম্যাটো, ক্যাপসিকাম, বোতলের মটরশুটি। চিজ, পেঁয়াজ, বাঃ সবই তো আছে। নরওয়েজিয়ান ওমলেট তৈরির ইচ্ছে ছিল বোধহয় জিনার। তো হয়ে যাক। ওদের গল্পের টুকরোটাকরা ভেসে আসছে।
—তুইও তো কেটেছিস!
—আ রে! —বেশ করেছিস! চোখে পড়ল তাই…।
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছিস।
—একদিন যাব মাসিমার কাছে… তুই নিজে নিজেই চলে যাস না… হ্যাঁ রে সেবন্তীর কী খবর?
এইসব টুপটাপ কথাগুলো চারপাশে ঝরে পড়ছে। এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীর দরজায় দাঁড়িয়ে মল্লিকা। কফির উগ্র গন্ধে জিনা ছুটে এল।
—ও মা দিদিভাই!
—হয়ে গেছে —ওমলেট কাটতে কাটতে বলল মল্লিকা, নিয়ে যা… আমি কফি নিয়ে আসছি।
—আচ্ছা মল্লিকাদি, আমাকে জিজ্ঞেস করবে তো! —মুকুট বলল। —জিনা তুই জানবি আমায় কাজে কখন কোথায় ঘুরতে হয়। খিদে পেলেই আমি যেখানেই থাকি ঠিক কিছু-না-কিছু খেয়ে নিই। তাই-ই আমার আলসার হয় না। কফিটা ঠিক আছে… সে কফির কাপটা তুলে নিল।
মল্লিকার করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে মুকুট বলল, ঠিক আছে, যা রং আর চেহারা তোমার ওমলেটের, একটু না খেলে খেদ রয়ে যাবে।
তিনজনেই ওমলেট ভেঙে মুখে দিল। মুকুটের চোখগুলো প্রশংসায় বড় বড় হয়ে উঠেছে। —ইস, মল্লিকাদি একটা দোকান দিলে পার! আজকাল ফাস্ট ফুডের যা চাহিদা!
আগের দিন ‘আপনি’ বলেছিল, আজকে কত সহজে, বিনা অনুমতিতে ‘তুমি’ বলল, জিনার পথ ধরে যে ‘দিদিভাই’ বলল, তা-ও না। মল্লিকাদি! সেই স্কুল কলেজের দিনে নিচু ক্লাসের মেয়েরা যেভাবে ডাকত, তাদের ছাড়া আর কখনও কারও মল্লিকাদি হয়নি তো মল্লিকা। হয় বউমা, নয় মা, নয় মল্লি, নয় দিদি। কতটুকু জগৎটা তার? এখনও কোনও চৌকাঠ পার হতে পারেনি, মুকুটের মতো মেয়ে। সে কখনও দেখেনি। টি.ভি-র পরদায় এই পোশাক কি আর দেখা যায় না! যায়! কিন্তু সেসব পুরোদস্তুর ত্বক-সচেতন, কেশ-সচেতন, পুং-সচেতন পোশাক, পোশাকও, মেয়েও। কে পুরুষের স্পর্শের লোভে ক্রিম মাখছে, কে বিয়ের লোভে ব্রণ সারাচ্ছে, ছোট ছোট মেয়েরা সহপাঠিনীকে ব্রণ-ফুসকুড়ি নিয়ে খেপাচ্ছে! মেয়েদের পৃথিবীটা কি সত্যি এরকম! কে জানে! মল্লিকা জানে না। তার কাছে বাইরের পৃথিবীর খোলা জানলা তো ওই টি.ভি স্ক্রিনই। তার অগোচরে কখন পুরো মেয়ে-পৃথিবীটা এরকম বদলে গেল? নিজের মেয়েদের দেখে অবশ্য অতটা বুঝতে পারে না মল্লিকা। ওদের স্কুল খুব কড়া, এতটুকু অতিরিক্ত সাজগোজ বরদাস্ত করে না। বড় মেয়ে সদ্য কলেজে ঢুকেছে। আরেকটু স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু তার অভ্যেস রয়ে গেছে স্কুলের। শুধু য়ুনিফর্মটাই বাদ। সেই টান টান চুলে বিনুনি। সেই ঘষামাজা তেলা মুখ, টিপ পরতে এখনও ভীষণ লজ্জা। কিন্তু সে হয়তো তারা মল্লিকার মেয়ে বলে, একজন প্রায় অনাথা অতি ভালমানুষ প্রতিবাদহীন গ্রামের মেয়ের মেয়ে। কিন্তু তার খুব ভয় করে। হঠাৎ যদি কোনওদিন দেখে ঝুম্পা তার মায়ের চৌকাঠ পার হয়ে গেছে! চোলি আর হাফপ্যান্ট পরে চোখ মারছে কোনও পুরুষের দিকে চেয়ে! ওদের বয়সি ছেলেরা! তারাও তো টি.ভি-র পরদায় কেমন বদলে যাচ্ছে। কী সুন্দর নবীন সবুজ ছিল, বেড়ে ওঠা ছেলেদের একটা আলাদা খেলাধুলোর জগৎ থাকে। পড়াশোনার ব্যাপারেও, বিজ্ঞান, মেকানিক্স—এসবের আশ্চর্য জগৎটার ভেতর আস্তে আস্তে ঢুকে যায় তারা। মোটরবাইক জড়ো করে মেয়েদের কলেজের বাইরে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিতে তাদের নবীন সবুজ পুরুষত্ব ধাক্কা খায় না? লজ্জা করে না? ড্রাগ নেয় কেন? একটা ফ্যাশন হয়েছে। ড্রাগ নেওয়া। এসব আগে করত মস্তানরা। চিরকালই ছিল। কিন্তু একটা আলাদা জাত। সাধারণত যারা বছরের পর বছর এক ক্লাসে পড়ে থাকত তারাই এসব ড্রাগফাগ খেত, আওয়াজটাওয়াজ দিত। এখন কি মস্তান ছড়িয়ে চারিয়ে গেল সব কিশোরের তরুণের মধ্যে? না কি এ-ও বিজ্ঞাপনের তৈরি। ফিলমের তৈরি একটা ভুয়ো জগৎ! মিথ্যার জগৎ! নিজের সীমাবদ্ধ চলাফেরা দিয়ে সে বুঝতে পারে না।
প্লেটগুলো তুলে নিয়ে সে বলল, তোরা কথা বল, আমি আসছি।
মুকুট বলল, বসো না! কাজ আছে?
জিনা বলল, একটু বসতে তোমার যে কী হয়?
কিন্তু মল্লিকা জানে, মুকুট জিনার খুব বন্ধু। কতদিন বাইরে ছিল। যদি-বা ফিরে এসেছে রোজ রোজ তো আর দেখা হচ্ছে না। ওদের একটু নিজেদের মধ্যে কথা বলার সুযোগ চাই। সে বলল, হ্যাঁ, মেয়েরা যে কোনও সময়ে আসবে, আমি যাই।
—ওরা এসে গেলে, আবার এসো— জিনা বলল।
মুকুট বলল, ঘুরে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে।
একটু পরে জিনার দিকে চেয়ে মুকুট বলল, তোর জন্যে একটা কাজ ঠিক করেছি।
—এরই মধ্যে?
—কেন তুই কি তৈরি নয়?
—না রে! আশ্চর্য লাগল, কাল বললুম আর আজই…।
মুকুট বলল, আমাদের একটা অ্যাডাল্ট এডুকেশন প্রোগ্রাম আছে। দুপুরবেলা যখন ভাতঘুম দিয়ে মোটা হবার সবচেয়ে রিস্ক তখন ক্লাসটা হয়।
—কোথায়?
—এখান থেকে বাস নিয়ে জাস্ট সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ চলে যাবি। ডাইনে হাঁটতে হবে কিছুটা, বাঁ দিকে কয়েকটা গলি পরে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট চিনিস?
—দুর, আমি এদিকে কিচ্ছু চিনি না।
—ঠিক আছে আমি তোকে প্রথম কদিন নিয়ে যাব। ‘বান্ধব সমিতি’ সাইনবোর্ড লেখা একটা ক্লাবঘর পাবি। ওইখানেই একটা গলির মধ্যে। কোর্সটা তোকে পুরোপুরি বুঝিয়ে দেবে একজন। ওই অঞ্চলের মেয়েরা, ধর বারো-তেরো জন আসবে।
জিনা চুপ করে আছে দেখে মুকুট বলল, বাংলা, আর খানিকটা ইংরেজি লিখতে পড়তে বুঝতে শেখানো হয় এদের, আর বেসিক অঙ্ক।
—শহর কলকাতায় থাকে, বাংলা পড়তে লিখতে পারে না এমন লোকও আছে?
মুকুট হাসল, তোদের বাড়িতে কাজ করে যেসব মেয়ে। ওরা? ওরা পারে? জিনা বলল, ওহ। ডলি মলি? ওদের তো বাবা মানে আমার শ্বশুরমশাই-ই লেখাপড়া শেখান। এরা কে রে? বস্তিটস্তির?
মুকুট বলল, না রে এরা গণিকা, যাকে বলিস প্রস্টিট্যুট।
জিনা হাঁ। কিছুক্ষণ কথা বার হচ্ছে না ওর মুখ থেকে। শেষে বলল, মুকুট, প্রস্টিট্যুট আমি কখনও চোখে দেখিনি রে! কীরকম দেখতে হয়।
মুকুট হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না, বলে, জিনা সত্যি তুই আমায় হাসালি। কীরকম দেখতে হয় কী রে? দুটো হাত, দুটো পা আছে আমাদের মতোই…
ঢোঁক গিলে জিনা বলল, গল্প-উপন্যাসে অবশ্য খুব পড়া যায়। ‘বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে’ বলে একটা গল্প পড়েছিলাম। আমার গা এত ঘিনঘিন করেছিল! একটা শিউরে ওঠার ভাব করলে সে।
মুকুট বলল, ‘হিঙের কচুরি’ বলে বিভূতিভূষণের একটা গল্প আছে খুব সুন্দর, পড়িসনি?
জিনা বলল, তুই বললি বলে মনে পড়ল। ব্যাপারটাকে এত ক্যাজুয়ালি নিয়েছেন, নেন এঁরা যে… আমার ভাল লাগেনি, ভাল লাগে না।
মুকুট বলল, কথাটা তুই বেশ নতুন বললি তো? ক্যাজুয়ালি নেওয়া।
—না সত্যিই দেখ, মনুষ্যত্বের এত বড় অপমান, মেয়েদের… নারীত্বের এত কুৎসিত ব্যবহার— এই নিয়ে লেখকরা বেশ বিলাসিতা করেন। ভাল গল্পের মেটেরিয়্যাল। শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’, ‘দেবদাস’-এ কীভাবে গ্ল্যামারাইজ করা হয়েছে ব্যাপারটা। আর তার পরের লেখকরা তো রিয়্যালিজ্মের নামে — উঃ। হ্যাঁ রে, এঁরা কি নিয়ম করে এদের কাছে যাতায়াত করেন?
—দুর—মুকুট হেসে ফেলল, বেশির ভাগই ওপর ওপর দেখে, কল্পনা থেকে লেখা। অনেকে আবার উপাদান সংগ্রহের জন্য যান। শিল্পী লেখকদের সঙ্গে অবশ্য লালবাতি এলাকার একটা যোগ থাকেও মনে হয়। আমি খুব একটা দেখিনি।
—উপাদানটা ব্যবহার করে এঁরা নিজেরা নাম, টাকা পান। আর মেয়েগুলোর কী হয়?
—কিছু হয় না। কিছু হওয়া শক্ত জিনা। একজন দু’জনের চেষ্টায় কী হবে? তাই অনেকে মিলে চেষ্টা করছে। করবি কাজটা?
—আমি? ওদের পড়াতে যাব?
—তাতে কী? তোর মতো কত মেয়ে এদের বিভিন্ন সেন্টারে পড়াচ্ছে। গেলে দেখতে পাবি। কেউ তোর চেয়ে বড়, কেউ ছোট। মানে ভদ্রঘরের, শিক্ষিত। ওখানে তোর ক্লাসরুমের ঠিক পাশেই একটা ক্লিনিকও আছে। সেখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ছোটখাটো চিকিৎসাও হয়।
জিনা বলল, জানলে আমায় কুটে ফেলবে।
—কে? তোর বর?
—আবার কে? অন্যরাও পছন্দ করবে না শিয়োর।
—হ্যাঁ ট্যাবু তো আছেই, তা তুই নিজে? তোর কী মত?
—আমার গা শিউরোচ্ছে। অনেস্টলি বলছি মুকুট।
—তা হলে থাক। অন্য কাজও আমাদের আছে। কিন্তু সেখানে আপাতত ভেক্যান্সি নেই। দূরেও। এটাই তোর সবচেয়ে কাছে ছিল। ঘণ্টা দেড়েক পড়াতিস। একটা থেকে চারটের মধ্যে। সপ্তাহে তিন দিন। তোরও সময় কাটত। একটা স্যাটিসফ্যাকশনও থাকত যে মেয়েদের জন্যে কিছু করলি। সামান্য কিছু উপার্জনও হত। তোর নিজের, একেবারে নিজের উপার্জন।
—তুই এসব কাজের খোঁজ পেলি কী করে?
—বা! আমি এম এসসি-র রেজাল্ট বেরোবার আগেই থাইল্যান্ড চলে গেলাম না? তখন থেকেই এদের নিয়ে কাজ করছি। ডাবলু. এইচ. ও-র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছি। সেই হিসেবে অনেকগুলো এন. জি. ও-তেই উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি।
—তার মানে তোকে পড়াতে হয় না, ওখানে যেতে হয় না, সোজাসুজি ওদের সঙ্গে…।
—না রে জিনা, —বিভিন্ন সেন্টারে পড়ানো, ট্রেনিং, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সবের ওপর হাতেকলমে যে কাজগুলো হয়, সেগুলোর খবরদারি করে কয়েকজন, আমি তাদেরও ওপর খবরদারি করি। এখন বেশির ভাগটাই ডেস্ক ওয়ার্ক। তবে পরিদর্শন করতেই হয় নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর। সমীক্ষা যাকে বলে।
—এইসব ইয়েদের নিয়ে?
—হ্যাঁ।
—কেন করিস মুকুট? যারা জাহান্নমে যাবে ঠিক করে নিয়েছে…
মুকুট তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল, তুই কাগজ পড়িস না!
—পড়িই তো! শব্দজব্দগুলো রেগুলার করি, ক্রস ওয়ার্ড। মিসেলেনিগুলোর ভাল লেখাটেখা থাকলে পড়ি। পলিটিক্স আমি ছুঁই না। আর তো সব খুন, রাহাজানি, রেপ, দাঙ্গা… কী পড়বটা কী?
—এবার থেকে আর একটু ভাল করে পড়বি। দেখবি এখানে সেখানে বাচ্চা মেয়ে বড় মেয়ে পাচার হচ্ছিল। ধরা পড়েছে। গ্রামে, মফস্বলে। এগুলোর মধ্যে কিছু চুরি, কিছু জোচ্চুরি, আবার কিছু জেনেবুঝে নিজের লোকেরা বিক্রি করে দিয়েছে।
—বলিস কী? নিজের লোকেরা? মানে? মানুষ বিক্রি করা যায় নাকি?
—যায় না। কিন্তু জিনিসটা হয়। এরাই প্রধানত লালবাতি এলাকায় এসে পড়ে। তুই কখনও পড়িসনি?
—ইস মুকুট, পড়েছি হয়তো, সেভাবে মাথায় ঢোকেনি।
—শুনে রাখ জিনা দারিদ্র আর অশিক্ষার প্রথম শিকার মেয়েরা। দরিদ্র ঘরে যেই একটা মেয়ে জন্মাল অমনি তাকে নিয়ে যা-খুশি করবার অধিকার জন্মে যায় তার পুরুষ অভিভাবকদের। তার মা ঠাকুমা যারা কর্ত্রীপদে আছে তারাও সেইমতোই আচরণ করে। সবচেয়ে কম খাবার তার জন্যে নির্দিষ্ট হয়, সবচেয়ে বেশি কাজ। কোনও সময়েই ভারবাহী পশুর চেয়ে বেশি তাকে মনে করা হয় না। উপরন্তু এই পশু যেটুকু যত্ন পায়, এরা তা-ও পায় না। কিন্তু মেয়েরা দুগ্ধবতী গাভীর মতোই লাভজনক। যৌবনোদগম হলেই সে যৌন পণ্য। তাকে নানারকম দামে বিক্রি করা যায়। যত অল্প বয়স হবে ততই লাভ। ধর ন-দশ বছরের…
—প্লিজ মুকুট…
—এ কী জিনা, তুই কাঁদছিস? আ রে কাঁদিসনি, কী ছেলেমানুষ তুই? কত রকমের অত্যাচার, পাশবিক, নৃশংস, চলছে কত কাল থেকে তার তুই কিছুই জানিস না। ছেলে-শিশুদের দিয়েও ব্যবসা আছে। যৌন-ব্যবসা, জকি-ব্যবসা, ভিখারি-ব্যবসা! সেসব শুনলে তো অজ্ঞান হয়ে যাবি!
—তোরা এদের জন্যে কাজ করছিস? —অনেক টাকাপয়সা লাগে তো! কোথা থেকে পাস? জিনা ভিজে গলায় বলল।
—অনেক সোর্স থেকে আসে। বিভিন্ন ধনী দেশ দেয়, অনেক প্রতিষ্ঠান দেয়, ব্যক্তি দেয়। ধর একজন বারবনিতা তাঁর অনেকখানি জমি আমার এক বন্ধুকে দিয়েছেন এদের ছেলেমেয়েদের জন্য একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে।
—শেষেরটা বুঝলুম— জিনা বলল। কিন্তু ধনী দেশটেশ দেবে কেন? ওরা তো খালি নিজেদেরটাই বোঝে।
—কথাটা ‘তুই’ বললি? —হাসিমুখে মুকুট তাকায় জিনার দিকে।
—কেন, কী হয়েছে?
—না, তুই বললি না খালি ‘শব্দজব্দ’ ‘ক্রসওয়ার্ড’ এসব করিস! তা তুই যেখান থেকেই তোর এ জ্ঞান সংগ্রহ করে থাকিস জিনা, তোর হবে।
—ঠাট্টা করছিস?
—না রে। ঠাট্টা করিনি। আসলে জিনা, পৃথিবীটা, সরি মানুষ খুব জটিল আর মিশ্র জীব। বড় বড় ব্যবসাদার যারা ওষুধে ভেজাল মেশায়, দুধে খড়ির গুঁড়ো, কিংবা যারা কর্মচারীদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করে তারাই দেখবি কাঙালিভোজন করায়, কুম্ভে গঙ্গাসাগরে সাধুদের ভাণ্ডারা দেয়, লঙ্গরখানা খোলে। সবটাই যে পুণ্যের লোভে তা নয়। একটা কীরকম বিবেকের তাড়াও ভেতরে ভেতরে থাকে। তেমনই যে দেশ নানাপথে নিজেদের মজুত অস্ত্র বিক্রি করে আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে, বাতিল ওষুধ বাতিল শস্য পাঠিয়ে সংকট সৃষ্টি করছে, তারাই আবার অনাথ শিশুদের কল্যাণের জন্যে টাকা দেয়।
—একেবারে নিস্বার্থ? মুকুট আমার বিশ্বাস হয় না।
—তুই ঠিকই বলেছিস, গণিকাদের ব্যাপারে ওদের প্রধান স্বার্থ এডস-নিবারণ। এডস তো পুরো সভ্যতার মৃত্যুদূত হয়ে দেখা দিয়েছে কিনা! পীতরা, কালোরা, ব্রাউনরা গেলে হয়তো সাদাদের কিছু এসে যায় না। কিন্তু সাদারাও তো বাঁচবে না বাঁচছে না, তা এইভাবেই একটার সঙ্গে আরও অনেক ইস্যু জুড়ে যায়। স্বাস্থ্য, বিশেষত যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান কনডোমের ব্যবহার… তারপরে ধর চাইল্ড লেবর নিষিদ্ধ করার পেছনেও ওদের মার্কেট বিষয়ক কোনও স্বার্থ কাজ করতে পারে। কোনটাই যে শুধু স্বার্থ এমন কথা বলা শক্ত। বিক্রির স্বার্থই যে একমাত্র সবসময়ে তা নয়। যা-ই হোক। যা-ই থাক। যা পাচ্ছি, সেটাকে ব্যবহার করে যদি কাজের কাজ কিছু করতে পারা যায় তো মন্দ কী? চতুর্দিকে প্রচুর প্রতিষ্ঠান, স্বার্থলোভী লোক সব হন্যে হয়ে ঘুরছে, গ্রান্টটান্ট জুটিয়ে যদি নিজেরটা গুছিয়ে নিতে পারা যায়। আবার সত্যি সত্যি কাজ করতে চায় এমন লোকও আছে।
—তুই নিজের সারা জীবনটা এইভাবে উৎসর্গ করবি?
—আ রে! উৎসর্গটর্গ নয়। এটা আমার পেশা। ঠিক যেমন লোকে ব্যাকটিরিয়া নিয়ে, জিন নিয়ে রিসার্চ করে, আমিও তেমন করছি। যে কোনও কাজে পেশাদারি দক্ষতা দরকার হয়, অধ্যাপনা, ম্যানেজমেন্ট, হিসেবনিকেশ সবেতে। এটাতেও তেমনি। শুধু স্যাক্রিফাইস দিয়ে বা আইডিয়ালিজ্ম্ দিয়ে কিছু হয় না রে! জনকল্যাণ কিছু চাকরিও তো সৃষ্টি করছে!
—যেমন এই অ্যাডাল্ট এডুকেশনের টিচারদের?
—রাইট। আমি এবার চলি রে জিনা, কাল খুব সকালে ট্রেন ধরতে হবে।
—তুই রাগ করলি?
—না, রাগ করব কেন! এটাই গড়পড়তা রি-অ্যাকশান। ও ভাল কথা, মল্লিকাদিকে একটু ডাক তো!
একটু পরে মল্লিকা এসে দাঁড়ালে মুকুট বলল, মল্লিকাদি, তোমার সেই বাঘের স্বপ্নটা যে সেদিন শুনলাম, ওটা নিয়ে অনেক ভেবেছি জান! যে ভাবেই ভাবি একটা ব্যাখ্যাতেই পৌঁছোচ্ছি।
মল্লিকা বলল, দূর, তুমি ও নিয়ে ভাবা ছেড়ে দাও। ওর কোনও মানে নেই।
—নাঃ, মানে আছে। স্বপ্নটা আমার কেমন চেনা চেনা লাগছিল। একেবারে টেক্সট বুক ড্রিম যেন। কদিন আমার ডায়েরিগুলো খুঁজছিলাম। একটি অল্পবয়সি ধরো তেরো-চোদ্দো বছরের মেয়ে, খুব স্যাড কেস, মেয়েটিকে তার জনৈক বয়স্ক আত্মীয় রেপ করত, কাউকে ও বলতে পারত না। এই ধরনের স্বপ্ন দেখত। একটা বাঘ আকাশ থেকে লাফ দিয়ে ছাতে পড়ল, ছাত থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে, ঘর বাড়ি সব ভেঙে.. কী হল? কী হল?
জিনা বলল—যা, মুকুট তোর কোনও সেন্স নেই। দিদিভাই! শরীর খারাপ লাগছে? সোফায় বসে পড়েছিল মল্লিকা, কুলকুল করে ঘামছে। চোখের সামনে অন্ধকার। কত দূর থেকে যেন জিনাদের গলা ভেসে আসছে। জলের ছিটে পড়ছে মুখে।
মুকুট বলল, জিনা তুই বরফ দিয়ে ভাল করে এক গ্লাস শরবত করে নিয়ে আয় তো! জাস্ট নুন-চিনি-লেবুর শরবত। চিনিটা ঠান্ডা জলে গুলতে চায় না। ভাল করে মিশিয়ে নিবি। আমি দেখছি।
জিনা চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মুকুট দ্রুত এগিয়ে এসে মল্লিকার কপালের ঘাম মুছিয়ে দিল। বলল, মল্লিকাদি জিনা এক্ষুনি আসবে, চট করে কতকগুলো কথা শুনে নাও। তোমার বাঘ যদি অতীতের হয়, তো ভুলতে চেষ্টা করো। ফিফটি পার্সেন্ট মেয়ের এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, সো-জা ভুলে যাও। আর ব্যাপারটা যদি বর্তমানের হয়, তা হলে ভয় পেয়ে কোনও লাভ নেই, প্রতিবাদ করো। কড়া প্রতিবাদ, সে তোমার স্বামী হলেও। সহ্য করতে থাকলে তোমার মানসিক দিক থেকে ক্ষতি হয়ে যাবে। তোমারও সেই লোকটিরও, ন্যাচার্যালি তোমার পরিবারেরও।