উলের কাঁটা – ১২

বারো

ঘণ্টাখানেক পরের কথা। এস. ডি. ও. শর্মাজীর অফিসঘরে বসেছিলেন বাসু আর কৌশিক। শর্মাজীর জীপ গেছে পুলিস হাজতে—রমা দেবীর রিলিজ-অর্ডার নিয়ে। একটু পরেই বন্দিনীকে মুক্ত করে জীপটা ফিরে আসবে। শর্মাজী বলেন, আপনি কী করে আন্দাজ করলেন এটা গঙ্গারামের কাজ? ওর তো কোনও মোটিভ ছিল না?

বাসু বলেন, কেসটার ঐটুকুই ছিল জটিলতা। কে খুন করেছে, তা বুঝতে পেরেছিলাম অনেক আগেই, কিন্তু কেন খুন করেছে তা বুঝতে দেরি হল।

শর্মা বলেন, কে খুন করেছে সেটাই বা কেমন করে বুঝলেন?

—ভেবে দেখুন মৃত্যুর সময় যদি ছয় তারিখ সকাল হয়, যা ছিল আপনাদের থিয়োরি, তাতে অনেকগুলি অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে। সুতরাং সিদ্ধান্তে এলাম, সময়টা পাঁচ তারিখ বিকাল। তার অনুসিদ্ধান্ত : রমা দাসগুপ্তা হত্যাকারী হতে পারে না। কারণ রমা ডেলিবারেট মার্ডারার হতেই পারে না; উত্তেজনার মুহূর্তে হত্যা করলে কেবিনে দেড় কে. জি. মাছ থাকতে পারে না। সুতরাং রমা বাদ গেল। সুরমা দেবীর কোনও মোটিভই নেই। তিনি বিবাহ-বিচ্ছেদ করেছেন, পঞ্চাশ হাজার টাকা পাচ্ছেন। মহাদেওকে হত্যা করার ইচ্ছে থাকলে কোনওমতেই তিনি বিবাহ-বিচ্ছেদ করার পরে ‘হত্যা টা করতেন না। জগদীশ ছয় তারিখ পর্যন্ত দিল্লিতে ছিল—তার প্রমাণ আছে। যেহেতু ‘রমা’ এবং ‘সুরমা’ দুজনের কেউ হত্যকারী নয়, এবং ময়নাটা আদৌ লগ্‌-কেবিনে যায়নি, তখন ধরে নিতে হবে ঐ বোলটা মুন্নাকে কেউ ‘টিউটার’ করেছে, বা বারে বারে শুনিয়ে শিখিয়েছে। কে হতে পারে? এবার চিন্তা করে দেখুন, মহাদেও প্রথমে বলেছিলেন পাঁচই সেপ্টেম্বর এসে মুন্নাকে নিয়ে যাবেন। সুতরাং হত্যাকারী—যে ঐ বোলটা শিখিয়েছে, সে এমন একজন যার কাছে পাখিটা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল। কে সে? দুজন মাত্র হতে পারে : সূরয এবং গঙ্গারাম। সূরয না হওয়ারই সম্ভাবনা। তার প্রথম কারণ, সে নিজে থেকে আমাকে ‘এনগেজ’ করেছে; শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ট্রাঙ্ক-কল’ করে আমাকে নিযুক্ত করতে চেয়েছে। হয়তো একটু অবিনয় থেকে যাচ্ছে, তবে যুক্তির খাতিরে মেনে নিতেই হবে যে, আমার ব্যাক-গ্রাউন্ড জানার পর সে কিছুতেই আমাকে নিযুক্ত করত না-যদি সে নিজেই হত পিতৃহন্তা!

শর্মা বললেন, তাছাড়া তার কোনও মোটিভও ছিল না। সে নিজেই যে উইলের ওয়ারিশ তা সে জানত না।

বাসু বলেন, না, আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। তার কোনও মোটিভ থাকা অসম্ভব হত না, যদি ঘটনাচক্রে সে জানতে পারত যে, মহাদেব তৃতীয়বার একটি মহিলার পাণিগ্রহণ করেছেন। সে যাই হোক, সন্দেহটা ঘনীভূত হচ্ছে গঙ্গারামের উপর, যদিও তার ‘মোটিভ’ বা উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ, আপাতত ধরে নিন, গঙ্গারামের কিছু ‘মোটিভ’ আছে, সেক্ষেত্রে গঙ্গারাম কি এ কাজটা করতে পারে? তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অবস্থাটা বিচার করে দেখা যাক :

