একটি মেয়ে, অনেক পাখি

একটি মেয়ে, অনেক পাখি

বিদেশ থেকে একটা চিঠি এসেছে৷ খুব ভালো খবর৷

সাদা লম্বা খাম, তার ওপর ডাকটিকিটটা কী সুন্দর, একটা ডানা মেলা পাখির ছবি, লাল আর নীল রং মেশানো, লম্বা ঠোঁট৷ অচেনা পাখি৷

মিনু বলল, বাবা, আমি এই স্ট্যাম্পটা নেব!

বাবা বললেন, আচ্ছা পরে নিস৷

তারপর বাবা ইংরিজিতে মাকে কী যেন বললেন৷

মিনুর বয়েস সাড়ে চার বছর৷ সে মোটে দু’চারটি ইংরিজি শব্দ জানে, সব বোঝে না৷ সে এটাও বোঝে, মা-বাবা তার সামনে যখনই কোনো গোপন কথা বলতে চান, তখনই ইংরিজিতে কথা বলতে শুরু করেন, বাংলার বদলে৷

সারাদিন ধরে মা-বাবা আড়ালে আড়ালে কী যেন আলোচনা করতে লাগলেন৷ বিদেশের চিঠিতে খুব ভালো খবর এসেছে, প্রথমবার চিঠিটা পড়ে তাঁর মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিল৷ এখন ওঁরা দু’জনেই চিন্তিত৷

আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয় বাবাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ বাবা সেখানে পড়াবেন ছ’মাসের জন্য৷ ওরা যাওয়া-আসার ভাড়া দেবে, থাকার জায়গা দেবে, অনেক টাকা দেবে৷ এটা ভালো খবর নয়?

কিছুদিন আগে বাবার খুব অসুখ করেছিল৷ এখন সেরে উঠেছেন৷ তবে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়৷ ভুলে গেলেই মুশকিল৷ কিন্তু বাবার দারুণ ভুলো মন৷ মা প্রত্যেকদিন দু’বেলা বাবাকে ওষুধের কথা মনে করিয়ে দেন৷

বাবা বিদেশে গেলে মাকেও সঙ্গে যেতে হবে৷

কিন্তু মিনুর কী হবে?

চিঠিতে স্পষ্ট লেখা আছে, বিদেশে বাবাকে যেখানে থাকতে দেওয়া হবে, সেখানে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের থাকা নিষেধ! অর্থাৎ মিনুকে নিয়ে যাওয়া চলবে না৷

তা হলে মিনু কোথায় থাকবে? মিনুকে ফেলে মা যাবেন কী করে?

মিনুর আর ভাইবোন নেই, কলকাতাতে ওদের আর কোনো আত্মীয়স্বজনও থাকে না৷

রাত্তিরবেলা খেতে বসে মা জিজ্ঞেস করলেন, মিনু, আমরা যদি কিছুদিনের জন্য বাইরে চলে যাই, তুই মাসির কাছে গিয়ে থাকতে পারবি?

মিনু সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ৷

বয়েসে এত ছোটো হলে কী হবে, মিনু ঠিকই বুঝেছে যে তাকে নিয়ে তার মা-বাবার কিসের জন্য যেন মাথাব্যথা হয়েছে৷

মা বললেন, তোর বাবাকে বিদেশ থেকে ডেকেছে৷ সেখানে তাঁর কত সুনাম হবে৷ অনেক টাকাও দেবে বলেছে৷ সেখানে তো তোকে নিয়ে যাবার উপায় নেই৷ তোকে যদি বুলার কাছে রেখে যাই—

মিনু টলটলে দুটো চোখ মেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ, থাকতে পারব!

বাবা বললেন, তোর মন কেমন করবে না? অবশ্য দেখতে দেখতে ছ’মাস কেটে যাবে৷

মা বললেন, তোর জন্য আমাদের মন কেমন করবে৷ তোকে চিঠি লিখব, ফোন করব৷ তোর জন্য সুন্দর সুন্দর খেলনা নিয়ে আসব৷

বাবা বললেন, বুলা মাসিদের ওখানে অনেক খোলামেলা জায়গা৷ খেলা করতে পারবি৷ বুলা মাসির মেয়েরা তোকে পড়া দেখিয়ে দেবে৷ ঠিক করে বল, থাকতে পারবি তো?

মা বললেন, তুই রাজি না হলে আমরা যাবই না!

মিনু আবার লক্ষ্মী মেয়ের মতন বলল, থাকব! তোমরা কিন্তু তার বেশি দেরি করবে না!

মা আর বাবা দু’জনেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন৷

বুলা মাসিরা থাকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের কাছে একটা ছোট্ট জায়গায়৷ শান্তনু মেসো একটা চা-বাগানের ম্যানেজার৷ আগের বছর মিনুরা এখানে বেড়াতে এসেছিল, তখন খুব ভালো লেগেছিল৷

মা আর বাবা বিদেশযাত্রার আগে মিনুকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন আলিপুরদুয়ারে, কয়েকটা দিন সেখানে কাটালেন৷ মিনুকে বেশ হাসিখুশি দেখে নিশ্চিন্ত হলেন ওঁরা৷ মিনুকে অনেক আদর করে বিদায় নিলেন একদিন৷

বুলা মাসি মায়ের চেয়ে মাত্র দু’বছরের ছোট৷ কিন্তু তাঁর দুটি মেয়ে আছে, এগারো বছর আর ন’বছরের৷ মিনু জন্মেছে অনেক পরে৷ মিনুর সেই দুই দিদি পমপম আর ঝুমঝুম কিন্তু এবারে এখানে নেই, তারা ভর্তি হয়েছে দার্জিলিং-এর বোর্ডিং স্কুলে৷ মিনু স্কুলে ভর্তি হবে সামনের বছর৷

বুলা মাসি যেন মায়ের চেয়েও বেশি যত্ন করে মিনুকে খাওয়ান, জামা পরিয়ে দেন, গল্প বলেন, ঘুম পাড়ান৷ মাঝে মাঝেই বলেন, এই মেয়ে, কাঁদছিস না তো? দেখি, দেখি, চোখ দেখি!

মিনু একটু একটু কাঁদে ঠিকই, হঠাৎ হঠাৎ এমনি এমনি কান্না পেয়ে যায়, কিন্তু বুলা মাসিকে দেখেই চোখ মুছে ফেলে৷ এখানে যে তার ভালো লাগছে, সে কথাও ঠিক৷

টিলার ওপরে মস্ত বড় বাড়ি৷ চারপাশে বাগান, কত রকম ফুল৷ দূরে দেখা যায় গম্ভীর, উঁচু পাহাড়৷ মিনুর যদিও খেলার সঙ্গী কেউ নেই, তবু সে বাগানে একা একা ঘুরে বেড়ায়৷ আপনমনে কথা বলে৷

মিনুকে সব সময় চোখে চোখে রাখার জন্য ফুলসরিয়া নামে একটি কাজের মেয়ের ওপর ভার দেওয়া হয়েছে৷ সে বারান্দায় বসে থাকে, খাওয়ার সময় মিনুকে ডেকে নিয়ে যায়৷

ফুল ছাড়া পাখিও দেখা যায় অনেকরকম৷ শান্তনু মেসোর খুব পাখি পোষার শখ, কতরকম পাখি জোগাড় করে এনেছেন৷ সে পাখিগুলোকে আলাদা আলাদা খাঁচায় রাখা হয়নি৷ শুধু জাল দিয়ে ঘিরে অনেক বড় একটা বাড়ির মতন বানানো হয়েছে, তার মধ্যেই সব রকম পাখি থাকে৷ সেই জালের বাড়িতে কয়েকটা গাছও রয়েছে, পাখিরা উড়ে উড়ে সেই গাছেও বসে৷ এই বাড়িটার নাম বার্ড হাউজ, মিনু সেটা বানান করে পড়তে শিখেছে৷

আশ্চর্য, এত রকমের পাখি একসঙ্গে থাকে, কিন্তু তারা ঝগড়া করে না একটুও৷ কিংবা কখনো ঝগড়া করে হয়তো, কিচিরমিচির শুনে তো কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু মারামারি করে না একেবারেই৷

শান্তনু মেসো নিজে সব পাখির খাবার দেন৷ এক একটা পাখিকে আদর করেন গায়ে হাত বুলিয়ে৷ বুলা মাসির অত পাখির শখ নেই, তিনি ভালোবাসেন বই পড়তে৷ তা ছাড়া তিনি দুপুরে কুলিবস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াতে যান৷

শান্তনু মেসো খাবার দিতে যখন বার্ড হাউজে ঢোকেন, তখনই মিনু ওঁর সঙ্গে ভেতরে যায়৷ অন্যসময় তালাবন্ধ থাকে৷ শান্তনু মেসো মিনুর হাতে অনেকগুলো টাটকা ছোলা দিয়ে বলেন, এই গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে থাকো, দেখবে ওই সাদা পাখিগুলো তোমার হাত থেকে খাবার তুলে নেবে৷ সত্যিই সেই পাখিগুলো তার হাত থেকে খাবার খায়, দু’একটা তার কাঁধে এসে বসে৷ কী মজাই যে লাগে!

একদিন সকালবেলা শান্তনু মেসোকে কাঁধে বন্দুক নিয়ে বেরুতে দেখে মিনু জিজ্ঞেস করল, তুমি পাখি মারতে যাচ্ছ বুঝি?

শান্তনু মেসো মিনুর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, না মিনু সোনা, আমি জীবনে কখনো পাখি মারিনি৷ আমি যে পাখিদের ভালোবাসি৷

মিনু জিজ্ঞেস করল, তবে বন্দুক নিয়েছ কেন?

শান্তনু মেসো বললেন, একটা লেপার্ড বেরিয়েছে যে৷ বড্ড উৎপাত করছে৷

বুঝতে না পেরে মিনু আবার জিজ্ঞেস করল, লেপার্ড কী?

শান্তনু মেসো বললেন, লেপার্ড হচ্ছে এক রকমের ছোট বাঘ৷ এখানে লোকে বলে চিতাবাঘ, কিন্তু চিতা ঠিক নয়৷ ছোট হলে কী হবে, এক একটা লেপার্ড খুব হিংস্র হয়, মানুষকেও আক্রমণ করে৷

মিনু বলল, তুমি বুঝি সেই বাঘটাকে মারবে?

শান্তনু মেসো বললেন, প্রথমে চেষ্টা করব ভয় দেখিয়ে জঙ্গলের দিকে তাড়িয়ে দিতে৷ চা-বাগানে লুকিয়ে আছে, যদি কুলিদের আক্রমণ করে, তা হলে মারতেই হবে৷ তুমি কিন্তু সাবধানে থাকবে৷ বাগানের বাইরে এক পাও যাবে না৷

বিকেলবেলা বুলা মাসি বললেন, এই দ্যাখ মিনু, তোর মা’র চিঠি এসেছে!

মিনু দেখল, এই সাদা খামের ওপরেও একটা পাখির ছবিওয়ালা স্ট্যাম্প৷ মনে হচ্ছে যেন, এই পাখিটার মতনই দুটো পাখি আছে বার্ড হাউসে৷

বুলা মাসি চিঠিখানা পড়ে শোনালেন৷ মা আর বাবা মিনুর কথা লিখেছেন বারবার৷

বুলা মাসি তারপর বললেন, তোর মা-বাবা কোথায় আছেন বুঝতে পারিস? পৃথিবীটা গোল জানিস তো? আমরা পৃথিবীর যেখানে আছি, ওঁরা আছেন প্রায় উল্টোদিকে৷ এখানে তো এখন বিকেল পাঁচটা, ওখানে এখনও ভোরই হয়নি৷ দু’জনেই এখন ঘুমোচ্ছেন!

বাবা-মা এখনো ঘুমোচ্ছেন শুনে ফিক করে হেসে ফেলল মিনু৷

বুলা মাসি বললেন, দিদি লিখেছে, আমাদের মিনুর চেয়ে সুন্দর মেয়ে এখানে একটিও দেখিনি!

মিনু বলল, আহা, নিজের মেয়েকে সবাই বেশি সুন্দর দেখে!

বুলা মাসি চোখ বড় বড় করে বললেন, বাবাঃ! এর মধ্যেই পাকা বুড়ির মতন কথা বলতে শিখেছিস তো!

৷৷ ২৷৷

চার মাস কেটে গেছে৷ এখন মিনু বেশিরভাগ সময় পাখির বাড়িতে কাটায়৷

এর মধ্যে শান্তনু মেসোকে তিন-চারদিনের জন্য কলকাতায় যেতে হয়েছিল অফিসের কাজে৷ তিনি না থাকলে ফুলসরিয়ার ওপর ভার থাকে পাখিদের খাবার দেওয়ার৷ এবার শান্তনু মেসো সেই ভার দিয়েছিলেন মিনুকে৷ সে সব শিখে গেছে৷ অবশ্য ফুলসরিয়াও সঙ্গে থাকে৷

শান্তনু মেসো বলে দিয়েছেন, মিনু ইচ্ছে করলে যখন খুশি বার্ড হাউসে যেতে পারবে, ফুলসরিয়া তালা খুলে দেবে৷ ফুলসরিয়া আবার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায় নিজের কাজে৷

সেবারে সেই চিতাবাঘটাকে আর শেষ পর্যন্ত মারতে হয়নি৷ শান্তনু মেসো বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করতে করতে সেটাকে তাড়িয়ে নিয়ে যান জঙ্গল পর্যন্ত৷

সেই জঙ্গল থেকে তিনি নিয়ে আসেন একটি পাখির ছানা৷

ঝড়ে একটা গাছ ভেঙে পড়েছিল, সেই গাছের ডালে ছিল একটা পাখির বাসা৷ তাতে তিনটে বাচ্চা পাখি ছিল, দুটো মরে গেছে, একটা বেঁচে আছে কোনোক্রমে৷ খুব সাবধানে, খুব যত্ন করে সেই পাখির ছানাটা নিয়ে এসে শান্তনু মেসো বলেছিলেন, দেখ তো মিনু, এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারো কি না!

পাখিরা ছোলা খায়, ছাতুমাখা খায়, গম খায়৷ ফুলসরিয়া কোথা থেকে কেঁচো আর পোকামাকড়ও নিয়ে আসে৷ টিয়া পাখিদের জন্য কাঁচালঙ্কাও দিতে হয়৷ কিন্তু এতটুকু বাচ্চা পাখি তো ওসব কিছুই খেতে পারবে না৷ মিনু ছেঁড়া কাপড়ের পলতে পাকিয়ে, সেটা দুধে ভিজিয়ে ওর মুখে দিয়েছিল৷ সেই ভাবেই খাইয়েছিল মধু৷ তাই খেয়েই ওর গায়ে জোর হয়েছে, এখন দিব্যি উড়ে বেড়ায়৷ ছোলা খেতেও শিখেছে৷ ডানায় সবুজ রং, গলার কাছে একটু লাল, এটা চন্দনা পাখি৷ মিনু ওর নাম দিয়েছে চন্নু! আরও অন্য অনেক পাখিরও নাম দিয়েছে সে, কোনোটা ভুলু, কোনোটা মিতু, কোনোটা বুকবুকি৷

একদিন বুকবুকি পাখিটা হঠাৎ বলে উঠল, এই মেয়ে, তুমি রোজ আমাদের খাবার দাও, তুমি নিজে কী খাও?

মিনু চমকে উঠে চোখ গোল গোল করে পাখিটার দিকে তাকাল৷

পাখিটা কিন্তু মানুষের ভাষায় কথা বলেনি৷ সে বলেছে, বুক কুক কুক, কুলিং, কুলো কলো৷ মিনু তার মানে বুঝে গেল কী করে?

মিনু একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, কুলু মুঙ মুঙ পিকালো পিকালো৷ তার মানে, আমি ভাত খাই, ডাল খাই!

পাখিটা বলল, আমি একদিন তোমার খাবার খাব!

এবার বাচ্চা চন্দনা পাখিটা বলল, ট্যা-টু-টু-টুটুকু টুকুকু!

মিনু এর মানেও বুঝে গেল৷ এ পাখিটা বলছে, তুমি রোজ আমায় খাবার দাও৷ তুমি কি আমার মা?

মিনু বলল, না, আমি তোমার মা নই৷

চন্দনা বলল, তাহলে আমার মা কে?

মিনু বলল, তোমার মা কোথায় আমি জানি না৷

চন্দনা পাখিটা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল, না, জানি, তুমিই আমার মা!

মিনু হেসে ফেলল৷ সে পাখির মা হবে কী করে?

সে চুপি চুপি রান্নাঘর থেকে এক বাটি ভাত নিয়ে এসে রাখল এই পাখির বাড়ির মাঝখানে৷ অমনি অনেক পাখি উড়ে এসে বসল সেই বাটির কাছে৷ এক মিনিটে শেষ হয়ে গেল সব ভাত৷

মিনু বেশ অবাক হল৷ পাখিরা ভাত খেতে ভালোবাসে?

শুধু দুটো বড়ো বড়ো কাকাতুয়া ভাত খেতে এল না৷ একটা কাকাতুয়া ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, ককেটু কাকাটু, কটু কটা, ক্কা ক্কা!

মিনু বুঝতে পারল, সে বলছে, আমরা ভাত খাই না! আমাদের খেজুর দাও!

মিনু খেজুর পাবে কোথায়? বাড়ির মধ্যে গিয়ে ফুলসরিয়াকে জিজ্ঞেস করল, সে বলল, খেজুর তো নেই!

বুলা মাসি বললেন, তোর খেজুর খেতে ইচ্ছে হয়েছে মিনু? ঠিক আছে, শিলিগুড়ি থেকে এনে দেব৷ কাল আমি গাড়ি নিয়ে যাব শিলিগুড়ি৷ তুই-ও যাবি আমার সঙ্গে৷

মিনু কিন্তু শিলিগুড়ি যেতে রাজি হল না৷ এর আগে একবার সে ওঁদের সঙ্গে শিলিগুড়ি বেড়াতে গিয়েছিল৷ অনেক দূর৷ সকালবেলা গিয়ে সন্ধেবেলা ফিরতে হয়৷ অতক্ষণ সে পাখিদের ছেড়ে থাকতে পারবে না৷

সে পাখিদের ভাষা শিখে গেছে বলে খুব মজা লাগছে৷ শুধু সে-ই ওদের কথা বুঝতে পারে৷ বুলা মাসি, ফুলসরিয়া, এমনকি শান্তনু মেসো পর্যন্ত বোঝেন না৷

সে নতুন নতুন খাবার জোগাড় করে পাখিদের দেয়৷ ওদের কোনোটা পছন্দ হয়, কোনোটা হয় না৷ শুধু কাকাতুয়া দুটোকে নিয়েই মুশকিল৷ তাদের প্রায় কিছুই পছন্দ হয় না৷ একদিন তারা বলল, ও মানুষের মেয়ে, আমাদের জন্য প্রজাপতি ধরে দাও৷ আমরা প্রজাপতি খেতে ভালোবাসি৷

মিনু রাগ করে বলল, না, আমি প্রজাপতি ধরে দিতে পারব না৷ ওই যা গম খাচ্ছ, তাই খাও!

বাগানে কত চমৎকার চমৎকার প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়৷ ফুল যেমন সুন্দর, প্রজাপতিও তেমন সুন্দর৷ পাখিরা প্রজাপতিদের খাবে কেন? এ খুব অন্যায়৷ কাকাতুয়া দুটো আবার প্রজাপতি খেতে চাইলেই মিনু ওদের বকে দেবে খুব!

একদিন একটা কাণ্ড হল৷

তারের জাল দিয়ে ঘেরা এতখানি জায়গার মধ্যে অনেক পাখি বন্দি রয়েছে বলে বাইরের পাখিরা এদিকে আসেই না৷ হঠাৎ একদিন দুপুরে একটা বড় সবুজ পাখি বাইরের জালে এসে বসল৷

মিনু তখন সব পাখিদের জন্য খাবার এনেছে৷ তার হাতে, বুকে, ঘাড়ের ওপর এসে বসেছে অনেক পাখি৷ দুটো বদরি পাখি বসেছে তার মাথায়৷ একটা ছোট্ট মউটুসি পাখি সুড়সুড়ি দিচ্ছে তার কানে৷ মিনু হাসতে হাসতে বলছে, এই, এই, দুষ্টুমি করিস না!

বাইরের বড় সবুজ পাখিটা খানিকক্ষণ অবাক হয়ে দেখল৷ তারপর আপন মনে বলল, এ তো ভারী আশ্চর্য ব্যাপার! মানুষের সঙ্গে পাখির এত ভাব! আর সব জায়গায় তো দেখি, মানুষরা পাখিদের ধরে মারে, ডানা ছিঁড়ে দেয়, রাক্ষসের মতন খেয়েও ফেলে! এ মেয়ে দেখছি পাখিদের কত খাবার দিচ্ছে! আমার যে কী খিদে পেয়েছে!

মিনু ওর কথা বুঝতে পেরে বলল, তোমার খিদে পেয়েছে? খাবার খাবে তো এসো!

সবুজ পাখিটা বলল, আহা ভারী চালাক৷ ওই জালের মধ্যে ঢুকব, অমনি আমায় বন্দি করে রাখবে, তাই না?

মিনু বলল, ঠিক আছে, জালের বাইরে তোমার জন্য খাবার রেখে দিচ্ছি৷

পাখিটা বলল, তার দরকার নেই৷ আমি মানুষের দেওয়া খাবার খাই না৷ মানুষেরা আমার তিনটে ছেলেমেয়েকে মেরে ফেলেছে৷

মিনু বলল, ইশ, তাই নাকি? যারা তোমার ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলেছে, তারা খুব পাজি!

পাখিটা বলল, পাজিই তো! আমি আমার ছেলেমেয়েদের জন্য খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিলাম৷ তারপর ঝড় উঠল৷ আমি আর ফিরতে পারি না, ফিরতে পারি না৷ ঝড় আমাকে ঠেলে নিয়ে গেল অনেক দূর দেশে৷ ঝড় থামবার পর আমি আর রাস্তা চিনতে পারি না৷ অনেক খুঁজে খুঁজে যখন পৌঁছলাম, তখন দেখি, কারা যেন সেই গাছটা কেটে নিয়ে গেছে, আমার বাসাটাও নেই, ছেলেমেয়েরাও নেই৷ তারপর থেকে আমি ওদের খুঁজছি৷ এখনো খুঁজছি৷ আমার দুধের বাচ্চারা কোথায় যে গেল!

মিনু জিজ্ঞেস করল, গাছটা কেউ কেটে নিয়েছে, না ঝড়ে ভেঙে পড়েছে?

চন্নু নামে বাচ্চা পাখিটা মিনুকে বলল, মা, তুমি ওর সঙ্গে এত কথা বলছ কেন? আমাকে ভালো করে খেতে দিচ্ছ না!

বাইরের বড় পাখিটা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ওমা, ওই তো আমার একটা ছেলে!

চন্নু বলল, আমি মোটেই তোমার ছেলে নই৷ এই মেয়েই আমার মা৷

বাইরের পাখিটা বলল, ওমা, দেখেছ কী কাণ্ড! এই মেয়েটা আমার ছেলেকে চুরি করে এনেছে! তারপর ভুলিয়ে-ভালিয়ে পর করে দিয়েছে!

মিনু বলল, মোটেই আমি চুরি করে আনিনি৷ গাছতলায় পড়ে ছিল৷ এখানে না আনলে মরেই যেত৷

বাইরের পাখিটা এবার নরম গলায় বলল, ওগো মেয়ে, তুমি আমার একটা ছানাকে বাঁচিয়েছ, তোমার পায়ে শত কোটি প্রণাম৷ তোমার খুব ভালো হবে৷ এবার তুমি আমার বাছাকে ফেরত দাও না গো!

মিনু তখন চন্নুকে বলল, কী রে, তোর মায়ের কাছে যাবি?

চন্নু বলল, ও আমার মা নয়৷ ওকে আমি চিনি না৷

মিনু বলল, হ্যাঁ, ও-ই তোর মা৷ তোকে ছেড়ে তোর মায়ের কত কষ্ট হচ্ছে৷ তুই মায়ের কাছে ফিরে যা৷

চন্নু বলল, আমার ভয় করছে৷ কোনোদিন তো বাইরে যাইনি!

মিনু বলল, ভয় কী! মায়ের সঙ্গেই তো থাকবি৷ একবার গিয়ে দ্যাখ, যদি ভালো না লাগে, আবার ফিরে আসবি এখানে৷

চন্নুকে হাতে নিয়ে মিনু সাবধানে দরজা খুলে, আবার বন্ধ করে বেরিয়ে এল বাইরে৷ চন্নুকে এক জায়গায় বসিয়ে সে সরে গেল একটু দূরে৷

বাইরের বড় পাখিটা কাছে এসে ঠোঁট দিয়ে কত আদর করল চন্নুকে৷ তারপর দু’জনে হঠাৎ ফুড়ুত করে উড়ে গেল৷

মিনু আবার ভেতরে আসতেই একটা কাকাতুয়া গম্ভীরভাবে বলল, তুমি ওকে ছেড়ে দিলে? তাহলে আমাদেরও ছেড়ে দাও৷

মিনু বলল, তোমাদের আমি ছাড়ব কী করে? শান্তনু মেসো তোমাদের এনেছেন৷

কাকাতুয়া বলল, ওই বাচ্চাটাকেও তো তিনিই এনেছিলেন৷ আমাদের বুঝি বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না?

মিনু বলল, তোমাদের তো মা নিতে আসেননি৷ সেটা আলাদা কথা৷

তখন সব পাখি একসঙ্গে কলকাকলি শুরু করে দিল৷ কয়েকজন বলল, চন্নু মুক্তি পেলে তাদেরও মুক্তি পাওয়া উচিত৷ আর কয়েকজন বলল, মুক্তির কী দরকার৷ এখানেই তো বেশ আছি৷ খাবার খুঁজতে হয় না, এমনি এমনি খাবার পাই৷

শুধু বুকবুকি নামের পাখিটা গলা চড়িয়ে বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিলেও যাব না৷ আমি মিনুর কাছে থাকব!

মিনু আর কথা না বাড়িয়ে চলে এল বাইরে৷

দরজায় তালা লাগিয়ে দিল৷

আকাশের দিকে চেয়ে রইল অনেকক্ষণ৷ নীল আকাশে সাদা সাদা মেঘ ভাসছে৷

বাগানের একদিকে তাকালে পাহাড় দেখা যায়৷ সেখানে ঘন বন রয়েছে, খুব বড় বড় গাছ৷ বড় পাখিটা চন্নুকে নিয়ে ওই দিকে উড়ে গেছে৷

মিনু যেন কল্পনায় দেখতে পেল, চন্নু তার মায়ের সঙ্গে উড়ছে, উড়ছে তো উড়ছেই, মহা আনন্দে ডিগবাজি খাচ্ছে৷ চলে যাচ্ছে দূর থেকে দূরে৷

হঠাৎ মিনুর চোখে জল এসে গেল৷

সে শব্দ করে কাঁদছে না, কিন্তু চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে তার বুকের জামা৷

৷৷ ৩৷৷

ঠিক ছ’মাস দশ দিন পর ফিরে এলেন মিনুর বাবা আর মা৷ বাবাকে বিদেশে আরও কিছুদিন থেকে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু মা বলেছিলেন, আর একদিনও বেশি থাকতে চান না৷ মিনুকে তিনি কথা দিয়ে এসেছিলেন৷

দমদম এয়ারপোর্টে নেমে মা আর বাড়িই ফিরলেন না৷

বাবাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল সল্টলেকের বাড়ি ঠিকঠাক করে রাখার জন্য৷ মা ওখান থেকেই আর একটা প্লেনে চেপে চলে গেলেন শিলিগুড়ি৷

আগে থেকেই ব্যবস্থা করা ছিল, শান্তনু মেসো শিলিগুড়ি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলেন মায়ের জন্য৷

জিপ গাড়িতে উঠে বসার পর মা জিজ্ঞেস করলেন, আগে মিনু কেমন আছে বলো!

শান্তনু মেসো বললেন, মিনু চমৎকার আছে৷ একদিনও তো তাকে কাঁদতে দেখিনি৷ সে তো সর্বক্ষণ আমার বার্ড হাউজের পাখিদের নিয়েই মেতে থাকত! ওইটুকু মেয়ের কী দায়িত্বজ্ঞান! অতগুলো পাখির খাবার দেওয়া, ঠিক সময়ে জল দেওয়া, এসব তো মিনুই করে৷

মা তখন বিদেশের গল্প শুরু করলেন৷

চা-বাগানের বাংলোয় পৌঁছেই মা ডাকলেন, মিনু, মিনু, মিনু কোথায়?

সন্ধে হয়ে এসেছে৷ একটা সবুজ রঙের ফ্রক পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মিনু৷ বুলা মাসি তার চুল আঁচড়ে একটা লাল রিবন বেঁধে দিয়েছেন৷

মা ঝপাস করে মিনুকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমো দিতে দিতে বলতে লাগলেন, আমার মিনু সোনা, কতদিন তোকে দেখিনি, তোর কথা সব সময় মনে পড়ত, কত খেলনা এনেছি তোর জন্য৷ কেমন আছিস রে মিনু সোনা?

মিনু বলল, টি টি, টর টর, চুকুটুম, চুকুটুম!

মা চমকে উঠে বললেন, এ আবার কী?

বুলা মাসি হাসতে হাসতে বললেন, পাখির ভাষায় কথা বলছে৷ ক’দিন ধরেই শুনছি, ও এই সব বলে!

মা আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুই কী বলছিস রে মিনু?

মিনু বলল, টু রু রু রাং, টুপিউ টুপিউ!

বুলা মাসি বললেন, দিদি ও মজা করছে তোমার সঙ্গে৷

মজা ভেবে মাও হাসতে লাগলেন৷

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মা আর বুলা মাসির মুখের হাসি শুকিয়ে গেল৷ মিনু একটাও বাংলা কথা বলে না, শুধু পাখিদের মতন কিচিরমিচির করে৷

মা তাকে আরও আদর করলেন, শেষ পর্যন্ত ধরে ঝাঁকুনিও দিলেন, তারপর কেঁদে ফেললেন৷ মিনু কিছুতেই কথা বলে না, যেন সে কথা বলতে ভুলেই গেছে৷

রাত্তিরে সে ভাতও খেল না৷ শুধু মুঠো মুঠো ছোলা নিয়ে চিবুতে লাগল৷

সকালবেলাতেই ডেকে আনা হল চা-বাগানের ডাক্তারকে৷ তিনি এসে বললেন, এই ছ’মাসের মধ্যে মেয়েটার একবারও কোনো অসুখ হয়নি৷ হঠাৎ কী হল?

তিনি মিনুকে কথা বলাবার অনেক চেষ্টা করলেন, কিছুই লাভ হল না৷ তিনি মিনুকে কাতুকুতু দিলেন, একবার গালে চড়ও মারলেন, মিনু তাঁকে বলল, কিপিটু কুপুটু, পিকো পিকো পিকো!

পরিশ্রান্ত হয়ে ডাক্তারবাবু বললেন, এ তো মনে হচ্ছে মনের অসুখ৷ এর চিকিৎসা আমার সাধ্য নয়৷ কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অন্য ডাক্তার দেখান৷

পরদিনই মা মিনুকে নিয়ে চলে এলেন কলকাতায়৷ সারা রাস্তা মিনু মায়ের সঙ্গে একটা কথাও বলল না৷

বাবার সঙ্গেও মিনু কথা বলল পাখির ভাষায়৷

বাবা ভয় পেয়ে গেলেন৷ তিনি পণ্ডিত লোক, অনেকরকম মনের অসুখের কথা তিনি জানেন৷ কিন্তু পাখি-রোগের কথা তিনি কখনো শোনেননি৷

ডেকে আনা হল বড় বড় ডাক্তার৷ কিছুতেই কিছু হয় না৷

মিনুকে চোখের আড়াল করারও উপায় নেই৷ কেননা, মা একবার মিনুকে ঘরের মধ্যে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে এসে দেখলেন, মিনু কতকগুলো শালিক পাখির সঙ্গে কথা বলছে৷ মাকে দেখে শালিকের ঝাঁক উড়ে গেল, আর মিনুও দুটো হাত ডানার মতন দু’পাশে ছড়িয়ে দিল, যেন সে-ও পাখিদের সঙ্গে উড়ে যাবে৷

মা ছুটে এসে তাকে ধরে না ফেললে কী যে হত কে জানে!

মা তারপর আর মিনুকে একলা ছাড়েন না৷

কোনো ডাক্তারই কিছু সুবিধে করতে পারছেন না৷ একজন ডাক্তার বললেন, একটা ব্যাপার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন৷ আলিপুরদুয়ারে ও যেখানে পাখিদের সঙ্গে ছিল, ফিরিয়ে নিয়ে যান সেখানে৷ আপনারাও থাকুন সঙ্গে৷ ও পাখিদের সঙ্গে কথা বলুক, আপনারা ওকে একেবারে প্রথম থেকে বাংলা কথা শেখান৷

তারপর তিনি মুচকি হেসে বললেন, কিংবা ওখানে থেকে থেকে আপনারাও পাখির ভাষা শিখে নিন৷ তাহলে আপনারা মেয়ের কথাও বুঝতে পারবেন৷

অনেক কাজ ফেলে এবার বাবাও মেয়ের সঙ্গে চলে এলেন আলিপুরদুয়ারে৷ মা কাঁদতে কাঁদতে বুলা মাসিকে বললেন, এ আমার কী হল, আমি আর কক্ষনো মিনুকে ছেড়ে কোথাও যাব না৷

বার্ড হাউজে ঢুকেই মিনুর কী আনন্দ! সব পাখিরাও এই ক’দিন পর তাকে দেখে একসঙ্গে ডাকাডাকি করতে লাগল৷ মিনুর কত কথা তাদের সঙ্গে৷ অনেক পাখি তার গায়ে-মাথায় এসে বসে, মিনু একটা দোয়েলের সঙ্গে সঙ্গে শিস দেয়৷

মা, বাবা, বুলা মাসিরা বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন৷

তিন-চার দিন কেটে গেল, মিনুর অবস্থা একটুও বদলাল না৷ সে খাঁচার মধ্যে নাচে, পাখিদের সঙ্গে খেলে, আর বাইরে এলেই চুপ৷ কেউ বারবার এক কথা জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয় পাখির ভাষায়৷

কত খেলনা আনা হয়েছে তার জন্য, সে সেসব নিয়ে খেলে না৷ কত ভালো ভালো খাবার দেওয়া হয়, সে সেসব কিছু খাবে না৷ খায় শুধু ছোলা আর ছাতু৷

একদিন মিনু বার্ড হাউজের মধ্যে খেলছে, মা-বাবা বসে আছেন জালের বাইরে৷ শান্তনু মেসো একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন অনেকক্ষণ ধরে৷

এবারে তিনি জালের কাছে এসে বললেন, এসো একটা কাজ করা যাক মিনু৷ আমি বদলি হয়ে যাচ্ছি, অন্য চা-বাগানে যেতে হবে৷ সেখানে তো এত পাখি নিয়ে যাওয়াও ঝামেলা৷ তাই ঠিক করলাম, ওদের সবাইকে ছেড়ে দেব৷ তুমি নিজের হাতে এক এক করে ওদের উড়িয়ে দাও!

মিনু বলল, টুকা কুকু, পি-র-র-র টুঁ-ই-ই!

শান্তনু মেসো বললেন, আমি তো বুঝব না৷ তুমি পাখিদের বুঝিয়ে দাও৷

তিনি দরজাটা খুলে দিলেন হাট করে৷

বড় কাকাতুয়াটা জিজ্ঞেস করল, এটা কী হচ্ছে? এবার তুমি আমাদের মারবে?

মিনু বলল, কেউ মারবে না৷ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তুমি তো ছাড়া পেতেই চেয়েছিলে!

কাকাতুয়াটা বলল, সত্যি? দেখি তো!

কাকাতুয়া দুটোই উড়ে গেল আগে৷ তারপর টিয়া, বুলবুলি, বদরি পাখির ঝাঁক৷ কোনো কোনো পাখি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না৷ মিনু তাদের হাতে নিয়ে বলছে, যাও!

ঘুঘু পাখিরা বলল, তুমি কি মিষ্টি মেয়ে মিনু!

একটা ময়না পাখি বলল, থ্যাঙ্ক ইউ মিনু, থ্যাঙ্ক ইউ!

একটা হরিয়াল বলল, আমরা এখানে ভালোই ছিলাম, তবে বাইরে আরও ভালো লাগবে৷

শুধু বুকবুকি পাখিটা বারবার বলতে লাগল, আমি কিছুতেই যাব না৷ আমি মিনুর কাছে থাকব৷

খাঁচা একেবারে খালি হয়ে গেল, বুকবুকি পাখিটা বসে রইল মিনুর কাঁধে৷

তাকে আদর করতে করতে মিনু চলে এল মায়ের কাছে৷ এই প্রথম সে বাংলায় বলল, মা, আমি এই পাখিটা কলকাতায় নিয়ে যাব!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *