একটা রহস্যময় ক্রিকেট বল
প্রথমে দুম করে একটা শব্দ হল। তারপর ঝনঝন, ঝনঝন, কাচ ভাঙার। আওয়াজটা হল বসবাস ঘরে।
আজকাল চতুর্দিকেই যখন তখন গোলমাল লাগে। এরকম আওয়াজ শুনলেই ভয় করে। কেউ কি বাড়ির দিকে বোমা-টোমা ছুড়ল নাকি?
নিপুর ঘরে, তার বিছানায় পাশে বসে বাবা একটা বই পড়ে শোনাচ্ছিলেন। নিপুর খুব অসুখ, সে বিছানা থেকে উঠতেই পারে না। বইও পড়তে পারে না। নিপু কিন্তু পড়াশুনোয় ভালো, ক্লাস এইটের পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। এই অসুখের জন্য সে এমনই দুর্বল হয়ে গেছে যে, শুয়ে শুয়ে পড়ার জন্য বই ধরে রাখতেও পারে না। হাত খুব কাঁপে।
মা এই সময় নিপুকে ওষুধ খাওয়াবার জন্য ঘরে ঢুকেছেন। ওই আওয়াজ শুনে ভয়ের চোটে বলে উঠলেন, ও মাগো! কী হল?
বইটা রেখে বাবা ছুটে এলেন বসবার ঘরে।
সারাঘরে কাচ ছড়ানো, রাস্তার দিকের একটা জানলার কাচ ভাঙা।
বোমা-টোমা কিছু নয় অবশ্য। তবে কি কেউ ইট মেরেছে? এদিক-ওদিক তাকিয়েও কোনো ইট বা পাথর-টাথর দেখা গেল না। তা হলে কে ভাঙল? বাইরেও দেখা গেল না কারুকে।
তাহলে কি ভূতুড়ে ব্যাপার?
আবার পুরো ঘরটায় চোখ বোলাতেই দেখা গেল, এক কোণে প্রায় লুকিয়ে আছে একটা ক্রিকেট বল।
এবার সব ব্যাপারটা বোঝা গেল।
পাশের মাঠে কিছু ছেলে বিকেলবেলা ক্রিকেট খেলে। তাদেরই কেউ ওভার বাউণ্ডারি মেরেছে, সেই বল উড়ে এসে ভেঙে দিয়েছে জানলার কাচ।
সেই ছেলেদের কারুকেই দেখা গেল না। ভয়ে পালিয়ে গেছে, না ঘাপটি মেরে কোথাও লুকিয়ে আছে?
কোনোরকমে পায়ে চটি গলিয়ে বাবা বেরিয়ে এলেন বাড়ি থেকে। শুধু গেঞ্জি পরা। মাঠটার এক পাশে রয়েছে মালির ঘর, সেখানে ছেলেরা লুকিয়ে আছে কিনা তা দেখতে গেলেন বাবা।
না, সেখানে কেউ নেই। খেলার সরঞ্জামও কিছু পড়ে নেই। সব কিছু নিয়ে ওরা এত তাড়াতাড়ি পালিয়ে গেল?
এরকমভাবে জানলা ভাঙলে কার না রাগ হয়? বাবা মনে মনে ঠিক করলেন, কাল-পরশু আবার ছেলেরা খেলতে আসবে নিশ্চয়ই। তখন তাদের ধরবেন। কিন্তু শান্তি না দেওয়া গেলেও বকুনি তো অন্তত দেওয়া যাবে!
বলটা হাতে নিয়ে বাবা ফিরে এলেন বাড়ির মধ্যে।
নিপু জিগ্যেস করল, বাবা, তুমি ওই বলটা কোথায় পেলে? ওটা আমার সেই বলটা?
বাবা বললেন, না রে। পাশের মাঠে ছেলেরা খেলছিল, জানলা দিয়ে এই বলটা আমাদের বাড়িতে ঢুকে এসেছে।
নিপু বলল, তুমি ওদের বলটা ফেরত দিলে না? ওদের খেলা বন্ধ হয়ে গেছে?
বাবা বললেন, আমি মাঠে দেখতে গেলাম। এর মধ্যেই সবাই চলে গেছে। কাল যদি আসে—
নিপু বলল, বলটা আমাকে একবার দাও তো—
বাবা হাত বাড়িয়ে দিলেন, নিপু সেটা ধরতে গিয়েও ধরতে পারল না। হাত থেকে পড়ে গড়িয়ে গেল খাটের নীচে।
নিপু হতাশভাবে বলল, যা:!
বাবা নীচু হয়ে দেখতে গেলেন, কিন্তু বলটা তাঁর চোখে পড়ল না। খাটের নীচে কয়েকটা বাক্স-টাক্স রাখা আছে, তার পেছনে দিকে চলে যেতে পারে। সেদিকটায় খানিকটা অন্ধকার অন্ধকার।
বাবার হাঁটুতে ব্যথা, খাটের তলায় তিনি হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
তিনি বললেন, বিক্রম আসুক, সে বলটা বার করে দেবে।
নিপুর চোখে জল এসে গেছে। সে একটা বলও ধরে রাখতে পারে না। এত দুর্বল হয়ে গেছে!
সে বলল, বাবা, আমি কি আর সেরে উঠব না?
বাবা বললেন, ওমা, সে কি বলছিসরে? তোর ডাক্তারকাকু বললেন যে, নতুন ওষুধটা এলেই তুই সাতদিনের মধ্যে বিছানা ছেড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে পারবি।
অসুখ হওয়ার আগে নিপুও ক্রিকেট খেলত তার কাকা বিক্রমের সঙ্গে। অনেকদিন খেলা হয় না। তার বলটাও হারিয়ে গেছে। এটা কিন্তু সে বলটা নয়।
…হাত থেকে পড়ে গড়িয়ে গেল খাটের নীচে।
বিক্রম ফিরল অনেক রাত করে। তখন আর খাটের তলা থেকে বলটা বার করার কথা তাকে বলা হল না। হাত-টাত ধুয়ে সে খেতে বসে গেল।
নিপু ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।
পরের দিন সকালেই এলেন ডাক্তারকাকা। নিপুকে অনেকক্ষণ পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর বললেন, চিন্তার কিছু নেই। এটা নার্ভের অসুখ, এর নতুন ওষুধ বেরিয়ে গেছে, আমাদের দেশে এখনও আসেনি। তবে বিলেত থেকে আনাবার ব্যবস্থা হয়েছে। লণ্ডনের একটা কোম্পানি সাতদিনের মধ্যে আমাকে সেই ওষুধ পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছে। তবে, নিপু, তুমি এর মধ্যে বিছানা ছেড়ে একা একা নামবার চেষ্টা করবে না। বেশি করে ঘুমাবে।
নিপু বলল, আমার দিনের বেলা ঘুম আসে না। বইও পড়তে পারি না, তাহলে কী করব?
ডাক্তারকাকু বললেন, আর কিছুদিন পরেই তুমি নিজে হাতে ধরে বই পড়তে পারবে। এখন বাবা আর মা তোমাকে গল্প শোনাবে, অনেক ভালো ভালো গল্প!
কাল ছুটি ছিল, আজ বাবার অফিস আছে। কাকাও বেরিয়ে গেল আগে আগে। বাড়িতে শুধু মা। বাড়িতে মায়ের অনেক কাজ থাকে, তবু মা নিপুর বিছানার পাশে বসে গল্প শোনান ছেলেকে। মহাভারতের গল্প। নিপু যদিও আগে ‘ছোটোদের মহাভারত’ বইখানা পড়েছে, কিন্তু মহাভারতের গল্প তো পুরোনো হয় না।
রান্নার একজন মাসি আছে, তার নাম করুণা। ঘরদোর পরিষ্কার করার জন্য আর একজন ছিল, সে অনেকদিন আসে না। মা-ই কাজটা চালিয়ে দেন।
বাবার ফিরতে সন্ধে হয়ে গেল। খেলার মাঠে এখন কেউ নেই, আজ ছেলেরা খেলতে এসেছিল কিনা বোঝা গেল না। কেউ বল চাইতেও আসেনি।
জানলার ভাঙা কাচ সারানো হয়নি এখনও। মিস্তিরি খুঁজে পাওয়া তো সহজ নয়।
একটু বাদে আকাশে বাজ ডেকে বৃষ্টি নামল। খুব জোর বৃষ্টি। অন্য সব জানলা বন্ধ করা গেলেও ভাঙা জানলা দিয়ে ঢুকতে লাগল বৃষ্টির ছাঁট। আগেকার দিনের মতন কাঠের পাল্লা তো নেই। বাইরে গ্রিল, ভেতরে কাচ।
বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে গেল ঘর। এখন আবার মুছতে হবে, কাজ বেড়ে গেল। আবার ছেলেগুলো ওপর রাগটা ফিরে এল বাবার। একটু সাবধান হয়ে খেলতে পারে না? অন্তত একবার ওদের এসে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।
হঠাৎ বাবা দেখতে পেলেন, ঘরের এক কোণে রয়েছে সেই বলটা। ঠিক কাল যে জায়গায় ছিল।
এখানে বলটা এল কী করে? নিপুর ঘরের খাটের তলা থেকে কে বার করল?
মাকে জিগ্যেস করলেন।
মা বললেন, কই, আমি তো খাটের নীচে ঢুকিনি!
তবে কি রান্নার মাসি?
না, রান্নার মাসি ঘর ঝাঁট দেয় না কোনোদিন।
তাহলে কি বিক্রম বার করেছে? বিক্রমকে তো বলটার কথা বলাই হয়নি।
এটা কি আর একটা বল?
বাবা বলটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলেন। মনে তো হচ্ছে, সেই কালকের বলটাই! তবে অন্য বলও হতে পারে, সব তো একই রকম দেখতে।
বিক্রম ফিরতেই তাকে জানলার ভাঙা কাচ দেখিয়ে বলা হল সব ঘটনাটা।
বিক্রম খেলাধুলো করেছে একসময়, খুব মজবুত শরীর। সে সড়াৎ করে ঢুকে গেল নিপুর খাটের নীচে। বাক্স-টাক্স সব সরিয়ে সে দেখল ভালো করে।
বেরিয়ে এসে বললেন, না, খাটের তলায় কোনো বল নেই।
তাহলে এটাই কি সেই বলটা?
খাটের তলা থেকে নিজে নিজে বেরিয়ে চলে গেল বসবার ঘরে? তা তো আর হতে পারে না। কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়ই।
মা বললেন, বলটার বোধ হয় খাটের নীচে অন্ধকারে থাকতে ইচ্ছে করছিল না, তাই নিজে নিজেই বেরিয়ে এসে গড়িয়ে চলে গেছে ওই ঘরে।
বাবা হেসে বললেন, বলে কি প্রাণ আছে? তারা কি নিজে নিজে কিছু করতে পারে?
মা বললেন, প্রাণ না-থাকলেও তবু পারে। আমার তেলের শিশির ঢাকনাটা, কিছুতেই শিশির মাথায় থাকতে চায় না, মাঝে মাঝেই টুকুস টুকুস করে মাটিতে পড়ে গড়িয়ে যায়।
বাবা বললেন, সে তো জামায় বোতাম লাগাতে গেলে একটা-না-একটা মাটিতে পড়বেই। এসব তো হয়ই। যাক গে, বলটা তুলে রেখে দাও। ওই ছেলেদের দেখতে পেলে ফেরত দিয়ে দেবে। জানলাটাও সারিয়ে ফেলতে হবে।
নিপুর খাটের পাশেই দেয়ালের মধ্যে দুটো তাক। একটায় থাকে নানান ওষুধপত্তরের শিশি আর অন্যটায় কিছু বই। সেই বইগুলির ফাঁকেই রাখা হল বলটাকে।
লণ্ডন থেকে সেই বিশেষ ওষুধ পরের দিনও পৌঁছোল না। ডাক্তারকাকা লণ্ডনে ফোন করলেন, সেই কোম্পানি থেকে জানানো হল, তারা পাঠিয়ে দিয়েছে। কোনো কারণে দেরি হচ্ছে তবে দু-একদিনের মধ্যে নিশ্চয়ই পৌঁছে যাবে।
নিপুর অবস্থা একই রকম। নিজে নিজে বাথরুম যেতে পারে না। নিজে চামচ ধরে কিছু খেতেও পারে না। তাকে খাইয়ে দিতে হয়। বাবা অফিস চলে গেলে মা কিছুক্ষণ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই থেকে গল্প পড়ে শোনান। গল্প শুনতে শুনতে নিপু একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
দুপুরবেলা ঘুমিয়ে আছে নিপু, মা ছাদে গেছেন কাপড় মেলতে। সারাবাড়িতে যেন কোনো শব্দ নেই।
হঠাৎ একসময় মেঘ ডেকে উঠল।
তাতেই ঘুম ভেঙে গেল নিপুর। চোখ মেলে দেখল জানলা দিয়ে যতটা আকাশ দেখা যায়। সেখানে বিদ্যুৎঝলক। বৃষ্টি শুরু হয়নি, কিন্তু বেশ ফিনফিনে হাওয়া বইছে।
দুটি পাখি জানালার কাছে একটুক্ষণ ঝটপট করেই আবার উড়ে গেল।
ওপরের তাক থেকে বলটা নিজে নিজেই পড়ে গেল মাটিতে। কয়েকবার ড্রপ খেয়ে. গড়াতে লাগল সেটা।
নিপু তাকিয়ে দেখতে লাগল, বলটা কত দূর যায়।
বেশি দূর নয়। নিপুর খাটের পাশে এসেই থেমে গেল।
নিপু অমনি খাট থেকে নেমে কুড়িয়ে নিল বলটা। তারপর আবার ফিরে এল বিছানায়। বলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। একবার সে বলটা ওপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে লুফে নিল ঠিকঠাক।
ঠিক তক্ষুনি ঘরে ঢুকলেন মা।
প্রথমে তিনি বললেন, জেগে উঠেছিস? এখন হরলিক্স খাবি?
তারপরেই তিনি চোখ বড়ো বড়ো করে দারুণ অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন, তোর হাতে বল? ওটা তুই পেলি কী করে?
নিপু বলল, তাক থেকে বলটা গড়িয়ে পড়ে গেল। আমি খাট থেকে নেমে তুলে নিলাম।
মা বললেন, অ্যাঁ?
নিপুর অমনি মনে পড়ে গেল। সে তো নিজে নিজে খাট থেকে নামতে পারে না। তবু সে নামল কী করে? বলটা তুলে নিতেও কোনো কষ্ট হয়নি।
এটা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত কাঁপতে লাগল। বলটা আর ধরে রাখতে পারল না। পড়ে গেল নীচে কিন্তু খাটের তলায় ঢুকে গেল না।
মা এতই অবাক হয়ে গেলেন যে, তাঁর মুখ দিয়ে আর কথা বেরুচ্ছে না।
নিপুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এল। সে ঘুমিয়ে পড়ল একটু পরেই।
আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল বটে, বৃষ্টি কিন্তু হল না। একটু বাদেই বাজের শব্দটব্দও থেমে গেল।
বিকেলের একটু আগেই বাড়ি ফিরে এল বিক্রম।
মা তাকে ফিসফিস করে দুপুরের ব্যাপারটা বলতেই সে একটুক্ষণ চুপ করে রইল।
তারপর বলল, নিপু নিজে নিজে খাট থেকে নেমেছিল? এই বলটা কি ম্যাজিকের বল নাকি? দেখতে হচ্ছে তো!
নিপুর ঘরে এসে সে দেখল, বলটা তখনও মেঝেতে পড়ে আছে।
সে বলটা তুলে নিয়ে বলল, এমনিতে তো মনে হয় সাধারণ একটা বল। যেমন সব ক্রিকেটের বল হয়।
সে বলটা আবার রেখে দিল ওপরের তাকে।
সঙ্গে সঙ্গে বলটা আবার গড়িয়ে এসে পড়ে গেল মেঝেতে।
বিক্রম বলল, বেশ মজার ব্যাপার তো!
সে বলটা তুলে মাটিতে ড্রপ খাওয়াতে লাগল।
এর মধ্যে নিপু আবার চোখ মেলে তাকিয়েছে।
সে বলল, কাকু, আমার ব্যাটটা কোথায়? তুমি একটু বল করবে, আমি ব্যাটিং প্রাকটিস করব?
বিক্রম একথা শুনে ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলেও মুখে সে ভাব দেখাল না। সে বলল, হ্যাঁ। তুই খাট থেকে নেমে পড়!
আবার নিপু খুব সহজেই খাট থেকে নেমে দাঁড়াল।
মা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, ও কী, ও কী, না না না? পড়ে যাবে, পড়ে যাবে।
বিক্রম বলল, বউদি, দেখোই না কী হয়!
তারপর সে নিপুকে বলল, হাঁটতে পারবি তো। চল আমার সঙ্গে।
মা নিপুর হাত ধরতে গেলে সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দিব্যি হেঁটে গেল বিক্রমের সঙ্গে।
বাড়ির ঠিক সামনেই খানিকটা ফাঁকা জায়গা। রাস্তা হিসেবে সবাই ব্যবহার করে।
বিক্রম নিপুর হাতে একটা ব্যাট ধরিয়ে দিয়ে বলল, তুই এখানে দাঁড়া, আমি দূর থেকে বল করছি।
প্রথমে ব্যাটটা ধরতে গিয়ে নিপুর হাত কাঁপতে লাগল।
বিক্রম বলল, উঁহু, ওরকমভাবে ধরলে তো হবে না। শক্ত করে ব্যাট ধরতে হবে।
নিপুর কপালে একটু একটু ঘাম ফুটেছে. তবু সে বলল, হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে।
বিক্রম বলটা লুফতে লুফতে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলল, রেডি?
নিপু বলল, হ্যাঁ, রেডি।
প্রথম বলটা নিপু লাগাতে পারল বটে, তবে খুব আস্তে।
এখন মায়ের দু-চোখ জলে ভরতি। যে ছেলে দারুণ অসুস্থ, কোনো ওষুধ কাজে লাগছে না, নিজে দাঁড়াতেই পারে না, সে খেলছে ক্রিকেট? এত আনন্দে তো চোখে জল আসবেই।
তিনি বাবাকে অফিসে ফোন করলেন, শিগগিরই বাড়িতে চলে আসার জন্য।
নিপু প্রত্যেকটা বল ঠিকঠাক মারছে। আগে সে বিক্রমের বলে বারবার এল বি ডবলু হত, এখন একবারও না।
একবার সে এত জোরে ব্যাট হাঁকাল যে বলটা উঠে গেল অনেক ওপরে, বিক্রম দৌড়োতে লাগল ক্যাচ ধরার জন্য।
ঠিক তখনই একটা গাড়ি এসে থামল একটু দূরে? তার থেকে নেমে দাঁড়ালেন ডাক্তারকাকু। বিলিতি ওষুধটা একটু আগেই এসে পৌঁচেছে, তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছেন।
নিপুর অত জোরে ব্যাট চালানো দেখে তিনি হাততালি দিয়ে উঠলেন। ওই ওষুধ আর কাজে লাগবে না।
ক্যাচটা ধরতে পারল না বিক্রম। বলটা যে কোথায় গেল, তা আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
যাক, পরে ভালো করে খুঁজে দেখলেই চলবে।