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গঙ্গারাম জানত : এক : পাঁচই সকালে অমরনাথ তীর্থ থেকে ফিরে মহাদেও শ্রীনগরে আসবেন, পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদে গঙ্গারামকে দিয়ে, পাখিটাকে নিয়ে লগ্‌-কেবিনে ফিরে যাবেন। দুই : পরদিন ছয়ই ভোরের প্লেনে সুরমা ও জগদীশ শ্রীনগরে আসবেন ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিতে। তিন : গঙ্গারাম যে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদে পেয়েছেন এটা গোপন তথ্য। সূরয পর্যন্ত জানবে না, জানেন শুধু মহাদেও। ঐ তিনটি সূত্র অবলম্বন করে গঙ্গারাম প্ল্যান করল—পাঁচ তারিখ বিকালে সে দেড় কে. জি. মাছ নিয়ে তার মোটরবাইকে চেপে ঐ লগ্‌-কেবিনে যাবে, মহাদেওকে খুন করে মাছটা সেখানে রেখে ফিরে আসবে এবং পরদিন ছয় তারিখ ভোরের প্লেনে দিল্লি চলে যাবে। এ-ক্ষেত্রে ওর পরিকল্পনা-মতো ঘটনা কোন খাতে বইত? সুরমা ও জগদীশ ছয়ই সকালে এ বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখতেন—শ্রীনগরে মহাদেও বা গঙ্গারাম কেউই নেই। মহাদেও কত নম্বর লগ্-কেবিনে আছেন তা সূরযই জানত না, সুরমা কিছুতেই সেটা খুঁজে পেতেন না। গঙ্গারাম আশা করেছিল, দশ-এগারো তারিখ নাগাদ হয়তো মৃতদেহ পচে উঠবে এবং আবিষ্কৃত হবে। তারপর পুলিস অবধারিতভাবে মৃত্যুর সময়টা ছয়ই সকাল দশটা বা এগারোটা বলে ধরে নেবে। গঙ্গারামের অ্যালেবাই আছে—সে ছয় তারিখ ভোরের প্লেন ধরেছে এবং তার কোনও ‘মোটিভ’ নেই। অথচ সুরমা দেবীর অ্যালেবাই থাকবে কিনা সে জানে না। যদি না থাকে, পাখির ঐ বোলটা মারাত্মকভাবে তাঁকে চিহ্নিত করবে। ওঁদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কী ছিল তা অনেকেই জানত।

শর্মাজী বলেন, মাপ করবেন মিস্টার বাসু, আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। গঙ্গারামের ‘মোটিভ টা কি? সে তো জানতই না উইলে মহাদেও তাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন? কী লাভ হচ্ছে তার এই হত্যাকাণ্ডে?

—ঐ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা।

—তা কেমন করে সম্ভব? সেটা তো দিল্লি ব্রাঞ্চ শ্রীনগর ব্রাঞ্চের উপর অ্যাকাউন্ট-পেয়ী ব্যাঙ্ক-ড্রাফট দিয়েছে।

বাসু হেসে বললেন, শর্মাজী, কোয়োড্রেটিক্ ইকোয়েশনটার দুটো রূপ ছিল—’এক্স’ আর ‘ওয়াই’; অর্থাৎ ‘কে’ আর ‘কেন’ করোনার আদালতে আপনি লক্ষ করেছেন—’কে’ এই প্রশ্নটা সমাধান করতে আমি দেখিয়েছিলাম ‘সময়টা’ নির্ধারণ করায় অনেক অসঙ্গতি ছিল। ঠিক তেমনি, ‘কেন’ এই প্রশ্নটার সমাধানেও এক ‘বাণ্ডিল অসঙ্গতির জট ছাড়াতে হবে আপনাকে। প্রথম কথা : উনি যখন অমরনাথ তীর্থে যান, তখন নিশ্চয়ই কয়েক হাজার টাকা মাজায় বেঁধে নিয়ে যাননি, যেহেতু সেখানে সে টাকা ইচ্ছা থাকলেও খরচ করা যায় না। সুতরাং অমরনাথ থেকে যখন শ্রীনগরে ফিরে আসেন, আই মীন দোসরা সেপ্টেম্বর সকালে, তখন নিশ্চয়ই তাঁর কাছে বেশি টাকা ছিল না, বড়জোর দু’একশ টাকা, কেমন?

—সেটাই সম্ভব। কেন?

—দেখছি দোসরা তিনি তাঁর ব্যাঙ্ক আকাউন্ট থেকেও ঐদিন টাকা তোলেননি। অথচ লগ্‌-কেবিনে যখন তিনি মারা গেলেন তখন তাঁর কাছে 5700 টাকা একশ টাকার নোটে রয়েছে। এ টাকা কোথা থেকে এল?

শর্মা বলেন, নিঃসন্দেহে তিনি লকার থেকে নগদ টাকা নিয়ে যান!

—এক্সজ্যাক্টলি। তাহলে দোসরা ওঁর ভল্টে ছিল 5,700 + 43,800 একুনে 49,500 টাকা; নয়? এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও আছে আট হাজারের উপর। সে-ক্ষেত্রে তিনি কেন তাঁর একান্ত সচিবকে প্লেনের ভাড়া দিয়ে দিল্লি পাঠাবেন? তাঁর কাছেই তো রয়েছে নগদে সাতান্ন হাজার টাকা?

—কিন্তু তিনি তো তা সত্ত্বেও গঙ্গারামকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন?

বাসু সে কথার জবাব না দিয়ে বলেন, দ্বিতীয়ত ব্যাঙ্ক-ম্যানেজার মিস্টার সোন্ধী তাঁর স্টেটমেন্টে বলেছেন যে, মহাদেও যখন ভল্টে গেলেন তখন ওঁর হাতে ছিল ফোলিও ব্যাগ, যার ভিতরে ছিল ঐ ফিক্সড-ডিপসিটগুলো! তাই নয়? এখন বলুন, উনি তখন ব্যাগ হাতে লকার খুলতে গেলেন কেন?

—আমি তো ভেবেছিলাম ঐ ছয়-সাত হাজার টাকা লকার থেকে বার করে আনতে! —ছয় নয়, ছাপ্পান্ন হাজার। ঐ লকারে তখন ছিল একশ টাকার নোটে ঠিক এক লাখ টাকা। ব্ল্যাক মানি। যার সন্ধান সূরযও জানে না, জানেন গঙ্গারাম। একটু অঙ্ক কষে দেখুন, মানে খান্নাজীর ডেবিট ক্রেডিট :

অমরনাথ তীর্থে থেকে ফেরার পথে ওঁর কাছে নগদে ছিল, আপনার আন্দাজমত … ২০০

মৃত্যুর পরে তাঁর মানিব্যাগে ছিল … ৩০০

ঐ সুটকেসে ছিল … ৫৪০০

নগদে একটি ময়না কেনা বাবদ … ২০০

গঙ্গারামকে হাতখরচ দেন (গঙ্গারামের কথামত) … ১০০

দোসরা থেকে পাঁচই ওঁর হাতখরচ আন্দাজ … ১০০

মোট … ৭২০০

লকারে পরে নগদে পাওয়া গেছে … ৪৩,৮০০

সর্বমোট … ৫১,০০০

হিসাবটা ঠিক মিলছে না, নয়? ব্ল্যাকমানি লোকে নগদে লুকিয়ে রাখে, দশ-হাজারের গুণিতকে। সুতরাং ঐ ডেবিট-ক্রেডিটে হাজার টাকার গরমিল হচ্ছে। কেন? হাজার টাকার একটাই ‘এন্ট্রি’ আছে। সেটাই ভুল। অর্থাৎ মহাদেও, তাঁর প্রাইভেট-সেক্রেটারীকে নগদ হাজার টাকা দেননি। সে গ্যাটের পয়সা খরচ করে দিল্লি গেছে তার অ্যালেবাই- খাতিরে। এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরও অনেকগুলি যুক্তি রয়েছে যে। গঙ্গারামের স্টেটমেন্ট অনুযায়ী—দোসরা তারিখে মহাদেও তাকে বলেছিলেন ক্যাশ সার্টিফিকেটগুলি বাড়িতে রাখতে। কারণ তিনি অন্য কোনও সূত্র থেকে 50,000 টাকা যোগাড় করবেন। নেহাৎ না পেলে তিনি টেলিফোনে নির্দেশ দেবেন যাতে গঙ্গারাম দিল্লি গিয়ে ড্রাফ্‌টটা নিয়ে আসে। সে-কথা যদি সত্য হয়, তাহলে কি মহাদেও দোসরা দুপুরের বাসে ট্রাউট-প্যারাডাইসে চলে যেতে পারেন? সেখানে ট্রাউট মাছই শুধু পাওয়া যায়, নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার লোন পাওয়া যায় না।

শর্মাজী বলেন, তা ঠিক।

—আমার দৃঢ় বিশ্বাস—ঐ লকারে নগদ এক লাখ টাকা ব্ল্যাকমানি ছিল। যে-কথা সূরয জানত না, কিন্তু গঙ্গারাম জানত। এবং এটাও সে জানত যে, মহাদেও ‘অ্যালিমনি’র টাকা মেটাবেন ব্ল্যাক-মানিতে। কারণ সুরমা নগদই চেয়েছেন, ঐ দু-নম্বর খাতার অতগুলি টাকার সদ্ব্যবহার নিশ্চয়ই করবেন মহাদেও। সেটা জানা ছিল বলেই গঙ্গারাম ঐ পরিকল্পনা করে। গঙ্গারাম জানত—মহাদেও অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি বেঁচে থাকলে প্রতিশোধ নিতেনই। সোজা পথে না হলে বাঁকা পথে। এজন্য টাকাটা হজম করতে হলে মহাদেওকে হত্যা করা ছাড়া তার গত্যন্তর ছিল না। মহাদেও আত্মহত্যা করেছেন এটা প্রমাণ করা শক্ত। পুলিস সহজে সেটা বিশ্বাস করত না। হেতুর অভাবে। তার চেয়ে অনেক সহজ : অপরাধটা সুরমার কাঁধে চাপানো। কারণ ‘রমা দেবীর কথা সে জানত না।

যে-হেতু একমাত্র গঙ্গারামই হত্যাকারী হতে পারে, তাই আমি ধরে নিলাম হয় তো দোসরা সেপ্টেম্বর ওঁর লকারে ছিল নগদে এক লাখ টাকা। তাহলে হিসাবটা দাঁড়ায় :

মৃত্যুর পরে লগ্‌-কেবিনে পাওয়া গেছে (মানিব্যাগ ও সুটকেসে) … 5,700

একটি ময়না কেনার খরচ … 200

দোসরা থেকে পাঁচই ওঁর হাতখরচ (একশ নয়, কিছু বেশি) … 300

গঙ্গারামকে ‘অ্যালিমনি’ মেটাতে দেওয়া … 50,000

লকারে নগদে পাওয়া গেছে … 43,800

সর্বমোট…  1,00,000

আমার এই হাইপথেসিস্টা ঠিক কিনা যাচাই করতে আমি একটা ফাঁদ পাতলাম—গঙ্গারামের উপস্থিতিতে সূরযকে জানালাম, সুরমা দেবীর একটা বজ্র-বাঁধুনি ‘অ্যালেবাই’ আছে। এ-কথা বলার আগেই আমি কিন্তু মুন্নাকে রমার বাড়ি থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় পাখিটাকে ওখানে রেখে এসেছি। আর ঐসঙ্গে কায়দা করে জানিয়ে দিলাম, মুন্না আছে রমার বাড়িতে, পহেলগাঁওয়ে, মেথডিস্ট চার্চের পিছনে দ্বিতীয় বারান্দায়, অরক্ষিত অবস্থায়। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, হত্যাকারী প্রণিধান করেছে—সে সূরযই হোক, অথবা গঙ্গারামই হোক, মুন্নার ঐ বোলটা এখন পুলিসের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট করবে। যেহেতু ‘রমা’ বা ‘সুরমা’ হত্যাকারী নয়, তখন স্বভাবতই পুলিস ভাবতে শুরু করবে যে, মুন্নাকে সে ঐ বোল্টা টিউটার করিয়েছে, শিখিয়েছে। আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে, খবরটা শোনার পরেই প্রকৃত হত্যাকারী এই সুযোগ নেবে, আমার ফাঁদে পা দেবে—অর্থাৎ মুন্নাকে হত্যা করতে ছুটবে। ওরা আমাদের হাউসবোট থেকে বেরিয়ে গেল সন্ধ্যা ছ’টায়। তার ঘণ্টাখানেক পরে টেলিফোন করে দেখলাম সূরয বাড়িতে আছে, কিন্তু গঙ্গারাম কোথায় বুঝি ‘নৈশ’ নিমন্ত্রণ রাখতে গেছে। তার ফিরে আসতে রাত প্রায় এগারোটা হল। গঙ্গারাম বাস-এ যায়নি, নিজস্ব মোটরবাইকে গিয়েছিল। সেই মুহূর্তেই হত্যাকারী চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত হয়ে গেল। হত্যাকারী চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত হওয়ার মানেই হচ্ছে তার মোটিভ রূপে আমি যা অনুমান করেছি তা সত্য। মুশকিল হচ্ছে এই যে, মোটিভটা আমি প্রমাণ করতে পারতাম না কোনওদিনই। যেহেতু ব্ল্যাকমানির হিসাব থাকে না। তাই আমি আপনাদের জানাতে পারিনি আমার সিদ্ধান্তটা। ভেবে দেখলাম, ওর অপরাধ চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে হলে কিছু নাটকীয়তার আশ্রয় আমাকে নিতে হবে। এজন্য সওয়াল-জবাবের মাধ্যমে তিলতিল করে সমাধানটা দাখিল করতে থাকি। আমি জানতাম, যে-মুহূর্তে মৃত্যুর সময়টা ছয় তারিখ সকাল থেকে পাঁচ তারিখ বিকালে আমি সরিয়ে নিয়ে যাব, সেই মুহূর্তে গঙ্গারাম নার্ভাস হয়ে পড়বে। আর তারপর যখন তিলতিল করে হত্যাকারীর পরিচয়টা স্পষ্ট করতে থাকব তখন আতঙ্কের তাড়নায় গঙ্গারাম পালাবার চেষ্টা করবে। আর তাতেই তার হত্যাপরাধটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ঘটনাও ঠিক সেই খাতে বইল।

শর্মাজী বলেন, গঙ্গারাম ধরা পড়বেই। আজকালের মধ্যেই। কিন্তু অপরাধটা আমরা প্রমাণ করব কী করে? কোনও প্রমাণ তো নেই।

বাসু বললেন, সম্ভবত আছে। গঙ্গারামের স্টেটমেন্ট অনুযায়ী সে মহাদেও প্রসাদের টেলিফোন পায় পাঁচ তারিখ রাত আটটায় এবং পরদিন সে সকালের ফ্লাইটে দিল্লি চলে যায়। দেখুন এজন্য সে বলেছে লগ্‌-কেবিনের টেলিফোনটা ডেড হয়ে গিয়েছিল। কারণ সে জানত, লগ্‌-কেবিন থেকে যা টেলিফোন করা হয় তার লিস্ট থাকে; তার বিল বোর্ডারকে মেটাতে হয়। কিন্তু এই সিজন্টাইমে অত অল্প সময়ে প্লেনে সীট পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া তার নিজস্ব ‘অ্যালিবাই টা পাকা করতে সে নিশ্চয় অনেক আগেই সীটটা বুক করেছিল। সে অনেক আগে থেকেই ঐ পরিকল্পনা করেছিল। একটু খোঁজ নিলেই আপনি জানতে পারবেন ঐ টিকিটটা কবে বিক্রি হয়। সেটাই চূড়ান্ত প্রমাণ। মহাদেও যদি ব্ল্যাকমানির বদলে হোয়াইট মানিতে ‘অ্যালিমনি’র টাকাটা মেটাতেন তাহলে তিনি আদৌ হত হতেন না। কালো টাকাই তাঁকে মেরেছে!

শর্মাজী বলেন, মুন্নার ব্যাপারটা কিন্তু এখনও ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি আমার কাছে। ওটা একটু বুঝিয়ে বলতে পারেন?

বাসু বলেন, সত্যি কথা বলতে কি ওটা আমার নিজের কাছেই পরিষ্কার হয়নি। দোসরা তারিখে মুন্নাকে নিয়ে মহাদেও যখন আড়াইটার বাসে শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁও আসেন, তখন বাসের মধ্যেই নিশ্চয় মুন্না ঐ বোলটা দু-একবার পড়ে। মহাদেও অবাক হয়ে যান। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান; দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। উনি বুঝতে পারেন, কেউ তাঁকে হত্যা করতে চায়, এবং হত্যাপরাধটা হয় রমা, নয় সুরমার কাঁধে চাপাতে চাইছে। তাই পহেলগাঁওয়ে পৌঁছেই তিনি পাখিটাকে রমাকে রাখতে দিলেন। তিনি রমাকে তার পরেই বলেছিলেন, তাঁর একটা অস্ত্রের প্রয়োজন, আত্মরক্ষার্থে। তাই রমা তাঁকে ঐ রিভলভারটা দেয়। এ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তারপর মহাদেও যে কেমন করে ময়নাটা বদলে ফেললেন, এটুকুই এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।

শর্মা বলেন, কেন? আমরা ধরে নিতে পারি, তেসরা কিম্বা চৌঠা আবার শ্রীনগর আসেন এবং দ্বিতীয় ময়নাটা খরিদ করে তাঁর লগ্-কেবিনে ফিরে গেছেন।

—উঁহু! মহাদেও ওটা খরিদ করেছেন দোসরা সেপ্টেম্বর দুপুরে। জুম্মাবারে। শ্রীনগরেই। সেন্ট্রাল মার্কেটে, ইয়াকুব-মিঞার দোকান থেকে। লোকটা হিসাবের পাকা-খাতা দেখে বলেছে। মহাদেওয়ের ফটো দেখে সনাক্ত করেছে।

এই সময়েই যোগীন্দর সিং দ্বারের কাছ থেকে বলে, মে আই কাম ইন স্যার?

-–আইয়ে, আইয়ে, ক্যা বাৎ?

যোগীন্দর এসে বলে, গঙ্গারাম ধরা পড়েছে। শ্রীনগরে পৌঁছবার আগেই।

শর্মাজী বলেন, কনগ্র্যাচুলেশনস!

যোগীন্দর বলে, কৃতিত্বটা আমার নয় স্যার, ওঁর!—বাসু-সাহেবকে দেখায়।

—ওঁর তো বটেই। উনিই তো আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন-

—আজ্ঞে না, স্যার, করোনারের আদালতে ঢুকবার আগেই উনি আমাকে আড়ালে ডেকে বলেছিলেন, মিস্টার সিং–হত্যাকারী কে আমি তা জানি, নামটা আপনাকে এখনই বলতে পারছি না, তবে সে আদালতে আছে এবং যে মুহূর্তে আমি তাকে চিহ্নিত করব, তখনই সে পালাতে চেষ্টা করবে। আপনি সজাগ থাকবেন। প্লেনড্রেস পুলিস দিয়ে আদালত ঘিরে রাখবেন।

শর্মাজী বাসুকে বলেন, কী আশ্চর্য! শুধু আমাকেই বলেননি?

বাসুর কর্ণকুহরে সে-কথা প্রবেশ করল না। উনি তখনও কী যেন ভাবছেন। চোখ দুটি বোজা, পাইপটা ধরা আছে বাঁ হাতে। ডান হাতে গায়ত্রী জপ করার ভঙ্গিতে উল্টো করে এক দুই তিন গুনছেন।

একটু পরেই একটা জীপ এসে থামল। দ্বারপথে রমার মূর্তিটা আবির্ভূত হতে শৰ্মা বলেন, কাম্ ইন প্লীজ—কনগ্রাচুলেশন্স!

রমা উচ্ছ্বসিত হয়ে বাসুকে কী একটা কথা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই বাসু বলেন, জাস্ট এ মিনিট! রমা, সেই দোসরা সেপ্টেম্বরের কথা তোমার ঠিক ঠিক মনে আছে?

রমা তখনও আসন গ্রহণ করেনি। বলে, কোন কথা?

দোসরা সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার বাসে মহাদেও শ্রীনগর থেকে রওনা দেন। তার মানে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি পহেলগাঁও বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছান। বাস স্ট্যান্ড থেকে তোমার বাড়ি হাঁটাপথে দশ-বারো মিনিট, তার মানে…

বাধা দিয়ে রমা বলে, না, বাস স্ট্যান্ডেই তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। আর আড়াইটায় নয়, উনি দেড়টার বাসে শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁও আসেন।

বাসু বলেন, অসম্ভব! দেড়টার বাসে তিনি আসতেই পারেন না। কারণ ঠিক বেলা দুটোয় তিনি ছিলেন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ম্যানেজারের ঘরে। উনি আড়াইটার বাসে গিয়েছিলেন।

রমা বললে, না, আপনি ভুল করছেন। উনি দেড়টার বাসেই এসেছিলেন। কারণ দেড়টার বাসটা পহেলগাঁওয়ে পৌঁছায় চারটে চল্লিশে। আমার ছুটি হয় সাড়ে চারটেয়। তাই চারটে চল্লিশের বাসটাকে স্ট্যান্ডে ঢুকতে দেখি। আর আড়াইটার বাস পহেলগাঁওয়ে পৌঁছায় পাঁচটা চল্লিশে—তার অনেক আগে আমি বাড়ি চলে যাই।

বাসু অনেকক্ষণ কী ভাবলেন। তারপর বলেন, তুমি ভুল করছ রমা। ব্যাঙ্ক-ম্যানেজার সোন্ধী আমাকে বলেছিল, মিস্টার খান্না দ্বিতীয়বার যখন ব্যাঙ্কে ফিরে আসেন তখন ব্যাঙ্কের আওয়ার্স শেষ হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ দুটো বেজে গিয়েছিল। তুমিই কিছু গণ্ডগোল করছ-

রমা রাগ করে না। বলে, না, ভুল করলে করেছে ঐ সোন্ধীই। আমার পরিষ্কার মনে আছে—উনি যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন দেড়টার বাসে ফিরবেন। তাই অফিস যাওয়ার সময়েই আমি বাস-স্ট্যান্ডে টাইম-কীপারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম-দেড়টার বাসটা কখন পৌঁছায়। সে বলেছিল বিকাল চারটে চল্লিশ। তাই অফিস ছুটি হতেই আমি তাড়াতাড়ি বাস স্ট্যান্ডে চলে যাই। তখন দেড়টার বাসটা ‘ইন’ করছে। বাসটা রাইট-টাইম ছিল।

বাসু বলেন, তুমি তাহলে ওঁকে বাস থেকে নামতে দেখেছ?

—হ্যাঁ। কেন?

—তখন ওঁর কাছে ক’টা ময়না ছিল?

—একটাই। ঐ মুন্নাই। কেন?

বাসু বলেন, স্ট্রেঞ্জ!

—স্ট্রেঞ্জ মানে?

—জিগস্‌ ধাঁধার আবার একটা মিসিং পীস্!

এরপর যোগীন্দর, শর্মাজী, কৌশিক, সুজাতা এবং রমা নানা কথা আলোচনা করতে থাকেন। বাসু-সাহেবের কর্ণকুহরে কোনও কথাই যাচ্ছিল না। তিনি গভীর চিন্তায় মগ্নচৈতন্য। হঠাৎ একটা কথায় তাঁর ধ্যানমগ্নতা ভেঙে গেল। শর্মাজী বলছেন, সত্যিই মহাদেওপ্রসাদ খান্নাজী ছিলেন একজন দিলদরাজ মানুষ! কখনও কারও প্রতি কোনও অন্যায় করেননি।

তারপর বাসু-সাহেবের দিকে ফিরে বলেন, আপনি তখন থেকে কী ভাবছেন, বলুন তো?

—ঐ কথাই ভাবছিলাম। আমিও কি একই জাতের ভুল করছি? বর্মন যা করেছিল? অর্থাৎ একটা পূর্ব-সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়ে এভিডেন্সগুলোকে ইন্টারপ্রেট করছি—যে সূত্রগুলো আমার সিদ্ধান্তের পরিপন্থী সেগুলো অগ্রাহ্য করছি?

শর্মাজী বলেন, আপনি তো চূড়ান্ত সমাধান করেই ফেলেছেন। এখন আবার…

—না, না। কোথাও কিছু একটা ভুল হচ্ছেই। না হলে আমার সলিউশান জিগ্‌স্‌ ধাঁধার মতো খাঁজে খাঁজে মিলে যাচ্ছে না কেন?

—একটাই তো অসঙ্গতি আছে। তাই নয়? দ্বিতীয় পাখিটা কী করে এল?

—না, শুধু একটাই নয়! আরও আছে। দেড়টার বাস না আড়াইটার বাস? তাছাড়া ঐ উইলটা!

—উইলে কী অসঙ্গতি?

—দেখছেন না, আপনি এখনই বলছিলেন, মহাদেও প্রসাদ কখনও কারও কাছে কোনও অন্যায় করেননি। কিন্তু রমাদেবীর প্রতি তাঁর আচরণটা দেখেছেন? উইলটা অত্যন্ত নিপুণভাবে বানানো। তিনি এ-কথাও লিখেছেন, বিবাহ বিচ্ছেদ আইনত সিদ্ধ হবার আগেই তাঁর মৃত্যু হলে মিসেস সুরমা খান্না ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকা মাত্রই পাবেন। উনি ওঁর প্রত্যেকটি কর্মীকে কিছু না কিছু দিয়ে গেছেন। এমন একজন বিচক্ষণ মানুষ উইলে রমার কোনও উল্লেখই করবেন না?

ঐ সময় ট্রেতে করে শর্মাজীর বেয়ারা চা-বিস্কুট নিয়ে এল। সকলকে বিতরণ করল। শর্মাজী বলেন, হয়তো রমা দেবীকে বিবাহ করার পূর্বেই তিনি উইলটা করেন।

—তা তো করেনই। কিন্তু বিবাহের পরে কেন তিনি ওটা নতুন করে লিখলেন না? তিনি তো দোসরা শ্রীনগরে এসে লকারটা খুলেছিলেন! এবং তখন তিনি জানতেন, তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে? না, মিস্টার শর্মা। কোথাও প্রকাণ্ড একটা ফ্যালাসি আছে! লোকটার পকেটে স্বহস্ত-লিখিত মিসেস্ রমা খান্নার স্বীকৃতি আছে, অথচ উইলে তার উল্লেখ নেই?

কৌশিক বলে, আপনার চা-টা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে মামু।

বাসু-সাহেবের হুঁশ হল না। আবার আলোচনা এগিয়ে চলে।

কোথাও কিছু নেই, শর্মাজীর গ্লাস-টপ টেবিলে একটা মুষ্ট্যাঘাত করে বসলেন বাসু। ঝন্‌ঝন্ করে উঠল চায়ের কাপগুলো।

শর্মাজী অবাক হয়ে বলেন, কী হল?

বাসু উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন উত্তেজনায়। বলেন, রমা তোমার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ডে! নয়? আমার দেখা না পেলে তুমি যেন কোথায় যেতে?

রমা বলে, সে-কথা এখন কেন? আপনি এ-প্রশ্ন সেদিনই করেছিলেন, আমি বলেছিলাম, আপনার সঙ্গে দেখা না হলে আমি সেই ঘরটাতে যেতাম যেখানে…

—কারেক্ট! ঘরটা তুমি খুঁজে বার করতে পারবে?

—কেন পারব না?

–দেন গেট আপ্। ও বাকি চা-টুকু তোমার না খেলেও চলবে। চল ঘরটা আমাকে দেখিয়ে দেবে চল।

—এখনই! কেন?

—ডোন্ট আর্গু! জিগ্‌স্‌ ধাঁধার একটা ছোট্ট টুকরো ঐ ঘরে পড়ে আছে। দেখি সেটা কুড়িয়ে পাই কিনা!

রমার বাহুমূল চেপে ধরে তিনি নির্গমন-দ্বারের দিকে এগিয়ে চলেন। কৌশিক পিছন থেকে বলে, আমরা? আমরা কী করব?

—য়ু শাট আপ্‌! চা খাও বসে বসে!

রমার বাহুমূল যেমন ধরা আছে তেমনি ভাবেই বন্দিনীকে নিয়ে এসে উঠলেন সেই সিনেমন-রঙের অ্যাম্বাসাডারে। বললেন, ড্রাইভারকে বল, কোন দিকে যেতে হবে।

মিনিট পনের পরে গাড়িটা এসে থামল সেন্ট্রাল মার্কেটের পিছনে একটা ঘিঞ্জি অঞ্চলে। সারি সারি লরি, ঠেলা। মালপত্রের গুদাম। রমা বলল, আর গাড়ি যাবে না। বাকি পথটুকু হেঁটে যেতে হবে।

—অল রাইট! চল, হেঁটেই যাব।

সরু গলিপথ দিয়ে দুজনে এসে থামলেন একটা দোতলা বাড়ির সামনে। এতক্ষণে অন্ধকার হয়েছে। রাস্তায় মাতালের ঘোলা চোখের মত বাতি। সবটাই আলো-আঁধারি। বাড়িটার নিচে গুদামঘর। লরি থেকে মালখালাস হচ্ছে। পাশ দিয়ে একটা নড়বড়ে সিঁড়ি উঠে গেছে কাঠের বাড়িটায়। রমা আঙুল তুলে বললে, ঐ ঘরটা!

বাসু বললেন, ঘরের দরজাটা বন্ধ কিন্তু ভিতরে আলো জ্বলছে। কে থাকতে পারে ঘরটার ভিতর?

রমা বললে, আমি কী জানি?

—লেটস্ ইনভেস্টিগেট! চল আমরা তদন্ত করে দেখি। এস।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দুজনে উঠে এলেন দ্বিতলে। বদ্ধ দ্বারের সামনে দাঁড়ালেন বাসু-সাহেব। বাঁ-হাতে তখনও ধরা আছে রমার বাহুমূল। কড়া নাড়লেন দরজায়।

ভিতর থেকে অর্গলমোচনের শব্দ হল। দ্বার খুলে একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বেরিয়ে এসে বলেন, কাকে চাই?

যেন লিভিংস্টোন সম্বোধন করছেন স্ট্যানলিকে।

ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বাসু-সাহেব বলেন, মিস্টার যশোদা কাপুর, আই প্রিজ্যুম? পাশ থেকে রমা একটা চাপা আর্তনাদ করে উঠল : ও…ও কে?

ভদ্রলোক বাসু-সাহেবের প্রসারিত করটা গ্রহণ করলেন না। রমার পতনোন্মুখ দেহটা ধরে ফেলে বললেন, কী হয়েছে রমা? তুমি অমন করছ কেন?

—তুমি!

—হ্যাঁ, আমিই। তুমি কি ভূত দেখছ?

রমা বোধ হয় খণ্ডমুহূর্তের জন্য ভুলে গেল বাসু-সাহেবের উপস্থিতি। সবলে জড়িয়ে ধরল ঐ প্রৌঢ় ভদ্রলোককে।

বাসু বলেন, একটা কথা! আপনি কি জানেন, মিস্টার মহাদেও প্রসাদ খান্না মারা গেছেন?

—চমকে উঠল লোকটা : মারা গেছেন! মানে! কবে? কী করে?

—সেটা আপনার স্ত্রীর কাছে শুনবেন। গুড নাইট!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *