প্রভাত হইল। পাখীরা ঈশ-গান গাহিতে গাহিতে জগৎ জাগাইয়া তুলিল। অরুণোদয়ের সহিত যুদ্ধ-নিশান দামেস্ক-প্রান্তরে উড়িতে লাগিল। যে মস্তক জয়নাবের কর্ণাভরণের দোলায় দুলিয়াছিল ঘুরিয়াছিল, এখনও দুলিতেছে, ঘুরিতেছে), আজ সেই মস্তক হানিফার অস্ত্র চালনার কথা মনে করিয়া মহাবিপাকে ঘুরিতে লাগিল। সঙ্গে সঙ্গে মারওয়ান, অলীদ, জেয়াদ, ওমরের মস্তিষ্ক পরিশুষ্ক; সৈন্যগণের হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার-না জানি আবার কি ঘটে!
উভয় পক্ষই প্রস্তুত। হানিফার বৈমাত্র এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা ওমর আলী করযোড়ে হানিফার নিকট বলিলেন, “আর্য! আজিকার যুদ্ধভার দাসের প্রতি অর্পিত হউক।”
হানিফা সস্নেহে বলিলেন, “ভ্রাতঃ! গত কল্য যে উদ্দেশ্যে তরবারি ধরিয়াছিলাম, যে আশায় দুল্দুলকে কশাঘাত করিয়াছিলাম, তাহা আমার সফল হয় নাই। বিপক্ষদল আমাকে বড়ই অপ্রস্তুত করিয়াছে। আমি মনে করিয়াছিলাম, যুদ্ধ শেষ না করিয়া আর তরবারি কোষে আবদ্ধ করিব না, শিবির হইতে বাহির হইয়াছি, আর শিবিরে যাইব না, আজি প্রথম-আজি শেষ। শুনিয়াছি বিশেষ সন্ধানেও জানিয়াছি, এজিদ্ স্বয়ং যুদ্ধে আসিয়াছে! যুদ্ধ-সময়েই হউক, কি শেষেই হউক, অবশ্যই এজিদ্কে হাতে পাইতাম! আমার চক্ষে পড়িলে তাহার জীবন কালই শেষ হইত। হোসেনের মস্তক এজিদ্ র্কাবালা হইতে দামেস্কে আনিয়াছিল। আমি তাহার মস্তক হাতে করিয়া দামেস্কবাসীদিগকে দেখাইতে দেখাইতে বন্দিগৃহে যাইয়া জয়নালের সম্মুখে ধরিতাম, আমার মনের আশা মনেই রহিল। কি করি, বাধ্য হইয়া গতকল্য যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়াছি। আজ তুমি যাইবে, যাও। ভাই! তোমাকে ঈশ্বরে সঁপিলাম। দয়াময়ের নাম করিয়া নূরনবী মোহাম্মদের নাম করিয়া ভক্তিভাবে পিতার চরণ উদ্দেশ্যে নমস্কার করিয়া, তরবারি হস্তে কর। শত সহস্র বিধর্মী বধ করিয়া জয়নাল উদ্ধারের উপায় কর। তোমার তরবারির তীক্ষ্ণধার আজ শত্রুশোণিতে রঞ্জিত হউক, সেই আশীর্বাদ করি। কিন্তু ভাই, এজিদের প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করিও না। ক্রোধবশতঃ ভ্রাতৃ-আজ্ঞা উপেক্ষা করিয়া মহাপাপ-কূপে ডুবিও না; সাবধান, আমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিও না।”
ওমর আলী ভ্রাতৃ-আজ্ঞা শিরোধার্য করিয়া ভক্তিভাবে ভ্রাতৃ-পদ পূজা করিয়া হানিফার উপদেশ মত তরবারি হস্তে করিলেন। রণবাদ্য বাজিয়া উঠিল। সৈন্যগণ সমস্বরে ঈশ্বরের নাম ঘোষণা করিয়া ওমর আলীর জয় ঘোষণা করিল।
মহাবীর ওমর আলী পুনরায় ঈশ্বরের নাম করিয়া অশ্বারোহণ করিলেন। নক্ষত্রবেগে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতেই, এজিদ্-পক্ষীয় বীর সোহরাব জঙ্গ অশ্বদাপটের সহিত অসি চালনা করিতে করিতে উপস্থিত হইল। স্থিরভাবে ক্ষণকাল ওমর আলীর আপাদমস্তক দৃষ্টি করিয়া বলিল, “তোমার নাম কি মোহাম্মদ হানিফা?”
ওমর আলী বলিলেন, “সে কথায় তোমার কাজ কি? তোমার কাজ তুমি কর।”
“কাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিব? সিংহ কি কখনো শৃগালের সহিত যুঝিয়া থাকে? শুনিয়াছি মোহাম্মদ হানিফা সর্বশ্রেষ্ঠ বীর! তুমি কি সেই হানিফা?”
“আমার সহিত যুদ্ধ করিতে তোমার হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হইয়া থাকে, ফিরিয়া যাও।”
সোহরাব হাসিয়া বলিল, “এত দিন পরে আজ নূতন কথা শুনিলাম! সোহরাব জঙ্গের হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার! তুমি যদি মোহাম্মদ হানিফা হও বীরত্বের সহিত পরিচয় দাও। পরিচয় দিতে ভয় হয়, তুমিই ফিরিয়া যাও।”
“আমি ফিরিয়া যাইব?”
“তবে তুমি কি যথার্থই মোহাম্মদ হানিফা?”
“এত পরিচয়ের আবশ্যক কি? তোমাকে আমি কি জিজ্ঞাসা করিতেছি, তুমি কি পাপাত্মা এজিদ্?”
“সাবধান দামেস্ক অধিপতির অবমাননা করিও না।”
“আমি তোমার সঙ্গে কথা কহিতে ইচ্ছা করি না, তরবারির ক্ষমতা দেখিতে চাহি।”
“জানিলাম তুমিই মোহাম্মদ হানিফা।”
“শোন কাফের নারকি! তুই তোর অস্ত্রের আঘাত ভিন্ন যদি পুনরায় কথা বলিস্, তবে তুই যে পাথর পূজিয়া থাকিস্ সেই পাথরের শপথ।”
“আমি পাথর পূজা করি; তুই তো তাহাও করিস্ না। অনশ্চিত ভাবে নিরাকারের উপাসনায় কি মনের তৃপ্তি হয় রে বর্বর?”
“জাহান্নামী কাফের! আবার বাক্চাতুরী? জাতীয় নীতির বহির্ভূত বলিয়া কথা কহিতে সময় পাইতেছিস!”
“আমি তোর পরিচয় না পাইলে কখনোই অপাত্রে অস্ত্রনিক্ষেপ করিব না। ভাল মুখে বলিতেছি, তুমি যদি মোহাম্মদ হানিফা না হও, তবে তোমার সঙ্গে আমার যুদ্ধ নাই-যুদ্ধ নাই। তুমি আমার পরম বন্ধু, প্রিয় সুহৃদ।”
“বিধর্মীদিগের বাক্চাতুরীই এই প্রকার-প্রস্তর পূজকদিগের স্বভাবই এই।”
“ওরে নিরেট বর্বর! প্রস্তরে কি ঈশ্বরের মাহাত্ম্য নাই? দেখ দেখ লৌহেতে কি আছে।” আঘাত-অমনি প্রতিঘাত!
সোহরাব বলিল, “রে আম্বাজী! তুই মোহাম্মদ হানিফা; কেন আমাকে বঞ্চনা করিতেছিস্? আমার আঘাত সহ্য করিবার লোক জগতে নাই। সোহরাবের অস্ত্র এক অঙ্গে দুইবার স্পর্শ করে না।”
এ কথাটা কেবল ওমর আলী শুনিলেন মাত্র। আর যদি কেহ দেখিয়া থাকেন, তবে তিনি দেখিয়াছেন, সোহরাবের দেহ অশ্ব হইতে ভূতলে পড়িয়া গেল। কার আঘাত? আর কার, ওমর আলীর?
সোহরাব নিধন এজিদের সহ হইল না! মহা ক্রোধে নিষ্কোষিত অসিহস্তে সমরপ্রাঙ্গণে আসিয়া বলিল, “তুই কে? আমার প্রাণের বন্ধু সোহরাবকে বিনাশ করিলি? বল তো আম্বাজী তুই কে?”
“আবার পরিচয়? বল তো কাফের তুই কে?”
“আমি দামেস্কের অধিপতি। আরো বলিব, আমার নাম এজিদ্।”
ওমর আলীর হৃদয় কাঁপিয়া গেল, ভয়শূন্য হৃদয়ে মহা ভয়ের সঞ্চার হইল। ভ্রাতৃ-আজ্ঞা বার বার মনে পড়িতে লাগিল। প্রকাশ্যে বলিলেন, “তুই কি যথার্থই এজিদ্?”
“কেন, এজিদ্ নামে এত ভয় কেন?”
“সহস্র এজিদে আমার ভয় নাই, কিন্তু-”
“ও সকল ‘কিন্তু’ কিছু নহে। ধর এজিদের আঘাত!”
“আমি প্রস্তুত আছি।”
এজিদ্ মহাক্রোধে তরবারির আঘাত করিল। ওমর আলী বর্মে উড়াইয়া বলিলেন, “তুই যদি যথার্থই এজিদ্ তবে তোর আজ পরম ভাগ্য।”
“আমার সৌভাগ্য চিরকাল।”
“তা বটে-কি বলিব ভ্রাতৃ-আজ্ঞা।”
এজিদ্ পুনরায় আঘাত করিল। ওমর আলী সে আঘাত উড়াইয়া দিয়া বলিলেন, “আর কেন? তোমার বাহুবল, অস্ত্রবল সকলই দেখিলাম।”
এজিদ্ মহাক্রোধে পুনরায় আঘাত করিল। ওমর আলী সে আঘাত অসিতে উড়াইয়া দিলেন। ক্রমাগত এজিদের আঘাত ও ওমর আলীর আত্মরক্ষা।
এজিদ্ বলিল, “ওহে! তুমি যদি মোহাম্মদ হানিফা না হও, তবে যথার্থ বল, তুমি কে?”
“এখন পরিচয়ে প্রয়োজন নাই। তোমার আর কি ক্ষমতা আছে, দেখাও।”
“ক্ষমতা তো দেখাইব; কিন্তু দেখিবে কে? আমার একটু সন্দেহ হইতেছে, তাহাতেই বিলম্ব!”
“রণক্ষেত্রে সন্দেহ কি? হাতে অস্ত্র থাকিতে মুখে কেন?”
“তোমার অস্ত্রে ধার আছে কি না, দেখিলাম না। কিন্তু কথার ধারে গায়ে আগুন জ্বালিয়া দিয়াছে।”
“বাকচাতুরী ছাড়, এখন আঘাত কর।”
এজিদ্ ক্রমে তরবারি, তীর, বর্শা, যাহা কিছু তাহার আয়ত্ত ছিল আঘাত করিল। কিন্তু ওমর আলী সেই অচল পাষাণ প্রতিমাবৎ দণ্ডায়মান-এজিদ্ মহা লজ্জিত।
এজিদ্ বলিল, “আমার সন্দেহ ঘুচিল, তুমিই মোহাম্মদ হানিফা। হানিফা! গতকল্য তোমার যুদ্ধ দেখিয়াছি, আজিও দেখিলাম। ধন্য তোমার বাহুবল! এত অস্ত্র নিক্ষেপ করিলাম, কিছুই করিতে পারিলাম না। তোমার সহ্যগুণ-”
ওমর আলী হাসিয়া বলিলেন, “এজিদ্! তোমার আর কি ক্ষমতা আছে, দেখাও। অস্ত্র থাকিতে আজ আমি নিরস্ত্র, বল থাকিতে দুর্বল। কি পরিতাপ! আমার হাতে পড়িয়া আজ বাঁচিয়া গেলে।”
“ওরে পাষণ্ড! সাধ্য থাকিতে অসাধ্য কি? ভেকে কি কখনো অহি-মস্তকে আঘাত করিতে পারে? শৃগালের কি ক্ষমতা যে শার্দূলের গায়ে অঙ্গুলি স্পর্শ করে? তুই যাহাই মনে করিয়া থাকিস্, নিশ্চয় জানিস, আজ তোর জীবনের শেষ।”
“কথাটা মিছে বোধ হইতেছে না। তাহা যাহা হউক, হয় অস্ত্রত্যাগ কর, না হয় পলাও।”
“আমি পলাইব! তোর জীবন শেষ না করিয়া!”
এজিদ্ পুনরায় তরবারি আঘাত করিল,-বৃথা হইল। পরিশেষে ফাঁস হস্তে তিন চারি বার ওমর আলীকে প্রদক্ষিণ করিয়া ওমর আলীর গলায় ফাঁস নিক্ষেপ করিতে লাগিল, কিন্তু ফাঁসিতে আট্কে কই? ওমর আলী ভ্রাতার নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন যে, আজ এজিদের প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করিবেন না। এজিদ্ এখন অস্ত্র ছাড়িল, মল্ল যুদ্ধ আরম্ভ করিলেই ওমর আলীর মনের সাধ পূর্ণ হয়। তিনি সেই চিন্তায় আছেন, সময় খুঁজিতেছেন-কার্যেও তাহাই ঘটিল।
মোহাম্মদ হানিফা শিবিরেই বসিয়া যুদ্ধের সংবাদ লইতেছেন মাত্র। এ পর্যন্ত কেহই পরাস্ত হয় নাই। এজিদ্ স্বয়ং যুদ্ধে আসিয়াছে, আর হানিফা বোধে ওমর আলীকে যথাসাধ্য আক্রমণ করিয়াছে, একথার তত্ত্ব কেহই সন্ধান করেন নাই হানিফাও শুনিতে পান নাই। এজিদ্ স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে আসিবে, ইহা কেহ মনে করেন নাই।
এজিদ্ নিশ্চয় জানিয়াছে যে, এই মোহাম্মদ হানিফা। উভয় ভ্রাতার আকৃতি প্রায় এক; তবে যে প্রভেদ, তাহা জগৎকর্তার সৃষ্টির মহিমা ও কৌশল! এজিদ্ একদিন মাত্র দেখিয়া সে ভেদ বিশেষরূপে নির্ণয় করিতে পারে নাই। আবার এ পর্যন্ত অস্ত্রনিক্ষেপ করিল না, এ কি কথা? মল্লযুদ্ধ করিয়া বান্ধিয়া ফেলিব-মল্লযুদ্ধে নিশ্চয় ধরিব-ইহাই এজিদের মনের ভাব।
উভয়ের মনের আশাই উভয় সফল করিবেন। প্রকৃতি কাহার অনুকূল, তাহা কে বলিতে পারে? উভয় বীর অশ্ব পরিত্যাগ করিলেন,-মল্লযুদ্ধ আরম্ভ হইল। বীর-পদ-দলনে পদতলস্থ মৃত্তিকা স্বাভাবিক ছিদ্রে অঙ্গ মিশাইয়া ক্রমে সরিতে লাগিল।
মারওয়ান আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ প্রভৃতি এই অলৌকিক যুদ্ধে এজিদকে লিপ্ত দেখিয়া মহাবেগে অশ্ব চালাইল। হানিফাপক্ষীয় কয়েকজন যোদ্ধাও ওমর আলীকে হঠাৎ মল্লযুদ্ধে রত দেখিয়া যুদ্ধস্থলে উপস্থিত হইলেন।
এজিদ্ কতবার ওমর আলীকে ধরিতেছে, ধরিয়া রাখিতে পারিতেছেন না। ওমর আলীও এজিদকে ধরিতেছেন, কিন্তু স্ববশে আনিতে পারিতেছেন না।
মোহাম্মদ হানিফাপক্ষীয় বীরগণ এজিদকে চিনিয়া চতুর্দিকে অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন এবং বুঝিলেন ওমর আলীর মল্লযুদ্ধের কারণ। এজিদের প্রতি কাহারো অস্ত্রনিক্ষেপ করিবার অনুমতি নাই। কাজেই ওমর আলীরও নিস্তার নাই। হায়! হায়! একি হইল, মনে মনে এই আন্দোলন করিয়া মোহাম্মদ হানিফার নিকট এ কথা বলিতে, কেহ কাহারো অপেক্ষা না করিয়া সকলেই শিবিরাভিমুখে ছুটিলেন।
এদিকে এজিদ্ মল্লযুদ্ধের পেঁচাওবন্দে গ্রীবা এবং ঊরু সাপটিয়া ধরিয়াছে। ওমর আলী সে বন্ধন কাটিয়া এজিদকে ধরিলেন। সেই সময় মারওয়ান, জেয়াদ প্রভৃতি সকলে ত্রস্তে অশ্ব হইতে নামিয়া মহাবীর ওমর আলীকে ধরিল এবং ফাঁস দ্বারা তাঁহার হস্ত পদ, গ্রীবা বাঁধিয়া জয় জয় রব করিতে করিতে আপন শিবিরাভিমুখে আসিতে লাগিল।
মোহাম্মদ হানিফা এজিদের সংবাদ পাইয়া সজ্জিত বেশে শিবির হইতে বহির্গত হইয়া দেখিলেন, সমরাঙ্গণে জন-প্রাণী মাত্র নাই। এজিদের শিবিরের নিকট মহা কোলাহল-জয় জয় রব-তুমুল বাজনা। আর বৃথা সাজ-বৃথা গমন। ভ্রাতৃ-আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে গিয়া আজ ওমর আলী বন্দি।
মোহাম্মদ হানিফা কি করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া মহা চিন্তায় বসিয়া পড়িলেন।
বিপক্ষদলে বাদ্যের তুফান উঠিল, দামেস্ক প্রান্তর হর্ষে ও বিষাদে কাঁপিয়া উঠিল। এজিদ্দলে প্রথমে কথা-মোহাম্মদ হানিফা বন্দি শেষে সাব্যস্ত হইল, মোহাম্মদ হানিফা নহে, এ তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা-নাম ওমর আলী। যাহা হউক, হানিফার দক্ষিণ হস্ত ভগ্ম, সিংহের এক অঙ্গ হীন-এজিদেরই জয়।
এজিদ্ আজ্ঞা করিল, “আগামী কল্য যুদ্ধ বন্ধ থাকিবে, কারণ ওমর আলীর প্রাণবধ। শত্রুকে যখন হাতে পাইয়াছি, তখন ছাড়িব না, নিশ্চয় প্রাণদণ্ড করিব। কিসে প্রাণদণ্ড? তরবারিতে নহে, অন্য কোন প্রকারে নহে,-শূলে প্রাণদণ্ড। হানিফা দেখিবে, তাহার সৈন্য সামন্ত দেখিবে,-প্রকাশ্য স্থানে শূলে ওমর আলীর প্রাণবিনাশ করিতে হইবে। এখনই ঘোষণা করিয়া দাও যে, হানিফার ভ্রাতা মহারাজ হস্তে বন্দি, আগামী কল্য তাহার প্রাণবধ।”
মারওয়ান তখনই রাজাজ্ঞা প্রতিপালনে প্রস্তুত হইল। মুহূর্ত মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ও নগরে ঘোষণা হইল, “মোহাম্মদ হানিফার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ওমর আজ এজিদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হইয়াছিল, রাজকৌশলে সে পাপী আজ বন্দি। আগামী কল্য দামেস্ক নগরের পূর্বপ্রান্তরে সমর ক্ষেত্রের নিকট শূলে চড়াইয়া তাহার প্রাণবধ করা হইবে।”
মোহাম্মদ হানিফার কর্ণেও এ নিদারুণ ঘোষণা প্রবেশ করিল। শিবিরস্থ সকলেই এই মর্মভেদী ঘোষণায় মহা আকুল হইলেন। গাজী রহমানের বিশাল মস্তক ঘুরিয়া গেল, মস্তিষ্কের মজ্জা আলোড়িত হইয়া তড়িৎবেগে চালিত হইতে লাগিল।