একটু পরে রোদ উঠবে – ৬৫

পঁয়ষট্টি

ঋষা ডান হাত দিয়ে কপালের দুটো রগ চেপে বসে আছে। তার মাথা নামানো।

একটু আগে যে মেয়েটি ঋষার অফিসে এসেছিল তার নাম বকুল। বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ। গায়ের রং মাজা, মুখে এক ধরনের শ্রী আছে। সব মিলিয়ে দেখতে মিষ্টি। বকুল অফিসে যখন ঢুকল, বৃষ্টি তখন খানিকটা ধরেছে। দরজার পাশে ভেজা ছাতা রেখে ঋষার টেবিলের সামনে এসে বসল।

ঋষা মেয়েটিকে চেনে। আগেও দু-একবার অফিসে এসেছে। বকুল এসেছে সুন্দরবন থেকে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও অত দূর থেকে এসেছে দেখে ঋষার ভালো লাগল। গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডেটা কালেকশনের জন্য ক’টা টাকাই বা পায় কিন্তু কাজের ব্যাপারে এরা বেশির ভাগই রেসপন্সিবল। কাজটাকে শুধু উপার্জন হিসেবে দেখে না। এন জি ও-তে নানারকম গোলমাল থাকলেও এটা একটা ভালো দিক। যারা যুক্ত, তাদের মধ্যে এক ধরনের আবেগ থাকে।

ঋষা বলল, ‘বৃষ্টিতে ভিজেছেন?’

বকুল শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথার আর হাতের জল মুছতে মুছতে হাসল। বলল, ‘না, তেমন নয়। বাস স্টপে দাঁড়িয়েছিলাম। জলটা ধরতে এলাম।’

ঋষা বলল, ‘আপনি বরং ওয়াশরুমে যান। ওখানে টাওয়াল আছে। মাথাটা মুছে আসুন। ঠান্ডা লেগে যাবে।’

বকুল বলল, ‘লাগবে না। এই তো মুছে ফেলেছি। বসি?’

ঋষা বলল, ‘অবশ্যই। বসুন। আপনি কি সোজা বাসন্তী থেকে আসছেন?’

বকুল বলল, ‘না, বাসন্তী থেকে এসেছি কাল বিকেলে। সন্তোষপুরে মাসির বাড়ি ছিলাম।’

ঋষা বলল, ‘তাও বাঁচোয়া। আজ যা অবস্থা।’

বকুল চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর ব্যাগ রাখল। ব্যাগ থেকে কাগজপত্র বের করতে করতে বলল, ‘এ হপ্তায় কাজ বেশি পারিনি দিদি। শরীরটা ভালো ছিল না। একটা মাত্র গ্রাম ঘুরেছি। তারপর তো কাল থেকে বৃষ্টি নামল।’

ঋষা বলল, ‘আজ না এলেই তো পারতেন। এত বৃষ্টি হচ্ছে।’

‘ভেবেছিলাম আসব না। তারপর ভাবলাম সন্তোষপুর পর্যন্ত যখন এসেছি, তখন যেটুকু কাজ হয়েছে দিয়ে যাই। মাসিও বলল, আজ যাস না। আমি বললাম, না, আবার কবে আসতে পারব, তার তো ঠিক নেই।’

ঋষা বলল, ‘ঠিক আছে দিন।’

আফিসে বাপু আছে। বাপু এখানে হোলটাইমার। পিওন কাম দারোয়ান। আবার ক্যান্টিনও চালায়। আজ বাকি স্টাফরা আসেনি। ঋষা বাপুকে চা বানাতে বলল।

বকুল কাগজপত্র এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই গ্রামটায় অদ্ভুত একটা ব্যাপার হয়েছে দিদি।’

‘অদ্ভুত ব্যাপার!’

বকুল বলল, ‘একটা সময় এখানে মেয়েদের হেলথ প্রবলেম অ্যাকিউট ছিল। নিউট্রিশনের অভাব ছিল খুব। মেয়েদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনও গুরুত্বই ছিল না। নিজেরাও দিত না। যারা মাঠে, নদীতে কাজ করতে যেত তারা মুড়ি খেয়ে দিনের খিদে মেটাত। কোনও কোনও দিন একবেলা খেয়েই কাটত। বাড়ির কেউ খোঁজখবরও নিত না মেয়েটা কী খেল, আদৌ খেল কি না। এই নেগলিজেন্স একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। বংশ পরম্পরায় চলত। মেয়েরা বাইরে থেকে খেটে বাড়ি ফিরে আগে স্বামীর জন্য রান্না করতে বসত। সেই সঙ্গে ছিল ইনফেকশনের সমস্যা। অপরিচ্ছন্নতার কারণে নানারকম ইনফেকশন হত। পেটের অসুখ তো ঘরে ঘরে। পচা খাবারও খুব চলত। কেউ প্রাণে ধরে বাসি খাবার ফেলত না। গরিব মানুষ ফেলবেই বা কী করে? আর তার এফেক্ট পড়ত শরীরে।’

ঋষা মুখে ‘চুক চুক’ করে আফশোসের আওয়াজ করল। বলল, ‘ছি ছি। এটুকু সতেচন করা যায়নি। আপনি রিপোর্টে সব লিখেছেন তো? এগুলো ডিটেইলসে থাকা দরকার। আমি রিপোর্টে নোট দেব। শুধু কতজনের শরীরে ভিটামিনের অভাব, আর বি সি কম, এ সব লিখলে চলবে না। সচেতনতার অভাবটাও বলতে হবে।’

বকুল হেসে বলল, ‘মজার ব্যাপার কী জানেন দিদি, গত কয়েক মাসে এই সমস্যা কিছু কিছু করে কমছে। মেয়েরা নিজেদের খাবারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শিখেছে। নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরদোর পরিষ্কার রাখতে শিখছে। বাসি পচা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে যে লোকসান বেশি বুঝতে পারছে। যতটা পারছে অ্যাভয়েড করছে।’

বাপু চা টেবিলে এনে রাখল। সঙ্গে প্লেটে ক’টা বিস্কুট। ঋষা বলল, ‘নিন আগে চা খেয়ে নিন।’

বকুল চায়ের কাপ তুলে চুমুক দিয়ে বলল, ‘আমি তো এই গল্প শুনে অবাক। দুম করে হেলথ কনসাস হয়ে গেল। তাও আবার গ্রামের মেয়েরা।’

ঋষা চায়ে চুমুক দিয়ে হেসে বলল, ‘সত্যি তো, ব্যাপার কী? কোনও গুরুমশাই গ্রামে গেছে নাকি?’

বকুল চোখ বড় করে বলল, ‘ঠিক ধরেছেন দিদি। কী করে বুঝলেন?’

ঋষা বলল, ‘গল্পে-সিনেমায় এরকম হয়। বাইরে থেকে কেউ একজন গিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলে। নিশ্চয় কোনও ডাক্তারবাবু।’

বকুল উত্তর দিল না। মিটিমিটি হাসতে হাসতে চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে লাগল। ঋষা মজা পেলে। মেয়েটা সাপপেন্স তৈরি করছে।

আজ সকাল থেকে অর্চিনের জন্য মন কেমন করছে ঋষার। সত্যি কথা বলতে কী, সেই মন কেমন কাটাতেই জলবৃষ্টিতেও অফিস চলে এসেছে। কৃষ্ণকলি বাড়িতে থাকলেও একটা কথা ছিল। সেও ক’দিনের জন্য নিজের বাড়িতে গেছে। একা একা থাকতে আরও মন খারাপ লাগে। অর্চিন শেষ এসেছিল তিন মাস আগে। কোর্টে তার মায়ের কেসের ডেট ছিল। ঋষাও গিয়েছিল। অর্চিনের মায়ের সঙ্গে দেখা করেছে। কোর্ট লকআপের ভিতর মহিলা বসেছিলেন। ক্লান্ত, অবসন্ন। ঋষা গিয়ে কাছে দাঁড়াল। পুলিশ এখন আর বাধা দেয় না। তবে খুব বেশিক্ষণ কথা বলতে দেয় না। বৈশাখী মলিন হেসে বললেন, ‘কেমন আছ ঋষা?’

ঋষার খুব খারাপ লাগছিল। যতবারই মহিলাকে দেখে, ততবারই কান্না পায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ভালো আছি। আপনি ঠিক আছেন তো মাসিমা?’

বৈশাখী বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছি।’

ঋষা বললেন, ‘শুনলাম জেলে আপনি ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছেন না। এটা করবেন না। আমাদের খারাপ লাগবে।’

বৈশাখী বললেন, ‘না করব না। ক’টা দিন শরীরটা ঠিক ছিল না।’

‘ওষুধ খাচ্ছেন?’

বৈশাখী মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ খাচ্ছি। জেলের ডাক্তার খুব ভালো। যত্ন করে দেখে। এখন অনেকটা ঠিক আছি।’

বৈশাখী বললেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। বড় উকিল আপনার হয়ে লড়ছে।’

বৈশাখী এ কথার কোনও উত্তর দিলেন না। নীচু গলায় বললেন, ‘তুমি আমার ছেলেটার ওপর খেয়াল রেখো মা। বড্ড একগুঁয়ে। নিজে যা ভালো বোঝে, সেটাই করে।’

ঋষা কী বলবে বুঝতে পারেনি। কোনওবারই বুঝতে পারে না। মাথা নেড়েছে। আর সময় নষ্ট না করে অর্চিনকে কথা বলবার সুযোগ করে দিয়ে সরে আসে।

মামলার অবস্থা ভালো নয়। মহিলা পুলিশের কাছে যেভাবে সব স্বীকার করেছে, তাতে ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা কঠিন। তার পক্ষের উকিল অনেকটাই হতাশ। বলেছে, একটাই পথ। কোর্টে বৈশাখীদেবীকে সব অস্বীকার করতে হবে। বলতে হবে, পুলিশ জোর করে তার বয়ান আদায় করেছিল। নিখিলেশ উপাধ্যায় নামের লোকটা সেদিন রেস্টুরেন্টে ডেকে তাকে টোপ দেয়, তারপর ভয় দেখায়। জালিয়াতির কাজটা না নিলে তাকে খুন করবে বলে শাসায়। একটা সময় তার গলা টিপে ধরতে যায়। বৈশাখী তখন বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। তাতে যে লোকটা মারা যাবে, বুঝতে পারেনি। এতে শাস্তি অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গলায় রুমালের ছাপটা নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠবে, সেটা অন্য কোনও কায়দায় সামলাতে হবে। একবার যদি আত্মরক্ষার থিওরিটা কোর্টে প্রমাণ করা যায়, তাহলে বাকিটাও করা যাবে। নিজেকে বাঁচাতে একজন মহিলা বন্দুক না রুমাল ব্যবহার করবে, সেটা তার ব্যাপার। সে অত কিছু ভেবে করে না। সেই সময়ও থাকে না। সমস্যা হল অর্চিনের মা রাজি হচ্ছেন না। উকিল অর্চিনকে বোঝাবার দায়িত্ব দিয়েছে। সেদিনও অর্চিন চেষ্টা করে।

আলিপুর কোর্ট থেকে বেরিয়ে ঋষা অর্চিনকে বলেছিল, ‘আমার বাড়িতে চল। কিছু খাবি। রেস্ট নিবি।’

অর্চিন মাথা নেড়ে বলল, ‘সল্টলেক অনেক দূরে। অতদূর যাব না। ফিরে যাব।’

ঋষা নরম গলায় বলেছিল, ‘আজকের দিনটা থেকে যা না অর্চিন। তোকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে।’

অর্চিনকে সত্যি বিধ্বস্ত লাগছিল। বলল, ‘না, থাকা যাবে না। কাল সকালে ওখানে প্রাোগ্রাম আছে। অনেককে বলা আছে। দূর থেকে আসবে। সুন্দরবনে যাতায়াতটা একটা বড় সমস্যা। এসে ফিরে যেতে হলে সেটা অন্যায় হবে।’

ঋষা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘প্রাোগ্রাম একদিন বাদ দিলে হয় না। দুদিন কলকাতায় থেকে একটু রেস্ট নেওয়া যায় না? তোর কথাই সবসময় ফাইনাল হবে?’

অর্চিন বলল, ‘প্রাোগ্রাম একদিন কেন, সারা জীবনই বাদ দেওয়া যায় ঋষা। কিন্তু আমি তো তা করব না বলেই ঠিক করেছিলাম। সেই জন্যই তো সব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়া।’

ঋষা মুখ ফিরিয়ে বলেছিল, ‘আমারও তো কিছু চাওয়ার থাকতে পারে।’

অর্চিন একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘খিদে পেয়েছে। চল কোথাও বসে খাই।’

ঋষার খুব ইচ্ছে করল আরও কড়া কিছু বলে। বলে, ‘আমি খাব না।’

নিজেকে দ্রুত সামলে নেয়। যে ছেলে নিজের নীতি-আদর্শের জন্য সব ছেড়েছুড়ে গ্রামে গিয়ে পড়ে আছে, যে ছেলে পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম তার মায়ের পরিচয় জানতে পায়, যে ছেলে জানে তার মা একজন ক্রিমিনাল, যে ছেলে তার মায়ের ফাঁসির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে কড়া কথা বলা অন্যায়। অর্চিন যে এখনও শক্ত হয়ে আছে, এটাই যথেষ্ট। অন্য কেউ হলে দুমড়ে-মুচড়ে যেত।

একটা চিনা রেস্টুরেন্টে বসে সেদিন ঋষা নরম গলায় বলেছিল, ‘ল’ইয়ার যা বলছেন, তাতে মাসিমা রাজি?’

অর্চিন খিদে পেয়েছিল বলে খাবার নিলেও ঠিকমতো খাচ্ছিল না। খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। অন্যমনস্কভাবে বলল, ‘ঋষা, এই মামলাটা চালানো অর্থহীন।’

ঋষা অবাক হয়ে বলেছিল, ‘কেন? অর্থহীন কেন?’

‘মা কোনও কিছুতেই রাজি নয়। আজ তুই সরে যাওয়ায় বলল, আমার কোর্টে আসতে ভালো লাগছে না। তুই জজ সাহেবকে বলে দে, আমাকে যেন সাজা দিয়ে দেয়। যা ওনার খুশি। যেমনটা উনি মনে করেন, আমার ভালো লাগছে না।’

ঋষা বলল, ছি, ছি। এ সব কি হতাশার কথা? মাসিমাকে মনের জোর আনতে হবে।’

অর্চিন বলল, ‘জোর আনতে বললেই তো হয় না। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি ঋষা। মাই মাদার লস্ট এভরিথিং। আমাকে বলল, তোর সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে এই যথেষ্ট। আর কিছু চাই না খোকা। আমার অশান্তি লাগছে। আমার ভালো লাগছে না। বন্দি জীবনে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। আমিও ভাবছি…।’

একটু থেমে অর্চিন বলল, ‘ভাবছি…ভাবছি কেসটা আর চালাব না। মায়ের যখন ইচ্ছে নেই।’

ঋষা বলল, ‘অসম্ভব। এতদূর এগিয়ে থেমে যাওয়া যায় নাকি?’

অর্চিন শুকনো হেসে বলেছিল, ‘থেমে যাওয়ার বিষয় নয়, বিষয়টা হল মানুষটাকে রিলিফ দেওয়া। ল’ইয়াররা যা-ই বলুন, কিছু করা যাবে না আমি জানি। আমরা সবাই জানি। তা হলে কেন মিছিমিছি আর টানাহেঁচড়া? আমাকে ভেবে দেখতে হবে। মা জেনেছেন, আমি তার পাশে আছি। সন্তান হিসেবে আছি। ব্যস, এটাই আমি চেয়েছিলাম।’

অর্চিন চুপ করে বসে থাকে। ঋষা তাকে বিরক্ত করেনি। বাকি সময়টুকু চুপ করেই ছিল। বাসে ওঠবার আগে গলা নামিয়ে বলে, ‘ঋষা, তোর সঙ্গে কথা আছে।’

‘কী কথা? এখন বলবি?’

অর্চিন বলে, ‘না, এখন নয়। সময় হলে বলব। আজ যাই।’

তিন মাস সে কথা বলা হয়নি অর্চিনের। এই কদিন খুব একটা যোগাযোগও করেনি সে। আজ মন কেমনের মাঝখানে একবার ফোন করেছিল ঋষা। অর্চিনের মোবাইল সুইচ অফ।

বকুল বলল, ‘আপনি ঠিকই ধরেছেন দিদি। গুরুমশাই বটে। তবে ডাক্তার নয়, কলকাতা থেকে গেছে। সেই ছেলেকে নিয়ে গ্রামের লোকদের খুব গর্ব দেখি। দাদা বলতে অজ্ঞান।’

ঋষা অবাক হয়ে বলল, ‘দাদা। দাদা কে?’

বুকল হাসিমুখে চোখ বড় করে বলে, ‘একটা কম বয়সি ছেলে দিদি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। কথা বলে।’

‘কী বলে?’

বকুল বলল, ‘অনেক কিছু। বলে শুধু রাজনীতি নয়, মেয়েদের সম্মান দিতে হবে। যত্ন করতে হবে। তারাই পরিবারে আসল মানুষ। তাদের অবহেলা করলে সবার ক্ষতি। মেয়েদের একটা দলও বানিয়েছে। নারী সমিতি না কী যেন। গ্রামের মানুষকে পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতার কথা বলে। কয়েক মাসের মধ্যে ইমপ্রুভ করেছে। শুধু মেয়ে নয়, ছেলেমেয়ে সবার ভালো হয়েছে। কী ক্ষমতা বুঝুন দিদি। বাইরে থেকে কদিন গিয়েই সবাইকে একেবারে বশ করে ফেলেছে।

ঋষাও হাসিমুখে বলল, ‘বা:, চমৎকার ছেলে তো। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি রয়েছে। মানুষের বিশ্বাস পেয়েছে। আপনার ওই গ্রামের নাম কী?’

বকুল উজ্জ্বল চোখে বলল, ‘দিদি, গ্রামের নাম নোনাজল। আর ওই ছেলের নাম অর্চিন। আমি তো দেখা করতে চেয়েছিলাম। উনি কোথায় যেন মিটিংয়ে গেছেন।

ঋষার মনটা আনন্দে ভরে গেল। সে খানিকক্ষণ স্থির হয়ে বকুলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু একটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলাল। অর্চিনকে সে চেনে এ কথা বলবার দরকার নেই। তা হলে তো অনেক কথা বলতে হয়। বলতে হয়, শুধু চেনে না, এই ছেলেকে সে নিজের থেকেও ভালোবাসে। বলতে হয়, তাদের বিয়ে হবে।

বকুল এবার গলা নামিয়ে বলল, ‘শুনলাম ওই ছেলে নোনাজল গ্রামে পাকাপাকি থাকবে। খুব শিগগিরই ওই গ্রামের জামাই হতে চলেছে।’

ঋষার প্রথমটায় মনে হল, ভুল শুনছে। সে ঠান্ডা ভাবে জিগ্যেস করল, ‘অর্চিন কী করবে বললেন?’

বকুল উদ্ভাসিত মুখে বলল, ‘আপনি ওনাকে চেনেন নাকি দিদি? উনি গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করবেন শুনলাম। নোনাজল গ্রামের। তার সঙ্গে ভাব ভালোবাসা চলছে। সেও তার সঙ্গে কাজ করে। কী যেন নাম বল…কী যেন নাম বলল…ইস, নামটা ভুলে গেলাম…হ্যাঁ, মনে পড়েছে নন্দনা। লেখাপড়ায় ভালো। হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের টিচার। ভালোই হয়েছে। বিয়ে থা দিয়ে এই ছেলেকে গ্রামেই আটকে রাখা উচিত।’

ঋষা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে কড়া গলায় বলল, ‘বা:, আপনি তো অনেক খোঁজখবর রাখেন দেখছি। এন জি ও-র কাজ করতে গিয়ে একেবারে গ্রাম্য প্রেম-প্রীতি, বিয়ে পর্যন্ত জেনে এসেছেন। দিন কাগজপত্র দিন। অনেক সময় নষ্ট হল।’

‘দিদি’র এই হঠাৎ পরিবর্তনে বকুল অবাক হয়। সে খানিকটা থতমত ভাবেই হাতের কাগজ এগিয়ে দেয়।

কাজ বুঝে একই রকম কঠিন গলায় ঋষা বলে, ‘আপনি আসুন। দুর্যোগ বাড়ছে।’

কপাল থেকে হাত নামাল ঋষা। বাইরে বৃষ্টির জোর বেড়েছে। তার কান্না পাচ্ছে। সে এখন কী করবে? কাঁদবে? নাকি অর্চিনকে ফোন করে জানতে চাইবে, ‘তুমি কি নন্দনা নামের কোনও মেয়েকে ভালোবেসেছ? তাকে তুমি বিয়ে করবে? এই জরুরি কথাই কি তুমি সেদিন আমাকে বলতে চেয়েছিলে অর্চিন?’ নাকি সে এখনই নোনাজল গ্রামের উদ্দেশে রওনা হবে? এই ঝড়জল মাথায় করেই রওনা দেবে। সেখানে গিয়ে অর্চিনকে বলবে, ‘আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। তুমি ব্যাগ গোছাও। আমি একটা কথাও শুনব না।’

কী করবে ঋষা?

ছেষট্টি

বারিধারার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হল।

সে ঠিক করেছিল, আজ কোনওভাবেই শ্রবণের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। একটি নিটোল বৃষ্টিমুখর বিরহ ডে পালন করবে। এর জন্য মনকে কঠিন করতে হয়েছিল। শ্রবণ ফোন করবে, সে ধরবে না। মেসেজ করবে, রিপ্লাই দেবে না। হোয়াটসঅ্যাপে পিন হবে, হেলায় চোখ ফিরিয়ে নেবে। ফেসবুকেও যাবে না। তারপরেও সেই কঠিন মন গোলমাল করল। গোলমাল করল বড় অদ্ভুত একটা কারণে। এইসব বারিধারা কখনও বিশ্বাস করে না। আজও করেনি। তারপরেও নিজেকে পুরোপুরি সামলাতে পারল না। অবিশ্বাসের ঘাড়ে বিশ্বাস চেপে বসল। ভালোবাসার ক্ষেত্রে কত রকম যে কী হয়!

দুপুরের মেনুতে ছিল খিচুড়ি। বহুদিন পরে সবাই মিলে খাওয়া হল। যতই বৃষ্টি হোক, বিমলকান্তি অফিসে গিয়েছিলেন। লাঞ্চে এসেছিলেন, সবার সঙ্গে বসে খুশি মনে খেয়ে আবার চলেও গেছেন। খেতে বসার আগে মণিকুন্তলা বলেছিলেন, ‘জ্যোতিষ্ক থাকলে বেশ হত। জলবৃষ্টির দিনে একটা পিকনিকের মতো হত। হ্যাঁ রে, ডাকবি নাকি? অফিস থেকে আসতে পারবে? ঘণ্টাখানেকের তো মামলা।’

বারিধারা বলল, ‘না, মা। আজ সেনবাড়ির কোর কমিটি একসঙ্গে খাবে। পিতা-মাতা, আর তার দুই কন্যা। অন্য কাউকে ডাকা যাবে না।’

মেঘবতী ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘কেন? ও আমাদের বাড়ির কেউ নয়?’

বারিধারা টেনে টেনে বলল, ‘অবশ্যই কেউ। জ্যোতিষ্কদা হচ্ছে সেনবাড়ির জামাই। সে তো কোর কমিটিতে নেই।’

মেঘবতী ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ‘তোর যত সব গা জ্বালানো কথা। বাড়িতে আবার ওইসব কমিটি-ফমিটি কী?’

দিদির রাগ দেখে বারিধারা মুখ টিপে হেসে বলল, ‘কোর কমিটি হল নিউক্লিয়াস বডি। বস্তুর একেবারে ভিতরের ব্যাপার। ধর বস্তুর মধ্যে যে অণু-পরমাণু আছে তাকেও যদি ভাঙতে থাকি…।’

মেঘবতী চোক কটমট করে বলল, ‘তুই থামবি বৃষ্টি?’

বারিধারা হেসে বলল, ‘আহা, রাগ করছিস কেন? বৃষ্টিতে ভেজবার পর সবসময় মন প্রসন্ন রাখতে হয়। নইলে বৃষ্টি দেবতা ত্রুদ্ধ হন। ঠান্ডা লাগিয়ে হাঁচি সর্দি করিয়ে দেবেন।’

মেঘবতী তেড়েফুঁড়ে উঠে বলল, ‘এবার কিন্তু আমি না খেয়ে চলে যাব।’

বারিধারা বলল, ‘ঠিক আছে বাবা আমি চুপ করছি। তবে এটা মনে রাখিস কোর কমিটি ইজ কোর কমিটি। জামাইবাবু, মামাবাবুদের সেখানে অ্যালাউ নেই।’

মেঘবতী খেপে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘মা, শুনতে পাচ্ছ? তোমার ছোট মেয়ে আমার বরকে কীভাবে অপমান করছে শুনতে পাচ্ছ? আমি কিন্তু সত্যি চলে যাব।’

মণিকুন্তলা রান্নাঘরে ফিনিশিং টাচে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বললেন, ‘তোরা ঝগড়া না থামালে আমি এবার বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে যাব। দুটো ধেড়ে মেয়ে সারাক্ষণ খিচিরমিচির করছিস। তোরা কবে বড় হবি?’

বারিধারা বলল, ‘রোদ উঠলে। আপাতত মেঘে-বৃষ্টিতে আমাদের ছোটই থাকতে দাও।’

খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা। মাছের ব্যাপারে দুই বোন একেবারে দুই মেরুতে। মেঘবতী যেমন মাছ ভালোবাসে, বারিধারা ঠিক উলটো। সে মাছ দেখলে আঁতকে ওঠে। কাঁটার ভয়ে। ক্লাস ফোরে গলায় কাঁটা ফুটে গিয়েছিল, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তুলতে হয়েছিল। সেই থেকে মাছ দেখলেই দশ হাত দূরে। বুঝিয়ে, বকেও মণিকুন্তলা ছোট মেয়ের এই ভয় দূর করাতে পারেননি। তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হয়। আজও হয়েছে। ডিম ভাজা হয়েছে। কিন্তু মেঘবতী বোনকে ছাড়ল না। ‘ইলিশ ছাড়া খিচুড়ি খাবি কী রে! তুই তো বিরাট গাধা রে বৃষ্টি!’

বারিধারা বলল, ‘গাধা হই আর যাই হই, আমি বাবা অত কাঁটায় নেই। যদিও গন্ধটা মার্ভেলাস।’

বিমলকান্তি মাছ ভেঙে মুখে দিয়ে বললেন, ‘বাবা বলতেন ইলিশ মাছের গন্ধ নিয়ে এক হাঁড়ি ভাত খেয়ে ফেলা যায়। একসময় দার্জিলিং যেতে হলে ফরাক্কায় নেমে পড়তে হত। তখনও ব্রিজ হয়নি। বাক্স-পেঁটরা নিয়ে লঞ্চে নদী পেরিয়ে আবার ট্রেন। নদীর এদিকেও দার্জিলিং মেল, ওদিকেও দার্জিলিং মেল। ফরাক্কায় নামতে রাত হয়ে যেত। লঞ্চঘাটায় সারি দিয়ে ভাতের হোটেল। হোটেল মানে ওই আর কী, ঝুপড়ির মতো। সেখান থেকে চিৎকার করত, গরম ভাত ইলিশ মাছ, গরম ভাত ইলিশ মাছ…। বাক্স পেঁটরা লটবহর নিয়ে ছুটে গিয়ে গরম গরম ভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল খেয়ে স্টিমার ধরতে ছুটতাম। আহা! দার্জিলিং বেড়ানোর প্যাকেজের মধ্যে এটা পড়ত। তোদের মাও খেয়েছে। মনে আছে মণি?’

মণিকুন্তলা প্লেটে আর এক হাতা খিচুড়ি নিয়ে বললেন, ‘মনে নেই আবার? একবার খেতে খেতে দেরি হয়ে গেল, কাঁটা বেছে ইলিশ খাওয়া বলে কথা, তারপর ছুটলাম লঞ্চ ধরতে। পা পিছলে পড়লাম। ইলিশের কাঁটা যেন গলার বদলে পায়ে বিঁধল। ব্যথা রয়ে গেল তিনদিন। বাপ রে!’

সবাই হেসে উঠল। অতি সামান্য ঘটনা, তারপরেও কী যে ভালো লাগল। প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকলে ছোটখাটো গল্পও মন ভরিয়ে দেয়। মনে হয়, একেই সুখ বলে। সিরিয়াস বিমলকান্তি সেনও আজ বহুদিন পরে যেন মন খুলেছেন। হাসি-ঠাট্টা করছেন।

গল্পের ফাঁকেই মেঘবতী তার বোনের প্লেটে সমানে কাঁটা বেছে মাছ দিয়ে গেছে। বারিধারাও অন্যমনস্ক হয়ে খেয়ে গেল।

বিমলকান্তি বললেন, ‘রবিবার একটা নেমন্তন্ন আছে। অল্প সময়ের জন্য হলেও যেতে হবে।’

মণিকুন্তলা বললেন, ‘কীসের নেমন্তন্ন।’

বিমলকান্তি বললেন, ‘প্রহ্লাদ ফ্ল্যাট কিনেছে। সেই ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশ। গৃহপ্রবেশ নয়। ফ্ল্যাট প্রবেশ।’

মণিকুন্তলা বললেন, ‘প্রহ্লাদ কে?’

‘আমাদের অফিসের স্টাফ।’

মণিকুন্তলা অবাক হয়ে বললেন, ‘তুমি তো এ সব নেমন্তন্নে খুব একটা যাও না।’

বিমলকান্তি মুচকি হেসে বললেন, ‘যাই না, কিন্তু এটায় যেতে হবে। কারণ আছে।’

বারিধারা ভুরু কুঁচকে বলল, ‘বাবা, মনে হচ্ছে কোনও রহস্য আছে।’

বিমলকান্তি বললেন, ‘হ্যাঁ আছে। প্রহ্লাদ রহস্য।’

মেঘবতী বললেন, ‘প্রহ্লাদ রহস্য। সে আবার কী?’

বিমলকান্তি লজ্জা পেয়ে হেসে বললেন, ‘সে একটা ব্যাপার আছে। বলা যাবে না।’

বারিধারা বলল, ‘বলে ফেলো বাবা। এরকম হেভি বৃষ্টির দিনে সব বলে ফেলতে হয়।’

বিমলকান্তি বললেন, ‘ব্যাপারটা যে সত্যি নয়, মিথ্যে।’

বারিধারা হাত বাড়িয়ে বলল, ‘আমি আজীবন জানি/ সমস্ত কথাই সত্যি, সমস্ত কথাই মিথ্যে…শুধু/ সব কথা খুলে বলা ভালো।’

মেঘবতী বোনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এটা আবার কী!’

বারিধারা গম্ভীর মুখে বলল, ‘বুঝলি না দিদি। এটা একটা কবিতার লাইন। কবিতার নাম শূন্যের বাঁশি।’

মেঘবতী ভুরু কুঁচকে বলল, ‘তুই আবার কবিতা লিখিস নাকি?’

বারিধারা বলল, ‘কেন, লিখতে পারি না? তবে এই কবিতা আমার নয়। কবির নাম বিভাস রায়চৌধুরী।’

মেঘবতী ঠোঁট উলটে বলল, ‘তাই বল। আমি তাই ভাবছিলাম, এত সুন্দর কথা তুই কীভাবে বানালি! ঠাট্টা তামাশা করা ছাড়া তোর তো কোনও গুণ নেই।’

বারিধারা চোখ বড় বড় করে দিদির দিকে ঘুরে বসল। মণিকুন্তলা বললেন, ‘দেখো, দেখো, আবার দুজনে ঝগড়া করবার তাল করছে।’

বিমলকান্তি বললেন, ‘এই প্রহ্লাদকে নিয়ে আমার একটা বিদঘুটে অসুখের শুরু হয়েছিল।’

মণিকুন্তলা চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘অসুখ! কী অসুখ?’

বিমলকান্তি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘অনেকদিন আগে প্রহ্লাদ আমার কাছে এসেছিল। টাকা চাইতে। সেদিনে আমি প্রহ্লাদ হয়ে গিয়েছিলাম।’

বারিধারা চোখ কপালে তুলে বলল, ‘মানে! কী বলছ বাবা! তুমি প্রহ্লাদ হয়ে গিয়েছিলে! এ কথার মানে কী?’

বিমলকান্তি সংক্ষেপে গোটা ঘটনা বললেন। সবাই চুপ করে শুনল।

বিমলকান্তি সেন মৃদু হেসে বললেন, ‘চিন্তা নেই। বললাম তো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। যেদিন থেকে বুঝতে পারলাম এটা কোনও অসুখ নয়, এটা আসলে আমার জীবনে একটা বাড়তি পাওনা ছিল সেদিন থেকে ফিলিংসটা আমার আর কখনও হয়নি। ওই যে বৃষ্টি তোর কবিতার মতো, যা সত্যি আবার যা মিথ্যেও। সম্ভবত গোটাটাই আমার মনের ভুল ছিল। সম্ভবত কেন? তাই হবে। মানুষের মনের ভিতর অনেকগুলো মন থাকে। কোনও কোনও মন হয়তো ঘুমিয়ে থাকে। আমরা তার খবরও পাই না। তাদের কেউ কেউ কোনও কোনও সময় জেগে ওঠে। আমার এটাই হয়তো সেরকম কিছু ছিল। অন্য মানুষ হয়ে যাওয়ার মন। কিছু সময়ের জন্য জেগে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।’

মণিকুন্তলা কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ করে গেলেন। মেঘবতী বলল, ‘বাবা, আমার ভয় করছে। তুমি কি আমার মনের কথা কিছু জানতে পেরেছ?’

বিমলকান্তিবাবু খানিকটা অন্যমনস্কভাবে বললেন, ‘কারও মনের খবরই আমি জানতে পারিনি। অন্য মানুষ হওয়া মানে তার মনের কথা জানা নয় মেঘ। তার চোখে পৃথিবীটা দেখা। এটারও মাঝে মাঝে দরকার আছে।’

বিমলকান্তি একটু থামলেন। তারপর হেসে বললেন, ‘বাদ দাও এ সব ভারী কথা। যা ঘটবার ঘটে গেছে। এখন এভরিথিং ইজ নর্মাল। আমি এবার বেরোব। অফিসে মিটিং ডাকা আছে।’

মেঘবতী বাবার গাড়িতেই চলে গেল। মণিকুন্তলা বলেছিলেন, ‘থেকে যা না। এই বৃষ্টি-বাদলার সময় কোথায় যাবি? রাতে জ্যোতিষ্ক ফেরবার সময় নিয়ে যাবে। এখান থেকে খেয়েও যাবে।’

মেঘবতী বলল, ‘না মা, আজকাল বাড়ি বেশিক্ষণ ফাঁকা রাখতে ভয় করে। সেই ডাকাতির পর থেকেই…তার ওপর উনি তো বাড়িতে আর এক আর্টিস্টকে নিয়ে এসেছেন না। কুটকুটে নামের বালকটি এবার কোন কম্ম করে তার ঠিক আছে?’

মণিকুলন্তলা বড় করে নি:শ্বাস ফেলে বললেন, ‘উফ! সব পাগলের পাল্লায় পড়েছি। একজন অন্য মানুষ হয়ে যায়, আরেকজন রাস্তা থেকে শিল্পী ধরে আনে। কী কুক্ষণে যে সেনবাড়িতে বিয়ে হয়েছিল।’

বারিধারা বলল, ‘আর একজন পাগলের কথা তো বললে না মা! যে মহিলা শ্বশুরমশাইয়ের পাগল টাইপ প্রাোজেক্টের যাবতীয় দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে বসে আছেন। মণিকুন্তলা সেন।’

মেঘবতী হেসে বলল, ‘তোর মতো পাগলি কে আছে বৃষ্টি।’

বারিধারা চোখ গোল করে, গলা ভারী করে বলল, ‘দিদি, কদিন পর থেকে অফিসে বসবি। সাবধানে থাকিস। দেখিস বাবা যেন তুই না হয়ে যায়। কেলেঙ্কারি কাণ্ড হবে। বাবার যদি তোর মতো বুদ্ধি-টুদ্ধি হয়ে যায় সে এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে।’

মেঘবতী বোনের কথায় পাত্তা না দিয়ে মণিকুন্তলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মা, আমার বিজনেসে জয়েন করবার তাগিদটা আরও বেশি করে ফিল করছি। বাবার সত্যি রেস্ট দরকার।’

দিদি বাবার সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের ঘরে এল বারিধারা। খানিকক্ষণ থমকে থাকার পর বৃষ্টি আবার ঝিরঝির করে শুরু হয়েছে। জানালার একটা পাল্লা বন্ধ। বারিধারা জানালাটা পুরো খুলে দিল। বৃষ্টির ছাঁট আবার ঘরে ঢুকবে। ঢুকুক। আবার মা বকবে। বকুক। মেঘে মেঘে আকাশটা বড্ড সুন্দর হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, দুনিয়ার যাবতীয় মন কেমন করা মেঘ বারিধারা সেন নামে এক ছটফটে তরুণীর সঙ্গে ছুটে ছুটে দেখা করতে এসেছে। তার সঙ্গে কথা বলছে।’

‘ওগো মেয়ে, তুমি কেমন আছ?’

‘ভালো আছি, খুব ভালো আছি। তোমাদের খুব সুন্দর লাগছে।’

‘ওগো মেয়ে, তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি কি জানো তুমিও খুব সুন্দর? তুমি যে মেঘ রঙের শ্লিভলেস ম্যাক্সিটা পরে আছ তাতে তোমাকে শুধু সুন্দর লাগছে না, খুব আকর্ষণীয় লাগছে। যে কোনও পুরুষ তোমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। তুমি কি সেটা জানো?’

বারিধারা মনে মনে হেসে ফিসফিস করে বলল, ‘না জানি না। তুমি কি পুরুষ?’

মেঘ বলল, ‘না জানাই ভালো। যে সুন্দর সে নিজের রূপের কথা কখনও জানে, অন্যের সৌন্দর্য খোঁজে। আমরা যার কাছে যাই তখন তেমন থাকি। এখন যেমন তোমার কাছে এসেছি। তোমার সুন্দর চেহারা দেখে পুরুষ হওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না।’

‘তোমরা খুব দুষ্টু তো।’

‘তোমাকে দেখে দুষ্টু না হয়ে থাকতে পারছি না। এটা যদি পাহাড় হত, জানলা দিয়ে ঠিক তোমার ঘরে ঢুকে যেতাম।’

বারিধারা হেসে উঠল। বলল, ‘আচ্ছা, পাহাড়ে যখন বেড়াতে যাব, তখন আসবে।’

‘ধন্যবাদ সুন্দরী।’

জানলা থেকে নিজের খাটের কাছে এল বারিধারা। এখন কী করবে? বই পড়বে? নাকি কম্পিউটার চালিয়ে সিনেমা দেখবে? চাদর মুড়ি দিয়ে একটা ঘুম দিলে কেমন হয়? বারিধারা ধপ করে শুয়ে পড়ল। বৃষ্টিতে ভেজা, ইলিশ সহযোগে খিচুড়ি ভক্ষণ আর বাবার গা-ছমছমে গল্পের পর দিবানিদ্রা জমবে। তার বয়সি মেয়েরা দুপুরে ঘুমনোর কথা ভাবতেই পারে না। ভুঁড়ি হয়ে যাবে। বিয়ের জন্য বর পাওয়া যাবে না। জিমে দৌড়তে হবে। তার এ সব চিন্তা নেই। তার ছিপছিপে চেহারায় ভুঁড়ি হওয়ার কোনও চান্স নেই। জীবন থেকে জিমের খরচ বেঁচে গেল। তা ছাড়া ভুঁড়ি হলেই বা কী? তার তো বিয়ের চিন্তা নেই। একটা হাঁদা ছেলে তাকে বিয়ে করবার জন্য বসে আছে। শ্রবণ চাকরিটা শুরু করলে বিয়ের জন্য চাপ দেবে। দিক গে, আপাতত বিয়ের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আগে নিজের একটা কিছু হোক। ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট বের হলে এম ফিল, রিসার্চের ব্যাপার আছে। তারপর নানারকমের পরীক্ষা। কলেজে চাকরির হ্যাপা আছে। অনেক সময় লাগে। শ্রবণ কি এত ধৈর্য ধরতে পারবে? হয়তো নানা কথা বলবে।

‘আমার সঙ্গে মুম্বাই চলো বারি। ওখানেই লেখাপড়া করবে। তারপর না হয় পরীক্ষা-টরীক্ষা দিয়ে কলেজে পড়াবে?’

সে হয়তো আপত্তি করবে। বলবে, ‘খেপেছ। ওখানে গিয়ে আমি কী করব?’

হাঁদাটা শুনবে না। ঘ্যান-ঘ্যান করেই যাবে। হয়তো বলবে, ‘কেন ধারা, মুম্বাইতে কি কলেজ নেই? ওখানে কি কেউ পড়ায় না?’

তখন রেগে গিয়ে বলতে হবে, ‘না, পড়ায় না। ওখানে কোনও কলেজ নেই।’

‘আমি একা একা কী করে থাকব বারি? তুমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি বোঝো ধারা।’

‘আমি জানি না তুমি কী করে থাকবে। একটা ধেড়ে ছেলে!’

আওয়াজ করেই হেসে ফেলল বারিধারা। চাপা গলায় মেঘ ডেকে উঠল বাইরে। শীত শীত করছে। বারিধারা হাত বাড়িয়ে চাদরটা টানতে গেল, আর তখনই ঘটনা ঘটল।

বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। হঠাৎ কোনও দু:সংবাদ শুনলে যেমন হয় ঠিক সেরকম। বারিধারা ধড়ফড় করে উঠে বসেছে। কী হল? কেন এমন হল? নিমেষে বারিধারার চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। শ্রবণের কিছু হয়নি তো? নিজেকে শান্ত করতে গিয়ে বারিধারা বুঝতে পারল তার বুকের ভিতর এখনও চাপা কাঁপুনি হচ্ছে। বুকের ভিতর? নাকি মনের ভিতর? হঠাৎ এমন হল কেন! শ্রবণের বিপদের কোনও ইনটিউশন সে অনুভব করল? এ কখনও হয়? অসম্ভব। এ সব উদ্ভট ব্যাপারে সে বিশ্বাস করে না।

তারপরেও বারিধারা খাট থেকে নেমে খানিকটা টলোমেলো পায়ে টেবিলের কাছে এল। মোবাইলটা তুলে শ্রবণের নম্বর টিপল। ফোন বেজে যাচ্ছে। বারিধারা বুঝতে পারল, তার কপালে ঘাম জমছে।

সাতষট্টি

বারিধারা চোখ বুজে আছে।

তার কি ঘুম পাচ্ছে? না ঘুম নয়, ক্লান্তি। তার শরীর জুড়ে ক্লান্তি। ইচ্ছে করছে বারান্দায় একটা কোণ দেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ি। অল্প শীত শীত করছে। খানিক আগে পর্যন্তও বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধে পর্যন্ত মুষলধারে পড়েছে। তারপর বেগ কমলেও ঘ্যানঘ্যানে, একঘেয়ে ভাবে চলেছে একটানা। খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, বৃষ্টি নয়, কান্না। এই কান্না কোনওদিন থামবে না। যে মেঘ বৃষ্টি নিয়ে দুপুর পর্যন্ত আনন্দ, হইহই হয়েছে তা যে এতটা বিশ্রী আর ভয়ংকর হয়ে উঠবে কে ভেবেছিল! ঘণ্টাখানেক হল বৃষ্টি থেমেছে। তবে এখান-ওখান থেকে জমা জল পড়বার বিশ্রী আওয়াজ হচ্ছে। বারান্দাটা একদিকে খোলা। খানিক আগে পর্যন্ত জলের ছাঁট এসেছে, এখন ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে। খানিকক্ষণ হল আকাশ দেখেছে বারিধারা। অন্ধকারেও বোঝা গেছে, মেঘে মেঘে ছেয়ে আছে। আবার ঢালবে? কে জানে ঢালতে পারে।

এখন রাত কত? দুটো না আড়াইটে। বেশিই হবে। দিদি যখন বাড়ি গেল তখনইতো দুটোর কাছাকাছি বাজে। যাওয়ার আগে কাছে এসে মাথায় হাত রাখল। নরম গলায় বলল, ‘বাড়ি যাবি বৃষ্টি? বাড়ি গিয়ে একটু শুয়ে নিবি? অনেক রাত হয়ে গেছে। দুটো বাজাতে চলল।’

বারিধারা মাথা নেড়েছিল। বলেছিল, ‘আমি যাব না। তুই যা দিদি। খুব ধকল গেছে তোর।’

মেঘবতী শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করল। বলল, ‘বাড়ি চল। আবার কাল সকাল হতেই চলে আসবি। একটু না ঘুমোলে শরীর যে খুব খারাপ লাগবে।’

বারিধারা এবার শক্তভাবে বলল, ‘আমার কিছু হবে না। আমি রাত জাগতে পারি।’

মেঘবতী বোনের পিঠে হাত রেখে বলল, ‘এখানে আর থেকে কী করবি? ডাক্তার, নার্স আছে, যদি কিছু লাগে তারাই দেখবে।’

বারিধারা এবার কঠিন গলায় বলল, ‘আমি জানি তারাই দেখবে। তার পরেও আমি যাব না। আমি এখানেই থাকব।’

দূরে দাঁড়িয়েছিল জ্যোতিষ্ক। এবার সে এগিয়ে আসে। বিরক্ত গলায় স্ত্রীকে বলল, ‘তোমার কী সমস্যা হচ্ছে বলো তো! বৃষ্টি যদি থাকতে চায় থাকুক না। খানিক পরেই তো সকাল হয়ে যাবে। তুমি কেন ওকে বারণ করছ?’

মেঘবতী লম্বা করে শ্বাস ছেড়ে বলল, ‘না, আমি বারণ করছি না। বলছিলাম, বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিলে পারত। কাল সকালেও তো থাকতে হবে। তা ছাড়া…তা ছাড়া বাবা-মা-ও চিন্তা করছে। মা একটু আগে ফোন করেছিল। জেগে বসে আছে।’

জ্যোতিষ্ক আরও বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোমার মা কেন জেগে আছেন জানি না, বৃষ্টি থাকতে চাইছে থাকুক। তুমি চলো।’

মেঘবতী বলল, ‘বৃষ্টি এত রাতে হাসপাতালে একা থাকবে?’

বারিধারা মলিন হেসে বলল, ‘হাসপাতালে একা আবার কী? হাসপাতালে দিন-রাত বলেও কিছু হয় না। তুই নিশ্চিন্তে যা। আমি ছোট মেয়ে নই দিদি। তোরই তো বোন।’

মেঘবতী বোনের পাশে বসে বলল, ‘তা হলে আমিও থাকব। তোকে একা ছাড়ব না।’

জ্যোতিষ্ক এবার রেগে গেল। বলল, ‘উফ তোমাকে নিয়ে পারা গেল না। আমি বৃষ্টিকে একা ফেলে চলে যাব ভাবলে কী করে! তোমাকে বাড়িতে ছেড়ে আমি চলে আসছি। চলো, দেরি কোরো না।’

মেঘবতী ফের উঠে দাঁড়াল। তাকে বাড়ি যেতেই হবে। বাড়ি ফাঁকা রয়েছে।

‘ঠিক আছে। বৃষ্টি, আমি ওর হাত দিয়ে কিছু খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। খেয়ে নিস লক্ষ্মী মেয়ে। অনেকক্ষণ খালি পেটে আছিস। এর পর অসুস্থ হয়ে পড়বি।’

বারিধারা খুব ভালো করেই জানে, জল বা চা ছাড়া কিছুই সে এখন খেতে পারবে না। খাবার কথা ভাবলেই বমি পাচ্ছে। হাসপাতালের নীচ থেকে এক বোতল জল কিনে নিয়েছে। দিদিকে বলে লাভ নেই। মাথা নেড়ে সায় দেওয়াই ভালো।

জ্যোতিষ্ক বারিধারাকে বলল, ‘তুমি ভিজিটরদের বসবার জায়গাতেই থেকো বৃষ্টি। আমি তোমার দিদিকে বাড়িতে নামিয়েই চলে আসছি। রাস্তায় জল জমে না থাকলে ম্যাটার অফ ফর্টি-ফর্টি ফাইভ মিনিটস।’

বারিধারা বলল, ‘হাতের কাছে পেলে গায়ের একটা হালকা চাদর পাঠিয়ে দিস। শীত শীত করছে।’

জ্বর আসেনি তো? যা ভেজা হয়েছে, তাতে জ্বর আসা অসম্ভব কিছু নয়। মেঘবতী উদ্বিগ্ন হয়ে বোনের কপালে গলায় হাত দিল। না, গা ঠান্ডা।

বারিধারা দিদির হাত ধরে বলল, ‘তুই যা, আমার জন্য এত চিন্তা করতে হবে না।’

মেঘবতী বোনের জন্য যতই চিন্তা করুক, সেই সবথেকে মাথা ঠান্ডা করে কাজ করেছে। শ্রবণের দাদা হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অপারেশনের পর ভাইয়ের অবস্থা ‘ক্রিটিকাল’ শুনে প্রেশার বেড়ে যায়। এমারজেন্সিতে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার পর্যন্ত দেখাতে হয়। শ্রবণের বউদি এমনিতেই নার্ভাস প্রকৃতির মহিলা। দেওরের ঘটনা জানবার পর থেকেই হাত-পা কাঁপছিল। অপারেশনের সময় ও.টি.-র বাইরে দাঁড়িয়ে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কান্নাকাটিও করছিল। বারিধারা তার হাত চেপে ধরেছিল। ফিসফিস করে বলেছিল, ‘শান্ত হোন। শান্ত হোন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সব ঠিক হয়নি। ও.টি. থেকে বেরিয়ে ডাক্তার যখন থমথমে গলায় বললেন, ‘অপারেশন সাকসেসফুল। ব্রেন থেকে ব্লাড ক্লট আমরা বের করে দিয়েছি। কিন্তু পেশেন্টের কন্ডিশন ভালো নয়। কাল সকালের আগে কিছু বলতে পারব না।’

এরপরই শ্রবণের দাদা মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্বামীর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মহিলা আরও ঘাবড়ে গেছে। ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ খাইয়ে মেঘবতী তাকে বলে, ‘আপনি ওনাকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। একেই তো শ্রবণের এই অবস্থা, এরপর উনি যদি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন আর এক বিপত্তি হবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা তো রইলাম। ফোন করে খবর দেব।’

মহিলা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘শ্রবণের বাবা-মা-ও আসতে চাইছেন। বাড়ির সামনে এত জল জমে গেছে যে বেরতে পারছেন না। আমরা দুজনে কোনওরকমে জল ঠেলে এসেছি।’

মেঘবতী বলল, ‘খবরদার ওনাদের এখন হাসপাতালে আসতে দেবেন না। বয়স্ক মানুষ জলে পড়ে গেলে সমস্যা হবে। জল নামলে আসবেন। আর এখন এসেই বা কী হবে? অপারেশন হয়ে গেছে, পেশেন্ট আই সি সি ইউ-তে। দেখাও তো করতে দেবে না। এখন তো শুধু খবর নেওয়া। কাল সকালের আগে কোনও খবর হবে না। আপনারা চলে যান।’

হাসপাতালে এসে ছোটাছুটি করে মেঘবতীই সব করেছে। শ্রবণ তখন এমার্জেন্সিতে শুয়ে। ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করে বললেন, ‘এখনই মাথায় স্ক্যান করতে হবে। মনে হচ্ছে মাথার ভিতরে কোনও ইনজুরি হয়েছে। তা হলে ইমিডিয়েট ও.টি.-তে নিতে হবে।’

বারিধারা টেলিফোনে শ্রবণের বউদিকে ধরে।

‘কী হয়েছে!’

‘ঠান্ডা মাথায় শুনুন। শ্রবণের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।’

মহিলা চিৎকার করে ওঠে, ‘অ্যাক্সিডেন্ট! সে কী! কী করে হল? কেমন আছে শ্রবণ?’

বারিধারা গলা নামিয়ে বলেন, ‘টেনশন করবেন না বউদি। শ্রবণ ভালো আছে। খবর পেয়ে আমি আর আমার দিদি হাসপাতালে এসেছি। তবে এখনই একটা অপারেশন করবার দরকার হতে পারে। আপনি দাদাকে নিয়ে চলে আসুন।’

মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘কী করে এমন হল!’

বারিধারা শান্তভাবে বলল, ‘আমিও পুরোটা জানি না। শ্রবণ গুছিয়ে বলতে পারছে না। ওর সঙ্গে যে দুজন ছিল, তাদের একজনের পায়ে চোট হয়েছে। ভেঙে গেছে মনে হয়। অন্যজন খুব শক পেয়েছে। সে এখনও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার কাছ থেকে ঘটনা জানবার চেষ্টা করছি। তবে তার আগে শ্রবণের ট্রিটমেন্ট শুরু করা দরকার। আপনারা আসুন তারপর সবটা বলব।’

এর পর মোবাইলে বারিধারার সঙ্গে শ্রবণের দাদার দফায় দফায় কথা হল। রাস্তায় এত জল জমেছে যে কিছুতেই তারা হাসপাতালে পৌঁছতে পারছে না। যে ট্যাক্সিটায় উঠেছিল সেটা রাস্তাতেই খারাপ হয়ে যায়। একটা অটোকে হাতেপায়ে ধরে রাজি করিয়েও লাভ হয়নি। সেটাও গর্তে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে বাস পেয়ে উঠেছে, সেই বাস রুট বদলেছে এবং জ্যামে আটকে পড়েছে। সারাদিনের বৃষ্টি কলকাতা শহরটাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে তো অপেক্ষা করা যায় না। শ্রবণ বমি করছে। মেঘবতী দ্রুত ব্যবস্থা করতে থাকে। খানিকক্ষণের মধ্যে জ্যোতিষ্কও চলে আসে। স্ক্যান করে দেখা যায়, শ্রবণের মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, অপারেশনের সময় ঠিক করা, ব্ল্যাডের ব্যবস্থা করা, মেডিসিন জোগাড় সবই মেঘবতী করেছে। ওটিতে নিয়ে যাওয়ার সামান্য কিছু আগে শ্রবণের দাদা-বউদি পৌঁছে যায়।

এর মধ্যে শ্রবণের সঙ্গীরা ঘটনা জানায়। তারা শ্রবণের অফিসের সঙ্গে যুক্ত। একজন ক্যামেরা চালায়, অন্যজন তাকে সাহায্য করে। শ্রবণের কোনও একটা অ্যাড ফিল্মের জন্য বৃষ্টির কিছু দৃশ্য দরকার ছিল। দিনটার সুযোগ নিয়েছিল ওরা। গাড়ি নিয়ে বারুইপুরের কাছে শুটিং করতে যায় সকালে। একেবারে হঠাৎই ঠিক করে। অল্প সময়ের কাজ। ভালোভাবে কাজ শেষ করে ফিরেও আসছিল দুপুরের পর। আসবার সময় বাইপাসে গাড়ির চাকা পিছলে যায়। ধাক্কা মারে সামনের একটা বাসে। গাড়ির তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু একজনের পায়ে খুব জোর লাগে। শ্রবণের মাথাটাও পাশের জানলায় ঠুকে যায়। প্রথমে কিছু মনে হয়নি। মাথা থেকে রক্ত বের হয়নি। ফুলেও যায়নি। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে প্রবল যন্ত্রণা শুরু হয়। শ্রবণ তার সঙ্গীদের বলে, খুব কষ্ট হচ্ছে, হাসপাতালে যেতে হবে। গাড়ি নিয়ে তারা হাসপাতালের আসে। ততক্ষণে শ্রবণ জ্ঞান হারাতে শুরু করেছে। এমন সময় শ্রবণের মোবাইলে বারিধারার ফোন বাজতে থাকে। ক্যামেরাম্যান ছেলেটি বারিধারাকে চেনে। সে ফোন নিয়ে বারিধারাকে হাসপাতালে চলে আসতে বলে।

হাসপাতালের এই দিকটা মূলত শুনশান। লম্বা করিডরে অনেক দূরে দূরে একটা দুটো বসবার জায়গা। ভিজিটিং আওয়ারের পর এসব বেঞ্চে বাইরের কাউকে বসতে দেওয়া হয় না। এত রাতে বারণ করবার নেই। এমার্জেন্সি ভিজিটরদের যেখানে অপেক্ষা করবার কথা সেখান থেকে বারিধারা এদিকটায় চলে এসেছে। করিডর শেষ হলেই আই সি সি ইউ। কাচের দরজা বন্ধ। ভিতরে পর্দা টানা। দরজার মাথায় লাল আলো জ্বলছে। কাচের গায়ে লেখা, ‘নো, অ্যাডমিশন’। ওখানেই শ্রবণকে রাখা হয়েছে।

কাচের দরজার আওয়াজ শুনে বারিধারা চোখ খুলল। সাদা পোশাক পরে বয়স্ক একজন নার্স বেরিয়ে আসছেন। বারিধারা উঠে দাঁড়াল। একটু এগিয়ে যেতে নার্স থমকে দাঁড়ান।

‘কী ব্যাপার?’

বারিধারা কাঁপা গলায় বলে, ‘ওখানে আমাদের পেশেন্ট আছে। রাতে অপারেশন হয়েছে। নাম শ্রবণ রায়। তিনি কেমন আছেন একটু বলতে পারেন দিদি?’

নার্স মহিলা মোটার দিকে। চোখেমুখে রাগ। এত রাতে ডিউটি করতে হচ্ছে বলে সম্ভবত বিরক্তও। বারিধারার কথার জবাবে খুব শান্তভাবে বললেন, ‘আপনি কি হাসপাতালে নিয়মকানুন কিছু জানেন না? জানেন না এত রাতে পেশেন্টদের খবর দেওয়া হয় না? যদি দেওয়ার দরকার পড়ে আমরাই যোগাযোগ করব। জানেন না?’

বারিধারা অস্ফুটে বলল, জানি। কিন্তু খুব চিন্তায় রয়েছি।’

‘হাসপাতাল তো নাটক বা সিনেমা হল নয়। এখানে আপনি আনন্দ করতে আসেননি। এটা তো চিন্তারই জায়গা।’

বারিধারা বলল, ‘সরি দিদি।’

নার্স মহিলা এবার কড়া গলায় বললেন, ‘আপনি এতদূর পর্যন্ত এসেছেন কেন? এই ফ্লোরে আপনাকে উঠতে দিল কে? লিফটে সিকিউরিটি নেই।’

সত্যি নেই। গেটের সিকিউরিটি ঘুমোচ্ছে। লিফটম্যান একবার চোখ তুলে তাকিয়েছিল। এত রাতে যখন একটি সুন্দরী তরুণী ওপরে উঠছে নিশ্চয় প্রয়োজন আছে। তা ছাড়া খুব সিরিয়াস হলে তো অনেক সময় ওয়ার্ড থেকে ডেকেও পাঠানো হয়। সম্ভবত এই সব ভেবে আর আটকায়নি।

বারিধারা রাগী নার্স মহিলাকে কী বলবে বুঝতে পারল না। কিছু বলবার মতো মনের অবস্থাও তার নেই। চুপ করে থাকে। নার্স বলেন, ‘এটা আপনি অন্যায় কাজ করেছেন। হয় আপনি চলে যান, নয় সিকিউরিটিকে বলছি।’

বারিধারা ক্লান্ত গলায় বলল, ‘প্লিজ দিদি। আমাকে এখানে একটু বসতে দিন। আমি দূরে ওই বেঞ্চে বসে থাকব। কাউকে ডিসটার্ব করব না।’

নার্স মহিলা একটু থমকে গেলেন, বললেন, ‘পেশেন্ট আপনার কে হন?’

বারিধারা চুপ থাকল কয়েক মুহূর্ত। তারপর মহিলার চোখে চোখ রেখে জোর গলায় বলল, ‘আমার বন্ধু হয়। আমরা বিয়ে করব।’

নার্স মহিলা ভুরু কুঁচকে বারিধারার দিকে তাকালেন। তার চোখ বলে দিচ্ছে, বারিধারার এই উত্তরে তিনি থমকে গেছেন। থমকে যাওয়ারই কথা। এখন সরাসরি ভালোবাসায় পরিচয় দেওয়ার জোর কতজনের আছে? তাও একটা কমবয়সি মেয়ে। মহিলা হাত দিয়ে নিজের গাল মুছলেন।

‘পেশেন্টের নাম কী বলছেন?’

বারিধারা আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘শ্রবণ রায়। হেড ইনজুরি। ব্লাড বের করা হয়েছে।’

নার্স মহিলা একটু চুপ করে থাকলেন। নরম গলায় বললেন, ‘আপনার নাম কী আমি জানতে পারি।’

‘আমি বারিধারা।’

নার্স আবার একটু চুপ করে রইলেন। তারপর গলা নামিয়ে বললে, ‘বা:, সুন্দর নাম। আমার যতদূর মনে পড়েছে, আমি ভিতরে যেসব পেশেন্ট দেখছি তার মধ্যে শ্রবণ নামে একজন আছেন।’

বারিধারা উত্তেজিত হয়ে দু’পা এগিয়ে যায়। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা।

‘কেমন আছে? কেমন আছে শ্রবণ?’

রাগী মহিলা এবার একটা অদ্ভুত কাজ করেন। হাত বাড়িয়ে বারিধারার বাঁ-কাধে হাত রাখেন। ভীষণ নরম গলায় বলেন, ‘মন শক্ত করুন বারিধারা। পেশেন্টের অবস্থা ভালো নয়।’

কথা শেষ করে হাত দিয়ে মুখ মুছে, জুতোয় খটখট আওয়াজ তুলে করিডর ধরে এগিয়ে গেলেন। সেই আওয়াজে যেন মৃত্যুর পদশব্দ!

শরীর কাঁপছে বারিধারার। সে কোনওরকমে কাছের একটা বেঞ্চে বসে পড়ল। নার্স তাকে এ কী বলে গেল! শ্রবণের অবস্থা কি খারাপ হচ্ছে? সে কি বাঁচবে না? ভাবতেও পারছে না বারিধারা। ঝুঁকে পড়ে দু-হাত দিয়ে মুখ চেপে বসল। সে কি কাঁদবে? চিৎকার করে কেঁদে উঠবে? অনেকক্ষণ ধরেই সে কাঁদছে। লুকিয়ে কাঁদছে। কেউ যেন দেখতে না পায়। কান্নার পর চোখে মুখে জল দিয়ে ধুয়ে নিয়েছে। এই কান্না তো শ্রবণের জীবন-মৃত্যুর কান্না নয়, এ তার ভালোবাসার কান্না। এ কান্না কাউকে দেখাতে নেই। বারিধারা মুখ থেকে হাত সরাল। না, কাঁদবে না। কিছুতেই কাঁদবে না। হাওয়া দিচ্ছে। ঠান্ডা হাওয়া। গোটা শরীর অবসন্ন হয়ে যাচ্ছে। ঘোরের মতো লাগছে। এই ঘোরের মধ্যেই সে এক বুড়ো মানুষের গলা শুনতে পেল। সেই গলায় অল্প অল্প হাসি।

‘কীরে দিদিভাই, কেমন আছিস?’

‘দাদু, তুমি! তুমি কোথা থেকে এলে!’

‘কোথা থেকে এলাম মানে! কমলকান্তি সেন এখন সব জায়গায় থাকে।’

বারিধারা ঘোরের মধ্যেই ডুকরে কেঁদে ওঠে।

‘দাদু, তুমি এসো। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরো। মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আদর করো।’

‘দ্যাখ দেখি কাণ্ড! বোকা মেয়ে একটা। এই তো আমি তোর মাথায় হাত রেখেছি। তুই না আমার সাহসী নাতনি? বীর নাতনি। ছি:, সাহসী মেয়ে এত ভেঙে পড়ে?’

‘দাদু, শ্রবণ মারা যাচ্ছে।’

‘জন্ম-মৃত্যু সব এক বৃষ্টি। কেউ বেঁচে থেকেও মরে আছে, কেউ আবার মরে গিয়েও বেঁচে আছে। তোরা তো তোদের মায়ের মতো গান করতে শিখলি না, শিখলে জাতনিস, তবুও শান্তি, তবু অনন্ত জাগে।’

‘শ্রবণ না থাকলে আমিও একা হয়ে যাব দাদু। আমি বাঁচতে পারব না।’

‘পাগল মেয়ে একটা। বৃষ্টি তুই খুব বোকা হয়ে গিয়েছিস। হওয়াটাই স্বাভাবিক। মোস্ট ইনটেলিজেন্ট লিস্ট নিয়ে যে আর মাথা ঘামাস না। সবাই অমন ভাবে। ভাবে ভালোবাসার মানুষ চলে গেলে আর বাঁচব না। তারপরও বাঁচতে হয়। জীবন খুব নিষ্ঠুর, নির্মম রে পাগলি।’

‘সত্যি বলছি দাদু, শ্রবণের যদি কিছু হয়…সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়…।’

‘মৃত মানুষরা কাউকে ছেড়ে যায় না রে বৃষ্টি। তারা জীবিতদের পাশে ঘুরে বেড়ায়। তারা হাসে কাঁদে আর বারবার বলে আমায় ভালোবাস, আমায় এমন ভালোবাস যেন আমি আবার ফিরে আসি। আবার ফিরে আসি তোমার কাছে। জীবিতরা সেকথা শুনতে পায় না।’

‘দাদু, কাল দুপুরে আমার বুকের ভিতর হঠাৎ ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল, শ্রবণের কোনও বিপদ হয়েছে। আমি ফোন করলাম। যদি ফোন না করতাম তাহলে আরও দেরি হয়ে যেত।’

‘মৃত্যু তার দায়িত্ব পালন করে। তোকে এখানে ডেকে খেলা করছে বলতে পারিস। তোরা আধুনিক সময়ের ছেলেমেয়ে এসব তো মানিস না।’

‘দাদু, তুমি এসব কী বলছ!’

‘কাঁদ বৃষ্টি। যত কাঁদবি, ভাব-ভালোবাসা তত শক্ত হবে। জীবনে হবে, মৃত্যুতেও হবে। ভয় কীসের? কেউ তোকে ছেড়ে যাবে না। আমি কি গিয়েছি? তুই খুব ক্লান্ত। তুই ঘুমো। অনেক যুদ্ধ বাকি আছে তোর। অনেক লড়াই।’

ধড়ফড় করে বসে বারিধারা। জ্যোতিষ্কদা, তার পিঠে হাত রেখেছে।

‘উফ এখানে বসে আছ! আমি তো গোটা হাসপাতাল খুঁজে ফেললাম।’

লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়াল বারিধারা। জ্যোতিষ্ক অবাক হয়ে বলল, ‘এ কী তুমি কাঁদছিলে নাকি! বোঝো কাণ্ড!’

বারিধারা তাড়াতাড়ি চোখ মুছল আর তখনই সে বুঝল, ভোর হচ্ছে! আলো ফুটছে। নরম আলোয় চারপাশ জেগে উঠেছে। তবে কি মেঘ কেটে গেল?

‘বেঞ্চে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’

জ্যোতিষ্ক বলল, ‘বেশ করেছিলে। চলো নীচ থেকে চা খেয়ে আসবে। তার আগে এই চাদরটা গায়ে দাও। তোমার দিদি পাঠিয়ে দিয়েছে।’

বারিধারা কিছু একটা বলতে গেল। বলতে পারল না। আই সি সি ইউয়ের কাচের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছেন সেই রাগী নার্স। তিনি ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন। সারা রাত রোগী সেবা করে পরিশ্রান্ত। এবার তাঁর ছুটি।

মহিলা বারিধারা আর জ্যোতিষ্কর সামনে এসে দাঁড়ালেন।

‘বারিধারা, কাল সারা রাত আপনি হাসপাতালের নিয়ম ভেঙেছেন। আজ সকালে আমি ভাঙব। আপনি আমার সঙ্গে আসুন। নিয়ম না থাকলেও আমি আপনাকে আই সি সি ইউয়ের ভিতরে নিয়ে যাব। শ্রবণ রায়ের জ্ঞান ফিরেছে।’

জ্যোতিষ্ক তাড়াতাড়ি বলে, ‘আমিও যাব।’

ভারীক্কি চেহারার নার্স কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘না। আর কেউ নয়। আপনি এখানে অপেক্ষা করুন।’

বারিধারা এগিয়ে যাচ্ছে। তার দু’চোখ ভেসে যাচ্ছে জলে। এদিক-ওদিক একজন দুজন করে জেগে উঠছে। তাদের মধ্যে যারা বারিধারাকে দেখতে পাচ্ছে তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আহা রে! কী সুন্দরই না লাগছে মেয়েটাকে!

হাঁটতে হাঁটতেই মুখ তুলল বারিধারা। বারান্দার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। মেঘহীন নীল আকাশ। একটু পরে রোদ উঠবে।

————

1 Comment
Collapse Comments
সৈয়দ মোঃ জাফরেছ সাদী লাব্বু October 14, 2024 at 10:38 am

খুবই সুন্দর ঝরঝরে অনবদ্য একটি উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্য লেখককে অজস্র ধন্যবাদ জানাই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *