উলের কাঁটা – ৫

পাঁচ

ওঁদের অ্যাম্বাসাডার গাড়িটা যখন শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ডে এসে ঢুকছে তখনও ‘পহেলগাঁও শ্রীনগর’ সার্ভিসের বাসটা থেকে লোক নামতে শুরু করেনি। বোধ হয় আধমিনিট আগে সেটা ঐ গোলাকৃতি বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করেছে। কন্ডাক্টার পা-দানি থেকে ঝুলে পড়ে পিছনটা দেখছে ও ক্রমাগত টিং-টিং বাজিয়ে চলেছে : ঠিক হায়, ঠিক হ্যয়, ঔর যাইয়ে।

দুটি যাত্রীহীন বাসের মাঝখানের ফাঁকে ব্যাক-গিয়ারে বাসটা নৈশ-বিশ্রামের জায়গা খুঁজে নিচ্ছে। যাত্রীরা অনেকেই নিজ নিজ সীটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, কুলিরা ছেঁকাবান করে ঘিরে ধরেছে; একজন উপরে উঠে দড়ি দিয়ে ত্রিপল ঢাকাটা ছাদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দোকানে, পথে আলো জ্বলে উঠছে।

কৌশিক ও বাসু-সাহেব দ্রুতগতিতে বাসটার দিকে এগিয়ে গেলেন।

সন্ধানসূত্রের পুঁজি তো কুল্লে তিনটি : বাঙালি মহিলা, বয়স পঁয়ত্রিশ ও মাঝারি গড়ন। বাসু-সাহেব মহিলা যাত্রীদের উপর একবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলেন। কৌশিকও। জনা দশেক মহিলা যাত্রী আছেন। জনা চারেক বৃদ্ধা, ছটি অল্পবয়সী; একজন নিঃসন্দেহে পাঞ্জাবিনী ও দুজনে পিছনে কাছা-সাঁটা গুজরাটিনী। বাকি দুজন সন্দেহজনক। একজন আছেন পিছনের সীটে অপরজন একেবারে সামনের দিকে। দুজনেরই বয়স পঁয়ত্রিশ- ছত্রিশ, আধুনিক সাজ-পোশাক, মাঝারি গড়ন। শাড়ি পরার ধরন উত্তর এবং পূর্ব ভারতীয়—যাকে বলে হাল্স করে পরা। পিছনের সীটে যিনি বসেছেন তাঁর বর্-ছাঁটা চুল, নীলচে রঙের সিন্থেটিক শাড়ি, ম্যাচ করা ব্লাউস, ম্যাজেন্টা রঙের টিপ। হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ। ড্রাইভারের ঠিক পিছনেই যিনি বসেছেন তাঁর চুল খোঁপা বাঁধা, পরনে একটা মাস্টার্ড রঙের সিল্কের শাড়ি—কাঁধে একটা এয়ারব্যাগ, এক হাতে দু-গাছি চুড়ি, আর হাতে সরু রিস্টওয়াচ।

কৌশিক বাসু-সাহেবের কানে কানে বলল-আপনি একজনকে ট্রাই করুন, আমি দ্বিতীয়াকে।

বাসু বলেন, আমার ইন্টুইশান বলছে সামনের দিকের মুর্শিদাবাদিনীই আমাদের টার্গেট; তুমি বব্-হেয়ারিনীকেই ফলো কর।

গাড়িটা পার্ক করার পর প্রথমেই নেমে এলেন বর্-চুলো মহিলাটি এবং ঠিক তার পিছনেই একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। পুরুষটির কোলে একটি ঘুমন্ত শিশু। তিনি বাচ্চাটিকে কোলান্তরিত করে বললেন, বহ্ বারান্দা প্যে চলি যাও, ম্যয় সামান লাতা হুঁ।

ব্যস্! হারাধনের দশটি মেয়ের রইল বাকি এক

বাসু-সাহেব বাসের পিছনদিকে সরে গিয়ে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করেন শর্ট-ফাইন লেগের যুক্তকর ফিল্ডারের মতো।

অধিকাংশ যাত্রী নেমে যাবার পর মেয়েটি নামল, ঝোলা-ব্যাগ সমেত। গাড়ির ছাদের দিকে দৃপাত মাত্র করল না—অর্থাৎ ওর কোনও ভারী লাগেজ নেই। ইতিউতি চাইতে থাকে ট্যাক্সির খোঁজে। শর্ট-ফাইন-লেগের ফিল্ডার এক-পা এগিয়ে এসে হঠাৎ ওর পিছন থেকে ডেকে ওঠেন : রমা!

বিদ্যুৎস্পৃষ্টার মতো মেয়েটি চকিতে পিছনে ফেরে। বাসু-সাহেবকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললে, ডিড য়ু মেক্ এ সাউন্ড?

বাসু উত্তরে বঙ্গভাষায় জবাব দিলেন, হ্যাঁ আমিই। তুমিই তো রমা দাসগুপ্তা?

মেয়েটি সামলে নিয়েছে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে বলে, নো!

—বাঃ বাঙলা বলতে না পারলেও ভাষাটা ভোলনি দেখছি এ তিন বছরে, কাশ্মীরে এসে! বুঝতে পার ঠিকই! নয়?

মেয়েটি জবাব দেয় না। কী যেন ভাবছে সে।

বাসু বলেন, ঠিক আছে! তুমি রমা দাসগুপ্তা নও। মিসেস্ রমা কাপুর। এবার তো স্বীকার করবে?

কুঞ্চিত ভ্রুভঙ্গে মেয়েটি ইংরাজীতেই জবাব দেয়, আপনি কে? এবং কেনই বা আমাকে বিরক্ত করছেন?

বাসু পুনরায় বঙ্গভাবেই বলেন, সাদা বাঙলায় কথা বল রমা, তাহলে অন্য কেউ বুঝবে না। আমার নাম পি. কে. বাসু। আমি ব্যারিস্টার। সূরজপ্রসাদ খান্নার তরফে সলিসিটার। তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই।

মেয়েটি আবার বাসু-সাহেবকে আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নিল। এবার বঙ্গভাষে বলল, আপনি যে ব্যারিস্টার পি. কে. বাসু তার প্রমাণ দিতে পারেন?

বাসু পকেট থেকে একটি নামাঙ্কিত ভিজিটিং কার্ড ওর হাতে দিয়ে বললেন, এটা অবশ্য চূড়ান্ত আইডেন্টিফিকেশন নয়। তোমার সন্দেহ পুরোপুরি না ঘুচলে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সটাও দেখতে পার। বাই দ্য ওয়ে, তুমি কি আমার নাম জানতে?

—জানতাম। আপনার উপর লেখা অনেকগুলো কাহিনী আমি পড়েছি। কিন্তু এ-ক্ষেত্রে আপনি আমার সঙ্গে কী বিষয়ে আলোচনা করতে চান?

—স্বৰ্গত মহাদেও প্রসাদ খান্নার বিষয়ে

মেয়েটি স্পষ্টতই নিজেকে গুটিয়ে নিল। বললে, সে বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য আছে বলে তো আমি মনে করি না।

—বোকার মতো কথা বল না। তুমি জান না, ব্যাপারটা অনেকদূর গড়িয়ে গেছে আর সেটা সম্পূর্ণ তোমার নাগালের বাইরে।

—আপনি কী বলতে চাইছেন বলুন তো?.

—আমি বলতে চাইছি হয়তো পুলিস ইতিমধ্যেই জেনে গেছে নিহত মহাদেও প্রসাদ খান্না যশোদা কাপুরের ছদ্মনামে তোমাকে বিবাহ করেছেন। এটুকু সূত্র আবিষ্কার করলেই তারা তোমার বাড়িতে হানা দেবে আর ‘মুন্না’-কে আবিষ্কার করবে। মিসেস্ কৃষ্ণামাচারী তাদের জানিয়ে দেবেন, যে ‘মুন্না’ হচ্ছে কাপুর তথা খান্নারই একটি প্রণয়োপহার। সেই মুহূর্তেই পুলিস এবং সাংবাদিকের দল গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় তোমাকে আতিপাঁতি করে খুঁজবে। এই বাসস্ট্যান্ডে এবং এয়ারোড্রামে, বানিহাল পাস-এর নামায় তোমার জন্য তারা প্রতীক্ষা করবে। তারপর যে মুহূর্তে ওরা শুনবে মুন্নার ঐ মারাত্মক ‘বোলটা—ঐ : রমা…

মেয়েটি মাঝপথে ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে, চুপ করুন!

—এক্সজ্যাক্টলি! এখানে এসব আলোচনা করা মারাত্মক। কে জানে ইতিমধ্যেই বাস স্ট্যান্ডে পুলিসের চর এসেছে কি না।

মেয়েটি পুনরায় বলে, আপনি এত সব কথা কী করে জানলেন?

—ঠিক যেভাবে আমার চেয়ে ঘণ্টা দশ-বারো পিছনে পুলিস ও সাংবাদিকেরা জানবে। বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় আমি ওদের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে আছি বলেই তুমি এখনও অ্যারেস্টেড হওনি। তুমি যদি গোঁয়ার্তুমি করে আরও কিছু সময় এখানে নষ্ট কর তাহলে সেই সময়ের ব্যবধানটা আরও কিছুটা কমে আসবে। এই আর কি।

দু-এক সেকেন্ড মেয়েটি নতনেত্রে কী যেন চিন্তা করল। তারপর মুখ তুলে বলে, ঠিক আছে। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে রাজি। কী জানতে চান আপনি?

—সব কথা। আদ্যন্ত।

—কোথায় শুনবেন? কোনও রেস্তোরাঁয় ঢুকবেন?

—না। কোনও পাবলিক প্লেসে নিশ্চিন্তে কথা বলা যাবে না। আমার গাড়িতে। কৌশিক কোনও কথা বলেনি এ পর্যন্ত। এখন বলল, আসুন।

ওঁরা তিনজনে ফিরে এলেন ওঁদের গাড়িতে। বাসু আর মেয়েটি বসল পিছনের সীটে। কৌশিক ড্রাইভারের পাশে। বাসু-সাহেব তাঁর নোটবুক থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে কী যেন লিখলেন। তারপর ড্রাইভারকে সেই হাতচিঠি আর একটা দশ টাকার নোট দিয়ে বললেন, গাড়ি এখানেই থাক, গাড়ির চাবিটা রেখে যাও। এই চিঠিটা হাউসবোটে গিয়ে সুজাতাকে দেবে এবং তাকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। যাও।

ড্রাইভার রওনা হতেই বাসু বলেন, এ হচ্ছে কৌশিক মিত্র, এর সামনে…

মেয়েটি বাধা দিয়ে বলল, জানি। সুকৌশলীর কৌশিকবাবু।

বাসু বলেন, নাউ স্টার্ট টকিং!

মেয়েটি বলল, প্রথমেই বলে নিই, আমি অন্যায় কিছুই করিনি, অপরাধ তো দূরের কথা। আমি এমন কিছু করিনি যাতে আমাকে লজ্জিত হতে হয়।

—বুঝলাম। বলে যাও।

গাড়ির ভিতরটা অন্ধকার। বাইরে আলো। গাড়ির কাচগুলো ওঠানো। মেয়েটিকে ভালো দেখা যাচ্ছে না সেই আধা-অন্ধকারে। শুধু উজ্জ্বল সার্সির পশ্চাদপটে একটি নারীমূর্তির সিলুয়েট। রমার কণ্ঠস্বরে উত্তেজনা আছে; কিন্তু বাচনভঙ্গিতে কোনও নাটকীয়তা নেই। কিছুটা নিরাসক্ত হবার প্রচেষ্টা আছে। তবু যেহেতু অনেকগুলি অনুভূতি—বেদনা ভয়, উত্তেজনা ওকে আচ্ছন্ন করে আছে তাই তার অনাসক্তিটা বার বার ব্যাহত হয়ে যাচ্ছিল। ও বলতে থাকে :

—আমি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একজন কর্মী। বর্তমানে পহলগাঁওয়ে পোস্টেড। সংসারে আমার আর কেউ নেই–বাবা-মা-ভাই-বোন। আমার বর্তমান বয়স পঁয়ত্রিশ। নানা কারণে আমি বিবাহ করিনি। নাঃ! যখন বলতে বসেছি তখন সব কথাই খুলে বলি। তাহলে আমার ব্যাপারটা আপনারা বুঝতে পারবেন। প্রায় দশবারো বছর আগেকার কথা। আমি তখন কলকাতায় এম. এ. পড়ি। বাবা-মা দুজনেই বেঁচে। ঐ সময় এক সহপাঠীর প্রেমে পড়ি। ছেলেটি বড়লোকের ঘরের; আমার বাবা ছিলেন নিম্নমধ্যবিত্ত কেরানী। আমরা দুজনেই পাস করে বেরিয়ে আসার পর ছেলেটি উচ্চশিক্ষার্থে স্টেটসে যায়। আমরা দুজনেই প্রতিশ্রুত হই পরস্পরের জন্য প্রতীক্ষা করব। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ডাক-বিভাগে আমরা দুজনেই বহু অর্থব্যয় করি। তারপর যখন সে দেশে ফিরে আসে তখন জানতে পারি সে বিবাহিত এবং তার একটি তিন বছরের শিশু আছে। এরপরও আমার জীবনে পুরুষ যে না এসেছে তা নয়, কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যেই আমি অনিমেষের…আই মীন সেই ছেলেটির ছবি ফুটে উঠতে দেখতাম। এটা আমার অবিবাহিত থাকার কারণ।

—আমার স্বামীর সঙ্গে, আই মীন, মহাদেও প্রসাদ খান্নার সঙ্গে আমার আলাপ হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। নিতান্ত ঘটনাচক্রে। সেদিন ছিল রবিবার। আমি সারাদিনের মতো কিছু খাবার আর ফ্লাস্কে করে কফি বানিয়ে নিয়ে পাহাড়ের দিকে গিয়েছিলাম। এরকম প্রায়ই আমি পাহাড়ের দিকে বেড়াতে যেতাম।

বাসু বলে ওঠেন, একা?

—হ্যাঁ, একাও কখনও কখনও গিয়েছি, কখনও বা দু’একজন সহকর্মীর সঙ্গে। বেশির ভাগই সঙ্গে থাকত মন-বাহাদুর। যে রোব্বারের কথা বলছি, সেদিনও মন-বাহাদুর ছিল আমার সঙ্গে।

—মন-বাহাদুর কে?—জানতে চান বাসু-সাহেব।

—আমাদের ব্যাঙ্কের দারোয়ান। রিটায়ার্ড মিলিটারী ম্যান। ও আমার বাড়িতেই থাকত বাইরের ঘরে। আমার বাজার-হাট করে দিত; আমি দু-বেলা ওকে রেঁধে খাওয়াতাম। তাতে বাহাদুরের ঘরভাড়াটা বাঁচত, আমারও নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। সে যাই হোক, সেদিন শহর থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছি আমরা, হঠাৎ নজর হল একজন ভদ্রলোক নিতান্ত নির্জনে বসে জলরঙে একখানা নৈসর্গিক দৃশ্য আঁকছেন। ভদ্রলোকের পোশাক-পরিচ্ছদে কোনও আড়ম্বর বা বিলাসিতার লেশ ছিল না। একবার চোখ তুলে আমাদের দেখেই আবার ছবির দিকে নজর দিলেন। আমার দুরন্ত কৌতূহল হচ্ছিল দেখতে, ছবিটা কেমন হচ্ছে। কিন্তু আর্টিস্ট আমার মতো কৌতূহলী মানুষদের এড়িয়ে যাবার জন্য পহেলগাঁও থেকে এতদূরে এসেছেন ছবি আঁকতে। হঠাৎ ভদ্রলোক নিজে থেকেই হিন্দিতে বললেন, ‘তোমার ফ্লাস্কে জল আছে?’ একটু অবাক হলাম; নিতান্ত অপরিচিতাকে—আর বয়সও আমার কিছু কম নয়—উনি ‘আপনি’ না বলে ‘তুমহারি’ বললেন কেন? যা হোক, আমি লজ্জিত হয়ে বললাম, ‘না, কফি আছে। কেন? ‘

বললেন, আমার জলটা নোংরা হয়ে গেছে। তাই।

উনি উঠবার উপক্রম করতেই মন-বাহাদুর বলল, ম্যায় লা দেতা হুঁ।

ওঁর মগটা উঠিয়ে নিয়ে সে খাড়া পাড় ভেঙে লীডার থেকে জল আনতে গেল। অগত্যা আমার কৌতূহল মিটল। ছবিখানা দেখলাম। দারুণ সুন্দর হয়েছে। প্রশংসা করলাম ছবিখানার। দু-চারটে কথা হল। শুনলাম, ওঁর নাম যশোদাপ্রসাদ কাপুর। একা মানুষ, বিয়ে-থা করেননি। পাহাড় পর্বতেই ঘুরে বেড়ান। আমিও আমার নাম বললাম, স্টেট ব্যাঙ্কে চাকরি করি সে কথাও বললাম। আমি ওঁকে কফি অফার করলাম। উনি এককথায় রাজি হলেন। দুজনে কফি খেলাম। তারপর আমি ফিরে এলাম।

প্রথম দিন এই পর্যন্তই। পরদিন সোমবার বিকালে –কিসের অমোঘ আকর্ষণে আমি আবার সেই নির্জন স্থানটায় ফিরে এলাম। এবার একাই। কিন্তু ওঁর দেখা পেলাম না। উনি পহেলগাঁওয়ের কোথায় উঠেছেন জিজ্ঞাসা করিনি। ফলে যোগসূত্র হারিয়ে গেল।

দিন-তিনেক পরে একদিন অফিসে যেতেই আমার একজন সহকর্মী বললে, ‘এক ভদ্রলোক তোমার জন্য এই ছবিখানা রেখে গেছেন।’ অবাক হয়ে দেখি সেই ছবিখানাই। বাঁধানো হয়নি। রোল করে কাগজে মুড়ে দিয়ে গেছেন।

এরপর দীর্ঘ এক বছর আমি তাঁকে চোখে দেখিনি। কিন্তু তাঁর কথা ভুলতেও পারিনি। দুটি কারণে। প্রথমত তাঁর সেই ছবিখানা বাঁধিয়ে আমার ঘরে টাঙিয়ে রেখেছিলাম। আর দ্বিতীয়ত আমি ক্রমাগত তাঁর চিঠি পেতাম। আশ্চর্য, উনি নিজের ঠিকানা জানাতেন না। ফলে উত্তর লেখার কোনও সুযোগই আমি পাইনি। তারপর হঠাৎ এ বছরে অগস্টের পয়লা অথবা দোশরা তারিখে আবার তাঁকে দেখলাম। উনি নিজে থেকেই দেখা দিলেন। অফিস ছুটির পর বেরিয়ে আসছি, দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছেন। অসঙ্কোচে বললেন, ভালো আছ তোমরা?

জিজ্ঞাসা করলাম, চিঠিতে ঠিকানা দিতেন না কেন? জবাবে বললেন, বে-ঠিক মানুষের আবার ঠিকানা কী? সমস্ত কাজই ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জিতভাবে করতে হয়; জবাব পাবার প্রত্যাশা নিয়ে তো চিঠি লিখতাম না।

আমি আবার বললাম, ‘প্রশংসা করেছি বলেই ছবিখানা আমাকে দিয়ে দিলেন?’ সে-কথার উত্তরে বললেন, ‘আমি ভবঘুরে মানুষ, ছবি রাখব কোথায়? আঁকি আর বিলিয়ে দিই।’ ‘আমি জানতে চাইলাম, এবার পহেলগাঁওয়ে উনি কোথায় উঠেছেন। উনি বললেন, সেদিনই এসেছেন, কোথায় ওঠেননি; মাথা গোঁজার একটা আশ্রয় খুঁজে নেবেন কোথাও। প্রশ্ন করলাম, ‘আপনার মালপত্র কোথায় রেখেছেন?’ বললেন, ‘মালপত্র বলতে তো একজোড়া কম্বল আর ঝোলা। বাস স্ট্যান্ডের কাছে এক দোকানদারের কাছে জমা রেখেছি।’

আমি ওঁকে অনুরোধ করলাম সে-রাত্রে আমার অতিথি হতে। এককথায় রাজি হয়ে গেলেন। বলেন, এক শর্তে। আমি ঘরভাড়া দিতে পারব না। তার বদলে তোমার একখানা পোর্ট্রেট এঁকে দেব।

এই পর্যন্ত বলে মেয়েটি থামে। তন্ময় হয়ে কী যেন ভাবতে থাকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, প্রথম দিন-সাতেক কোনও অসুবিধা হয়নি, কারণ বাহাদুর ছিল। সাত তারিখে বাহাদুর যখন দেশে গেল তখনই বিপদে পড়লাম। কোন মুখে বলি, এখন আমাদের দুজনের এভাবে থাকাটা ভাল দেখায় না। অথচ উনি যেন সে সমস্যা সম্বন্ধে আদৌ সচেতন নন।

আবার মেয়েটি থেমে গেল। ম্লান হেসে বলল, বিস্তারিত বলতে আমারও সঙ্কোচ হচ্ছে, শুনতে আপনাদেরও। মোট কথা গত সাতাশে অগস্ট, শনিবার আমরা শ্রীনগরে এসে রেজিস্ট্রি মতে বিয়ে করি।

বাসু বলেন, তার মানে তুমি বলতে চাও যে, গোটা অগস্ট মাসটা তিনি তোমার বাড়িতে ছিলেন?

—হ্যাঁ।

—অসম্ভব! কারণ সাতাশে অগস্ট যেদিন তোমাদের বিবাহ হয় সেদিন ছিল শ্রাবণী পূর্ণিমা। সেদিন মহাদেও প্রসাদ ছিলেন অমরনাথ তীর্থে।

—না। অমরনাথ দর্শনে যাবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাননি।

তোমার কোনওদিন সন্দেহ হয়নি যে, যশোদা কাপুর একজন ধনীব্যক্তি, ছদ্মবেশে তোমার সঙ্গে বাস করছে?

—না, সেরকম সন্দেহ হয়নি। যদিও মাঝে মাঝে অবাক লাগত, যখন দেখতাম ওঁর কলমটা লাইফ-টাইম শেফার্স; ওঁর তুলিগুলো উইন্ডসর নিউটনের সেল্-হেয়ার ব্রাশ। জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে কথা। বলেছিলেন, ওঁর এক আত্মীয় খুব বড়লোক। এগুলো তারই উপহার।

—তুমি আন্দাজ করতে পার কেন তিনি নিজের পরিচয় গোপন করেছিলেন? —বোধ হয় পারি। অর্থাৎ এখন পারি। উনি বিবাহিত, কিন্তু স্ত্রী সঙ্গ বর্জিত। আর খবরে কাগজকে উনি এড়িয়ে চলতেন।

—কিন্তু এভাবে নিজের পরিচয় গোপন করে তোমাকে বিবাহ করাটা তো অপরাধ? আইনত এবং তোমার প্রতি?

—আইনত কি না জানি না; আমার কাছে তিনি কোনও অপরাধ করেননি।

—তুমি মন থেকে তাঁকে ক্ষমা করতে পারছ?

—কিসের ক্ষমা? আমরা দুজনে দুজনকে ভালবেসেছিলাম। এটা কি অপরাধ? উনি আমার পোর্ট্রেট এঁকেছেন, আমি ওঁকে গান শুনিয়েছি—এটা কি অপরাধ?

বাসু বুঝে উঠতে পারেন না—একজন আলোকপ্রাপ্তা শিক্ষিতা মহিলা কেন বুঝতে পারছে না মহাদেও প্রসাদ অপরাধী –আইনের চোখে, সমাজের চোখে, এবং যে উত্তীর্ণযৌবনা মেয়েটির জীবন তিনি পঙ্কিল করে দিয়ে গেছেন তার প্রতি।

—নিরাসক্তভাবে প্রশ্ন করেন, তুমি কখন জানতে পারলে যে, যশোদা কাপুর হচ্ছে মহাদেও খান্না?

—আজ অফিসে খবরের কাগজে ওঁর ছবি দেখে। তখনই বুঝতে পারলাম, কেন ওঁর কলমটা অত দামী, কেন উনি নিজের পূর্বপরিচয় আমাকে দিতেন না—বাল্য-কৈশোরের কোনও গল্প করতেন না। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, তিনি…তিনি….

হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। বাসু সন্তর্পণে ওর পিঠে একটা হাত রাখলেন। বললেন, ভেঙে পড়লে তো চলবে না রমা। মনকে শক্ত কর। আমাকে যে আরও অনেক কিছু জানতে হবে।

মেয়েটি চোখ মুছে আবার সোজা হয়ে বলল : বলুন?

—এবার বলো তোমার বাড়ির ঐ পাহাড়ী ময়নাটার কথা। তার নাম কী, তাকে কবে পেয়েছ, কার কাছ থেকে পেয়েছ?

—আপনি তো জানেনই ওর নাম ‘মুন্না’, আমার স্বামী ওটা আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন—সেটা শুক্রবার, মানে দোসরা সেপ্টেম্বর।

—তুমি কি খবরের কাগজে দেখেছ যে…

বাধা দিয়ে মেয়েটি বলে ওঠে, হ্যাঁ দেখেছি! আর একটা পাহাড়ী ময়নার কথা তো? এটা কেমন করে হল আমি জানি না।

—তাহলে তুমি বলতে চাইছ, আজ সকালে খবরের কাগজ দেখেই তুমি প্রথম জানতে পারলে যে, তোমার স্বামীর নাম মহাদেও প্রসাদ খান্না? কালকের কাগজ থেকে তোমার কোনো সন্দেহ হয়নি?

এবার জবাব দিতে ওর দেরি হল। একটু ভেবে নিয়ে বলল, না হয়েছিল। একটা প্রিমনিশান! প্রথম কারণ ঐ পাহাড়ী ময়নাটা, আর দ্বিতীয় কারণ লগ্‌-কেবিনের ফটোটা।

—লগ্‌-কেবিন! তুমি সেটা দেখেছ?

—হ্যাঁ, শুধু দেখেছি নয়, বাস করেছি। ওখানেই আমাদের…মানে, বিয়ের পর ওখানেই আমরা দু-রাত্রি বাস করি। সাতাশে শ্রীনগরে আমাদের বিয়ে হল। পরদিন আমরা ফিরে আসি। ঊনত্রিশ আর ত্রিশ তারিখে আমরা ঐ লগ্-কেবিনে ছিলাম।

—লগ্-কেবিনের ভাড়াটা মেটালো কে? তুমি না তিনি?

—না, উনি বললেন ওঁর এক আত্মীয় কেবিনের ভাড়াটা মিটিয়ে দেবেন। আমাদের ভাড়া লাগবে না। এখন মনে হচ্ছে, আমি কেমন করে সরল বিশ্বাসে এসব মেনে নিয়েছিলাম!

—ঊনত্রিশ ও ত্রিশ অগস্ট তোমরা দুজনে ওখানে ছিলে। তারপর?

—তারপর আমার ছুটি ফুরিয়ে গেল। আমি পহেলগাঁও ফিরে এসে কাজে জয়েন করলাম। উনি বললেন, উনি দিন-দশ বারোর জন্য শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছেন। সেখানে ওঁর একটা ঘর আছে—বিয়ের সময় যে ঘরখানায় আমরা উঠেছিলাম—সেখানেই উনি উঠবেন প্রথমে। তারপর অন্য কোথাও যাবেন।

—এ ঘরখানাতেও উনি থাকতেন না, অথচ ভাড়া গুনতেন?

—তাই তো বলেছিলেন।

—তবু তোমার সন্দেহ হল না যে, লোকটা ভবঘুরে বেকার নয়?

—হয়তো সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার হয়নি, বিশ্বাস করুন।

—তোমরা যে দুদিন ঐ লগ্-কেবিনে ছিলে তার মধ্যে তোমার স্বামী কি কারও সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন?

—হ্যাঁ, বার দুই বলেছিলেন।

—তুমি নিশ্চয়ই কান করে শোননি?

—না শুনিনি।

—রমা, তুমি আমারই বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারছ না, কাঠগড়ায় উঠলে তোমার কী দশা হবে! তোমার স্বামী বেকার, ভবঘুরে—অথচ সে লগ্-কেবিনের ভাড়া মেটায়, শ্রীনগরের ফাঁকা ঘরের ভাড়া মেটায়। তুমি বলেছ, সে তার অতীতের কথা কিছু বলেনি তবু তুমি তাকে বিয়ে করলে এবং তবু সে যখন টেলিফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছে তখন তোমার নিতান্ত মেয়েলি কৌতূহলও হল না?

—এর কী জবাব বলুন? আমি শুনিনি, টেলিফোনে কার সঙ্গে কী কথা তিনি বলেছেন।

—লগ্‌-কেবিনে গিয়ে তোমার কি মনে হয়েছিল তোমার স্বামীর কাছে জায়গাটা নতুন লাগছে?

—না। বরং উল্টো। উনি বলেও ছিলেন—ওখানে উনি এর আগেও এসেছেন।

–আর ওঁর সেই বড়লোক আত্মীয় সেবারও ওঁর হয়ে ভাড়া মিটিয়েছিল নিশ্চয়?

—সেটা আমি জিজ্ঞাসা করিনি।

—যে রিভলভারটাতে উনি খুন হয়েছেন সেটার সম্বন্ধে তুমি নিশ্চয়ই কিছু জান না, নয়?

—না, জানি। ওটা মন-বাহাদুরের রিভলভার। সে দেশে যাবার সময় আমার কাছে ওটা গচ্ছিত রেখে যায়। সেটা আমিই ওঁকে দিয়েছিলাম।

—কেন?

—উনি আমার কাছ থেকে সেটা চেয়ে নিয়েছিলেন।

— কেন?

—মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব রইল। তারপর বলল, ও-কথা থাক। ওর জবাব আমি দেব না।

—বাসুও কিছুক্ষণ নীরব থেকে হঠাৎ বলেন, মহাদেওপ্রসাদ খান্নার মৃত্যুতে তোমার আর্থিক লাভ কী হল?

অন্ধকারে মেয়েটির মুখ দেখা গেল না। কণ্ঠস্বরে বিস্ময়ের চিহ্ন। বললে, মানে?

—উনি কি কোনও উইল করেছেন? অথবা তোমাকে নমিনি করে কোনও ইন্সিওরেন্স?

—কী বলছেন আপনি? বিয়ের পর তো সাতটা দিনও তাঁর সঙ্গে বাস করিনি। আর তাছাড়া আমার জ্ঞানমতে তো তিনি নিঃস্ব। উইল বা ইনসিওরেন্সের প্রশ্নই তো ওঠে না।

এই সময়েই ওদের গাড়ির কাছাকাছি একটা ট্যাক্সি এসে থামল। ভাড়া মিটিয়ে সুজাতা এগিয়ে এল এই গাড়িটার কাছে। বাসু বললেন, কৌশিক, তুমি সুজাতাকে নিয়ে ঐ চায়ের দোকানে একটু বস। আমার সওয়াল হয়ে গেছে। একটু পরেই তোমাদের ডাকব।

কৌশিক বিনা বাক্যব্যয়ে নেমে গেল।

বাসু বলেন, এখন তৃতীয় ব্যক্তি কেউ নেই। খোলাখুলি একটা কথা বল রমা! এমন তো হয়নি যে, তুমি হঠাৎ জানতে পেরে গেলে যে, তোমার স্বামী বিবাহিত, নাম ভাঁড়িয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে, তারপর তর্কাতর্কি রাগারাগির মধ্যে হঠাৎ…

—আমি ওঁকে গুলি করে মেরে ফেললাম?

—হতেও তো পারে?

—আপনি বদ্ধ উন্মাদ! আমি নিজ হাতে…কী বলছেন আপনি!

বাসু বলেন, আর একটা কথা। মিসেস্ কৃষ্ণমাচারী তোমার হস্তাক্ষরের সঙ্গে পরিচিত?

—না বোধ হয়। কেন?

—আমি চাইছি তোমাকে দিয়ে একটা চিঠি লিখিয়ে নিতে। যাতে উনি ‘মুন্না’কে আর খান্নাজীর চিঠির বাণ্ডিল যে বাক্সে আছে সেইটা আমাকে দিয়ে দেন।

রমা বলল, চিঠিগুলো কোনও বাক্সে নেই। আছে আমার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে। তার চাবিটা আপনি নিয়ে গেলে আমার হাতচিঠিতে ওঁর অবিশ্বাস হবে না। কিন্তু কথা দিন, চিঠিগুলো আপনি পড়বেন না?

পড়ব না মানে? আলবৎ পড়ব। পুলিস সেগুলো ‘সীজ’ করার আগে আদ্যন্ত পড়ে নোট নেব।

রমা বলল, তাহলে চাবি আমি দেব না।

—কী আশ্চর্য! কেন? দেবে না কেন?

—না! সে আমার নিজস্ব জিনিস। আপনাদের পড়তে দেব কেন?

—দিতে তুমি বাধ্য হবে রমা। বুঝতে পারছ না—তুমি খুনের আসামী হতে চলেছ! ও চিঠি পুলিসে দেখবেই!

—না। দেখবে না। আমি শুধু ‘মুন্না’কে নিয়ে আসার কথা লিখে দিচ্ছি।

—রেশ তাই দাও। কিন্তু চিঠিগুলো তোমার ‘সীজ’ হবেই।

রমা কলম বার করে মিসেস্ কৃষ্ণমাচারীকে একটা হাতচিঠি লিখে দিল। বাসু-সাহেবকে পাখিটা দিয়ে দেবার জন্য।

বাসু বললেন, তুমি শ্রীনগরে এসেছিলে কেন? আমার দেখা না পেলে কোথায় যেতে?

—একবার সেই ঘরটা দেখতে যেতাম। উনি যেখানে থাকবেন বলেছিলেন।

—শুধু সেই জন্যেই ছুটে এসেছ এমন করে? সে ঘর তো এখন তালাবন্ধ!

—না। শুধু সেজন্য নয়। তারপর আমি সূরযপ্রসাদজীর সঙ্গে দেখা করতাম আর সব কথা খুলে বলতাম।

—তুমি কি জান যে, মহাদেও প্রসাদের স্ত্রী এখন ও বাড়িতে আছেন? এবং মহিলা অত্যন্ত দুর্মুখ? রমা চুপ করে কী ভাবতে থাকে।

—কী হল? যাবে সেই মহিলার সামনে?

-–আপনি কী পরামর্শ দেন?

—আমার পরামর্শ তুমি শুনবে?

—শুনব।

বাসু-সাহেব সুজাতাকে ডেকে আনলেন। বললেন, এ হচ্ছে রমা দাসগুপ্তা। আমি চাই সংবাদপত্রের অতি-উৎসাহী সংবাদদাতাদের হাত থেকে একে বাঁচাতে। আশা করি তুমি বুঝতে পারছ, আমি কী বলতে চাই। যে জন্য লিখেছিলাম, একটা ওভারনাইট ব্যাগ নিয়ে এস।

সুজাতা বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ, বুঝেছি।

রমা বেঁকে বসল। বলল, না, আমি কোথাও যাব না।

—তার মানে সুরমা খান্নার সামনেই তুমি দাঁড়াতে চাও?

—না। নিশ্চয় নয়।

বাসু বলেন, রমা, তুমি কেন বুঝতে পারছ না? মন-বাহাদুর রিভলভারটা কার কাছে গচ্ছিত রেখে গিয়েছিল জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিস তোমাকে খুঁজবে। তুমি ঐ লগ্‌-কেবিনে গিয়েছিলে জানতে পারার পর তোমাকে সরাসরি অভিযুক্ত করবে?

—মার্ডার চার্জে?

—হ্যাঁ।

—আপনি আমাকে আত্মগোপন করতে বলছেন?

—আদৌ নয়। মাত্র চল্লিশ কি ছত্রিশ ঘণ্টার জন্য তুমি সহজলভ্য থাকবে না। ব্যস্! রমা একটু ভেবে নিয়ে বলল, বেশ, কোথায় যেতে হবে বলুন?

সুজাতা কথোপকথনের সূত্রটা তুলে নিয়ে বলল, আসুন। আমার সঙ্গে। বাসু-সাহেবের দিকে ফিরে বলল, হোটেলে উঠে কি আপনাকে ফোন করব?

বাসু একটু ধমকের সুরে বলেন, তুমিও যে কৌশিকের মতো নিরেট হয়ে উঠছ সুজাতা! আমি যখন কোনও রহস্য সমাধান করতে বসি তখন কতকগুলো তথ্যের বিষয়ে আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেইল্স খুঁজতে থাকি; আর অপর একজাতের তথ্য সম্বন্ধে আমার স্ট্যান্ড হচ্ছে : হোয়্যার ইগরেন্স ইজ ব্লিস্ ইটস্ ফলি টুবি ওয়াইজ। কিছু বুঝলে?

সুজাতা হেসে বললে : জলের মতো।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *