উলটো-বাজির দেশে
কালকে আমি গিয়েছিলুম উলটো-বাজির দেশে৷
এমন দেশটি আর পাবে না,-সবই সর্বনেশে!
রামের সেথায় নেইকো ধনুক, নেইকো ভীমের গদা,
শ্যামের বাঁশির নাম শোনেনি হেবো, মোনা, পদা!
সীতা সেথায় যাননি বনে, রাবণ আজও জ্যান্ত,
হনুমানের নেইকো লাঙুল-লম্ফত্যাগে খ্যান্ত!
সিংহ থাকে শহরে ভাই-বনের ভেতর মানুষ,
নৌকো ওড়ে আকাশ দিয়ে, জলেই ভাসে ফানুস!
ব্যাঘ্র সেথায় ভক্ত ঘাসের, হাডডি চেবায় ছাগল,
পণ্ডিতেরা মুখ্যু সেথায়, পদ্য লেখে পাগল!
প্যাঁচারা ভাই গানের রাজা, কোকিলগুলো বোবা,
পইতে-টিকি পুড়িয়ে ফেলে হিন্দু বলে ‘তোবা’!
হস্তীগুলো বিশ্রী রোগা, ফড়িংগুলো ষণ্ডা,
বাঁদর বসে অঙ্ক কষে ছ-কুড়ি দু-গণ্ডা!
নিদ্রাতে ভাই নাক ডাকে না, খেলেই বাড়ে ক্ষুধা,
ঘোটক চালায় মানুষ-গাড়ি-সাপের মুখে সুধা!
মোছলমানের নেইকো দাড়ি, নিগ্রোরা সব সাদা,
সাহেবগুলো ভূতের মতো; বোকারা নয় হাঁদা!
চাকর-দাসী হুকুম চালায়, মনিব বলে হুজুর!
মানুষ দেখে মামদো পালায়, মুখ চুন হয় জুজুর!
প্রজারা সব রাজ্য করে, রাজা জোগায় খাজনা,
হারমোনিয়াম ফেলে সবাই শোনে ঢাকের বাজনা!
মণ্ডা-মেঠাই খায়নাকো কেউ, খায় চিরেতা-নালতে,
উনুনটাকে জ্বালতে হবে সাত-ঘড়া জল ঢালতে!
মাস্টারেরা ডুকরে কাঁদে, ছাত্র মারে বেত্র,
মরুভূমির বুকেই নাচে সবুজ ধানের ক্ষেত্র!
রবিবারে ইস্কুলেতে কামাই হলেই ফাইন,
বাকি ছ-দিন খেলতে পারো-এমনি ধারাই আইন!
মেয়েরা সব কর্তা সেথায়, পুরুষ ভারি বাধ্য,
মরলে মানুষ হাসতে হবে; জ্যান্ত করে শ্রাদ্ধ!
স্ত্রীলোকেরা আপিস করে গলায় দিয়ে চাদর,
অন্দরেতে পুরুষ যত খোকায় করে আদর!
ছোকরারা সব শান্ত-সুবোধ, বৃদ্ধেরা সব দস্যি,
চুরুট ফোঁকে নাক দিয়ে আর কর্ণে গোঁজে নস্যি!
চোর-ডাকাতে বিচার করে, সাধু পচেন জেলে,
দুষ্টু বাপের কানটি মলে শাসন করে ছেলে!
অন্ধকারে দিন কেটে যায়, সূয্যি আসে রাত্রে,
ভিক্ষুকেরা ভিক্ষে করে পক্ক সোনার পাত্রে!
আকাশ পড়ে পায়ের তলায়, মাথার ওপর মাটি,
সত্যি মানে মিথ্যে এবং নকল মানে খাঁটি!
কী ভয়ানক উলটো-বাজি!-বলতে আসে কান্না,
শুনলে পরেও মন দমে যায়, ক্ষান্ত হলুম-আন্না!