উত্তর হিটলার
হিটলারের মনস্কামনা পূর্ণ হয়নি, আবার অন্য অর্থে হয়েও ছিল।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই সর্ব পবিত্র শপথ ভঙ্গ করে একাধিক ব্যক্তি বন্দিদশায় রাশানদের কাছে হিটলারের শবদাহ ও কবরের গুপ্তভূমির খবর দিয়ে দেন। তারা হিটলার ও এফার মৃতদেহ খুঁড়ে বের করে ও মেঙৈর হাউজ প্রভৃতিকে দিয়ে সন্দেহাতীতরূপে শনাক্ত করায়(১৪)
কিন্তু রাশানরা বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ। ইতিহাস তাদের ভালো করেই পড়া আছে। তারা জানে, এ-যুগে যাকে অপমান করে আগুনে পুড়িয়ে বা পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারা হয়, পরের যুগের লোক তাকেই শহীদরূপে পূজা করে তার নির্যাতন-ভূমি তীর্থভূমিতে পরিণত হয়।
একজন বিচক্ষণ রুশ জনৈক বন্দি হিটলার-পার্শ্বচরকে বলেন, হিটলারের দেই আমাদের কাছে গোপনে লুকোনো আছে, ভালোই আছে; তোমরা জর্মনরা শহীদ পূজারি।
তাই রুশরা হিটলারের দেহ জনগণের তামাশার জন্য বাজারে লটকায়নি। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে হিটলারের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছে!!
————
১. জর্মন রাষ্ট্রের নেতা (ফুরার) হওয়ার বহু পূর্বে তার একমাত্র বই হিটলার লেখেন মাইন কামপফ নাম দিয়ে। এ পুস্তকের অন্যতম মূল বক্তব্য : সমুদ্রপারে কলোনি নির্মাণের যুগ গেছে। (এটা সত্য, এতদিনে প্রমাণ হয়েছে); জনিকে রুশদেশ জয় করে সেখানে কলোনি স্থাপনা করতে হবে।
২. উইনি, উইনস্টন চার্চিল।
৩, বলট– ডি লেৎসতেন টাগে ড্যার রাইষসকানৎসেলাই।
৪. ডাঙর ডাঙর নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধশেষে মিত্রপক্ষ রবের্গে মকদ্দমা করেন। কাইটেল, ইয়োডলের ফাঁসি হয়। বুড, কেবৃসের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি; তবে প্রায় সবাই নিঃসন্দেহ, রাশানরা যখন ২ মে তারিখে বুক্কার আক্রমণ করে তখন এরা আত্মহত্যা করেন। তার পূর্বে ক্রেবস্ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে (১ মে) রাশান প্রধান সেনাপতির কাছে যান, কিন্তু রাশানরা শর্ত মানল না বলে প্রস্তাব ভেস্তে যায়। বরমান নিখোঁজ।
৫. চিকিৎসকদের কৌতূহল হতে পারে ওষুধটা কী? এর নাম D. Koesters Antigaspolls. এর প্রেসক্রিপশন: Extr. Nux. Vom; extr. Bellad, a. a. 0.5; extr. Gent 1.0. বলা বাহুল্য, এসব ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আমি যদৃষ্টং নকল দিলুম।
৬, অনেকে সন্দেহ করেছেন, এ জ্যোতি উত্তেজক ওষুধবশত।
৭. বল্টু, ট্রেভার রোপার, আসমান দ্রষ্টব্য।
৮. এই সময়েই হিমলার প্রভু হিটলারকে না জানিয়ে আত্মসমর্পণ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে তারই মাধ্যমে মিত্রপক্ষের কাছে সন্ধির প্রস্তাব পাঠান। এসব আলোচনা ও জর্মন রাষ্ট্রের শেষ ক-মাস সম্বন্ধে তিনি যুদ্ধের পর একখানি মনোরম বই লেখেন– ইংরেজি অনুবাদের নাম The curtain falls. পরম পরিতাপের বিষয় এই সহৃদয়, বিশ্বনাগরিক কয়েক বৎসর পর প্যালেস্টাইনের ইহুদি আরবের সমঝতা করতে গেলে সেখানে ইহুদি আততায়ীর গুলিতে মারা যান।
৯. হাইনরিষ হফমান, হিটলার উয়োজ মাই ফ্রেন্ড।
১০. আখেরে তিনি সেই চেষ্টাই করেছিলেন। ছদ্মবেশে মিত্রশক্তির ঘাটি পেরুবার সময় তিনি বন্দি হন। দেহতল্লাশির সময় মুখে কিছু আছে কিনা দেখবার জন্য তাঁকে মুখ খুলতে বললে তখন তিনি বুঝলেন এই তাঁর শেষ সুযোগ। ডাক্তার মুখে হাত ঢোকাবার পূর্বেই তিনি দাঁত ও মাড়ির মধ্যে লুকানো ক্যাপসুলে কামড় দিলেন। আবরণ ভেঙে বিষ বেরিয়ে এল; কয়েক মিনিটের ভিতরই ভবলীলা সম্বরণ করলেন। গ্যোরিঙও এই পদ্ধতিতেই জেলের ভিতর আত্মহত্যা করেন। তার দেহ ও মুখ বহুবার সার্চ করা হয়, কিন্তু তিনি যে কোথায় ক্যাপসুলটি দিনের পর দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন সেটা আজও রহস্য।
১১. এফা ব্রাউন (হিটলার) সম্বন্ধে কৌতূহলীজন সর্বোত্তম খবর পাবেন পূর্বোল্লিখিত হফমানের বইয়ে। এর ফোটো-ল্যাবরেটরিতেই এফা কাজ করার সময় হিটলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হমান তার সঙ্গে এঁর আলাপ করিয়ে দেন। হিটলারের ভ্যালে লিঙে উভয়েরই কামরা-বিছানা সাফসুতরো করতেন এবং একদিন দৈবাৎ তিনি দুজনাকে এমন অবস্থায় পান যে, লিঙের চাকরি যাবার জোগাড় হয়েছিল। লিঙে এঁদেরই অন্তরঙ্গতার বিস্তরতম খবর দিয়েছেন। এফাও লিঙেকে খুব বিশ্বাস করতেন ও তার মনের কথা খুলে বলতেন। আসন্ন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে তিনি লিঙের কাছে যেসব করুশ কথা বলেন সেগুলোও পড়ার যোগ্য।…
হিটলারের চিকিত্সক মরেলও এফা সম্বন্ধে তার জবানবন্দিতে কিছু কিছু বলেছেন।
১২. কয়েক মাস পূর্বে, অর্থাৎ এ-বিয়ের কুড়ি বৎসর পর রুশদের প্রধান সেনাপতি–যিনি বার্লিন জয় করেন ঘোষণা করেন যে তার মূল্যবান সম্পত্তির মধ্যে আছে এই দলিলখানা। রুশরাই সর্বপ্রথম বুঙ্কার দখল করেছিল বলে বিয়ের রেজিস্টারখানা তারাই হস্তগত করে।
১৩. ড্যোনিৎস এদের অধিকাংশকেই গ্রহণ করেননি।
১৪. সে আরেক দীর্ঘ কাহিনী এবং তার সঙ্গে যায় বুঙ্কার থেকে বরমান, লিঙে ইত্যাদির পলায়নের চেষ্টা। কিন্তু সেটা বর্তমান কাহিনীর অংশ নয়।