একটি অকবিতা
আমার মা যখন মারা যাচ্ছিলেন, সকালবেলা স্নান করে জামা জুতো পরে ঘরবার হলেন বাবা, চিরকেলে অভ্যেস। বড়দা সকালের নাস্তায় ছ’টি ঘিয়ে ভাঁজা পরাটা নিলেন, সঙ্গে কষানো খাসির মাংস, এ না হলে নাকি জিভে রোচে না তাঁর। ছোড়দা এক মেয়েকে বুকে মুখে হাত বুলিয়ে সাধাসাধি করছিলেন বিছানায় নিতে। সারা গায়ে হলুদ মেখে বসেছিলেন বড়বৌদি, ফর্সা হবেন; গুনগুন করে হিন্দি ছবির গান গাইছিলেন, চাকরবাকরদের বলে দিয়েছেন ইলিশ ভাঁজতে, সঙ্গে ভুনা খিচুড়ি। ভাইয়ের ছেলেগুলো মাঠে ক্রিকেট খেলছিল, ছক্কা মেরে পাড়া ফাটিয়ে হাসছিল। মন ঢেলে সংসার করা বোন আমার স্বামী আর কন্যা নিয়ে বেড়াতে বেরোল শিশুপার্কে। মামারা ইতিউতি তাকিয়ে মা’র বালিশের তলে হাত দিচ্ছিল সোনার চুরি বা পাঁচশ টাকার নোট পেতে। খালি ঘরে টেলিভিশন চলছিল, যেতে আসতে যে কেউ খানিক থেমে দেখে নেয় তিব্বত টুথপেস্ট নয়ত পাকিজা শাড়ির বিজ্ঞাপন। আমি ছাদে বসে সিগারেট ফুকতে ফুকতে নারীবাদ নিয়ে চমৎকার একটি কবিতা লেখার শক্ত শক্ত শব্দ খুঁজছিলাম।
মা মারা গেলেন।
বাবা ঘরে ফিরে জামাকাপড় ছাড়লেন। বড়দা খেয়ে দেয়ে ঢেঁকুর তুললেন। ছোড়দা রতিকর্ম শেষ করে বিছানা ছেড়ে নামলেন। বড়বৌদি স্নান সেরে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ইলিশ ভাঁজা দিয়ে গোগ্রাসে
কিছু খিচুড়ি গিলে মুখ মুছলেন। ভাইয়ের ছেলেগুলো ব্যাট বল হাতে নিয়ে মাঠ ছাড়ল। স্বামী কন্যা নিয়ে বোনটি
শিশুপার্ক থেকে ফিরল। মামারা হাত গুটিয়ে রাখলেন। আমি ছাদ থেকে নেমে এলাম। ছোটরা মেঝেয় আসন পেতে বসে গেল, টেলিভিশনে নাটক শুরু হয়েছে। বড়দের এক চোখ মায়ের দিকে, আরেক চোখ টেলিভিশনে। মায়ের দিকে তাকানো চোখটি শুকনো, নাটকের বিয়োগান্তক দৃশ্য দেখে অন্য চোখে
জল।