এক জাহাজওয়ালার গল্প – তাপস চৌধুরী
ইহুদিদের গির্জার কাছে রাস্তাটা যেখানে দু-ভাগ হয়ে গেছে, সেখানে পাজামা-পরা রোগা একটা লোক ফুটপাথে বসে টিনের জাহাজ বেচে৷
লোকটা চেঁচায় না৷ তার হয়ে জাহাজগুলোই বড়ো একটা জলের গামলায় ফটফট আওয়াজ করে ঘুরে ঘুরে দূর থেকে খদ্দের ডেকে আনে৷
ইস্কুল থেকে আসতে আসতে দুলু রোজ দাঁড়িয়ে দেখে৷ ভিড় হয় খুব৷ ভিড় হবারই কথা৷ এ তো আর তোমার ছেলে ভুলোনো খেলনার জাহাজ নয়! ছোটো হলে কী হয়, হোক না টিনের তৈরি৷ সত্যিকারের জাহাজের মতোই চলে৷
জলের গামলাকে সমুদ্দুর মনে করে নিলেই হয়৷
দুলুর খুব ইচ্ছে করে অমনি একটা জাহাজ কিনতে৷ ছোটো ভাইটার বড্ড অসুখ৷ সারাক্ষণ কাশে৷ বাবা-মার মন খারাপ৷ নইলে নির্ঘাত সে বলত৷
কিংবা কাজল, দীপক, শম্ভুর মতো সে যদি বাড়ি থেকে দুটো একটা করে জলখাবারের পয়সা পেত, তাহলেই সেই পয়সা জমিয়ে নিশ্চয় সে টিনের একটা জাহাজ কিনতে পারত৷
দুলু ভাবে, বাবা যদি রেলগাড়িতে মাথা ধরার ওষুধ না বেচে রাস্তায় বসে টিনের জাহাজ বেচত! তাহলে সব দিক থেকেই কেমন ভালো হত৷ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বাবার বুকে ব্যথা ধরত না, মাকেও রাত জেগে তেল মালিশ করতে হত না৷ এ কামরা থেকে ও কামরা যেতে গিয়ে রেলগাড়ির চাকায় পা কাটার ভয় নেই৷ দিব্যি পায়ে পা তুলে বসে বসে কাজ৷ চেঁচাতে হবে না, কিচ্ছু না৷ টিনের জাহাজই ফটফট করে খদ্দের ডেকে আনবে৷ তা ছাড়া, রেলগাড়ির লোকেরা যেন কেমন! বাবার এমন যে ধন্বন্তরী ওষুধ, তা তারা বিশ্বাসই করতে চায় না৷ রাস্তায় কিন্তু সে মুশকিল নেই৷ রাস্তার লোকেরা অনেক ভালো৷ তারা যে দেখতে পায় চোখের ওপর জলজ্যান্ত জাহাজ কথা বলে!
না কিনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে দুলুর ভারি লজ্জা করে৷ লোকটা যদি হঠাৎ কিছু বলে বসে৷ চোখাচোখি হলেই তাই তাড়াতাড়ি ভিড় ঠেলে সরে পড়ে৷ আর হাত দুলিয়ে দুলিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবে: যখন সে বড়ো হবে, যখন তার অনেক টাকা হবে-তখন গোলদিঘির মতো প্রকাণ্ড একটা গামলা কিনে তাতে সে বড়ো বড়ো টিনের জাহাজ ভাসিয়ে দেবে৷ ওই পাজামা পরা লোকটার মতোই সেও তার জাহাজগুলোর একটা করে নাম রাখবে৷ একটার নাম ‘চমক’, একটার নাম ‘তলোয়ার’, একটার নাম ‘হিন্দুস্থান’৷ তারপর? ‘কাথিয়াবাড়’৷ তারপর ‘আকবর’, তারপর ‘হামলা’, তারপর ‘নর্মদা’৷ দেখে দেখে নামগুলো তার মুখস্থ হয়ে গেছে৷
একদিন কিন্তু দুলু ধরা পড়ে গেল লোকটার কাছে৷
ছুটির দিনেও লোকটা ও জায়গায় বসে কে জানত! দুপুরে দুলু বেরিয়েছিল রাস্তায় যদি কোথাও ভালুক নাচ কিম্বা বাঁদর খেলা দেখতে পায়৷ নইলে পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর একবার দেখে আসবে খাঁচায় বন্দি চড়াই পাখি কেমন করে লোকের ভাগ্য বলে দেয়৷
হঠাৎ গির্জার কাছে আসতেই ফটফট শব্দ৷ জাহাজ চলছে, জাহাজ! দুলু এক ছুটে এসে পড়ে মোড়ের মাথায়৷ জলের গামলায় ভাসছে ‘তলোয়ার’৷
একটু পরেই তার খেয়াল হল তার চারিদিকে অন্য দিনের মতো লোকের ভিড় নেই৷ পাজামা পরা লোকটার মুখোমুখি সে একা দাঁড়িয়ে আছে৷
ভয় পেয়ে দুলু ছুটে পালাতে যাবে এমন সময় লোকটা পেছন থেকে ডাক দিল, ‘খোকা শোনো’৷
মুখ শুকিয়ে গেল দুলুর৷ কেন সে মরতে আজ এদিকে এল? লোকটা আজ আর তাকে আস্ত রাখবে না৷ আর যদি কিছু নাও করে, চুরি করে জাহাজ দেখার জন্যে এমনিতেই তার লজ্জায় মাথা কাটা যাবে৷
কিন্তু আশ্চর্য! লোকটা ওসব কোনো কথাই তুলল না৷ কেরোসিন কাঠের একটা বাক্স এগিয়ে তাকে বসতে বলল৷ কলের পুতুলের মতো দুলু গিয়ে তাতে বসল৷
‘কী নাম তোমার?’
দুলু নাম বলল৷ না, যতটা সে ভয় পেয়েছিল-ততটা ভয় পাবার কিছু নেই৷
আস্তে আস্তে দুলুর সঙ্গে লোকটার ভাব হয়ে গেল৷ কোন ক্লাসে সে পড়ে, বাড়িতে কে আছে সমস্তই সে বলল৷
বড়ো হয়ে কী করবে?
দুলু চুপ করে থাকে৷ ইচ্ছে হলেই কি করা যায়? বাবার কাছে শুনেছে, বাবার নাকি ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবার৷ আর দুলুর ইচ্ছে? তার ইচ্ছে এরোপ্লেনের পাইলট হবার৷ মা, বাবা, আর ছোটো ভাইকে নিয়ে সে তাহলে একেবারে মেঘের রাজ্যে উড়ে চলে যাবে৷ সে ইচ্ছের কথা কি সবার কাছে বলা যায়?
‘জাহাজ চালাতে ভালো লাগে না?’
দুলুর চোখ চকচক করে ওঠে৷ ভূগোলের বইটার কথা মনে পড়ে যায়৷ এদেশের ওপারে আরও কতকগুলো দেশ আছে৷ কত মানুষ আছে৷ ভালো লাগে বই কী! উঁচু উঁচু ঢেউগুলো আছড়ে পড়বে দু-পাশে!
জবাব না দিয়ে দুলু উলটে প্রশ্ন করে, ‘রাস্তায় বসে টিনের জাহাজ চালাতে?’
‘তা নয়৷ সত্যিকারের জাহাজ৷’
দুলু বলে, ‘তুমি কেন যাও না?’
‘এককালে গিয়েছি৷ এখন নেয় না৷’
দুলু এবার অবাক হয়৷ ‘সত্যি বলছ? কেন নেয় না এখন?’
‘সেই গল্প বলব বলেই তো তোমায় ডাকলাম৷’
তারপর একপাশে রাখা টিনের জাহাজগুলো এক জায়গায় পুঁটুঁলি করে বেঁধে লোকটা দুলুকে বলল, ‘গামলার জাহাজটা হল তোমার৷ বাড়ি যাবার সময় নিয়ে যাবে, বুঝলে৷’
আনন্দে দুলুর মুখ দিয়ে কথা বেরোল না৷ তারপর লোকটা আর একটা পুঁটুলি খুলে দুলুর সামনে ধরল৷ তাতে মুড়ি আর মুড়কি৷ বলল ‘নাও৷ খেতে খেতে গল্প শোনো৷’
লোকটা বলতে আরম্ভ করল:
ছেলেবেলায় আমার বাপ-মা মারা গিয়েছিল৷ মানুষ হয়েছিলাম মামার কাছে৷ মামাদের অবস্থাও ভালো ছিল না৷ যখন দেখলাম কোথাও কাজ জুটছে না, পল্টনে গিয়ে নাম লেখালাম৷ তখন ইংরেজ-জার্মানে পুরোদমে লড়াই চলেছে৷ আমাকে দিল নৌবহরে৷ জাহাজের খোলের মধ্যে কাজ৷ প্রাণ হাতে করে ঘোরা৷ খাটিয়ে খাটিয়ে জান বার করে দিত তবু ভালো লাগত কাজটা৷ সমুদ্রে কেমন যেন একটা নেশা আছে৷
তারপর লড়াই ফতে হল৷ ভাবলাম এবার মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে৷
তখনও জলে জলে থাকলেও আমরা থাকি দেশের মাটি ছুঁয়ে৷ কখনো বোম্বাই, কখনো করাচিতে৷ মাঝে মাঝে খবর পাই ইংরেজদের ওপর দেশের লোক খেপে আছে৷ বন্দুকের গুলিতেও তাদের বাগ মানানো যাচ্ছে না৷
সে আজ অনেকদিনের কথা৷ তুমি তখন এই এতটুকু৷
তুবড়ি যেমন একটু একটু করে ফুলকি কাটতে কাটতে হুস করে জ্বলে ওঠে, দেশ জুড়ে তেমনি কাণ্ড হল৷
একদিন আমরা খবর পেলাম, বোম্বাইতে নৌবহরের একদল লোক বেঁকে বসেছে৷ ‘তলোয়ার’ জাহাজে কাজ বন্ধ৷ ক্রমে এ-জাহাজ থেকে ও-জাহাজ, এ ব্যারাক থেকে ও-ব্যারাক আগুন ছড়িয়ে পড়ল৷ আস্তে আস্তে গোটা শহর হাত মুঠো করে উঠে দাঁড়াল৷ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ উঠল-ইংরেজ ভাগো৷
করাচিতে খবরটা আমরা একদিন পরে পেলাম৷ বন্দরে আর কাছাকাছি একটা দ্বীপে তখন আমাদের ‘হিন্দুস্থান’ জাহাজ ছাড়াও ছিল ‘চমক’, ‘হিমালয়’, ত্রিবাঙ্কুর’, ‘বাহাদুর’৷ পরদিন সকালে আমাদের জাহাজ ছাড়ার কথা৷ আমরা হাত গুটিয়ে বসলাম৷ যাব না৷
দু-দিনের মধ্যে আমাদের সমস্ত জাহাজের কাজ বন্ধ হয়ে গেল৷ বোম্বাইয়ে তখন বিদ্রোহীরা বন্দুক হাতে নিয়ে স্বাধীনতার লড়াই লড়ছে৷
শুধু হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়, পরের দিন সকাল থেকে করাচি বন্দরেও শুরু হয়ে গেল লড়াই৷ ইংরেজ শাসনের যেখানে যত চিহ্ন আছে, তার ওপর আমাদের রাগ ফেটে পড়ল৷ কুচকাওয়াজের মাঠে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে দেওয়া হল পরাধীনতার নিশান৷ জেল-হাজত ভেঙে নৌবাহিনীর বন্দি ভাইদের বার করে আনা হল৷ ‘হিমালয়’ আর ‘বাহাদুর’ জাহাজ থেকে ছ-শো লোক মোটর বোটে আর নৌকায় বেরিয়ে পড়ল জেটির দিকে৷ শহরে তারা মিছিল নিয়ে যাবে৷ একদল জেটিতে উঠতে পারল, মিলিটারি পিছু নেওয়ায় আরেকদল পারল না৷ যারা পারল না তাদের একদল মিলিটারির হাত এড়িয়ে আমাদের জাহাজে এসে উঠল৷ ‘হিন্দুস্থানে’ আমরা হলাম ছ-শো লোক৷
সকাল থেকে দু-বার মিলিটারি পাঠিয়েছে আমাদের জাহাজ দখল নেবে বলে৷ একবার বেলুচি, আরেকবার গুর্খা সৈন্যের ওপর হুকুম হয়েছে৷ কিন্তু ভাইয়ের গায়ে ভাই হাত তুলতে রাজি হয়নি৷
উলটে আমরাই বড়ো বড়ো সাহেবদের জাহাজ থেকে নামিয়ে দিলাম৷
ক্যাপ্টেন রাগে গরগর করতে করতে নেমে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ পেছন ফিরে আমাদের নিশানা করে সে রিভলবার থেকে গুলি ছুড়ল৷ সঙ্গেসঙ্গে গোরা পল্টনের দল জাহাজের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে এল৷
তাড়াতাড়ি আমরা জাহাজের গায়ে বড়ো বড়ো অক্ষরে একটা নোটিশ লাগিয়ে দিলাম: ‘যদি বাঁচতে চাও ওঠবার চেষ্টা কোরো না’৷ তখনকার মতো পিছিয়ে গেলেও গোরা পল্টনের দল ছোটো একটা মেশিনগান টেনে হঠাৎ আমাদের দিকে আগুনের গোলা ছুড়তে আরম্ভ করল৷
আমরাও কামানের মুখেই তার জবাব দিলাম৷ গোরা পল্টনেরা দেখতে দেখতে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল৷ কয়েক মিনিট চুপচাপ৷ তারপর আবার তাদের কামান গর্জে উঠল৷ ডাঙার ওপর বাড়ির ছাদে উঠে এবার তারা বালির বস্তার পেছনে আড়াল নিয়ে দাঁড়িয়েছে৷
আগুনের গোলা লেগে আমাদের দু-জন তক্ষুনি মারা গেল৷ তার মধ্যে একজন ছিল ষোলো বছরের একজন কিশোর৷
নীচের জেটির কাছে এসে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে বন্দরের হাজার হাজার মজুর৷ রাগে হাত তাদের নিশপিশ করছে৷ একেবারে হাত খালি নইলে তারা গোরা সায়েবদের একবার টের পাইয়ে দিত৷
দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের জাহাজ থেকে চারটে আগুনের গোলা গোরা পল্টনদের দিকে ছুটে গেল৷ গোটা তল্লাট থরথর করে কেঁপে উঠল৷ বীর পুঙ্গব সাহেবদের সেদিনের মতো লড়াইয়ের শখ মিটল৷
রাত্তিরটা ঠান্ডাভাবেই কাটল৷ সমস্ত রাত আমাদের চোখে ঘুম ছিল না৷ পাছে ওরা চড়াও হয় তার জন্যে তৈরি থাকতে হল৷ খবর পেলাম বোম্বাইয়ে নৌ বিদ্রোহীরা বীরের মতো লড়াই লড়ছে৷ আমরাও জয় না হওয়া পর্যন্ত লড়ব৷
এদিকে সাহেবরাও সারা রাত ধরে তোড়জোড় চালাল৷ যেখানে যত বন্দুক কামান গোলা বারুদ পেল এনে জড়ো করল৷ মোক্ষম জায়গাগুলো বেছে নিয়ে তারা ঘাঁটি গাড়ল৷ এমন ব্যবস্থা করল যাতে তারা আমাদের কোণঠাসা করে মারতে পারে৷
পরদিন সকালেই আমাদের কাছে চরম-পত্র এল-হয় বিনা শর্তে আত্মসমর্পন করো, নয় লড়াই করে মরো৷ যারা আমাদের দেশকে দু-শো বছর ধরে পরাধীন করে রেখেছে, তাদের পায়ের তলায় পড়ার চেয়ে লড়াই করে মরা ঢের ভালো৷ আমরা শেষের পথই বেছে নিলাম৷
এদিকে আমরা একটা সাংঘাতিক মুশকিলে পড়ে গেলাম৷ ভাঁটার টানে জল নেমে যাচ্ছে আর সেই সঙ্গে নীচে নেমে যাচ্ছে আমাদের জাহাজ৷ ওরা ওপরে আমরা নীচেয়৷
চারদিক থেকে ওদের কামান আর বন্দুক হঠাৎ গর্জে উঠল৷ আমরা মহা ধাঁধায় পড়ে গেলাম৷ একে নীচে থেকে ওপরের দিকে নিশানা করা যায় না৷ তার ওপর কাছেই মজুরদের বসতি৷ তবু আমরা সে অবস্থায় যতটা পারা যায় তার জবাব দিলাম৷
পঁচিশ মিনিটের বেশি লড়াই চালানো গেল না৷ আমাদের মধ্যে খুন হল ছ-জন, জখম হল তিরিশ জন৷
আমাদের মধ্যে একজন অল্প বয়সি ছেলে গোলাগুলি কেয়ার না করে সাদা নিশান হাতে নিয়ে সাহসের সঙ্গে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল৷ সাদা নিশান দেখে এক মুহূর্তের জন্যে ওদের কামান চুপ করল৷ তক্ষুনি হুকুম হল-ফায়ার! কামানের গোলায় ছেলেটি সেখানেই লুটিয়ে পড়ল৷
আমাদের বীরত্বের আর ওদের কাপুরুষতার লড়াই শেষ হল৷ সেদিন হারলেও স্বাধীনতার লড়াইয়ে আমাদেরই জয় হল৷ ইংরেজকে ছাড়তেই হল এদেশ৷
লোকটার যখন বলা শেষ হল বেলা তখন গড়িয়ে গেছে৷ দুলুর হাতে ‘তলোয়ার’ জাহাজটা তুলে দিয়ে দুটো প্রকাণ্ড লম্বা লাঠি বগলের নীচে লাগিয়ে এক ঝটকায় লোকটা উঠে দাঁড়াল৷ দুলু দেখল লোকটা একপাটি জুতো পরে নিল৷ তারপর একহাতে পুঁটুলিটা তুলে নিয়ে বলল ‘চলো যাওয়া যাক’৷
‘তোমার আরেক পাটি জুতো?’
‘লাগবে না’ বলে লোকটা পাজামার একটা পা তুলল৷ দুলু চমকে উঠে দেখল হাঁটুর কাছ থেকে তার একটা পা কাটা৷
দুলু জিজ্ঞেস করল, ‘পা-টা গেল কোথায় তোমার?’
‘ওই পা দিয়েই সেদিন আমি ইংরেজদের লাথি মেরেছিলাম৷’
অগ্নি মিত্র (১৯৩০-২০০৩) প্রকৃত নাম অনিলকুমার সেনগুপ্ত৷ বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার৷ বেতার ও দূরদর্শনে তাঁর নাটক সম্প্রচারিত হয়েছে৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-আপোষ করিনি, সম্বুন্ধ জাতক, পটভূমি দৃশ্যমান, ডুংরিবাবা ইত্যাদি৷
অপূর্বকুমার কুণ্ডু (১৯৪৭-) ছোটোদের জন্যই লেখেন গল্প, ছড়া, কবিতা, উপন্যাস৷ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-ইতিহাসের গল্প শোনো, আগুনের পরশমণি, বনপুলকের খুশি ইত্যাদি৷
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১) জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক৷ বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও কথাকার৷ তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় চিত্রকলার পুনরুত্থান হয়৷ পিতৃব্য রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে সাহিত্য জগতে পদার্পণ৷ লিখেছেন-রাজকাহিনি, শকুন্তলা, ক্ষীরের পুতুল, নালক, বুড়ো আংলা, ভূতপতরীর দেশে ইত্যাদি৷
কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫) রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের অন্যতম প্রধান কবি৷ গদ্য লেখার হাতও পাকা৷ উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-কিশলয়, পর্ণপূট, ক্ষুদকুঁড়ো, পূর্ণাহুতি ইত্যাদি৷ ছোটোদের জন্য লেখা গ্রন্থ-গল্পমালিকা, গল্প বলি গল্প শোনো, ছোটোদের কবিতা, পুরাণের গল্প ইত্যাদি৷
কুমার মিত্র (১৯৩৮-) মূলত ছোটোদের জন্য লেখেন৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-বনজঙ্গলের গল্প, রঞ্জা নদীর তীরে, দেও পাহাড়ের দেবতা, মানুষ-পুতুলের পালা, আকাশ মাটি, যুগলবন্দী৷
খগেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮০-১৯৬১) রায় বাহাদুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক৷ বৈষ্ণব সাহিত্য বিশারদ৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-নীলাম্বরী, কানের দুল, রূপতৃষ্ণা, সুখ ও দুঃখ ইত্যাদি৷
গজেন্দ্রকুমার মিত্র (১৯০৮-১৯৯৪) জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক৷ কথাসাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-রাত্রির তপস্যা, কলকাতার কাছেই, পৌষ ফাল্গুনের পালা, উপকন্ঠে ইত্যাদি৷ ছোটোদের জন্য লেখা গ্রন্থ-গোরুর নিরুদ্দেশ যাত্রা, কিশোরদের রূপকথা, কিশোর সমগ্র ইত্যাদি৷
চিত্রা দেব (১৯৪৩-২০১৭) সাহিত্যকার, বিশিষ্ট গবেষক৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহল, ঠাকুর বাড়ির বাহিরমহল, মহিলা ডাক্তার: ভিন্নগ্রহের বাসিন্দা৷ ছোটোদের জন্য লেখা-সিদ্ধিদাতার অন্তর্ধান, আপন খেয়ালে চলেন রাজা, অদ্ভুত যত হাতির গল্প ইত্যাদি৷
জিতেশচন্দ্র লাহিড়ি (১৮৯৯-১৯৬৭) বিশিষ্ট বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী৷ তাঁর লেখা প্রথম বই-বিপ্লবী বীর নলিনী বাগচী-ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করে৷ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-নমামি, বিপ্লবের তপস্যা, উঁচু-নীচু প্রভৃতি৷
তাপস চৌধুরী (?-? ) ছদ্মনামের অন্তরালের লেখক বাংলার একজন বিশিষ্ট কবি, গদ্যশিল্পী ও সম্পাদক৷
তৃষিত বর্মণ (১৯৪৩-) বয়স্ক পাঠ্য ও কিশোর পাঠ্য রচনায় দক্ষ৷ লিখেছেন বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্পগুচ্ছ৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-প্রতিপক্ষ, বুলবুলির বাসা, উড়ো ফোনের ফাঁদে, ইচ্ছে ডানার জাদুকর, ম্যাচ উইনার ইত্যাদি৷
দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯১৭-১৯৯৫) ছোটোদের বিশিষ্ট পত্রিকা কিশোর ভারতীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক৷ ছোটোদের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি লিখেছেন-কালের ডঙ্কা বাজে, নীল ঘুর্ণি, অথ ভারত কথকতা, চিরকালের গল্প, দুরন্ত ঈগল প্রভৃতি৷
দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) অধ্যাপক, বিখ্যাত গবেষক, প্রাচীন বাংলা লোক সাহিত্যে উদ্ধার কার্যে ব্রতী৷ তাঁর রচিত গ্রন্থ-বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়, রামায়ণী কথা, বৃহৎ বঙ্গ, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য, মুসলমানের অবদান৷
দীপান্বিতা রায় (১৯৬৯-) নতুন প্রজন্মের লেখিকা, নানা বিষয়ে লেখার আগ্রহী৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-সোনালি রুপালি রূপকথা, দিঠির দুপুর, আঁধারে মানিক জ্বলে, গুপিবাঘার পোলাপান ইত্যাদি৷
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (১৯৬৬-) ব্যক্তিজীবনে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী, নানা দুর্গম পথ পরিক্রমা করেন৷ সাহিত্য সৃষ্টিতেও সমান ভালোবাসা৷ প্রকাশিত গ্রন্থের কয়েকটি-দোর্দুবুড়ুর বাক্স, ইচ্ছে পলাশ, নিবাত কবচ অভিযান প্রমুখ৷
ধীরেন্দ্রলাল ধর (১৯১৩-১৯৯১) বয়স্ক পাঠ্য সাহিত্য রচনা করলেও মূলত ছোটোদের জন্য সাহিত্য সৃষ্টিতে আনন্দ পেতেন৷ কত ধরনের লেখা যে লিখেছেন-যুদ্ধ নিয়ে গল্প, আমার দেশের মানুষ, প্রিয়দর্শী অশোক, বিপদের বেড়াজাল, নীলকর এল দেশে ইত্যাদি
ননী ভৌমিক (১৯২১-১৯৯৬) বিশিষ্ট সাহিত্যিক অনুবাদক, একসময়ে পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, অনুবাদের কাজে রুশ দেশে যান৷ পরিণত বয়সে দেশে একবার ফিরে এলেও তিনি আবার রাশিয়ায় ফিরে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ তাঁর উল্লেখযোগ্য বই-ধানকানা, ধুলোমাটি, চৈত্রদিন৷
নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৯০৫-১৯৬৩) কলকাতা বেতারে দীর্ঘদিন গল্পদাদুর আসর পরিচালনা করেছেন৷ গল্পভারতী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক৷ চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে অভিনয়ও করেছেন৷ ছোটোদের জন্য সাহিত্য রচনায়, বিশেষত অনুবাদে তাঁর নৈপুণ্য৷ শতাব্দীর সূর্য, মাদার, দুটি পাতা একটি কুঁড়ি ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ৷
পূর্ণেন্দু পত্রী (১৯৩১-১৯৯৭) চারুশিল্পী, কবি, কথাকার, চলচ্চিত্র পরিচালক৷ ছোটোদের জন্য তাঁর লেখা বই-তুলিকালির কলকাতা, কুষ্ঠিলতা, আলটুং ফালটুং, ইল্লি বিল্লী, কলকাতার রাজকাহিনী ইত্যাদি৷
প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত (১৯১০-১৯৯০) ঐতিহাসিক, শিক্ষাবিদ, উপাচার্য৷ নানা কাজের ফাঁকে ছোটোদের জন্য ইতিহাসের গল্প উপহার দিতে ভোলেননি৷ তাঁর লেখা বাংলা বই-ইতিহাসের গল্প, আলেখ্য দর্শন, দিনগুলি মোর ইত্যাদি৷
প্রবাসজীবন চৌধুরী (১৯১৬-১৯৬১) দার্শনিক, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, কবি ও গল্পলেখক৷ প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থ-ঈশ্বর সন্ধানে, সৌন্দর্য দর্শন ইত্যাদি৷
প্রমথনাথ বিশী (১৯০১-১৯৮৫) ইংরেজি লেখক জর্জ বার্নার্ড শ-এর সংক্ষেপিত নাম জি. বি. এস-এর ঢঙে তিনিও প্র. ণা. বি.-তে রূপান্তরিত হন৷ শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের ছাত্র, গল্প-উপন্যাস-কবিতা-নাটক-প্রবন্ধ-স্মৃতিকথা সব ধরণের রচনায় পটু৷ উল্লেখযোগ্য অনেক বইয়ের কয়েকটি-কেরি সাহেবের মুন্সী, জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার, চাপাটি ও পদ্ম, রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন ইত্যাদি৷
প্রসিত রায়চৌধুরী (১৯৩৫-) ইতিহাস লেখকের প্রিয় বিষয়৷ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের নাম-ইতিহাসের গল্প, গল্প নয় সত্যি, আলো জ্বালালো যারা, ঘুম ভাঙার গান ইত্যাদি৷
ফটিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০১-১৯৫৫) ছোটোদের প্রিয় কবি ও গল্পকার৷ আরও একটি কারণে তিনি স্মরণীয়৷ বাংলায় শিশু সাহিত্য রচয়িতাদের জন্য কোনো সম্মান প্রদানের ব্যবস্থা ছিল না৷ ফটিক তাঁর সঞ্চিত অর্থ শিশু সাহিত্য পরিষদের হাতে তুলে দেন৷ এবং তার সুদ থেকে ভুবনেশ্বরী স্বর্ণপদক প্রতিবছর একজন শিশু সাহিত্যিককে প্রদান করা হয়৷ প্রথম প্রাপক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (মরণোত্তর), দক্ষিণা রঞ্জন মিত্র মজুমদার (দ্বিতীয় প্রাপক)৷ ফটিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট কবি ছিলেন, তাঁর লেখা পত্রপত্রিকার পাতায় রয়ে গেছে৷ তাঁর দু-টি মাত্র ছোটো বই ছাপা হয়েছিল-খুকুর স্বপ্ন, এবং হেস্তনেস্ত৷
বারীন্দ্রনাথ দাশ (?-?) ইনি এক সময়ে দীপ্তেন্দ্রকুমার সান্ন্যাল বিখ্যাত অচল পত্রে চমৎকার রহস্যকাহিনী লিখছেন৷ পরে লেখা লিখিত জগৎ থেকে নিরুদ্দেশ৷ বহুকাল পরে দেব সাহিত্য কুটির প্রকাশিত বার্ষিক পত্রে পুনরাবির্ভাব৷ জ্যোতিপ্রসাদ বসুর সঙ্গে যুগ্মভাবে লিখেছিলেন ইতিহাস আশ্রিত গল্পগ্রন্থ-এশিয়ায় বরণীয়৷
বিশ্বপতি চৌধুরী (১৮৯৬-১৯৭০) কলকাতা বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী৷ প্রকাশিত গ্রন্থ-আশীর্বাদ, ঘরের ডাক, স্বপ্নশেষ, কথাসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি৷
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (১৯০৫-১৯৯১) আকাশবাণী সম্প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিণীর ভাষ্য পাঠ তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়৷ প্রকাশিত গ্রন্থ-বিরুপাক্ষের ঝঞ্ঝাট, বিরুপাক্ষের বিষম বিপদ ইত্যাদি৷
ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯১-১৯৫২) বাংলা সাহিত্য বিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক৷ পুরাতন সংবাদপত্র ও সাময়িকীর পাতা থেকে নানা ঘটনার বিশ্লেষণ করে তার মূল্যায়ণ পাঠকদের পাতে পরিবেশন করে তাদের ঋদ্ধ করেছেন৷ তাঁর সংকলিত সাহিত্যসাধক গ্রন্থমালা, বাংলা নাট্যশালার ইতিহাস, বাংলা সাময়িক পত্র, পরিষদ পরিচয় ইত্যাদি৷
মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৮-২০১৬) বাংলার বরেণ্য কথাশিল্পী৷ প্রান্তিক মানুষের জীবন ও সংগ্রামের কথা তাঁর লেখনিতে চিত্রিত হয়েছে৷ ছোটোদের জন্য তাঁর লেখা কম নয়৷ তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-আরমানি চাঁপার গাছ, মানিক দুলের বন্ধু, বিরসামুণ্ডা, গল্পের গোরু ন্যাদোশ, মুনেশ্বর, হা রে রে রে ইত্যাদি৷
যদুনাথ সরকার (১৮৭০-১৯৫৮) বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, অধ্যাপক, উপাচার্য৷ ভারত ইতিহাসে দীর্ঘতম বিদেশি শাসক মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ তিনি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন৷ বাংলায় লিখেছেন শিবাজী৷ রবীন্দ্রসাহিত্যের সমঝদারি পাঠক ছিলেন৷
যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৮৩৩-১৯৬৫) বাংলায় ছোটোদের বিশ্বকোষ শিশুভারতীর সংকলন করেন৷ প্রথমে ১০ খণ্ডে পরে আরেকটি সংযোজনী খণ্ড৷ কৈশোরক নামক শিশু পত্রিকার সম্পাদক৷ তাঁর ছোটোদের জন্য লেখা অসংখ্য বইয়ের কয়েকটি-অজানা দেশে, আরব বেদুইন, বাংলার ডাকাত, যাদুপুরী, সাহারার বুকে, খেলার মাঠ, রূপকথার দেশে ইত্যাদি৷
রণজিৎকুমার সমাদ্দার (১৯৪৮-) ইতিহাসের গল্প লিখতে ভালোবাসেন৷ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্থানীয় বিদ্রোহের প্রভাব ছিল তাঁর পিএইচ. ডি-র সন্দর্ভের বিষয়৷ প্রকাশিত গ্রন্থ-ইতিহাসের গল্প, ভারতের লোকনৃত্য: রূপ ও বিভব৷
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০) বাংলার বিশিষ্ট কথাশিল্পী, ইতিহাসের গল্প লেখায় তাঁর জুড়ি প্রায় নেই৷ সদাশিবকে কেন্দ্র করে শিবাজীর গল্পমালা বাংলা কিশোর সাহিত্যের সম্পদ৷ ছোটোদের জন্য লেখা তাঁর কয়েকটি বই-টিকিমেধ, মায়াবন, রাতের অতিথি, রাজদ্রোহী৷ তাছাড়া সদাশিবের কাণ্ড৷
শিশির বিশ্বাস (১৯৪৯-) ছোটোদের জন্য লিখে থাকেন৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-আমবাগানের পদ্ম গোখরো, মৃন্ময়ী মন্দিরের তোপদার, সোনার পাহাড়, পাথরের চোখ, কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেবেলা ইত্যাদি৷
শুভময় মণ্ডল (১৯৬৫- ) ছোটোদের এবং বড়োদের জন্য নিয়মিত পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন৷ প্রকাশিত গ্রন্থের কয়েকটি-জোয়ান অব আর্ক, ঘুম, সাজন ইত্যাদি৷
সুমথনাথ ঘোষ (১৯১২-১৯৮৪) বিশিষ্ট সাহিত্যিক৷ মূলত বয়স্ক পাঠ্য সাহিত্য রচয়িতা৷ মৌলিক রচনার চেয়ে ছোটোদের জন্য বিশ্ব সাহিত্যের অনেক প্রধান রচনা ভাষান্তর করে তাদের উপহার দিয়েছেন, যে তালিকায় রয়েছে-কিডন্যাপড, কেনিলওয়ার্থ, ডেভিড কপারফিল্ড, ট্রেজার আইল্যান্ড ইত্যাদি৷
স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৪৭-) ছোটোদের জন্য অনেক লিখেছেন৷ ইতিহাস এবং রহস্য রোমাঞ্চের গল্পে নিপুণ৷ তাঁর নাটক বেতার ও দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়েছে৷ অনেকগুলি গ্রন্থের কয়েকটি-তিব্বতী গুম্ফার রহস্য, সেদিন মহেঞ্জোদড়ো, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ড্রাগন পাহাড়ের রহস্য, জলদস্যুর গুপ্তধন ইত্যাদি৷
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত (১৯৭৩- ) তরুণ প্রজন্মের বিশিষ্ট লেখক৷ নানধরনের লেখায় পটু৷ তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের কয়েকটি-আঁধার রাতের বন্ধু, কৃষ্ণ লামার গুমফা, কালো ঘুড়ি, ফিরিঙ্গি ঠগী, চন্দ্রভাঙার চাঁদ, সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী, রানি হাটশেপসুটের মমি ইত্যাদি৷
হীরেন চট্টোপাধ্যায় (১৯৪৪-২০১৭) ছোটোদের এবং বড়োদের গল্প-উপন্যাস রচনায় সিদ্ধহস্ত৷ নাটকও লিখেছেন অনেক বেতার ও দূরদর্শনে সম্প্রচারের জন্য৷ ছোটোদের জন্য লেখা ক-টি গ্রন্থ-পার্কের সেই বুড়ো, বদ্যিনাথের বোধোদয়, খেলার নাম বুদ্ধি, রুদ্ধশ্বাস রহস্য ইত্যাদি৷
হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৮৮৮-১৯৬৩) বাংলা শিশু সাহিত্যে অ্যাডভেঞ্চার ও রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনির রাজা৷ অবশ্য লিখেছেন নানা বিষয়ে৷ তাঁর মস্ত পুস্তক তালিকার কয়েকটি-যখের ধন, মেঘদূতের মর্তে আগমন, অসম্ভবের দেশে, সূর্যনগরীর গুপ্তধন, দেড়শো খোকার কাণ্ড, জয়ন্তের কীর্তি ইত্যাদি৷