ছোটো গল্প
উপন্যাস
প্রবন্ধ
ফিচার
কবিতা

এক নাম, অন্য মুখ

এক নাম, অন্য মুখ

ওরা সবাই পামার

পামার– ইংল্যান্ডের রাজকীয় বিমানবহর যখন ১৯৪৪ সালের ২৩ তারিখে শত্রুপক্ষের কলোন নামক স্থানে বোমাবর্ষণ করছিল, সেই সময় উক্ত বিমান বাহিনীর অধিনায়ক পামারের বিমানে সহসা এসে লাগল জার্মানদের নিক্ষিপ্ত কামানের গোল। সঙ্গেসঙ্গে পামারের বিমান ল্যাঙ্কাস্টার ঘিরে দেখা দিল লেলিহান অগ্নিশিখা। পামারের বিমান যে সব বোমা বহন করে যাচ্ছিল, সেগুলিতে আগুন লেগে যেকোনো মুহূর্তেই বিমানটি ধংস হয়ে যেতে পারে, একথা বুঝেও পামার প্যারাস্যুট নিয়ে শুন্যে লাফিয়ে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করলেন না, জলন্ত বিমান নিয়ে উড়ে উড়ে সবেগে বোমাবর্ষণ করতে লাগলেন শত্রুর রেললাইনের উপর। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটল অনিবার্য দুর্ঘটনা– আগুনের জ্বলন্ত স্পর্শে প্রচণ্ড শব্দে ফাটল বিমানবাহিত বোমা এবং সেই বিস্ফোরণের ফলে শূন্যপথেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বিমান ও বিমানচালক পামারের দেই। ব্রিটিশ সরকার পামারকে ভিক্টোরিয়া ক্রস নামক মরণোত্তর সম্মানে ভূষিত করেছিলেন।

নাথানিয়েল পামার— দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সর্বপ্রথম যে জাহাজটি উপস্থিত হয়েছিল তার নাম হচ্ছে স্টটিংটন। এই জাহাজের মালিক ছিলেন নাথানিয়েল পামার। উপকূলের খুব কাছাকাছি জাহাজ চালাতে চালাতে নাথানিয়েল যখন নূতন দেশ পর্যবেক্ষণ করছিলেন সেইসময় হঠাৎ এক প্রবল ঝটিকার আকস্মিক আক্রমণে জাহাজটি উপকূলের তীরভূমির উপর আছাড় খেয়ে পড়ার উপক্রম হয়। জাহাজের পরিচালনা-কার্যে অসামান্য জ্ঞান ও দক্ষতার জন্যেই সেবার আসন্ন মৃত্যুর কবল থেকে পামার উদ্ধার লাভ করেন, সেইসঙ্গে রক্ষা পায় স্টটিংটন জাহাজ এবং নাবিকের দল। নাথানিয়েল পামার দক্ষিণ মেরুর যেখানে পদার্পণ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তার নামেই সেই জায়গাটার নামকরণ হয়েছিল।

এডওয়ার্ড হেনরি পামার এবং তার সঙ্গীরা যখন ১৮৬৯ খৃস্টাব্দে সাহারা মরুভূমির উপর দিয়ে মরু-অভিযান চালনা করছিলেন, সেই সময়ে হঠাৎ একদল বেদুইন দস্যু অভিযাত্রীদের ঘিরে ফেলে লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ড চালাতে উদ্যত হয়। হেনরি পামার স্থানীয় বেদুইনদের ভাষা জানতেন। তিনি তীব্রস্বরে স্থানীয় ভাষায় দস্যুদের অভিসম্পাত করতে লাগলেন। বিদেশির মুখে স্থানীয় ভাষায় প্রচলিত অভিশাপ ও গালিগালাজ শুনে দস্যুরা এমন অভিভূত হয়ে পড়ল যে, অত্যাচার করা তো দুরের কথা, অভিযাত্রীদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবার জন্যে এগিয়ে এল একদল বেদুইন দস্যু। দস্যুদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে অভিযাত্রীরা আবার নির্ভয়ে অগ্রসর হলেন।

