এক বোতল বিষ
স্কুলে বিরাট হৈচৈ। সারাদিন কোনও ক্লাসট্রাস হলো না। টিচারদের জেরায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেল। প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীর বিরক্তি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কাউকে যেতেও দেয়া হচ্ছে না, একরকম বন্দিই করে রাখা হয়েছে। প্রিন্সিপাল মিস্টার ডবসন দ্বিতীয়বার গোটা স্কুলকে অ্যাসেম্বলি দিয়ে বলেছেন, এখনও সময় আছে, কে নিয়েছ বলে দাও। আমি কিছু বলব না। দেখো, ব্যাপারটা কিন্তু ছেলেখেলা নয়।
আসলেই তা-ই। ঘটনা গুরুতর। স্কুল ল্যাবরেটরি থেকে কেউ এক বোতল পটাশিয়াম সায়ানাইড চুরি করেছে। মারাত্মক বিষাক্ত কেমিক্যাল। জিনিসটা রাখা ছিল তালামারা কাঁচের আলমারিতে। সেই তালা ভেঙে বোতলটা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজটা সারা হলো কখন? খুব সম্ভব টিফিন পিরিয়ডে। তার আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। অন্তত ল্যাবরেটরি অ্যাসিসটেন্ট মিস্টার হপকিন্স তা-ই দাবি করছেন। তিনি নিজেও টিফিনের সময় দরজায় তালা দিয়ে খেতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, দুটো জানালা খোলা। সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, আলমারির তালা ভাঙা, দুনাম্বার তাক থেকে পটাশিয়াম সায়ানাইডের বোতল উধাও। সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্সিপালকে জানানো হলো ঘটনাটা। শুরু হলো হৈচৈ।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দুই বন্ধু অয়ন হোসেন আর জিমি পারকারও রয়েছে, ক্লাসের সবচেয়ে ভাল দুই ছাত্র। দুজনেরই গলায় গলায় ভাব। থাকেও একই পাড়ায়। সচরাচর ফাস্ট আর সেকেণ্ড বয়ের ভেতর এমন বন্ধুত্ব দেখা যায় না। তাদের সম্পর্ক হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার। অয়ন আর জিমি সেটার ব্যতিক্রম। একটা বিষয়ে ওদের আগ্রহ সীমাহীন-রহস্য।
ওরা দাঁড়িয়ে ছিল অ্যাসেম্বলি হলের বারান্দায়। টিচাররা তখন ছাত্র ছাত্রীদের আরেক দফা জেরা শুরু করেছেন।
কী যে শুরু হলো! বিরক্ত কণ্ঠে বলল জিমি। বাসায় যেতে দেবে না নাকি? ছুটির সময় তো হয়ে গেছে।
হাবভাব তো ভাল ঠেকছে না, অয়ন বলল। আবার যেভাবে জেরা শুরু করেছে।
তাই বলে সারাদিন আটকে রাখবে?
সেটা সম্ভব নয়। খবর পেয়ে সবার বাবা-মা চলে আসবে না? তখন তো ছাড়তেই হবে।
তবেই সেরেছে। বাবা-মা দুজনেরই আজ ডিউটি পড়েছে। কাল সকালের আগে কেউই ফিরবে না।
জিমির বাবা-মা দুজনেই নামি ডাক্তার, লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা বড় হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত। মাঝে মাঝেই তাদের এমন ডিউটি পড়ে, তাই অবাক হলো না অয়ন। ওর বাবা প্রকৌশলী, একটা বিরাট প্রাইভেট ফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। ওখানে তো আর হাসপাতালের মত ডিউটি নেই, তাই বিশেষ ভাবনা নেই অয়নের। তা ছাড়া ঘরে মা তো আছেনই। ও বলল, চিন্তা করছিস কেন? সবাই চলে গেলে তোকে কি আর একা আটকে রাখবে?
তা-ও তো বটে! আচ্ছা, চুরিটা করল কে?
আমি ভাবছি অন্য কথা, অয়ন চিন্তিত গলায় বলল।
কী?
কেন চুরি করল?
দুষ্টুমি করে কেউ করেছে আর কী! জুনিয়র ক্লাসগুলোয় তো আর বাঁদরের অভাব নেই। বিলির কথাই ধর। সেদিন পটকা এনে সবাইকে কী ভয়টাই না দেখাল।
উহুঁ, সেটা অন্য ব্যাপার। পটকা ফোঁটানো আর কেমিক্যাল, চুরি এক কথা নয়। তাও আবার পটাশিয়াম সায়ানাইড।
ঠিকই বলেছিস। তা হলে কেন হলো চুরিটা?
সেটাই ভাবছি। কারণটা আর যাই হোক, দুষ্টমি না। তা হলে এত ঝামেলা করে তালা ভাঙত না। খোলা র্যাকেই অনেক কেমিক্যাল আছে, যেগুলো দিয়ে ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো যায়। কিন্তু পটাশিয়াম সায়ানাইড সে রকম কেমিক্যাল না।
তার মানে?
পরীক্ষাগারের বাইরে ওটার কেবল একটা ব্যবহারের কথাই মনে আসছে।
বিষ?
এগজ্যাক্টলি। ব্যাপারটা গুরুতর, জিমি। কেউ একজন খুনের পরিকল্পনা করছে। বিষ সংগ্রহ হলো তার প্রথম ধাপ।
স্টুডেন্টদের কেউ হতে পারে না, কঁপা কাঁপা গলায় বলল জিমি।
ওরা সবাই ছোট। মানুষ খুন করার বয়স হয়নি।
তা-ই বা বলি কীভাবে? দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল অয়ন। রাগের মাথায় ছোটরাও অনেক সময় ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড করে।
চোরটাকে ধরতেই হবে, অয়ন। কেউ না কেউ বিরাট বিপদের মধ্যে আছে।
এ-সময় দুজন টিচার এসে পড়ায় ওদের আলাপে বাধা পড়ল। আবার সেই গন্ত্ৰাধা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল ওরা। টিফিনের সময় কোথায় ছিল, কী করেছে, সঙ্গে আর কে কে ছিল, কাউকে বোতল হাতে দেখেছে কি না, কারও আচরণ সন্দেহজনক ছিল কি না… এইসব হাবিজাবি আরও কত কী! অবশ্য রাগও করতে পারছে না, ব্যাপারটার গুরুত্ব তো ওরাও বুঝতে পারছে। জেরা শেষ হতেই অয়ন বলল, এক্সকিউজ মি. স্যর। একটা প্রশ্ন করব?
করো। এই যে এত জেরা করছেন, কোনও লাভ হচ্ছে?
ভদ্রলোক ভুরু কোচকালেন। বললেন, সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে পাওয়া গেছে, যারা সঠিকভাবে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। ওদেরকে প্রিন্সিপালের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বোতলটার খোঁজ করা হচ্ছে না?
হবে না কেন! তোমাদের সবার ব্যাগ আর লকার চেক করা শেষ। এখন বাথরুমসহ বাকি স্কুলের পুরো এলাকায় তল্লাশি চলছে।
শেষ পর্যন্ত যদি পাওয়া না যায়, স্যর?
কে জানে, হয়তো পুলিশে খবর দিতে হবে। সেটা প্রিন্সিপাল বলতে পারেন। এখন যাই, অনেক কাজ বাকি।
টিচার চলে গেলেন। জিমি এগিয়ে এল।
বেশ আটঘাট বেঁধে নেমেছে চোর, অয়ন বলল। বোতলটা এমন লুকানোই লুকিয়েছে, এখনও পাওয়া যায়নি। সহজে যাবে বলে মনেও হচ্ছে না।
তা হলে? জিমি বলল।
হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কোনও মানে হয় না। চল, চেষ্টা করে দেখি, আমরা বের করতে পারি কি না।
কীভাবে?
মাথা খাঁটিয়ে। আয়।
হাঁটতে হাঁটতে জিমি বলল, কোত্থেকে শুরু করবি?
এলিমেন্টারি, মাই ফ্রেণ্ড! শার্লক হোমসের ডায়লগ ধার করল অয়ন। ঘটনাস্থল থেকে।
ল্যাবরেটরির চারপাশ ফাঁকা, কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ঝামেলার রু হয়েছে এখানে, অথচ এ মুহূর্তে এটাই পুরো স্কুলে সবচেয়ে শান্ত ওয়গা। আই অভ দ্য স্টর্ম বোধহয় একেই বলে। ভেতরে ঢুকে ওরা দেখল, বিশাল কক্ষটার একপ্রান্তে ডেস্কের ওধারে ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট মি. জন হপকিন্স বসে আছেন।
আরে, তোমরা! ওদের দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
জী, একটু দেখতে এলাম, অয়ন কাচুমাচু মুখে বলল।
তদন্ত করতে এসেছ? তোমরা তো আবার খুদে গোয়েন্দা। হাঃ হাঃ। হাঃ!
ওরা একটু লজ্জা পেল। কিছুদিন আগে একবার ছুটি কাটাতে গিয়ে ওরা ঘটনাক্রমে একটা পুরনো ডাকাতি রহস্যের সমাধান করেছিল। খবরের কাগজে বেশ ফলাও করে ছাপা হয়েছিল ওদের সেই কৃতিত্বের কথা। সেই থেকে স্কুলে-পাড়ায় দুজনার বেশ নাম-ডাক হয়ে গেছে। তবু প্রসঙ্গটা উঠলে ওরা বেশ বিব্রত বোধ করে।
ওসব কিছু না, অয়ন বিব্রতকণ্ঠে বলল। একটু খুঁজে দেখতাম আর কী।
দেখো, দেখো! আমার আবার আপত্তি কীসের? হপকিন্স তিক্ত কণ্ঠে বললেন। পাওয়া গেলে তো ভালই হতো। অলরেডি তিনবার তল্লাশি হয়ে গেছে। এখানে নেই বোতলটা। থাকবে কী করে? জানালা খোলা, তালা ভাঙা–পরিষ্কার চুরি! রেখে যাবার জন্যে কি আর এতকিছু করেছে?
তাও বটে! জিমি বলল।
ছবছর এখানে আছি, এমন কাণ্ড কখনও ঘটেনি। স্কুলটার যে দিনে দিনে কী হচ্ছে! ছেলেমেয়েরা সব বদের হাডিড হয়ে যাচ্ছে।
তা হলে আপনার ধারণা, ছাত্র-ছাত্রীরাই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে? অয়ন প্রশ্ন করল।
নয়তো কে? কথাটা হপকিন্স এমনভাবে বললেন যেন প্রশ্নটা বোকার মত হয়ে গেছে।
ঘটনাটা একটু খুলে বলবেন, প্লিজ?
ঘটনা আর কী? খেতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, জানালা দুটো খোলা…
কোন্ দুটো, দেখাবেন?
ওই তো, এখনও ভোলা আছে, উল্টোদিকের দেয়ালে দুটো জানালা খোলা দেখালেন হপকিন্স, পর্দা সরানো।
হুঁ, তারপর?
হ্যাঁ, জানালা তো খোলা পেলাম। দারুণ খটকা লাগল। স্পষ্ট মনে আছে, যাবার আগে বন্ধ দেখেছি। সন্দেহ হলো। প্রথমে ভেবেছিলাম ডেস্ক থেকে দরকারি কিছু চুরি গেছে। শেষে দেখি, আলমারি ভাঙা, বোতল উধাও।
আচ্ছা, এবার তা হলে ঘরটা একটু দেখব?
দেখবে? বেশ। তবে তাড়াতাড়ি করো। আমাকে আবার প্রিন্সিপালের কাছে যেতে হবে।
আপনি তা হলে যান। আমাদের হয়তো একটু সময় লাগবে। আপনি ততক্ষণে ঘুরে আসুন।
আমার যদি ফিরতে দেরি হয়? হপকিন্সের কণ্ঠে শঙ্কা।
চিন্তা করবেন না, আমরা আছি। সবকিছু দেখেশুনে রাখব।
ঠিক আছে, আশ্বস্ত হলেন যেন ভদ্রলোক। তা হলে দরজায় আর তালা দিচ্ছি না। কোনোকিছু নষ্ট কোরো না, কেমন?
মি. হপকিন্স চলে গেলেন।
ইচ্ছে করেই ওঁকে সরিয়ে দিলি, না? জিমি বলল।
হুঁ, মাথা ঝাঁকাল অয়ন। বাইরের লোকের সামনে তদন্ত করা ভারি অস্বস্তির ব্যাপার।
খোলা জানালার দিকে এগিয়ে গেল ওরা দুজন।
অদ্ভুত ব্যাপার! অয়ন হঠাৎ মন্তব্য করল।
কীসের কথা বলছিস? জিমি শুধাল।
এই জানালার কথা বলছি। চোরটা দু-দুটো জানালা খুলল কেন? যেখানে একটা খুললেই চলে? তা ছাড়া পর্দার ব্যাপারটাই ধর। যাবার আগে টেনে দিয়ে গেল না কেন? পর্দা টানা থাকলে তো বোঝাই যেত না, পাল্লাগুলো খোলা। সেক্ষেত্রে স্কুল ছুটির আগে হয়তো ব্যাপারটা ধরাই পড়ত না। কারণ সে-সময়েই সমস্ত দরজা-জানালার লক পরীক্ষা করা হয়।
গুড পয়েন্ট! জিমি মাথা ঝাঁকাল।
জানালার পাল্লাদুটো এবার পরীক্ষা করতে বসল অয়ন। অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমের স্লাইডিং উইণ্ডো। পুশলক রয়েছে সবকটা পাল্লায়। চাবিও দেয়া যায়, তবে সাধারণত সেটা করা হয় না।
হুঁ, দেখে-টেখে বলল অয়ন। আটকানোর ব্যবস্থাটা তো ভালই, বাইরে থেকে খোলাটা সহজ হবার কথা নয়।
তা কী করে বলিস? জিমি প্রতিবাদ করল। এসব তালা তো সামান্য একটা ক্রেডিট কার্ড দিয়েই খোলা যায়-টিভিতে দেখিসনি?
ভাল যুক্তি, অয়ন স্বীকার করল। তবে অত ঝামেলা না করলেও চলে। ক্লাস চলাকালীন যদি জানালাটা সামান্য খুলে রাখা যায়, তা হলেই যথেষ্ট। পরে শুধু বাইরে থেকে পাল্লা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লেই হলো। পর্দার কারণে কেউ জানবে না, জানালা খোলা কি বন্ধ ছিল।
রাইট। উত্তেজিত কণ্ঠে জিমি বলল।
তা হলে দুটো জানালা খোলার পেছনেও যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে। চোর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি, যাতে একটা কেউ বন্ধ করে দিলেও অন্যটা ভোলা থাকে।
সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে, অয়ন মাথা নাড়ল।
কী সমস্যা?
দেখতেই পাচ্ছি, দুটো জানালাই খোলা পেয়েছে চোর। তা হলে দ্বিতীয় জানালাটার পর্দা সরাতে গেল কেন? যেমন ছিল, তেমন রেখে দিলেই কি ভাল করত না? উঁহুঁ, জিমি, এর ভেতরে ঘাপলা আছে।
অসঙ্গতিটা এবার জিমিও ধরতে পারল। কোনও কথা জোগাল না ওর মুখে। চুপচাপ কিছুক্ষণ কী যেন ভাবল অয়ন, তারপর বলল, আয়, জানালার বাইরের দিকটা দেখি। হয়তো কোনও সূত্র পেয়ে যাব।
ল্যাবরেটরিটা একতলায়, জানালার ওপাশটা স্কুলের পেছন দিক। ছোটখাট একটা লন আছে, তবে অযত্নের কারণে সেখানে ঘাস বেশ কম। লনটার শেষ প্রান্ত লেগেছে স্কুল বাউণ্ডারির সঙ্গে। সেখানে বেশ উঁচু একটা দেয়াল। টপকানো মোটামুটি কঠিনই বলা চলে।
নামব ওপাশে? জিমি জিজ্ঞেস করল।
নাম, অয়ন মাথা কাত করল।
জানালা টপকে লাফ দিল জিমি। পরমুহূর্তে চুপ করে একটা শব্দ হলো। জিমি বিরক্ত স্বরে বলল, এহহে! গেল আমার জুতোটা!
কী হয়েছে? অয়ন জিজ্ঞেস করল।
কাদা! জিমি মুখ বাঁকা করল। নামার আগে দেখিনি।
কাদা এল কোত্থেকে? চট করে অয়নের মনে পড়ল, কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আরেকটা চিন্তা ওর মাথায় খেলল। জিমিকে বলল, নড়িস না।
কেন?
ভাল করে দেখ, আশপাশে কোনও পায়ের ছাপ আছে কি না।
নাহ, একটু পর জবাব দিল জিমি। নট আ সিঙ্গল ওয়ান।
জানালাতেও নেই, বিড়বিড় করল অয়ন। মেঝে?
হাঁটু গেড়ে বসল ও। এক এক করে দুটো জানালারই সামনের অনেকখানি মেঝে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। কিন্তু পায়ের ছাপ মিলল না কোথাও।
অ্যাই, অয়ন! বাইরে থেকে জিমি অধৈর্য কষ্ঠ ডাকল। করছিস কী? কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব?
চলে আয়, ওকে বলল অয়ন। জানালা দিয়ে না, সোজাপথে। আসার পথে পা-ও ধুয়ে নিস।
জিমি আসার আগে বেশ কিছু জিনিস ঝড়ের বেগে চিন্তা করে নিল ও। শেষে ওর মুখে হালকা একটা হাসি ফুটল, মনে হচ্ছে আলো দেখতে পেয়েছে।
একটু পরই জিমি ফিরল। পা ধুয়ে এসেছে, ভেজা কেডস-এ থপ থপ শব্দ হচ্ছে। হেসে ফেলল অয়ন।
হাসছিস কেন? জিমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
কারণটা বলল অয়ন। শুনে জিমি গেল রেগে।
তোর সাহস তো কম না! আবার হাসছিস?
এর মধ্যে সাহসের কী?
ইচ্ছে করছে এক ঘুসিতে তোর নাকটা বসিয়ে দিই। তোর কথা শুনতে গিয়ে কেডসটার বারোটা বাজল… এখনও থামলি না? দেব একটা ঘুসি?
মাফ চাই, মারিস না, অয়ন হাসি থামাল। আমাদের সামনে জরুরি কাজ আছে।
ঠিকই তো! জিমির মনে পড়ল। এখন কী করবি? কোনও সূত্র পেয়েছি বলে তো মনে হয় না।
কে বলল পাইনি? অয়ন জ নাচাল। যা পেয়েছি যথেষ্ট। এবার আমরা বোতলটা খুঁজতে পারি।
ফাজলামি করছিস? জিমির গলায় সন্দেহ।
মাথা খারাপ! শোন, এখন আমাদের প্রথম কাজ-বোতলটা দেখতে কেমন, সেটা জানা।
ঠিক এরকম! হাত বাড়িয়ে পাশের ব্ল্যাক থেকে একটা অ্যাসিডের বোতল তুলে নিল জিমি।
তুই কীভাবে জানলি? অয়ন অবাক।
বোতলটা আমি আগে দেখেছি। কেমিক্যালটা আমাকে দারুণ আকৃষ্ট করত। কাঁচের আলমারিটার দিকে আমি প্রায়ই তাকাতাম।
আমার ধারণা ছিল, কেমিস্ট্রি তুই দুচোখে দেখতে পারিস না। শুধু পরীক্ষার জন্য পড়িস।
ঠিক! তাই বলে বোতলটার দিকে তাকাতে তো দোষ নেই।
শ্রাগ করল অয়ন। বলল, যাক গে, এখন তোর আইডিয়া সম্পর্কে শুনি। চিরুনি দিয়ে উকুন খোঁজার মত স্কুল তল্লাশি চলছে, বোতলটা তাও পাওয়া যাচ্ছে না কেন?
নিশ্চয়ই ওটা ভাল কোনও জায়গায় লুকানো হয়েছে, জিমি বলল।
এমন কোথাও, যেখানে খোঁজার কথা কেউ ভাববেও না, অথবা খুঁজলেও চোখ এড়িয়ে যাবে।
এই তো ঠিক রাস্তায় ভাবতে শুরু করেছিস। এবার একটা তথ্য দিই। দেখি কিছু বুঝতে পারিস কি না। একটা জিনিস লুকানোর সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি হচ্ছে, সেটাকে ঠিক একই রকমের একগাদা জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া।
বোতলটাকে রাখা হয়েছে ঠিক একই রকমের অনেকগুলো বোতলের সঙ্গে, বিড়বিড় করল জিমি। পরমুহূর্তে ওর মুখ উজ্জ্বল হলো। ল্যাবরেটরি
অয়ন অল্প হাসল।
কিন্তু ওটা যে পাচার হয়ে যায়নি, তা কী করে জানিস? জিমি একটু বিমর্ষ গলায় বলল। তা ছাড়া ল্যাবেও তিনবার তল্লাশি চালানো হয়েছে। বোতলটায় তো লেবেল আছে, লুকাবে কীভাবে?
পাচার হতে পারে, স্বীকার করি। তবে ওই সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেন, পরে বলব। আর লেবেল ওঠানো কি খুব কঠিন? লেবেল ছাড়া তো খালি চোখে কেমিক্যাল চেনা সম্ভব নয়।
তোর ধারণাই যে ঠিক, তা কী করে বুঝছিস?
বুঝব, যদি ছেঁড়া লেবেলটা পাই। ওটা এখানেই থাকার কথা। দুটো ওয়েস্টপেপার বাস্কেট আছে। কোনটা নিতে চাস?
যেটা কাছে।
দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল। পরিশ্রম বৃথা গেল না। একটু পরই ছেঁড়া খোঁড়া লেবেলটা উদ্ধার করল অয়ন। পুরোটা পায়নি অবশ্য, তবে যেটুকু পেয়েছে–কাজ চলবে। খুশিতে শিস দিয়ে উঠল ও।
বলিনি?
এবার কী করতে চাস? জিমি জিজ্ঞেস করল। এই ল্যাবে ওই রকম কমপক্ষে হাজারখানেক বোতল আছে। একে একে সবগুলোর কেমিক্যাল টেস্ট করবি? নইলে কিন্তু জিনিসটা চেনা যাবে না।
উঁহুঁ, অয়ন মাথা নাড়ল। ওসব কিছু না। এখন আমরা যাব প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে।
মিস্টার হপকিন্সকে আবার ল্যাবের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পনেরো মিনিট পর বেরিয়ে এল ওরা। প্রিন্সিপালের অফিসে গেল।
মি. উবসনের সঙ্গে কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ একাকী কথা বলতে চাইছিল অয়ন–সঙ্গে জিমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না। অনুমতি পেতে তেমন অসুবিধে হলো না। ফার্স্ট বয়-সেকেণ্ড বয়রা সবসময়ই কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করে, যা অন্যেরা পায় না। প্রিন্সিপালও এদের গুরুত্ব দেন।
পরবর্তী আধঘণ্টায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে ওদের সঙ্গে প্রিন্সিপালের কী কথা হলো, তা কেউ জানল না। তবে আলোচনা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে মি. ডবসন ল্যাবে তালা ঝুলিয়ে দিলেন। এমনকী মি. হপকিন্সকেও ভেতরে ঢুকতে দেয়া হলো না। একটা ঘোষণা দেয়া হলো, ল্যাবে সংঘটিত ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে। প্রিন্সিপালের আশঙ্কা, এখান থেকে হয়তো আরও কিছু খোয়া গেছে। সেটা তদন্তের জন্য আগামীকালই বিশেষ প্রহরায় ল্যাবের সমস্ত জিনিস প্রিন্সিপালের ব্যক্তিগত স্টোরে নিয়ে যাওয়া হবে।
এরপর স্কুল ছুটি হয়ে গেল।
.
সেদিন সন্ধ্যা। ল্যাবের ভেতরে অন্ধকারে লুকিয়ে আছে দুটি ছায়ামূর্তি। এরা অয়ন-জিমি ছাড়া আর কেউ নয়। গোটা ব্যাপারটা অয়নের পরিকল্পনারই একটা অংশ। স্কুল ছুটির পর ওরা কেউ বাড়ি যায়নি। শুধু একটা ফোন করে রাতটা বাইরে থাকার অনুমতি নিয়েছে অয়ন বাবার কাছ থেকে। জিমির ক্ষেত্রে তারও প্রয়োজন পড়েনি। এখন ওরা অপেক্ষা করছে চোরের জন্য। সে আসবে, এটা নিশ্চিত।
বিকেলের দিকে এক ফাঁকে ওদের ল্যাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন মি. ডবসন। বড় কাউকেও রাখতে পারতেন, তবে পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার সম্ভাবনা ছিল। সন্ধ্যায় অসুবিধে নেই, কিন্তু যতক্ষণ দিনের আলো থাকে–ততক্ষণ তো লোকটাকে লুকিয়ে থাকতে হবে! বড়দের জন্যে সেটা মস্ত ঝামেলা। কিন্তু অয়নরা সহজেই পারে সবার অজান্তে কয়েক ঘণ্টা ল্যাবের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকতে।
মি. ডবসন তার লোকজন নিয়ে ধারে-কাছেই আছেন। ওদের কাজ হবে শুধু চোর এলে একটা সঙ্কেত দেয়া। সঙ্কেত কী হবে, তাও ঠিক করা আছে। ল্যাবের বাতি জ্বেলে দিতে হবে। বাকিটা প্রিন্সিপালের কাজ।
তবে যত কিছুই হোক, অপেক্ষা করার মত বাজে কাজ সম্ভবত দুনিয়াতে আর কিছুই নেই। কয়েক ঘন্টা যেতেই ওরা বিরক্ত হয়ে উঠল। সেই বিরক্তি আরও চরমে উঠল, যখন রাত দশটা বাজার পরও কিছু ঘটল না। খিদেও পেয়েছে, রাতে কিছু খাওয়া হয়নি।
বিরাট ভুল হয়েছে, জিমি একসময় বলল। কিছু খাবার আনা উচিত ছিল।
ক্লান্তিতে এক পর্যায়ে ওরা ঘুমিয়েই পড়ল। গভীর রাতে হঠাৎ কিছুর শব্দে অয়নের ঘুম ভাঙল। দরজার বাইরে কারা যেন কথা বলছে। নিচ দিয়ে টর্চের আলোর মতও দেখা গেল। চট করে হাতঘড়ির বাতি জ্বেলে সময়টা দেখল ও। রাত একটা দশ। তারপর আস্তে করে জিমিকে ধাক্কা দিল।
ক…কী হয়েছে? জিমি ধড়মড় করে উঠতে যাচ্ছিল। অয়ন অনেক কষ্টে ওকে থামাল। তারপর ইশারায় দরজাটা দেখাল।
খুট করে একটু পর দরজাটা খুলে গেল, আর তিনজন মানুষ ঝটপট ভেতরে ঢুকে পড়ল। এদের মধ্যে একজন চাপা গলায় বলল, এখানেই আছে ওটা। টর্চটা দাও।
যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, সে একটা মুখ ঝামটা দিল।
তোমার না এ ঘর হাতের তেলোর মত চেনা! আবার টর্চ চাইছ কেন? তা ছাড়া আলো জ্বালাও নিরাপদ নয় কিন্তু।
বেকুবের মত কথা বোলো না! প্রথম লোকটা ধমক দিল। আলো ছাড়া বোতলটা চিনব কী করে?
ইতস্তত করছিল তাও দ্বিতীয় লোকটা। তুত জিন এবার মুখ খুলল, কথা বাড়াচ্ছ কেন, ফ্রেড? দিয়ে দাও না!
না, বলছিলাম কেউ যদি দেখে ফেলে…
পিস্তল বয়ে বেড়াও ঠিকই, কিন্তু তুমি একটা কাপুরুষ।
প্রমাদ গণল অয়ন-এদের কাছে পিস্তলও আছে! ভয় পাবার আরও কারণ আছে। এদের একজন টর্চ নিয়ে র্যাকের কাছে গেছে ঠিকই, কিন্তু বাকি দুজন সুইচবোর্ডের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এখন বাতি জ্বেলে সঙ্কেত দেয়া প্রায় অসম্ভব।
হঠাৎ জিমি দুঃসাহসী একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ফিসফিস করে বলল, ক্রল করে সুইচবোর্ড পর্যন্ত যাব। তারপর এক লাফে লাইটের সুইচ টিপে দেয়া কোনও সমস্যাই না।
পাগলের মত কথা বলিস না, অয়ন চোখ রাঙাল।
যদি ধরা পড়ে যাস!
সুইচ টিপে দেবার পর ধরা পড়লে অসুবিধে কী? জিমি যুক্তি দিল। তার আগে সাবধান থাকব, দেখিস!
ওকে আর ঠেকাতে পারল না অয়ন। এটাও ঠিক, ঝুঁকি না, নিলে ব্যাটাদের ঠেকানো যাবে না। শুধু বলল, সাবধান! খুব সাবধান!
রওনা হয়ে গেল জিমি। পেটের ভেতর কেমন জানি করে উঠল অয়নের। বেকায়দা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটা কিছু হাতে থাকা দরকার, অনুভব করল।
ও যেখানে লুকিয়েছে, তার পাশেই একটা অ্যাসিডের ব্যাক। হঠাৎ বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়। চট করে হাত বাড়িয়ে কয়েকটা বোতল মেঝেতে নামাল। রিস্টওয়াচের আলোটা জ্বেলে লেবেলগুলো পড়ল। বেছে নিল ঘন নাইট্রিক অ্যাসিডের বোতলটা।
হঠাৎ খট করে শব্দ হলো। জিমির কপাল খারাপ, অন্ধকারে একটা টুলের সঙ্গে বাড়ি খেয়েছে। তোক তিনটে মুহূর্তেই চঞ্চল হয়ে উঠল।
কীসের শব্দ… দ্বিতীয়জন বলল।
তৃতীয় লোকটা তার টর্চ জ্বালল, তারপর পিস্তল বাগিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে এল। হতাশায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াল জিমি। তীরে এসে তরী ডুবল। এক্ষুণি ধরা পড়ে যাবে।
ওদিকে ঝড়ের বেগে কাজ করছে অয়ন। বোতলের মুখ খুলে তাতে নিজের রুমালটা খুঁজে দিল। পানি খাবার বোতলটা ছিল হাতের কাছে। সেটার মুখ খুলে রুমালটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিল। তারপর দ্রুত ক্রল করে দূরে সরে গেল। রুমালটা চুঁইয়ে পানির প্রথম ফোঁটাটা যেই অ্যাসিডে পড়বে, অমনি একটা তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটবে। ফলাফলে ঘটবে, বুম!–একটা বিস্ফোরণ! ক্লাসে তা-ই শেখানো হয়েছে ওদের।
ঘটলও তা-ই। এবং পরের ঘটনাগুলো ঘটল আরও দ্রুত। বিস্ফোরণটা ঘটল বিকট শব্দে। জিমিকে তখনও খুঁজে পায়নি বদমাশটা। আচমকা শব্দে বোকা বনে গেল তিনজন। পিস্তলধারী দুজনই তারপর শব্দের উৎস লক্ষ্য করে গুলি চালাল। জিমি অন্যদিকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল, একছুটে সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে বাতি জ্বেলে দিল।
উজ্জ্বল আলোয় ভেসে গেল ঘরটা। দুবৃত্তরা আরও বোকা বনে গেল। তক্ষুণি দরজা ঠেলে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন মি. ডবসন, সঙ্গে জনাছয়েক সশস্ত্র গার্ড।
সাবধান, কেউ নড়বে না!
অবস্থা বেগতিক, অস্ত্র ফেলে দিল দুই দুবৃত্ত। এতক্ষণে তৃতীয় লোকটার দিকে তাকাবার অবকাশ হলো সবার। পটাশিয়াম সায়ানাইডের বোতল হাতে এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
লোকটা জন হপকিন্স, ল্যাবরেটরি অ্যাসিসটেন্ট।
.
দুদিন পর উইকএণ্ড! অয়নদের বাসায় জমায়েত হয়েছে ক্লাসের সবাই। কীভাবে চোরকে ধরল অয়ন আর জিমি, সেটাই শুনতে চায়।
তদন্তের শুরুতেই আমার সন্দেহ জাগল জানালা দেখে, অয়ন শুরু করল চোর নিতান্ত মাখামোটা না হলে দুদুটো জানালার পর্দা সরিয়ে রেখে যাবে না। আর যদি মাথামোটাই হবে, তা হলে বোতলটা এত চমৎকারভাবে লুকাল কীভাবে? পুরো ব্যাপারটাই কেমন জানি সাজানো মনে হলো। চূড়ান্ত প্রমাণ পেলাম জানালার বাইরের কাদা দেখে। চোর যদি সে-পথেই আসত, বাইরে পায়ের ছাপ থাকত। থাকত জানালায়, এবং মেঝেতেও। কিন্তু কোথাও ছাপ ছিল না। তারমানে চোর জানালা দিয়ে আসেনি। পুরো ব্যাপারটাই ধাপ্পা।
এক মিনিট, জিমি আঙুল তুলল। বোতলটা যে পাচার হয়ে যায়নি, তা বুবলি কীভাবে?
খুব সহজ। স্কুলের সামনের দিক দিয়ে বোতল নিয়ে কেউ বের হতে পারেনি। বাকি রইল পেছন দিক। দেয়ালের ওপর দিয়ে নিশ্চয়ই ওটা ছুঁড়ে দেয়া হয়নি, তা হলে পড়ে ভেঙে যেতে পারে। পাচার করতে হলে মানুষসহই ওটা পাচার হবে। কিন্তু ওখানটায় ছিল কাদা। ওই উঁচু দেয়াল পার হতে গেলে পা ওটাতে ঠেকাতেই হবে। আর তা হলে কাদার দাগ লাগবেই। কিন্তু পুরো দেয়ালটার এমাথা থেকে ওমাথা ছিল ফকফকা। তারমানে কেউ পার হয়নি। সেক্ষেত্রে মোটামুটি নিঃসন্দেহেই বলা যায় বোতলটা স্কুলের ভেতরেই আছে।
হপকিন্সকে সন্দেহ করলে কখন? একজন জিজ্ঞেস করল।
শুরু থেকেই। সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ও-ই সবচেয়ে সন্দেহজনক। একটা নকল চুরির ঘটনা সাজানোর মত সমস্ত সুযোগই ওর ছিল। তা ছাড়া লেবেল পাল্টে নতুন লেবেলও একমাত্র সে-ই লাগাতে পারে। চোর যদি জানালা দিয়ে না আসে, তা হলে ওর অলক্ষে চুরিটা ঘটল কীভাবে? কাজেই সমস্ত ঘটনা ওকেই নির্দেশ করছিল। কিন্তু শক্ত কোনও প্রমাণ ছিল না হাতে, তাই ফাঁদটা পাততে হয়েছিল। অবশ্য ওর ভয়টা অমূলক ছিল না। প্রিন্সিপাল যদি সত্যিই সমস্ত কেমিক্যাল সরিয়ে ফেলেন, তা হলে বিষটা ও পেত না। তার ওপর বোতলটা অন্যসব বোতলের ভেতর হারিয়ে যেতে পারে। কাজেই রাতে আরেকবার গিয়ে ওর উপায় ছিল না।
কিন্তু ওর মোটিভ কী? সঙ্গের লোকদুটো কে ছিল?
হপকিন্সের মোটিভ টাকা। লোকদুটোকে বোতলটা দিতে পারলে ও অনেক টাকা পেত। কিন্তু বিষটা ওদের কী দরকার? এক বোতল সায়ানাইডে কত মানুষ মারা যেতে পারে, জানো? ওরা কিন্তু সেই পরিকল্পনাই করেছিল। আসলে ওরা দুজন একটা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী দলের সদস্য–এরা নির্বিচারে মানুষ খুন করে। বাজার থেকে সায়ানাইড কিনলে পুলিশ বা এফবিআই সহজে ট্রেস করে ফেলতে পারে। তাই জিনিসটা ওরা হপকিন্সের মাধ্যমে জোগাড় করতে চেয়েছিল। আর হপকিন্সও সেটা ল্যাব থেকে সরানোর জন্য চুরির নাটকটা সাজিয়েছিল।
সাজানোয় সামান্য ত্রুটির কারণেই সে ধরা পড়ল, জিমি হেসে বলল।
এই সময় অয়নের মা এসে সবাইকে খেতে ডাকলেন।
খাওয়া! খাওয়ার তো কথা ছিল না, বলল পল অ্যাডামস।
বাহ, দুপুরে এসেছ… না খেয়ে তো যেতে পারবে না, অয়ন বলল।
এটা হলো বাংলাদেশি রীতি।
মেনুটাও নিশ্চয়ই বাংলাদেশি? জিজ্ঞেস করল খাদ্যরসিক ভিকটর জেমস।
অবশ্যই! ভাত আর মাছ!
চমৎকার!
হেসে উঠল সবাই।