ষষ্ঠীচরণ পায়চারি করছিল। আর পায়চারি করতে বেশ ভালোও লাগছিল তার। তবে কাজটা যত সহজ শোনাচ্ছে ততটা নয়। আসলে সে পাহারায় আছে। পায়চারি করতে করতে তাকে বিশেষ নজরও রাখতে হচ্ছে। তার ওপর বহু মানুষের মরন—বাঁচন নির্ভর করছে। একটু ভুলচুক হলেই বা নজরদারিতে গাফিলতি ঘটলেই অতি বিপর্যয় কাণ্ড ঘটে যাবে।
তার কানে হেডফোন লাগানো আছে। ঘ্যানাবাবু হচ্ছেন অপারেশন ম্যানেজার। ফোনে হঠাৎ তাঁর হেঁড়ে গলা শোনা গেল, বলি, ওহে ষষ্ঠীচরণ, ঘুমিয়ে পড়োনি তো!
আজ্ঞে না স্যার, দিব্যি জেগে আছি।
হুঁশিয়ার থেকো হে, উল্কাটার মতিগতি খুব ভালো ঠেকছে না। ব্যাটা চাঁদের পিছনে ঘাপটি মেরে আছে বলে মনে হচ্ছে। দূরেই আছে এখনও, তবে যেকোনো সময়ে এসে পড়তে পারে।
চিন্তা করবেন না স্যার, আমি নজর রাখছি।
তুরপুনটা রিলিজ করার সময় হলেই তোমাকে সিগন্যাল দেবো। ভগবানের নাম করে ছেড়ো হে, বড্ড সাবধানে কাজ করতে হবে।
যে আজ্ঞে, শুধু একটা কথা স্যার।
কথা! কী কথা বলে ফেল।
আজ্ঞে, আমার প্রমোশনটা অনেকদিন আটকে আছে।
আরে, ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি আগে রাক্ষসটাকে তো আটকাও। কাজটা উদ্ধার হলে বরদাবাবু খুশি হবেন। তখন তোমারও হিল্লে হয়ে যাবে।
যে আজ্ঞে।
ষষ্ঠীচরণ ফের পায়চারি করতে থাকে। অন্যমনস্ক হলে চলবে না। ঘুম পেলে চলব না। ভুলচুক হলে চাকরি যাবে। ষষ্ঠীচরণ গরিব মানুষ, চাকরি গেলে খুব সমস্যার পড়ে যাবে। আর সেইজন্য সে পায়চারির গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়।
অসুবিধের ব্যাপার হল, সে পায়চারি করছে মহাশূন্যে একটা বিশাল কৃত্রিম স্যাটেলাইটের পিঠের ওপর। কোমরে অবশ্য ধাতব দড়ি বাঁধা আছে স্যাটেলাইটের সঙ্গে। ছিটকে যাওয়ার ভয় নেই। আর পায়ে আছে বিশেষ ধরনের সোলওয়ালা জুতো যাতে পা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সেঁটে থাকে। স্যাটেলাইটের ওপর একটা মাউন্ট করা হারপুন। হারপুনের ডগায় ওয়ারহেড লাগানো। এই অস্ত্র দিয়েই নচ্ছার উল্কাটাকে টিট করতে হবে। ষষ্ঠীচরণ খুবই ভালো তিরন্দাজ। উল্কাটার গতিবিধি কিছু বিচিত্র বলে শুধু যন্ত্র দিয়ে লক্ষ্যভেদের ওপর নির্ভর না করে ষষ্ঠীচরণকে ডাকা হয়েছে। হারপুনটা যন্ত্রের সাহায্যেই নিক্ষেপ করা হবে বটে, তবে ষষ্ঠীচরণ প্রয়োজনে যন্ত্রটাকে সাহায্য করবে।
কানে লাগানো ফোনে তার গাঁ মুকুন্দপুর থেকে মায়ের গলা পাওয়া গেল। ও বাবা ষষ্ঠীচরণ, কখন থেকে আকাশে ঝুলে আছিস বাবা, বলি কিছু খেয়েছিস? পেটে দানাপানি কিছু পড়েছে?
হ্যাঁ মা, এরা বেশ ভালো খাইয়েছে। মাংস, ভাত, রসগোল্লা।
তবে যে শুনি, আকাশে নাকি পাতের ভাত মাছ সব পাত ছেড়ে উড়ে উড়ে বেড়ায়। খেলি কী করে?
সে অনেক ব্যবস্থা আছে। টিউবে করে খাবার দেয়। টুথপেস্টের মতো টিপে টিপে বের করে খেতে হয়।
ও আবার কীরকম অলক্ষুণে খাওয়া?
সেই খাওয়া খুব মজার, গিয়ে সব বলব’খন।
তা হ্যাঁ বাবা ষষ্ঠী, কতটা ওপরে উঠেছিস বল তো!
সে অনেক ওপরে মা, কয়েক শো মাইল তো হবেই।,
ও বাবা, তাহলে স্বর্গের কাছাকাছিই হবে বোধ হয়। তা ওখান থেকে স্বর্গের বাগান—টাগান দেখা যায়? শিব, দুগ্গা কাউকে দেখলি বাবা? দেখলে পেন্নমা—টেন্নাম করিস। আর আমাদের দুঃখ—দুর্দশার কথাও একটু জানিয়ে রাখিস।
স্বর্গ বোধহয় আরও পরের দিকটায় হবে। ঠিক আছে ঠাকুর—দেবতা কাউকে দেখলে বলব’খন।
দেখিস বাবা, পা পিছলে পড়ে—টড়ে যাসনি। অত ওপর থেকে পড়লে হাত—পা ভাঙবে।
না মা, পড়ার কোনো ভয় নেই, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমোও।
দুর্গা দুর্গা। তা সেই মুখপোড়া উল্কাটা কি এখনও আসেনি?
না মা, তবে এল বলে, আর দেরি নেই।
মাকে বেশি জ্ঞান দিয়ে লাভ নেই। মা জানে আকাশের ওপর দিকটায় স্বর্গ। প্রকৃত আকাশ কি বস্তু তা মা জানে না, জেনে আর দরকারও নেই।
উদবিগ্ন মুখে আকাশের দিকে চেয়ে ষষ্ঠীচরণ উল্কাটার গতিবিধি নজরে আনার চেষ্টা করছিল। চাঁদটা খুবই কাছে। মাথার ওপর এত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। আর বিরাট বড়োও লাগছে চাঁদকে।
হঠাৎ তার কানে লাগানো ফোনে একটা বাজখাঁই গলা একেবারে ফেটে পড়ল, বলি ষষ্ঠীচরণ, শুনলুম দেনার দায়ে জেরবার হয়ে এখন ফাঁকি দেওয়ার তালে আকাশে গিয়ে গা—ঢাকা দিয়েছো। ওতে কিন্তু ভবী ভোলবার নয়। চিরকাল তো আর ঝুল খেয়ে থাকতে পারবে না বাবা। ত্রিশ হাজার টাকার দেনা এখন সুদে—আসলে গিয়ে তেষট্টি হাজার সাতশো বাহাত্তরে দাঁড়িয়েছে। এক মাসের মধ্যে শোধ না দিলে ঘটি—বাটি চাটি করে ছাড়ব। বুঝেছো?
ষষ্ঠীচরণ খুব বুঝেছে। বিগলিত ভাব দেখিয়ে ভারি বিনয়ের সঙ্গে বলল, ভাববেন না নগেনবাবু, টাকাটা ঠিকই দিয়ে দেবো। কয়েকটা দিন একটু অসুবিধের মধ্যে আছি। কাঁচা বাড়িতে মা—বাবার বড্ড অসুবিধে হচ্ছিল বলে বাড়িটা পাকা করতে হল কিনা।
মনে রেখো বাপু, জমির দলিল আমার কাছে বাঁধা রেখেছো, টাকা ঠিকমতো শোধ না দিলে জমি নিয়ে নেবো। এখন আইন বহুৎ কড়া।
যে আজ্ঞে, জমি গেলে আমরা খাবোই বা কী বলুন!
আকাশ থেকে নেমে তো এসো, তারপর মজাটা টের পাবে।
নগেনবাবুর কথা শেষ হতে—না—হতেই হরিপদ সাহার ফোন।
বলি ও ষষ্ঠী, আকাশে উঠে কি হাতে চাঁদ পেয়েছো নাকি হে? আমার দোকানে কত বাকি ফেলেছো জানো? দু—হাজার তিনশো তেইশ টাকা, বুঝলে? আর বাপু, ধারবাকিতে মাল দেওয়া আমার পোষাবে না বলে দিলুম পষ্ট করে। আমার সাফ কথা, ফেলো কড়ি মাখো তেল।
ভারি কাকুতিমিনতি করে ষষ্ঠীচরণ বলে, আর দুটো দিন সবুর করুন হরিপদবাবু, আমি ফিরে গিয়েই ধার মিটিয়ে দেবো। বাকিতে মাল না দিলে যে আমার বুড়ো বাপ—মা না খেয়ে মরবে।
না বাপু, আমিও ছাপোষা মানুষ, মুদির দোকান থেকেই আমারও সংসার চালাতে হয়। আর বাকিতে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আর তিনটে দিন হরিবাবু, দেখতে দেখতে কেটে যাবে, এলুম বলে।
দেখো বাপু, কথার নড়চড় না হয়।
মনটা বড়ো খারাপ হয়ে গেল ষষ্ঠীচরণের। মা—বাপ আর ভাই ও বোনদের সে বড়ো ভালোবাসে। কিন্তু তারা বড়োই গরিব। সে মহাকাশ গবেষণাগারের সামান্য টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। সামান্য বেতনে সংসার চালাতে পারে না। সে ক্রস বোতে তিরন্দাজি শিখেছিল এক সাহেবের কাছে। তাতে একসময়ে তার একটু নামও হয়েছিল।
কিছুদিন আগে আকাশের এক কোণে একটা বড়োসড়ো উল্কার সন্ধান পায় মার্কিন আর রুশ বিজ্ঞানীরা। হিসেব—নিকেশ করে দেখা গেছে সেটা পৃথিবীতে এসে পড়বে। এবং পড়বে ভারতবর্ষেরই কোথাও। কিন্তু মার্কিনীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন খুব খারাপ বলে উল্কাটাকে মহাকাশে অনেক দূরে ধ্বংস করে দেওয়ার ব্যাপারে মার্কিনীরা মোটেই গা করেনি। কিন্তু বহু দূরে রকেট পাঠিয়ে উল্কাটাকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার টেকনোলজি মার্কিনী ছাড়া আর কারও নেই। রুশরা একসময়ে ভারতের বন্ধু ছিল বটে, কিন্তু ইদানীং তারা ব্যবসা—বাণিজ্যে লক্ষ্মী লাভ করে সুখে—স্বচ্ছন্দে আছে। মহাকাশ নিয়ে চর্চাতেও তারা বিশেষ আগ্রহী নয়। তবে ভারত গরিব দেশ হলেও মহাকাশ গবেষণায় খুব একটা পিছিয়ে নেই। সুতরাং তারা নিজেরাই এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তাদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ দূষণ দফতর থেকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে উল্কাটা ধ্বংস করতে তারা যেন বিস্ফোরক ব্যবহার না করে। কারণ মহাকাশে এখন কয়েক হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে নানা উচ্চচতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিস্ফোরকে তাদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আপাতত শক্তিশালী হারপুন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং কম্পিউটার দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই যন্ত্র ব্যবহারের সবচেয়ে উপযুক্ত লোক ষষ্ঠীচরণ। কারণ সে ক্রস বো তিরন্দাজিতে খুবই পাকা।
আর সেজন্যই ষষ্ঠীচরণ আজ মহাকাশে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত। কিন্তু ষষ্ঠীচরণ বারবারই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। বড়ো অনটনের সংসার। এ কাজটা সফলভাবে করতে পারলে হয়তো তার প্রমোশনটা হবে। কিছু পুরস্কারও পাওয়া যেতে পারে। বাড়ি বাবদ কুড়ি লাখ টাকা ব্যাঙ্কের ধার খানিকটা যদি শোধ দেওয়া যায়। তার চারদিকেই শুধু পাওনাদার।
কানে লাগানো ফোনে অরোরা সাহেবের গলা পাওয়া গেল, আরে এই বুরবক ষষ্ঠীচরণ, তু কিয়া খোয়াব মে হো? আরে উও খতরনাক মিটিওর তো তুরন্ত আ রাহা হ্যায়। গেট রেডি ম্যান।
ষষ্ঠীচরণ তাকিয়ে দেখে সত্যিই চাঁদের পিছন থেকে বেশ বড়ো একটা মেটে সোনালি রঙের গোলা ছুটে আসছে। তীব্র গতি। একটু বাদেই সেটা পৃথিবীর আবহমণ্ডলে ঢুকে জ্বলে উঠবে। তারপর সোজা গিয়ে মধ্যভারতের কোথাও আছড়ে পড়ে বিশাল এলাকা ধ্বংস করে দেবে। হারপুন ঠিকমতো গেঁথে দিতে পারলে ওটার মাথায় যে একটা ওয়ারহেড লাগানো আছে তাতে সোনিক বুম সৃষ্টি হয়ে উল্কাটিকে বহু খণ্ডে টুকরো করে দেবে। আর সেই টুকরোগুলো পৃথিবীতে পড়ার আগেই আবহমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
ষষ্ঠীচরণ তার হারপুন ঘুরিয়ে তৎপর হল। এখন একটু অন্যমনস্ক হলেই সর্বনাশ।
উল্কাটা এত দ্রুত আসছে যে লক্ষ্য স্থির করাই কঠিন। ষষ্ঠী হারপুনে শুয়ে টেলিস্কোপিক ভিউ ফাউন্ডারে চোখ রেখে একটু অবাক হয়ে গেল। উল্কাটা সাধারণ জিনিস নয়। ঠিক অপরিশোধিত সোনার মতো পাটকিলে সোনালি রং। আড়েদীঘে প্রায় সিকি কিলোমিটার তো হবেই।
ষষ্ঠীচরণ খুব ঠান্ডা মাথায় দূরত্বটা মেপে নিল। তারপর অপেক্ষা করতে লাগল। সে জানে সরাসরি বস্তুটাকে লক্ষ করে রিলিজ বাটন চাপলে কাজ হবে না, কারণ হারপুন গিয়ে লাগবার আগেই উল্কা জায়গাটা পেরিয়ে যাবে। সুতরাং হারপুন ছাড়তে হবে কয়েক সেকেন্ড আগে উল্কার সম্ভাব্য গতিপথের দিকে তাক করে।
কানে লাগানো ফোনে একটা মিঠে গলা শোনা গেল, রামরাম ষষ্ঠীবাবু, ভালো আছেন তো! তবিয়ৎ তন্দুরস্ত আছে তো! বলছিলাম কী, আপনাকে আমি তিন লাখ রুপিয়া দিব, আপনি উল্কাটাকে ছোড়িয়ে দিন।
ষষ্ঠী অবাক হয়ে বলে, সে কী! কেন বলুন তো!
হামার ঝুনঝুনওয়ালা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখুন খারাপ যাচ্ছে। ক্যালকুলেশন করে দেখলাম উল্কাটা যেখানে এসে পড়বে সেখানে হামার দশটা গো—ডাউন আছে। গো—ডাউনের সব মাল সরিয়ে নিয়ে তিন ক্রোর রুপিয়ার ইনসিওরেন্স করিয়ে দিয়েছি। উল্কাটা পড়লে হামার কিছু সুবিধা হবে। আপনার ওয়ান পারসেন্ট।
ষষ্ঠী নিবিষ্ট চোখে উল্কাটাকে লক্ষ করতে করতে বলল, ঝুনঝুনবাবু আপনি কি জানেন যে, আপনি খুব খারাপ লোক?
হাঁ হাঁ, কিঁউ জানব না! সবাই জানে, কিন্তু ভগওয়ানই তো আমাকে ভি পয়দা করেছেন। খারাপ লোকেরও কি দরকার নাই ষষ্ঠীবাবু? খারাপ লোকরাও তো সোসাইটিকে সারভিস দিচ্ছে, ঠিক কিনা বলুন?
উল্কাটা ভয়ংকর গতিবেগে চাঁদ পেরিয়ে চলে আসছে। ষষ্ঠী দাঁতে দাঁত পিষে ফোনটা অফ করে দিয়ে একাগ্র হল। গতিপথটা অনুমানে স্থির হয়ে নিয়ে ক্যালকুলেশন করতে লাগল, সবটাই তার নিজস্ব পদ্ধতিতে। তিরন্দাজ হিসেবে তার পক্ষে যতটা সম্ভব নির্ভুল একটা দূরত্ব স্থির করে সে হারপুনের ট্রিগার টিপে দিল। একটা তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে মসৃণ গতিতে হারপুনটা বেরিয়ে গেল নিক্ষেপ যন্ত্র থেকে।
উৎকণ্ঠায় কাঠ হয়ে চেয়ে রইল ষষ্ঠীচরণ, রুপোলি রঙের বিশাল লম্বা হারপুনটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কালো আকাশ চিরে ছুটছে বিদ্যুতের গতিতে। ওদিক থেকে মেটে সোনার রঙের উল্কাটাও আসছে ভয়ংকর গতিতে। লাগবে তো! হে ভগবান! ক্যালকুলেশন যথাসাধ্য নির্ভুলই হয়েছে বলে তার ধারণা। কিন্তু ….
হারপুনটা লাগল, ষষ্ঠীচরণ যেখানে অবস্থান করছে তার খুব কাছেই ঘটল ঘটনাটা, খুব বেশি হলে আধ—কিলোমিটারের তফাতে। হারপুনটা সোজা গিয়ে উল্কার পেটের মধ্যে ঢুকে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গেই সোনিক বুম চালু হয়ে গেল। আকস্মিক আঘাতে উল্কাটা কি একটু দোল খেল? গতি ব্যাহত হল একটু? পরমুহূর্তে একটা অপূর্ব নিঃশব্দ বিস্ফোরণে কালো আকাশে যেন ছড়িয়ে পড়ল ফুলঝুরির রংবেরং। শত খণ্ডে বিচূর্ণ হয়ে নানা দিকে ছিটকে যেতে লাগল বিদীর্ণ উল্কার টুকরোগুলো।
ষষ্ঠীচরণ ভারি তৃপ্তমুখে দৃশ্যটা দাঁড়িয়ে দেখছিল। মুখে একটু বোকাবোকা হাসি। আর ওইটেই ভুল করেছিল সে। কথা ছিল উল্কাটাকে ভেঙে দেওয়ার সময় সে সটান শুয়ে পড়বে, যাতে কোথাও বিপদ না ঘটে। খেয়াল ছিল না ষষ্ঠীর। হঠাৎ একটা বড়োসড়ো টুকরো ছিটকে এসে সে কিছু বুঝে উঠবার আগেই যেন বিরাশি সিক্কার একটা চড় মেরে শুইয়ে দিল তাকে। ষষ্ঠী জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল স্যাটেলাইটের পিঠের ওপর।
যখন জ্ঞান হল তখন সে কলকাতার এক হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। চারপাশে সব হোমরাচোমরা মানুষ। এক ভারিক্কি ওপরওয়ালা বলল, বহোৎ খুব ষষ্ঠী, বাহাদুর হো।
আর একজন বলল, জোর বেঁচে গেছ হে। শ্র্যাপনেলটা প্রায় শেষ করে দিয়েছিল তোমাকে।
ষষ্ঠী হাতজোড় করে বলল, আজ্ঞে আমার মা—বাবার আশীর্বাদ আর ভগবানের দয়া।
তা তো বটেই, সরকার বাহাদুর তোমাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা পুরস্কার দেবে, বুঝেছো।
পঞ্চাশ লাখ!
শুধু তাই নয়। উল্কাটা ছিল পুরো সোনার। যে টুকরোটা এসে তোমার গায়ে লেগেছিল সেটার ওজন বাহাত্তর কেজি, ওটাও তোমাকে দেওয়া হবে।
ষষ্ঠী ফের অজ্ঞান হয়ে গেল।