উলের কাঁটা – ৪

চার

পহেলগাঁওয়ে গাড়িটা এসে পৌঁছালে কৌশিক প্রশ্ন করে, প্রথমে কোথায় যাবেন? থানায়?

—না, প্রথমে আমরা একটা স্ন্যাক-বারে ঢুকব, আমার শীত-শীত করছে, গরম এক পেয়ালা কফি পান সেরে কাজে নেমে পড়ব।

সূরযপ্রসাদের ড্রাইভার নির্দেশমত ট্যুরিস্ট-অফিসের পাশে কাফেটেরিয়ায় গাড়িটা পার্ক করল। বাসু-সাহেব সোয়েটারের উপর কোটটা চড়িয়ে নেমে এলেন। ওরা দু’জনে ঢুকে পড়ল রেস্তোরাঁটায়। বেশ ভিড় আছে। দূরের একটি টেবিল বেছে নিয়ে দুজনে বসলেন। বয় মেনু-কার্ড নিয়ে হাজির হল। বাসু বললেন, এক প্লেট চিকেন স্যান্ডুইচ আর একপট কফি দাও। দুধ-চিনি মিশিও না। আর দরজার সামনে একটা সিনেমন-রঙের অ্যাম্বাসাডার আছে, তার ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করে এস—কী খাবে। যা চাইবে তা দিও।

ছোকরা চলে যেতেই কৌশিক বলে, আপনি তখন বললেন, আমার কাজ হচ্ছে শ্রীনগরের যাবতীয় উলের দোকানে সন্ধান করা, তাহলে মত বদলিয়ে আবার আমাকে এখানে নিয়ে এলেন যে?

বাসু বললেন, ভেবে দেখলাম, শ্রীনগরের চেয়ে এখানকার কোন উলের দোকানেই সূত্রটা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানে উলের দোকান দু-তিনটির বেশি হবে না। তুমি আমার সঙ্গে এখানে আজ তালিম নিয়ে নেবে। কাল সারাদিন শ্রীনগরে ঐ পদ্ধতি অবলম্বন করে ‘অ্যারিয়াডনেজ থ্রেড’ খুঁজবে।

—অ্যারিয়াডনেজ থ্রেড’ মানে?

—’লিজেন্ডস আর গ্রীস্ অ্যান্ড রোম’ পড়নি? মিনটর-কে খুঁজে পেতে স্বয়ং থেসিয়াস্ অ্যারিয়াডনের সুতো ধরে গুটি গুটি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়েছিলেন।

—এখানকার থানা অফিসে যাবেন নাকি?

—যেতে হতে পারে। যোগীন্দর সিং যদি একা থাকে তাহলে ইতিমধ্যে পুলিস কতটা এগিয়েছে জানতে পারব। আর সেখানে যদি শ্রীমান বর্মন বহাল তবিয়তে হাজির থাকেন, তাহলে কোনও আশা নেই।

স্যান্ডুইচ-কফি পানান্তে দু’জনে বেরিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে-বসা ক্যাশিয়ারকে বাসু-সাহেব প্রশ্ন করেন—কিছু উল কিনতে চাই। এখানে কোথায় পাব বলতে পারেন?

—উল? নিটিং উল?

—হ্যাঁ, এই নমুনা আছে।—পকেট থেকে অ্যারিয়্যাডনের সুতোটা বার করে দেখান। সেদিকে নজর না দিয়েই ছেলেটি বললে, ঠিক উল্টো ফুটপাথে বড় দোকান আছে, ‘পহালগাঁও ভ্যারাইটি স্টোরস্’। ওখানে খোঁজ করুন। না পেলে স্টেট ব্যাঙ্কের উল্টো দিকে ‘নিউ উলেন স্টোরসে’ পেতে পারেন।

ভ্যারাইটি স্টোরসের দোকানদার বলল, হ্যাঁ উল ওরা বেচে কিন্তু এই নমুনার উল ওদের স্টকে নেই। অর্ডার দিলে সাতদিনের মধ্যে আনিয়ে দিতে পারে।

বাসু-সাহেব বলেন, দিন-দশেক আগে কিন্তু আপনার দোকান থেকেই আমি চার আউন্স কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। এই নমুনার!

লোকটি আবার ওঁর হাত থেকে নমুনাটা নিয়ে যাচাই করল। বলল, মনে হচ্ছে আপনি গতি করছেন। আপনি নিজে এসেছিলেন?

—না, আমার বোন এসেছিল।

—তাহলে আমাদের দোকান নয়। ‘নিউ উলেন স্টোরস্’ থেকে হয়তো তিনি কিনেছিলেন। ওখানে খোঁজ করুন। নেহাৎ না পেলে আমাদের অর্ডার দিতে পারেন; দিন-সাতেক পরে পাবেন।

বাসু বলেন, সাত দিন তো আমি এখানে থাকব না। শ্রীনগরে সব চেয়ে বড় দোকান কোনটা? আপনারা যেখান থেকে ‘হোলসেল’ মাল আনেন?

—আপনি খামোকা দৌড়াদৌড়ি করবেন না। শ্রীনগরের সেন্ট্রাল মার্কেটে ‘নিউ কাশ্মীর এম্পোরিয়ামে’ খোঁজ করবেন। সেখানে না পেলে বুঝবেন এ নমুনার মাল এ তল্লাটে মিলবে না। দিল্লি থেকে আনাতে হবে।

বহুৎ সুক্রিয়া জানিয়ে বাসু পথে নামলেন।

‘নিউ উলেন স্টোরসে’র সেলসম্যান নমুনা দেখেই বলল, জী হাঁ, পাবেন। তবে কতটা চাই? আমার কাছে একটা পেটি মাত্র অবশিষ্ট আছে। অবশ্য আপনি অর্ডার দিলে আমি আনিয়ে দিতে পারি। হপ্তাখানেক দেরি হবে।

বাসু বললেন, সাতদিন তো আমরা এখানে থাকব না। আমার যতদূর মনে হচ্ছে দিন পনের আগে আপনার দোকানে এই নমুনার উলের অনেকগুলো পেটি দেখেছিলাম।

লোকটি বলল, হিসাবে আপনার গতি হল দাদা, পনের দিন নয়, দিনসাতেক আগে ঐ নমুনার চার-ছয় পেটি ছিল। সে মাল বিক্রি হয়ে গেছে।

বাসু বললেন, আচ্ছা আপনার দোকানে আর একজন বসেন না? ফর্সা মতন দেখতে?

—জী হাঁ, যমুনাপ্রসাদ, কেন কী হয়েছে?

—আমি তো তাকে বলে গিয়েছিলাম, ঐ ছয় পেটিও আমি কিনব। তখন আমার কাছে টাকা ছিল না।

—অ্যাডভান্স দিয়ে গিয়েছিলেন? স্লিপ দেখান?

—না। অ্যাডভান্স দিইনি; কিন্তু…

—‘কিন্তু’ কিছু নেই দাদা। ওটা অর্ডারি মাল ছিল। যমুনাপ্রসাদ অমন কথা বলতেই পারে না।

—অর্ডারি মাল? কে অর্ডার দিয়েছিল বলুন তো?

ইতিমধ্যে আর একজন খদ্দের আসায় সেলসম্যান তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাসু নীরবে পাইপ টেনে চলেন। ভদ্রলোক দু-তিন রকম উলের নমুনা দেখে, দরদাম করে, কিছু না কিনেই চলে গেলেন।

সেলসম্যান ওঁর দিকে ফিরে বল্ল, ইয়েস স্যার, আর কোনও মাল দেখবেন? ঐ শেডের কাছাকাছি?

বাসু বলেন, দেখব। কিন্তু তার আগে বলুন তো অর্ডারটা কে দিয়েছিলেন?

লোকটা পিছন ফিরে মাল বার করছিল। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশুদ্ধ উর্দুতে যা বলল, বাঙলায় তার নির্গলিতার্থ; এ-সব খেজুরে আলাপ করে কি পেট ভরবে দাদা? সে মাল তো এতদিনে বোনা শেষ হয়ে গেছে।

বাসু তৎক্ষণাৎ বলেন, না, আমার বোনের জন্যই কিনতে এসেছি। তাই জিজ্ঞাসা করছি আমার বোনই মালটা কিনেছে কি না। তাহলে হয়তো আর উলের দরকারই হবে না।

লোকটা এর জবাবে যা বলল তা অপ্রত্যাশিত। জিজ্ঞাসা করল : ক্যা আপ্ বাংগালি হাঁয় সার?

—হ্যাঁ, কেন বলুন তো?

—আর আপনার ঐ বহিনজী সামনের স্টেট ব্যাঙ্কে চাকরি করেন?

—বাসু উল্লসিত হয়ে বলেন, এক্সজ্যাক্টলি! তাহলে সেই কিনেছে?

সেলসম্যান উলের পেটিগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে উর্দু ছেড়ে এতক্ষণে বাঙলা বলবার চেষ্টা করে : পহিলে তো বহিনকে পুছ করবেন, তা খরিদ করতে আসবেন? বাসু একগাল হেসে বলেন, তা ঠিক। তা হোক ঐ এক পেটি যেটা আছে ওটা আমি নিয়ে যাব। কী জানি যদি কম পড়ে।

এক পেটি উলের দাম মিটিয়ে বহুৎ ধন্যবাদ দিয়ে বাসু পথে নামতেই কৌশিক বলে, ভদ্রমহিলার নামটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

বাসু গম্ভীর ভাবে বললেন, তাহলে ঠেঙানি খেতে হত। বোন উল কিনেছে কিনা সেই খবরটা না জানাতেই লোকটা আমাকে পাঁচ কথা শোনালো, তারপর কোন্ আক্কেলে জিজ্ঞাসা করব—আমার বোনের নাম কী?

—না একটু ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করা যেত।

বাসু থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। বলেন, বেশ তো, আমি অপেক্ষা করছি। তুমি জেনে এস। মাসির সম্বন্ধে দ্বিতীয় যে তথ্যটা জানা আছে তা হচ্ছে তার ‘ব্রা’-র মাপ বত্রিশ। একটু ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে দেখ না—আগে যিনি উল কিনেছেন তাঁর ব্র্যাসিয়ারের মাপ কি বত্রিশ ইঞ্চি?

কৌশিক হাত দুটি জোড় করে বলে, ঘাট হয়েছে মামু। মাপ চাইছি। অতঃ কিম্?

—স্টেট ব্যাঙ্কে গিয়ে বোনের তত্ত্ব তালাশ নেওয়া।

—কিন্তু আপনার বোন মানে আমার সেই অজ্ঞাত মাসিমার সম্বন্ধে মাত্র দুটি তথ্যই তো শুধু আমরা জানি-তিনি হপ্তাখানেক আগে চার পেটি উল কিনেছিলেন এবং তাঁর ব্র্যাসিয়ারের মাপ মাত্র বত্রিশ। খোঁজটা নেবেন কেমন করে?

বাসু বলেন, আমারই ভুল হয়েছে। তোমাকে রানুর সঙ্গে দিয়ে সুজাতাকে নিয়ে এলে কাজটা সহজ হত। এস, দেখ কিভাবে বোনের নাড়ি-নক্ষত্র বার করি।

স্টেট ব্যাঙ্কে ঢুকে বাসু-সাহেব একটি কাউন্টারে এগিয়ে গেলেন। ওয়ালেট থেকে একখানা পাঁচশ টাকার ট্রাভেলার্স চেক বার করে বললেন, ক্যাশ করব।

কাউন্টারে-বসা অল্পবয়সী ছেলেটি বলল, তারিখ বসিয়ে সই করে দিন।

তারিখ বসিয়ে, সই করে ট্রাভেলার্স চেকটা দিয়ে বাসু বলেন, পাঁচখানা একশ টাকার।

ছোকরা যতক্ষণ এন্ট্রি করতে ব্যস্ত ততক্ষণে বাসু-সাহেব মোটামুটি চোখ বুলিয়ে নিয়েছেন। মহিলা কর্মী না-হোক জনা-পাঁচেক। সকলের বয়সই পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ। একজনকে বাদ দেওয়া যেতে পারে—তিনি নিঃসন্দেহে অবাঙালিনী। আরও একজন ছাঁটাই হল—তাঁর ব্রা-র মাপ অন্তত আটত্রিশ, সম্ভবত চল্লিশ। বাকি রইল জনা তিনেক। এর মধ্যে কে হতে পারে?

কাচের খোপের ভিতর দিয়ে বেরিয়ে এল একটা হাত। তাতে পাঁচখানা করকরে একশ টাকার নোট।

বাসু ইংরাজীতে বলেন, মাপ করবেন, আপনাদের এখানে একজন বাঙালি মহিলা কর্মচারী আছেন। তাই না?

ভদ্রলোকের ভ্রূকুঞ্চন হল। বলেন, কেন বলুন তো?

—না, মানে দিন পাঁচেক আগে ভদ্রমহিলার সঙ্গে এখানেই আলাপ হয়। নামটা ভুলে গেছি। আমিও বাঙালি কি না। তাই অনেক কথা হয়েছিল। আমি শ্রীনগর যাচ্ছি শুনে উনি একটি উলের নমুনা দিয়ে বলেছিলেন এক পেটি উল কিনে আনতে।

বাসু-সাহেব উলের পেটিটা তুলে দেখান।

ভদ্রলোক বলেন, আই সী। আপনি তাহলে রমা দাসগুপ্তার কথা বলছেন। হ্যাঁ মিস্ দাসগুপ্তার উল-বোনার বাতিক আছে বটে। কিন্তু তিনি তো ছুটিতে আছেন।

—ওঁর বাড়ির ঠিকানাটা যদি কাইন্ডলি—

—কিন্তু বাড়িতে তো ওঁকে পাবেন না। উনি স্টেশান-লীভ করার অনুমতিসহ ছুটি নিয়েছেন দিন সাতেকের। আজ থেকেই। তবে আপনার অসুবিধা কিছু নেই। প্যাকেটটা আমাকে দিয়ে যেতে পারেন। মিস্ দাসগুপ্তা ফিরে এলে দিয়ে দেব।

—না, সেজন্য নয়। মিস্ দাসগুপ্তা বলেছিলেন, ‘ক’লকাতা ফেরার পথে ওঁর বাড়ি থেকে একটা প্যাকেট উঠিয়ে নিতে। ওঁর কোন ক’লকাতাবাসী আত্মীয়ের জন্য পাঠাতে চান। ওঁর বাড়ির লোকজনের কাছে নিশ্চয়ই প্যাকেটটা রেখে গেছেন।

—না, তারও সম্ভাবনা নেই। বাড়িতে উনি একাই থাকেন। মিস্ দাসগুপ্তা একজন ‘কনফার্মড-স্পিন্সটার’। তবে হ্যাঁ, ওঁর প্রতিবেশিনী মিসেস্ কৃষ্ণমাচারীর কাছে রেখে যেতে পারেন। চেষ্টা করে দেখুন। এই রাস্তা ধরে কিছু দূর গেলেই দেখতে পাবেন একটা মস্ত বাড়ি তৈরি হচ্ছে—একটা নতুন সিনেমা ‘হল’। সেটাকে বাঁয়ে রেখে আরও একটু আগিয়ে গেলে পাবেন একটা মেথডিস্ট চার্চ। তার পিছনেই পর পর তিনখানা বাড়ি। মাঝেরটা মিস্ দাসগুপ্তার। শেষ বাড়িটা মিস্টার কৃষ্ণমাচারীর

অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাসু-সাহেব ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন ম্যানেজারের ঘরের সুইং ডোরটা খুলে গেল এবং বের হয়ে এলেন সি. বি. আই. কুলতিলক সতীশ বর্মন। ওঁকে দেখেই থেমে পড়েন।

—গুডমর্নিং বাসু-সাহেব। আপনি এখানে?

হাতেই ধরা ছিল পাঁচকেতা একশ টাকার নোট। সেটা দেখিয়ে বললেন, ট্রাভলার্স চেক্ ভাঙাতে। আর আপনি?

—বহাল তবিয়তেই আছি। আচ্ছা চলি, নমস্কার।

সতীশ বর্মন একটু দ্রুতগতিই স্থানত্যাগ করলেন। যে ছেলেটি ট্রাভলার্স চেক ভাঙিয়ে দিয়েছিল তাকেই প্রশ্ন করলেন বাসু, পুলিস কেন? চুরি-ডাকাতি হয়েছে নাকি কিছু?

—ছেলেটি ভুরু কুঁচকে বললে, পুলিস? উনি কি পুলিসের লোক?

—হ্যাঁ, তাই তো জানি।

—আশ্চর্য। আমাকে উনি বললেন, লাইফ ইন্সিওরেন্স-এর অফিসার!

—তাই নাকি? কী জিজ্ঞাসা করছিল আপনাকে?

—আমাদের দারোয়ান মন-বাহাদুরের ঠিকানা। বললে, মন-বাহাদুরের একটা ইন্সিওরেন্স পলিসির ব্যাপারে তার হোম অ্যাড্রেস চায়। ওকে তাই ম্যানেজার সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।

বাসু অতঃপর এগিয়ে গেলেন ম্যানেজারের ঘরের দিকে। সুইং ডোরের উপর দিয়ে দেখলেন, ম্যানেজার একাই বসে কাজ করছেন।

—আসতে পারি ভিতরে?

—ইয়েস, কাম ইন প্লীজ। টেক য়োর সীট।

বাসু আসন গ্রহণ করেই নিজের ভিজিটিং কার্ডখানা বার করে দিয়ে ইংরাজীতে বললেন, আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি কি?

ম্যানেজার কী জানি কেন চটে উঠলেন। বললেন, প্রশ্নগুলো কি আমাদের দারোয়ান মন-বাহাদুর সংক্রান্ত?

—এক্সজ্যাক্টলি!

ভদ্রলোক তিক্তবিরক্ত স্বরে বললেন, একই কথা আমি কতবার বলব মশাই? মন-বাহাদুরের হোম-অ্যাড্রেস দিয়েছি, তার রিভলভারটা তার নিজস্ব, সরকারি নয়। তার নম্বর কত তা আমি জানি না, আমার জানার কথাও নয়; সে রিভলভার নিয়ে দেশে গেছে না এখানে কারও কাছে রেখে গেছে তা আমি জানি না। আমাদের খাতায় সে ছুটিতে আছে। আর কী বলতে হবে? বলুন?

বাসু ধীরেসুস্থে বললেন, ধন্যবাদ। কিন্তু এ কথাগুলি কি আপনি আমাকে ইতিপূর্বে বলেছেন? এবং আমি একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করছি?

—আপনাকে বলিনি, কিন্তু এস. ডি. সাহেবকে বলেছি, কী নাম যেন ঐ পাঞ্জাবী ও সি.-কে বলেছি, এইমাত্র যে ভদ্রলোক এজাহার নিয়ে গেলেন তাঁকে বলেছি!

বাসু গম্ভীর হয়ে বলেন, আপনাকে কি বলা হয়েছে—এক্স-এম. পি. লেট মহাদেও প্রসাদ খান্না যে রিভলবারের গুলিতে হত হয়েছেন সেটি আপনাদের দারোয়ান মন-বাহাদুরের?

ভদ্রলোক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন : বলেন কী মশাই?

বাসু গম্ভীরভাবে বলেন, আমি গ্র্যাটিস্ লীগাল অ্যাডভাইস কাউকে দিই না; কিন্তু এ-ক্ষেত্রে দিচ্ছি, কারণ আপনি আমার প্রশ্নে বিরক্ত হয়েছেন। আপনার দারোয়ানের রিভলভার তার নিজস্ব সম্পদ হলেও সেই অস্ত্রটা দিয়েই সে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা রক্ষা করে। ফলে সেই রিভলভারের নম্বর না-জানা ব্যাঙ্ক-ম্যানেজারের একটা ত্রুটি। আপনার ডিপার্টমেন্ট কী বলবে জানি না, কিন্তু সাক্ষীর কাঠগড়ায় যখন সে কথা স্বীকার করবেন…

ভদ্রলোক বাধা দিয়ে বলেন, সাক্ষী! আমি কেন সাক্ষী দিতে যাব?

—যেহেতু আমি আপনাকে ‘সমন’ ধরাবো।

ভদ্রলোক আবার বসে পড়েন। বলেন, কিছু মনে করবেন না, একই কথা বারে বারে বলতে কার ভালো লাগে বলুন। তাছাড়া কেসটার সত্যিকারের গুরুত্বের বিষয়ে কেউই আমাকে কিছু জানাননি। আর য়ু শ্যিওর, স্যার? মন-বাহাদুর মহাদেও প্রসাদকে খুন করেছে?

—ডিড আই সে দ্যাট?

—না, মানে তার রিভলভারের গুলিতেই…

বাসু বলেন, মিস্টার সূরযপ্রসাদ খান্না আমার ক্লায়েন্ট। ঐ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমি অনুসন্ধান করছি। এবার কি আপনি জানাবেন আমি যা জানতে চাই?

—কেন জানাব না? বলুন, কী জানতে চান? চা খাবেন?

—মন-বাহাদুর কবে থেকে ছুটিতে আছে?

—সাতই অগস্ট থেকে। যতদূর জানি সে দেশে আছে, মানে নেপালে। হোম অ্যাড্রেসটা চাই?

—হ্যাঁ চাই। আচ্ছা, মন-বাহাদুর তার রিভলভারটা নিয়ে দেশে গেছে অথবা এখানে রেখে গেছে তা জানতে পারেন না?

—কেমন করে জানব বলুন? মন-বাহাদুর এক্স-আর্মি ম্যান। একজন ব্রিগেডিয়ারের দেহরক্ষী ছিল। অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তাঁরই সুপারিশে ব্যাঙ্কে ওর চাকরি হয়েছিল। এবং এও জানি তাঁরই সুপারিশে ও একটি রিভলভারের লাইসেন্স পায়। অস্ত্রটা ওর নিজের। নম্বরটা আমার টুকে রাখা উচিত ছিল, নয়?

বাসু সে কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করেন, মন-বাহাদুর এখানে কোথায় থাকত? তার লোক্যাল অ্যাড্রেসটাও চাই।

—মন-বাহাদুর এখানে সপরিবারে থাকত না। আমাদের একজন এমপ্লয়ীর সঙ্গে থাকত।

—আই সী। তাঁর কী নাম?

—শ্রীরমা দাসগুপ্তা। তিনিও ছুটিতে আছেন।

—ও! তিনি কতদিন এখানে পোস্টেড আছেন?

—বছর তিনেক। কেন বলুন তো?

এ কথারও জবাব না দিয়ে নমস্কার করে বেরিয়ে এলেন বাসু-সাহেব। বাইরে আসতেই কৌশিক বলে, মন-বাহাদুরের রিভলভারটাই যে মার্ডার-ওয়েপন তা কেমন করে বুঝলেন?

—নিশ্চিতভাবে জানি না। সম্ভাবনা নিরানব্বই পয়েন্ট নাইন পার্সেন্ট। যেহেতু শৰ্মা, যোগীন্দর এবং বর্মন মন-বাহাদুরের খোঁজ নিচ্ছে এবং ম্যানেজার কথাপ্রসঙ্গে নিজেই স্বীকার করে বসল বর্মন ঐ রিভলভারের বিষয় প্রশ্ন করেছিল। আর লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট—ঐ ‘অ্যারিয়্যাডনেজ থ্রেড’।

— আবার ‘অ্যারিয়্যাডনেজ থ্রেড’?

—নয়? লগ্‌কেবিনে যে রিভলভারটা পাওয়া গেল তার মালিক মন-বাহাদুর। এবং সে বাস করে স্টেট ব্যাঙ্কের এমন একজন কর্মচারীর বাড়িতে যেখানে বন্দী হয়ে আছেন অ্যারিয়্যাডনে!

পথে বেরিয়ে কৌশিক বলল, আচ্ছা, অমন বে-মক্কা মিথ্যা কথা বলতে আপনার বাধে না?

—মিথ্যা কথা আবার কখন বললাম?

—বললেন না? এক এক জায়গায় এক এক ঝুড়ি বলেছেন। নিউ উল হাউসে বলেছেন, যমুনাপ্রসাদকে–

—জাস্ট এ মিনিট! ‘যমুনাপ্রসাদ’ নামটা আমি বলিনি। বলেছি ‘ফর্সামতন আর লম্বামতো লোক’। তা কাশ্মীরের কোন দোকানে তোমার মত কালো বিক্রেতা বসে থাকে? আর ব্যাপারটা কী জানো—এন্ড জাস্টিফাইজ দ্য মীন্‌স। উদ্দেশ্য সৎ হলে,—হলপ যখন নেওয়া নেই তখন অমন দু-চারটে মিথ্যে কথায় দোষ ধরতে নেই। ‘ত্বয়া হৃষিকেশ হৃদিস্থিতেন’–বুঝলে না? আমরা তো উলের কাঁটায় জড়ানো অ্যারিয়্যাডনের সুতোয় বাঁধা পুতুল। তিনি যেমন নাচাচ্ছেন তেমনি নাচছি।

গাড়িটা যখন মেথডিস্ট চার্চের কাছাকাছি এসে দাঁড়াল তখন উলের প্যাকেট হাতে এগিয়ে চললেন বাসু-সাহেব। পিছন পিছন কৌশিক। প্রথম বাড়িটা অতিক্রম করে দ্বিতীয় বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালেন ওঁরা। ছোট একতলা বাড়ি। সামনের দরজায় তালা ঝুলছে। দেওয়ালের পাশে একটা ছোট্ট নেমপ্লেট : রমা দাসগুপ্তা।

দরজায় যখন তালা মারা তখন খবরটা ঠিকই। ভদ্রমহিলা পহেলগাঁওয়ে নেই; অন্তত বাড়িতে বা তাঁর কর্মস্থলে নেই। বাসু-সাহেব অগত্যা শেষ বাড়িটায় হানা দিলেন। এটাও ছোট একতলা বাড়ি। করোগেটেড টিনের ছাদ। সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ : তা হোক চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বার হচ্ছে। এখানেও অনুরূপ নেম প্লেট : এ. জে. কৃষ্ণমাচারী।

বাসু-সাহেব কলিং বেল বাজালেন। দরজা খুলে গেল। একজন মাদ্রাজী ভদ্রমহিলা দরজা অল্প একটু ফাঁক করে মুখ বাড়িয়ে ইংরাজীতে বললেন, কাকে চাই?

বাসু-সাহেব বললেন, রমা দাসগুপ্তাকে।

দরজায় ল্যাচ-কী লাগানো আছে। ফাঁক দিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, পাশের বাড়ি; কিন্তু সে তো নেই।

বাসু বললেন, হ্যাঁ, তালা মারা দেখলাম। সে পহেলগাঁওয়েই আছে তো?

—না নেই। আপনি কোথা থেকে আসছেন?

—কলকাতা থেকে। মাপ করবেন, এক গ্লাস জল পাব?

—ও শ্যিওর। আসুন, ভিতরে এসে বসুন।

দরজাটা খুলে গেল। ছোট্ট বসার ঘর; কিন্তু শৌখীন ভাবে সাজানো। আড়ম্বর নেই, রুচির পরিচয় আছে। ভদ্রমহিলা কাচের গ্লাসে দু-গ্লাস জল নিয়ে এলেন ট্রে-তে করে। সামনের টি-পয়ে নামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনি কি রমার কোনও আত্মীয়?

—না, আত্মীয় ঠিক নয়, তবে আমিও বাঙালি। একটা বিশেষ প্রয়োজনে মিস্‌ দাসগুপ্তাকে খুঁজছি।

ভদ্রমহিলা বললেন, আপনার একটু ভুল হল। রমা এখন মিস্ নয়, মিসেস্।

–তাই নাকি? ওর বিয়ে হয়ে গেছে? কতদিন?

—সপ্তাহখানেক। খবরটা এখনও জানাজানি হয়নি। বেশি বয়সের বিয়ে তো। তাই ওর নেমপ্লেটটাও এখনও বদলানো হয়নি; ওর নাম এখন মিসেস রমা কাপুর।

কৌশিকের মনে পড়ল স্টেট ব্যাঙ্কের সকলেই ওকে মিস্ দাসগুপ্তা বলে উল্লেখ করেছিল। নিতান্ত পাশের বাড়ি বলেই এ ভদ্রমহিলা খবরটুকু জেনেছেন।

বাসু প্রশ্ন করেন, ওর স্বামীর নাম কী?

—জে. পি. কাপুর।

—তিনিই বা কোথায়?

—তিনি এখন এখানে থাকেন না। কোথায় থাকেন, তাও জানি না। আপনি কি মিসেস্ কাপুরের জন্য কোনও চিঠি রেখে যাবেন?

—চিঠি নয়, একটা উলের প্যাকেট।

সেটা হাতে নিয়ে মিসেস কৃষ্ণমাচারী বলেন, হ্যাঁ, এই রঙেরই একটা সোয়েটার ও বুনছিল বটে। আপনাকে আনতে বলেছিল বুঝি?

সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাসু বলেন, মিসেস্ কাপুর কখন বেরিয়েছেন বাড়ি ছেড়ে?

–এই তো আধঘণ্টা আগে। সকালবেলা অফিস গেল। তারপরই হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এল। আমাকে বলে, আমাকে এক্ষণি যেতে হবে। আড়াইটার বাসটা হয় তো এখনও গেলে পাব। বলেই ছুটে বেরিয়ে গেল।

—আড়াইটার বাসটা এখান থেকে কোথায় যায়?

—শ্রীনগর।

ঠিক তখনই ভিতর বাড়ি থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আইয়ে বৈঠিয়ে চায়ে পিজিয়ে।’

মিসেস্ কৃষ্ণমাচারী হেসে বললেন, চা খাবেন নাকি?

বাসু-সাহেব সে কথায় জবাব না দিয়ে বললেন, ভিতর থেকে কে ও কথা বলল?

—ও কিছু নয়। একটা পাহাড়ী ময়না। রমার। যাবার সময় পাখিটা আমার বাড়িতে রেখে গেছে। চা খাবেন?

—গরজ বড় বলাই। বাসু বললেন, চা তেষ্টা পেয়েছে বটে তবে শুধু শুধু আপনাকে বিব্রত করা।

—কিছুমাত্র না। আমি চায়ের জল বসাতেই যাচ্ছিলাম। এক কাপের বদলে কেলিতে তিনকাপ জল নেওয়া বই তো নয়।

ভদ্রমহিলা প্রস্থানোদ্যতা হতেই বাসু বলেন, পাখিটাকে একটু নিয়ে আসবেন? দারুণ কৌতূহল হচ্ছে। এমন সুন্দর ‘বোল’ পড়ল যে, আমি ভাবলাম মানুষ কথা বলছে।

মিসেস্ কৃষ্ণমাচারী ভিতর থেকে কালো-কাপড়ে ঢাকা একটা খাঁচা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখলেন। ভিতর থেকে পাখিটা বলল, ‘হ্যালো।’

কৌশিক ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘রাম-রাম।’

খাঁচার ভিতর থেকে প্রতিধ্বনি হল : রাম রাম!

ভদ্রমহিলা চায়ের জল বসাতে চলে গেলেন। বাসু-সাহেব ঝুঁকে পড়ে অস্ফুটে বললেন : রাম নাম সৎ হ্যায়!

পাখিটা শুধু বলল : রাম নাম!

—রাম নাম সৎ‍ হ্যায়!

—রাম নাম সৎ হ্যায়!

কৌশিক বললে, সবই যখন হল তখন ফিঙ্গার-প্রিন্ট ভেরিফিকেশনটাও হয়ে যাক। সন্তর্পণে সে কালো কাপড়টা সরিয়ে দিল। দুজোড়া চোখের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হল যেখানে ময়নাটার ডান পায়ের অনুপস্থিত মধ্যমাটা থাকার কথা।

বাসু অস্ফুটে বললেন, মুন্না! তোর চূড়ান্ত সনাক্তকরণটা হয়ে গেল!

ময়নাটা ঘাড় কাৎ করে অপরিচিত মানুষ দুটোকে দেখে নিল। তারপর সে যে দীর্ঘ বোলটা পড়ল তাতে দুজনেই বজ্রাহত হয়ে গেলেন। পাখিটা স্পষ্টভাবে বলল :

—রমা! মৎ মারো…পিস্তল নামাও!… দ্রুম!… হায় রাম!

কৌশিক চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওঠে! বাসু দু-হাতে ওর খাঁচাটাকে চেপে ধরে বললেন, কী? কী বলি? ফের বল!

যেন বুঝতে পারল ওঁর কথা। একই ‘বোল’ আবার পড়ল ময়নাটা।

—রমা! মৎ মারো…পিস্তল নামাও!… দ্রুম!…হায় রাম!

মাঝের ঐ ‘দ্রুম’ অবিকল পিস্তলের শব্দ!

একটু পরেই মিসেস্ কৃষ্ণমাচারী চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হলেন। বাসু বললেন, এ পাখিটা রমা দেবী কতদিন পুষছেন?

—এটা ওকে ওর স্বামী উপহার দিয়েছে। দিনসাতেক আগে। এটাকে ভিতরে রেখে আসি। না হলে টেবিল নোঙরা করবে।

ভদ্রমহিলা প্রস্থান করতেই কৌশিক বলে, মামু! কিছু বুঝতে পারছেন?

বাসু বলেন : চুপ!

একটু পরেই ভদ্রমহিলা ফিরে এসে চা বানাতে বসলেন।

বাসু বললেন, আমারটা দুধ-চিনি বাদে।

তিনজনে তিন কাপ চা টেনে নেবার পর বাসু বলেন, মিসেস কৃষ্ণমাচারী, আমার পরিচয়টা আপনাকে দেওয়া হয়নি।

পকেট থেকে একটি নামাঙ্কিত কার্ড বার করে টেবিলে রাখলেন।

মিসেস কৃষ্ণমাচারী সেটা দেখলেন। পি. কে. বাসু বার-অ্যাট-ল’র কোন কীর্তি-কাহিনী সম্বন্ধে দক্ষিণ ভারতীয় ঐ মহিলা যে অবহিত নন তা বেশ বোঝা গেল। উনি শুধু বললেন, সো গ্ল্যাড টু মীট য়ু মিস্টার বাসু।

—আর এ আমার সহকারী কৌশিক মিত্র।

ভদ্রমহিলা এদিকে ফিরে নড করলেন।

বাসু বলেন, মিস্টার কাপুরকে আপনি দেখেছেন?

—দেখেছি বইকি। কেন?

—ওদের বিয়েটা কোথায় হল? কী মতে?

—রেজিস্ট্রি বিয়ে, শ্রীনগরে। আমার স্বামী উইটনেস্ ছিলেন। কিন্তু কেন বলুন তো? বাসু বলেন, বাই এনি চান্স এই ফোটোটা কি মিস্টার কাপুরের? পকেট থেকে ভাঁজ করা একখণ্ড কাগজ তিনি বাড়িয়ে ধরেন।

ভদ্রমহিলা দেখেই চমকে ওঠেন, ইয়েস! অফকোর্স! এই তো যশোদা কাপুর! ওর ছবি আপনি কোথায় পেলেন?

—এখনই তা আপনাকে জানাতে পারছি না। তবে এটুকু আপনাকে বলি, মিস্টার কাপুর বিবাহিত। রমাকে যদি তিনি বিবাহ করে থাকেন, তাহলে ‘বাইগামি’র চার্জে তিনি অভিযুক্ত হবেন!

ভদ্রমহিলা শুধু বললেন : মাই গড!

—আপনার প্রতিবেশিনীকে এখনই কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। সে যে বিবাহ করেছে এটা তার অফিসও জানে না দেখলাম। আমি চেষ্টা করব যাতে ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যেই ‘অ্যামিকেলি সেটল’ করা যায়। আশা করি আপনার সাহচর্য পাব?

—সার্টেলি। রমার মতো মেয়ে হয় না। খবরটা শুনলে সে একেবারে মুষড়ে পড়বে।

—আচ্ছা আপনি বলতে পারেন মিস্ দাসগুপ্তা কেন এমন একটি প্রৌঢ় ভদ্রলোককে বিবাহ করল?

—রমাও কিছু কচি খুকি নয়। তার বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ তো হবেই। আর কেন পছন্দ করল? ওটা বলা কঠিন : যার যাতে মজে মন। তবে কাপুরও আকর্ষণীয় পুরুষ। সুন্দর স্বাস্থ্য, দিলদরাজ মানুষ। যদিও বেকার!

কৌশিক আর বাসু উঠে দাঁড়ালেন। চা-পান শেষ হয়েছিল তাঁদের। বাসু শেষ প্রশ্ন পেশ করেন, আপনার কাছে আজকের ‘কাশ্মীর টাইমস্টা আছে?

—না নেই। আমরা ‘হিন্দুস্থান টাইমস্’ রাখি। তবে আপনার বিশেষ প্রয়োজন থাকলে আমি–

—না, না তার দরকার হবে না। আচ্ছা চলি, নমস্কার।

গাড়িতে ফিরে এসেই বাসু ড্রাইভারকে বলেন, বাস-স্ট্যান্ডে চল।

অনতিবিলম্বেই বাস-স্ট্যান্ডে এসে খবর পেলেন শ্রীনগরগামী যে বাসটা বেলা আড়াইটায় ছেড়েছে সেটা শ্রীনগরে পৌঁছাবে বিকাল সওয়া ছয়টায়। সেটা এক্সপ্রেস বাস নয়। বাসু হাতঘড়িতে দেখলেন তখন তিনটে চল্লিশ। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলেন, সওয়া ছ’টার আগে শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে পারবে?

—জরুর!

—তাহলে সোজা চল শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ড। সওয়া ছ’টার আগে পৌঁছানো চাই।

—বে-ফিকর রহিয়ে সাব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *