এইসব সারমেয়
এইসব সারমেয় শরীর সর্বদাই নাদুস চিকন পেলব মেদে আবৃত থাকে। এঁটেল শক্ত আবার অলৌকিক ভাবে নরোম পশমে বাধা এদের দেহ বল্লবী অবলোকনে মনে হতে পারে, এরা ভল্লুকের বংশধর। অভিশাপে সারমেয় প্রাপ্তি ঘটেছে।
নরোম ঘাসের সবিস্তার সবুজ লনে সূর্যোদয়ের আগে এরা ঘুম থেকে জেগে আরামদায়ক লেজ নাড়ে ক্কচিৎ কদাচিৎ। স্বভাবতঃই রৌদ্র মাখা ঘাসের জমির লাবণ্য দেখার প্রত্যাশায় এরা প্রায়শঃই লেট রাইজার হয়ে থাকে।
ঘুম থেকে জাগার সময় এদের গলার চিকন সরু বন্ধনীর টানটান আভিজাত্যে এরা হাই তোলে।
ভাগ্যিস গভীরভাবে আর্শী দর্শনের নিয়মিত অভ্যাস এদের নাই।
তাহলে হয়তো টের পেতো, তাদের মনিবেরা সদ্য বানানো ঝকঝকে বাড়ী, গাড়ী, অবাধ ঘাসের মখমল পাতা জমির সবুজ দ্যুতিরা সাথে মিল ঘটিয়ে তাদের যার যার গলায়, সরু চিকন এতদিনকার লোহার হাল্কা শৃঙ্খলের বদলে, বিশ্বব্যাপী সোনার ঘাটতির মুখেও, অদ্ভুত রুচিশিল্প পরির্শনপূর্বক সরু সুন্দর লতানো সোনার শৃঙ্খল পরিয়ে দিয়েছে।
এবং আধুনিক লিপিশিল্পের উন্নতির সাথে সাথে যার যার বাড়ীর দরোজায় উচ্চ পারিশ্রমিক দানপূর্বক কোনো নাম করা শিল্পকে দিয়ে ‘বি উইয়ার অব ডগস’ এবং কুকুর হইতে সাবধান এই যুগপত ইংরেজী বাংলার সতর্কবাণীটিও সম্প্রতি লিখিয়ে নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে উক্ত সতর্কবাণীর লিখিত কাষ্টখণ্ডের ডিজাইনেও পরিবর্তন ঘটেছে বইকি!
একটি অভিজাত এলাকার স্বচ্ছ জায়গায় জেগে ওঠা সারি সারি তিনটি বাড়ীর সারি সারি দরোজায় এরা বিকেলে যার যার মনিবের ক্লাব গমনের গুরুগম্ভীর ভঙ্গিটি দেখতে অভ্যস্ত। অথচ সবুজ লনে ফড়িং উড়ছে। মাঝে মাঝে এদের লোভ হয়, খেলা করি, কিন্তু পারে না। নীরব নিজঝুম সচ্ছলতার সবুজ ঘাসের লনে তাদের এই অধিকার নাই। রাস্তার কুকুরের মতো কিম্বা বিড়ালের মতো হঠাৎ জঞ্জালের ভিতরে টুকরো কাঁটা খুঁজে পাওয়ার পর অস্থির আনন্দিত খেলার ঘোটলোকী, আদেখেলাপনা এই সব আরামদায়ক রাজ্যে যারপর নাই নিষেধ! এদের মনিবদের প্রতিটি বাড়ীর দরোজায় সুন্দর দামী সিল্কের কাপড়ের পর্দা টানানো থাকে। ভিতর বাড়ীতে অনেকগুলি আরামদায়ক শোবার ঘর। ডরমিটরী। প্রত্যেকের বয়স্ক বয়স্কা যুবক যুবতী ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। বাথরুমের সংখ্যাও দু তিনটি কোরে। এরা স্বভাবত একটু শুচিবাইগ্রস্থ হয়। বিশেষ কোরে এদের যুবতী মেয়েরা। মেয়েলী স্বাস্থ্যরক্ষার যাবতীয় সাজসরঞ্জামে তাই ওদের যার যার গোপন বাক্স, ভর্তি থাকে।
বয়স হওয়ার সাথে সাথে এদের মাতৃ পিতৃস্বভাবের অদ্ভুত ব্যাপারে এরা আশ্চর্যন্বিত হয় না।
অবশ্য পিতৃবংশের কৌলিণ্যে তাদের কালো টাকার পরিমান কম নয়। বিদেশী সিগারেট অনায়াসে কিনতে তাদের কষ্ট হয় না। এবং পরস্পর যুবক যুবতী ভাইবোন কখনো কদাচিৎ শহর ঢাকার ঐতিহ্য পরখ করার জন্য পাশাপাশি কোনো বৃদ্ধ কোচোয়ানের ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ে, পুরনো ঢাকার উদ্বাহু নর্দমা, উলঙ্গ শিশুর শিশ্ন উঁচু প্রশ্রাব ভঙ্গি এবং কলকাতায় ঝগড়াটে সব কুঁদুলে মেয়ে মানুষের হৃৎযৌবনজনোচিত শরীরের অর্ধেক প্রকাশমান অবস্থায় হয়তো টলটলে ইংরেজীতে বলে ওঠে কান্ট্রি অব স্লামস! অল হোরস আর কোয়ারেলিং আন্ডার ওয়াটার! দেশের ভিতরে নকলভাবে তৈরী করা এক একটি মার্কিন মুলুক অথবা লন্ডনের কোনো অঞ্চল, কিম্বা প্যারিসের ‘মোপারনাস’ এদের ঘরবাড়ীগুলি! এদের যেখানে গমনাগমন সেটাও তাই। সেখানেও পরস্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষদের অকস্মাৎ বেলেল্লাপনা কি চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা দোষণীয় নয়। বরং দেশটা যৌনতায়, এবং অবাধ মেলামেশার স্বাধীনতা পাচ্ছে না, তার জন্যে তাদের ক্ষোভ কম নয়। ভিতরে ভিতরে তাদের রক্তমাংস জ্বলে পুড়ে যৌবনের আগ্রাসী অধিকারকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চায়!
কিন্তু বাধ সাধে এ দেশের দুর্ভিক্ষ!
এ্যান্ড সি দ্যাট ফ্লাট! হি ইজ পিসিং আন্ডার দি ব্লু স্কাই! পাসপোর্ট পেলে রুবী আপার কাছে গিয়ে প্যারিসে থাকতাম। পিকাসোর কত ছবি যে এখনো দেখা হয়নি। ভাইয়ের কেতাদুরস্ত এই কথার ভিতর বোনটির কোনো ভাবান্তর ঘটে না! বরং হয়তো বলে ওঠে দিজ পুওর ফোক, ইভন ডাজ নট নো দি আর্ট অব লাবিং! কুডনট ইউ রিমেম্বার আওয়ার জারনি টু ইন্ডিয়া? এ্যান্ড দেয়ার অন অজন্তা’স কেভওয়াল, হাউ ওয়ান্ডারফুল, দি ড্যান্সিং অপ্সরাস! নেকড ইনোসেন্ট বোডি লাইক বিভারস, ফুল অব ওয়েভস। রিয়্যালী, আনফরগেটবল!
আচ্ছা, ঐ ভদ্রমহিলাটি যেন কে ছিল? আমাদের যে চিনিয়ে দেয় একে একে কোনটা কোন শতাব্দীর নর্তকী! ওহ হাউ সসি হার বোড়ি। অজান্তা স্টাইলে কিছুদিন এসে শাড়ী পরলাম, হতভাগাগুলোর সইলো না। এতটা শরীর শাড়ীতে ঢেকে রাখা যায় নাকি?
ভাইটি হয়তো এ সব কথা শুনতে অভ্যস্ত। গাড়োয়ানকে নির্দেশ দেয়–ফিরে যেতে। সন্ধ্যের অন্ধকারে তারা ফিরে আসে। বাড়ীর দরোজার ভিতরে তখোন হয়তো কারো মা মিসেস আশফাঁক, অথবা মিসেস চৌধুরী ডায়ালে ব্যস্ত। ফোন করে স্বামীর ব্যবসায়ী বন্ধুকে জানিয়ে দিচ্ছে দেন ইউ আর কামিং টু চ্যাম্বেলী? ওকে! উই উইল বি দেয়ার ইন টাইম।