কর্নেল জন পামার– আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় উত্তর অঞ্চলের অশ্বারোহী বাহিনীর এক রেজিমেন্টকে পরিচালনা করেছিলেন কর্নেল জন পামার। স্টোন রিভার নামক একটি নদী পার হওয়ার সময় পূর্বোক্ত বাহিনীর উপর শত্রুপক্ষ ভীষণভাবে গোলাগুলি বর্ষণ করতে থাকে। সেই প্রচণ্ড অগ্নিবৃষ্টির মধ্যে নিজের প্রাণ বিপন্ন করে কর্নেল জন পামার তার রেজিমেন্টের ঘোড়-সওয়ারদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং আশ্চর্য সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে শত্রুপক্ষের উপর আক্রমণ চালিয়ে উত্তর অঞ্চলের সম্মিলিত বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার পথ পরিস্কার করে দিলেন।

জোসেফ পামার– স্পেনের উপকূলে সমুদ্রের বুকে যে সব লক্ষ্মীছাড়া বোম্বেটে জাহাজ ভাসিয়েছিল তাদের মধ্যে যে লোকটির ভাগ্য ছিল সবচেয়ে খারাপ, তার নাম জোসেফ পামার। ১৭৩০ খৃস্টাব্দে বোম্বেটে জোসেফ তার জাহাজ নিয়ে একটি বাণিজ্য পোতকে আক্রমণ করল। ভীষণ যুদ্ধের পর বোম্বেটেরা যখন আক্রান্ত জাহাজটিকে দখল করতে সমর্থ হল, তখন দেখা গেল, দস্যুদের মধ্যে অনেকেই মারা পড়েছে এবং নিহত দস্যুদের ভিতর রয়েছে স্বয়ং জোসেফ পামার! যাই হোক, অনেক দুঃখের পর এইবার কিছু প্রাপ্তিযোগের আশায় দস্যুর দল জাহাজ লুঠ করতে অগ্রসর হল। দারুণ হতাশার সঙ্গে তারা আবিষ্কার করল, এই জাহাজে ধনরত্ন কিছুই নেই, আছে শুধু তাদের মতোই পাজির পা ঝাড়া বদমাইস গুণ্ডার দল শৃঙ্খল-আবদ্ধ অবস্থায়! পূর্বোক্ত দুর্দান্ত অপরাধীদের আমেরিকায় উপনিবেশে স্থানান্তরিত করার জন্যেই সমুদ্রে ভাসানো হয়েছিল জাহাজটিকে।

ওরা সবাই হ্যামিলটন

ডগলাস হ্যামিলটন– ১৯৩৩ খৃস্টাব্দে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে এভারেস্ট পর্বত-চূড়ার উপর দিয়ে বিমান চালিয়ে উড়ে যান। বিমানযোগে যে সব মানুষ এভারেস্টকে লঙ্ঘন করেছিলেন, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি হলেন ডগলাস হ্যামিলটন। হ্যাঁমিলটনের আমলে বিমানপোত আজকের মতো উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতির অধিকারী হয়নি, তখনকার দিনে বিমান চালিয়ে এভারেস্ট লঙ্ঘন করা খুব সহজ ছিল না। বিশেষত, হ্যামিলটন যখন এভারেস্টের উপর দিয়ে বিমান চালনা করছিলেন, সেই সময়ে ঘণ্টায় দশমাইল বেগে ছুটছিল পাগলা হাওয়া! এই প্রচণ্ড বায়ুবেগের মধ্যে জীবন বিপন্ন করে হ্যামিলটন সাহেব তার ক্যামেরা থেকে অনেকগুলি আলোকচিত্র গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে সেই আলোকচিত্র থেকেই এভারেস্ট পর্বত-চূড়ার প্রথম মানচিত্র অঙ্কিত হয়। ১৯৩৩ সালের ১৯ এপ্রিল ডগলাস হ্যামিলটন দ্বিতীয় বার এভারেস্টের উপর দিয়ে বিমানযোগে উড়ে যান।

স্যার উইলিয়ম হ্যামিলটন– যখন নেপলস নগরে বৃটিশ রাজদূত হয়ে অবস্থান করছিলেন, তখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে নেপোলিয়নের যুদ্ধ চলছে। স্যার হ্যামিলটন আগ্নেয়গিরি সম্বন্ধে বিভিন্ন জ্ঞাতব্য তথ্য মানব জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ছবি আঁকতেও পারতেন। একদিন এটনা নামক আগ্নেয়গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত গহ্বরের অদূরে বসে তিনি নিসর্গ-দৃশ্যের ছবি আঁকছেন, এমন সময়ে গিরিচূড়ার গহ্বর থেকে সবেগে ছুটে এল জ্বলন্ত লাভাস্রোত! গলিত লাভার তপ্তধারা খুব দ্রুত ছুটে এসেছিল বটে, কিন্তু তার চেয়েও তাড়াতাড়ি ছুটে লাভাস্রোতের জ্বলন্ত গ্রাস থেকে আত্মরক্ষা করেছিলেন স্যার উইলিয়ম হ্যামিলটন।

ওরা সবাই হ্যারিস

বহুবার হ্যারিস–- ইংল্যান্ডের রাজকীয় বিমান বাহিনীর এয়ার চিফ মার্শাল স্যার আর্থার হ্যারিস দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় বার বার নিজের জীবন বিপন্ন করে জার্মানদের ঘাঁটিগুলোর উপর বোমাবর্ষণ করেছিলেন। এক হাজার বোমারু বিমান নিয়ে ইংরেজ বিমানবাহর শত্রুর কয়েকটি নির্দিষ্ট ঘাঁটির উপর যখন আক্রমণ চালিয়েছিল, সেই সময়ে পূর্বোক্ত বৃটিশ বিমানবাহিনীর নেতা ছিলেন স্যার আর্থার হ্যারিস। তার কার্যকলাপে মুগ্ধ হয়ে সহকর্মীরা আর্থার হ্যারিসের নাম রেখেছিল বহুবার হ্যারিস।

কর্নেল টমাস হ্যারিসন– মার্সটন মুর নামক স্থানে ১৬৪৪ সালের ২ জুলাই বিদ্রোহী অলিভার ক্রমওয়েলের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজশক্তির যে যুদ্ধ হয় সেই যুদ্ধে ক্রমওয়েলকে নিশ্চিত পরাজয়ের ভয়াবহ পরিণাম থেকে রক্ষা করেছিলেন বিদ্রোহী পক্ষের এক সেনাধ্যক্ষ, নাম কর্নেল টমাস হ্যারিসন। রাজকীয় বাহিনীর একদল অশ্বারোহী প্রিন্স রুপার্টের নেতৃত্বে ক্রমওয়েলের বিদ্রোহী সেনাদলকে ছিন্ন ভিন্ন করে পিছু হটে যেতে বাধ্য করেছিল। সেই সময় বিদ্রোহীদের দলভুক্ত কয়েকটি অশ্বারোহী নিয়ে প্রতি-আক্রমণ চালালেন কর্নেল হ্যারিসন। তার অদ্ভুত বীরত্ব ও রণকৌশলে বিধ্বস্ত হয়ে গেল আক্রমণকারী ঘোড়সওয়ার সৈনিকের দল।

এই ঘটনায় ক্রমওয়েলের সৈন্যরা অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে উঠল, নূতন উদ্যম ও উদ্দীপনা দিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল রণক্ষেত্রে এবং সেই প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হল রাজশক্তির সৈন্য বাহিনী।

জোসেফ হ্যারিস– নামে যে মানুষটি ইয়র্কশায়ার থেকে এসে ১৭৬৫ খৃস্টাব্দে আমেরিকাতে বসতি স্থাপন করেছিল, তার নামেই পূর্বোক্ত স্থানটির নামকরণ হয়েছিল হ্যারিসবার্গ। বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত পেনসিলভেনিয়া নামক প্রদেশের রাজধানী হচ্ছে এই হ্যারিসবার্গ। পেনসিলভেনিয়ার রাজধানী আজ হ্যারিসের নাম অমর করে রেখেছে বটে, কিন্তু নূতন স্থানে পদার্পণ করার অব্যবহিত পরেই জোসেফ হ্যারিস হয়েছিল মৃত্যুর সম্মুখীন। সাঁকোহানা নদী নৌকাযোগে পাড়ি দেবার সময়ে রেড-ইন্ডিয়ানদের দ্বারা বারংবার আক্রান্ত হয় হ্যারিস এবং তার দলবল। ক্রমাগত বন্দুকের গুলি বর্ষণ করে অভিযাত্রীরা তাদের পথ পরিষ্কার করে নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পায়।

ওরা সবাই হবস

জ্যাক হবস– ১৯০৩ খৃস্টাব্দে জ্যাক হবস ক্রিকেটের মাঠে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন এবং কিছু কালের মধ্যেই ব্যাটসম্যান হিসাবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ৩১ বৎসর ধরে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মাঠে জ্যাক তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে সর্ব সমেত তিনি ৬০,০০০ রান করেছিলেন এবং তার মধ্যে সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল একশ সাতানব্বই।

বব হবস– দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে মোটর সাইকেলের খেলা দেখাত বব হব। খেলাগুলো ছিল অতিশয় বিচিত্র ও বিপদজনক। ববের খেলা দেখে দর্শকরা ভয়ে বিস্ময়ে চমকে উঠতেন। আমেরিকার কাউবয় বা গো-পালকদের মতো পরিচ্ছদ ধারণ করে বব মোটর সাইকেলের বিচিত্র ক্রীড়া কৌশল প্রদর্শন করত এবং রোমাঞ্চকর খেলাগুলোকে আরও বেশি রোমাঞ্চকর করার জন্য তার সহোদরা ভগ্নীকে বসিয়ে নিত কাঁধের উপর।

ওরা সবাই হবসন

অ্যাডমিরাল হবসন ১৮৯৮ খৃস্টাব্দের ৩ জুন যখন স্পেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সংঘর্ষ চরমে পৌঁছেছিল, সেই সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-বিভাগের অ্যাডমিরাল হবসন স্যান্টিয়াগো বন্দরের মুখে স্প্যানিস রণপোতের গতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বন্দরের মুখে একটা জাহাজ ডুবিয়ে তিনি স্পেনের রণতরীগুলোর যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন এবং প্রচণ্ড গোলাবৃষ্টির মধ্যে একটা স্ট্রীম লঞ্চে উঠে পলায়ন করেন।

বিল হবসন– অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের বিল হবসন হঠাৎ একদিনেই সমস্ত এলাকার বিখ্যাত মানুষ হয়ে পড়ল।

বন্ধুদের সঙ্গে ১০ পাউণ্ড বাজি রেখে সিডনি শহরের সবচেয়ে জনাকীর্ণ অঞ্চলের উপর সে শুয়োর চড়াতে শুরু করল। দুটো-চারটে নয়, তার সঙ্গে ছিল ছয়-ছয়টা শুয়োর। প্রথমে বিশেষ কোনো গোলমাল হয়নি, কিন্তু হঠাৎ এক হতভাগা কুকুর কোথা থেকে এসে একটা শুয়ারের পায়ে কামড়ে বসিয়ে দিল। সঙ্গেসঙ্গে ঘাবড়ে গিয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে শুরু করল শুয়োরের দল এবং তাদের ছুটোছুটির ফলে সমস্ত এলাকার যানবাহনের গতি রুদ্ধ হয়ে গেল অতর্কিতে। অনেকের কাছেই ঘটনাটা বেশ উপভোগ্য হয়েছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু পুলিশ-বিভাগ এই শূকর-ঘটিত ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ করেননি সরকারি রাস্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্যে স্থানীয় পুলিশের তরফ থেকে তার উপর সমন জারি করা হয়।

ওরা সবাই কেলী

এইচ এম. এস. কেলী– ১৯৪০ খৃস্টাব্দে লর্ড লুই মাউন্ট ব্যাটেন পরিচালিত এইচ. এম. এস. কেলী নামক যুদ্ধ জাহাজটি আরও কয়েকটি রণপোতের সঙ্গে সমুদ্রগর্ভে লুক্কায়িত জার্মান সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজের সন্ধানে যাত্রা করে। এক রাত্রে অতর্কিতে শত্রুপক্ষের টর্পেডোর আঘাতে কেলী জখম হয়। এইচ. এম. এস. বুলডগ নামক একটি বৃটিশ রণতরী পূর্বোক্ত কেলীকে টেনে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যায়। পরদিন আকাশপথে শত্রুপক্ষের বিমান বাহিনী বৃটিশ রণতরী দুটিকে আক্রমণ করল। বৃটিশ রণতরী দুটি অদ্ভুত দক্ষতার সঙ্গে ৯০ ঘণ্টা ধরে শত্রু বিমানের মোকাবিলা করে এবং শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আস্তানায় পৌঁছে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়।

কেলী- টেক্সাস অঞ্চলে লাকি চান্স সেলুন নামে পানাগারে ঝগড়া-ঝাটি মারামারির উদ্ভব হলেই উক্ত দোকানের মালিক হাঁক দিয়ে উঠতো- ওহে, কে আছেন একবার কেলীকে ডেকে দাও তো! কেলী ছিল আয়ারল্যান্ডের এক দুর্ধর্ষ মানুষ টেস অঞ্চলে এসে সেখানকার অসামরিক বাহিনীতে সে যোগ দিয়েছিল। গোলমালের খবর পেলেই সে অকুস্থলে আবির্ভূত হত এবং অবস্থিত ব্যক্তিদের ধরে নিক্ষেপ করত দোকানের বাইরে রাস্তার উপর! কেলীর সঙ্গে রিভলভার থাকতো। কিন্তু ব্যবহারের প্রয়োজন বড়ো একটা হত না।

ওরা সবাই আর্নল্ড

জেনারেল আর্নল্ড– ১৯৪৫ খৃস্টাব্দের ২৫ মে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক বিমান বাহিনী জাপানের টোকিও শহরে হানা দেয়। জাপানিদের ফাইটার বিমান বহর পূর্বোক্ত আমেরিকার বিমান বাহিনীকে বাধা দেবার চেষ্টা করে। সঙ্গেসঙ্গে তলা থেকে বিমান-বিধ্বংসী কামানের অগ্নিবৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বহর টোকিও শহরের প্রায় সমস্ত মিলিটারি আস্তানা ও প্রধান শিল্পকেন্দ্রগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিমান আক্রমণে অংশগ্রহণ করেছিল পঁচিশটি বোমারু বিমান বিপুল সংখ্যক ওই বিমান বহরের প্রচণ্ড অভিযানকে যিনি পরিচালনা করেছিলেন তাঁর নাম জেনারেল আর্নল্ড।

টমাস আর্নল্ড– ১৮২৩ খৃস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাগবি স্কুলে একটা ফুটবল ম্যাচ হচ্ছিল। হঠাৎ একজন খেলোয়াড় ফুটবলটা হাতে নিয়ে ছুটতে শুরু করে এবং প্রতিপক্ষকে একটি গোল দিতে সমর্থ হয়। সেই সময়েই প্রথম পায়ের ফুটবল হাতে উঠে রাগবি খেলার সূত্রপাত হয়। কিন্তু তখনকার লোকেরা ব্যাপারটাকে মোর্টেই পছন্দ করেনি। কয়েক বৎসর-পরে হেডমাস্টার টমাস আর্নল্ড রাগবি খেলার নিয়ম-কানুন রচনা করেন এবং তারপর থেকেই খেলার আসরে রাগবির স্থান স্বীকৃত হয়।

জেফ আর্নল্ড একদল রেডইন্ডিয়ান যোদ্ধা একবার জেফ আর্নল্ড নামে এক ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। ছুটতে ছুটতে একটা খরস্রোতা নদীর সামনে এসে জেফ দেখল, নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত জুড়ে পড়ে আছে একটা প্রকাণ্ড গাছ। ঝড়ের আক্রমণে পড়ে গিয়ে গাছটা সেতুর কাজ করছিল। এক দৌড়ে গাছটার উপর দিয়ে নদী পার হল জেফ, তারপর বারুদ জ্বালিয়ে গাছটাকে উড়িয়ে দিল। জেফের পিছনে পিছনে তাড়া করে এসেছিল রেড ইন্ডিয়ানরা এবং তাদের মধ্যে চারজন পূর্বোক্ত গাছটার উপর উঠেও পড়েছিল। আচম্বিতে বিস্ফোরিত বারুদের ধাক্কায় ছিন্ন-ভিন্ন গাছটার সঙ্গে তারাও ছিটকে পড়ল নদীর জলে। খরস্রোতা নদী পার হওয়ার অন্য কোনো পথ না থাকায় অবশিষ্ট রেডইন্ডিয়ানরা জেফকে আক্রমণ করতে পারল না। উপস্থিত বুদ্ধির জন্য বেঁচে গেল জেফ আর্নল্ড।

ওরা সবাই গ্র্যান্ট

প্যাট্রিক গ্র্যান্ট- ১৮২০ খৃস্টাব্দে ভারতবর্ষে অধিষ্ঠিত ব্রিটিশ সৈন্যদলের বেঙ্গল ইনফ্যান্টি নামক বিভাগে যখন প্যাট্রিক গ্র্যান্ট প্রবেশাধিকার লাভ করল, তখন তার বয়স মাত্র সোল। সেনাদলে ভর্তি হওয়ার এক বছর পরে প্যাট্রিক একদিন সমর বিভাগের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র নিয়ে প্রধান দপ্তরের দিকে যাত্রা করল, তার সহযাত্রী হল ছয়জন ভারতীয় সৈনিক। পথের মধ্যে হঠাৎ একদল দস্যু তাদের আক্রমণ করল। ডাকাতরা দলে খুব ভারি ছিল, প্রথম আক্রমণেই তারা তিনজন ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা করতে সক্ষম হল। কিন্তু বাকি চারটি মানুষকে অত সহজে কাবু করা গেল না– মুহূর্তের মধ্যে তিনটি ভারতীয় সৈন্যকে সংহত করে প্যাট্রিক গ্র্যান্ট ঝাঁপিয়ে পড়ল দস্যুদের উপর। লড়াই চলল কিছুক্ষণ ধরে… ঝকমক করে জ্বলতে লাগল শাণিত তরবারি… ঘন ঘন গর্জনে রিভলভারের মুখে জাগল চকিত অগ্নিশিখা… দস্যুরা হঠাৎ সভয়ে আবিষ্কার করল, তাদের দলের পনের জন দস্যু রক্তাক্তকলেবরে মৃত্যুশয্যায় লম্বমান হয়েছে, অথচ বিরোধী পক্ষ এখনও লড়াই করছে প্রবল উৎসাহের সঙ্গে। দস্যুরা বুঝল, সংখ্যায় কম হলেও এই চার ব্যক্তি হচ্ছে সাক্ষাৎ মৃত্যুর জীবন্ত প্রতিনিধি, এখানে দাঁড়ানো মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করল। মাত্র সোল বৎসর বয়সেই প্যাট্রিক গ্র্যান্ট যে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল, তা তুলনা-বিরল। পরবর্তীকালে তার পদোন্নতি ঘটেছিল, পরিণত বয়সে সে হয়েছিল ফিল্ড মার্শাল।

গ্র্যান্ট– দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ বাহিনীর দলভুক্ত একটি কুকুরের নাম ছিল গ্র্যান্ট। এক রাত্রে গ্র্যান্টকে নিয়ে তার রক্ষক যখন রাজপথে টহল দিচ্ছে, সেই সময় একটি দোকানের ভিতর থেকে ভেসে এল সন্দেহজনক শব্দ। পুলিশ কনস্টেবল দোকানের জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকল, সঙ্গেসঙ্গে এক দুবৃত্ত পিস্তল উঁচিয়ে তার দিকে গুলি চালানোর উপক্রম করল। কিন্তু গুলি ছোঁড়ার আগেই গ্র্যান্ট ঝাঁপিয়ে পড়েছে লোকটির উপর পিস্তলের গুলি হল লক্ষ্যভ্রষ্ট। গ্ল্যান্টের উপস্থিত বুদ্ধি ও ক্ষিপ্রতার জন্যেই নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেল পুলিশ কনস্টেবলটি।

ওরা সবাই বেকার

স্যামুয়েল বেকার– আফ্রিকায় মার্চিসন জলপ্রপাত আবিষ্কার করার পরের দিন স্ত্রীকে নিয়ে নৌকোয় নদী পার হচ্ছেন, এমন সময় অতর্কিতে তাদের আক্রমণ করল এক বৃহৎ জলহস্তী। সঙ্গেসঙ্গে আসন্ন ভোজের লোলুপ প্রত্যাশায় নৌকো ঘিরে ফেলল কুড়িটা কুমির। জলহস্তীর কল্যাণে (!) নৌকো যখন উল্টে যাওয়ার উপক্রম, ঠিক সেই মুহূর্তে গুলি চালিয়ে জলহস্তীকে আহত করলেন স্যামুয়েল বেকার। জলহস্তীর রক্তে লাল হয়ে উঠল নদীর জলরাশি এবং সেই রক্ত দেখে ক্ষেপে কুমিরের দল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্বজোড়া দস্তুর চোয়ালের নিষ্ঠুর দংশনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল জলহস্তীর বিশাল দেহ!

বিল বেকার–লন্ডনে রুটি তৈরীর কাজ করত। সে অষ্টাদশ শতাব্দীর কথা। একদিন সন্ধ্যায় একতাল ভিজে ময়দা নিয়ে রুটি তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সে, এমন সময় তার সামনে উপস্থিত হল পিস্তলধারী এক দুবৃত্ত। বিনা বাক্যব্যয়ে বিল হাতের ময়দা-সমেত পাত্রটি সজোরে ছুঁড়ে মারল দুবৃত্তের মুখে। পিস্তলধারী এমন অপরূপ অভ্যর্থনা কস্মিন্ কালেও আশা করেনি রীতিমতো হকচকিয়ে গেল সে, আগ্নেয়াস্ত্রটিও তার হাতছাড়া হয়ে ছিটকে পড়ল মাটির উপর। সেটাকে আবার করায়ত্ত করতে গেল সে, কিন্তু না, তার কোনো সুযোগই সে পেল না– চোখের পলকে বিলের বজ্রমুষ্টি তাকে ধরাশায়ী করে ফেলল। এক্ষেত্রেও যথারীতি পতন এবং মুছা। জ্ঞান ফিরে পেতে তাকে কর্তৃপক্ষের করকমলে সমর্পণ করল বিল।

ওরা সবাই ইলিয়ট

স্যার জন ইলিয়ট- ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জেমসের রাজত্বকালে ইংল্যান্ডের উপকূলে কর্নওয়াল নামক স্থানে ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছিল এক দুর্ধর্ষ জলদস্যু, নাম তার জন নাট। তাকে শায়েস্তা করার জন্য স্যার জন ইলিয়ট নামে এক আইন-ব্যবসায়ী একদিন জাহাজ সাজিয়ে একদল রণদক্ষ নাবিক নিয়ে জলপথে পূর্বোক্ত বোম্বেটের অনুসন্ধানে যাত্রা করলেন। আইনজ্ঞ জন ইলিয়ট এবং বোম্বটে জন নাট একদিন পরস্পরের সাক্ষাৎ লাভ করল, তার পরই শুরু হল অস্ত্রে অস্ত্রে ভীম পরিচয়! সেই যুদ্ধে বোম্বেটের তরবারি আইনজ্ঞের অসির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হল, স্যার জন ইলিয়টের হাতে বন্দি হল জন নাট এবং তার সহচর দস্যুদল। কিন্তু রাজা জেমসের একজন সভাসদ ছিলেন উক্ত বোম্বেটের আত্মীয়। ফলে বোম্বেটে জন নাট মুক্তিলাভ করল এবং স্যার জন ইলিয়ট হলেন কারাগারে আবদ্ধ!

জন ইলিয়ট–১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে জন ইলিয়ট নামে এক ইংরেজ ধর্মপ্রচারক আমেরিকার মাটিতেই বসবাস করতে মনস্থ করলেন। খরস্রোতা এক নদীর ধারে বেড়াতে বেড়াতে একদিন জন দেখলেন, নৌকো থেকে পড়ে গিয়ে একটি রেড ইন্ডিয়ান যুবক জলের মধ্যে বিপন্ন হয়ে পড়েছে, এখনই তাকে উদ্ধার করতে না পারলে লোকটির মৃত্যু অনিবার্য। তৎক্ষণাৎ নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জন এবং লোকটিকে টেনে নিয়ে আসলেন ডাঙার উপর। উক্ত যুবকটি ছিল একজন রেড ইন্ডিয়ান সর্দারের পুত্র। কৃতজ্ঞতাবশত রেড ইন্ডিয়ান যুবকটি তার প্রাণদাতাকে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষা শিখিয়ে দিয়েছিল এবং সেইজন্যই স্থানীয় ভাষার বাইবেলের অনুবাদ করতে সমর্থ হয়েছিলেন জন ইলিয়ট।

ক্যাপ্টেন জন ইলিয়ট–-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে আয়ারল্যান্ডের উপকূলে ক্যাপ্টেন জন ইলিয়ট নামক বৃটিশ নৌবাহিনীর জনৈক অধিনায়ক একটি রণতরী নিয়ে সমুদ্রের উপর টহল দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হল দূরবর্তী সাগরের বুকে ভাসমান তিনটি যুদ্ধজাহাজের দিকে। ওই জাহাজগুলি ছিল ফরাসিদের। যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে ফ্রান্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ চলছিল। শত্রুপক্ষের তিন-তিনটি রণতরী দেখেও পলায়নের চেষ্টা করলেন না ক্যাপ্টেন ইলিয়ট, এগিয়ে গিয়ে আক্রমণ করলেন ফরাসিদের জাহাজ তিনটিকে। প্রথম জাহাজটিকে তিনি ডুবিয়ে দিলেন, দ্বিতীয়টির মাস্তুল ভেঙে সেটাকে করে দিলেন অকর্মণ্য এবং নিজের ডেকের উপর থেকে শত্রুপক্ষের ডেকের উপর উঠে অধিকার করলেন তৃতীয় জাহাজটিকে।

ওরা সবাই সলিভান

লুইস সলিভান– গগনভেদী উচ্চতার জন্যে আমেরিকার স্কাইস্ক্র্যাপার নামক যে অট্টালিকা সমগ্র পৃথিবীতে খ্যাতি লাভ করেছে, সেই অতিকায় অট্টালিকার পরিকল্পনা যে স্থপতির মাথায় প্রথম এসেছিল এবং বাস্তবে সেই কল্পনাকে যিনি সার্থক রূপ দিয়েছিলেন, তাঁর নাম লুইস সলিভান। উক্ত স্থপতি প্রথমে যে অট্টালিকাটি শুরু করেছিলেন সেটি ছিল তিরিশ তলার বাড়ি। আটাশ তলা পর্যন্ত যখন তৈরি হয়েছে, তখন মজুররা আর কাজ করতে রাজি হল না। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এত উঁচু বাড়িতে উঠে কাজ করা নিরাপদ নয়। স্থপতি লুইস সুলিভান তখন সবচেয়ে উপরতলায় উঠে ইস্পাতনির্মিত একটি কড়িকাঠের সংকীর্ণ পরিধির উপর পদচারণা করে দেখিয়ে দিলেন যে, ব্যাপারটা বিপজ্জনক নয়। তখন মজুররা আবার আশ্বস্ত হয়ে কাজ করতে শুরু করল।

জন এল, সলিভান– বোস্টন শহরের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ জন এল, সলিভান ১৫ বছরের মধ্যে ২০০,০০০ ডলারের চাইতে বেশি অর্থ উপার্জন করেছিল মুষ্টিযুদ্ধের আখড়াতে (বক্সিং রিং) ঘুষির লড়াই করে। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জেক কিলরেন নামক মুষ্টিযোদ্ধাকে পরাজিত করে সে আমেরিকার পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই লড়াইটা শেষ হয়েছিল ৭৫ রাউন্ড ঘুষোঘুষির পরে। তখনকার দিনে মুষ্টিযোদ্ধারা হাতে বক্সিং গ্লাস্ বা মুষ্টিযুদ্ধের দস্তানা লাগাত না, সলিভান আর কিলরেন-এর মুষ্টিযুদ্ধের নিষ্পত্তি হয়েছিল বিনা দস্তানায়, শক্ত মুঠির নিষ্ঠুর প্রহারে। সলিভান ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তার সম্মান বজায় রাখতে পেরেছিল, তারপর সে পরাজিত হয়েছিল জিম করবেট নামক বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধার কাছে। ] পিট সলিভান- অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড নামক স্থানে মেষচারণভূমির উপর দিয়ে বিচরণ করতে করতে জনৈক, অশ্বারোহী হঠাৎ সচমকে দেখল, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেশরধারী এক প্রকাণ্ড সিংহ। পশুটা একটা সার্কাস থেকে পালিয়ে এসেছিল। কিন্তু দীর্ঘকাল মানুষের সাহচর্যে থেকেও পশুরাজ তার হিংস্র স্বভাব ভুলতে পারেনি, সে ঝাঁপিয়ে পড়ল অশ্বারোহীর উপর। সিংহের থাবার আঘাতে লোকটি ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে ছিটকে পড়ল। লোকটির কাছে তখন চাবুক ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র নেই। সে সজোরে চাবুক বসিয়ে দিল সিংহের নাকের উপর। দারুণ যাতনায় আর্তনাদ করে সিংহ তীরবেগে স্থান ত্যাগ করল। যে মানুষটি সেদিন চাবুকের সাহায্যে ক্রুদ্ধ সিংহের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করেছিল, তার নাম পিট সলিভান।

জেনারেল জন সলিভান– আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে যেসব সেনাধ্যক্ষ অসামান্য সাহস ও বীরত্বের জন্যে খ্যাতিলাভ করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি হলেন জেনারেল জন সলিভান। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি ছোটো সৈন্যদল নিয়ে ইংলন্ডের সাহায্যকারী বিপুলসংখ্যক এক জার্মান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন তিনি। ওই যুদ্ধে একসময় তিনি নিজের সৈন্যদল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, ফলে শত্রু সেনা তাকে ঘিরে ফেলে বন্দি করতে উদ্যত হয়। কিন্তু শত্রুদের চেষ্টা সফল হয়নি, এক হাতে পিস্তল আর অন্য হাতে তরবারি নিয়ে প্রচণ্ড বিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে শেষ পর্যন্ত শত্রুব্যুহ ভেদ করে বেরিয়ে এসেছিলেন জেনারেল জন সুলিভান।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *