একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

বোকা আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। বলল, ছিরুদা যে গো! কখন এলে? বললাম, রাত্তিরে। তুমি কেমন আছ, বোকা? খুব ভালও না, খুব খারাপও না। বলে বোকা এসে বারান্দার ধারে পা ঝুলিয়ে বসল।

ওর মধ্যে একটা রূপান্তর চোখে পড়ল এবার। দু’বছর আগেও গ্রামে এসে ওকে হাসিখুশি দেখেছি ছোটবেলার মতোই। এখন দেখছিলাম পোড়খাওয়া চেহারা, বসা চোখ, ঠেলেওঠা চোয়াল আর নাক। ওর পরনে আঁটোসাঁটো ছাইরঙা প্যান্ট, নীলচে হাতকাটা গেঞ্জি, পায়ে রবারের দু’ফিতের স্যাণ্ডেল। তা ছাড়া ওর চোখের চাউনিতে শীতলতা, পাতা পড়ে না। কণ্ঠস্বরও মৃদু। ওর হাতে একটা গামছা, সেটা ছোট্ট পুঁটুলির মতো জড়ানো। জিগ্যেস করলাম, অসুখ হয়েছিল নাকি!

বোকা আস্তে মাথাটা নাড়ল।

গামছায় কী?

পিস্তল।

অন্তত আধমিনিট লেগে গেল শব্দটা বুঝতে। তারপর হেসে ফেললাম। ‘পিস্তল’ নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে এখন?

টার্গেট প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছি।

আরও হেসে বললাম, কোথায় টার্গেট প্র্যাকটিস করবে?

বোকা ঘুরে পেছনদিকের ছোট্ট পানাপুকুরটা দেখিয়ে বলল, ঘাটের মাথায় ডুমুর গাছটা দেখছ, ওখানে।

আমাদের বাড়ির এদিকটায় মাঠ। এই চৈত্রে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের দরুন চোখে আঠার মতো মেখে যায় বিশাল একটা সবুজরঙের কোমলতা। বারান্দার উত্তরে পানাপুকুরের দিকটা সবসময় নিঝুম নিরিবিলি হয়ে থাকে। পুকুরের তলায় ঠেকেছে জলটা। তাই ঘাটটাও স্মৃতিচিহ্নে পরিণত। তার মাথায় ওই ডুমুরগাছ, বয়সে ঠাকুর্দারও ঠাকুর্দার মতো প্রাচীন এবং যথেষ্ট স্থিতপ্রজ্ঞ তার চেহারা। ঠাকুর্দা ছিলেন রেলের চাকুরে। ছুটিতে এসে এই বারান্দায় বসে বলতেন—এখানটাতেই যত শান্তি। ঘাটে বসে থাকোমণি বেওয়া, সম্ভ্রান্ত ঘরের যুবতী ছিলেন তিনি, একটা ছোট্ট। পেতলের ঘটি মাজতে সকালকে দুপুর এবং দুপুরকে বিকেল করে ছাড়তেন এবং আমাকে দেখামাত্র ঠাকুর্দা চোখ পাকিয়ে বলতেন, খেল গে যাও! সুতরাং আজও এই ডুমুরগাছটার দিকে তাকালে হাস্যমুখী থাকোমণির দর্শন পাই, যিনি ঠাকুর্দার শান্তি।

বোকার কথাগুলোকে বারকতক টিপে-টুপে পরীক্ষা করে দেখে আবার হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকলাম। তখন বোকা আলতো হাতে গামছার মোচড় ফাঁক করল। তারপর সত্যিসত্যি বেরিয়ে পড়ল অবিশ্বাস্য একটা পিস্তল। আমার হাসি থেমে গেল। বোকা পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে বলল, ওমাসে মাসির বাড়ি গিয়েছিলাম। পদ্মার বর্ডারে। তেরশো টাকায় কিনে এনেছি। বর্ডার এরিয়াতে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে।

বলো কী!

বোকা একটু হাসল। গাঁসুদ্ধু শত্রু। বাঁচতে তো হবে।

হিম হয়ে বললাম, কেন? কী করেছ তুমি?

কিছু শোননি? বোকা একটু চুপ করে থেকে ফের বলল, গতবছর বাবাকে নদীর ধারে বোম মেরে মারল। মাসতিনেক আগে দাদাকে স্ট্যাব করে মারল। এবার টার্গেট আমি। ব্যাঙামিত্তির বলেছে, পোদো ঘোষের বংশ ফিনিশ করবে। মিত্তিরদের সঙ্গে ঘোষেদের বিবাদের কথা আবছা শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে। গ্রামে তো এসব ব্যাপার ঘটেই থাকে। কখনও ওনিয়ে মাথা ঘামাইনি। কিন্তু বোকার বাবা ও দাদাকে খুন করা হয়েছে এবং বোকার হাতে পিস্তল—উদ্বিগ্ন হয়ে বললুম, বিবাদটা কী নিয়ে?

বোকা বলল, জানি না। বাবা জানত হয়তো।

নিশ্চয় জমিজমা নিয়ে?

বোকা মাথা নাড়ল। নাঃ! তাহলে তো আমি জানতে পারতাম। বলে সে কিছুক্ষণ পিস্তলটার নক্সাকাটা বাঁট থেকে ময়লা খুঁটে ফেলার চেষ্টা করতে থাকল। তারপর মুখ তুলে একটু হাসল। …প্রথমে ঠিক করেছিলাম রিভলবার কিনব। কিন্তু ভেবে দেখলাম রিভলবারে মোটে ছ’টা গুলি থাকে। তাতে ছ’জনকে ফিনিশ করতে পারব। কিন্তু লোক তো আরও বেশি। পিস্তলে আঠারোটা পর্যন্ত গুলি থাকে। পঁচিশ ফুট থেকেও গুলি ছোঁড়া যায়। একবার ট্রিগার টানছ, গুলি বেরিয়ে যাচ্ছে, আবার একটা গুলি এসে জায়গামতো বসছে। কত সুবিধে তাহলে দ্যাখো ছিরুদা!

পিস্তলটা দেখে আমার ভীষণ লোভ হচ্ছিল। গা শিরশির করছিল উত্তেজনায়। জীবনে এই প্রথম হাতের নাগালে একটা সত্যিকার পিস্তল দেখছি। ইচ্ছে করলে ওটা হাতে নিতেও পারি। হাতে নিলেই যেন বা এই সসাগরা ধরিত্রী আমার পদানত হবে। আসলে ক্ষমতার উৎস তো এইরকম ইস্পাতের নলে। যদিও এই নলটা খুব ছোট, আমার মতো মানুষের পক্ষে একটা ছোট্ট পৃথিবীর শাসন ক্ষমতাই যথেষ্ট। আমার চোখে নিশ্চয়ই প্রচুর বিহ্বলতা এসে গিয়েছিল। কই, গুলি দেখি। বলে চেয়ার থেকে একটু ঝুঁকে গেলাম।

বোকা বলল, দেখাচ্ছি। প্যান্টের পকেটে ঢোকানো যায় না। তাই গামছায় জড়িয়ে রাখি। তবে গুলি পকেটে রাখা যায়। এই দ্যাখো। সে পা টানটান করে পকেট থেকে একটা গুলি বের করে দেখাল। খুদে রকেটের মাথার মতো ছুঁচলো গড়নের গুলি। বোকা আমার হাতে তুলে দিচ্ছিল। নিলাম না। বললাম, থাক।

বোকা গুলি পকেটে ঢুকিয়ে বলল, পরশু মাঠে বোরোধানে জল খাওয়াচ্ছিলাম। তখন ওরা বোম নিয়ে তাড়া করেছিল। পিস্তলটা এখনও তত প্র্যাকটিস হয়নি। তাই রিস্ক না নিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম। তুমি এখন কয়েক দিন আছ তো ছিরুদা?

না কালই যেতে হবে।

বোকা উঠে দাঁড়াল। …থাকলে দেখতে পেতে। শিগগির একটা কিছু হয়ে যাবে এস্পার-ওস্পার। বলে সে হাল্কা পায়ে পুকুরপাড়ে গিয়ে উঠল। কালকাসুন্দে আর নিশিন্দাঝোপের ভেতর দিয়ে ওপাশে তাকে ডুমুরতলার ঘাটের দিকে যেতে দেখছিলাম।

উৎকণ্ঠা আর আগ্রহে তাকিয়ে রইলাম। বোকা ডুমুর গাছটার তলায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। তার হাতে একটা সত্যিকার পিস্তল, অথচ আমার সামনে সিগারেট টানেনি—একথা ভেবে আমার খুব ভাল লাগল ওকে। বোকা, তুমি জিতে যাও। ওদের ফিনিশ করে তুমি বেঁচে থাকো। মনে মনে ক্রমাগত ওকে বলতে থাকলাম। একটুতেই পেন্টুল খসে পড়া, নাকে ছিকনিঝরা, তুলতুলে পুতুলের মতো ঘোষ বাড়ির সেই ছেলেটা, যে সবসময় খিটখিট করে হাসত, ঘুমিয়ে থাকলে আমার চুল টেনে দিয়ে পালাত, এই ঘাসজমিটায়—আমাদের এই বিপর্যস্ত বাগানে কত বিকেলে তাকে ডিগবাজি খেতে দেখেছি, একটা ছাগলছানার মতো! ঘোষগিন্নি চেরা গলায় হাঁক দিতেন, অনিল রে, ও অনিল! ছেলেটা এসে লুটিয়ে পড়ত ঠাকুর্দার এই শান্তির ঘরে এবং ফিসফিসিয়ে বলত, বোলো না যেন ছিরুদা! মা মারবে!

সেই ছেলেটা পিস্তল নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে চায় নেহাতই বেঁচেবর্তে থাকার জন্য। আমার কষ্ট হচ্ছিল। বোকা, তুমি গুলি চালাও, আমি দেখি। ওই ডুমুরগাছটা হোক তোমার শত্রুর প্রতীক। তুমি ওকে এফোঁড় ওফোঁড় করে ফ্যালো। ঝাঁঝরা করে দাও ওকে!

গাছেরা বুঝি সব বোঝে। মনে হল, স্থিতপ্রজ্ঞ বৃদ্ধ ডুমুর মিটিমিটি হাসছে। আয় বাপ, বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছি। হাত প্র্যাকটিস করে নে যত খুশি।

ডুমুরগাছটাকেও আমার খুব ভাল লেগে গেল। সে বোকাকে বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য তৈরি। গ্রামীণ বৃক্ষদের এই স্বভাব। ছায়া দেয়। ফল দেয়। সারাদিন অক্সিজেন দেয়। বুক পেতে টার্গেট হয়। নাও বোকা, এবার গুলি ছোঁড়ো, আমি দেখি।

বোকা গাছটার দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানছে তো টানছেই। আমি অস্থির। একটু পরে হঠাৎ দেখি, বোকা হনহন করে এগিয়ে নিশিন্দাজঙ্গলে ঢুকল। তারপর আর তাকে দেখতে পেলাম না। তারপরই দাদা এসে গেল। ব্যস্তভাবে চাপা গলায় বলে উঠল, অ্যাই ছিরু! ভেতরে এসে বস্। শিগগির! আঃ, চলে আয় না!

দাদা আমাকে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে এদিকের দরজা বন্ধ করে দিল। ফিসফিস করে বলল, পুলিশ ডেকে এনেছে ব্যাঙাদা। বোকা ডুমুরতলায় রোজ পিস্তলের গুলি ছোড়ে। বুঝলি না? হাত প্র্যাকটিস। তাই তাহের দারোগাকে নিয়ে এসেছে। ওই দ্যাখ! জানালা দিয়ে দেখলাম, একদল পুলিশ এসে ডুমুরতলায় দাঁড়াল। কিছু ভিড়ও জমছে। ব্যাঙা মিত্তির ডুমুরগাছটা দেখিয়ে কিছু বলছে। তারপর দেখলাম, দারোগাসায়েব গাছটার দিকে ঝুঁকে গেলেন। আঙুল দিয়ে গুঁড়িতে সম্ভবত গুলির দাগগুলো ঠাহর করতে থাকলেন। বুঝলুম, রীতিমত একটা তদন্ত হবেই।

দাদা এবার জানলাটাও বন্ধ করে দিল। ভয়পাওয়া গলায় বলল, এ ঘরে থাকিসনে। ভেতরে চলে আয়। আমরা বাবা গ্রামের সাতে-পাঁচে থাকি না। তাহের দারোগা জিগ্যেস করলে বলব, গুলি-ফুলির শব্দ-টব্দ আমরা শুনিনি।

বিকেলে আবার ঠাকুর্দার সেই শান্তিস্থলে চেয়ার পেতে বসে আছি, রাম মোহান্তর মেয়ে ঠুমরি এসে হাজির। আমার ছেলেবেলায় মোহান্ত কাঁধে খোল ঝুলিয়ে রোজ ভোরবেলা গাঁ চক্কর দিত। এতটুকু ফ্ৰকপরা মেয়েটা বাজাত খঞ্জুনি। বাবা-মেয়ের গানের কলি এখনও খঞ্জুনির হৃদয়ভেদী ধ্বনিসমেত। সেই ঠুমরি। কানের ভেতর সেঁটে আছে খোলের আর খঞ্জুনির ধ্বনি। বললাম, ঠুমরি, তুমি কেমন আছ?

ঠুমরি আমার কথায় কানই করল না। চঞ্চল চাউনিতে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে আনমনে বলল, বোকাদাকে দেখেছ গো ছিরুদা?

না তো! কেন?

ঠুমরি বলল, ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। ভীষণ দরকার। বাড়িতেও পাচ্ছি না। ভাবলাম, ডুমুরতলায় আছে নাকি। সত্যি দ্যাখোনি ওকে ছিরুদা?

ঠুমরি চলে গেলে বউদি এল গল্প করতে। হাতে দু’কাপ চা। ধরিয়ে দিয়ে বলল, ঠুমরির গলা শুনলাম যেন। কই সে?

চলে গেল। বোকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

বউদি চটুল হাসল। অ্যাদ্দিন এলে ডুমুরতলায় দু’জনের যুগলমিলন দেখতে পেতে। আজকাল তো লাজ-লজ্জার বালাই নেই মানুষের। বউদি গলা চেপে বলল ফের, প্রকাশ্যে ডুমুরতলায় ওরা যা করে, দেখলে ভাবতে, কোথায় লাগে সিনেমার সিন! আমরা ঘরে বসেই দুবেলা সিনেমা দেখেছি, বুঝলে তো ঠাকুরপো?

বুঝলাম। কিন্তু বোকা তো বরাবর গোবেচারা ছেলে ছিল।

বউদি চোখ পাকিয়ে বলল, থামো! নামে বোকা, ভেতরে যা আছে তা আছে।

আছেটা কী শুনি?

বউদি গম্ভীর হয়ে বলল, বোকা ভীষণ ডেঞ্জারাস ছেলে। হাসিমুখে মানুষ খুন করতে পারে, জানো?

করেছে কি?

করেনি, এবার করবে। হাতে পিস্তল পেয়েছে। প্র্যাকটিস করছে রোজ। বলে বউদি বালিকার মতো চঞ্চল পায়ে শূন্য বাগানের ঘাসে টহল দিতে গেল এবং হাতে চায়ের কাপ। আর মেয়েরা এমন যে যেখানে হাঁটে, চারপাশে জেগে ওঠে ফুলের বন। প্রজাপতি ওড়ে। কোকিল-টোকিলও খুব চ্যাঁচায়। এসবের ফলে বোকা, তার পিস্তল ও ডুমুরগাছটাকে ভুলে গেলাম সে-বেলার মতো।

সে রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে। ধুড়মুড় করে উঠে বসলাম।। কোথাও মুহুর্মুহু বোমা ফাটছে এবং আবছা হল্লার শব্দ। বাইরে দাদার হুঁশিয়ারি শোনা গেল, বেরুসনে ছিরু। রোজ রাতে এইরকম। চুপচাপ শুয়ে থাক। আমরা কারুর পাঁচ-সাতে নেই!

বিস্ফোরণের শব্দ ক্রমশ থেমে এল। তারপরও কুকুরগুলো কতক্ষণ ধরে ডাকল। শেষদিকে শুধু একটা কুকুর ডাকতে ডাকতে গলা ভেঙে ফেলল। তার ডাকে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু জবাব দেবার কেউ নেই।

সকালে শুনলাম বোকাদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। বোকাকে ‘ফিনিশ’ করেছে। গাঁয়ে পুলিশের ক্যাম্প বসছে। তাহেরদারোগা ব্যাঙা মিত্তিরকে নিয়ে গেছেন। দাদার মতে, ওবেলা তাঁকে রেখে যাবেন দারোগাসায়েব। কেস লেখা হবে ডাকাতির।

বোকার পিস্তল বোকাকে বাঁচাতে পারেনি। পরপর আঠারোটা গুলি ছোঁড়া যায়, তবুও। অবাক হয়ে বারান্দার সেই অংশটুকু দেখছিলাম, যেখানে কালই সকালে বোকা বসেছিল। তারপর মুখ তুলে দেখলাম পানাপুকুরের ঘাটের মাথায় ডুমুরগাছটাকে। সেই স্থিতপ্রজ্ঞ বৃদ্ধ বৃক্ষ নির্বিকার! বুড়ো, তুমি ব্যর্থ হয়েছ! বুক পেতে দিয়েছিলে, তবু কাজে লাগল না। আসলে দিনকাল খারাপ। তুমি কী করবে বলো?

গাছটাকে কাছ থেকে দেখতে গেলাম। গিয়েই দেখতে পেলাম ঠুমরিকে। থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। লাল চোখ, ফুলো-ফুলো গাল, মেয়েটা তাকিয়ে আছে গাছটার দিকে। ক্রুদ্ধ প্রফেট যিশু ডুমুরগাছকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, তুমি বন্ধ্যা হও।

রামলোচন মোহান্তের মেয়ে তাকে অভিশাপ দিল, তুমি মরো! তুমি মরো! তুমি মরো! তারপর দু’হাতে মুখ ঢেকে হিঁপিয়ে হিঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। ডুমুরগাছটা কি শিউরে উঠল? একটা হাওয়া এল মাঠ থেকে। একটা কাঠবেড়ালি পড়ি-কী-মরি করে গাছটা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে গেল। আর্তনাদ করে উঠল এক মাছরাঙ্গা পাখি। আর দেখলাম গুঁড়ির ওপর অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন চোখ হয়ে যাচ্ছে—অসংখ্য ভিজে চোখ দিয়ে বৃদ্ধ বৃক্ষ মোহান্তের মেয়েকে দেখছে। বৃক্ষেরা এত অসহায়!

তক্ষুনি সরে এলাম। কান্নাটান্না আমার একেবারে সয় না।

২১.০৪.১৯৮৫

লেখক পরিচিতি

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ : ১৪ অক্টোবর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে জন্ম। ১৯৫০-৫৬ পর্যন্ত আলকাপের দলের সঙ্গে ঘুরেছেন। ষাটের দশকের গোড়াতে সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ। সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘অলীক মানুষ’। ১৯৭৯ সালে আনন্দ পুরস্কার। ১৯৯৪ সালে বঙ্কিম পুরস্কার, একই বছরে অকাদেমি পুরস্কার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *