৪
মহারানি তলতাদেবী গবাক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছেন। সন্ধের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে, তার মধ্যে ঘন-ঘন চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ। যেন কেউ একটা হিরের ছুরি দিয়ে চিরে দিচ্ছে আকাশের গা।
একটু পরেই শোঁ-শোঁ করে ঝড় উঠল। উদ্যানের বড়-বড় গাছগুলো মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে যেন শুরু করে দিল নাচানাচি। সারাদিন অসহ্য গরম ছিল, এখন তলতাদেবীর মুখে লাগল ঠাণ্ডা বাতাসের প্রলেপ। দূরে কোথাও বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
দুটি ছেলে দুপদাপ করে ছুটে এল ঘরের মধ্যে। দুই রাজকুমার, দৃঢ় আর তীক্ষ্ণ। ছোট ভাই তীক্ষ্ণ-র বয়েস মাত্র তিন বছর, তার দাদা তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। ওরা লুকোচুরি খেলতে খেলতে এই ঘরে ঢুকে পড়েছে!
ওদের পেছন-পেছন একজন দাসীও এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল, “বড় রাজকুমার, ছোট রাজকুমার, এখানে নয়! এখানে নয়! শিগগির চলে আসুন।” তলতাদেবী ঘুরে দাঁড়াতেই দাসী কাঁচুমাচু মুখে বলল, “আমার দোষ নেই, রানিমা! আমি রাজকুমারদের অনেকবার এ-ঘরে আসতে বারণ করেছি!”
রাজপ্রাসাদে রাজকুমারদের জন্য আলাদা কক্ষ নির্দিষ্ট করা আছে। রাজকুমাররা যখন-তখন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারে না। একবার দুপুরে মা ওদের খাওয়া দেখতে আসেন, আর রাত্তিরে শোওয়ার সময় মা ওদের গল্প শোনান। এ ছাড়া অন্য সময় গুরু ও শিক্ষকরা ওদের নানারকম শিক্ষা দেন আর দাস-দাসীরা ওদের দেখাশুনো করে।
রাজকুমাররা যখন-তখন ইচ্ছে করলেই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারে না।
বড় রাজকুমার দৃঢ় কিছুতেই ছোট ভাইটিকে ধরতে পারছে না। রাজকুমার তীক্ষ্ণ মায়ের স্বর্ণখচিত পালঙ্কের চারপাশে ঘুরছে। এক সময়ে সে সেদিক ছেড়ে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল।
মহারানি তলতাদেবী হাসিমুখে দাসীকে জিজ্ঞেস করলেন,”ওরা এখনই খেলা করছে কেন? ওদের তো এ সময় গুরুমশাইয়ের কাছে শাস্ত্র শোনার কথা!”
রাজকুমার দৃঢ় বলল, “মা, দ্যাখো না, ছোট ভাই কিছুতেই গুরুমশাইয়ের কথা শুনতে চায় না। বারবার পালিয়ে আসছে। তাই আমি ওকে ধরে নিতে এসেছি!”
ছোট রাজকুমার তীক্ষ্ণ মাকে আঁকড়ে ধরে থেকে বলল, “না, মা, আমি যাব না! আমি গুরুমশাইয়ের কাছে পড়া শুনব না। বড্ড শক্ত-শক্ত সং…..সং…..সং….সংস্কৃত!”
রাজকুমার দৃঢ় বলল, “অ্যাই ছোট, তুই পড়াশুনো না শিখলে মূর্খ হয়ে থাকবি! আয়, চলে আয়!”
ছোট রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “না, আমি যাব না। কিছুতেই যাব না। মা, আমি তোমার কাছে থাকব!”
মহারানি তলতাদেবী বললেন, “আচ্ছা থাক। তীক্ষ্ণ এখানে থাক। দৃঢ়, তুমি পড়তে যাও!”
দৃঢ় তার ছোট ভাইয়ের দিকে একটা রাগের দৃষ্টি দিয়ে ফিরে চলে গেল। তীক্ষ্ণর মুখে ফুটে উঠল একটা জয়ের হাসি।
তলতাদেবী তীক্ষ্ণকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা আদরের চুমো দিলেন। তারপর বললেন, “তোর বুঝি পড়াশুনো করতে ইচ্ছে করে না?”
তীক্ষ্ণ বলল, “আমি গুরুমশাইয়ের কাছে পড়ব না!”
তলতাদেবী বললেন, “কেন রে? গুরুমশাইকে তোর অপছন্দ কেন?”
তীক্ষ্ণ দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলল, “গুরুমশাইয়ের দাড়িতে খুব বিচ্ছিরি গন্ধ!”
তলতাদেবী নিজেও এবার হেসে ফেললেন। দুই রাজকুমারকে যে গুরুমশাই শাস্ত্র পাঠ দিতে আসেন, তাঁর সারা মুখে এত দাড়ি-গোঁফ যে মুখখানা প্রায় দেখাই যায় না। তাঁর দাড়ি তাঁর বুক ছাড়িয়ে প্রায় পেট পর্যন্ত ঝুলে আছে। এ-রাজ্যের সব গুরুমশাই আর ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদেরই লম্বা-লম্বা দাড়ি। একমাত্র রাজপুরোহিত ছম্ভীর মুখে কোনও দাড়ি-গোঁফ নেই।
মাকে হাসতে দেখে তীক্ষ্ণ আরও মজা পেয়ে বলল, “মা, জানো, গুরুমশাইয়ের দাড়ির মধ্যে একটা পাখির বাসা আছে।”
মা আর ছেলে দু’জনেই হাসতে লাগল খুব। এমন সময় হঠাৎ সারা আকাশ কাঁপিয়ে বজ্রপাতের শব্দ হল।
তলতাদেবী তাড়াতাড়ি ছেলেকে নিয়ে গবাক্ষের কাছ থেকে সরে এসে পালঙ্কের ওপর বসলেন। বজ্রের গর্জন এতই জোর যে তীক্ষ্ণ ভয় পেয়ে গেছে।
তলতাদেবী তীক্ষ্ণর মুখখানায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “ভয় নেই, ভয় নেই!”
তীক্ষ্ণ বলল, “মা, বৃষ্টির সময় আকাশ এত জোরে ডাকে কেন?”
তলতাদেবী বললেন, “আকাশ ডাকে না। ও হচ্ছে ইন্দ্রের বজ্রের শব্দ। দেবরাজ ইন্দ্র ওই বজ্র দিয়ে দৈত্য-দানবের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।”
“এখন বুঝি আকাশে যুদ্ধ হচ্ছে?”
“না। সব সময় যুদ্ধ হয় না। তবে মাঝে-মাঝে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর এই বজ্রের গর্জন শুনিয়ে দৈত্য-দানবদের ভয় দেখান।”
“মা, দৈন্য-দানবরা কোথায় থাকে?”
“তারা নানান জায়গায় লুকিয়ে থাকে। বনে-জঙ্গলে থাকে, সমুদ্রের তলায় ডুব দিয়ে থাকে। এক-এক সময় তারা দেবতাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বেরিয়ে আসে। দৈত্যদেরও খুব শক্তি। দু-একবার তারা দেবতাদেরও হারিয়ে দিয়েছিল।”
“দেবতারাও হেরে গিয়েছিল? কী মজা, কী মজা!”
“ও কী রে? দেবতারা হেরে গেলে তুই খুশি হবি নাকি? ছিঃ, অমন কথা বলতে নেই। আমরা তো মানুষ, আমরা দেবতাদের পক্ষে। দৈত্য আর অসুররা যেমন দেবতাদের শত্রু, তেমনি আমাদেরও শত্রু। দৈত্যরা খারাপ, পাজি, অত্যাচারী!”
“মা, তুমি আমায় দেবতা আর অসুরদের যুদ্ধের গল্প বলো!”
দরজার কাছ থেকে বড় রাজকুমার দৃঢ় বলল, “মা, আমিও তোমার কাছে গল্প শুনব।”
তলতাদেবী মুখ তুলে বড় রাজকুমারকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “এর মধ্যেই তোর গুরুমশাইয়ের কাছে পাঠ নেওয়া শেষ হয়ে গেল?”
দৃঢ় বলল, “বৃষ্টি নামছে, তাই গুরুমশাই নিজের গৃহে চলে গেলেন। আজ আর পড়া হবে না।”
ছোট রাজকুমার তীক্ষ্ণ টপ করে পালঙ্ক থেকে নেমে দু’হাত ছড়িয়ে মাকে আড়াল করে বলল, “না, এখন দাদা গল্প শুনবে না। আমি একলা মায়ের কাছে গল্প শুনব। দাদা, তুমি যাও!”
দৃঢ় কয়েক পা এগিয়ে এসে বলল, “কেন রে, তুই একলা মায়ের কাছে গল্প শুনবি? মা কি তোর একার?”
তীক্ষ্ণ বলল, “হ্যাঁ, মা আমার একলার। মা শুধু আমাকে গল্প বলবে।”
তলতাদেবী হাত বাড়িয়ে দৃঢ়কে কাছে ডাকলেন। তারপর ছোট ছেলেকে বললেন, “ছিঃ, অমন করে না! দু’জনকেই গল্প বলব!”
তীক্ষ্ণ তবু জেদীর মতন চিৎকার করে বলতে লাগল, “না, দাদাকে তুমি গল্প বলবে না! আমাকে একলা বলবে!”
তলতাদেবী এবার তীক্ষ্ণকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ! এরকম হিংসুটেপনা করলে আমি দু’জনের কাউকেই গল্প শোনাব না! তীক্ষ্ণ, তুমি বড় ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাও!”
তীক্ষ্ণ কিছু করার আগেই দৃঢ় নিজে এসে ছোট ভাইয়ের মাথাটা ধরে সস্নেহে ঝাঁকিয়ে দিল একবার।
দুই রাজকুমারই খুব সুশ্রী। গৌরবর্ণ, টানাটানা চোখ, মুখে লাবণ্য-মাখা। তবে ছোটকুমার তীক্ষ্ণ খুব দুরন্ত আর ছটফটে স্বভাবের। বড়কুমার দৃঢ় আবার খুব শান্ত, ধীর-স্থির, তার বুদ্ধি খুব প্রখর। ছোট ভাইকে সে ভালবাসে।
দুই পুত্রকে দু’পাশে বসিয়ে তলতাদেবী তীক্ষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন তুই বলছিলি যে, দাদা গল্প শুনবে না, তুই একলা শুনবি?”
তীক্ষ্ণ বলল, “দাদার যে ঘোড়া আছে, আমার নেই। দাদা ঘোড়া পেয়েছে, দাদা মাকেও পাবে কেন?”
দৃঢ় বলল, “দ্যাখো তো মা, ছোট ভাইটা কীরকম অবুঝ! ওর কি ঘোড়ায় চড়ার বয়স হয়েছে? ওর মোটে তিন বছর বয়েস, তবু ও সব ব্যাপারে আমার সমান হতে চায়।”
আট বছর বয়েস থেকেই রাজকুমারদের বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে-সঙ্গে সব রকম অস্ত্র শিক্ষাও শুরু হয়ে যায়। দৃঢ় এখন তলোয়ার ধরতে শিখেছে, অশ্বারোহণও শুরু করেছে। একরত্তি ছেলে তীক্ষ্ণ তার দাদার সঙ্গে-সঙ্গে সব কিছুতেই অংশ নেবার জন্য বায়না ধরে।
তলতাদেবী বললেন, “দাদা ঘোড়ায় চড়া শিখছে, তোকেও তো একটা কাঠের ঘোড়া দেওয়া হয়েছে।”
তীক্ষ্ণ বলল, “না, আমি কাঠের ঘোড়া নেব না! কাঠের ঘোড়া আমার চাই না!”
এমন সময় ঘরের বাইরে হুড়োহুড়ির শব্দ শোনা গেল। কারা যেন এইদিকে দৌড়ে আসছে। একটু পরেই দু’জন দাসী দরজার কাছ থেকে ব্যাকুলভাবে মুখ বাড়িয়ে বলল, “মহারাজ আসছেন! মহারাজ আসছেন!”
তলতাদেবী বেশ অবাক হলেন। হঠাৎ উদ্যান-ভবন ছেড়ে মহারাজের এ সময় প্রাসাদে আগমন? এখন তো তাঁর ঘুমিয়ে থাকার কথা!
বেশ জোরে-জোরে পায়ের শব্দ করে মহারাজ মহাচূড়ামণি এসে প্রবেশ করলেন তাঁর রানির কক্ষে। তাঁর অঙ্গে পরিপূর্ণ রাজপোশাক, মাথায় মুকুট, কোমরবন্ধে মণি-মাণিক্য খচিত খাপসুদ্ধু হিরণ্যক তরবারি।
মহারাজের মুখখানি গম্ভীর, ভ্রুকুঞ্চিত। তিনি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তলতাদেবীর দিকে।
তলতাদেবী বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে, মহারাজ? রাজ্যে আপনার কোনও বিপদ ঘটেছে? হঠাৎ এ সময় কে আপনার ঘুম ভাঙাল?” মহারাজ কোনও উত্তর দেবার আগেই ছোট রাজকুমার তীক্ষ্ণ তাঁর কাছে এসে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “পিতাজি, আমি কাঠের ঘোড়া নেব না! কাঠের ঘোড়া পচা, বাজে!”
মহারাজ মহাচূড়ামণি তাঁর রানির সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, দুই পুত্রকে প্রথমে তিনি লক্ষই করেননি। এখন তীক্ষ্ণ আর দৃঢ়কে দেখে তাঁর মুখখানা কোমল হয়ে এল।
তিনি দু’হাত দিয়ে দুই রাজকুমারকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর মুখ নিচু করে দুই পুত্রের মাথার চুলের গন্ধ নিলেন। এইভাবেই রাজারা ছোটদের আদর জানান।
মহাচূড়ামণি তাঁর ছোট ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে? কাঠের ঘোড়ার ব্যাপারটা কী?”
তীক্ষ্ণ বলল, “আমি কাঠের ঘোড়া নেব না! আমার আসল ঘোড়া চাই! জ্যান্ত ঘোড়া। টগবগ টগবগ টগবগ…”
দৃঢ় হেসে বলল, “পিতাজি, ও এখনই আমার মতন ঘোড়ায় চড়া শিখতে চায়!”
মহাচূড়ামণি বললেন, “তাই নাকি? খুব ভাল কথা! কালই তুমি একটা ঘোড়া পাবে! আমি অশ্বশালার রক্ষক নালিককে বলে দেব!”
তলতাদেবী বললেন, “মহারাজ, ওর যে মাত্র তিন বছর বয়েস। ও এখনই জ্যান্ত ঘোড়া নিয়ে কী করবে?”
মহাচূড়ামণি বললেন, “তাও তো বটে! অবশ্য আমি ওর মতন বয়েসেই অশ্বারোহণ শুরু করে দিয়েছিলাম! ছোটকুমার, তোমার মা যে নিষেধ করছেন!”
তীক্ষ্ণ বলল, “না, আমি জ্যান্ত ঘোড়া নেব! দাদার মতন। কাঠের ঘোড়া আমি ছুঁড়ে ফেলে দেব!”
মহাচূড়ামণি বললেন, “আরও একটা মুশকিল, আমাদের যে ঘোড়া খুব কমে গেছে। গত যুদ্ধে অনেক ঘোড়া মরে গেছে। এখন তো তোমাকে দেবার মতন ভাল ঘোড়াও পাওয়া যাবে না!”
তীক্ষ্ণ এবার মুখ ফিরিয়ে বলল, “তা হলে আমি খাব না। ঘুমোব না। গল্পও শুনব না!”
মহারাজ মহাচূড়ামণি প্রবল বীরপুরুষ হলেও সন্তানদের ব্যাপারে তাঁর মনটি খুবই নরম। ছোট রাজকুমার তীক্ষ্ণর চোখ দুটি কান্নায় ছলছল হয়ে এসেছে দেখেই তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন।
তিনি বললেন, “আচ্ছা, আমি যদি ঘোড়া হই, তুমি আমার পিঠে চাপবে?” তীক্ষ্ণ সঙ্গে-সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ! তুমি ঘোড়া হও, জ্যান্ত ঘোড়া!”
মুকুটটা পালঙ্কের ওপর খুলে রেখে মহারাজ মহাচূড়ামণি সত্যি-সত্যি মেঝেতে ঝুঁকে পড়ে চার হাত-পায়ে ঘোড়া সাজলেন।
তলতাদেবী বললেন, “মহারাজ, এ কী করছেন, এ কী করছেন! উঠুন! ছোটকুমারকে এতটা প্রশ্রয় দেবেন না!”
মহাচূড়ামণি রানির কথা গ্রাহ্য না করে ছোট ছেলেকে বললেন, “তুমি নিজে নিজে আমার পিঠে চাপতে পারবে? দেখি কেমন পারো!”
তীক্ষ্ণ এক লাফে বাবার পিঠে চড়ে বসে বলল, “এই ঘোড়া, হ্যাট, হ্যাট, হ্যাট…”
মহাচূড়ামণি বললেন, “আমি তোমার ঘোড়া হয়েছি। এখন বড়কুমারকেও কিছু একটা দিতে হয়। দৃঢ়, তুমি আমার কোমরবন্ধ থেকে তরবারিটা খুলে নাও। আমাকে দেখাও, তুমি কেমন তরবারি চালনা শিখেছ!”
যাতে দাস-দাসীরা রাজার এমন উদ্ভট ছেলেমানুষি দেখে না ফেলে, তাই তলতাদেবী তাড়াতাড়ি কক্ষের দ্বার বন্ধ করে দিলেন।
বেশ কিছুক্ষণ রাজা মহাচূড়ামণি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে ঘোড়া সেজে খেলা করলেন। দৃঢ় আর তীক্ষ্ণ হাসতে লাগল খুব। কোনওদিন তারা বাবাকে এত আপন করে পায়নি।
এক সময় তলতাদেবী বললেন, “যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। দৃঢ় আর তীক্ষ্ণ, এবার তোমরা খেতে যাও। দেরি হয়ে গেছে, খাবার পরেই তোমরা শুয়ে পড়বে।”
রাজকুমাররা আর আপত্তি জানাল না। দুই ভাই গলা জড়াজড়ি করে চলে গেল।
মহারাজ মহাচূড়ামণি উঠে দাঁড়িয়ে নিজেই পোশাকের ধুলো ঝাড়লেন। তারপর মুকুটটা মাথায় পরে নিয়ে ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলেন রানির দিকে।
তলতাদেবী বললেন, “মহারাজ, হঠাৎ কেন এখানে এলেন তা তো বুঝতে পারলাম না। কোথাও কোনও বিপদ ঘটেছে কী?”
মহারাজ দু’দিকে মাথা নেড়ে বললেন, “না!”
তলতাদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “তবে?” এখন আপনার নিদ্রা যাবার সময়…”
মহারাজ বললেন, “তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।”
তলতাদেবী বললেন, “কী কথা? বলুন মহারাজ!”
মহারাজ মহাচূড়ামণি মুকুট খুলে হাতে নিয়ে মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “সেইটাই তো মনে আসছে না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে সব গোলমাল হয়ে গেল। তোমার সঙ্গে খুবই দরকারি কথা ছিল, কী যেন তোমাকে জিজ্ঞেস করার কথা ছিল, কিন্তু সেটা একদম ভুলে গেছি!