একলব্যের এক নৈবেদ্য – শুভেন্দু মুখার্জী
২০০৪ খ্রিস্টাব্দ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ড. অশোক দত্ত খননকার্য আরম্ভ করলেন মোগলমারি গ্রামে।
কিছুদিনের মধ্যেই দলে দলে মানুষ ভিড় করতে আরম্ভ করল খননকার্যের এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই ছড়াতে লাগল গুজব। সবাই চাইছেন দামি কিছু জিনিস দেখতে। অথচ খননকার্যের জায়গায় খালি ইটের দেওয়াল আর রাবিশ ছাড়া কিছু নেই। দূর দূর থেকে এসে, শুধুমাত্র ইটের দেওয়াল দেখে এলাম বলতেও মন চায় না। তাই সোনার গণেশ, সোনার টাকা, সোনার ইট, সোনার গয়নার গুজব হাওয়ার মতো ছুটতে শুরু করল।
উৎখনন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসতে লাগলেন আগ্রহী মানুষেরা। কে নেই সেই দলে? সাধারণ গরিব মানুষ থেকে, শিক্ষক, অধ্যাপক, সরকারি কর্মচারীসহ সমাজের নানা অংশের মানুষ। সামান্য কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমের সুবর্ণরেখা নদী পার হয়ে আসছেন উড়িষ্যার আগ্রহী মানুষেরা। গ্রামের পাশের একসময়ের ভাঙাচোরা চৈতন্যস্মৃতি-বিজড়িত জগন্নাথ সড়ক প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণ চতুর্ভুজ যোজনায় জাতীয় সড়ক ৬০-এ পরিণত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াত সহজসাধ্য হয়েছে।
প্রশ্ন হল—হঠাৎ এই মোগলমারি গ্রামের ঢিবিতে খনন হচ্ছে কেন? ‘মোগলমারি’ কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বলতে হবে অনেক কথা। কেউ বলেন, মোগল মাড় বা মোগলদের যাতায়াতের রাস্তা থেকেই ‘মোগলমারি’। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সম্রাট শাজাহানের সৈন্যদের যাতায়াতের জন্য সন্নিহিত নারায়ণগড়ের রাজা শ্যামবল্লভ পাল এক রাত্রের মধ্যে উপযুক্ত রাস্তা (মাড়) তৈরি করে দেওয়ায়— ‘মাড়ি সুলতান’ উপাধি পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। ‘মোগলমারি’ গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে ধানখেতের মধ্যে আজও একটি মাড় বা জঙ্গলের অস্তিত্ব চোখে পড়ে যা হুগলি জেলার মহানদী থেকে ত্রিবেণী সংযোগকারী প্রাচীন রাজপথ ‘জামাই জাঙ্গালের’ সদৃশ। আবার কেউ বলেন, মোগল-পাঠান যুদ্ধে মোগলসৈন্যের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কারণেই ‘মোগলমারি’।
যাইহোক, এই মোগলমারি গ্রামের সখিসোনার ঢিবির নীচেই লুকিয়েছিল এক অশ্রুতপূর্ব ইতিহাস। পশ্চিম মেদিনীপুরের মাটিতে ভারতবর্ষের আজ পর্যন্ত অজানা এক ইতিহাস ধীরে ধীরে তার অবগুন্ঠন উন্মোচিত করছে। এই অজ্ঞাতপূর্ব ইতিহাস উন্মোচিত হতে আরম্ভ করা মাত্রই, শুধুমাত্র এই দেশের নয়—বিদেশের বিদগ্ধ পন্ডিতমহলেও সাড়া পড়ে গেছে। মহান ভারতভূমি সেই অজানা ইতিহাসের কথা বলতে গেলে, আমাদের ইতিহাসের পথ বেয়ে একটু পিছনদিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।
৩১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সিংহলী এলু ভাষায় রচিত দলদাবংস গ্রন্থটি ধম্মকিত্তিথের, যিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে পালি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং দাঠাবংস নামকরণ করেন। এই দাঠাবংস এবং অন্যান্য গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি—
৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কুশীনগরের এক শালবৃক্ষের নীচে রাত্রির ৩য় যামে, মহামানব বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করেন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়ে যাবার পর বুদ্ধের ধাতু (অস্থি) গুলির অধিকার নিয়ে বিভিন্ন রাজন্যবর্গ বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। রাজা অজাতশত্রু বলে পাঠালেন—বুদ্ধ ক্ষত্রিয় ছিলেন, আমি ক্ষত্রিয়, তাই আমি দেহাবশেষ পাবার যোগ্য। বৈশালীর লিচ্ছবীরা, কপিলাবস্তুর শাক্যরা, অল্লকপ্পের বুলিরা, রামগ্রামের কোলিয়রা, পাবা গ্রামের মল্লরা এবং একজন ব্রাহ্মণও দেহাবশেষের অংশ চাইলেন। কিন্তু কুশীনগরের মল্লরা ঘোষণা করলেন যে, বুদ্ধ তাঁদের রাজ্যে দেহত্যাগ করেছেন, তাঁরা বুদ্ধের দেহাবশেষের ভাগ কাউকেই দেবেন না। ফলে যুদ্ধ প্রায় লাগে লাগে। শেষে এক ব্রাহ্মণের মধ্যস্থতায় দেহাবশেষ আটভাগ করে সকলকে এক-একভাগ দেওয়া হল। পিপফলিবনের মোরিয়রা অনেক দেরিতে আসায় তারা শুধু চিতাভস্মের ভাগ পেল।
এই সময় বুদ্ধের এক শিষ্য ক্ষেম, যেভাবেই হোক, বুদ্ধের চিতাভস্ম থেকে বুদ্ধের একটি দন্তাস্থি নিয়ে দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে কলিঙ্গের রাজা ব্রহ্মদত্তের হাতে দন্তাস্থিটি সমর্পণ করেন। সেই থেকে কলিঙ্গের রাজধানীর নাম হয় দন্তপুর/দন্তনগর। প্রায় আটশত বৎসর দন্তাস্থিটি পূজার আধার হিসেবে দন্তপুর/দন্তনগরে রক্ষিত হয়েছিল। দ্বিতীয় শতাব্দীর লেখক টলেমি বিবরণ থেকে জানা যায়, পালুরা বা দন্তপুর ছিল কলিঙ্গের সমুদ্র বন্দর।
চতুর্থ শতকের প্রথমার্ধে, দন্তপুরের রাজা গুহসীবের সময় কলিঙ্গ পাটলিপুত্রের রাজা পান্ডুর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর আদেশে গুহসীবকে দন্তাস্থিটি নিয়ে পাটলিপুত্রে আসতে হয়। মহারাজা পান্ডুর মৃত্যুর পর গুহসীব আবার দন্তাস্থিটিসহ দন্তপুরে ফিরে আসেন। উজ্জয়িনীর রাজপুত্র অত্যন্ত বুদ্ধভক্ত ছিলেন। তিনি দন্তপুরে থাকতেন। গুহসীবের কন্যা হেমমালার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তিনি দন্তকুমার নামে অভিহিত হতেন। দক্ষিণ প্রদেশের রাজা ক্ষীরধার দন্তাস্থিটি আত্মসাৎ করার জন্য দন্তপুর আক্রমণ করেন। তিনি পরাজিত এবং নিহত হন। ক্ষীরধারের উত্তরাধিকারীগণ বহু সৈন্য নিয়ে আবার আক্রমণ করেন। গুহসীব যুদ্ধযাত্রার পূর্বে জামাতাকে দন্তাস্থিটি রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে যান এবং তাঁকে আদেশ দেন যে, যুদ্ধে যদি গুহসীবের পরাজয় ঘটে তবে দন্তকুমার যেন দন্তাস্থিটি নিয়ে লঙ্কাদ্বীপে যান এবং তাঁর বন্ধু বুদ্ধভক্ত মহাদিসেনের হাতে সমর্পণ করেন। গুহসীব পরাজিত হন। খবর পেয়ে দন্তকুমার রাজকন্যা হেমমালা এবং দন্তাস্থিটি নিয়ে বহুকষ্টে ছদ্মবেশে তাম্রলিপ্ত বন্দর হয়ে সিংহলদ্বীপে উপস্থিত হলেন। কিন্তু তখন মহাদিসেন পরলোক গমন করেছেন। তাঁর পুত্র কিত্তিসিরি মেঘবন্ন রাজত্ব করছেন। তাঁর হাতেই দন্তাস্থিটি তুলে দেওয়া হয়। তাঁর রাজত্বের সময়কাল মোটামুটি ৩০২-৩৩০ খ্রিস্টাব্দ।
প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেই দন্ডভুক্তি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্থল এবং সমুদ্র- বাণিজ্যের পথ হওয়ায়, সমকালীন শাসকগণ দন্ডভুক্তির উপর অধিকার কায়েম করতে সচেষ্ট ছিলেন। ৬ষ্ঠ শতকে জয়রামপুর তাম্রশাসন, ৭ম শতকে শশাঙ্কের দু-টি মেদিনীপুর তাম্রশাসন, দশম শতকে নয়পাল দেবের ইরদা তাম্রশাসন, ১১ শতকে ১ম রাজেন্দ্রচোলের তিরমৈলি লেখ, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত-এ দন্ডভুক্তির উল্লেখ আছে। বহু ঐতিহাসিকই পশ্চিম মেদিনীপুরের উড়িষ্যা সীমান্তবর্তী দাঁতন-সংলগ্ন এলাকাকেই প্রাচীন দন্ডভুক্তি বলে মনে করেন।
এই দাঁতন এলাকাতেই বর্তমান দাঁতন শহরের ৫.২কিমি উত্তরে বর্তমান জাতীয় সড়ক ৬০-এর লাগোয়া গ্রাম মোগলমারি। জায়গাটি অতীতে সুবর্ণরেখার পাড়েই ছিল। বর্তমানে সুবর্ণরেখা এই গ্রাম থেকে ৪.৫কিমি পশ্চিমে সরে গেছে। কিন্তু এই গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে বিস্তীর্ণ ধানখেতের মধ্যে একটি জায়গা আজও ‘জাহাজডুবি’ নামে পরিচিত। বস্তুত দাঁতন এলাকাও একসময় সুবর্ণরেখার তীরেই ছিল। বর্তমান দাঁতন হাই স্কুলের ফুটবল মাঠের পশ্চিমে একটি জায়গাও ‘জাহাজঘাটা’ নামে পরিচিত। মোগলমারিসহ সংলগ্ন এলাকাটি তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নক্ষেত্র।
মোগলমারির চারিদিকে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। মোগলমারি গ্রামেও ছড়িয়ে আছে নানান পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। যার মধ্যে আছে লিপি-সংবলিত বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যমূর্তির অংশ, বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্রের অংশ, মধ্যযুগের মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক ইত্যাদি। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল একটি লিপি-সংবলিত পোড়ামাটির ফলক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কারমাইকেল অধ্যাপক, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই লেখটি একটি বৌদ্ধধর্মের বাণী এবং লিপিতত্ত্বের ভিত্তিতে লিপিটি ৬ষ্ঠ/৭ম শতকের।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে এতদঞ্চলে নানা ধরনের অনুসন্ধান ও সমীক্ষা করেছেন। এই রকম এক সময়ে, দাঁতন হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এবং দাঁতন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মহাশয় মোগলমারি গ্রামের ‘সখিসোনার পাঠশালা’ নামের ঢিবিটি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. অশোক দত্তকে দেখান। ড. দত্ত ঢিবিটি এবং গ্রামে ছড়িয়ে থাকা প্রত্ন নিদর্শন দেখে এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং ২০০৩-০৪ খ্রিস্টাব্দে এখানে খননকার্য আরম্ভ করেন। প্রতিবেদকও এই সময় থেকেই আলোকচিত্রী হিসেবে এই খননকার্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ড. অশোক দত্তের প্রেরণায় এবং উৎসাহে হাতেকলমে এই কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকেন।
২০০৬-০৭-এ MGM-I এবং MGM-III-এ খননকার্য হয়। MGM-I-এ খননের ফলে পূর্বদিকে অসাধারণ কারুকার্যমন্ডিত এবং প্রলেপ (Plaster) দেওয়া দেওয়াল পাওয়া যায়, যা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। দেওয়ালের উপরিভাগে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছিল কুলুঙ্গি। যার মধ্যে Stucco নির্মিত মূর্তি ছিল। পশ্চিমের একটি পরিখা (Trench) থেকে দু-টি পাথরের থাম পাওয়া গেছে। অপর একটি পরিখা (Trench) থেকে বহুধাখন্ডিত অবস্থায় একটি বুদ্ধমূর্তি পাওয়া যায়।
মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের খননকার্যে এই প্রতিবেদকের শ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য হল, প্রাপ্ত খন্ডগুলিকে একত্রিত করে জোড়া দিয়ে ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তিটিকে তার পূর্বের অবয়বে ফিরিয়ে দিতে পারা। যদিও মূর্তিটির সমস্ত খন্ডগুলি পাওয়া যায়নি।
বিশ্বাস এবং প্রতিবেদকের এ বিষয়ে সামান্য জ্ঞানের উপর আস্থা রেখে, প্রতিবেদককে প্রবল উৎসাহ এবং সাহস দিয়ে এই বিশেষ কাজটি এবং প্রাপ্ত Stucco নির্মিত ভগ্ন মূর্তির অংশ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভগ্ন বস্তুর পুনরাবয়ব দানের দায়িত্ব এই প্রতিবেদককে দেওয়ার জন্য এই প্রতিবেদক ড. অশোক দত্তের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে নানান কারণে উৎখননের সময় কম পাওয়া গেছে। তবে একজন দক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক সামান্য আর্থিক সামর্থ্যে, সামান্য সময়ের কাজকে হাজার মানসিক চাপ সত্ত্বেও কীভাবে অসামান্য করে তুলতে পারেন তার নজির হয়ে রইল ২০১২ খ্রিস্টাব্দের মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের উৎখননের কাজ।
সেবছর দক্ষিণের বহির্দেয়াল বরাবর এবং মধ্যভাগে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর মূলত খননকার্য পরিচালনা করা হয়। ড. দত্তের উৎসাহে সমস্ত কর্মীবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে এই খননকার্যে। কাজে উজ্জীবিত করবার এক অসাধারণ প্রতিভা ছিল ড. দত্তের। কোনো কর্মীই পরিখার (Trench) বাইরে থাকতে চাননি বরং পরিখায় খননের কাজে হাত লাগাতে আগ্রহী ছিলেন। ড. দত্ত নিজেও যেমন উৎখননস্থল এবং পরিখা থেকে নড়তেন না, তেমনি সকলকে উৎসাহিত করতেন হাতেকলমে কাজ করতে। তাঁর উৎসাহে প্রতিবেদকসহ প্রায় সব কর্মীই খননকার্যের প্রয়োজনীয় ছুরি (Excavation knife) ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (Tools) বানিয়ে নিয়েছিলেন।
সেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত দক্ষিণের বহির্দেওয়ালে Stucco অলংকরণ এবং মূর্তিসহ কুলুঙ্গির চিহ্ন পাওয়া গেল। সবথেকে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন মিলেছে মধ্যভাগের পরিখা (Trench)-গুলির মধ্যে। এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে একটি উত্তর-দক্ষিণমুখী Stucco অলংকরণযুক্ত দেওয়াল। দেওয়ালে সারি সারি কুলুঙ্গি। কুলুঙ্গির মধ্যে এই প্রথম, ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু প্রায় অক্ষত Stucco নির্মিত মূর্তি পাওয়া গেল। যার মধ্যে বোধিসত্ত্ব, অবলোকিতেশ্বর, কুবের, জাঙ্গুলী, মঞ্জুশ্রী প্রমুখ আছেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। কলকাতাস্থিত ভারতীয় জাদুঘরের বৌদ্ধ শিল্পতত্ত্ববিদ শ্রীমতী অনসূয়া দাস মূর্তিগুলিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন এবং এগুলি ৫ম-৭ম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন।
এখান থেকে বেশ কয়েকটি পোড়ামাটির উৎসর্গ ফলক এবং তার অংশ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে বুদ্ধদেবের মূর্তি, বৌদ্ধ স্তূপ, লিপি প্রভৃতি খোদিত আছে। পাওয়া গেছে নানান ধরনের মৃৎপাত্রের ভগ্ন অংশ।
এ পর্যন্ত খননকার্যের ফলে, আপাতদৃষ্টিতে যা পাওয়া গেল, তা হল—মোগলমারিতে আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার একটি ন্যূনতম ৬০মি × ৬০মি আয়তনের (খননকার্য সম্পূর্ণ হলে এই মাপের হ্রাসবৃদ্ধি সম্ভব) বিহার। বহির্ভাগের প্রদক্ষিণ পথ থেকে যার ভিত্তির উচ্চতা ১১ফুটের মতো। এর বহির্দেয়াল Stucco-র প্রলেপ দেওয়া এবং Stucco-র ফুলকারী নকশায় সজ্জিত। এই নকশা নালন্দার অনুরূপ। এই অলংকরণের স্তরের উপরিভাগে ছিল নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর এক-একটি কুলুঙ্গি। যার মধ্যে ছিল নানান বৌদ্ধ দেবদেবী ও অন্যান্য মূর্তি যা Stucco দিয়ে নির্মিত। দেওয়ালগুলিতে ছিল ত্রি-রথ অভিক্ষেপ (Tri-Ratha Projection)। কিন্তু এর উপরের অংশে কী ছিল তা এই মুহূর্তে আমাদের জানার বাইরে। উত্তরদিকে ছিল এই বিহারের মূল প্রবেশপথ। এই প্রবেশপথের দু-পাশে ছিল পূর্বে উল্লেখিত বড়ো বড়ো কুলুঙ্গি। যদিও এই কুলুঙ্গিতে কোনো মূর্তি পাওয়া যায়নি, তথাপি অলংকরণের প্রাচুর্য দেখে মনে করা সঙ্গত যে, এখানে একসময় গুরুত্বপূর্ণ মূর্তিই স্থান পেত যা পরবর্তীকালে খোয়া যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। ভিতরে বহির্দেওয়ালের গা-ঘেঁসে ছিল শ্রমণদের থাকবার ঘর। মাঝখানে ছিল উঠান (Courtyard)। বিহারের বাইরে বহির্দেওয়ালের গা ঘেঁসে ছিল বঁাধানো প্রদক্ষিণপথ। বিহারের বাইরে ছিল স্তূপ।
মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের আবিষ্কর্তা ড. অশোক দত্তের মতে, এই বৌদ্ধবিহারটি পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত অন্যান্য বৌদ্ধবিহারগুলির তুলনায় বৃহত্তম এবং উৎকৃষ্টতম অলংকরণসমৃদ্ধ। বিহারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সম্ভবত ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে। এটি দশম-একাদশ শতক পর্যন্ত কার্যকর ছিল বলে মনে হয়। কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রয়াত ড. দেবলা মিত্র দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, এই স্থাপত্যগুলির কোনো একটিকেও তমলুক এলাকায় চিহ্নিত করা যায়নি। ড. দত্তের মতে এই পরিপ্রেক্ষিতে এই বৌদ্ধবিহার অদূর ভবিষ্যতে বাংলার ইতিহাসে একটি দিকচিহ্ন হয়ে থাকবে।
ড. দত্তের মতে এই বৌদ্ধবিহার বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠেনি। বরং এটি ৫ম-৬ষ্ঠ শতকে গড়ে উঠেছে সেই সম্ভাব্য বাণিজ্যপথের কাছে, যে পথ মগধ থেকে তাম্রলিপ্ত হয়ে উড়িষ্যা পর্যন্ত বৌদ্ধবিহারগুলিকে যুক্ত করেছিল। যার মধ্যে ছিল নালন্দা, বুদ্ধগয়া, তাম্রলিপ্ত, জয়রামপুর, বস্তা, খিচিং, বালেশ্বর, পুষ্পগিরি (ললিতগিরি) ইত্যাদি।
সূচনায় উল্লেখিত কাহিনির একটি এতদঞ্চলের (দন্ডভুক্তি সন্নিহিত) অতি প্রাচীনকালের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দিরের অস্তিত্বের নির্দেশ করে এবং অপরটি আরও পরবর্তীকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করে, যার নামে বর্তমান প্রত্নস্থলটি নামাঙ্কিত। দু-টি সময়কালই মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের সময়কালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা সকলেই জানি, সেকালে বৌদ্ধবিহারগুলি শুধুমাত্র সাধনপীঠ ছিল না, শিক্ষার অঙ্গন হিসেবেও ব্যবহৃত হত। সেদিক থেকে ‘সখিসোনার পাঠশালা’ বৌদ্ধবিহারের দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের আবিষ্কারক প্রয়াত ড. দত্ত ছিলেন কঠোর নিয়মানুবর্তী মানুষ। কাজের সময় কোনোরকম অন্যায় তিনি বরদাস্ত করতেন না। আবার তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক। অপরাধকে তিনি ঘৃণা করতেন, অপরাধীকে নয়। আগ্রহী ব্যক্তিদের অনেক আবদার তিনি সহ্য করতেন। তাঁর মানবিক গুণকে অনেকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করতেন। কাজের সময়ের পর এই মানুষটিই অসম্ভব রকমের আমোদপ্রিয় ছিলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতেন। একা বসে থাকলে অনেক সময় আবৃত্তি করতেন, গান শুনতেন। সেবছরে (২০১২) খননকার্যের পর সন্ধ্যায় মান্না দে-র গাওয়া ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটা তাঁকে কেন জানি ভীষণ নাড়া দিচ্ছিল। বারে বারে শুনতেন।
ড. অশোক দত্ত তাঁর জীবনে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন (Excavation) এবং প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান (Exploration) করেছিলেন। যার সামান্য কিছুতে তাঁর সঙ্গে কাজ করা এবং হাতেকলমে কাজ শেখবার দুর্লভ সুযোগ এই প্রতিবেদকের হয়েছিল। প্রাগৈতিহাসে (Prehistory) তাঁর কাজ সমস্ত পৃথিবীতেই স্বীকৃত। কিন্তু অন্য সব কাজ সত্ত্বেও ২০০৪ থেকে প্রয়াণের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল মোগলমারি উৎখনন। তাঁর আক্ষেপ ছিল এই বৌদ্ধবিহারের নামাঙ্কিত কোনো ফলক ২০১২-তেও না পাওয়ায় এবং বারে বারে নানা বাধায় খননকার্যের অমূল্য সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। ড. দত্ত আরও কিছুটা কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন যা তিনি শেষ করতে পারলেন না।
ড. দত্ত প্রয়োজনে খননকার্য নিয়ে কর্মীদের অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করতেন কিন্তু তাঁর সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হত না। সবসময় নিজের বিবেচনামতো সিদ্ধান্ত নিতেন। ২০১২-র দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ করে ফিরে আসবার সময় শেষবারের মতো মোগলমারি গ্রামে গিয়েছিলেন গ্রামের সবার সঙ্গে এবং তাঁর স্বপ্নের বৌদ্ধবিহারকে একবার দেখে যাবার জন্য। গ্রামের মানুষ এবং মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত সবাই এবং সবার পক্ষ থেকে অতনু প্রধান বারবার বলেছিলেন—‘স্যার, আবার আপনাকে আসতে হবে। আমরা আপনাকে নিয়ে আসব।’ ড. দত্ত বলেছিলেন—‘প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কী করে হবে? হবে না’। সবাই বলেছিলেন—‘দেখবেন স্যার আপনাকে আসতে হবেই।’ স্যার মোগলমারির কথা শুনলেন, কিন্তু তাঁর নিজের কথাই থাকল।
সুধি পাঠক, চলুন একবার কল্পনায় ফিরে যাই ৫ম-৬ষ্ঠ শতকের মোগলমারিতে। দন্ডভুক্তি সন্নিহিত অঞ্চলে এই সেই স্থান—নগর থেকে দূরে, নাগরিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নাগালের বাইরে। দক্ষিণে দূরে অতিকায় ভুজঙ্গের মতো পড়ে আছে আঁকা-বঁাকা রাজপথ। যে পথ দিয়ে বণিক—স্বার্থবাহের দল পণ্য নিয়ে উত্তরাপথ ও দক্ষিণাপথে বাণিজ্য করতে যায়। বাণিজ্যনগরী তাম্রলিপ্তের এই পথেই ভারতের বাণিজ্যলক্ষ্মী কোলন্ডিয়ার মতো বহিত্রে বাহিত হয়ে চলে যায় পৃথিবীর দেশে দেশে—আর ফিরে আসে বহিত্র পূর্ণ করে স্বর্ণরেণু নিয়ে। দেশ-বিদেশের নানা ধর্মের মানুষ এই পথেই তীর্থদর্শনে যায়। রাজকীয় অনুশাসন এই পথেই সাম্রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ শ্রমণেরা এই পথেই বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলি দর্শন করতে যান। সম্রাট অশোক স্বয়ং তাম্রলিপ্ত রাজ্যে এসে এই বন্দর থেকেই বোধিদ্রুমের একটি শাখা সিংহলে প্রেরণ করেছিলেন।
পশ্চিমে বিপুল বিস্তার তরঙ্গশোভিত সুবর্ণরেখা, বাণিজ্য পসরাভরা বহিত্রের শ্রেণি বুকে নিয়ে ছুটে চলেছে দক্ষিণ সাগরের দিকে। উত্তর-পূর্বে প্রসারিত প্রান্তর। এরই মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতবর্ণের বিপুলায়তন বৌদ্ধবিহার, ড. দত্তের স্বপ্নসৌধ।
রাত্রি শেষ, তখনও সূর্যদেবের সপ্তাশ্ববাহিত রথ স্বর্গের দুয়ার ছাড়েনি। বিহারের চারিদিকে বিপুলকায় দীর্ঘিকাগুলির জলে প্রভাত বাতাসের মৃদু হিল্লোল। ধ্যানমগ্না ধরিত্রী। বিহারের বহির্দেশের স্তূপগুলিতে গতরাত্রের জ্বালা প্রদীপ কখন নিভে গেছে। শ্রমণেরা প্রদক্ষিণ পথ ধরে ধীরে ধীরে বিহারকে প্রদক্ষিণ করে চলেছেন।
ধীরে ধীরে সূর্যের প্রথম কিরণ স্পর্শ করল বিহারের পূর্ব দেওয়াল। ঝলমল করে উঠল দেওয়ালের কারুকার্য, প্রাণবন্ত হয়ে উঠল সারি সারি কুলুঙ্গির মূর্তিগুলি। শ্রমণেরা উত্তরের প্রবেশপথ দিয়ে ফিরে গেলেন বিহারভূমিতে। মূল মন্দিরে উচ্চারিত হল প্রার্থনামন্ত্র। আরম্ভ হল বিহারের দৈনন্দিন কাজ-পূজা, বিদ্যাশিক্ষা।
সন্ধ্যায় সুবর্ণরেখার বুকে রাক্ষসী বেলার রুধিরোৎসব। নদীর বুক ছুয়ে ছুটে আসা শ্রান্তিহারা উত্তাল বাতাস, দ্বিপ্রহরের প্রখর উত্তাপ হরণ করছে। শ্রমণেরা প্রদক্ষিণ পথে সান্ধ্য প্রদক্ষিণে রত। সন্ধ্যায় স্তূপগুলিতে জ্বলে উঠল প্রদীপ। শ্রমণ থেকে গৃহী সকলেই পূজায় নিরত। আরও পরে বিহারের কক্ষে কক্ষে জ্বলে উঠল বর্তিকা। সুবর্ণরেখার জলে ফুটে উঠল বিহারের উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব। রাত্রির নিকষ কালো অন্ধকারে বিহার যেন হয়ে উঠল এক আলোকবর্তিকা যে বিচ্ছুরিত করে চলেছে জ্ঞানের আলো।
ফিরে আসি বর্তমানে, হাজার বছর পর আবার উঠেছে সূর্য। প্রাচীন সেই বিহারের উপর ছড়িয়ে পড়েছে তার আলো। বিহার জেগে উঠেছে যেন হাজার বছরের যোগনিদ্রা থেকে। মানুষের অজ্ঞানতা তার অঙ্গহানি করেছে। মানুষের লোভ তার সম্পদ লুন্ঠন করেছে। মানুষের ধর্মান্ধতা তাকে ধ্বংস করেছে।
আসুন সমগ্র মানবসমাজের হয়ে আজ আমরা অবনত মস্তকে দাঁড়াই সেই মানহারা মানবীর দ্বারে, বলি, ক্ষমা করো। আমাদের কৃতকর্মের জন্যে নৈবেদ্য দিই দু-ফোঁটা অশ্রুকণা। উচ্চারণ করি—‘নমো তসসো ভগবতো অরহতো সমমা সম্বুদ্বসসো’—পরম করুণাময় সেই মহামানবের করুণার ধারা নিশ্চয়ই মানবসমাজের উপর বর্ষিত হবে।
পরিশেষে বলি, মোগলমারি বৌদ্ধবিহারকে সহস্র বৎসরের অমানিশার আঁধার থেকে সূর্যকরোজ্জ্বল প্রভাতে বিশ্বের দরবারে পুনর্জন্ম দান করলেন যিনি—সেই দ্রোণাচার্য ড. অশোক দত্তের পান্ডব বা কৌরব কোনো বংশগৌরবের ছাত্র হবার সৌভাগ্য আমার হয়নি। সেকৌলিন্য আমার নেই। এক প্রত্নপ্রেমী আলোকচিত্রীকে ঘাড় ধরে প্রত্নক্ষেত্রে টেনে এনে হাতে ছুরি, গাঁইতি ধরিয়ে দিয়ে একলহমায় একলব্যে পরিণত করে গেছেন তিনি। এ হয়তো তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। যখন যে বিষয় নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছি, হয়তো কোনো বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে, কোনো সমস্যার কথা বলতে, কোনো আবদার জানাতে—গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। চিন্তাভাবনায় ভুল থাকলে ধমক দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন, শুধরে দিয়েছেন, সাহসের সঙ্গে সমস্যাকে মোকাবিলা করতে বলেছেন। সাহায্য করেছেন, কোনো সুস্থ চিন্তা বা উদ্যোগের বিষয়ে কখনো নিরুৎসাহিত করেননি। ২০১২-র প্রথম পর্যায়ে উৎখনন হয়ে যাবার পর তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, মোগলমারি খননকার্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখতে চাই, সঙ্গে সঙ্গে আবেদন মঞ্জুর হয়। তিনি ছিলেন আমার দেখা একজন অসাধারণ মানুষ। এমন দুর্লভ মানুষের সঙ্গলাভ আমার জীবনের এক পরম প্রাপ্তি। এই প্রতিবেদনটি আমার সেই দ্রোণাচার্যকে একলব্যের শ্রদ্ধার্ঘ। আশা করব, পরম করুণাময় তথাগতের আশীর্বাদ যেন তাঁর উপর বর্ষিত হয়।
তথ্যসূত্র:
• Excavation at Moghalmari (2003-04 to 2007-08)—Ashok Dutta: The Asiatic Society
• Excavation at Moghalmari : A pre-Pala Buddhist Monastic Complex —Ashok Dutta Journal of Bengal Art—Volume 15, 2010 : Editor: Emanul Haque : Bangladesh
• Harison’s Report on the Archaeology of the District of Midnapur
• Buddhist Monument—Dr. Debala Mitra
• মেদিনীপুর—ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তন—বিনোদশঙ্কর দাস—প্রণব রায়; সাহিত্যলোক
• দাঠা বংস—ড. চিত্তরঞ্জন পাত্র; মহাবোধি বুক এজেন্সি
• কিংবদন্তীর দেশে—সুবোধ ঘোষ
• বাংলার লোককথা—ড. অয়ুব হোসেন; পুস্তক বিপণি
• মোগলমারি প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়পুরী—নরেন্দ্রনাথ রায়; এষণা ঊনবিংশ সংখ্যা-২০১০
• প্রোথিত জনপদ—দাঁতনের মোগলমারি—ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি; মৈত্রী-২০০৬
• প্রত্নসন্ধানের একটি ক্ষেত্র : দাঁতনের মোগলমারি—সূর্য নন্দী; এবং সায়ক—২০০৬
• দাঁতনের উপকন্ঠে একটি বৌদ্ধবিহার : বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি; এবং সায়ক—২০০৭
• মোগলমারিতে বৌদ্ধবিহার—বিশ্বজিৎ ঘোষ; এবং সায়ক—২০১০
• সাতদৌলা : লোক প্রত্নচর্চা—বিশ্বজিৎ ঘোষ; এবং সায়ক—২০১১