১১
বৈশালীর অদূরেই কলন্দ নামে একটি গ্রাম। পরদিন সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতেই সন্ধে হয়ে গেল। রাজকুমার তীক্ষ্ণর সঙ্গীরা শিবির স্থাপন করল সেখানে। রাজকুমার তীক্ষ্ণ বারবার জয়পাল এবং অন্যদের ফিরে যেতে বলেছে, কিন্তু তারা রাজকুমারকে ছেড়ে কিছুতেই যেতে রাজি নয়।
কলন্দ গ্রামে প্রচুর মানুষের ভিড়। এখান থেকেও দলে-দলে লোক যাচ্ছে বৈশালীর দিকে। সকলেই যাচ্ছে রাজকুমার-সন্ন্যাসী শাক্যমুনিকে দেখতে। অনেকেই এসেছে চিরকালের জন্য বাড়ি-ঘর ছেড়ে। রাজকুমার তীক্ষ্ণ যত দেখছে, ততই অবাক হয়ে যাচ্ছে। ওই সন্ন্যাসীটি কী করে এত মানুষের মন জয় করলেন? তিনি কাউকেই কিছু দেন না। কাউকেই কোনও লোভ দেখান না। তবু এত লোক তাঁর কাছে ছুটে আসে কেন?
তাড়াতাড়ি আহার সেরে নিয়ে রাজকুমার তীক্ষ্ণ শিবির থেকে বেরিয়ে পড়ল।
জ্যোৎস্না রাত। পথে এখনও কিছু-কিছু মানুষ রয়েছে। বৈশালীর পথ চিনতে কোনও অসুবিধে হল না। বনের পথ দিয়ে লোকেরা চলেছে বৈশালীর দিকে, রাজকুমার তীক্ষ্ণ অনুসরণ করল তাদের।
কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখা গেল, এক জায়গায় অনেক মশাল জ্বলছে। একটা বটগাছকে ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে অনেক মানুষ। কেউ কোনও কথা বলছে না। বটগাছের নীচে, বেদির ওপর বসে আছেন সেই সন্ন্যাসী। তিনি নিচু গলায় কথা বলছেন পাশের দু’জন লোকের সঙ্গে। সে-কথা শোনা যাচ্ছে না।
রাজকুমার তীক্ষ্ণ এক জায়গায় বসে পড়ল। এত লোক চুপ করে বসে শুধু একজন সন্ন্যাসীকে দেখছে। এটা বড় আশ্চর্য লাগল তার।
সে পাশের একজনকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “ইনিই কি শাক্য সিংহ?”
সেই লোকটি শুধু মাথা নেড়ে জানাল, “হ্যাঁ।”
তীক্ষ্ণ আবার জিজ্ঞেস করল, “ইনি কি সত্যিই একজন রাজকুমার ছিলেন?” লোকটি বলল, “অবশ্যই। ইনি কপিলাবস্তু নামের দেশের রাজকুমার। একদিন ইনি রাজা হতেন।”
তীক্ষ্ণ জিজ্ঞেস করল, “তা হলে তিনি রাজ্য ছাড়লেন কেন? কেউ ষড়যন্ত্র করে ওঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে?”
লোকটি হেসে বলল, “না না। উনি নিজেই রাজ্য ছেড়ে, সিংহাসনের দাবি ছেড়ে চলে এসেছেন। ওঁর বাবা তো ওঁকে এখনও ফিরিয়ে নিতে চান। কিন্তু উনি রাজা হবেন না।”
তীক্ষ্ণ বলল, “এটা তো আমি বুঝতে পারছি না। উনি রাজার ছেলে, তবু রাজা হতে চান না কেন? কেন সিংহাসন ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ান? গাছতলায় থাকেন ইচ্ছে করে?”
লোকটি বলল, “এটা বোঝা সত্যিই শক্ত। এর আগে তো আর কোনও রাজকুমার এমনভাবে ইচ্ছে করে রাজ্য ছাড়েননি। রাজকুমার হয়েও উনি অস্ত্র হাতে নেন না। উনি সামান্য একটা পিঁপড়েকেও মারেন না। এমন মানুষ তো আগে কেউ দেখেনি। আসল কথাটা কী জানো ভাই, উনি নিজের রাজ্য ছেড়ে এসেছেন বটে, কিন্তু সারা পৃথিবীটাই ওঁর রাজ্য। উনি সিংহাসনে বসেননি, কিন্তু উনি আমার মতন হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ের রাজা হয়েছেন।”
তীক্ষ্ণ বলল, “হৃদয়ের রাজা কাকে বলে আমি জানি না। আচ্ছা, এঁর নাম শাক্য সিংহ আবার কেউ-কেউ বলছে এর নাম গৌতম। দুটোই এর নাম?”
লোকটি বলল, “হ্যাঁ, এঁর অনেক নাম। ইনিই আবার সিদ্ধার্থ। বোধিবৃক্ষের তলায় বসে ইনি বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছেন বলে এঁর আর-এক নাম বুদ্ধ। একবার এঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই মনে হয় শরীরের সব জ্বালা-যন্ত্রণা জুড়িয়ে গেল।”
তীক্ষ্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি ওঁর সামনে একবার দাঁড়াতে চাই। আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে। ওঁর পাশে যাঁরা বসে আছেন তাঁরা কে?”
লোকটি বলল, “একজন সারিপুত্ত ও আর-একজন মৌদ্গল্যায়ন। ওঁরা গৌতম বুদ্ধের প্রধান শিষ্য। আর-একটু দূরে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম সুদিন্ন। উনি একজন খুব বড় ব্যবসায়ীর ছেলে ছিলেন। সব ছেড়ে চলে এসেছেন।”
তীক্ষ্ণ সবাইকে ঠেলেঠুলে সামনে এগোতে লাগল।
এই সময় কে যেন নিভিয়ে দিল সব মশাল। তবে আকাশে এত জ্যোৎস্না যে, সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়। তীক্ষ্ণ একেবারে বেদিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই গৌতম বুদ্ধ তাকালেন তার দিকে। গৌতম বুদ্ধের ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে উঠল। বোঝা গেল, তিনি তীক্ষ্ণকে চিনতে পেরেছেন।
তীক্ষ্ণ কত কী প্রশ্ন করবে ভেবেছিল, এখন হঠাৎ তার মুখ যেন বন্ধ হয়ে গেল, গলা দিয়ে স্বরই বেরল না। সে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল সেই সন্ন্যাসীর দিকে। কী স্নিগ্ধ তাঁর চক্ষু দুটি, চাঁপা ফুলের মতন গায়ের রং, তাঁর হাসি যেন চাঁদের আলোর মতন।
গৌতম বুদ্ধ বললেন, “তুমি এসেছ? আমি জানতাম তুমি আসবে। তুমি কি আমার সঙ্গে লড়াই করতে এসেছ?”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ তবু কোনও উত্তর দিতে পারল না।
বুদ্ধ উঠে দাঁড়ালেন। তারপর শিষ্যদের নিয়ে নেমে গেলেন সেই বেদি থেকে। অন্য সকলেও উঠে দাঁড়িয়ে গান ধরল :
বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি
ধম্মং সরণং গচ্ছামি
সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি …
খানিক বাদে রাজকুমার তীক্ষ্ণ আবার ফিরতে লাগল কলন্দ গ্রামের দিকে। যে লোকটির সঙ্গে সে প্রথম কথা বলেছিল, সেই লোকটিও আসছে তার পাশে-পাশে। লোকটির নাম বাহুক। সে বলল, “আপনি তো খুব ভাগ্যবান। শাক্যমুনি আপনার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে ছিলেন। আপনি কিছু বললেন না কেন? আপনি কী বলেন তা শোনার জন্য সবাই উদ্গ্রীব হয়ে ছিল।”
তীক্ষ্ণ চুপ করে রইল। সে মন ঠিক করে ফেলেছে। সে আর নিজের দেশে ফিরে যাবে না। গৌতম বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এখানেই থেকে যাবে। একটু পরে সে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাই, গৌতম বুদ্ধের শিষ্য হতে গেলে কী করতে হয়?”
বাহুক বলল, “কিছুই না। ইচ্ছে করলেই শিষ্য হতে পারবেন। ওঁর সামনে গিয়ে আপনার মনের কথা খুলে বলবেন। তবে একটা কথা আছে। আপনার বয়েস তো কম। আপনার বয়েসী কেউ শিষ্য হতে চাইলে বাবা-মায়ের অনুমতি আনতে হয়। আপনাকে তো সেই অনুমতি আনতে হবে। ব্যাপার কী জানেন, অনেক মা-বাবার একমাত্র সন্তান এখানে এসে ওঁর শিষ্য হয়ে যায়। তারপর মা-বাবা এসে কান্নাকাটি করে। তার বলে, আমাদের বংশে আর কেউ থাকবে না। প্রভু ওকে ছেড়ে দিন। গৌতম বুদ্ধ তো কাউকে জোর করে শিষ্য বানাতে চান না। সেইজন্য তিনি বলে দিয়েছেন, অল্পবয়েসীদের বাবা-মায়ের অনুমতি আনতে হবে।”
তীক্ষ্ণ বলল, “আমার তো বাবা কিংবা মা কেউ বেঁচে নেই। আমায় কে অনুমতি দেবে?”
বাহুক জিজ্ঞেস করল, “আপনার আপনজন কেউ নেই?”
তীক্ষ্ণ বলল, “একজন আছেন। আমাদের রাজ্যের রাজপুরোহিত। তিনি আমাকে পিতার মতন মানুষ করেছেন। তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বোধ হয় অনুমতি দেবেন না!”
বাহুক খানিকটা যেন চমকে বললেন, “রাজপুরোহিত? তিনিই কি রাজ্য চালান।”
তীক্ষ্ণর উত্তরটা আর শোনা গেল না। উলটো দিক থেকে আর-একদল লোক ‘বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি’ গাইতে-গাইতে এল। ওরাও গাইতে লাগল সেই গান। ভিড়ের মধ্যে বাহুকের সঙ্গে রাজকুমার তীক্ষ্ণর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।
পরদিন সকালেই রাজকুমার তীক্ষ্ণ গৌতম বুদ্ধের জন্য ছটফট করতে লাগল। সে ছুটে গেল বৈশালীর দিকে। কিন্তু সেই বটগাছের তলায় বেদিতে তাঁকে দেখা গেল না। তিনি কাছাকাছি একটা কুটিরে কয়েকজন শিষ্যের সঙ্গে রয়েছেন। সারাদিন বাইরে বেরোলেন না।
আবার পরদিন রাজকুমার তীক্ষ্ণ সেখানে গিয়ে গৌতম বুদ্ধের প্রধান শিষ্য সারিপুত্তকে ধরে বলল, “আপনি আমার হয়ে একটু বলবেন? আমার নাম তীক্ষ্ণ। আমাকে উনি তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করতে দেখেছিলেন। ওঁর স্পর্শে আমার হাত থেকে তলোয়ার খসে পড়ে গিয়েছিল। এই কথা বললেই উনি আমাকে চিনবেন। আমি ওঁর সঙ্গে নিভৃতে একবার দেখা করতে চাই।”
সারিপুত্ত ফিরে এসে হাসিমুখে বললেন, “হে তেজস্বী যুবক, তোমাকে উনি ঠিকই চিনতে পেরেছেন। তোমার নাম শুনে উনি হেসেছেন সস্নেহে। তবে উনি এ-কথা বললেন যে, তোমার সঙ্গে ওঁর নিভৃতে দেখা হওয়ার সময় এখনও আসেনি। আর-একটু অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে উনি তোমাকে ঠিক ডাকবেন।”
এইভাবে একদিন, দু’দিন, তিনদিন কেটে গেল। গৌতম বুদ্ধের কাছ থেকে ডাক এল না।
চতুর্থ দিনে একটু বেলার দিকে কলন্দ গ্রামে উপস্থিত হল এক অশ্বারোহী। তার গায়ে ঝলমলে পোশাক, মাথায় সোনার মুকুট। তার কোমরে যে তলোয়ারটি ঝুলছে, তার খাপে হীরে-মুক্তো বসানো।
সে চিৎকার করে বলতে লাগল, “অহিচ্ছত্রপুরের যুবরাজ তীক্ষ্ণ কে? সে কোথায়? সে নিজেকে অতুলনীয় বীর মনে করে। আমি তার সঙ্গে লড়াই করতে চাই।”
এই কথাই সে বলতে লাগল বারবার।
রাজকুমার তীক্ষ্ণ তখন নিজের শিবিরে বসে ছিল, জয়পাল এসে তাকে এই খবরটা দিল। রাজকুমার তীক্ষ্ণ প্রথমে কোনও উত্তরই দিল না।
ক্রমে অনেক লোক জমতে লাগল তার শিবিরের সামনে। সেই সুসজ্জিত অশ্বারোহীকেও পথ দেখিয়ে নিয়ে এল দু-একজন।
সেই যুবকটি ঘোড়া থেকে নেমে নিজের তলোয়ারে হাত দিয়ে গম্ভীরভাবে বলল, ‘আমি উরুবেল রাজ্যের রাজকুমার সুনন্দ। দু’ বছর আগে তুমি আমার বড় ভাইকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত করেছ। তখন আমি বয়েসে ছোট ছিলাম। আজ আমি প্রস্তুত হয়ে এসেছি। আজ আমি তোমাকে সমুচিত শিক্ষা দেব। এসো, রাজকুমার তীক্ষ্ণ, যদি সাহস থাকে আমার সঙ্গে লড়াই করো।”
জয়পাল তাড়াতাড়ি শিবিরের ভেতর থেকে রাজকুমার তীক্ষ্ণর তলোয়ারটা নিয়ে এল। তার মুখে মুচকি মুচকি হাসি। সুনন্দ নামে রাজকুমারটি নিছকই নাবালক। রাজকুমার তীক্ষ্ণর বীরত্বের কাছে ও কয়েক মুহূর্তও টিকতে পারবে না। বেচারা সাধ করে মরতে এসেছে। রাজকুমার তীক্ষ্ণকে কেউ লড়াইতে আহ্বান করলে সে তাকে চূড়ান্ত শাস্তি দেবে, এটাই রাজকুমারের প্রতিজ্ঞা।
জয়পাল রাজকুমার তীক্ষ্ণর হাতে তলোয়ারটা তুলে দিল।
জনতার মধ্য থেকে দু-একজন বৃদ্ধ চেঁচিয়ে বলল, “তোমরা এই গ্রাম ছেড়ে দূরের মাঠে যাও। এখানে আমরা রক্তপাত দেখতে চাই না।”
আর কিছু লোক বলল, “এখানেই হোক। এখানেই হোক।”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ তলোয়ারটা মাটিতে ছুঁইয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপ করে।
রাজকুমার সুনন্দ অধৈর্য হয়ে বলল, “কী ব্যাপার, আমার সঙ্গে লড়তে সাহস হচ্ছে না?”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ অদ্ভুত ভাবে হাসল, তারপর তলোয়ারটা ছুঁড়ে ফেলে দিল দূরে।
জয়পাল এবং অন্যরা বিস্ময়ের শব্দ করে উঠল।
রাজকুমার তীক্ষ্ণ হাতজোড় করে বলল, “হে উরুবেল রাজ্যের কুমার, আমি পরাজয় স্বীকার করছি, আমার আর যুদ্ধের স্পৃহা নেই। বিনা যুদ্ধেই তুমি জয়ী হয়েছ।”
তারপর সে জয়পালের দিকে ফিরে বলল, “জয়পাল, তুমি চতুর্দিকে ঘোষণা করে দাও, আমি আর দিগ্বিজয়ী নই। আমি আর কোনও যোদ্ধার সঙ্গে লড়াই করতে চাই না।”
তারপর সে হনহন করে হেঁটে চলে গেল জঙ্গলের দিকে। সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
শুধু একজন লোক, যার নাম বাহুক, সে গেল রাজকুমার তীক্ষ্ণর পিছু-পিছু। জঙ্গলের কাছে গিয়ে সে বলল, “রাজকুমার, রাজকুমার, একটু শুনবেন? আমি একটা কথা বলব।”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “মাফ করবেন, আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
বাহুক বলল, “আমার কথাটা খুব জরুরি। অনুগ্রহ করে একটু সময় দিন!”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ থেমে গিয়ে ঘুরে তাকাল।
বাহুক কাছে এসে বলল, “আপনি এই পাথরটার ওপর বসুন। শান্ত হোন।” দু’জনে বসল মুখোমুখি, একটা বড় পাথরের ওপর। রাজকুমার তীক্ষ্ণর ভুরু কুঁচকে আছে। দু-এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার পর সে জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার? আপনি কী বলতে চান?”
বাহুক বলল, “আপনি অহিচ্ছত্রপুরের রাজকুমার; আমারও বাড়ি ছিল অহিচ্ছত্রপুর।”
রাজকুমার তীক্ষ্ণর মুখের রেখা এবার একটু নরম হল। সে বলল, “ও, আপনি আমার দেশের মানুষ?”
বাহুক বলল, “হ্যাঁ। যদিও বহুকাল দেশছাড়া। অবশ্য দেশের সব খবর রাখি। আপনি সেদিন বললেন, আপনার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। কেন এই কথা বললেন! আপনার মা তো বেঁচে আছেন।”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ দারুণ চমকে উঠে বলল, “অ্যাঁ? আমার মা বেঁচে আছেন? কে বলল আপনাকে? আমার মা বিশ্বাসঘাতিনী। তিনি পালাতে গিয়ে সৈন্যদের হাতে নিহত হয়েছেন অনেকদিন আগে।”
বাহুক বলল, “আপনার মা যে কালাঘর নামে কারাগারে বহুকাল বন্দিনী, তা আপনি জানেন না? তিনি এখনও বেঁচে আছেন, সে-কথাও আমি জানি।” রাজকুমার তীক্ষ্ণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “যদি আপনার কথা সত্যি ও হয়, তাতেও কিছু আসে যায় না। আমার মা বেঁচে থাকলেও আমি তাঁর মুখদর্শন করতে চাই না। আমার মা বিশ্বাসঘাতিনী। চম্পক নামে একজন সেনাপতির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে আমার মা আমার মহান পিতাকে হত্যা করেছে।”
বাহুক বলল, “হতেই পারে না। এটা মিথ্যে।”
রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “আমার পিতাকে হত্যা করার পর আমার মা সেনাপতি চম্পকের সঙ্গে রাজধানী দখল করতে আসছিলেন, এ আমি নিজের চোখে দেখেছি। সে-কথা আমি কোনওদিন ভুলব না।”
বাহুক বলল, “আপনার পিতাকে হত্যা করেছে অন্য একজন বিশ্বাসঘাতক। এও আমি নিজের চোখে দেখেছি। কোনওদিন ভুলব না সেই দৃশ্য। তবে সব কথা শুনুন, খুলে বলি।”