অধ্যাপক ইউনূস সাহেবের এক যুগ আগে বর্তমান চলমান রাজনীতিতে হতাশ হয়ে আমরা একটা রাজনৈতিক দল করেছিলাম৷ দলের নাম হিমু দল, ইংরেজিতে হিমু পার্টি৷ দলের জন্য হলুদ কাগজে প্যাড ছাপানো হলো৷ রাত জেগে গঠনতন্ত্র লেখা হলো৷ তিনটি স্তম্ভের ওপর দল৷ প্রথম স্তম্ভ সততা৷ দ্বিতীয় স্তম্ভ সততা৷ তৃতীয় স্তম্ভ সততা৷
অসৎ রাজনীতিবিদদেরও দলে আনার বিধান ছিল৷ তারা প্রথমে যাবে বায়তুল মোকাররমে৷ সেখানকার খতিব তাদের তওবা পড়াবেন৷ এরপর আসবেন শহীদ মিনারে৷ সেখানে তাদের সততার পরিমাণ অনুযায়ী কানে ধরে উঠবস করবেন৷ তারপর সোনা-রুপার পানি দিয়ে তাদের গোসল করিয়ে হলুদ পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হবে৷ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যদি কেউ অন্যায় করেন, সঙ্গে সঙ্গে জাহাজে করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে নিঝুম দ্বীপে৷ দ্বীপে পাঠানোর আগে কপালে সিল দিয়ে দেওয়া হবে৷ সিলে বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখা থাকবে – অসৎ – Dishonest৷
সৎ মানুষের খোঁজে আমাদের লোকজন ঘুরে বেড়াবে৷ জীবনে কখনো কোনো অন্যায় করেননি এবং মিথ্যা কথা বলেননি – এমন লোককে বানানো হবে প্রেসিডেন্ট৷ সাংসদদের সাইকেল চালনায় পারদর্শী হতে হবে৷ কারণ তারা সাইকেলে করে অঞ্চল ঘুরে বেড়াবেন৷ সংসদ চলাকালীন সময়ে তারা শুধু ঢাকায় আসবেন, বাকি সময়টা থাকতে হবে অঞ্চলে৷ মন্ত্রীরা মন্ত্রীপাড়ায় থাকবেন না৷ তাদের জন্য লম্বা টিনের চালা করে চৌকি পেতে দেওয়া হবে৷ হোস্টেলের মতো ব্যবস্থা৷ তারা সচিবালয়ে হেঁটে যাতায়াত করবেন৷
আলাদা কিছু মন্ত্রণালয় খোলার পরিকল্পনা আমাদের ছিল, যেমন ভিক্ষুক মন্ত্রণালয়৷ এই মন্ত্রণালয় শুধু যে দেশের ভিক্ষুকদের সমস্যা দেখবে তা না৷ বিদেশ থেকে ভিক্ষা আনার ব্যাপারটাও তারা দেখবে৷ হাসি মন্ত্রণালয়৷ এই মন্ত্রণালয় দেখবে দেশের মানুষ যেন হাসতে পারে ইত্যাদি৷
হিমু পার্টি গঠনের পর সপ্তাহে একদিন পার্টির বৈঠক বসতে লাগল৷ আমরা চাঁদাবাজিও শুরু করলাম৷ পার্টির জন্য চাঁদা তোলা হতে লাগল৷ মেম্বাররা প্রতি সপ্তাহে যার যা মন চায় চাঁদা একটি কাঠের বাক্সে জমা করতে লাগলেন৷ মাসের শেষে দেখা গেল, নয় শ টাকা হয়েছে৷ এই টাকায় পার্টির কাউন্সিল মেম্বাররা একটা করে হলুদ পাঞ্জাবি এবং চাদর কিনলেন৷ দলের টাকা ব্যক্তিগত হলুদ পাঞ্জাবির পেছনে খরচ করার কারণে কাউন্সিল মেম্বাররা আজীবনের জন্য হিমু রাজনীতি থেকে বহিষ্কৃত হলেন৷ সঙ্গে সঙ্গে হিমু দলও বাতিল হয়ে গেল৷