একটি পুস্তক সমালোচনা
০১.
শ্রীমতী সুকুমারী পালদত্ত প্রণীত যত দেখি, যত জানি, যত ভাবিবইটি সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই একটি বইই তাঁকে বিখ্যাত করে দিয়েছে। গত বইমেলায় এই বই নিয়ে হইচই পড়ে যায়।
এ কালের যেকোনও হেঁদো সমালোচকের মতো ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের, প্রকাশক ও লেখকের মুখরক্ষা করে অথচ বেশি প্রশংসা না করে, ছাপা বাঁধাই-প্রচ্ছদ ভাল গোছের আলোচনা করার পাত্র আমি নই।
তা ছাড়া সুকুমারী দেবীকে আমি ভালই চিনি। এই বই রচনা সম্পর্কে তাঁর কাছে বিস্তর শুনেছি। এই বইয়ের প্রসঙ্গে তারই কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য।
সে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। সুকুমারী তখন অবিবাহিতা, সদ্য এম এ পাস করে একটি কনসালট্যান্ট কোম্পানিতে সাময়িক একটা সমীক্ষার কাজ করছেন। বোধহয় কোনও খবরের কাগজের ব্যাপার হবে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, তাঁরা কী কাগজ পড়েন, কেন পড়েন ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিটি প্রশ্নোত্তর বাবদ তিন টাকা, দৈনিক কয়েক ঘণ্টায় দশ-পনেরো টাকা উপার্জন, মাসে তিন-চারশো টাকা, সে সময় সে টাকার অনেক দাম।
এই কাজ করতে করতে একদিন সুকুমারী ঘোর বিপদে পড়লেন। অচেনা পাড়ায় একটা পুরনো বাড়িতে পাগলের পাল্লায় পড়লেন।
কলিংবেল দিতে গৃহকর্তা স্বয়ং দরজা খুলে দিয়েছেন। তাঁর এক হাতে কাঁচি, অন্য হাতে সেদিনের প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকা। ভদ্রলোকের রক্তচক্ষু, তিনি দরজা খুলেই সুকুমারী দেবীকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী বেচতে এসেছ? ইঁদুর মারা ওষুধ? এই ধেড়ে ইঁদুরকে কোনও ওষুধ দিয়ে মারতে পারবে না।
সুকুমারী বললেন, না স্যার, ওষুধ-টষুধ নয়, আমি জানতে এসেছি আপনি কী কী খবরের কাগজ পড়েন, কেন পড়েন?
কী কী কাগজ পড়ি? কেন পড়ি? এই বলে সেই ভদ্রলোক বললেন, কোনও কাগজ পড়ি না। কাগজের নিকুচি করেছে। প্রত্যেকটা কাগজ সকালবেলা পাওয়ামাত্র কাঁচি দিয়ে কুচিকুচি করে কাটি,বলে হাতের কাগজগুলো কুচিকুচি করতে লাগলেন। এই সময় বাড়ির মধ্য থেকে অন্য এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন, গৃহকর্তার চেয়ে কিঞ্চিৎ লম্বা, কিন্তু দেখেই বোঝা যায় বয়েস কিছুটা কম। বোধহয় ছোটভাই।
এই দ্বিতীয় ব্যক্তি একটু একরোখা প্রকৃতির, এসেই গৃহকর্তাকে বললেন, দাদা, তুমি একাই সবগুলো কাগজ কুচিকুচি করলে, একবারও ভাবলে না যে কাঁচিটা আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম। অত্যন্ত রাগত অবস্থায় এই কথা বলতে বলতে দ্বিতীয় ব্যক্তি সুকুমারী দেবীকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে জিজ্ঞাসা করে, দাদা, এই মহিলা কে? এর সঙ্গে কী নটঘট করছ? গৃহকর্তা বললেন, নটঘট নয়, জানতে এসেছে আমরা কী খবরের কাগজ পড়ি, কেন পড়ি?
এই কথা শুনে দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে দাদার হাত থেকে কাঁচিটা একটানে ছিনিয়ে নিয়ে সুকুমারীকে তাড়া করে আসেন, আমরা খবরের কাগজ পড়ি না, খবরের কাগজ কুচোই। আয়, আজ তোকে কুচোই। দ্বিতীয় উন্মাদ কুচোনোর সুযোগ পাওয়ার আগেই সুকুমারী দৌড়ে পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেন।
.
সেদিন বিকেলেই সুকুমারী তাঁর নিয়োগকর্তার সঙ্গে দেখা করে চাকরি ছেড়ে দিলেন। অবশ্য সমীক্ষা তখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল, দু-চার দিন পরেই কাজ শেষ হয়ে যেত।
কিন্তু এই কাঁচি নিয়ে তাড়া করে আসার ঘটনাটা তাঁর মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল। তিনি অনেকরকম চিন্তাভাবনা করে খুব ভাল করে মুসাবিদা করে একটা বড় দৈনিক কাগজের দপ্তরে সম্পাদক সমীপেষু চিঠিপত্রের স্তম্ভে প্রকাশের জন্যে একটি দীর্ঘ পত্র প্রেরণ করলেন। এই পত্রে তিনি তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করে প্রশ্ন তুলেছিলেন,
পাগলদের কি খবরের কাগজ পড়া উচিত?
পাগলদের কি খবরের কাগজ পড়তে দেওয়া উচিত?
দুঃখের বিষয় আর দশটি চিঠির মতোই এ চিঠিও ছাপা হয়নি। মাস দুয়েক অপেক্ষা করার পর তিনি ওই খবরের কাগজের অফিসের চিঠিপত্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান তিরিশ-পেরোনো এক অনতি যুবক ভদ্রলোক চিঠিপত্র দেখেন। সমস্যা এই যে ভদ্রলোকের মাথায় তখন সদ্য টাক পড়া শুরু হয়েছে। ভদ্রলোকের পাঞ্জাবির পকেটে একটা ছোট গোল আয়না, প্রতিনিয়ত সেই ভদ্রলোক পকেট থেকে আয়নাটি বের করে তাঁর টাকের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং হতাশভাবে ধুৎ বলেন।
এইরকম গোটা পঞ্চাশেক ধুৎ বলার ফাঁকে ফাঁকে সেই টাকোদ্বিগ্ন (টাক+উদ্বিগ্ন) সাংবাদিক সুকুমারীর বক্তব্য শুনে নিয়ে বললেন, দেখুন, আপনার চিঠি হয়তো আমরা ছাপব না, বা ছাপতে পারব না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি আপনাকে বলতে পারি, আপনি এই চিঠিতে যেরকম মৌলিক চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা খুব সাধারণ ব্যাপার নয়।
সুকুমারী বললেন, তা হলে?
সাংবাদিক বললেন, তা হলে আবার কী? একটা বাঁধানো মোটা খাতায় এইরকম যা যা, যেমন যেমন মাথায় থাকে লিখে যান। অনেকটা লেখা হয়ে গেলে বই করবেন।
যেতে যেতে সুকুমারী জিজ্ঞেস করলেন, কী নাম দেব বইয়ের, চিন্তা-ভাবনা?
দুঁদে সাংবাদিক বললেন, সর্বনাশ! ওরকম নামে কোনও বই এক কপিও বিক্রি হবে না। হালকা নাম ভাবুন।
.
সাংবাদিক ভদ্রলোকের কাছে আশকারা পেয়ে সুকুমারী বাড়ি ফেরার পথেই চার দিস্তে কাগজ কিনলেন, ভাঁজ করে মাঝবরাবর সেলাই করে চমৎকার একটা লম্বা খাতা হল, বেশ মোটা।
খাতার ওপরে বাঁশ কাগজের মলাট লাগিয়ে লাল ডট পেনসিল দিয়ে সেখানে বড় করে লিখলেন-সুকুমারী পাল প্রণীত মজার বই (?) তৃতীয় পঙক্তিতে মজার বই নামের পর একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন, যার মানে হল এই নামকরণ চূড়ান্ত নয়, পরিবর্তিত হতে পারে।
এরপর বহু বহু বছর চলে গেছে, মজার বই নামটা সহজে পালটানো যায়নি, অবশ্য ইতিমধ্যে মজার বই নামে অন্যদের অন্তত পাঁচ-সাতটা বই বাজারে বেরিয়ে গেছে। আসলে যেটা পরিবর্তিত হয়েছে, সেটা বইয়ের লেখিকার নাম। কুড়ি বছর হল সুকুমারী পাল বিয়ে করে সুকুমারী দত্ত হয়েছেন। অবশ্য তিনি শুধু দত্ত লেখেন না, আধুনিক কায়দায় লেখেন সুকুমারী পালদত্ত। বাপের বাড়ির আর শ্বশুর বাড়ির পদবি মিলিয়ে।
মজার বই নামের খাতার মলাটে তিনি নতুন পদবি সংযোগ করে সুকুমারী পালদত্ত হয়ে গেলেন। যদিও বিয়ের পর অনিবার্য কারণে লেখা কমে গেল।
সুকুমারী কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, পালদত্ত হওয়ার আগে অর্থাৎ বিয়ের আগে তিনি যথাসাধ্য মজার বই নামাঙ্কিত খাতা নিজের বুদ্ধি এবং প্রতিভা অনুযায়ী যতটা পেরেছেন, ভরিয়েছেন। দত্তবাড়িতে বিয়ে হবে নিশ্চিত জেনে তিনি দুই দত্তকুলোঙব কবি মধুসূদন এবং সুধীন্দ্রনাথের মিলিত অনুকরণে কাব্যচর্চা শুরু করেন। মজার বইয়ের প্রথম দিকেই তাঁর সেই প্রচেষ্টার ফসল রয়েছে :
… অজয়ের স্পর্ধা দেখি, চক্ষু রক্তলাল, ফিরাও চপ্পল তব, গর্জিল উৎপল কিন্তু হায় ইতিমধ্যে উড়ন্ত চপ্পল গোপালে খোঁতা মুখ করি দিল লাল ॥…
সুকুমারী এই প্রসঙ্গে, বিশেষত অজয় এবং উৎপলের পরস্পরের প্রতি আক্রোশ বিষয়ে কিঞ্চিৎ পর্যালোচনা করেছিলেন। সুকুমারীর এখনও মনে আছে অজয় এবং উৎপল উভয়েই একদা তাঁর প্রাণের বন্ধু ছিলেন, একদা তাঁকে নিয়েই চটি-চপ্পল ছোঁড়াছুড়ি হয়েছিল এই দুজনের মধ্যে, কিন্তু অজয় হেরে গিয়েছিল, তার হালকা হাওয়াই চটি নিয়ে সে যুঝে উঠতে পারেনি উৎপলের পায়ের ভারী কোলাপুরি চপ্পলের সঙ্গে।
সুকুমারী ঠিকমতো রচনা করলে চপ্পল সংহিতা কাব্য অনায়াসেই মজার বইয়ের প্রথম অধ্যায় হতে পারত, কিন্তু কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে?
সুকুমারীর বিয়ে হয়ে গেল, চমৎকার লম্বা-চওড়া, সরকারি চাকুরে মণিলাল দত্তের সঙ্গে। শুধু সরকারি চাকুরে নয়, সুকুমারীর বর মণিলাল পুলিশের চাকরি করেন।
বিয়ের অব্যবহিত পরে অন্য দশটি দম্পতির মতো সুকুমারী পালদত্ত মধুচন্দ্রিমা যাপনের সুযোগ পাননি। বিয়ের অষ্টমঙ্গলার পরে বরের সঙ্গে তাঁর কর্মস্থলে বীরভূম জেলার রামপুরহাটে যেতে হয়।
রামপুরহাট প্রথমে সুকুমারীর ভাল লেগেছিল, তা ছাড়া নববিবাহের মোহ, মণিলাল দত্তের আকর্ষণ। এখানেই মজার খাতার অনেকগুলি পৃষ্ঠা তিনি ভরিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু রামপুরহাটে বেশিদিন থাকা হয়নি। তার অন্যতম কারণ তাঁর ওই খাতায় লেখা আছে:
রামপুরহাটের দিনলিপি
এখানকার মশা হিংস্র ও ধূর্ত, কুকুরের মতো।
গতকাল সন্ধ্যাবেলায় একটি বলবান, হৃষ্টপুষ্ট পুং (পুরুষ) মশা আমাকে কামড়াইতে আসে। আমি বারান্দায় বসিয়াছিলাম। বারান্দা হইতে নামিয়া উঠান পার হইয়া রাস্তায় নামিলাম, মোড় পর্যন্ত চলিয়া গেলাম। কুকুরের মতো মশাটি আমার পিছু পিছু ধাওয়া করিল।
যদি কেহ জানিতে চান ইহা যে পুং মশা তাহা কীভাবে বুঝিলাম, ইহা সোজা ব্যাপার, স্ত্রী মশা রক্তপানের পূর্বে গুনগুন করিয়া গান করে, পুরুষ মশারা করে না। এখানকার মুড়ি-গুড় যতই সুস্বাদু হউক মশার অত্যাচারে এই স্থান শীঘ্রই ছাড়িতে হইবে।
০৩.
কিছুদিন পরে মণিলাল দত্ত রামপুরহাট থেকে কোচবিহারের দিনহাটায় বদলি হলেন। ইতিমধ্যে সুকুমারী রীতিমতো সংসারী হয়ে পড়েছেন, তাঁর কোল আলো করে একটি পুত্রসন্তান এসেছে।
মজার বইয়ের কথা আজকাল সুকুমারীর মনে থাকে না। বইয়ের তাকের একপাশে সে খাতা অনাদরে পড়ে থাকে।
বলা বাহুল্য, তাঁর স্বামী পুলিশ সাহেব মণিলাল দত্ত সুকুমারীর এই সাহিত্যচর্চার কথা জানেন এবং সম্প্রতি লক্ষ করেছেন যে তাঁর স্ত্রীর মজার বইয়ের বিষয়ে আসক্তি প্রায় বিলীয়মান।
তিনিই সুকুমারীকে উদ্বুদ্ধ করলেন আবার মজার লেখা লিখতে।
নিতান্ত বশংবদ স্বামীর অনুরোধ রক্ষা করার জন্যে বহুদিন পরে ধুলো ঝেড়ে খাতা খুলে সুকুমারী দেবী প্রথমে নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে লিখলেন, আমার খোকা বোকাসোকা। খোকার মা মোটাসোটা..
এইটুকু লেখার পর সুকুমারীর খেয়াল হল আমি হলাম খোকার মা, কিন্তু আমি তো মোটাসোটা নই।
এমন করে ভাবলে তো লেখা চলে না, লিখতে হয় চোখকান বুজে, অগ্র-পশ্চাৎ, ডাম-বাম বিবেচনা করে। সব কিছু মেলাতে গেলে বিপদ।
এসব অবশ্য মণিলাল দত্তের কথা, তিনি সুকুমারীকে বলেছিলেন, থানায় ডায়েরি করার সময়ে ছাড়া মানুষ কখনও কিছু ভেবেচিন্তে লেখে না।
না ভেবেচিন্তে কী লিখব আবার? সুকুমারীর প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সাহেব বলেছিলেন, যা দেখবে, তাই নিয়ে লিখবে। এ নিয়ে ভাবনা করলে লেখা কঠিন হবে।
স্বামীর সুপরামর্শ শুনে সুকুমারী অনেকরকম ভাবলেন, চারদিকে চোখ খুলে তাকালেন, তারপর যেখানে যে জায়গায় যা কিছু আছে ভাল করে দেখতে লাগলেন। এই সময় তাঁর চোখে পড়ল, তাঁদের কোয়ার্টারের পাশে মহকুমা সদর থানার সাইনবোর্ড
দিনহাটা থানা
মহকুমা–দিনহাটা
জেলা–কোচবিহার।
মুহূর্তের মধ্যে সুকুমারীর মাথায় খেলে গেল, দিনহাটা নিয়ে একটা পদ্য লিখতে হবে।
এবং অল্প একটু চেষ্টা করেই তিনি লিখে ফেললেন–
…দিনে হাঁটা দিন হাটা।
জমি চাই এক কাঠা ॥
রাতে হাঁটা রাত হাটা ॥
ডাকাতের গলা কাটা ॥
ভোরে হাঁটা ভোর হাটা।
টনটন করে পা-টা ৷ …
দুঃখের বিষয়, এই শেষ পঙক্তিতে সুকুমারী দেবীর ব্যক্তিগত সমস্যা কিঞ্চিৎ প্রাধান্য পেয়েছিল। তিনি সম্প্রতি মুটিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই মণিলালবাবুর পরামর্শমতো প্রতিদিন ভোরে বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে হাটছিলেন।
কিন্তু এই ভোরে হাঁটা তথা ভোর হাটা পাঠ করে দত্তসাহেব তাঁকে বলেন, ঠিক আছে, যথেষ্ট হয়েছে। এবার তুমি কল্পনার জগতে যাও।
এবারেও স্বামীর নির্দেশ অমান্য করেননি সুকুমারী, দু-চারদিন ভেবেচিন্তে লিখলেন দীর্ঘ পঁচিশ পৃষ্ঠা, যার মধ্যে রয়েছে
… লোহিত সাগরের তীরের সেই গ্রামের ঘাটে তখন উত্থানশক্তিরহিত রোহিত মাছটি খাবি খাইতেছিল।
খাবি খাইবার জিনিস কিনা? খাইতে কীরকম? খাবি একবার খাইলে আরেকবার খাওয়া যায় নাকি?
জানি এসব প্রশ্ন একদিন উঠিবে। তাই সদাপ্রস্তুত হইয়া আছি। পরশুরামের ভাষায় বলিতে পারি।
দস্তুর মতো প্রস্তুত আমি।…
এর পরেও পনেরো বছর কেটে গেছে। সময়ে-অসময়ে সংসার করতে করতে সুকুমারী প্রাণে যা চায় উলটোপালটা লিখে গেছেন। বলা বাহুল্য, পুলিশ সাহেব তাঁকে সুপরামর্শ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন, অবশেষে তিনিই যত দেখি, যত জানি, যত ভাবি এই নতুন নামকরণ করে বই ছাপিয়ে দিয়েছেন।
এই বইটির পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করতে গেলে বইটির প্রতি অন্যায় করা হবে। শুধু একটি কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে।
এই বইটির প্রথম অধ্যায় যত দেখি অংশটি সুকুমারী দেবীর রচনা নয়। আসলে এ অংশ পুলিশ সাহেব মণিলাল দত্তের রচনা। ভদ্রলোক নিজের নাম কোথাও দেননি, স্ত্রীর লেখা জনপ্রিয় করার জন্যে প্রথম দিকের অংশটুকু লিখে দিয়েছেন। তাই মজার বই পাণ্ডুলিপিতে এই লেখাগুলি নেই।
প্রথম অংশের কয়েকটি লেখা এইরকম, নোট জাল করিবার সহজ উপায় অথবা নিজের টাকা নিজে ছাপুন কিংবা পকেটমার বন্ধুদের জন্যে কিছু সাবধানী বাণী অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য কীভাবে দিতে হয়।
উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। মণিলাল এবং সুকুমারীর একেবারে মণিকাঞ্চন যোগ হয়েছে।
যত জানি, যত দেখি, যত ভাবি গ্রন্থের চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে প্রকাশকদের আগ্রহাতিশয্যে সুকুমারী একটি নতুন বইয়ে হাত দিয়েছেন। দ্বিতীয় বইয়ের নাম মণিকাঞ্চন।