একে চন্দ্র

একে চন্দ্র

মালব্যনগর রাষ্ট্রের প্রধান সড়ক ‘মালব্যনগর হাইওয়ে’ যেখানটায় ভারতবর্ষের আন্তর্জাতিক সড়ক সীমানা টপকে আমলাবাড়ি ঢুকে ‘নর্থবেঙ্গল হাইওয়ে’ হয়ে গিয়েছে, সেই চেক পয়েন্ট থেকে এক কিলোমিটার দূরে, সরকারি অফিসারের কোয়ার্টারে ঘুম ভাঙল প্রথমা লাহিড়ীর। পঁচিশ বছরের প্রথমা কাস্টমস অফিসার হিসেবে গতকাল রাতে আমলাবাড়ি বর্ডারে যোগ দিয়েছে।

মালব্যনগর বাংলার উত্তরে অবস্থিত পুঁচকে রাষ্ট্র। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ রাজ্যের থেকে আয়তনে ছোট। এখানে এখনও রাজতন্ত্র চালু আছে। অতীতে বুদ্ধদেব এই দেশে পদধূলি দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। এখানকার রাজকোষে অর্থ আসে ‘স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজম’ থেকে।

মালব্যনগরে কোনও ভারী শিল্প নেই। এই দেশ জীবন ধারণের জন্য ভারতবর্ষের ওপরে নির্ভরশীল। খাদ্যশস্য থেকে নরম পানীয়, জামাকাপড় থেকে বাড়ি তৈরির সামগ্রী, প্রাইভেট গাড়ি থেকে ট্রাক, আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট-নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু ভারতবর্ষ থেকে আমলাবাড়ি বর্ডার হয়ে মালব্যনগরে ঢোকে। কাস্টমস ডিউটি বেশি বলে ভারতের তুলনায় এখানকার সব জিনিসের দাম কয়েক গুণ বেশি। ভারতের ওপরে অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণে মালব্যনগরে যেতে আসতে ভারতীয়দের পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। সেখানকার বাসিন্দারাও সরকারি কাগজ ছাড়া ভারতে ঢোকেন।

সম্প্রতি দুই দেশের সৌহার্দমূলক সম্পর্কের মধ্যে আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে। তার কারণ মালব্যনগরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সিনচান রাষ্ট্র। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রটি বিবিধ কায়দায় ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে পড়েছে সেনাবাহিনী। মিজোরামে রাস্তা বানাচ্ছে। আমলাবাড়ি বর্ডার হয়ে কোটি টাকার জাল নোট নিয়মিত ভারতের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।

প্রথমা এখানে এসেছে মালব্যনগরের সঙ্গে কূটনৈতিক সৌহার্দ বজায় রেখে সিনচানের জাল নোট পাচারকারীদের ধরতে। প্রথমা ভারত সরকারের এলিট ইনটেলিজেন্স উইং ‘কাইমেরা’-র সদস্য। একদম নতুন এই উইং-এর সদস্য সংখ্যা মাত্র পাঁচ। প্রথমা টিম লিভার। বাকি টিম মেম্বারদের নাম হল ষষ্ঠী লাহিড়ী, ধ্রুবিকা বসু, অভিনন্দন কপুর এবং আয়েষা খাতুন।

ষষ্ঠী চর্চা করে ক্রিপ্টোগ্রাফি আর বায়ো-টেররিজম নিয়ে। প্রথমার আগ্রহ ক্যালিগ্রাফি আর রিলিজিয়াস টেররিজমে। ধ্রুবিকা নিউক্লিয়ার ওয়ারফেয়ার এবং ব্যালিস্টিক্স নিয়ে পণ্ডিত। অভিনন্দন কপুর এসেছে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স থেকে। সে এভিয়েশানের পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে চর্চা করে। আয়েষা খাতুনের আগ্রহ ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লক চেন।

কাইমেরা তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলা করার জন্যে। এই উইং-এর খবর ইন্ডিয়ান আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, সিবিআই, র, ইডি বা এনআইএ জানে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রঞ্জিত গগৈ, প্রধানমন্ত্রী হরভজন সিং এবং রাষ্ট্রপতি অরুণ চ্যাটার্জি—এই তিনজনের বাইরে কাইমেরার খবর জানেন আঙুলে গোনা কয়েকজন আমলা।

প্রথমার রিপোর্টিং অথরিটি রঞ্জিত। পঞ্চাশ বছরের রঞ্জিত দার্জিলিং লোকসভা থেকে নির্বাচিত। আদিবাড়ি অসম। জুলজিতে স্নাতক। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা আছে।

ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করার পরে প্রথমা আর ষষ্ঠী আর্মিতে জয়েন করে। দু’জনেই পড়াশুনোয় তুখোড়, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার হাতের তালুর মতো জানে। সার্টিফায়েড হ্যাকার, মার্শাল আর্টে পটু। কম্যান্ডো ট্রেনিং করা প্রথমা আর ষষ্ঠীকে ডেকে রঞ্জিত বলেছিলেন, ‘আর্মি ইজ টু স্মল ফর ইউ। ইউ আর ডেস্টিনড ফর গ্রেটার থিংস।’

ওরা আপত্তি করেনি। ওদের পড়াশুনোর খরচ জুগিয়েছে ভারত সরকার। দেশের প্রতি, আক্ষরিক অর্থেই, ওদের অনেক ঋণ।

প্রথমা আমলাবাড়ি বর্ডারে এসেছে কাস্টমস অফিসারের পরিচয়ে। বর্ডার সিকিয়োরিটি ফোর্স, কাস্টমস, রাজ্য পুলিশ—সবার চোখ এখন আমলাবাড়ি বর্ডারে। সিনচানের বদমায়েশি সামলাতে খানাতল্লাশি বাড়াতে হয়েছে। এবং সবটাই করা হচ্ছে অত্যন্ত সাবধানে।

নেপাল, ভোটল্যান্ড, মালব্যনগর—এই তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র; ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য, উত্তরবঙ্গের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষ—সবার মুখে মঙ্গোল ছাপ আছে। কাজেই কে মালব্যনগরের বাসিন্দা আর কে সিনচানের, তফাত করা অসম্ভব। দু’একবার এমন হয়েছে যে সন্দেহজনক ব্যক্তিকে তল্লাশির পরে মালব্যনগরের রাজপরিবার থেকে সরাসরি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ফোন গেছে যে রাজার আত্মীয়কে অকারণে হেনস্থা করা হয়েছে। ফল হিসেবে তাবড় তাবড় কাস্টমস অফিসারকে শোকজের নোটিস ধরতে হয়েছে। এক সে বড় কর এক বিএসএফ জওয়ানকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।

দেশের সুরক্ষা একদিকে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক অন্যদিকে। দড়ির ওপরে ব্যালান্স করে হাঁটার এই খেলায় রঞ্জিতের তুরুপের তাস প্রথমা। আমলাবাড়ি আসার আগে দিল্লির প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে তার হাতে কাস্টমস অফিসারের যাবতীয় ডকুমেন্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমা এই মুহূর্তে কাস্টমস অফিসার। আগামীকাল অন্য মিশনে তাকে হয়তো মেরিন কমান্ডো হয়ে সিংহদ্বীপ যেতে হবে। কিন্তু সেটা অন্য গপপো!

ঘুম থেকে উঠে এক ঘণ্টার ওয়ার্ক আউট। পরবর্তী আধ ঘণ্টায় স্নান-খাওয়া সেরে প্রথমা আমলাবাড়ি বর্ডার যাওয়ার জন্য রেডি। তাকে নিতে এসেছে মিস্টার নিডো তানিয়া। পঞ্চাশ বছরের নিডো মণিপুরের বাসিন্দা। বয়সে সিনিয়ার হলেও পদমর্যাদায় প্রথমার জুনিয়র।

কাস্টমস অফিসারের নিজস্ব জিপ আছে। প্রথমা গাড়ি চালাতে পারে। শুধু গাড়ি নয়, সাইকেল থেকে ফাইটার প্লেন—সবই চালাতে পারে। আপাতত সে নিডোর গাড়িতে উঠল। নিডো বলল, ‘ওয়েলকাম টু আমলাবাড়ি।’

‘ধন্যবাদ,’ কেজো উত্তর প্রথমার, ‘আমাকে আমলাবাড়ি বর্ডার নিয়ে ব্রিফ করুন।’

‘দেখুন প্রথমা, এই চেকনাকা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক এদিক থেকে ওদিকে যান এবং ওদিক থেকে এদিকে আসেন। ট্যুরিস্ট যান ওদিকে। মালব্যনগরের সাধারণ মানুষ আসেন এদিকে। কাজকর্ম করে তাঁরা দিনের শেষে ফেরত যান। আমলাবাড়ি বর্ডারে বিভিন্ন দফতরের প্রচুর স্টাফ নজরদারি করে। কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এবং গাড়ির খানাতল্লাশি করা নেক্সট টু ইমপসিবল।’

বর্ডার চলে এসেছে। গাড়ি থেকে নামার আগে প্রথমা বলল, ‘বুঝলাম।’

কাস্টমস অফিস নর্থ বেঙ্গল হাইওয়ের গায়ে। প্রথমার অফিস একতলায়। জানলা দিয়ে হাইওয়ে দেখা যাচ্ছে। চাকরিতে যোগদান সংক্রান্ত কাজকর্ম চুকিয়ে প্রথমা নিজের অফিসে ঢুকল।

প্রথম তিনদিন জানলা দিয়ে বর্ডারের দিকে তাকিয়ে বসে রইল প্রথমা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত, একটানা। শকুনের মতো পলকহীন। কিছু না ভেবে, বায়াসড না হয়ে। প্রথম দিন যা মনে হচ্ছিল অর্থহীন এবং কেয়টিক, দ্বিতীয় দিন তার মধ্যে একটা প্যাটার্ন দেখতে পেল প্রথমা। তৃতীয় দিন রাত আটটার সময় সে যখন চেয়ার থেকে উঠল, তখন সে আমলাবাড়ি বর্ডারের প্রতিটি দপ্তরের প্রতিটি কর্মচারীর মুখ চেনে। অধিকাংশ নিত্যযাত্রীর মুখ চেনে, কাজের ধরন জানে।

পরের দু’দিন সে জানলার দিকে তাকালই না। আমলাবাড়ি বর্ডারে সিসিটিভি ক্যামেরায় চব্বিশ ঘণ্টা রেকর্ডিং হয়। দুটো দিন ধরে মনিটর দেখে দেখে রোজ যারা বর্ডার পেরোয় তাদের নাম জেনে গেল। নাম জানল সব বিভাগের সব কর্মচারীর।

নিডো এই পাঁচদিন প্রথমাকে ঘাঁটায়নি। সে কাজে বিশ্বাসী। অফিসে বসে থাকায় নয়। ছ’নম্বর দিন, রাত আটটার সময় প্রথমার অফিসে ঢুকে বলল, ‘বাড়ির জন্য মন খারাপ?’

নিডোর শ্লেষাত্মক মন্তব্যে পাত্তা না দিয়ে প্রথমা বলল, ‘বিএসএফ-এর বিপিন ঝা এবং কাস্টমসের অনিন্দ্য সরকারকে বর্ডার থেকে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। ওরা একটা গ্যাং চালাচ্ছে। মালব্যনগরের কাস্টমসের দু’জন স্টাফও এই গ্যাং-এ রয়েছে। এই নিয়ে আমি ওদের বসের সঙ্গে কথা বলেছি।’

নিডো অবাক হয়ে বলল, ‘আর ইউ শিয়োর?’

‘সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রয়োজনীয় ক্লিপ আমি পেন ড্রাইভে ভরে রেখেছি। ওদের আলাদা করে ডেকে দেখিয়ে দিন। দে উইল সিং লাইক ক্যানারি। গড়গড় করে সব বলে দেবে।’

‘অল রাইট।’ ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে নিডো। প্রথমা বলল, ‘বাই দ্য ওয়ে, চন্দ্রনাথ কেংগু লোকটা কে? যে রোজ একটা লাল সাইকেল চালিয়ে সকাল ন’টায় মালব্যনগর থেকে ইন্ডিয়ায় ঢোকে আর বিকেল পাঁচটার সময় ফেরত যায়?’

‘মাই গড! আপনি কেংগুকেও চিনে গেছেন? হি ইজ আওয়ার প্রাইম সাসপেক্ট!’

চেয়ার থেকে উঠে প্রথমা বলল, ‘কাল সকালে আমি কেংগুর সঙ্গে কথা বলব।’

চন্দ্রনাথ কেংগু আদতে মণিপুরি। অনেক প্রজন্ম আগে কাজের সন্ধানে তার পূর্বপুরুষেরা মালব্যনগর চলে গিয়েছিল। কেংগু এখন মালব্যনগরের নাগরিক। কাজ চালানোর মতো হিন্দি আর বাংলা জানে। মাতৃভাষা ইংরিজি।

পঞ্চাশ বছরের মোটাসোটা মানুষটির চোখ ঢুলুঢুলু। মুখে সবসময় হাসি। পরনে পোলকা ডট শার্ট, নীল জিনস, নীল সাদা স্নিকার। মাথায় বেরে টুপি।

প্রথমা লাল সাইকেলটা ভালো করে দেখে বলল, ‘ফায়ারফক্স সাইকেল! এর তো অনেক দাম!’

কেংগু অবাক হয়ে নিডোকে ইংরিজিতে বলল, ‘এই পুঁচকে মেয়েটা কে?’

নিডো কঠিন গলায় বলল, ‘উনি আমার বস। যা বলছেন তার উত্তর দাও।’

‘নিউ রিক্রুটস! নিউ প্রবলেমস…’ টাক চুলকোতে চুলকোতে সাইকেল থেকে নামে কেংগু। বলে, ‘দাম কত জানি না। এটা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল। রাজার ফ্যামিলির একজন বেচে দিচ্ছিল। আজ থেকে ছ’বছর আগে আমার বউ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আমায় গিফট করেছিল।’

‘সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলের দাম পাঁচ হাজার?’ কড়া গলায় বলে নিডো।

এই আলোচনায় প্রথমার মন নেই। তার চোখ সাইকেলের কেরিয়ারে। সেখানে দশটা কার্ডবোর্ডের বাক্স পাঁজা করে রাখা। বাক্সের গায়ে গোল গোল ফুটো। বাক্স থেকে কিঁচকিঁচ আওয়াজ আসছে।

‘মুরগির বাচ্চা না অন্য কিছু? মালব্যনগরে প্রচুর রেয়ার পাখি পাওয়া যায়। ওয়ার্বলার, স্টর্ক, বা ফেজ্যান্টের মতো পাখির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর দাম।’ কেংগুর দিকে তাকিয়ে বলে প্রথমা।

‘চিকস ম্যাদাম। অনলি বেবি চিকেন। নো আদার বার্দস!’ ঘনঘন ঘাড় নাড়ে কেংগু।

‘লাইভস্টক ট্রান্সপোর্ট পারমিট দেখি।’ প্রথমা হাত বাড়ায়।

‘দেখুন ম্যাদাম, আমার বাড়িতে পোলট্রি আছে,’ টাক চুলকোচ্ছে কেংগু, ‘আমি রেগুলার আমলাবাড়ি বাজারে মুরগির বাচ্চা বিক্রি করি। ব্যাবসা সংক্রান্ত কাগজ বাড়িতে আছে। আপনি যদি বলেন, তাহলে কাল নিয়ে আসব।’

কেংগুর কথায় পাত্তা না দিয়ে বাক্স খুলে মুরগির বাচ্চাগুলো দেখল প্রথমা। অন্য পাখি নেই সেটা কনফার্ম করে কেংগুকে ছেড়ে দিল।

‘থ্যাংক ইউ ম্যাদাম!’ একগাল হেসে লাল সাইকেল চালিয়ে, বর্ডার পেরিয়ে নর্থ বেঙ্গল হাইওয়েতে মিশে গেল কেংগু।

সেদিন বিকেল পাঁচটার সময় কেংগুর লাল সাইকেল আবার আটকাল প্রথমা।

‘আবার কী প্রবলেম ম্যাদাম?’ সাইকেল থেকে নেমে বলে কেংগু।

প্রথমা মন দিয়ে সাইকেল চেক করছে। হ্যান্ডেল, ব্রেক, সিট, সিটকভার, টায়ার, গিয়ার, প্যাডেল সবকিছু। এক্স-রে মেশিনের সামনে দিয়ে সাইকেল পাস করিয়ে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। প্রথমা নিডোকে বলল, ‘বডি সার্চ করুন।’

বডি সার্চ করে মুরগির ছানা বিক্রির রশিদ, কয়েকশো ভারতীয় টাকা আর পাসপোর্ট ছাড়া কিছু পাওয়া গেল না।

প্রথমার ভুরু কুঁচকে রয়েছে। কেংগুকে তার সন্দেহজনক লাগছে কেন? সে কেন মনে করছে যে এই লোকটা জাল নোট পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত? মাঝবয়সি যে লোকটা ডুগডুগি বাজিয়ে দুটো বাঁদর নিয়ে মালব্যনগর থেকে ইন্ডিয়ায় ঢুকছে, ও জাল নোট পাচার করতে পারে। যে ছেলেটা হাই এন্ড মোটরবাইক হাঁকিয়ে নর্থ বেঙ্গল হাইওয়েতে ঢুকে গেল সেও জাল নোট পাচার করতে পারে। আলাদা করে এই লোকটাকে কেন সন্দেহ হচ্ছে? হতাশ হয়ে প্রথমা বলল, ‘এত মাল নিয়ে সাইকেলে যান কেন? বাইক থাকলে সুবিধে হতো।’

বেরে টুপি খুলে বোকাটে হাসে কেংগু, ‘আমার বউয়ের নাম মুন। আ সুইট বেঙ্গলি লেডি। পাঁচ বছর আগে ক্যানসার হয়ে মারা গেছে। ওর ছবি আমি পকেটে নিয়ে ঘুরি।’ সজল নয়নে নিজের পার্স প্রথমার হাতে তুলে দিয়েছে কেংগু, ‘এই সাইকেল মুনের গিফট। এ আমি ছাড়ব না।’

কেংগুর পার্সের খাপে মিষ্টি দেখতে এক মহিলার ছবি। কেংগুকে পার্স ফেরত দেয় প্রথমা। তার মুখেচোখে ইমোশনের লেশমাত্র নেই। সে বলল, ‘আপনি যতবার মুরগি নিয়ে বর্ডার পেরোবেন ততবার চেকিং হবে। কাল থেকে সঙ্গে যেন লাইভস্টক ট্রান্সপোর্ট পারমিট থাকে।’

‘ইয়েস ম্যাদাম।’ বলে কেংগু।

এক মাসের মাথায় আমলাবাড়ি বর্ডারের চেহারা বদলে গেল। প্রথমার সুপারিশ মেনে বিভিন্ন দফতরে একগাদা নতুন রিক্রুট হল। আরও বেশি সিসিটিভি, আরও বেশি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হল। রাতে রক্ষীর সংখ্যা বাড়ল।

একাধিক অপরাধী ধরা পড়ল। তাদের মধ্যে ড্রাগ পাচারকারীও আছে। রঞ্জিতের কাছে রিপোর্ট করতে, নিডোকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দু’দিনের জন্য দিল্লি গেল প্রথমা।

‘কী খবর?’ সাউথ ব্লকে নিজের অফিসে বসে জানতে চাইলেন রঞ্জিত।

‘আমাদের স্টাফেদের বদমাইশি ধরতে সাতদিন লাগল। নতুন স্টাফ জয়েন করার পরে প্রবলেম অনেক কমেছে। একটা ড্রাগ র‌্যাকেট বার্স করা গেছে। জাল নোট পাচার সংক্রান্ত কোনও ক্লু পাচ্ছি না।’ পাতলা ফাইল রঞ্জিতের দিকে এগিয়ে দেয় প্রথমা।

‘ওইটার জন্যেই তোকে আমলাবাড়ি পাঠালাম।’ ফাইল উল্টোচ্ছেন রঞ্জিত। ‘তুই ফিরে যা। দ্যাখ কী করতে পারিস। আর বড় জোর একমাস। তারপর তোকে ওখান থেকে তুলে নেব।’

‘বাই।’ হ্যান্ডশেক করে রঞ্জিতের দফতর থেকে বেরোয় প্রথমা। আগামীকাল বিকেলবেলা ফ্লাইট। আমলাবাড়ি পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে।

সকাল ন’টার সময় বর্ডারে পৌঁছে প্রথমা দেখল কেংগুর লাল সাইকেল দাঁড় করিয়ে নিডো কাগজ চেক করছে। সাইকেলের কেরিয়ারে বিরাট একটা বস্তা রাখা।

প্রথমা বলল, ‘বস্তায় কী আছে?’

‘মাটি ম্যাদাম।’ আধখাওয়া সিগারেট ফেলে বলে কেংগু।

‘মাটি? আপনি তো মুরগি নিয়ে যান!’

‘লোকের বাগানে সাপ্লাইয়ের জন্য কেংগু মাটিও নিয়ে যায়।’ আধখাওয়া সিগারেট ফেলে জানায় নিডো, ‘মালব্যনগরের মাটিতে মরশুমি ফুল খুব ভালো হয়।’

‘গতকাল আপনি কী নিয়ে গিয়েছিলেন? মুরগির বাচ্চা না মাটি?’

‘মাটি ম্যাদাম।’ পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাঁদরওয়ালাকে দেখে হাত নাড়ে কেংগু। বাঁদরওয়ালা ডুগডুগি বাজিয়ে চলে যায়।

‘মাটি?’ কেরিয়ার থেকে বস্তা নামিয়েছে প্রথমা। বস্তার মুখ খুলে দেখছে ভিতরে কী আছে।

নাহ! মাটি ছাড়া কিসসু নেই। ইউনিফর্মের পকেট থেকে জিপার লাগানো পাউচ বার করে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে প্রথমা। এই নমুনা সে কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের জন্য দিল্লি পাঠাবে।

সাতদিনের মাথায় দিল্লি থেকে রিপোর্ট এল। নর্মাল মাটি। অন্য কিছু নেই।

সেই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথমা বড়সড় সাফল্য পেল। জাল নোট পাচারকারীকে ধরল। যে লোকটা বাঁদরখেলা দেখায় সে ঝোলায় একলাখ টাকার জাল নোট নিয়ে ইন্ডিয়ায় ঢুকছিল। প্রথমা তাকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র হাতে তুলে দিয়ে মানথলি রিপোর্টিং করতে আবার দিল্লি গেল। যাওয়ার আগে নিডোকে বলল, ‘তিনদিন বাদে ফিরছি।’ যদিও সে আগামীকাল বিকেলের দিল্লি-বাগডোগরা ডাইরেক্ট ফ্লাইটের টিকিট কেটে রেখেছে।

সাউথ ব্লকের অফিসে রঞ্জিত বললেন, ‘প্র্যাট, কী খবর?’

‘সিনচানের এজেন্টকে ইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওকে ইন্টারোগেট করলে চাঁইদের নাম জানা যাবে।’

‘তোকে তাহলে আমলাবাড়ি থেকে তুলে নিই?’

‘আর কয়েকদিন থাকব। ওখানে একটা লোক আছে…’ রঞ্জিতকে কেংগুর গল্প শোনায় প্রথমা। ‘কখনও মুরগি, কখনও মাটি নিয়ে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন ইন্ডিয়ায় ঢুকছে। কিছু একটা গন্ডগোল আছে।’

রঞ্জিত চেয়ারে হ্যালান দিয়ে প্রথমার কথা শুনছিলেন। সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘হিমালয়ান রেঞ্জ দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়া আর বিরল প্রাণীর চারণভূমি। এমন অনেক গাছপালা, পোকামাকড়, মাছ বা জন্তুজানোয়ার আছে—ওষুধ তৈরি করতে যাদের নির্বিচারে মেরে ফেলা হয়। পিট ভাইপারের মতো সাপ, ক্যাটফিশ বা স্নো ট্রাউটের মতো মাছ, গ্রাউন্ড বিটল বা ডাং বিটলের মতো পোকা একমাত্র মালব্যনগরে পাওয়া যায়। আর ইউ সিয়োর, ওগুলো মুরগি? অন্য কোনও প্রাণী নয়?’

‘ওগুলো মুরগিই ছিল…’

‘আর ইয়ু শিয়োর যে মাটির মধ্যে ডাং বিটল, গ্রাউন্ড বিটল বা পিট ভাইপার ছিল না?’

প্রথমা এক ঝটকায় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। ঝটিতি হ্যান্ডশেক সেরে রঞ্জিতের চেম্বার থেকে বেরিয়েছে। তার গন্তব্য, এয়ারপোর্ট।

পরদিন সকাল ন’টায় অফিসের জানলা দিয়ে প্রথমা দেখল চেকপোস্টে লাল সাইকেল দাঁড় করিয়ে, সিগারেট ধরিয়ে কেংগু আর নিডো খোশগপপো করছে। সন্তর্পণে অফিস থেকে বেরোয় প্রথমা। নিঃশব্দে লাল সাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, ‘গুড মর্নিং!’

‘গুড মর্নিং।’ বেরে টুপি খুলে এক গাল হাসে কেংগু। নিডো চমকে উঠে বলে, ‘ম্যাডাম! আপনি? আপনার তো আগামীকাল ফেরার কথা!’

‘আজকে চলে এলাম বলে অসুবিধে হল নাকি?’ আঙুল নেড়ে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়ায় প্রথমা, ‘কেংগু, আজ কী বিক্রি করতে ইন্ডিয়া যাচ্ছেন?’

‘ফুল গাছের চারা ম্যাদাম। হিবিসকাস, গ্ল্যাডিওলাস, বুগেনভিলিয়া, ডালিয়া…আপনার লাগবে?’

‘আপনার নার্সারিও আছে?’

‘হ্যাঁ ম্যাদাম। নার্সারি না থাকলে মাটি সাপ্লাই করব কেন?’

ঠান্ডা গলায় প্রথমা জানতে চাইল, ‘ফুলগাছ কি আজই প্রথম নিয়ে যাচ্ছেন?’

‘না ম্যাদাম। গতকালও নিয়ে গিয়েছিলাম।’

‘আমি যেদিন থাকি না, সেদিনই আপনার সাইকেলের মাল বদলে যায় কেন বলুন তো?’ নিডোর চোখে চোখ রেখে জানতে চায় প্রথমা।

‘ওরকম কিছু নয় ম্যাদাম,’ অভিমানী কণ্ঠে বলে কেংগু, ‘আপনার যখন আমাকে এতই সন্দেহ, তাহলে সাইকেল সার্চ করুন।’

‘সেটাই করব।’ কড়া গলায় বলে প্রথমা।

একঘণ্টা ধরে ফুলগাছের চারা, সাইকেল ও তার মালিককে সার্চ করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। ফুলগাছগুলো আদৌ দুষ্প্রাপ্য নয়। রাগের চোটে প্রথমার মাথা টগবগ করে ফুটছে। তার সিক্সথ সেন্স বলছে কেংগু পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু লোকটা কী পাচার করে? উত্তর না পেয়ে রাগে, হতাশায় সাইকেলের সামনের চাকার গার্ড-কভারে লাঠির বাড়ি মারে প্রথমা।

কেংগু এই প্রথম রাগল। বেরে টুপি মাথায় গলিয়ে গার্ড-কভারের তোবড়ানো দাগ দেখে মুখ গোমড়া করে বলল, ‘দিস ইজ আনফেয়ার ম্যাদাম! এটা আমার বউয়ের সাইকেল। আমি আমাদের রাজার কাছে লিখিত অভিযোগ করব যে ইন্দিয়ান কাস্টমস আমাকে অকারণে হ্যারাস করছে।’

প্রথমা চুপ। রাজার কানে খবর যাওয়া তার কাছে কাম্য নয়। সে চায় পরিচয়হীনভাবে কাজ সেরে এখান থেকে সরে পড়তে। কাইমেরার সদস্যদের স্পটলাইটে আসা বারণ।

প্রথমা দেখল, সাইকেল চালাতে চালাতে নর্থ বেঙ্গল হাইওয়ে ধরে আমলাবাড়ি বাজারের দিকে এগোচ্ছে কেংগু। নিডো ভুরু কুঁচকে প্রথমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। প্রথমা বলল, ‘চন্দ্রনাথ কেংগু আমায় হারিয়ে দিল।’

কাস্টমসের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে রঞ্জিতকে একটা মেল পাঠাল প্রথমা। দুপুরের খাবার খেয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে দেখল সরকারি ক্লিয়ারেন্স চলে এসেছে। তাকে কাল ভোরের ফ্লাইটে দিল্লি যেতে হবে। আজ রাতে শেয়ালদাগামী ট্রেন ধরতে হবে। ট্রেন এবং প্লেনের টিকিটও অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে মেলের সঙ্গে এসেছে।

নিডোকে চার্জ হ্যান্ডওভার করল প্রথমা। গাড়ি চালিয়ে কোয়ার্টারে ফিরে ব্যাগে নিজের জিনিস ভরল। বিকেল চারটে বাজে। এবার যাওয়ার পালা।

আজ নিডো তাকে স্টেশন পৌঁছে দেবে। লাল আলো লাগানো জিপে ওঠে প্রথমা। নিডো স্টার্ট দেয়। নর্থ বেঙ্গল হাইওয়ে দিয়ে জিপ চলছে শাঁ-শাঁ করে। প্রথমা বলল, ‘চন্দ্রনাথ কেংগু মণিপুরের বাসিন্দা। আপনিও মণিপুরের। তাই না?’

‘আমি ইন্ডিয়ার নাগরিক। কেংগু মালব্যনগরের।’ ভুরু কুঁচকে বলে নিডো। এই আলোচনা তার পছন্দ হচ্ছে না।

‘আপনারা দু’জনে একই ব্র্যান্ডের সিগারেট খান?’ সামনের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় প্রথমা। উল্টো দিক থেকে লাল সাইকেল আসছে। প্রথমাকে দেখে হাত নাড়ে কেংগু। জিপ পেরিয়ে যাওয়ার সময়ে বেরে টুপি খুলে বলে, ‘হ্যাপি জার্নি ম্যাদাম।’

প্রথমা ভুরু কুঁচকে হাত নাড়ে। নিডো গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, ‘আপনি আমাকে কেন সন্দেহ করছেন জানতে পারি?’

চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেয় প্রথমা। অনেক সময় অন্ধকারেই স্পষ্ট দেখা যায়। চোখ বন্ধ অবস্থায় হঠাৎ একটা ছবি প্রথমার মাথায় ঝলসে ওঠে। আর সঙ্গে সঙ্গে কেংগুর পুরো ছকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। লাল সাইকেলে মুরগি, মাটি বা ফুলগাছ নিয়ে বর্ডার পেরোনো। আমলাবাড়ি বাজারে বিক্রিবাটা সেরে লাল সাইকেল চালিয়ে মালব্যনগরে ফিরে যাওয়া। নিখুঁত প্ল্যান।

চোখ খুলে প্রথমা বলে, ‘সরি নিডো। সন্দেহ করার জন্য আমায় মাফ করে দিন। তবে পাচারকারীকে ধরার জন্য আমাকে আবার আমলাবাড়ি বর্ডার যেতে হবে।’

‘পাচারকারী?’ ব্রেক কষেছে নিডো।

‘চন্দ্রনাথ কেংগু,’ প্রথমার কন্ঠস্বরে ইস্পাতের কাঠিন্য। ‘গাড়ি ঘোরান। ইন্ডিয়ার বর্ডার পেরোনোর আগেই ওকে ধরতে হবে।’

ইউ টার্ন করে, লাল বিকন জ্বালিয়ে, হুটার বাজিয়ে আমলাবাড়ির দিকে জিপ ছোটায় নিডো। প্রথমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে, ‘কেংগু কী পাচার করত? রেয়ার পাখি না রেয়ার গাছ?’

‘মুরগি, মাটি বা ফুলগাছ আসলে রেড হেরিং। বাংলায় যাকে বলে বুনোহাঁস। ও পাচার করত ফায়ারফক্স সাইকেল। মালব্যনগরের সেকেন্ড হ্যান্ড লাল ফায়ারফক্স সাইকেল নিয়ে ইন্ডিয়ায় যেত। আমলাবাড়ির চোরবাজারে সাইকেল বেচে দশ-পনেরো হাজার টাকা পকেটে ঢোকাত। নতুন লাল ফায়ারফক্স সাইকেল কিনে, ধুলোবালি লাগিয়ে পুরোনো চেহারা করে সেটা চালিয়ে মালব্যনগর ফেরত যেত। আমার ধারণা টাকার লেনদেন হত হাওয়ালার মাধ্যমে। তাই কেংগুর কাছে কখনও বেশি টাকা থাকত না। ইন্ডিয়ার সবচেয়ে দামি সাইকেল হল ফায়ারফক্স। একটা সাইকেলের দাম প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।’

‘সাড়ে চার লাখ?’ জিপের স্পিড বাড়িয়ে বলে নিডো।

‘ইন্ডিয়ার বর্ডার পেরিয়ে নতুন ফায়ারফক্স সাইকেল মালব্যনগরে ঢোকাতে হলে বিপুল পরিমাণে ডিউটি দিতে হয়। ওই সাইকেলের দাম হয়ে যায় ছ’লাখ টাকার বেশি। ডিউটি ফাঁকি দিয়ে সাইকেল নিয়ে যায় কেংগু। সাইকেলের কেরিয়ারে সন্দেহজনক জিনিস চাপিয়ে কাস্টমসের অ্যাটেনশান অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। সাইকেল প্রতি এক লাখ টাকা লাভ থাকলে এবং সপ্তাহে তিন থেকে চারবার কাজটা করলে মাসে কত রোজগার হয় বুঝতে পারছেন?’

‘ব্রিলিয়্যান্ট প্ল্যান! ক্যানসারে মরে যাওয়া বউ সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল গিফট করেছিল। এটাও তা হলে ওর ঢপ!’ দাঁতে দাঁত চিপে অ্যাক্সিলারেটার দাবায় নিডো। মোবাইলে নির্দেশ দেয়, ‘কেংগুর গাড়ি আটকাও।’

প্রথমা বলল, ‘সকালে সাইকেলের সামনের চাকার গার্ড-কভারে লাঠির দাগ করে দিয়েছিলাম। এখন কেংগু যখন আমাদের গাড়ি ক্রস করল, দেখলাম দাগ গায়েব। তখনি প্ল্যানটা ক্লিয়ার হল।’

হুটার বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে প্রথমার জিপ। চেকপোস্টের কাছে কাস্টমস আর বিএসএফের লোকেরা ব্যারিকেড বসাচ্ছে। চন্দ্রনাথ কেংগু আর একটু বাদেই আমলাবাড়ি বর্ডার পৌঁছবে…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *