উপন্যাসের চেয়ে আশ্চর্য
বন্দিনী রাজশ্রী! থানেশ্বরের রাজকন্যা রাজশ্রী,—সৌন্দর্যে অনুপমা, বিদ্যায় মূর্তিমতী সরস্বতী, স্বামী ছিলেন তাঁর রাজা গ্রহবর্মন! কিন্তু নিষ্ঠুর মালবরাজের হাতে আজ তাঁর স্বামী নিহত এবং তিনিও হয়েছেন বন্দিনী, তাঁর দুই কমল-চরণে কনক-নূপুরের পরিবর্তে বেজে উঠছে আজ লোহার শৃঙ্খল!
এই দুঃখের খবর নিয়ে দূত এল ছুটে থানেশ্বরের রাজা রাজ্যবর্ধনের রাজসভায়।
ভগ্নী রাজশ্রীকে কেবল রাজা রাজ্যবর্ধনই ভালোবাসতেন না, রাজকন্যা ছিলেন রাজ্যের সমস্ত প্রজার প্রাণের পুতলি। তখনই প্রস্তুত হল দশ হাজার অশ্বারোহী। তাদের পুরোভাগে রাজ্যবর্ধন ছুটলেন বন্দিনী রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে।
কিছুদিন যায়। থানেশ্বরের সমস্ত প্রজা যখন তাদের রাজা ও রাজকন্যার প্রত্যাগমনের আশায় সাগ্রহে অপেক্ষা করছে, আবার এল তখন এক চরম দুঃখের খবর!
রাজা রাজ্যবর্ধন মালবরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করেছেন বটে, কিন্তু নিজেই নিহত হয়েছেন মালবরাজের বন্ধু ও বাংলার রাজা শশাঙ্কের হস্তে। এবং রাজকন্যা রাজশ্রী নিজের মান ও প্রাণ বাঁচাবার জন্যে পালিয়ে গিয়েছেন সুদূর বিন্ধ্য পাহাড়ের বিজন বনে।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তেরো শত বৎসর আগে ভারতবর্ষে যখন এই বিচিত্র নাটকের অভিনয় চলছিল, তখন এদেশে মুসলমান দিগবিজয়ীরা দেখা দেননি; বিখ্যাত দিল্লি নগরের প্রতিষ্ঠা হয়নি; এমনকী আজ সূর্য-চন্দ্র-বংশধর খাঁটি ক্ষত্রিয় বলে যাঁরা মিথ্যা গর্ব করেন, সেই রাজপুতদের নাম পর্যন্ত কেউ শোনেনি।
ভারতবর্ষের তখন অত্যন্ত দুর্দশা। কাব্যে বর্ণিত পৌরাণিক কুরুপাণ্ডবের কাহিনি তখনও লোকের মুখে মুখে ফিরছে, কিন্তু মহাভারত তখন অসভ্য হুনদের কবলে হয়ে পড়েছিল শক্তিহীন ও স্বাধীনতা-হারা! দক্ষিণ-ভারত তখনও তার নিজস্ব ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছিল বটে, কিন্তু সত্যিকার আর্যাবর্ত বলতে বোঝাত তখন বিন্ধ্য-গিরিশ্রেণির উপর অংশকে। এ-অংশে তখনও বহু ছোট ছোট হিন্দু রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল! কিন্তু সেসব স্থানে এমন কোনও মহাবীর ছিলেন না, সমগ্র আর্যাবর্তে যিনি একচ্ছত্র সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখতে পারেন!
পৌরাণিক যুগের কথা ছেড়ে দি, কারণ কেউ তখন ভারতের ইতিহাস লেখেনি। তবে ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক যুগে দেখতে পাই, পারসিক ও গ্রিকরা এসে তার বুক মাড়িয়ে চলছে আর এক চরম দুর্ভাগ্যের দিনে। তখন ভারতকে উদ্ধার করেছিলেন মৌর্য চন্দ্রগুপ্ত এবং স্থাপন করেছিলেন এমন এক মহাসাম্রাজ্য, যার মাথার মুকুট ছিল হিন্দুকুশের শিখর এবং চরণের নূপুর ছিল মহাসাগরের নীল তরঙ্গদল। তারপর তাঁরই পৌত্র সম্রাট অশোকের সময়ে ভারতবর্ষ সভ্যতায়, একতায় ও মানব-ধর্মে উচ্চে উঠেছিল, আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও সাম্রাজ্যই তা ধারণায় আনতে পারেনি।
কিন্তু তারপরেই এল আবার এক বিষম অন্ধ যুগ। মৌর্য সিংহাসনের দুর্বল অধিকারীদের হাত থেকে খসে পড়ল রাজদণ্ড এবং সেই অবসরে ভারতে প্রবেশ করল বর্বর শক দিগবিজয়ীরা। কিন্তু কিছুকাল পরে ভারতীয় সভ্যতা ও ধর্মের প্রভাবে এসে, শকরাও ভারতবাসীদের মধ্যে গণ্য হল এবং শক সম্রাট কনিষ্কও গ্রহণ করলেন অশোকের আদর্শ। তারপর রঙ্গমঞ্চ থেকে হল শকদের প্রস্থান এবং নানা জাতের যবন দিগবিজয়ীরা নানা দিক থেকে ভারতে ঢুকে আর্যাবর্তকে করে তুললে আর্যদের অযোগ্য। সেই সময়েই হল সমুদ্রগুপ্তের আবির্ভাব—ঐতিহাসিকদের কাছে যিনি ভারতের নেপোলিয়ন নামে বিখ্যাত। ভারতের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমে জয়ধ্বজা তুলে আবার এক বিপুল সাম্রাজ্য স্থাপন করে হিন্দু সমুদ্রগুপ্ত অপূর্ব এক স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনলেন। সেই স্বর্ণযুগের পরমায়ু হয়েছিল প্রায় দুই শতাব্দী ব্যাপী। স্থাপত্যে, চিত্রে, ভাস্কর্যে; বিজ্ঞানে ও কাব্য-নাটকে হিন্দুর যা কিছু গর্বের ও গৌরবের, তার অধিকাংশেরই উত্তরাধিকারী হয়েছি আমরা গুপ্ত সম্রাটদের প্রসাদে! তারপর আবার হল ভারতের পতন।
ভারত দু বার পড়েছে, দু বার উঠেছে। কিন্তু এবার তাকে তুলবে কে? হুনদের আক্রমণে ও অত্যাচারে জর্জরিত ও জীবন্মৃত ভারত এখন তারই পদধ্বনি শোনার আশায় দিন গুনছে।
চলো, আবার থানেশ্বরে ফিরে যাই। এ হচ্ছে সেই থানেশ্বর যেখানে উঠেছিল কুরু-পাণ্ডবের মহাযুদ্ধে অস্ত্রে অস্ত্রে ঝঞ্ঝনা! কিন্তু থানেশ্বরের আজ বড়োই দুর্দিন। তার রাজা নিহত, রাজকন্যা বনবাসিনী, সিংহাসন শূন্য! মৃত রাজা বয়সে এমন নবীন ছিলেন যে, খুব সম্ভব পুত্রের পিতা হতে পারেননি। তাঁর এক ছোট ভাই আছেন নাম হর্ষবর্ধন, বয়স ষোলোর ভিতরে। কিন্তু তখনও অস্ত্রের চেয়ে শাস্ত্রের দিকে তাঁর প্রাণের টান এত বেশি ছিল যে, এই তরুণ বয়সেই রাজসভা ছেড়ে তিনি এক বৌদ্ধ মঠে আশ্রয় নেবার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এমন সময়ে এল দেশের ডাক, মন্ত্রীদের ডাক, প্রজাদের ডাক—ফিরে এসো রাজকুমার, ফিরে এসো! আমরা তোমাকে চাই, সিংহাসন তোমাকে চায়!
হর্ষবর্ধন কিন্তু সহজে ফিরতে রাজি হলেন না, তাঁর মনে অঙ্কুরিত হয়েছে তখন বৈরাগ্যের বীজ। কিন্তু সকলের উপরোধ শেষ পর্যন্ত তিনি ঠেলতে পারলেন না। কথিত আছে, এই সময়ে তাঁর ধ্যানে আবির্ভূত হয়ে বুদ্ধদেব স্বয়ং তাঁকে প্রত্যাদেশ দিয়েছিলেন, ‘বৎস, তোমার জন্ম রাজধর্ম পালন করার জন্য। তুমি রাজ্য রক্ষা, রাজ্য বিস্তার করো, আমার আশীর্বাদে তুমি হবে ধরণীতে শ্রেষ্ঠ।’
রাজ্যের ভার নিয়ে হর্ষবর্ধনের প্রথম কর্তব্য হল ভ্রাতৃহত্যাকারীকে শাস্তি দেওয়া ও ভগ্নী রাজশ্রীকে উদ্ধার করা। হত্যাকারী রাজা শশাঙ্ক কী শাস্তি পেয়েছিলেন, ইতিহাস সে সম্বন্ধে নীরব; তবে তিনি যে নিজের রাজ্য বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন, এমন প্রমাণ আছে—এবং কিছুকাল পরে তাঁর রাজ্যও হর্ষবর্ধনের হস্তগত হয়।
কিন্তু রাজশ্রী কোথায়? বোনের খোঁজে হর্ষবর্ধন ঘুরে বেড়াতে লাগলেন বনে বনে। শেষে বনবাসী অসভ্যদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে অনেক চেষ্টার পর তিনি যখন যথাস্থানে গিয়ে হাজির হলেন, সকল আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে রাজশ্রী তখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন চিতায় উঠে আত্মহত্যা করবার জন্যে!
রাজধর্মের এমনি গুণ, শান্তিপ্রিয় সন্ন্যাসীকে দু দিনেই সে করে তুললে দিগবিজয়ী ক্ষত্রিয়! প্রথমে হর্ষবর্ধনের অধীনে ছিল পাঁচ হাজার রণহস্তী, বিশ হাজার অশ্বারোহী ও পঞ্চাশ হাজার পদাতিক। এই ফৌজ নিয়েই তিনি বিরাট আর্যাবর্তকে একচ্ছত্রাধীন করবার জন্যে বেরিয়ে এলেন অসীম সাহসে! কোথাও ছোট বা বড় হিন্দু বা বৌদ্ধ রাজা, কোথাও যবন শক হুন রাজা, কোথাও অসভ্য বর্বর রাজা—তাঁর উদ্যত তরবারির তলায় সকলেই মাথা নোয়াতে বাধ্য হল একে একে! কেউ যুদ্ধ করে হেরে গেল, কেউ প্রাণ দিলে, কেউ পলায়ন করলে, কেউ মানে মানে বশ মানলে। কখনও পাঞ্জাবে, কখনও বিহারে, কখনও বাংলায় এবং কখনও উৎকলে রুদ্রমূর্তিধারী হর্ষবর্ধন ছুটে বেড়াতে লাগলেন, সসৈন্যে, বিদ্রোহীদের রক্তস্রোতে পৃথিবীকে রাঙা করে! প্রায় ছয় বৎসরের মধ্যে উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব-ভারতের অধিকাংশ রাজ্য হল তাঁর করতলগত—আর্যাবর্তে হল শেষ হিন্দু সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা! তখন তাঁর সৈন্যবাহিনীও এমন বিপুল হয়ে উঠেছে যে, ইচ্ছা করলেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারেন ষাট হাজার রণহস্তী ও এক লক্ষ অশ্বারোহীকে!
তারপর হর্ষবর্ধন খুলে ফেললেন তাঁর যুদ্ধবেশ এবং সিংহাসনে গিয়ে বসলেন রাজ্যশাসন ও প্রজাপালন করবার জন্যে। সে-সময়ে তাঁর প্রধান পরামর্শদাত্রী হলেন বিদুষী রাজকন্যা রাজশ্রী। যথার্থ হিন্দু ভারতবর্ষে বিধবা হলেও যে নারীর জীবন ব্যর্থ হয়ে যেত না এবং কঠিন রাজনীতিতেও যে পুরুষের পাশে ছিল নারীর স্থান, এইটেই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
দিগবিজয়ের পরে সম্রাট হর্ষবর্ধন সুদীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বৎসরকাল রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর রাজত্বের বড় বড় সব কথাই প্রায় জানা গিয়েছে প্রধানত দুটি কারণে। তাঁরই শাসনকালে বিখ্যাত চৈনিক ভ্রমণকারী হিউয়েন-সাঙ ভারত-ভ্রমণে এসেছিলেন। একটানা পনেরো বৎসরকাল ভারতে থেকে, তিনি এখানকার রাজ্য, সমাজ, ধর্ম ও আচার-ব্যবহার সম্পর্কীয় সমস্ত বিবরণ লিখে রেখে গিয়েছেন। তার উপরে হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণ-রচিত ‘হর্ষ-চরিত’ ও হচ্ছে ঐতিহাসিকের আর একটি বড় অবলম্বন।
শেষ পর্যন্ত হর্ষবর্ধন তাঁর সাম্রাজ্য অধিকতর বিস্তৃত করতে ক্ষান্ত হননি। মালব, নেপাল, গুজরাট ও সুরাষ্ট্রও হয়েছিল তাঁর হস্তগত, আসাম বা কামরূপের শাসনকর্তা ছিলেন তাঁর করদ রাজা। কেবল আর্যাবর্তের বাইরে দাক্ষিণাত্যের উপরে তাঁর প্রভাব ছিল না। ওদিকে রাজ্যবিস্তার করতে গিয়ে তিনি চালুক্য-বংশীয় রাজা দ্বিতীয় পুলকেসিনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে নর্মদা নদীই হয় উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সীমা।
হিউয়েন-সাঙ এর কাহিনি থেকে জানা যায়, হর্ষের রাজত্বে অপরাধীর সংখ্যা বেশি ছিল না। কিন্তু সেকালে ছেলে বাপের বাধ্য না হলে, কোনও লোক অসাধুতা বা নীতিহীন ব্যবহার করলে, তাদের নাক-কান কেটে নিয়ে শহরের বাইরে বনে-জঙ্গলে তাড়িয়ে দিয়ে আসা হত এবং অন্য কেহও তাদের আশ্রয় দিত না।
সাধারণ প্রজারা সুখে-স্বচ্ছন্দে কালযাপন করত। ব্যবসা-বাণিজ্যে তারা লোক ঠকাত না, বিশ্বাসঘাতকতা করত না এবং অঙ্গীকার রক্ষা করত। তাদের ব্যবহারও ছিল বিনীত, মিষ্টি ও ভদ্র। ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণরা ছিলেন খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রজাদের অধিকাংশই খালি পায়ে হাঁটত, অনেকে আবার পায়ে পরত ‘স্যান্ডাল’।
শহরে ও মফসসলে পথিক, রোগী ও দরিদ্রদের জন্যে বহু ধর্মশালা ছিল। সেখানে আশ্রয় নিলে পথশ্রান্তরা পেত বিশ্রামের সুযোগ, ক্ষুধার্তরা পেত বিনামূল্যে আহার্য, রোগীরা পেত ঔষধ-পথ্য ও চিকিৎসকের সাহায্য। সাম্রাজ্যের সর্বত্রই ছিল সুশিক্ষার জন্যে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা।
সম্রাট হর্ষ বিশেষরূপে কোনও ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায় না। তবে তিনি সূর্য, শিব ও বুদ্ধদেবের উপাসনা করতেন এবং তাঁর প্রত্যেক উপাস্যের জন্যে সাম্রাজ্যের নানাস্থানে বহু মন্দির বা মঠ স্থাপন করেছিলেন। শেষ বয়সে বৌদ্ধধর্মের উপরে তাঁর টান এত বেড়ে ওঠে যে, ব্রাহ্মণরা গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে তাঁকে হত্যা করবার চেষ্টা করে।
কিন্তু কেবল দিগবিজয়ী, সম্রাট, সুশাসক ও ধার্মিক রূপেই হর্ষবর্ধন পৃথিবীর বিস্মিত দৃষ্টি আকর্ষণ করেন না, সংস্কৃত সাহিত্যে তিনি একজন অমর গ্রন্থকাররূপেও সুপরিচিত। তোমরা নিশ্চয়ই ‘রত্নাবলী’, ‘নাগানন্দ’ ও ‘প্রিয়দর্শিকা’র বিখ্যাত নাট্যকার কবি শ্রীহর্ষের নাম শুনেছ? কবি শ্রীহর্ষ ও সম্রাট হর্ষবর্ধন একই ব্যক্তি। এক কথায় বলতে গেলে, সম্রাট হর্ষবর্ধন কেবল স্বাধীন হিন্দু সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। তাঁর মতো গুণী লোক পৃথিবীর রাজকুলে দুর্লভ।
একবার হত্যাকারীর ছুরি থেকে বেঁচে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হর্ষবর্ধন আত্মরক্ষা করতে পারলেন না। বৌদ্ধধর্মের প্রতি অতি-ভক্তি দেখাবার জন্যে তিনি হিন্দু প্রজাদের অনেক দাবিই অগ্রাহ্য করতে লাগলেন। ফলে হিন্দুরা যে খুশি হল না, সে কথা বলাই বাহুল্য।
হর্ষের এক মন্ত্রী ছিল, তার নাম অর্জুন বা অরুণাশ্ব। ভারতবর্ষের গৌরবের যুগেও যে এখানে প্রথম শ্রেণির দুরাত্মার অভাব হয়নি, ওই অর্জুনই তার প্রমাণ। প্রজাদের বিরক্তির সুযোগ নিয়ে একদিন সে ভারতের হিন্দু-সাম্রাজ্যের শেষ প্রতিষ্ঠাতা এবং কবি ও কলাবিদ সম্রাট হর্ষকে হত্যা করলে (৬৪৬ বা ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে)।
মুকুট দাবি করতে পারে রাজবংশের এমন কেউ নেই, কারণ, সম্রাট হর্ষ পুত্রহীন। পাপী অর্জুন এ সুযোগ ছাড়লে না, নিজেই সিংহাসনের উপরে গিয়ে জাঁকিয়ে বসল।
কিন্তু এই বিরাট সাম্রাজ্যের কর্ণধার হবার মতন যোগ্যতা ছিল না অর্জুনের। দুদিন যেতে-না-যেতেই অর্জুনের অত্যাচারে চারিদিকে উঠল মহা হাহাকার, রাজ্য প্রায় অরাজক! সম্রাট হর্ষবর্ধনের তরবারি ধারণ করতে পারে এমন সবল বাহুর অভাব, রাজ-ভাণ্ডার লুণ্ঠিত। কর্মচারীরা মাহিনা পায় না, শ্রেষ্ঠ সৈন্যরা পলাতক, সাম্রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড, অনেক সামন্ত রাজা করলেন বিদ্রোহ ঘোষণা! প্রজারা বুঝলেন—অর্জুন রক্ষক নয়, ভক্ষক! কিন্তু বুঝেও তখন আর অনুতাপ করা ছাড়া উপায়ান্তর ছিল না।