একটি জলবৎ রহস্য – সিদ্ধার্থ ঘোষ

একটি জলবৎ রহস্য – সিদ্ধার্থ ঘোষ

ডালহাউসির অফিসপাড়া আড়মোড়া ভেঙে পুরোপুরি চাঙ্গা হয়নি। যানবাহনের হুড়োহুড়ি শুরু হওয়ার আগে রাস্তাগুলো এখন বেজায় প্রশস্ত। পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটের মোড়ে কর্পোরেশনের সিংহের মুখওলা কলের নীচে মাথা পেতে একজন নিমীলিত নেত্রে ঘাড় নাড়ছে। খবরের কাগজের বিলি-বাঁটোয়ারা সেরে মোড়ের ধারে তিনজন ফিরিঅলা সাইকেলের কেরিয়ারে তাদের পলিথিনের চাদর গুটিয়ে দড়ি বেঁধে নিচ্ছে। ফুটপাথের কিনারায় দরোয়ানরা নিজের নিজের কোম্পানির গাড়ির নম্বর লেখা কাঠের স্ট্যান্ড নির্দিষ্ট জায়গামতো দু’-একটা ইতিমধ্যেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

‘শরবত অ্যান্ড স্ন্যাকস’-এর ছোকরাটা হড়াত করে এক বালতি জল উপুড় করেই ঝাঁটা হাতে তাদের তাড়া করল। খালি গা, লুঙ্গিটা ভাঁজ করে হাফপ্যান্ট বানানো। ঝাঁটার ডগা থেকে জলের ফুলকি উড়ছে। কাউন্টারের সামনের অংশের ফুটপাথ অবধি পরিষ্কার করে বালতি-ঝাড়ু ভেতরের ঘরে রেখে বেরিয়ে এসেই সে দেখল তার প্রথম খরিদ্দার হাজির।

আকাশের দিকে লোহার ঠ্যাং উঁচু করে লাল রেক্সিনের গোলাকার সিটওলা যত টুল কাউন্টারের মাথায় চড়ে বসে আছে। মন্টু তাড়াতাড়ি সেগুলো নামিয়ে নেয়। যদিও ভাল করেই জানে যে তার খরিদ্দার বসার পাত্র নয়। ওই এসপ্রেসো মেশিনের পাশে দেওয়ালে ঠেস দিয়েই রোজ-সিরাপে গোঁজা স্ট্র-এ টান লাগাবেন তিনি।

ভদ্রলোক হাসিমুখে পাঁচ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে ধরেন। এক টাকা পঁচিশ ফেরত দিয়ে টাকাটা ড্রয়ারে রেখে দিল মন্টু। প্রতিদিন এই ভদ্রলোকের হাতে তিন টাকা বারো আনা দিয়ে দোকানের বউনি হয়। আর মন্টুর বখশিশ ওই সিকিটা। প্রতিদিন বলতে তা প্রায় মাস-দেড়েক তো নিশ্চয়। রোজ-সিরাপের গেলাসটা রেডিই ছিল। ফ্রিজ খুলে বার করে আইস-ট্রে থেকে তার মধ্যে কয়েকটা কিউব ফেলে দিল মন্টু।

ব্রিফকেসটা কাউন্টারে রেখে ভদ্রলোক বাঁ হাতে গেলাসটা তুলে নিল। “আহ— বিউটিফুল। এমন টেস্ট যে কী করে করিস তোরা! কী রে, আমাকে একটু শিখিয়ে দে না রহস্যটা—”

মন্টু হাসে। রোজ এই এক কথা। দ্বিতীয়বার টান দেওয়ার পর কী বলবে সেটাও তার মুখস্থ, “শুধু টেস্ট নয় রে— পয়মন্ত, বেজায় পয়া তোদের এই রোজ-সিরাপ।”

লোকটার মাথায় ছিট আছে সে আর জানতে বাকি নেই। অফিস যাওয়ার মুখে কেউ কখনও রোজ-সিরাপ খায়? তা ছাড়া আগে তার কাছ থেকে দামটা বুঝে নিতে হবে, তারপর অন্য কথা।

পিছন ফিরে মন্টু ফ্রিজের ভেতরের জিনিস গোছাচ্ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত দ্বিতীয় মন্তব্যটা কানে না আসায় একবার ঘাড় ফিরিয়েই অবাক হল। গেল কোথায় লোকটা। আধ গেলাস শরবত এখনও পড়ে। এটা কিন্তু বেনিয়ম।

মন্টু তাড়াতাড়ি ফুটপাথে নেমে এসে দেখল তার খরিদ্দার ও-ফুটে দাঁড়িয়ে বাঁ পা’টা দ’য়ের মতো উঁচু করে তার ওপরে ব্রিফকেসটা রেখে ডালা খুলেই বন্ধ করে দিল। তারপরেই হনহন করে প্রায় ছুট। তাজ্জব ব্যাপার।

॥ ২ ॥

কালো মরিস মাইনটা পার্ক করে দরজায় সস্নেহে চাবি লাগালেন মুখার্জি। কুড়ি বছর ধরে এই পুরাতন ভৃত্য তাঁকে সেবা করছে। চলতে শুরু করলেই অবশ্য নিত্যনতুন অযান্ত্রিক নানা সংগীত সে শোনায়। তা হোক। আজ অবধি কোনওদিন অফিস আসার পথে বেইমানি করেনি। আর প্রতিদিন ঠিক সময়ে অফিসে আসেন, মুখার্জি এটা গর্ব করেই বলতে ভালবাসেন।

ঘড়ির দিকে তাকালেন মুখার্জি। বাহ্‌। দশ মিনিট আগেই পৌঁছে গেছে। গড়িয়াহাট আর বালিগঞ্জ ফাঁড়ির জ্যাম-এর জন্য বরাদ্দ পঁচিশ মিনিটের অবশিষ্টাংশ। ব্যাঙ্কের কাজটা এই বেলাই সেরে ফেলা যাবে। এখন তো কাউন্টারে ভিড় নেই বললেই চলে।

কাচের সুইংডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন মুখার্জি। তার মতো কাস্টমারদের সুবিধের কথা ভেবেই এই ব্যাঙ্কের কাজের সময় ন’টা থেকে শুরু হয়। কিন্তু তাতে ব্যাবসার খুব সুবিধে হয়েছে বলা যায় কি না সন্দেহ।

চেবুকটা বার করে পাতাটা ছিঁড়ছেন যখন, সাহা তার পাশে এসে দাঁড়াল। মুখার্জি লক্ষ করেননি।

সাহা কাউন্টারের পাশে ঝোলানো টাকা জমা দেওয়ার হলুদ একটা রসিদ ছিঁড়ে নিয়ে মুখ নিচু করে লিখছে। টোকেন হাতে নিয়ে ক্যাশ-কাউন্টারের দিকে এগোবার সময়ে মুখার্জি প্রথম লক্ষ করলেন সাহাকে। তাঁর ভুরুটা একটু কুঁচকে গেল। এই ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট, এটা তো জানা ছিল না। মনে পড়ে গেল, আজ সাড়ে দশটার সময় এই লোকটার মুখোমুখি হতে হবে তাকে। ভাবলেই মেজাজ খারাপ। কিন্তু উপায় নেই। চাকরি যখন প্রিয়-অপ্রিয় সব কাজই করতে হবে। তবে যেচে কথা বলার প্রবৃত্তি নেই মুখার্জির। বিশেষ করে সাহা যখন লক্ষ করেনি দেঁতো ভদ্রতাও মুলতুবি রইল।

টাকা গুনে বেরোবার সময়ে মুখার্জি আড়চোখে দেখলেন, সাহার কাজ তখনও শেষ হয়নি। একটু অবাকও হলেন। সাহা যেন একবার তাকাল তার দিকে, কিন্তু বোধ হয় খেয়াল করেনি। না হলে বিনয়ের যা একটি অবতার, এক্ষুনি কোলাহল জুড়ত।

মুখার্জি ব্যাঙ্কের গেট পার হওয়া মাত্র সাহার ঢিলে চাল উবে গেল। দ্রুত পায়ে সুইংডোর পেরিয়ে করিডোরে দাঁড়িয়ে মুখার্জির সঙ্গে তার দূরত্বটা মেপে নিল।

মুখার্জি অলকা ম্যানসনের সদর দরজায় পা রাখতেই সাহাকে দেখা গেল এক দৌড়ে রাস্তা পার হতে। মুখার্জি যখন লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে বোতামে আঙুলের চাপ দিচ্ছেন, সাহা তখন তার দশ পা পেছনে সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাঁ কবজির রিস্টওয়াচে চোখ রাখার অছিলায় মুখার্জিকে লক্ষ করছে।

লিফটটা নীচেই ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাল্লা ফাঁক হতে শুরু করে। সাহা একবার পেছন দিকে দৃষ্টি ছুড়েই একেবারে দুই লাফে যেন পৌঁছে গেল লিফটের দরজার কাছে। মুখার্জি লিফটে পা রাখার আগেই ঢুকে পড়েছে সাহা। তার গোমেদের আংটিপরা আঙুলটা লিফটের বাটন-প্লেটের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা বন্ধ।

॥ ৩ ॥

হাঁটার সময় সুখেন্দু সরকার বাঁ হাতের দু’আঙুলের টানে ধুতিটাকে বেজার ভঙ্গিতে উচু করে রাখে। বাড়িতে হোক কি রাস্তায়, তাকে দেখলেই মনে হয় যে, ভদ্রলোক অবিরাম প্যাচপ্যাচে জলকাদার সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত। তার ওপর এখন আবার তাকে বাঁ বগলের মধ্যে টিপে ধরে রাখতে হয়েছে। রেক্সিনের হলদে ব্যাগটা। বর্ষাকালে টিফিন-বক্সের সঙ্গে ছাতা যুক্ত হলে চেন টানা যায় না।

দরজায় পা দিয়েই ‘দাঁড়া বাবা দাঁড়া’— বলে গতিবৃদ্ধি করেছিল সরকার। কারণ লিফটের দরজাটা তখনও বন্ধ হতে ইঞ্চি-চারেক বাকি ছিল। মুখার্জিসাহেবকে সে দূর থেকেই লক্ষ করেছে। কিন্তু বড়সাহেবকে তো আর ডাকা যায় না। লিফট দাঁড়াল না। সরকার কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ভাবল, ললাটের লিখন মুছলেই কি আর ওঠে। গত দু’ হপ্তায় একদিনও সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারেনি। আজ যদি বা…

ঘড়ির দিকে তাকাল সরকার। দশটা বাজতে দুই। তারপর পেছন দিকে। আর কোনও লোকের চিহ্ন নেই। মহা মুশকিল। একে তো এই বেতো লিফট ঢিকির ঢিকি করে বারো তলা পাড়ি দিয়ে আবার নীচে নামতে দশ-বারো মিনিট পার করাবে আর, অন্যদিকে একা সরকার প্রাণ থাকতে ওই লিফটের খাঁচায় ঢুকতে রাজি নয়। কখন কোথায় হঠাৎ ফেঁসে যায়।

গজগজ করতে করতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় সরকার।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই লিফটের দরজার সামনে একে একে বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে। শ্যামলের দিকে তাকিয়ে অলক বলে, “ব্যাপার কী! আজ যে ভোরের আলো না ফুটতেই অফিসে…”।

ভুরু কুঁচকে শ্যামল বলে, “ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে তো বুঝতে হে… রোজই এই এক ট্রেন ধরেই আসি। আগের ট্রেন ধরলে অফিসে ঝাড়ু দেওয়ার কাজটাও নিতে হত। হুঁঃ।”

আরও অনেকে জুটে গেছে ইতিমধ্যে। দুটো লিফটের সামনে দুটো লাইন। বারোয়ারি অফিস বিল্ডিংয়ে গোটা-চোদ্দো সংস্থা। লিফট মাত্র দুটো। একটা জোড়-সংখ্যা আর অন্যটা বিজোড় ধরে ওঠানামা করে। সকালে তাড়ার সময় নীচের তলার লোকেরা লিফটের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু অলক, শ্যামল, বিনয় ও তপন— এরা সকলেই মুখার্জিসাহেবের অফিসের কর্মী— সবাই উঠবে হিমালয়ের চুড়ায়। অপেক্ষা না করে উপায় কী?

বিনয় বলল, “অবস্থাটা দ্যাখ— লিফটের মেনটেনেন্স বলে কোনও পদার্থ নেই। ইন্ডিকেটরের আলো একটাও জ্বলছে না। লিফট যে কোথায়— কতক্ষণে তিনি নামবেন তার কোনও হদিশ পাওয়াই ভার।”

বলতে বলতেই লিফটের অবতরণের ইঙ্গিত পাওয়া গেল আলোর আভা দেখে।

তপন বলল, “সবাই জয়গুরু বলো। আজ বোধহয় লাল গোল্লা পড়বে না হাজিরা-খাতায়।”

লিফটের দু’পাল্লা দু’দিকে ফাঁক হয়ে গেল। কিন্তু কারও আর ওঠা হল না।

মুখার্জি পড়ে আছেন লিফটের মেঝেয়। তার ব্রিফকেস ছিটকে পড়েছে। মুহূর্তের জন্য নীরবতা। প্রথম গলা শোনা গেল সাহার, “এ কী! মুখার্জিসাহেব৷ কী কাণ্ড! আরে সবাই দাঁড়িয়ে আছেন এখনও। শিগগির হাত লাগান। তুলুন ওঁকে।”

সাহা লিফটের সামনে অপেক্ষমাণ সারির মাঝখান থেকে আগে ছুটে এসেছে।

কয়েকজনে মিলে মুখার্জিকে পাঁজাকোলা করে লিফটের বাইরে নিয়ে এল। তপন ব্রিফকেসটা তুলে নিয়েছে। আর শ্যামল— মুখার্জিসাহেব যেখানে পড়ে ছিলেন তার পেছন থেকে একটা বিবর্ণ নীল ফুলকাটা লেডিজ ছাতা কুড়িয়ে নিল।

॥ ৪ ॥

নীচের তলায় দারোয়ানের ছোট্ট একটা ঘরে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মুখার্জিকে। কিন্তু তারপর বারোতলায় নিজেদের অফিসেই নিয়ে এসেছে তারা।

ভিজিটার্সরুমে সোফার ওপরে শুয়ে আছেন মুখার্জি। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সকলে। একমাত্র শ্যামল আর সরকার ছাড়া।

সরকারকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে শ্যামল বলল, “এই ছাতাটা তো আপনার?”

“আরে! কী আশ্চর্য। ওটা তুমি পেলে কোথায়?” সুখেন্দু হেসে হাত বাড়ায়।… “হপ্তাখানেক আগে সেই যে হঠাৎ লোপাট হল, ফেরত পাব ভাবতেই পারিনি…”।

শ্যামল গম্ভীর মুখে বলল, “লিফটে মুখার্জিসাহেবের পাশেই পড়ে ছিল ছাতাটা।”

সরকারের মুখ থেকে হাসিটা মিলোতে সময় লাগল। ব্যাপারটা যেন প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তারপরে চোখ বড় বড় করে বলল, “শ্যামল, প্লিজ, এটা ঠাট্টা করার সময় নয়।”

শ্যামল ভুরু কুঁচকে বলল, “আমারও একই বক্তব্য। আপনি মুখার্জিসাহেবের সঙ্গে লিফটে উঠেছিলেন?”

সরকারের প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা। সে বোঝাবার চেষ্টা করে কেন লিফটে না চড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠেছে। সত্যিই যে আজকে এই ছাতাটা আনেনি প্রমাণ করার জন্য ব্যাগ খুলে দ্বিতীয় ছাতাটা দেখায়। এমনকী, মুখার্জিসাহেবকে সে পেছন থেকে লিফটের দিকে এগোতে দেখেছিল সেটাও কবুল করে।

শ্যামল বলে, “দেখুন সরকারদা, ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। লিফটের মধ্যে ছাতাটা দেখেই আমি চিনতে পারি এটা আপনার। সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিই। সম্ভবত আর কারও চোখেও পড়েনি ব্যাপারটা। কিন্তু আপনি যদি সত্যি কথা না বলেন, আমি কিন্তু আপনাকে বাঁচাবার জন্য…”

আলোক ঘরে ঢোকায় শ্যামল চুপ করে যায়। অলোক জিজ্ঞেস করে, “ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়েছে?”

“হ্যাঁ। দু’জনকে বলা হয়েছে। যে আগে আসে।” সরকারের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে অলোককে নিয়ে বেরিয়ে আসে শ্যামল।

শ্যামল বলে, “মুখার্জিসাহেবের প্রেশার ছিল বলে তো শুনিনি।”

অলোক বলল, “চোটটা লেগেছে মাথায়, তবে বোধহয় অল্পের ওপর দিয়ে গেছে। মাথাটা একটু কেটেছে তবে স্টিচ করার দরকার হবে না। নেবাসালফ পাউডার দিতেই রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে।”

মুখে মুখে খবরটা ভালই ছড়িয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, উদ্বেগের বা আশঙ্কার চেয়ে কৌতূহলেরই ভিড় বেশি। অনেক বুঝিয়েসুজিয়ে দরজার বাইরে রাখতে হয়েছে তাদের। ঘরে এখন সাহা ছাড়া সবাই অফিসের লোক। সাহাকে অবশ্য সম্পূর্ণ বহিরাগত বলা চলে না। এ-অফিসে আগেও বার তিন-চার সে এসেছে।

মুখার্জির চোখ থেকে কুয়াশা সরে আস্তে আস্তে কয়েকটা মুখ ফুটে উঠছে। বিনয় ভুল বলেনি, আঘাতের চেয়ে শকটাই বেশি।

চোখের পাতা খুলতে দেখেই শ্যামল ঝুঁকে পড়ে বলল, “একটু চুপ করে শুয়ে থাকুন সার। এক্ষুনি ওঠার চেষ্টা করবেন না।”

তখনও বিহ্বল ভাবটা মুখার্জির পুরো কাটেনি। আবার চোখ বুজে ফেললেন।

সাহা বলল, “জ্ঞান ফিরে এসেছে ঠিকই, তবু একটা থরো মেডিক্যাল চেকিং খুব দরকার।”

বহুকাল আগের কী একটা দুঃস্বপ্নের স্মৃতি যেন মুখার্জির আচ্ছন্ন ভাবটাকে হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে দিল। চোখ খুলে কাকে যেন খুঁজছেন।

সাহার ওপর নজর পড়ামাত্র শেষ ঘোরটুকুও কেটে গেল। লাফিয়ে উঠলেন মুখার্জি। সাহার ওপরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তার জামাটাকে বুকের কাছে মুঠো করে ধরলেন, “দিস ইজ দা ম্যান। হি হিট মি। আমায় খুন করতে..”

“ছাড়ুন, ছাড়ুন— কী পাগলামি করছেন—” সাহা মুখে বীরত্বের ভান করে, কিন্তু বোঝা যায় ভয় পেয়েছে।

সবাই মিলে একরকম জোর করেই সরিয়ে আনে মুখার্জিকে। বিনয় শান্ত করার চেষ্টা করে, “আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন। আমরা তো আছি। যা দরকার আমাদের বলুন।”

“বলার আর আছেটা কী! এই স্কাউন্ড্রেলটা আমার গলা টিপে ধরেছিল লিফটের মধ্যে। এক্ষুনি ফোন করো তুমি পুলিশে…” দু’হাতে কপাল টিপে সোফায় হেলান দিয়ে বসেন মুখার্জি। তারপরে আবার সোজা হয়ে বসে, “আমার ব্রিফকেসটা…”

অলোক বলে, “একটু পরে দেখলে হত না…”

ব্যাগ খুলেই মুখার্জি ব্যঙ্গের সুরে বলেন, “বাহ্। তিন হাজার টাকা উধাও! চমৎকার! আজই অফিসে ঢোকার আগে তুলেছি। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো।”

সবাই স্তম্ভিত হয়ে এ ওর মুখের দিকে তাকায়। সাহেবের কি সত্যিই মাথাটা বিগড়ে গেল নাকি! ব্যাঙ্কে খোঁজ নেওয়ার দরকার কী! মুখার্জিকে যখন ধরাধরি করে আনা হচ্ছিল, তখনই ওরা লক্ষ করেছে তার বুকপকেট থেকে একগোছা একশো টাকার নোট উঁকি মারছে। পড়ে যেতে পারে বলে টাকাটা তুলে বিনয়ের কাছে গচ্ছিত করেছে।

টাকা ফেরত পেয়ে আরও ক্ষিপ্ত মুখার্জি। “হতেই পারে না। টাকাটা আমি ব্যাগেই ভরেছিলাম। এই সাহা ব্যাঙ্ক থেকেই আমার পিছু নিয়েছে। তারপর লিফটে একা পেয়েই আমাকে…”

সাহা কাঁধ ঝাঁকিয়ে নাচারের ভঙ্গিতে বলে, “এসব কথা শুনলেও পাপ। আমার কিছু বলার নেই। আমার যা বলার, দরকার হলে পুলিশকেই বলব।”

শ্যামল মুখার্জিসাহেবের কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলল, “আপনার সঙ্গে কয়েকটা খুব জরুরি কথা আছে। সিক্রেট।”

মুখার্জির নির্দেশে বাকি সবাই পাশের ঘরে চলে গেল। অল্পকথায় ছাতা এবং সুখেন্দু সরকারের ইতিবৃত্ত গুছিয়ে বলল শ্যামল।

আরও উত্তেজিত মুখার্জি। “নিশ্চয় সাহা কোনও এক সময়ে ছাতাটা চুরি করেছিল। আজ কাজ সেরে ওটাকে লিফটের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে।”

শ্যামল বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে কেন সাহার পক্ষে মুখার্জিকে আঘাত করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ অজ্ঞান অবস্থায় মুখার্জিকে নিয়ে লিফটটা যখন নীচে এসে নামে তখন শ্যামল, বিনয় ও অলোকের মতো সাহাও ছিল সেখানে। অথচ মিনিট কয়েক আগেই মুখার্জি উঠেছিলেন লিফটে। সেই লিফটে যদি সাহা থাকত তা হলে সে ওই লিফট নীচে নামার আগেই আবার লাইনে এসে দাঁড়াল কী করে।

মুখার্জি সোফায় হেলান দিয়ে বসে কেবলই ঘাড় নাড়েন, “এ হতে পারে না! কিছুতেই হতে পারে না।”

তবে শ্যামলের সঙ্গে একটা ব্যাপারে তিনি একমত। পুলিশে খবর না দেওয়াই ভাল। পুলিশ এলে সুখেন্দু সরকারের কপালে যে অশেষ দুর্ভোগ, তাতে কোনওই সন্দেহ নেই।

॥ ৫ ॥

সৌমেন আচমকা হাজির না হলে হলডেন সায়েন্স ক্লাবে সেদিন যে কী ঘটত বলা মুশকিল। হয় সেনাপতি মিহির ঘটকের পতন, নয় তো তাঁর তরুণ ফৌজের দলত্যাগ। বেহালায় এরোমডেলার্সদের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় ফ্রি ফ্লাইট, কন্ট্রোল লাইনার, সি-প্লেন কি হোভারক্র্যাফট সহযোগে হাজির হওয়ার চেয়ে মিহিরদার ওই বাক্স-ঘুড়ি বানানোর গবেষণায় প্রাণমন সঁপে দেওয়ার প্রস্তাবটা ঢের বেশি রোমাঞ্চকর— এটা বিনা আপত্তিতে সবাই মেনে নেবে, ভাবাটাই অস্বাভাবিক।

সৌমেন চাপা গলায় ফিসফিস করে মিহিরকে জানাল, “লোকটা হেভি আহত। মাথায় ব্যান্ডেজ। চোখের কোণে ঘন কালি। বলছে, তোমার ইস্কুলের বন্ধু। মুখার্জি না কী যেন নাম। তোমার বাড়ির সামনেই পায়চারি করছে। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।”

রণে ভঙ্গ দিয়ে সৌমেনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এল মিহির।

মিহিরের বাড়িতে বসে কাহিনির বিবরণ শেষ করে মুখার্জি বললেন, “আমাকে একেবারে গাধা বানিয়ে ছেড়েছে, পাগল প্রমাণিত হয়েছি আমি।”

সৌমেন উদগ্রীব হয়ে চেয়ারের সামনে এগিয়ে বসেছে। ক্যানভাসের ইজিচেয়ারের খোলের মধ্যে সেঁধিয়ে রয়েছে মিহির। বাঁ হাতটা ভাঁজ করে মাথার পিছনে। ডান হাতে আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট। ঘাড় কাত করে নীরবে, শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মুখার্জির দিকে।

মুখার্জির উচ্চতা মাঝারি, দোহারা চেহারা—সবই তাঁর মাঝারি রকমের। প্রথম নজরে উল্লেখযোগ্য কিছু চোখে পড়ে না। কিন্তু কিছুক্ষণ তাঁর মুখে কথা শোনার ফাঁকেই ভদ্রলোকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর পরিচয় পেয়েছে সৌমেন। মানুষটি আত্মবিশ্বাসী। পরিস্থিতির অভিনবত্ব তাঁকে সন্দিগ্ধ করেছে কিন্তু। বিচলিত করতে পারেনি। নিজের প্রত্যয়ে অচল। সাহা যে একটি তুলনাহীন স্কাউন্ড্রেল, তাতে তাঁর কণামাত্র সন্দেহ নেই।

কিন্তু প্রমাণ কই? আজকের এই অদ্ভুত ঘটনার ব্যাখ্যাটাই বা কী? এখানেই ঠেকে গেছেন মুখার্জি আর তখনই তাঁর মনে পড়েছে বাল্যবন্ধু মিহিরের কথা।

সাহার অ্যালিবাই-তে কোনও ফুটো নেই সেটা স্বীকার করে নিয়েও মুখার্জি নিঃসন্দেহ যে সাহাই। কালপ্রিট।

সৌমেন মনে মনে আর-একবার সাজিয়ে নেয় সকালের ঘটনাটা। মুখার্জিরই বিবরণ অনুসারে।

দশটা বাজতে ঠিক কুড়িতে ব্যাঙ্কে ঢুকেছিলেন মুখার্জি। সেখানে সাহাও ছিল। তারপর ঠিক দশটায় তিনি লিফটে পা দেন। (পরে সরকার একেবারে নিশ্চিত করে বলেছে দশটা বাজতে তখন পুরো এক মিনিট বাকি)। সাহাও হুড়মুড়িয়ে লিফটে এসে ঢুকেই আচমকা একটা ঘুসি মারে মুখার্জিকে। তারপরে গলা টিপে ধরে। জ্ঞান হারাবার আগে সাহার শেষ ক’টা কথাও মনে আছে মুখার্জির, “এই দুটো আঙুল পুরো এক মিনিট চেপে ধরে রাখি যদি তা হলেই অক্কা পাবেন মুখার্জিসাহেব।”

এই অবধি সবই ঠিক আছে। কিন্তু গুলিয়ে গেল জ্ঞান ফেরার পর। স্বাভাবিকভাবেই সময়ের হিসাব রাখতে পারেননি মুখার্জি। সাহাকে দেখেই ভেবেছিলেন অপকীর্তি সেরে ব্যাটা আবার কোনও মতলবে এসেছে।

কিন্তু মুখার্জির অভিযোগ যে মোটেই ধোপে টেকেনি তার একটাই কারণ, শ্যামল, অলোক, বিনয়— এরা প্রত্যেকে সাক্ষী অচৈতন্য মুখার্জিকে নিয়ে লিফট যখন নেমে আসে, সাহা তখন তাদের সঙ্গেই ছিল, লাইনে দাঁড়িয়ে। এবং লিফটটা নেমে আসে যখন, তখন ঠিক দশটা বেজে পাঁচ মিনিট।

এরপরের ব্যাপারটা সহজবোধ্য। যদি সাহা লিফটে উঠে সত্যিই মেরে থাকে মুখার্জিকে, এই ক’মিনিটের মধ্যে সে অপকর্ম সেরে ওই লিফটেই আবার নীচে নামার কয়েক মিনিট আগেই আর পাঁচজনের সঙ্গে লাইনে এসে দাঁড়াল কী করে? হ্যাঁ, প্রত্যেকে বলেছে দ্বিতীয় লিফট থেকেও নামেনি সাহা। তা হলেও না হয় বোঝা যেত মাঝপথে কাজ হাসিল করে, একটা তলা ছুটে নেমে দ্বিতীয় লিফটে চড়ে সে নেমে এসেছিল। যদিও ঠিক সেই সময়েই দ্বিতীয় লিফটটাকে ঠিক ওই জায়গাতেই পাওয়া একটা দারুণ ভাগ্যের কথা।

মাঝপথে লিফট থামিয়ে নামার প্রশ্নের খেই ধরে দ্বিতীয় প্রশ্নটাও আসে। সিঁড়ির কথা। সাহা কি কোনওভাবে সিঁড়ি ব্যবহার করে থাকতে পারে নামার সময়ে? পারে, তবে আসল সিঁড়ি নয়, ফায়ার এসকেপের সিঁড়ি। তা হলে সে পেছন দিকের গলিতে গিয়ে পৌঁছতে পারত, তারপর ছুটে এসে সদর দরজা দিয়ে ঢুকে আবার লিফটের লাইনে এসে দাঁড়ানোও সম্ভব। কিন্তু সেখানে আবার অন্য সমস্যা। অটোমেটিক লিফটের সমস্যা। সাহা কী করে নিশ্চিত হল যে, এত বড় বাড়ির অন্য কোনও ফ্লোর থেকে এর মধ্যে অন্য কেউ লিফটের বোতাম টিপে তাকে মাঝপথে কোথাও থামাবে না? তা হলে তো আর লিফটটা বারোতলা অবধি উঠে আবার পুরো নীচে নেমে আসার ফাঁকে সাহাকে তার অ্যালিবাই তৈরি করার সুযোগ দিত না। নিশ্চিত না হয়ে সাহা সে ঝুঁকি নেবে, স্বয়ং মুখার্জিও সেটা বিশ্বাস করতে পারেন না।

তবে? বিরাট একটি জিজ্ঞাসার চিহ্ন।

তার মধ্যে আবার বেচারা সুখেন্দু সরকারকে প্যাঁচে ফেলেছে তার ভাঙা ছাতা। মুখার্জি ভাবতেই পারেন না, সরকারের মতো নিরীহ, ভিতু সম্প্রদায়ের মানুষ কখনও এসব ব্যাপারে জড়িত হতে পারে। স্রেফ সাহার কারসাজি। কয়েক সপ্তাহ আগে মুখার্জির সঙ্গে একবার দেখা করতে এসেছিল সাহা। তখনই নিশ্চয় ওই ছাতাটা লোপাট করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা সরকারের মতো সৎ মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছেন মুখার্জি।

সৌমেন বলল, “আচ্ছা, সাহার ডাবল তো থাকতে পারে? যমজ ভাই?”

চোখ বুজেই মিহির বলল, “সেটা হলে তো সমস্যা আর থাকবেই না। তবে সাহা যদি সত্যিই স্কাউন্ড্রেল হয় তবে তার সম্ভাবনা খুব কম। যাই হোক, সেটা পুলিশ সোর্স থেকে চেক করার দায়িত্ব আমার।”

মুখার্জি বললেন, “তার বোধহয় দরকার নেই। লিফটে উঠেই আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সাহা যখন বাটনটি টিপেছিল আমি তার গোমেদের আংটিটা দেখেছিলাম। তা ছাড়া ওর ওই আংটি পরা আঙুলে একটা বড় আঁচিল আছে। পরিষ্কার মনে আছে।”

সৌমেন তবু হাল ছাড়ে না, “আপনার অফিসের অন্য কোনও সহকর্মী যদি সাহার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রের মধ্যে…”

“ভেরি আনলাইকলি। কারণ একজন কেউ সেরকম কিছু করলেই অন্যের চোখে কি পড়ত না? ঠিকই পড়ত। বিশেষ করে আজ যে কাণ্ড ঘটেছে। তবে যদি পুরো অফিসের সব কর্মী মিলেই… একেবারেই অসম্ভব। হতেই পারে না!”

মিহির সিগারেটটা ডোকরা অ্যাশট্রেতে টিপে দিতে দিতে বলল, “অ্যালিবাইটা যেরকম জব্বর তাতে লোকটা তোকে খুন করেও পার পেয়ে যেত বোধহয়।”

মুখার্জি হঠাৎ হাসতে শুরু করলেন। সৌমেন অবাক হয়ে তাকায়। হাসির কারণটা তার বোধগম্য হয় না।

মুখার্জি হাসতে হাসতেই বললেন, “আরে তুই দেখছি ঠিক সাহার কথাটাই রিপিট করলি।”

“তার মানে?”

“সকালের কাণ্ড মেটার পর এই তিনটে নাগাদ একটা ফোন পেয়েছিলাম। সাহা করেছিল। নাম বলেনি। তার দরকারও ছিল না। শুধু বলল, “ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে চাই না বলেই আজ এইটুকুর ওপর দিয়ে গেল। এতেও যদি শিক্ষা না হয় তা হলে অবশ্য আমার আর উপায় থাকবে না। এবং ঠিক এই ভাবেই পরের বার তোর লাশটা লিফটে করে…”

তড়াক করে লাফিয়ে উঠল মিহির, “না, না! এটা হাসির কথা নয়। ব্যাপারটাকে এরপর আর হালকাভাবে নেওয়া চলে না!”

“আপনি পুলিশে খবর দিয়েছেন?” সৌমেন জানতে চায়।

“না। সাহা বারণ করেছে।” আবার হাসে মুখার্জি, “না, ঠিক প্রাণের ভয়ে নয়, মিহিরের পরামর্শটা তার আগে নেওয়া দরকার মনে করেছি।”

“চুপ কর তো!” মিহির ধমক লাগায়, “সাহার মোটিভটা কী সেটাই তো শুনলাম না এ অবধি। যার জন্য তোকে এভাবে টার্গেট করেছে।”

“ওহ্‌ হ্যাঁ, সেটাই বলা হয়নি, তাই না? আমি কোন অফিসে কী কাজ করি সেটা অবশ্য তোর মনে থাকার কথা নয়। তা জানলে আন্দাজ করতে অসুবিধে হত না। ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফিনান্সিং অথরিটির একটা অঞ্চলের অফিসার-ইন-চার্জ আমি। আমাদেরটা টেকনিক্যাল সেল। অর্থাৎ, যারা কোনও কারখানা ইত্যাদি স্থাপন করার জন্য টাকা ধার চায়, তাদের স্কিম, প্ল্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখার জন্য সবার আগে আমাদের কাছে আসে। অঞ্চলভিত্তিক ভাবে। আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে আমার জায়গায় যিনি কাজ করতেন, মিস্টার নন্দী, তিনিই আমাকে রিটায়ার করার পর প্রথম সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সত্যি বলতে, সাহার জন্যই চাকরির মেয়াদ ফুরোবার আগেই অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সাহারই একটা স্কিম, অবশ্য বেনামে, স্যাংশন করার পর সেবার প্রায় আট লক্ষ টাকা জলে গিয়েছিল। তখনই আমার ধারণা হয়েছিল নন্দী অসৎ লোক নন। সেই ধারণা এবার পাকা হয়েছে। মাস ছয়েক আগে সাহা নতুন একটা স্কিম জমা দেয়। এবার নিজের নামেই। বিশাল প্রোজেক্ট। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার প্ল্যান্ট বসাবে। শুধু তাই নয়, এক জাতীয় ল্যাবরেটরি থেকে সে প্রকৌশলটি পাঁচ বছরের জন্য কিনেছে, রয়ালটি দিচ্ছে। এবং একটি ছোট্ট আকারের পাইলট প্ল্যান্ট পরীক্ষামূলকভাবে এক বছর চালিয়েই প্রায় সাত লাখ টাকার ব্যাবসা করেছে। কোথাও কোনও খুঁত নেই। এই প্ল্যান স্যাংশন না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু তবু আমি দেরি করছিলাম। কোথায় যেন মনটা মানছিল না। হঠাৎই বলতে হবে একটা সন্দেহ দেখা দিল। আগেই বলেছি আমরা টেকনিক্যাল সেল। ব্যবসায়িক লেনদেনের বিশদ বিবরণ আমাদের কাছে আসে না। শুধু গ্রস হিসেবে। আমি সেই বিবরণটাই সংগ্রহ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে সব প্রশ্নের মীমাংসা। যে ল্যাবরেটরির কাছ থেকে টেকনিকটা কিনেছে সাহা, সেই ল্যাবরেটরিই ওর বলতে গেলে একমাত্র ক্রেতা। তাদের দৌলতেই ও ওর ব্যাবসার মুনাফা দেখিয়ে আরও ধার চাইছে। বিরাট চক্রান্ত। এর মধ্যে ওই ল্যাবরেটরিরও কিছু হোমরাচোমরা জড়িয়ে আছে সন্দেহ নেই। ব্যাপারটা চরম পর্যায়ে

পৌঁছল যেই আমি ওদের কারখানায় তৈরি মালের স্যাম্পেল চেয়ে পাঠালাম। ওরা প্রমাদ গুনল। নিশ্চয় আমি সেটা টেস্টিংয়ের জন্য অন্য কোথাও পাঠাব। আরও শুনবি?”

“এনাফ। যথেষ্ট! এবার একটা কথা বল তো, তুই কি রোজ একই সময়ে অফিসে আসিস?”

“একই সময় হয়তো নয়, কিন্তু দশটা বাজতে দশের আগেই প্রতিদিন পৌঁছই।”

“তোদের বিল্ডিংয়ে কি সবই সরকারি অফিস?”

“হ্যাঁ। তবে থার্ড, ফোর্থ আর ফিফথ ফ্লোরে গোডাউন আছে।”

“তা হলে তুই যখন অফিসে পৌঁছাস, সব খাঁ খাঁ?

“তা বলতে পারিস, তবে আমাদের ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন প্রায়ই দেখি আমার আগেই অফিসে আসে।”

“তার মানে, একা তোকে লিফটে পাকড়াও করার জন্য সুযোগের প্রতীক্ষায় একজন ঘাপটি মেরে বসে ছিল।”

॥ ৬ ॥

মরিস মাইনরের লাট্টগিয়ার ঠেলে মুখার্জি যখন গাড়িটাকে ব্যাক করিয়ে পার্ক করছেন, পাশ থেকে মিহির বলল, “তুই কি রোজই এই জায়গায় পার্ক করিস?”

“বছর পাঁচেক ধরে। ওই দ্যাখ, জায়গা রিজার্ভ করা আছে। না হলে কি আর এখানে গাড়ি রাখার সুযোগ পাওয়া যায়!”

“শোন, আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াচ্ছি। তুই মিনিট তিনেক পরে নামবি। তারপর আমাদের কথা ভুলে রোজ যেরকম করিস, ঠিক সেইভাবে অফিসের দিকে এগিয়ে যাবি। অফিসের গেটে পৌঁছে, তারপর আমাদের জন্য ওয়েট করবি কেমন?”

“ও কে।”

পেছনের দরজা খুলে সৌমেন আর সামনের সিট থেকে মিহির নেমে পড়ল।

মিহির বলল, “আমরা এখন কী খুঁজছি সৌমেন?”

“একটা জায়গা। যেখান থেকে মিস্টার মুখার্জির চোখে না পড়েও তাঁর ওপর নজর রাখা যায়।”

“ঠিক। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে, প্রতিদিন মিনিট পনেরো-কুড়ি অপেক্ষা করতে হলে, সন্দেহের দৃষ্টি যাতে না পড়ে…”

মিনিট পাঁচেকের পর্যবেক্ষণের পর মিহির ও সৌমেন নিশ্চিত হল, সেরকম জায়গা বলতে দুটো। একটা পান-সিগারেটের দোকান। দ্বিতীয়টা ‘শরবত অ্যান্ড স্ন্যাকস’।

পানওলা তখনও দোকান খোলেনি। খয়ের রাখার কাঁসার ঘটিটায় পালিশ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। ইচ্ছে করেই এক প্যাকেট ‘ক্ল্যাসিক’ সিগারেট চাইল মিহির। বেশি দামের সিগারেটের অর্ডারটা হয়তো প্রত্যাখ্যান করবে না। মোটাসোটা দোকানদার মুখ না তুলেই যা উত্তর দিল তার বাংলা করলে মানে দাঁড়ায়, অন্ধ না হলে সবারই বোঝা উচিত যে এখনও দোকান খোলেনি।

সৌমেন বলল, “আজ দোকান খুলতে এত দেরি যে…”

এবার দোকানদার চোখ তুলে তাকাল। কিন্তু সত্যযুগের ভস্ম করার শক্তিটা এখন আর কাজ করছে না বুঝে বলল, “দশটার আগে কভি দুকান খুলা হয় না।”

ওদিকে মন্টু ছটফট করছিল। আজ এত দেরি কেন? সব টুল পাতা হয়ে গেল। তবে কি সকালের চার আনা আজ বরবাদ। সৌমেন আর মিহিরকে আসতে দেখে তার কৌতূহল বাড়ল।

সৌমেন বলল, “খাওয়াদাওয়া জুটবে কিছু? দোকান খুলেছে?”

মন্টু বলল, “রোজ-সিরাপ আছে। ঠান্ডা।”

“সাতসকালে রোজ-সিরাপ?”

“আমাদের রোজ-সিরাপ খেয়েছেন কখনও? তা হলে বলতেন না। ভোরবেলার বাবু আসেননি এখনও, তা হলে…”

বাকিটুকু সোজা। রোজ-সিরাপে স্ট্র দিয়ে টান লাগাতে লাগাতেই যা জানার জেনে নিয়েছে। ওরা।

সৌমেন ঠাট্টা করে বলল, “দ্যাখো ভাই, তোমার ওই সকালের বাবুকে তুমি নিশ্চয় স্পেশ্যাল কিছু খাওয়াতে! আমার তো তেমন কিছু সাংঘাতিক লাগছে না।”

মন্টু রেগে গেল, “স্পেশ্যাল মানে? ঠিক যা দিই ওঁকে তাই দিয়েছি। এমনকী, ঠান্ডা শরবতে পাঁচ টুকরো বরফ, তাও।”

মিহির গেলাসটা সশব্দে কাউন্টারে রেখে বলল, “কী বললে? বরফ?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, বরফ— শরবত যতই ঠান্ডা হোক, তবু পাঁচ টুকরো বরফ দিতে হত। গুনে। দেখুন।”

মিহির দেখল কথাটা সত্যি। পাঁচটা কিউব ভাসছে। একটা কিউব হাতে তুলে নাড়াচাড়া করল। তারপর দু’ টাকা টিপস দিয়ে দাম মিটিয়ে পা বাড়াল দু’জনে। পেছন ফিরে মিহির বলল, “কালই সকালে আবার আসব ভাই।”

অলকা ম্যানসনের দরজায় মুখার্জি অপেক্ষা করছিলেন। মিহির বলল, “চল— এবার স্বয়ংক্রিয় চলমান কক্ষটিতে পদার্পণ করা যাক।”

সৌমেন নিঃসন্দেহ যে, মিহির একটা ক্লু পেয়েছে। না হলে শুদ্ধ বাংলা বেরোত না। তা ছাড়া শরবতের দোকান থেকে বেরিয়েই মিহিরদা গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করেছিল, “কে বিদেশী মন উদাসী বাঁশের বাঁশি হুঁহুঁ হুঁহুঁ…”

লিফটের সামনে জনাপাঁচেক দাঁড়িয়ে। ওরাও লাইন দিল।

মিহির বলল, “যতদূর জানি একজন লিফটম্যান থাকার কথা…”

মুখার্জি ঠোঁট টিপে হাসল, “থাকার কথা এবং আছে, কিন্তু সবসময়ে চোখে দেখা যায় না, এই যা…”

“বিশেষ করে সকালের দিকে, তাই তো?”

“হ্যাঁ।”

সৌমেন বলল, “মিহিরদা, দ্যাখো, একটাও ইন্ডিকেটর ল্যাম্প জ্বলছে না। লিফটটা যে এখন ঠিক কোথায় বোঝার কোনও উপায় নেই।”

মুখার্জি বললেন, “একে একে নিভিছে দেউটি। কিছুদিন আগেও একটা কি দুটো আলো জ্বলত। বোধহয় সাত আর নয়। এখন সবই গেছে।”

“রিপেয়ার মেনটেনেন্স— এসবের কি কোনও…”

“একেবারে ঘাড় মটকে পড়লে হয় বইকী। ছোটখাটো অন্য ব্যাপার বছরে একবারের বেশি…”

“তারই পুরো ফায়দা নিয়েছে।” মিহির যেন আপনমনে বলল।

“তার মানে?”

উত্তর দেওয়া হল না। লিফট এসে গেছে।

বিভিন্নজনে বিভিন্ন সংখ্যা বসানো বোতাম টিপছে। মুখার্জি এগারো টেপা মাত্র মিহির বলল, “তিন।”

মুখার্জি একবার ঘাড় ফিরিয়েই তিন টিপে দিলেন।

তিন নম্বর ফ্লোরে অর্থাৎ চার তলায় নামল শুধু ওরা তিনজন। লিফটের সামনে ছোট্ট একটা করিডোর দিয়ে কয়েক পা এগোতেই একটা ধুলোয় ভরা ঘুটঘুটে অন্ধকার বারান্দায় এসে পড়ল ওরা। ডান দিকে সারি সারি ঘর। একটারও দরজা-জানলা খোলা নেই। দূরে সরু একটা সুতোর প্রান্তে বোধহয় ষাট ওয়াটের একটা বাল্‌ব টিমটিম করছে। অবশ্য বাঁ দিকে বারান্দায় একফালি আলো এসে পড়েছে।

মুখার্জি বললেন, “ফায়ার এসকেপের সিঁড়ির চাতাল থেকেই ওই বাইরের আলোটুকু আসছে।”

মিহির বলল, “এ তলাটা যে গোডাউন সে তো বোঝাই যাচ্ছে, এর ওপরেও কি তাই?”

“হ্যাঁ— ফোর্থ আর ফিফথ ফ্লোরও।”

“এ কি সব সময়েই এরকম খাঁ খাঁ করে?”

“তা নয়। মাঝে মাঝে খুবই মালপত্তর টানাটানি শুরু হয়।”

“কিন্তু মালপত্র নিশ্চয় লিফটে নামে না?”

“কক্ষনও না—সবসময়ে সিঁড়ি দিয়ে।”

মিহিরের ইচ্ছামাফিক ওরা সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ছ’তলায় উঠল।

মিহির বলল, “মুখার্জি তুই সৌমেনকে নিয়ে তোর অফিসে যা, আমি একটু আসছি।”

মিহির বাঁ হাতটা চোখের কাছে তুলে ভাল করে ঘড়িটা লক্ষ করেই হঠাৎ বোঁ করে ছুট লাগাল ফায়ার এসকেপের সিঁড়ির দিকে।

মিনিট কুড়ি পরে বারোতলায় মুখার্জির ঘরে এসে ঢুকল মিহির।

“কাল ঠিক সাড়ে ন’টায় সাহা যাতে তোর অফিসে আসে তার ব্যবস্থা কর।” বলল মিহির।

তার কথা শুনে মনে হল যেন চিফ অব স্টাফের হুকুম, “না, না, আমি কিছু জানতে চাই না। যে-কোনও টোপ ফেল, কিছু যায়-আসে না। শুধু কাগজে-কলমে কিছু লিখে পাঠাবি না। ও কে?”

“সেটা একটা খুব শক্ত নয়। আমি একটু নরম হয়েছি এরকম হিন্ট দিলে একবার কেন, দশবার আসবে।”

“বেশ তা হলে কাল সকালে আমাকে আর সৌমেনকে তুলে নিস তুই। যাতে ন’টা কুড়ির মধ্যে পৌঁছতে পারি এখানে।”

॥ ৭ ॥

ছোট কাঁটায় বড় কাঁটায় পাক্কা সাড়ে ন’টা। ট্যাক্সি থেকে নামল সাহা। তাকে দেখেই শরবত অ্যান্ড স্ন্যাক্সের রোজ-সিরাপের গেলাসটা ঠক করে নামিয়ে রেখে তার মধ্যে আঙুল পুরে দুটো আইস-কিউব তুলে নিয়েই দৌড় দিল মিহির।

তার নির্দেশমতো ঠিক তিন মিনিট এই দোকানে অপেক্ষা করার পর মুখার্জি আর সৌমেন রওনা হবে অলকা ম্যানসনের লিফট ধরতে।

সৌমেনরা লিফটের সামনে পৌঁছবার মিনিট তিনেকের মধ্যেই ঘর্মাক্ত কলেবরে মিহির এসে হাজির হল।

“ব্যাপারটা কী?” প্রশ্ন করে সৌমেন।

দুটো হাত উপুড় করে ধরে মিহির বলে, “বেজায় চোট লেগেছে রে। ভাল কথা, লিফট কল করার বাটনটা টিপেছিস তো?”

“সে তো টিপেইছি। কিন্তু…”

“একটু ধৈর্য ধর।” মিহির একটা সিগারেট ধরায়।

দু’ মিনিটের মধ্যেই লিফটটা নেমে আসে। দরজা খুলতেই দেখা যায় সাহা লুটিয়ে পড়ে আছে লিফটের মেঝেয়।

“আর নয়, এবার আমাদের দৌড় দিতে হবে। চল, চল।” মিহির একরকম ওদের দু’জনকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

মুখার্জির মরিস মাইনর সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ পেরোবার পরে মিহির বলে, “ভয় নেই। সাহা মারা যায়নি। শুধু দুটি থাপ্পড় খেয়েছে। প্রথম থাপ্পড়ের পর পড়ে গেছল কিন্তু জ্ঞান হারায়নি, বললাম, যে কায়দায় মুখার্জিকে কাল তুই অ্যাটাক করেছিস, ব্রিলিয়ান্ট। অকাট্য অ্যালিবাই। সব প্রমাণ জল হয়ে গলে উবে গেছে। আর তাই ঠিক একই কায়দায় তোকে আজ খতম করা ছাড়া উপায় নেই। বলেই পকেট থেকে বরফের টুকরো দুটো বার করে ওকে দেখালাম। তারপর চুলের ঝুঁটি ধরে আরেকটি থাপ্পড়ে অজ্ঞান করে ফেলে দিলাম। লিফট ফিফথ ফ্লোরে এসে থামল। দুটো দরজার পাল্লার মধ্যে চ্যানেলে তিন টুকরো বরফ গুঁজে বেরিয়ে এসেই ছুট লাগালাম ফায়ার এসকেপের সিঁড়ি দিয়ে। তারপর তো তোমরা জানোই। আমরা তিনজনে মিলে একসঙ্গে আবিষ্কার করেছি যে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীর হাতে সাহা…”

“বরফ। বরফ গুঁজে লিফটের পাল্লা বন্ধ হতে না দিয়ে লিফটটাকে ও তা হলে কাল ওই ফিফথ ফ্লোরেই…”

“ফিফথ কিংবা থার্ড, সেটা বলতে পারব না। পরে তুই সাহাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারিস। আমার ধারণা আর ও কবুল করতে গাঁইগুঁই করবে না।”

সৌমেনের মুখের দিকে তাকিয়ে মিহির বলল, “বোকার মতো করছিস কেন? এটা আর না বোঝার কী আছে? লিফটটার এক-এক তলা উঠতে আট সেকেন্ড লাগে। তার মানে একবার গ্রাউন্ড ফ্লোর ছেড়ে পুরো বারো তলা অবধি উঠে আবার নামতে লোকজন নামা-ওঠা সমেত মিনিট সাড়ে-তিন কমসে-কম লাগবেই। কাজেই থার্ড বা ফিফথ ফ্লোরে যেখানে লোক নামা-ওঠার বা দেখে ফেলার কেউ নেই— লিফটটাকে মিনিট তিনেক আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলেই তো অ্যালিবাই পাকা। তার মধ্যে ফায়ার এসকেপের সিঁড়ি দিয়ে আবার নীচের তলায় লিফটের গেটের সামনে পৌঁছে যাওয়া আর এমন কী শক্ত। তবে হ্যাঁ, হিসেবে সাহা পটু, ক’টা আইস-কিউব লিফটের দু’পাল্লার ফাঁকে বসালে, দরজার চাপ সত্ত্বেও মিনিট তিনেকের আগেও গলবে না, পরেও গলবে না…

“এবং যতক্ষণ তা না গলছে লিফটের দরজাও বন্ধ হবে না এবং লিফটও কিছুতেই সুইচ টিপে রাখা সত্ত্বেও নীচে নামবে না…”

মিহিরের দিকে না তাকিয়েও সৌমেন হঠাৎ উপলব্ধি করল দুটো চোখ তাকে ভস্ম করছে। এমনকী, পরিষ্কার শুনতে পেল মিহিরদা মনে মনে বলছে, ‘তুই নিজে সেটা এতক্ষণে বুঝলি বলে আর কেউ বোঝেনি মনে করার কারণ নেই। চেপে যা।’

২৫ জানুয়ারি ১৯৮৯

অলংকরণ: অনুপ রায়

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *