উমেদারি
জনাব সহযোগী সম্পাদক মহাশয়,
কদম-মবারকেষু,
মহাত্মন!
আমি বিলক্ষণ অবগত আছি, সম্পাদক মহাশয়ের পরিবর্তে এ পত্র তস্য সহযোগীর উদ্দেশে প্রেরণ করা সখৎ বে-আদবি। কিন্তু আপনি স্বয়ং বিসমিল্লাতেই গলদ করে বসে আছেন বলে আমাকেও বাধ্য হয়ে এই পোতকল-বিরুদ্ধ অনাচার করতে হল।
আপনি উত্তমরূপেই জানেন, আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিন থেকে জানেন, আমার জীবনের সর্বোচ্চাশা, কোনও একটি পত্রিকার সম্পাদক হওয়া– তা সে আজেবাজে মার্কা লন্ডন-টাইমস-ই হোক, কিংবা তখৎ-ই-তাউস-কম্ কুত্ত্বমিনাররূপী কালি ও কলমই হোক। অতএব আমার জিগর-কলিজার চিল-চেল্লানির ফরিয়াদ, আমাকে সম্পাদক পদটি দিলেন না কেন?
প্রত্যহ ক্রমিক বেকারির দাওয়াই কর্মখালির বিজ্ঞাপন চা-পানান্তে রকে বসে সেবন করি- সে-ও আপনার মতো হর-ফন-মৌলা হুনুরি জনের অজানা নয়। কই, কোনও কাগজে তো আপনার কাগজের জন্য সম্পাদক প্রয়োজন এমত বিজ্ঞাপন দেখিনি। আপনি আরও জানেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ভ্যাকেসির জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হয় তা সে কেরানির চাকরিই হোক আর লক্ষ লক্ষ চাকরি যে মহারাজ দেন তার চাকরিই হোক!
বলতে হবে না, বলতে হবে না! আমি জানি, আপনি বলবেন, কিন্তু আখেরে চাকরিটি পায় কে? আপনি পান? আমি পাই? স্বপনকুমার পায়? আসলে কর্তৃপক্ষ মাত্র একটি ব্যাপারে গাফিলি করেন; বিজ্ঞাপন দেবার সময় চাকরিটা যাকে দেবেন তার ফটোগ্রাফ সঙ্গে ছপিয়ে যদি ঘোষণা করেন, None need apply whose photograph does not resemble this! তা হলেই সর্ব ঝামেলা চুকে যায়।
বুঝেছি, বুঝেছি, সব বুঝেছি। ক-সের ধানে ক-সের চাল– সরি, বলা উচিত ক-সের গম নিলে ক-সের চাল পাবে, কিংবা কটা লুপ নিলে কটা বউ পাবে– এসব কাশীমিত্তির নিমতলা আমি চিনি, মুসলমানের ব্যাটা হয়েও। মামদোর উপর ব্রহ্মদত্যি!
আমি আপনাকে সোজাসুজি বাড়িতে না থাকলে লটকাইয়া লটকাইয়া নোটিস দিলুম, আমি অডিটারজেনরেল, এনফরসূমেন্ট ব্রাঞ্চ, ইনকাম ট্র্যাক্স সব্বাইকে আপনার কীর্তি জানিয়ে উড়ো চিঠি লিখব; তখন বুঝবেন ঠ্যালা কারে কয়। ভালো করে বুঝিয়ে বলি।
মস্তান মস্তানি মস্তানগিরি শব্দগুলো চেনেন? ওই যে সিদিনা ছুঁচলো গোপ, ছুঁচলো জুতো, চুঁচলো পাতলুন গয়রহ সমন্বিত গোটাকয়েক ছোঁড়া এসে পুজোর চাঁদা চাইলে যেভাবে আপনার দিকে চেয়ে চাইলে, তাতে আপনি বাগে বাস্লো করে টাকা দিতে দিতে ইষ্টনাম স্মরণ করলেন না (কত খসল?)? মনে মনে আন্দেশা করলেন না, বড় আহামুখী হয়ে গিয়েছে ঢাকা বারান্দায় টুব লম্পটি লাগিয়ে। ওটা গেল। ওরা যদি সন্তুষ্ট না হয়।… কালই দেখতে হবে, বাজারে গডরেজ ইস্পাতের বাল হয় কি না!
এই হল গে মস্তানি–বাঙলা ভাষায় বাঙলা কথা।
কিন্তু শব্দটা যাবনিক। অর্থাৎ এর ওপর আপনার চেয়ে আমার হক ঢের ঢের বেশি। তদুপরি আপনি বর্ণশ্রেষ্ঠ, আমার ‘বননো’টি আর না বললুম, ওই সামনে শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা– মা-আমার অধমের বননো পেলে জেল্লাই টেকরাতেন।
শব্দটির বহর দেখুন! Drunk, intoxicated, libidinous= কামোন্মাদ; Iustful, wanton, furious; an animal in rut = ভাদ্রমাসীয় সারমেয়, excessively drunk and polluted with neat wine = দ্বন্দ্বটা লক্ষ করুন! মদটা উত্তম শ্রেণির (বা নির্জলা) কিন্তু অস্থলে পড়ে বেবাক নোংরা করল (গোমূত্র পবিত্র, কিন্তু দুধে পড়লে তুলনীয়), intoxicated with the wine of rashness = কাচের দোকানে পাগলা ষাড়, ইত্যাদি ইত্যাদি আরও বিস্তর আছে।
ধন্য, ধন্য যিনি এই শব্দটি বাঙলায় চালিয়েছেন। পাড়ার মস্তানদের কোনও গুণ এতে অবহেলিত হয়নি, বড় তামাকের কলকে পেয়েছে। ভূমা খন্বিদং ইত্যাদি উট উঁট শব্দ এঁয়ার কাছেই আসতে পারে না।
তারই দোহাই কেড়ে আপনাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি :
আমাকে পত্রপাঠ সহযোগী অসহযোগী– অনারারি হলেও কণামাত্র আপত্তি নেই, কিন্তু খবরদার, সেস্থলে সেটা যেন পারমেনেন্ট হয়– কোনও একটা সম্পাদক যদি না করেন তবে ওই কথাই রইল! আপনার টুব লম্পোটির প্রতি আমার কিঞ্চিত্মাত্র জুগুপ্সা নেই। আমি দেখে নেব, আপনি কী করে যজমান বাড়িতে আতপ চাল আর কাঁচকলা পান– যার ওপরে ভরোসা করকে কারওয়ার বৈঠিয়েছেন অর্থাৎ কালি ও কলম যোগাড় করেছেন। পয়সায় তিনটে বাগচীর কালি বড়ি আর খাগড়ার কলম তো।
তা বেশ করেছেন।
কিন্তু মনে রাখবেন, ওই কালি ও কলমের হাফ হিস্যেদার আমি। কালি না হয় আশু-প্রত্যাশিত মা কালীর চর্মনির্যাস হতে পারে কিন্তু কলম* শব্দটি আরবি, যাবনিক। আরব নবী হজরত ছিলেন সম্পূর্ণ নিরক্ষর। তাই বোধহয় আল্লাপাক কুরান শরিফে বাণী দিয়েছেন তাঁকে (আল্লাকে) স্মরণ করে আবৃত্তি কর, তিনি কলমের মাধ্যমে জ্ঞান দান করেছেন।… আপনার পত্রিকার নামকরণের ওতে কলমকে স্মরণ করে আপনি আল্লা নির্দেশিত পথেই যাত্রারম্ভ করেছেন।
[* যদ্যপি কেউ কেউ বলেন ওটা নাকি মূলে গ্রিক।]
এ দৃশ্য দেখে গুণীজ্ঞানীরা বিস্মিত হবেন না। ভবিষ্য পুরাণের প্রক্ষিপ্তাংশে নাকি স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে, কলিযুগস্য লক্ষণম্ কিং? থাক্ সংস্কৃত। মোদ্দা : কলিযুগে ব্রাহ্মণে যবনাচরণ করবে, আর যবন আর্যশাস্ত্র রচনা করবে।
আপনার পথ আপনি বেছে নিয়েছেন; আম্মে অধুনা গৌড়ভূমে যে নব্যন্যায় সৃষ্ট হয় তারই অনুকরণে একখণ্ড উপাদেয় নব্যস্মৃতি লিখেছি। আপনার শুভবুদ্ধি যদি আমাকে সম্পাদকমণ্ডলীতে ভূম্যাসনও দেয় তবে মল্লিখিত সেই স্মৃতিশাস্ত্র কালি ও কলম মারফত তাবল্লোকে শনৈঃ শনৈঃ প্রচারিত হবে। এই সুবাদে কিঞ্চিৎ পূর্বাস্বাদ সারভ করছি (ফরাসি মেনু-তে যে আইটি অর দ্য ভ hors d-oeuvre নামে সুপরিচিত); যেহেতু অর্বাচীন গৌড়সন্তান যাবনিক উপাহারলয়ে তথা ভোজন হর্মে পূৰ্বাভিজ্ঞতানটনবশত বংশারণ্যে ডোম্বাহ্মের ন্যায় আচরণ করত হাস্যাস্পদ হয়, সেহেতু মদ্গ্রন্থে ফিরপোতে হবিষ্যান্ন। নামক একটি বিশেষ উল্লাস আছে, তৃতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ কল্লোলে। কোন কোন তিথিনক্ষত্রে ফিরপো গমনে যাত্রা শুভ তথা যাত্রা নাস্তি একাদশীতে তথায় ষণ্ডপুচ্ছযশ সেবন অবিধেয় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি তাবৎ জটিল জটিল সমস্যার নিঘণ্ট তথা দফে দুফে সবিস্তর বর্ণন অধমাধমের নব্যস্মৃতিতে যাবনিক সংস্কৃতে আলেকজানদ্রিয়ান ছন্দে গ্রন্থিত আছে। একাধিক আই সি এস কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত। তারা অবশ্য তাঁদের যবন পূর্বসূরিগণ কর্তৃক স্থাপিত প্রথা অনুযায়ী যথারীতি পুস্তক না পড়েই প্রশংসাপত্র দিয়েছেন কিন্তু এস্থলে পাণ্ডুলিপি পূর্বাহে অনধীত থাকাতে ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি– দি ক্যারাভান (চালিয়াতি উচ্চারণ কারাভ) পাসেজ কাফেলা অগ্রগামী। ইতোমধ্যে আমেরিকা-প্রত্যাগত স্বামী বিটলানন্দ (বিটেল নয়, Beatle) ও শ্রীদিদি স্বপ্নযোগে পাণ্ডুলিপি অধ্যয়ন করত আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন বিটল সম্প্রদায়ের জন্য মারিযোয়ানা হশিশ-ভাঙ-চণ্ড ইত্যাদি মিশ্রিত পঞ্চরঙ (এটিই প্রকৃত অকৃত্রিম বস্তু- পঞ্চরসের অনুকরণে নির্মিত Punch নিরেস, নীরস ভেজাল) এবং বিশেষ করে মার্তণ্ড-তাপিত-বকযন্ত্ৰোগীৰ্ণ-ঋজুর-নির্যাস– শাহ-ইন-শাহ জহাঁগিরের সুপ্রিয় পেয় ডবল ডেটিলড়-এরে এই মহা-কারণবারিরই শ্বেতাঙ্গ দত্ত অভিধা– কী প্রকারে কোন শুভলগ্নে পান বিধেয় সবিস্তারে এ তাবৎ শ্লোকবদ্ধরূপে গ্রথিত আছে। সহজে প্রত্যয় যাবেন না, কিন্তু তৎসত্ত্বেও ঘোর সত্য যে যুক্তফ্রন্টের কমন-ইস্ট তথা প্রতিপক্ষ উভয় সম্প্রদায়ই এ স্মৃতি সোল্লাসে কামনা করেছেন। বাসনা ধরেন, খবরই প্রসাদাৎ বিধান, ফতোয়া, ফরতা প্রয়োগ করত একে অন্যকে স্মৃতিভ্রষ্ট জাতিচ্যুত করতে সক্ষম হবেন। আমেন– যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ!
সম্পাদকতার পরিবর্তে এই দেবদুর্লভ গ্রন্থের কপিরাইট অতীব সুলভ। দ্যাখতোনাদ্যাখ আপনাদের বাক্-সাহিত্য তামাম বেঙ্গলকে তাক লাগিয়ে অবাক সাহিত্যে পরিণত হবে! বাঙলা কোন ছার, আপনি হেলায় লঙ্কা করিবা জয়।
এইবারে বলুন, শুধু মস্তানিই করি? উদারার খাদেও চড়াকসে নামতে জানি।
***
কিন্তু, যাই-বলি-যাই-কই, কিন্তু ব্যাকরণে একটা বিভীষণ ভুল করে বসে আছি আমি। সেটাকে আমার ওয়াটারলু পানিপথ গালিপলি আপনার প্রাণ যা চায় তাই তুলে বেইজ্জত করতে পারেন। আমার মন নির্ঘ ছিল, আপনি আপনার পেটুয়া কাকা মামা শালাদের কাউকে দুম্ করে সম্পাদকের দিওয়ান-ই-খাস-এর সগ-ই-মমর তখতে বসিয়ে দেবেন। ও হরি! কোথায় কী? বসিয়ে দিয়েছেন বিদগ্ধ দ্ৰ কুলীন সন্তান মিত্রজ শ্ৰীযুত বিমল মহোদয়কে। সর্বনাশ! আমার। আপনার তো সর্বরক্ষা! এ যে আমার কুল্লে ফরিয়াদের কী বেহ মুখ-তোড় জবাব তার জবাব কড়ি দিয়ে কেনা যায় না। কালির উপর বিমল! সোনার পাথর বাটি আপনিই সব্বপয়লা গড়লেন। কালি সরোবরে বিমল হংসকে ছেড়ে দিয়েছেন। কবীর (বেজোড়ের) বলেছেন, বিরল হংস। ম স্থলে র। তা ওই ম র ম র ম রা করে করেই শ্রীবাল্মীকি রামচন্দ্র পেয়েছিলেন।
কহাঁ আসমান কা সিতারা, ঔর কহাঁ——! কোথায় আসমানের তারা আর কোথায় পাছার পাঁচড়া! কোথায় শ্রীবিমল আর কোথায় আমি!
সাহিত্যিক রূপে খ্যাতি জমানো সর্বভূমিতেই সুকঠিন। কঠিনতম গুজরাত মারওয়াড়ে। ঝাড়া দশটি বছর আমি তৎ তৎ অঞ্চলে বসবাস করেছি এবং লক্ষ করেছি ওইসব ভূমিতে সাহিত্যিক নামক বস্তুটি কালোবাজারেও পাওয়া যায় না। অবশ্য শুনে তাক লেগে যাবে ওইসব অঞ্চলে কালোবাজার হেথাকার তুলনায় ঢের ঢের কম। সো কৈসন? উত্তরে সেই উর্দু প্রবাদটি স্মরণ করিয়ে দিই– মহল্লেকি রেণ্ডি মা বরাবর= আপন মহল্লার বেশ্যা মায়ের মতো, অর্থাৎ, ঢলাঢলি করবি তো কর, কিন্তু আপন মহল্লাতে নয়। তাই এদেশের মহাজনরা উভয়ার্থে– আপন আপন জন্মভূমিকে কর্মভূমিতে পরিণত করেননি। ঐসি গতি সনসারমে। তা সে যাক। বলছিলুম কী, ওদেশে সাহিত্যিক বস্তুটি ডুমুরের ঠ্যাং। যদিস্যাৎ সেই ব্রহ্মাণ্ডদুর্লভ প্রাণীটি এদেশে দেখা দেয় তবে তাকে কারও সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার সময় বলে সাহিত্যিক ছে অর্থাৎ ইনি সাহিত্যিক। অন্য পক্ষ তখন মনে মনে বলছে বেচারা! না জানি, বউ বাচ্চা ক মাস ধরে অনাহারে আছে! এপক্ষ তখন গম্ভীরতম কণ্ঠে সুবে অহমদাবাদ-গুজরাত-সৌরাষ্ট্র কচ্ছকে বিস্ময়ে নির্বাক করে দিয়ে বলে গের বাঁধছে! অর্থাৎ ঘর বেঁধেছে? কী বললে? কী কইলে? সুঁ ব্যোলা? বরঞ্চ চিংড়ি মাছ হিমালয়ের চুড়োয় চড়ে আপস-চূড়া-প্রবাসিনী চিংড়িনীকে ডেকে তার সঙ্গে রসালাপ করতে পারে–সরু গলির এপার ওপার যেরকম নিত্যি নিত্যি হয় কিন্তু সাহিত্যিক আপন কামানো কড়ি দিয়ে বাড়ি বেঁধেছে! জয় প্রভু পরস্নাথ!
বিমলবাবু কড়ি দিয়ে কী কী কিনেছেন বলেননি। দাদখানি বেল মশুরির তেল থেকে শুরু করে নিশ্চয়ই গের= ঘর = বাড়ি!
এদিকে দেখুন, পাঠান মোগল ইংরেজকে তিনি কীরকম গুলে খেয়েছেন শ্রীমিত্র হয়তো বঙ্কিমচন্দ্রকে হারাতে পারেননি– কে-ই বা পারে– কিন্তু তাঁরা ইতিহাস চর্চা বঙ্কিমের চেয়ে কম নয়। সে যুগের তুলনায় আজ লাইব্রেরিতে ফারসি ইতিহাস ঢের ঢের বেশি। এবং সব চেয়ে বড় কথা, অর্বাচীনরা যখন ভেবেছিল, ঐতিহাসিক উপন্যাসের জমানা খতম, সাত হাত মিট্টিকে নিচে তখন শ্রীবিমল দেখিয়ে দিলেন, কোনও বিষয়বস্তু কোনও যুগ, কোনও আঁর = genre-ই চিরতরে লোপ পায় না। ঐতিহাসিক উপন্যাস আজও লেখা যায়– ঈশপের গল্প পাঁচ হাজার বছর পরেও লেখা চলবে, কলমের জোর থাকলে।
ওই কলমের জোরটাই আমাকে নিধন করেছে, সহযোগী মশাই, ওই পোড়া কলমের জোর।
নইলে, স্মরণ করুন, কুবুদ্ধির তাড়নায় একদা আপনি স্বয়ং পঞ্চতন্ত্র ছাপাননি? মহাত্মা বিষ্ণুশর্মার জার পৃথিবীর কোন দেশে অপরিচিত? এই শৰ্মাই বা তাকে গুরু বলে স্বীকার করবে না কেন? কিন্তু আপনার-আমার জোড়া কপাল–দৈবের লিখন, আহা, খাইতে সাধ্য কার– গর্দিশের গেরোতে গেরনে গেরাস করলে।… শুনলুম, বইখানা আপনার হাতছাড়া হয়েছে। তা হলে মৌলা আলির উদ্দেশে ব্রতোপবাস করে, সেখানে আচারাত চতুর্দশ শাক নিবেদন করত চলে যান সোজা কালীঘাটে। সেখানে কালী কেলকেত্তাওয়ালীর পদপঙ্কজে বিবি শিরনি ছড়িয়ে– এর সমূহ বিধি বিধান নব্যস্মৃতিতে পাবেন–ব্রহ্মময়ী মা, ব্ৰজযোগিনী মা স্মরণ করতে করতে বাড়ি ফিরে পুজোপাটার বিশেষ বেশ গরদের ইজের-পাজামা ফের শিকের হাঁড়িতে রাখবেন। কারণ অধুনা তোমার বাহন যেটা, দুই সেই ইঁদুর ব্যাটা–
সোঁদর বনের বড়-মোর মুরশিদ, দক্ষিণ রায়ের ভ্রাতা গাজীপিরের ফিরলো প্রবেশ ছাড়পত্র ইভনিং-জ্যাকেটটির নিকুচি করেছে!
***
কিন্তু এই ওয়াটারলুর সামনেও আমার একটি বক্তব্য আছে।
শ্রীবিমল কখানা বই লিখেছেন আমি জানিনে বলে লজ্জিত। কিন্তু তার প্রত্যেক বই যেন অনার্জ সহ পাস সে তথ্য অজানা নয়। পক্ষান্তরে আমার চোদ্দটি সন্তান আপনাদের প্রদত্ত গ্রেস সত্ত্বেও হারাধনের দশটি ছেলের রাজেন্দ্রসঙ্গমে কপপুর! সবকটা বিলকুল না-পাস।
তাই শ্রীবিমল better কোআলিফাইড!
এই তো আপনার বুদ্ধি!
চৌদ্দ ব্যাঙ্ক যে ডকে তুলেছে সে সন্ধি সুড়ক বেশি জানে, না যে সগৌরবে বেশুমার ব্যাঙ্কের উন্নতি করেছে সে বেশি জানে? কালোবাজার, ট্রিপল একাউন্ট রাখা, ব্যাঙ্কের টাকায় তেজিমন্দি খেলা, ইনকমট্যাক্স দেওয়া দূরের কথা তাদের কাছে রিলিফ রূপে দাদন চাওয়া এসব না করতে পারলে আপনার সদ্য ভরা কালি সাহারা হয়ে যাবে না, আপনার কলম মুষলে পরিণত হয়ে যদুবংশ ধ্বংস করবে না। ঈশ্বর রক্ষতু!
তবু গাঁইগুঁই করছেন? অর্থাৎ, এটা বোঝার মতো এলেমও আপনার পেটে নেই। তা হলে মারি সেখানে বোমা!
এক বিশেষ সম্প্রদায়ের তালেবর ব্যবসায়ী ভাবী জামাতার সঙ্গে ব্যবসাতে বাবাজির তজরুবাহ-অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মাত্র একটি প্রশ্ন শুধোন। উত্তর শুনে সোল্লাসে বললেন, ওয়াহ্, ওয়াহ্ বেটা জিতে রহো! ঔর ক্যা পঁছু? (আর কী শুধবো!) সাত দফে গণেশ উল্টায়া! কামাল কিয়া, কামাল কিয়া! বহিয়া দামাদ (জামাতা), উদা দামাদ!
এই কামাল্ কিয়া শুনেই কাজী-কবি মুস্তফা কামালের উদ্দেশে গেয়েছিলেন, কামাল। তুনে কামাল কিয়া, ভাই!
আমার নাম মুস্তফা নয়– বঙ্গসন্তান তবু আকছারই আমাকে ওই নামে চিঠি লেখেন, আমিও ওই নামের ধোকার টাটির পিছনে আশ্রয় নিই, পাওনাদারের হুনো খেয়ে
আমার চ্যান্স দিন, স্যার, আমি আপনার কাগজের তরে কামালের আমল করে ছাড়ব। ও! আপনি বুঝি আরবি ভাষা আমার চেয়েও বেশি মিসান্ডারস্টেন্ড করেন। কামালের স্যুপারলেটিভ আমল- যেমন কবীর-এর অবর, হামিদ-এর আহমদ! বাঁদরের বোধহয় আবৃদ নইলে হারাম ব্র্যান্ডি-পানি দেবে কেন?
***
শ্রীবিমলকে না নিলেও আপনি যে মিত্তির একটি নিতেনই– সে আমি জানি। মুখুয্যে “কুটিল” অতি বন্দ্যো বটে সাদা, অপিচ ঘোষ বংশ মহাবংশ, বোস বটে সাদা, মিত্তির “কুটিল” অতি দত্ত মহারাজা।
এ কম্মটি ভালোই করেছেন। সর্বশেষে দেখছি নমস্য বদ্যিও জুটিয়েছেন। কবিগুরুর দক্ষিণ-হস্তের সাক্ষাৎ প্রতীক আপনাদের কাগজের মেরুদণ্ড গড়ে দিচ্ছেন।… হা হা পাবলিসিটি করতে জানতেন না, বদ্যি সন্তান শ্ৰীম।
***
তবু বলছি, আমাকে নিলে ভালো করতেন!
‘কালি ও কলম’ ফাল্গুন ১৩৭৫