একটা ঘুঁটি কম ছিল
চন্দ্রাণীকে খুন করার জন্য দেবপ্রিয় যে-ছক তৈরি করেছিল তাতে কোনও ভুল ছিল না। ছকটাকে নানাদিক থেকে বারবার খতিয়ে দেখে দেবপ্রিয়র অন্তত সেইরকমই মনে হয়েছিল।
সবাই জানে, কোনও বিবাহিতা মহিলা খুন হলে পুলিশ সবার আগে তাঁর স্বামীকে সন্দেহ করে। দেবপ্রিয়ও একথা জানত। সেইজন্যই ও বারবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছকটাকে যাচাই করছিল।
ব্যাপারটা অনেকটা স্লো মোশানে অ্যাকশন রিপ্লে দেখার মতো।
প্রায় মাসখানেক ধরে খুনের ছকটায় খুঁটি চালাচালি করে দেবপ্রিয় যেদিন নিশ্চিত হল যে,, ছকটায় কোনও গোলমাল নেই, সেদিন ফুর্তিতে ও তিন পেগ হুইস্কি চড়িয়ে বাড়ি ফিরল। চন্দ্রাণীকে ও আর ভয় পায় না।
ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে পাখির ডাকের কলিং বেল টিপতেই ম্যাজিক আই-এ চোখ রাখল চন্দ্রাণী। তারপর দরজা খুলল।
এবং মদের গন্ধ পেল।
আজ আবার এসব গিলে এসেছ। চাপা গলায় হিসহিস করে বলল চন্দ্রাণী। ও চায় না ঘরের অন্তর্বাস চৌরাস্তার মোড়ে কাঁচা হোক, তাই গলার স্বর তিরিশ ডেসিবেলের ওপরে উঠল না।
তেমন কিছু খাইনি। জড়ানো গলায় বিড়বিড় করে জবাব দিল দিবপ্রিয়, ওরা জোর করে খাইয়ে দিল…।
ওরা কারা দেবপ্রিয় জানে না। জানার দরকার নেই।
ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে চন্দ্রাণীর গীতাপাঠ শুরু হল; ভদ্রসমাজে বাস করতে হলে সামাজিক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়; আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা ইত্যাদি বোধ থাকা দরকার; সম্মান গেলে কখনও আর ফিরে আসে না; ডিসিপ্লিন একটা সুখী সংসারের চাবিকাঠি।
গীতাপাঠ চলছিল, আর দেবপ্রিয় এক অদ্ভুত চোখে বউকে দেখছিল। মনে-মনে বেশ মজা পাচ্ছিল ও। চন্দ্রাণী জানে না, ওর শেষ ঘণ্টা বেজে গেছে। আর কদিন পর যখন ও নেই হয়ে যাবে, তখন বেনিয়ম করলে দেবপ্রিয়কে এরকম জ্ঞান দেবে কে!
আক্ষেপের চুক-চুক শব্দ বেরিয়ে এল দেবপ্রিয়র মুখ থেকে। ও বলল, সরি, চন্দ্রা….আর হবে না। প্লিজ, ফরগিভ অ্যান্ড ফরগেট।
দেবপ্রিয় অন্যদিন এত সহজে বশ মানে না। আজ মানল, কারণ, আজ একটু আগেই ও চন্দ্রাণীর কপালে মনে-মনে কাটা চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। এখন থেকে ও চন্দ্রাণীর সব কথা শুনবে, পদে-পদে ওর কাছে হার মানবে। আর তো মাত্র কটা দিন!
চন্দ্রাণীর বাবা রিটায়ার্ড বিচারপতি। আর মা কলেজের প্রফেসর। চন্দ্রাণী ওঁদের একমাত্র মেয়ে।
বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে মেলামেশা করে দেবপ্রিয় যা বোঝার বুঝেছে। ওর মনে হয়েছে, চন্দ্রাণীর বাবার ডাকনাম ডিসিপ্লিন, আর মায়ের ডাকনাম আত্মসম্মান। এই দুটি মহান মানুষের মিলনে জ্ঞান লগ্নে অহংকার রাশিতে চন্দ্রাণীর জন্ম। ওর ডাকনাম চানু, কিন্তু দেবপ্রিয়র মনে হয়েছে ডাকনামটা গীতা হলেই ভালো মানাত।
প্রেম গীতা-টিতা মানে না। তাই দেবপ্রিয়র সঙ্গে চন্দ্রাণীর প্রেম হয়েছিল। বিয়েও।
তার পাঁচ বছর পর আবার প্রেম এল। শরীরী প্রেম।
মেয়েটির নাম ললনা। দেবপ্রিয়দের অফিসে সিস্টেম অ্যানালিস্ট-এর কাজ করে। দেখতে রীতিমতো কুৎসিত। কিন্তু ওর অন্য লুকোনো গুণ আছে। যে-গুণ মরা মানুষের শরীরেও শ্মশানের লকলকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ললনার কোনও ডাকনাম নেই। তাই দেবপ্রিয় ওর ডাকনাম রেখেছিল কামনা। ডাকনামটা কামনার বদলে বাসনা অথবা বিছানা হলেও কোনও ক্ষতি ছিল না।
অনেকে হয়তো ভাববে কামনাকে বিয়ে করার জন্যই চন্দ্রাণীকে দেবপ্রিয় খুন করতে চাইছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই সেরকম নয়। কারণ, কামনাকে বিয়ের ব্যাপারে দেবপ্রিয়র কোনও মাথাব্যথা নেই। তা ছাড়া কামনার ইন্টারেস্ট শুধু ইয়েতে বিয়েতে নয়। ও কারও আন্ডারে থাকতে ভালোবাসে না। যেমন দেবপ্রিয় চন্দ্রাণীর আন্ডারে রয়েছে।
যখন ওরা আদরে-আদরে ব্যস্ত থাকে তখন এই আন্ডারে থাকা নিয়ে দেবপ্রিয়কে মাঝে-মাঝে খোঁচা দেয় কামনা। সেইসঙ্গে খিলখিল হাসি এবং মারাত্মক শরীর ঝাঁকুনি–যা একমাত্র ও-ই পারে। তখন দেবপ্রিয় সুখে পাগলের মতো হয়ে যায়।
এখন তুমি আমার আন্ডারে আছ। শব্দ করে হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে এলোচুল সরিয়ে দেয় কামনা। তারপর ও কাল রাতে আমি তোমার আন্ডারে ছিলাম। খিলখিল হাসি ও এইরকম আন্ডারে থাকতে ভালো লাগে। তবে তুমি যেভাবে তোমার বউয়ের আন্ডারে দিন কাটাও সেরকম নয়। আমার কাছে লাইফের মানে হচ্ছে ফ্রিডম…।
এইরকম একটা অবস্থায়, অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে কামনার কথা শুনতে-শুনতে হঠাৎই আন্ডারওয়ার্ল্ড শব্দটা দেবপ্রিয়র মাথায় আসে। এবং মনে হয়, চন্দ্রাণীকে খুন করলে কেমন হয়!
আশ্চর্য! এ-কথা ভাবামাত্রই ওর শরীর উত্তেজনায় ফেটে পড়তে চাইল। লোহা হার মেনে গেল ওর শরীরের দৃঢ়তার কাছে।
কামনা সেটা টের পেল। টের পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ওর কাজে মন দিল।
দেবপ্রিয় যখন পিছন ফিরে ভাবে তখন ও বেশ বুঝতে পারে সেই বিশেষ মুহূর্তেই চন্দ্রাণীকে খতম করার মতলবটা প্রথম ওর মাথায় জন্ম নিয়েছিল।
তারপর থেকে দেবপ্রিয় ধীরে-ধীরে টাকা জমাতে শুরু করে। কারণ, আন্ডারওয়ার্ল্ডের যে পেশাদারি খুনিকে ও চন্দ্রাণীর দায়িত্ব দেবে তাকে টাকা দিতে হবে। এখন এসব কাজের যা বাজারদর তাতে হাজার পঞ্চাশেক হলেই কাজ হয়ে যাবে।
এই ধরনের খুনের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বামীকে সন্দেহ করে প্রথমেই খোঁজ করবে সম্প্রতি স্বামীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা তোলা হয়েছে কি না। সেইজন্যই দেবপ্রিয় প্রতি মাসে অল্প অল্প করে টাকা তুলে নিজের কাছে ক্যাশ টাকা জমাতে লাগল। যেদিন ওর লুকোনো ক্যাশ টাকার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজারে পৌঁছোবে সেদিন ও ছকের নতুন ধাপে পা দেবে।
টাকাটা জমাতে আট মাস সময় লাগল। তারপর দেবপ্রিয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রফেশনাল কিলারের খোঁজ করতে শুরু করল।
পাড়া থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে প্রোমোটার সেজে জমির খোঁজে নেমে পড়ল দেবপ্রিয়। মাসখানেক ঘোরাঘুরি করতেই একজন পেশাদার খুনির খোঁজ পেয়ে গেল ও।
লোকটার নাম স্টেন মদন। কালো, রোগা দড়ি পাকানো চেহারা। বাঁ-চোখটা সামান্য ট্যারা। বয়েস বড়জোর পঁয়তিরিশ। তবে ওর কারিকুলাম ভিটা দেখবার মতো। পাঁচটা খুন, তিনটে ধর্ষণ, আটবার ডাকাতি, এ ছাড়া গুলি-গোলা বোমাবাজি তো আছেই! এ-পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট সাত বছর জেল খেটেছে।
মদনের গলায় সোনার চেন, গায়ে সিল্কের পাঞ্জাবি, পায়ে জিনস, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, হাতে সোনার ব্যান্ড লাগানো ঘড়ি। ছিটেবেড়া আর টিনের চাল লাগানো একটা মিষ্টির দোকানের বেঞ্চিতে বসে টেপ-রেকর্ডারে গান শুনছিল আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিল।
দেবপ্রিয় চুল উশকোখুশকো করে চোখে রে-বান-এর সানগ্লাস লাগিয়ে মদনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। একমিনিটের মধ্যেই ওর কাজের কথা শেষ হয়ে গেল।
দরাদরির মধ্যে না-গিয়ে ও প্রথমেই মদনকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অফার করে বসল। তারপর চন্দ্রাণীর একটা রঙিন ফটো ওকে দিল। সঙ্গে টাইপ করা ঠিকানা।
নোংরা বালবের আলোয় মদন ফটোটা তেরছা চোখে দেখল। গ্লাসে একটা জোরালো চুমুক মেরে বলল, কোনও টেনশন নেই–মাল নেমে যাবে।
দেবপ্রিয় গলাটা অন্যরকম করে বলল, এই মেয়েটি ফ্ল্যাটে একাই থাকবে। তবে কলিং বেল বাজালেই আপনাকে দরজা খুলে দেবে না। তখন আমার লেখা একটা চিরকুট আপনি দরজার নীচ দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেবেন। ওটা পড়লেই ও দরজা খুলে দেবে। তারপর ফ্ল্যাটে ঢুকে….।
কথা শেষ না করে মদনকে তিরিশ হাজার টাকা দিয়ে দিল দেবপ্রিয় লাল রঙের তিরিশটা নোট। তারপর স্টেন মদনের মোবাইল নাম্বার নিয়ে চলে এল। বলল, ওর সঙ্গে মদনের আর দেখা হবে না। বাকি আলোচনা ও ফোনে করবে।
মদনকে দেবপ্রিয় নিজের নাম বলেনি। ওদের আলাপ-পরিচয় যত কম হয় ততই ভালো। তাতে ধরা পড়ার ভয় কম। খুনের দিন সকালে মদন ওর নাম জানতে পারবে–তার আগে নয়।
কিন্তু আপনি ফোন করলে বুঝব কেমন করে? মদন জানতে চাইল।
আমি ফোন করে প্রথমেই বলব, চন্দ্রাণী বলছি। তাতে আপনি বুঝে নেবেন। আর কবে, কখন কাজটা সারতে হবে সেটা আমি কাজের দিন সকালে আপনাকে জানাব। এসবই সেফটির জন্যে। বাকি কুড়ি হাজার টাকাও আপনি সেদিনই পেয়ে যাবেন–তবে কীভাবে পাবেন সেটা এখনই বলছি না।
মদন হাসল। বলল, ডিউ বিশ হাজার টাকা নিয়ে কোনও পরেনি আমার নেই। আমার টাকা কেউ চোট করতে পারে না…তাহলে সে নিজেই চোট হয়ে খাল্লাস হয়ে যাবে।
দেবপ্রিয় কাজ সেরে বাড়ি ফিরে এল। গলা ছেড়ে হিন্দি গান গাইতে গাইতে ফ্ল্যাটে ঢুকল।
চন্দ্রাণী ওর হেঁড়ে গলার গান শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আনকাম্ফার্ড।
রাতে বিছানায় শুয়ে ক্রিকেটারদের ক্যাচ প্র্যাকটিসের মতো খুনের ছকটাকে নিয়ে অন্ধকারে লোফালুফি করতে লাগল দেবপ্রিয়। ওর ভেতরে একটা খুশির তুবড়ি জ্বলছিল।
সারা রাত ধরে খুনের ছকের প্রতিটি ধাপ খতিয়ে দেখল দেবপ্রিয়। নাঃ, কোথাও কোনও ফঁক নেই। সব খুঁটি ঠিক-ঠিক জায়গাতেই বসানো আছে।
দেবপ্রিয়র ছকের ধাপগুলো এইরকম :
১. চন্দ্রাণীকে খুন করার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
২. ধীরে-ধীরে, বেশ সময় নিয়ে, পঞ্চাশ হাজার টাকা গোপনে জমানো। টাকাটাকে ধীরেসুস্থে নানান জায়গা থেকে হাজার টাকার নোটে বদলে নেওয়া। এতে টাকা দেওয়া-নেওয়ার সুবিধে হবে।
৩. একজন ভাড়াটে খুনিকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া। সঙ্গে চন্দ্রাণীর রঙিন ফটো এবং কম্পিউটারে ছাপানো ফ্ল্যাটের ঠিকানা।
সতর্কতাঃ খুনিকে ঠিক করতে হবে বেশ দুরের কোনও এলাকা থেকে। খুনির সঙ্গে দেখা করার সময় হালকা ছদ্মবেশ–যেমন, সানগ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। খুনির সঙ্গে একবারের বেশি দেখা করা ঠিক হবে না। সব যোগাযোগ ফোনে সারতে হবে। ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা যে-কোনও একটা কম্পিউটার সেন্টার থেকে অন্যান্য বাজে ঠিকানার সঙ্গে ছাপিয়ে নিতে হবে। তাতে হাতের লেখা মিলিয়ে পুলিশ তদন্তে এগোতে পারবে না।
৪. খুনের দিনক্ষণ ঠিক করার পর তার দু-দিন কি তিনদিন আগে ঘরের রঙিন টিভিটা খারাপ করে দিতে হবে।
৫. পাড়ার এমন একটা ইলেকট্রিকের দোকানে খবর দিতে হবে, যার বেশ গাফিলতি আছে। সাতবার কি আটবার তাগাদা না-দিলে মিস্তিরি পাঠায় না।
৬. খুনের দিনটা কাজের দিন হিসাবে বেছে নেওয়া হবে–যাতে অফিস-কাছারি সব খোলা থাকে। সেদিন বেলা বারোটার সময় ভাড়াটে খুনিকে ফ্ল্যাটে আসতে বলবে।
৭. খুনি টিভি সারানোর মিস্তিরি সেজে বাড়িতে ঢুকবে। একতলায় সিঁড়ির নীচে দেবপ্রিয়দের নাম লেখা লেটার বক্সে একটা চিরকুট রাখা থাকবে। চিরকুটে চন্দ্রাণীর নামে একটা ছোট্ট চিঠি লিখবে দেবপ্রিয়। যার সারমর্ম হল, টিভি সারানোর মিস্তিরি যাচ্ছে–ওকে টিভিটা সারাতে দিয়ো। টাকাপয়সা কিছু দিয়ো না দেওয়ার আমি দিয়ে দেব। চিঠির ওপরে ইলেকট্রিকের দোকানের নাম ও মালিকের নাম লেখা থাকবে–যাতে খুনি নাম দুটো জানতে পারে, চন্দ্রাণী আচমকা জিগ্যেস করলে ঠিক ঠিক জবাব দিতে পারে।
৮. লেটার বক্স থেকে চিরকুটটা নিয়ে খুনি দেবপ্রিয়দের ফ্ল্যাটে যাবে। কাজ শেষ করে চিরকুটটা মুখে পুরে স্রেফ গিলে ফেলবে–অথবা, লেটার বক্সে রেখেই চলে যাবে। দেবপ্রিয় পরে ওটা সরিয়ে নেবে।
সতর্কতাঃ চিরকুটটা যাতে কিছুতেই পুলিশের হাতে না-পড়ে সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। ওতে দেবপ্রিয়র হাতের লেখা থাকবে। তা হলেই জানা যাবে মিস্তিরি পাঠানোর ব্যাপারটা মিথ্যে। আর খুনির সঙ্গে দেবপ্রিয়র যোগাযোগের ব্যাপারটা ধরা পড়ে যাবে।
৯. চন্দ্রাণীর খুনটা নিশ্চিত করতে বড়জোর দুটো গুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। গুলির শব্দ চাপা দেওয়ার জন্য সাইলেন্সার অথবা বালিশ কাজে লাগানো যেতে পারে। ব্যাপারটা ফোনে খুনির সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।
সাড়ে বারোটা নাগাদ খুনিকে মোবাইলে ফোন করবে দেবপ্রিয়। যখন জানবে কাজ শেষ, তখন খুনিকে বলবে মোবাইল ফোনের সিম কার্ডটা ফেলে দিয়ে নতুন একটা সিম কার্ড ভরে নিতে। তখনই ও জেনে নেবে, খুনির বাকি টাকাটা কোনও মিলম্যানের মারফত কবে কখন খুনিকে পৌঁছে দিতে হবে।
সতর্কতাঃ সিম কার্ড পালটানোর ব্যাপারটা বেশ জরুরি। দরকার হলে একাজের জন্য খুনিকে বাড়তি দু-হাজার টাকা অফার করা যেতে পারে।
১০. চন্দ্রাণীকে খুন করানোর অন্তত একমাস আগে থেকেই ললনার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে হবে। খুনের পর কমপক্ষে ছ-মাস ললনার সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলবে দেবপ্রিয়। তারপর ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
১১. চন্দ্রাণী খুন হওয়ার পর পুলিশ যথারীতি দেবপ্রিয়কে সন্দেহ করবে এবং পাগলা কুকুরের মতো খুনের মোটিভ খুঁজে বেড়াবে। সেইজন্যই দেবপ্রিয় শ্রদ্ধশান্তি চুকে যাওয়ার পর চন্দ্রাণীর স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি কোর্টের কাগজ তৈরি করে চন্দ্রাণীর মা-বাবাকে গিফ্ট করে দেবে। তাহলে পুলিশ কিছুতেই আঁচ করতে পারবে না, চন্দ্রাণীর আন্ডারে-আন্ডারে থেকে মানসিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তি থেকেই দেবপ্রিয় চন্দ্রাণীকে খুন করার ছক কষেছে। অর্থাৎ, ওরা কোনও মোটিভ খুঁজে পাবে না।
.
এগারোটা ধাপের পর আবার সুস্থ স্বাভাবিক স্বাধীন জীবন। তার মধ্যে তিনটে ধাপ ইতিমধ্যেই দেবপ্রিয় শেষ করে ফেলেছে। বাকি আর মাত্র আটটা ধাপ।
তৃপ্তিতে দেবপ্রিয়র চোখ বুজে এল। অন্ধকারে পাশবালিশটা আঁকড়ে ধরে ফিশফিশ করে দুবার ললনা বলে ডাকল। পাশবালিশ কোনও উত্তর দিল না। তবে দেবপ্রিয়র শরীরের চাপ টের পেল।
.
একটা মঙ্গলবারকে চন্দ্রাণীর অমঙ্গলের দিন বলে দেবপ্রিয় বেছে নিল।
তার আগের বৃহস্পতিবার স্টেন মদনকে ও ফোন করল। বলল, দিন এগিয়ে আসছে– তৈরি থাকতে। খুনের দিন সকাল নটায় ও মদনকে ফাইনাল সিগনাল দেবে। তারপর ওর সঙ্গে মদনের যোগাযোগ হবে বেলা সাড়ে বারোটার। তারপর আর কোনওদিন হবে না।
শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ চন্দ্রাণী কিছু কেনাকেটা করতে কাছেই সুপারমার্কেটে গিয়েছিল। সেই সুযোগে টিভির পিছনের ঢাকনা খুলে সার্কিট বোর্ডে জল ঢেলে রাখল দেবপ্রিয়।
মার্কেট থেকে ফিরে এসে রান্নাবান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল চন্দ্রাণী। দেবপ্রিয় তখন ফ্ল্যাটের গেস্টরুমে অফিসের কাগজপত্র ছড়িয়ে কাজের ভান করছে। কিছুতেই ও টিভির সুইচ অন করবে না।
দেবপ্রিয়কে মন দিয়ে কাজ করতে দেখে খুশি হল চন্দ্রাণী। রান্নার ফাঁকেই ওকে এক কাপ চা করে দিল। তারপর হাতের কাজ সেরে যেই না টিভি অন করেছে অমনি শর্ট সার্কিট, শব্দ, অন্ধকার, পোড়া গন্ধ। নিশ্চয়ই ফিউজ উড়ে গেছে।
পত্নীব্রতা স্বামীর মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল দেবপ্রিয়। ফিউজ-টিউজ পালটে সবকিছু ঠিকঠাক করল। তারপর টিভি অন করে দেখল টিভি চলছে না।
অতএব চার নম্বর ধাপ শেষ।
পরদিন দেবপ্রিয় পাড়ার বিশ্বকর্মা ইলেকট্রিক-এ খবর দিল। মালিক অনিমেষ পাত্র– দেবপ্রিয়র অনিমেষদা বললেন, চিন্তার কিছু নেই…দু-একদিনের মধ্যেই তিনি লোক পাঠাচ্ছেন।
দেবপ্রিয়র ছকের পাঁচ নম্বর ধাপ মসৃণভাবে শেষ হল।
সোমবার রাতে কাজের ছল করে প্রায় বারোটা পর্যন্ত জেগে রইল দেবপ্রিয়। অনেক মকশো করার পর একটা ছোট্ট চিঠি দাঁড় করাল ও
বিশ্বকর্মা ইলেকট্রিক
অনিমেষ পাত্র
চন্দ্রা, টিভি সারানোর মিস্তিরি যাচ্ছে। ওকে টিভিটা সারাতে দিয়ো। টাকাপয়সা কিছু দিয়ো –যা দেওয়ার আমি পরে হিসেব করে দিয়ে দেব। বাড়ি ফিরে কথা হবে। লাভ ইউ।
দেবপ্রিয়
১৮/৯/২০০১
পরদিন–অর্থাৎ, মঙ্গলবার বাজার থেকে ফেরার সময় মদনকে ফোন করে ফাইনাল সিগনাল দিল দেবপ্রিয়। তারপর বাড়িতে ঢুকে চিঠি দেখার ভান করে লেটার বক্স খুলে হাতড়াল। আর সেই ফাঁকে চিরকুটটা লেটার বক্সের মেঝেতে শুইয়ে রাখল। তারপর বাক্সের টিপতালাটা না টিপে এমনিই ঝুলিয়ে রাখল আংটার গায়ে। যাতে মদনের কোনও অসুবিধে না-হয়।
বেলা এগারোটা নাগাদ চন্দ্রাণী যখন স্নান করতে ঢুকল তখন দেবপ্রিয় তৈরি হয়ে অফিসে বেরোল।
এই কাজটা ওকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে করতে হয়েছে।
শরীরটা ভালো নেই। গা ম্যাজম্যাজ করছে। সকাল থেকে এইসব বলে সময় কাটিয়েছে। দেবপ্রিয়। এমনকী অফিসে ফোন করে বলেও দিয়েছে, আজ অফিসে যাব না। তারপর দশটা নাগাদ হঠাৎ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করেছে।
চন্দ্রাণী রোজই পৌনে এগারোটা-কি-এগারোটা নাগাদ স্নান করতে যায়। দেবপ্রিয় ঠিক করল, চন্দ্রাণী যখন বাথরুমে থাকবে তখনই ও ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরোবে। অর্থাৎ, বেরোনোর ভান করবে।
আমি বেরোলাম। বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল দেবপ্রিয়।
বাথরুমে শাওয়ারের জল পড়ার শব্দ হচ্ছিল। চন্দ্রাণী ঠিক আছে জাতীয় কিছু একটা বলল। দেবপ্রিয় ভালো করে বুঝতে পারল না।
বিশ্বকর্মা ইলেকট্রিকে একবার মিস্তিরির জন্যে তাগাদা করে যাব– দেবপ্রিয় বলল।
হুঁ…আচ্ছা। জলের শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে কথাগুলো শোনা গেল।
সঙ্গে-সঙ্গে লম্বা-লম্বা পা ফেলে ফ্ল্যাটের দরজার কাছে পৌঁছে গেল দেবপ্রিয়। নাইটল্যাচের নব ঘুরিয়ে দরজা খুলল। তারপর দরজাটা বেশ শব্দ করে ঠেলে বন্ধ করে দিল। দরজা নিজে থেকেই লক হয়ে গেল।
দেবপ্রিয় কিন্তু ফ্ল্যাটের বাইরে বেরোল না–ভেতরেই থেকে গেল।
সাবধানে পা ফেলে ও ফিরে গেল জামাকাপড়ের আলনার কাছে। চটপট অফিসের পোশাক খুলে ঘরোয়া পাজামা-পাঞ্জাবি পরে নিল। তারপর অফিসের পোশাক আর ব্রিফকেস আঁকড়ে ধরে চলে গেল গেস্টরুমে। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ল গেস্টরুমের খাটের নীচে। শরীরটাকে টেনে নিয়ে গেল দেওয়ালের গায়ে, অন্ধকার এলাকায়।
এবং রুদ্ধশ্বাসে বেলা বারোটা বাজার অপেক্ষা করতে লাগল।
এটা ছকের একটা নতুন ধাপ। দেবপ্রিয় ছকটা একটু-আধটু বদলেছে। তাতে ওর মনে হয়েছে, খুনের ব্যাপারটা আরও নিখুঁত হবে।
দেবপ্রিয় লুকিয়ে অপেক্ষা করছিল আর দাঁতে নখ কাটছিল। ওর জামাকাপড়ের আলনাটা যেরকম লন্ডভন্ড থাকে তাতে পাজামা-পাঞ্জাবির ঘাটতিটা নিশ্চয়ই চন্দ্রাণীর চোখে পড়বে না। আর পড়লেও হয়তো ভাববে ওগুলো লন্ড্রিতে দেওয়া হয়েছে।
ওর এইসব উথালপাথাল ভাবনার মধ্যেই ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল।
দেবপ্রিয়র বুকটা ধড়াস করে উঠল। তারপর ওর হৃৎপিণ্ড যেন বাজি জেতার ঘোড়দৌড় শুরু করে দিল।
ছক অনুযায়ী দেবপ্রিয়র লেখা চিরকুট দেখিয়ে স্টেন মদন ফ্ল্যাটে ঢুকল। চন্দ্রাণীকে বউদি, বউদি করে একগাল হেসে টিভির কাছে গেল। হাতের ব্রিফকেস খুলে যন্ত্রপাতি বের করতে লাগল।
টিভির পিছনের ঢাকনাটা খুলে স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে কিছুক্ষণ কীসব দেখল। চন্দ্রাণী টিভির পাশে দাঁড়িয়ে মদনের কাজ দেখছিল আর বিড়বিড় করে বলছিল, সুইচ অন করতেই ফ্ল্যাশ-ট্যাশ হয়ে একেবারে সব ফিউজ হয়ে গিয়েছিল। কে জানে এখন কত খরচ হবে…।
আপনার কোনও চিন্তা নেই, বউদি..যতটা কমে হয় করে দেব। বিজ্ঞের মতন টিভির ভেতরটা দেখতে-দেখতে মদন বলল।
তারপর হঠাৎই ওর হাত থেকে ক্রু-ড্রাইভারটা পড়ে গেল মেঝেতে।
বউদি, স্ক্রু-ড্রাইভারটা একটু তুলে দিন না…।
মদনের অনুরোধে চন্দ্রাণী ঝুঁকে পড়ল মেঝের ওপর। হাত বাড়িয়ে স্ক্রু-ড্রাইভারটা তুলতে গেল।
স্টেন মদন চট করে টিভির একদিকে চলে এল। পকেট থেকে রিভলভার বের করে টিভির অন্যদিকে ঝুঁকে-পড়া চন্দ্রাণীর মাথায় নল একেবারে ঠেকিয়ে গুলি করল।
ফট করে একটা চাপা শব্দ হল।
টিভির পিছনের দেওয়ালটা বিচ্ছিরিরকম লাল হয়ে গেল। চন্দ্রাণীর জ্ঞান, অহংকার, আর আই. কিউ. ছত্রখান হয়ে দেওয়ালে লেপটে গেল। ও টু শব্দটি করার সময় পেল না।
টিভির আড়াল থাকায় মদনের গায়ে রক্ত ছিটকে এসে লাগেনি। লাগলেও কোনও ক্ষতি ছিল না, কারণ, ওর ব্রিফকেসে একই রঙের আর-এক সেট জামা প্যান্ট ছিল। মদন পেশাদার খুনি। ও-ও নিজের মতো করে ছক কষতে জানে।
রিভলভারটা পকেটে ঢুকিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে মদন অবাক হয়ে গেল।
একটা ভারী খিল হাতে দেবপ্রিয় কখন যেন ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। মদন অবাক হয়ে কিছু একটা বোধহয় বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই দেবপ্রিয় খিলটা সপাটে মদনের মাথায় বসিয়ে দিয়েছে।
মদন টাল খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল।
দেবপ্রিয় পাগলের মতো মদনের মাথা লক্ষ্য করে খিল চালাতে লাগল। একবার… দুবার…তিনবার…চারবার…।
দেবপ্রিয় যখন থামল তখন মদনের মাথাটা থেঁতলে যাওয়া কালোজামের মতো দেখাচ্ছিল।
খিলটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে চটপট কাজ শুরু করে দিল দেবপ্রিয়।
সাবধানে মদনের পকেট হাতড়ে মোবাইল ফোনটা বের করে নিল। ফোনের পিছনটা খুলে সিম কার্ডটা টেনে খুলল। তারপর সেটা টক করে মুখে পুরে দিয়ে চিবোতে লাগল। ফোনটা ঠিকঠাক করে লাগিয়ে আবার ঢুকিয়ে দিল মদনের পকেটে।
মুখ নাড়তে নাড়তেই টিভির পাশে রাখা একটা ছোট টি-টেবিলের দিকে গেল দেবপ্রিয়। টেবিলে ওর লেখা চিরকুটটা রাখা ছিল।
সেটা তুলে নিয়ে একবার দেখল। শেষের দুটো লাইন মিহি গলায় ব্যঙ্গ করে পড়ল : .বাড়ি ফিরে কথা হবে। লাভ ইউ। তারপর চিরকুটটাও মুখে পুরে দিয়ে চিবোতে লাগল।
যাক, ছকের নটা ধাপ শেষ! হাঁফ ছাড়ল দেবপ্রিয়। এরপর ললনার সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলা আর চন্দ্রাণীর সবরকম সম্পত্তি ওর মা-বাবাকে নিঃশর্ত গিট করে দেওয়া। এই দুটো ধাপ তেমন কঠিন নয়।
খুনের ছকের কয়েকটা খুঁটি দেবপ্রিয় ইচ্ছে করেই একটু নতুনভাবে সাজিয়েছিল। স্টেন মদনের বেঁচে থাকাটা ওর ঠিক পছন্দ হয়নি। এত কাণ্ড করার পর মদনকে বাঁচিয়ে রাখাটা নিতান্ত বোকামি। তাই…।
চিবোনা কাগজের মণ্ডটা এইবার জোর করে গিলে ফেলল দেবপ্রিয়।
তারপর গলার স্বর দু-রকম করে এক কাল্পনিক পুলিশ ইনস্পেক্টরের সঙ্গে চাপা গলায় কথা বলতে লাগল। আর একইসঙ্গে মদনের জামাকাপড় হাতড়ে চন্দ্রাণীর রঙিন ফটোটা খুঁজতে লাগল। খুঁজতে লাগল মদনকে চিনে ফেলা যায় বা মদনের সঙ্গে ওর যোগাযোগ ধরে ফেলা যায় এমন কোনও কাগজপত্র আছে কি না।
মার্ডারার যখন আপনার ওয়াইফকে গুলি করে তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
শরীরটা ভালো লাগছিল না বলে চাদর মুড়ি দিয়ে বিছানার এককোণে শুয়ে ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখি একটা লোক চন্দ্রাকে গুলি করে পালাচ্ছে। তখন আমার জ্ঞান ছিল না। শোওয়ার ঘরের দরজার পাশ থেকে খিলটা তুলে নিয়ে…। ব্যঙ্গ করে কাঁদতে লাগল দেবপ্রিয়। চন্দ্রাণীর ফটোটা খুঁজে পেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, কালচার্ড ওয়াইফ, এবার তোমাকে চিবিয়ে খাব।
কথা শেষ করার সঙ্গে-সঙ্গে ফটোটা মুখে পুরে দিয়ে হিংস্রভাবে চিবোতে লাগল দেবপ্রিয়। চিবোতে চিবোতেই কাঁদতে লাগল আর কাল্পনিক ইনস্পেক্টরকে বলতে লাগল, জানেন, আমার জীবনটা একেবারে শেষ হয়ে গেল..সত্যিকারের আত্মীয় বলতে আর কেউ রইল না…কেউ রইল না…।
দেবপ্রিয় ফ্ল্যাটটা যেটুকু গোছগাছ করার করে নিল। তারপর দেওয়াল-ঘড়ির দিকে তাকাল। চন্দ্রাণী খুন হওয়ার পর প্রায় আট মিনিট পার হয়ে গেছে। এইবার চেঁচিয়ে লোক জড়ো করা যেতে পারে।
মুখে রাখা ফটোর পিণ্ডটা গিলে ফেলে সর্বহারা স্বামীর মতো হইচই শুরু করে দিল দেবপ্রিয়।
খুন! খুন! বলে ফ্ল্যাটবাড়ি একেবারে মাথায় তুলল।
ফলে, আধঘণ্টা কি চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, সব এসে হাজির হল।
দেবপ্রিয় বাইরে কাঁদছিল, তবে ভেতরে-ভেতরে মজা দেখছিল। নিখুঁত খুন করতে পারার অহংকার ওর ভেতরে ফুলে-ফুলে উঠছিল।
*
দেবপ্রিয় জানত না, ওর খুনের ছকে সব ঘুঁটি ঠিকমতো সাজানো হয়নি। তাই ওর খুনটাও নিখুঁত হয়নি।
কারণ, ওর হাতে লেখা চিরকুটটা পাড়ারই একটা দোকান থেকে স্টেন মদন ফোটোকপি করে নিয়েছিল। তারপর সেই কপিটা দেবপ্রিয়র লেটার বক্সে রেখে ওপরে উঠে এসেছিল। ভেবেছিল, খুনের কাজ সেরে ফেরার পথে ওটা নিয়ে যাবে। মদন পেশাদার খুনি। সেইজন্যই একটা অস্ত্র ও হাতে রাখতে চেয়েছিল। দরকার হলে যাতে দেবপ্রিয়র বিরুদ্ধে সেটা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেটা মদন আর হাতে পায়নি। কারণ, দেবপ্রিয়র লেটার বক্সের অন্ধকার এককোণে চিরকুটের জেরক্স কপিটা পুলিশের জন্য অপেক্ষা করছিল।