উনযৌবনা
তাপ্তী, সবরমতী, মাহী পেরিয়ে সাতপুরা, সহ্যাদ্রি, বিন্ধ্য ও আরাবল্লীর পাহাড়ের চড়াই উতরাই পিছনে ফেলে গুজরাত সেখানে আরব সাগরের কোলে প্রায় ঢলে পড়েছে। ইতিহাসের পাতায় পাতায় যাদের উল্লেখ সেই গিরনার পাহাড়, জুনাগড়, সোমনাথ, দ্বারকা ছড়িয়ে রয়েছে আশে পাশেই। একটু উত্তরে জামনগব ছাড়লেই কচ্ছের রন লোনা জলের সাম্রাজ্য শুরু। মাটিব নীচে সর্বত্রই অমূল্য খনিজ সম্পদ। আরব সাগর আব কচ্ছ কাম্বে উপসাগরের কোলে কত ছোটোবড়ো বন্দর। ছোটোবড়ো শহরেরও অভাব নেই কিন্তু মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে সীমাহীন জনশূন্য প্রান্তর। টুকরো টুকরো জমিতে বজরা বা ভুট্টার চাষ। ছোটো রেলগাড়ি এরই মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে কিন্তু কোনো ব্যস্ততা নেই।
ছোট্ট স্টেশনে গাড়ি থামল। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি। সংস্কৃত টোলবাড়ির পণ্ডিত মশাইদের ফতুয়ার ঘাঘরার মতো কুঁচি দেওয়া জামা পরা কিছু পুরুষ যাত্রী ওঠানামা করে কিছু সওদা মাথায় নিয়ে। রঙিন পোশাক পরা কিছু মেয়ে যাত্রীও চোখে পড়ে। হকাররা চিৎকার করে–ব্যয় আনা, ব্যয় আনা। অসংখ্য বৈচিত্র্যের দেশ ভাবতবর্ষের এক অপরূপ ছবি দেখি সর্বত্র। দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যাই। অতি সাধারণ গরিব মানুষ কিন্তু তাদের চোখেমুখে হাহাকারের স্পর্শ নেই।
দু এক মিনিট দাঁড়িয়ে আবার চলতে শুরু করে আমার ছোটো রেলগাড়ি। আবার স্টেশন আসে, আবার দাঁড়ায়। দুএক মিনিট পরে গার্ডের বাঁশি বাজে; অথবা তার আগেই ইঞ্জিনের বাঁশি। গাড়ি আবার চলতে শুরু করে।
হঠাৎ খেয়াল হয়, আমি বিভোর হয়ে মানুষ দেখছি, আমার কামরায়, স্টেশনে, প্ল্যাটফর্মে। আহা! কী চোখ! শুধু সুন্দর নয়, অপূর্ব! এর আগে আর কোথাও দেখিনি। না দেশে, না বিদেশে। ভূমধ্য সাগরের পারে, নাইলের পাড়ে, গ্রীসের ধবংসপের পাশে পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর মানুষদের দেখেছি। এখানকার সুন্দরীরা যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীর পুরুষকে মুগ্ধ করেছে কিন্তু তাদের এমন চোখ নেই। বোধহয় এদেবই কাউকে দেখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ
টিকিটবাবু টিকিট চাইতেই সম্বিত ফিরে এল। শুধু আমাব না, গাড়ির সবার টিকিট পরীক্ষা করলেন উনি। অবাক হলাম, সবারই টিকিট আছে। টিকিট পরীক্ষা শেষ করে টিকিটবাবু আমারই পাশে বসলেন। এমন বন্ধু এত কাছাকাছি আর পাইনি! তাই তাকেই বললাম, মাঝপথে ট্রেন বদলে আমাকে আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হবে কিন্তু এ গাড়ি তো পৌঁছবার দুঘণ্টা আগেই ও গাড়ি ছেড়ে দেবে।
টিকিটবাবু হেসে বললেন, এ গাড়ি এ রকমই চলে। আপনি বরং সামনের স্টপেজেই নেমে পড়ুন। টিকিটবাবু আরো বললেন, দু তিন টাকার লোকসান হলেও অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছবেন
গাড়ি থামতেই নেমে পড়লাম। মাত্র দুতিনজন যাত্রী ওঠানামা করতেই গাড়ি আবার ছেড়ে দিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম গাড়ি এগিয়ে চলেছে মাঠের মধ্যে। না দেখে পারলাম না। যে গাড়িতে বসে এত কিছু দেখেছি তাকে বিদায় না জানিয়ে দৃষ্টি ঘোরাতে পারলাম না।
এটা স্টেশন নয়, হল্ট। হিন্দি, ইংরেজি, গুজরাতিতে লেখা পরিচয়লিপি থেকে চোখ ঘোরাতেই দেখি, মাস্টারবাবু অবাক হয়ে আমাকে দেখছেন। পরনে ধুতি কিন্তু তার উপর রেল কোম্পানির কোট। বয়স বেশি নয়, বোধহয় ত্রিশবত্রিশ। খুব বেশি হলে চৌত্রিশ পঁয়ত্রিশ। তার বেশি কখনই নয়। এমন কিছু সুপুরুষ না হলেও চেহারাটি মোটামুটি ভালোই।
প্ল্যাটফর্ম বলে কিছু না থাকলেও দু দিকের দুটি পরিচয়লিপির মাঝখানের লম্বা জমিটুকুর উপরই মাস্টারবাবু দাঁড়িয়ে। ওর পিছনেই ছোট্ট একটা ঘর। নিঃসন্দেহে ওটাই ওর অফিস ঘর। তাকিয়ে দেখি, ঐ অফিস ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে একজন বৃদ্ধ ও একজন কিশোরীও মাস্টারবাবুর মতোই অবাক হয়ে আমাকে দেখছে। মনে মনে হাসি। ভাবি, ওরা কী কোনোদিন আমার মতো মানুষ দেখেনি।
আমি মাস্টারবাবুর দিকে এগুতেই মেয়েটি দৌড়ে কোথায় চলে গেল।
তারপর মাস্টারবাবুর কাছে গিয়ে প্রথমে নমস্কার, পরে আমার সমস্যার কথা বললাম। উনি বাসের খবর না দিয়ে প্রশ্ন করলেন, কোথায় থাকেন?
দিল্লিতে
শুনে উনি অবাক, দিল্লিতে থাকে?
হ্যাঁ।
দিল্লিতে কোন ডিপার্টমেন্টে আছেন?
আমি কোনো ডিপার্টমেন্টে নেই।
আপনি চাকরি করেন না?
হ্যাঁ, করি।
তবে বলছেন, কোনো ডিপার্টমেন্টেই নেই।
আমি সরকারি চাকরি করি না।
তবে আবার দিল্লিতে কী চাকরি করেন?
আমি খবরের কাগজে কাজ করি।
মাস্টারবাবু চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বললেন, আপনি জার্নালিস্ট?
হ্যাঁ।
আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করেই মাস্টারবাবু বললেন, আসুন, আসুন।
ওকে অনুসরণ করে ওর অফিস ঘরে আসি। ঘরে একটা চেয়ার, একটা টেবিল, একটা আলমারি, একটা বেঞ্চ। আমাকে চেয়ারখানা এগিয়ে দিয়ে বললেন, বসুন।
আমি ওর অনেক অনুরোধ-উপরোধ উপেক্ষা করেও বেঞ্চিতে বসলাম। অনেক দ্বিধা সঙ্কোচের সঙ্গে উনি চেয়ারে বসেই হাঁক দিলেন, রতিলাল!
বৃদ্ধ রতিলাল আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই দরজার আড়ালে লুকিয়েছিল। মাস্টারবাবুর হাঁক শুনে এবার সে আত্মপ্রকাশ করতেই হুকুম হল, কৃষ্ণাকে তাড়াতাড়ি চা করতে বল।
কৃষ্ণা! মেয়েটির নাম শুনে একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বললাম না।
এবার মাস্টারবাবু আবার আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কী দিল্লিরই লোক? মানে আপনি কী পাঞ্জাবি?
আমি বাঙালি।
এতক্ষণ হিন্দিতেই কথাবার্তা চলছিল। এবার উনি প্রায় পাগলের মতো চিৎকার করে বাংলায় বললেন, আপনি বাঙালি?
আমিও বাংলায় জবাব দিলাম, হ্যাঁ।
চিৎকার শুনে রতিলাল ছুটে আসে। ও কিছু বলার আগেই মাস্টারবাবু বলেন, রতিলাল, বহু বছর পর একজন বাঙালি পেয়েছি। তুমি আমার সাইকেল নিয়ে চটপট সৈয়দের কাছে গিয়ে একটু মাছ নিয়ে এসো। একটুও দেরি করো না।
আমি কিছু বলতে গেলাম কিন্তু ওরা কেউ আমার কথায় কান দিলেন না। রতিলাল মাস্টারবাবুর হুকুম শুনেই প্রায় উড়ে গেল। মাস্টারবাবুও সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। পাঁচসাত মিনিট পরেই ফিরে এলেন। হাতে এক প্লেট ভর্তি মিষ্টি। ওর পিছনেই কৃষ্ণা। হাতে দুকাপ চা। পরনে সুন্দর রঙিন শাড়ি। মাথায় ঘোমটা। হাতে চা নিয়েই ও মাথা নিচু করে বলল, নমস্কার বাবুজী।
আমি কৃষ্ণার মুখে বাংলা শুনে অবাক বিস্ময়ে বলি, তুমি বাঙালি?
কৃষ্ণা ডান হাত দিয়ে ঘোমটা একটু টেনে একটু হেসে মাথা নেড়ে বলে, না বাবুজী, আমাদের দেশ জেতপুরের ওদিকে। আমি বাংলা জানি। মাস্টারবাবু আমার গুরু আছে।
আমি হেসে বলি, তাই নাকি?
কৃষ্ণাও হাসে। বলে, হ্যাঁ
আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলি, তোমার নামটিও খুব সুন্দর।
ও মুখ নিচু করে হাসতে হাসতেই বলে, সেটাও মাস্টারবাবুর কৃপা।
এবার আমি মাস্টারবাবুর দিকে তাকাই। দেখি উনিও হাসছেন। বললেন, হ্যাঁ, আমিই ওর নাম রেখেছি কৃষ্ণা। ভারি ভালো মেয়ে।
প্রশংসা শুনে কৃষ্ণা লজ্জায় প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে যায়। অনেক কষ্টে বলে, আমি ঘরে যাবে বাবুজী?
হা যাও। কৃষ্ণা চলে যায়।
আমি এবার বাসের খোঁজ করি। মাস্টারবাবু বললেন, একটা ব্রীজ ভেঙে গেছে বলে কদিন বাস চলছে না।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
তাহলে কী করে যাব?
মাস্টারবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ওদিকে যাওয়া কী খুবই দরকার?
কিছুদিন আগেই কচ্ছের রণ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হয়ে গেল বলে এদিকে ঘুরতে বেরিয়েছি।
ভুজের দিকে গিয়েছেন কী?
হ্যাঁ, ওদিক ঘুরে এসেছি।
তাহলে এদিকে আর কী দেখবেন। সঙ্গে সঙ্গে মাস্টারবাবু হেসে বলেন, ভাগ্যক্রমে যখন আপনাকে পেয়েছি তখন দুচারদিন না রেখে ছাড়ছি না।
আমি চমকে উঠি, বলেন কী?
উনি আবার হেসে বলেন, আমি যেতে দিলেও রতিলাল বা কৃষ্ণা আপনাকে ছাড়বে না।
কেন?
ওরা মানুষ বড়ো ভালোবাসে। এক মূহুর্ত থেমে ভেবে বলি, কিন্তু…..
উনি মাথা নেড়ে বলেন, আমার আর রতিলালের কথা ছেড়েই দিলাম। আপনি কৃষ্ণাকে ছেড়ে যেতেই পারবেন না। কথাটা শুনেই খটকা লাগল। বললাম, কেন?
ও এমন আদরযত্ন করে যে ওকে ছেড়ে যাওয়া খুবই মুস্কিল।
ওর কথা শুনে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। বলি, তাই নাকি?
একটু সলজ্জ আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে মাস্টারবাবু মুখ নিচু করে বললেন, শুধু ওর জন্যই তো আমি এখানে কটা বছর পড়ে আছি। আরো কতকাল থাকব তা ভগবানই জানেন।
শুনেও আমার মজা লাগে। ভালোও লাগে। হাসি ঠাট্টা করে বলি, তাহলে তো এখানে থাকা একদম নিরাপদ নয়।
মাস্টারবাবু হো হো হেসে ওঠেন। পর মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায় মুখের হাসি। কেমন যেন বেদনার্ত সুরে বলেন, এ সংসারে আমার আপনজন নেই বললেই চলে। পেটের দায়ে এই পাণ্ডববর্জিত দেশে পড়ে আছি। কতকাল প্রাণভরে বাংলায় কথা বলি না। এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, যখন এসেই পড়েছেন, দুএকদিন থাকুন। সত্যি খুব খুশি হব।
কথাগুলো যেন এলোমেলো হয়ে বেরিয়ে এল ওর মুখ থেকে কিন্তু আমার মনে বড়ো দাগ কাটল। কথাগুলোর মধ্যে ওর আন্তরিকতায় এমন স্পর্শ অনুভব করলাম যে কিছুতেই ওর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলাম না। হেসে বললাম, আজ তো ট্রেনও নেই বাসও নেই; সুতরাং আজ তো আছি। তারপর কালকের কথা কাল ভাবা যাবে।
আবার কৃষ্ণা দু কাপ চা নিয়ে হাজির। ওকে দেখেই আমি হেসে বললাম, আদর যত্ন করে তুমি কী আমাকেও এখানে বন্দী করে রাখবে?
কৃষ্ণা মুখ নিচু করে হাসতে হাসতে বলল, বাবুজী, আপনি মুসাফির। মুসাফির ঘরে এলে তাকে দেবতার মতো যত্ন করতে হয় কিন্তু আমরা তো গরিব আছে…।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, না, কৃষ্ণা, ঠিক হল না। যে মানুষকে ভালোবাসতে পারে, সে তো কখনো গরিব হতে পারে না।
মাস্টারবাবু হেসে বললেন, বাঃ! ভারী সুন্দর কথা বললেন তো।
চা খেতে খেতে আমি কৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস করি, দুপুরে কি খাওয়াবে?
বাবুজি, এখানে সবজী খুব কম পাওয়া যায়। ইঞ্জিনের ড্রাইভারবাবু মাঝে মাঝে সবজী এনে দেয়। একটু সবজী আপনাকে খাওয়াবে। মচ্ছির ঝোল হবে। আর ডালপাপর তো জরুর পাবেন।
তুমি মাছ খাও?
অত্যন্ত কুণ্ঠার সঙ্গে মুখ নিচু করে ও বলে, হ্যাঁ বাবুজী, আমি মচ্ছি খায়।
মচ্ছি না, বল মাছ।
হা, হা, মাছ। গলতি হয়ে যায়।
আমি হেসেই বলি, আর যেন গলতি না হয়।
কৃষ্ণা মুখখানা গম্ভীর করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গলতি হলে আপনি মাফ করবেন না বাবুজী?
আমি ওর সারল্য, নিষ্পাপ মুখ দেখে যেন মুগ্ধ হয়ে যাই। এই পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরেও যেন এই স্নিগ্ধ পবিত্রতার মুখোমুখি হইনি কোনো মন্দিরে-মসজিদে বা গির্জায়। এ সারল্য, এ পবিত্রতা যেন শুধু কাশবনে, শুধু শরতের আকাশে, দোয়েল-কোকিলের মধ্যেই দেখা যায়। হঠাৎ মনে হল এই কিশোরীকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলি, এই পৃথিবীতে এমন কোনো পাপিষ্ঠ নেই যে তোমাকে মাপ করবে না। পারলাম না। মনের ইচ্ছা মনেই রইল। হেসে বললাম, তোমার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ের তো গলতি হওয়া উচিত নয়।
ঠিক বলেছ বাবুজী। আমার আর গলতি হবে না। আমি আর মচ্ছি বলবে না।
তবে কি বলবে?
কৃষ্ণা একটু জোরেই বলল, মাছ!
আমি আর মাস্টারবাবু হেসে উঠি।
হাসি থামতেই কৃষ্ণা মাস্টারবাবুকে বলে, বাবুজীকে ঘরে নিয়ে যাই? আর কত সময় দপ্তরে বসবেন?
আমি বললাম, না, না, আমি একলা যাব না। মাস্টারবাবুর কাজ শেষ হলেই… …
মাস্টারবাবু বললেন, আপনি স্নান করে নিন। আমি একটু কাজ সেরেই আসছি।
কৃষ্ণা আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করে না। এক হাতে আমার সুটকেস তুলে নিয়েই অন্য হাতে আমার একটা হাত ধরে টান দিয়ে বলে, চলিয়ে, চলিয়ে।
মাস্টারবাবু আবার বললেন, আপনি যান। আমি আসছি।
কী আর করব? কৃষ্ণার পিছন পিছন মাস্টারবাবুর কোয়ার্টারে গেলাম।
কোয়ার্টার মানে একখানি ঘর, একটা বারান্দা, ঐ বারান্দার এক পাশেই রান্নাঘর। ছোট্ট একটু উঠান। তার কোনায় একটু ঘেরা জায়গা। ওর নাম বাথরুম। তবে কলও নেই, পায়খানাও নেই। কোয়ার্টার আর স্টেশনের মাঝখানে একটা টিউবওয়েল আছে। প্রাকৃতিক কাজকর্মের জন্য মুক্তাঙ্গন।
তা হোক। শুধু ঘরখানি নয়, সমস্ত বাড়িটাই অত্যন্ত পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজান গোছান। ঘরের দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের একটা ছবি। বোধহয় কোনো ক্যালেন্ডার থেকে কেটে বাঁধান। একটা চেয়ারটেবিলও আছে ঘরটার এক কোনায়। খুব পুরনো দু তিনটে শারদীয়া সংখ্যা অত্যন্ত সযত্নে রাখা আছে টেবিলের ওপর। এছাড়া দুটোএকটা ডায়েরি ও কাগজ কলম। ঘরের সব চাইতে উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হচ্ছে, টেবিলের উপর ছোটো এক টুকরো কাঁচের তলায় কৃষ্ণার একটা ছবি। মনে মনে হাসি। ভাবি, যে মাটিতে বজরাভুট্টার চাষ করতে চাষীর প্রাণ বেরিয়ে যায়, সে মাটিতেই স্বচ্ছন্দে মানুষের মনে জন্ম নেয় সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
স্নান করার জন্য টিউবওয়েলের দিকে পা বাড়াতেই কৃষ্ণা বলল, বাথরুমেই জল আছে। বাথরুমে ঢুকে দেখি, চার বালতি জল, সারান, ছোট্ট একটা তোয়ালে রাখা আছে। স্নান করে ঘরে আসতেই কৃষ্ণা আয়নাচিরুনি এগিয়ে দিল। তারপরই নিয়ে এল এক গেলাস সরবৎ। আমি প্রতিবাদ করি না। হাসি আর কৃষ্ণাকে দেখি।
তোমার মা নেই কৃষ্ণা?
না বাবুর্জী, আমার মা নেই। আমি যখন সাত সালের তখন আমার মা মারা যায়।
তুমি এখানে আছ ক বছর?
আমি যখন সাত সালের তখন থেকেই আছি।
.
আমি আর প্রশ্ন করি না। চেয়ারে বসে সরবৎ খেতে খেতে কৃষ্ণার কথা শুনি। এখন যেখানে স্টেশন, আগে এখানেই ছিল লেভেলক্রশিং। সে লেভেলক্রশিং পাহারা দিত রতিলাল। দক্ষিণ দিকে মাইলখানেক দূরে বড়ো রাস্তা তৈরি হবার পর এই লেভেলক্রশিং এর জায়গায় তৈরি হল স্টেশন। নতুন মাস্টারবাবু এলেন ভেরাবল থেকে কিন্তু পুরো দুমাস থাকলেন না। আবার মাস্টারবাবু এলেন, গেলেন। কেউই এখানে থাকতে চায় না। থাকবে কেন? পড়ালেখা জানা শহরের মানুষ কি এখানে থাকতে পারে?
কটা বছর এইভাবেই কেটে গেল। তারপর একদিন সকালবেলার গাড়িতে এই বাঙালি মাস্টারবাবু এসে হাজির। মাস্টারবাবু না পারেন রাঁধতে, না পারেন গুজরাতি বলতে; মাস্টারবাবু কোনোদিন খাওয়াদাওয়া করেন, কোনোদিন করেন না। চা আর ভাজাভুজি খেয়েই কাটিয়ে দেন। রতিলাল বজরার রুটি দিতে দ্বিধা করে। ভয়ও পায়। মাস্টারবাবু প্রায় সারা দিনরাতই স্টেশনে থাকেন। কোনো কোনোদিন রাত্রের মালগাড়ি চলে গেলে কোয়ার্টারে আসেন; তবে রোজ নয়। অফিসের টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েন। স্টেশন পাহারা দেবার কাজ খালাসী রতিলালের। সে মেঝেয় শুয়ে থাকে। কিন্তু মাস্টারবাবুর সামনে ঘুমুতে দ্বিধা করে। সময় সময় ওরা বাপরেটিতে আলোচনা করে কিন্তু ভেবে পায় না কে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধরে। শেষ পর্যন্ত একদিন রতিলালের কিশোরী মেয়ে মাথার ঘোমটা আরো একটু সামনে টেনে এগিয়ে এল।
বাবুজী!
কে?
আমি খালাসীর বেটি।
মাস্টারবাবু বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরনো শারদীয়া সংখ্যার পাতা ওলটাতে ওলটাতে মুখ তুলেই বলেন, কী চাই?
কিছু চাই না বাবুজী। আপনি হাতমুখ ধুয়ে নিন। আমি আপনার খানা নিয়ে এসেছি।
খানা? মাস্টারবাবু অবাক।
হ্যা বাবুজি, খানা। জলদি হাতমুখ ধুয়ে নিন। খানা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
মাস্টারবাবু বিছানায় উঠে বসে জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাকে খানা আনতে বলল?
আগে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিন, পরে সব জবাব দেব।
মাস্টারবাবু খেতে খেতেই রতিলালের বেটি বিছানা ঠিক করে টেবিলের ওপর এক গেলাস জল ঢেকে রাখে। মাস্টারবাবু ঘরে ঢুকতেই সে বলল, মালগাড়িকে আলো দেখাবার জন্য আপনাকে আর স্টেশনে যেতে হবে না। এখন শুয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে।
রতিলাল কোথায়?
খেয়েদেয়ে স্টেশন চলে গেছে।
মাস্টারবাবু শুয়ে পড়েন। রতিলালের বেটি চলে যায় কিন্তু অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরও মাস্টারবাবুর চোখে ঘুম আসে না, রতিলালের বেটির কথাই শুধু ভাবেন।
রাত আরো গম্ভীর হয়। বিছানায় শুয়ে শুয়েই মাস্টারবাবু শুনতে পান মালগাড়ি আসছে। হঠাৎ দরজার বাইরে বারান্দার কোনায় একটা ছায়ামূর্তি দেখেই চিৎকার করে ওঠেন, কে?
রতিলালের বেটি বলে, আমি।
তুমি? এত রাত্রে?
আপনি ঘুমোননি মাস্টারবাবু?
না। মাস্টারবাবু বিছানা ছেড়ে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি এত রাত্রে কি করছ?
সত্যি কথা বলব?
হ্যাঁ, সত্যি কথা বল।
রাগ করবেন না?
না।
রতিলালের বেটি একটু ভেবে বলে, দেখছিলাম আপনি শুয়ে আছেন নাকি স্টেশনে গিয়েছেন।
এবার মাস্টারমশাই আর গম্ভীর থাকতে পারেন না। হেসে ওঠেন। আরো দু এক পা এগিয়ে ওর সামনে দাঁড়ান! হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করেন, তুমি ঘুমোওনি কেন?
রতিলালের বেটি আবার বলে, সত্যি কথা বলব মাস্টারবাবু?
হ্যাঁ, হ্যাঁ সত্যি কথাই বল।
শুয়ে শুয়ে আপনার কথা ভাবছিলাম।
আঁ! আমার কথা?
হ্যাঁ, আপনার কথা। রোজ রাত্রে শুয়ে শুয়ে আপনার কথা ভাবি।
মাস্টারবাবু আবার প্রশ্ন করেন, আবার জবাব দেয় রতিলালের বেটি, আপনি খাওয়া দাওয়া করেন না, সব সময় কি যেন ভাবেন, বিশেষ কথাবার্তাও বলেন না, তাই তো আপনার কথা ভাবি।
বিকেলবেলায় মাস্টারবাবুর সঙ্গে রেল লাইনের ওপর দিয়ে বজরার ক্ষেতের পাশের কালভার্টের উপর বসে কথা হচ্ছিল। তখন রতিলালের বেটির কতই বা বয়স। বড়ো জোর এগারবারো। নিতান্তই কিশোরী! তার মনেও এত প্রশ্ন? আমাকে নিয়ে এত চিন্তা? রতিলাল স্টেশনে ডিউটি দেয়। আর সে একলা ঘরে শুয়ে শুয়ে শুধু আমার কথাই ভাবে?
মাস্টারবাবু যেন থমকে দাঁড়ান। দাঁড়াবেন না? ওর জীবনে যে অনেক দুঃখ, অনেক হতাশা। বাবা টিটাগড়ের কারখানায় কাজ করতেন আর ও দেশে থাকত মার কাছে। সেই ছেলেবেলার কথা কিন্তু তবু ওর মনে আছে, বাবা বিশেষ দেশে আসতেন না। কদাচিৎ কখনও এলেও বোতল থেকে ঢেলে কি যেন খেতেন। শুরু করতেন চেঁচামেচি-মারধর।
অবোধ শিশু আর একটু বড়ো হল। বুড়ি ঠাকুমার হাত ধরে গ্রামের স্কুলে যায়, আসে। রাত্তির বেলায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। স্কুলের এক মাস্টারমশায়ের সঙ্গে মাকে ফিস ফিস করে গল্প করতে দেখে চমকে ওঠে। ভয় পায়। ঘুম আসে না কিন্তু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে চোখ খোলে। দেখে, মাস্টারমশাই আর মা খেলা করছে।
কবছর পর টিটাগড়ের কারখানা থেকে চিঠি এল, বাবা মারা গেছেন। তার কিছুদিন আগেই বুড়ি ঠাকুমা গত হয়েছেন। সাতআট বছরের শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে কাটোয়া লোক্যালে চেপে মা চলে আসেন কলকাতা। হাওড়া স্টেশনে অভ্যর্থনা জানালেন সেই মাস্টারমশাই।
উপেক্ষা আর অনাদরের মধ্যেও পিতৃহীন বালক বড়ো হয়। খুঁড়িয়েই পার হয় কটা বছর। সোমনাথ তখন চোদ্দ বছরের কিশোর। ছবিটা তখন অনেক বেশি স্পষ্ট। বুকের ব্যথা প্রায় অসহ্য। মনের মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টা আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। বাড়ি থেকে পালাল সোমনাথ।
মাস্টারবাবু একটু ম্লান হাসি হেসে বলেন, কটা বছর বড়ো কষ্টে কাটালাম। কত জনে কত বদনাম দিয়েছে। কেউ বলেছে চোর; কেউ বলেছে পকেটমার। মারধরও খেয়েছি বহুবার।
আমার অজ্ঞাতসারেই আমার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোয়, ইস!
ঘুরতে ঘুরতে এলাম নাসিক। সৌভাগ্যক্রমে এক বৃদ্ধ মিঠাইওয়ালার কৃপা লাভ করলাম। ঐ বৃদ্ধের দোকানেই থাকি; কাজকর্মও করি। ওবই দয়ায় আবার পড়াশুনা শুরু করলাম।
তারপর?
স্কুলের গণ্ডী পার হতে না হতেই বৃদ্ধ মারা গেলেন। ওব ছেলে বোম্বেতে চাকরি করত। তাছাড়া মিষ্টির দোকানের কাজও জানত না। ব্যবসা তুলে দিল। আমিও ওরই সঙ্গে বোম্বে চলে এলাম।
তারপর?
এটাওটা করতে করতেই রেলের চাকরি পেয়ে গেলাম। এখানে এলেন কেন? মাস্টারবাবু একটু শুকনো হাসি হেসে বলেন, একদিন হঠাৎ কোন্নগর স্কুলের এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল চার্চ গেটের ধারে। কথায় কথায় তার কাছে মার অনেক কীর্তি শুনলাম।
মাস্টারবাবু আর বলতে পারেন না। থামেন। আমি অবাক হয়ে ওকে দেখি।
একটু পরেই উনি আবার শুরু করলেন, বন্ধুর কাছে ঐসব শুনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল! তাই মনে মনে ঠিক করলাম, এমন জায়গায় যাব যেখানে কোনো পরিচিতের মুখ কোনদিন দেখব না। মাস্টারবাবু হঠাৎ একটু হেসে বললেন, অনেক খোঁজখবর, অনেক চেষ্টা করে এখানে এসেছি।
হঠাৎ নজর পড়ে, রেল লাইনের ধার দিয়ে কৃষ্ণা আসছে। মাস্টারবাবুকে বললাম, দেখুন দেখুন, কৃষ্ণা আসছে।
নিশ্চয় চা নিয়ে আসছে।
ও জানল কেমন কবে, আমরা এখানে আছি?
প্রায় রোজ বিকেলের দিকেই আমি এই কালভার্টের উপর বসে থাকি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, এ জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। অনেকদিন রাত্রেও আমি এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি।
কৃষ্ণা এখানে এসেও চা দিয়ে যায়?
হ্যাঁ
মাস্টারবাবুর সংসারে ফ্লাক্স নেই কিন্তু কেটলি আছে। কৃষ্ণা সেই কেটলির চারপাশে জড়িয়েছে ছোট একটা তোয়ালে। সে মাস্টারবাবুকে আর আমাকে গরম চা খাওয়াবেই। আমি দেখে হাসি। মনে মনে খুশি হই, মুগ্ধ হই ওর আন্তরিকতা আর ভালোবাসা দেখে।
কৃষ্ণা চা খায় না। আমরা দুজনে চা খাই। দুটোএকটা কথাবার্তার পরই ও মাস্টারবাবুকে বলে, মাস্টারবাবু, আজ আমি পড়বো না।
কেন? মাস্টারবাবু প্রশ্ন করেন।
কৃষ্ণা তার কালো হরিণচোখ ঘুরিয়ে বলে, আজ আমি পড়বো কেন? আজ তো বাবুজির সঙ্গে কথা বলবো।
মাস্টারবাবু হেসে বলেন, বাবুজির সঙ্গে তো আমি গল্প করব। তুমি কেন পড়বে না?
কৃষ্ণা মাথা নেড়ে বেণী দুলিয়ে বলে, না, না, আজ আমি জরুর বাবুজির সঙ্গে গল্প করবে।
আমি না হেসে পারি না। আমি ওর মাথা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলি, না, না, আজ তোমাকে পড়তে হবে না। আজ আমি আর তুমি গল্প করব।
আর মাস্টারবাবু?
মাস্টারবাবু আজ সারা রাত স্টেশনে ডিউটি দেবে।
আমার কথা শুনে ও হাসিতে ফেটে পড়ে। মাস্টারবাবুও হাসেন।
কৃষ্ণা কেটলি থেকে আবার চা ঢেলে দেয়। আমরা চা খাই। গল্প করি। হাসি। তিনজনে একসঙ্গে ফিরে আসি। কৃষ্ণা কোয়ার্টারে যায়। আমরা দুজনে স্টেশনে বসি। ঘোরাঘুরি করি। কত কথা শুনি, কত কথা বলি। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে ভারতবর্ষের পশ্চিম দিগন্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। রতিলাল অফিস ঘরে আলো জ্বেলে দিয়ে কোয়ার্টারে যায়। ফিরে আসে খাওয়াদাওয়ার পর। আমরা তখনও গল্প করি।
রতিলাল তাগিদ দেয় কিন্তু আমরা উঠতে পারি না। গল্পের নেশায় এমনই মশগুল যে। উঠব উঠব করেও উঠতে পারি না। শেষে ছুটে আসে কৃষ্ণা। আমরা আর দেরি করি না।
খাওয়ার আগে, খাওয়ার পর আবার গল্প। তিনজনেই যেন গল্পের নেশায় মাতাল হয়ে গেছি। কোয়ার্টারের বাইরে চাটাই বিছিয়ে গল্প করতে করতে ভুলে যাই শুক্লা তৃতীয়ার রাতের মেয়াদ আর বেশি নেই। হঠাৎ মাস্টারবাবু উঠে কোয়ার্টারে যান। বোধহয় বাথরুমে। কৃষ্ণা হাত দিয়ে আমার মুখখানা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করে, আচ্ছা বাবুজি, আমার মাস্টারবাবু খুব ভালো না?
উনযৌবনার কথা শুনে মুগ্ধ হই। বলি, হা, তোমার মাস্টারবাবু খুব ভালো লোক।
ওদের সান্নিধ্যে দুটো দিন কাটিয়ে দিলাম।
.
পরের দিন সকালের ট্রেনেই চলে যাব। শেষ রাত্তিরের দিকে শুতে এলাম। হঠাৎ মাস্টারবাবু প্রশ্ন করলেন, আমি কি ভুল করলাম?
না, না, ভুল করবেন কেন? ঠিকই করেছেন। একটু থেমে বললাম, ভগবান দুহাত দিয়ে যাকে এগিয়ে দিয়েছেন তাকে বুক পেতে গ্রহণ করার মধ্যে কোনো অন্যায়, কোনো ভুল নেই।
পরের দিন সকালে সকলের চোখেই জল। গাড়ি এসে থামল এই অখ্যাত অপরিচিত হল্ট এ।
কৃষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলল, বাবুজি, এর পরের বার এসে তুমি আমাকে বাঙালিদের দেশে নিয়ে যাবে। আমি আরো ভালো বাংলা শিখবে, আরো ভালো খানা বানাবে।
বিদায়বেলা বিচ্ছেদ বেদনার মধ্যেও আমি হাসি। বলি, তোমার মাস্টারবাবু নিশ্চয়ই তোমাকে বাঙালিদের দেশে নিয়ে যাবে। ওটা তো তোমারও দেশ।
রতিলাল গামছা দিয়ে চোখের জল মুছে বলল, হ্যাঁ বাবুর্জী, ও আপনাদেরই মেয়ে আছে।
গাড়ি ছেড়ে দিল। আমি লাফিয়ে ট্রেনে উঠলাম।