উত্তর কুরুক্ষেত্র
কে? অমল মামা? মাকে দিচ্ছি—
হ্যালাে? কে অমল ? হুঁ। তুমি যেদিন পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে— না তাে।
আমি সেদিন ফোন করেছিলাম। তােমাদের বাড়ি থেকে বলল, তুমি পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছ—
তাে। আসলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই অমল— ওই হল। খবরটা পেয়েও আমি তােমাকে দেখতে যেতে পারিনি নীতা। আসলে আমি তখন বাড়ি বদলাচ্ছিলাম। তাই যেতে পারিনি।
এসে কী-ই বা করতে! আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েও বেশিদিন শুয়ে থাকতে পারিনি। উঠে দাঁড়াতে হয়েছে। মা খুব ভুগছেন। ভারী শরীর। বেডসাের হয়ে গিয়েছিল। একটা একটা করে সারিয়ে তুলেছি। একটা সারাই তাে আরেকটা হয় অমল। মায়ের আসলে আর বাঁচার ইচ্ছে নেই। উঠে বসতেই চান না একদম। সেই রুগীকে ভালাে করে ফেলেছি। একদম সহ্যশক্তি নেই। একটু লাগলেই ভীষণ চেঁচিয়ে ওঠেন। বাড়ি থেকে বলছ?
নতুন নম্বর বল।
৭২…।
কত বাড়িই পাল্টালে! কত ফোন নম্বর বদলাল।
এ বাড়িও শিগগিরি বদলাব। কেন?
ভালাে লাগছে না নীতা। ভালাে কথা—তােমার তাে এ-বছর পঞ্চাশ হল। বলেছিলে—পঞ্চাশ হলেই আমাকে বিয়ে করবে।
শােন অমল—আমার ছেলেমেয়েদের বাবা এসেছিল।
তাই নাকি? এখন কোথায় অবনীশবাবু?
ভি আই পি লােক। ছােটো মেয়েকে নিয়ে গেল সঙ্গে। নিজের মায়ের কাছে যাবে—দিলে ?
ওমা! তারও তাে মেয়ে। ছেলে গেল না। শংকরই তাে তােমার ফোন ধরল।
শংকর একটা কাজ পেয়েছে। রিপাের্টারের চাকরি। জয়েন করবে তাই থেকে গেল। কাজটা আমি ভালাে মনে করি না।।
জার্নালিস্ট তাে। আমারও তাে ভালাে লাগে না। কিছু না জেনে পেকে যাবে।
অবনীশকে থাকতে বলতে পারতে।
আমার কাছে? তা কী করে সম্ভব? সে তাে আর আমার স্বামী নয়-অন্য একজন ভদ্রলােক। তারপর সে এসেছে বিলেত থেকে। সঙ্গে তার স্বর্গ স্ত্রীর দুই ছেলেমেয়ে—
সেইসঙ্গে তােমার মেয়ে—
ওরও মেয়ে। তা ছাড়া এখন যে মহিলার সঙ্গে থাকে তারও দুটি বাচ্চা-—মােট পাঁচটি নাতি-নাতনি দেখাতে নিয়ে গেল নিজের মায়ের কাছে। শুধু শংকর থেকে গেল এখানে।
মহিলার সঙ্গে থাকে? মানে? লিভিং টুগেদার। মাকে অবশ্য বলবে বিয়ে করেছে। বুঝি না ঠিক নীতা।
কেন? ক্যানসার হয়ে ডােরা যখন মর মর—তখনই তাে অবনীশ ডােরাকে কাগজের বিয়ে করল। নয়তাে তার সঙ্গেও তাে প্রেম, একসঙ্গে থাকত অবনীশ।
বড়াে জিনিয়াস তাে অবনীশবাবু!
তা অস্বীকার করা যাবে না অমল। এ-বছরও তিনটে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভােকেশন অ্যাড্রেস করেছেন অবনীশ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ডেকেছিল। যায়নি। অক্সফোর্ড ছেড়ে ও কোথাও যাবে না।
সে তাে তুমিও অনেক জায়গায় যাও না নীতা— এবার কিন্তু যাচ্ছি। কোথায় ?
মনট্রিয়ল। চার মাসের জন্য ভিজিটিং প্রফেসর ?
তাহলে আমাদের বিয়ে হবে না।
শান্তির মতন অমন স্ত্রী থাকতে ফের বিয়ের কথা মুখে-শান্তি যে বড়াে ভালাে। তােমার সঙ্গে আমার বিয়ে হলে শান্তি খুব আঘাত পাবে। শান্তি কোথায় এখন ?
বাড়ি নেই। ছােটো মেয়ের বাড়ি গেছে। নাতনিটি খুব ভুগছে।
তুমি বাড়িতে একা ? হ্যা। আর কে থাকবে। খালি বাড়িতে বসে বসে যত বদবুদ্ধি মাথায় আসছে তােমার। আমার বাড়ি তাে খালি হবেই নীতা।
তােমার মতাে তাে আমার ছেলে নেই যে ছেলের বউ আসবে একদিন। আমার মেয়েরা বিয়ে হয়ে যে যার শ্বশুরবাড়ি।
ছেলে হয়নি কেন অমল ?
কী একটা অ্যাসিড নাকি আমার শরীরে নেই– কী ! শান্তি বলছিল আমার শরীরে নাকি কোন একটা অ্যাসিড নেই। আমার পরের দু-ভাইয়েরও কোনও ছেলে নেই।
হাে-হাে-হাে-হাসালে অমল। মন দিয়ে লেখাে। এখনই তাে তােমার হাত দিয়ে আসল লেখা বেরােবার কথা। তােমার এই বয়সে লেখকরা বড়াে লেখা লেখেন।
বত্রিশ বছর আগে এম.এ ক্লাসে এই একই কথা বলেছিলে নীতা।। বলেছিলাম? তা ক্লাসফ্রেন্ডকে বলতেই পারি। তুমি তাে চিরকালই লেখক। আমাদের স্টুডেন্ডরা তােমার লেখার কথা বলে।
মনীষ বলে ? কোন মনীষ?
আহা! যেন গাছ থেকে পড়লে! মনীষ আমাদের ক্লাসফ্রেন্ড। এখন য়ুনিভার্সিটিতে তােমার কলিগ নীতা।
না। মনীষ সেই ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য নিয়ে প্রবন্ধ লিখে যাচ্ছে। তাও যদি সাউথ আমেরিকার কোনাে ভাষা জানত! স্রেফ অনুবাদ পড়েই এত কাণ্ড!
আসলে মনীষ আমাদের অবহেলা করতে চায়। তাই এত সাউথ আমেরিকা। আসলে মনীষ একটি বৃহৎ ভান। একসঙ্গে পড়বার সময় ও কিন্তু এমন ছিল না নীতা। তুমিও তখন এমন ছিলে না অমল। কেমন হয়েছি? এখন তাে কথার খই ফোটাও। তখন তােমার মুখ ফুটত না।
অনেক কথা মনে আসত। বলতে পারিনি। তুমি আনকোরা গ্র্যাজুয়েট—পি জি-তে ভর্তি হয়েছ। আমি কয়েক বছর ধরে নানান ঘাটের জল খেয়ে ফের পড়তে ঢুকেছি। আমি তাে কিছুটা চুপচাপ থাকবই।
তখনই তােমার লেখা ছাপা হচ্ছে এদিক ওদিক।
বছরের গােড়ায় তােমায় হাসিখুশি দেখি। পরে তুমি কেমন আস্তে আস্তে চুপচাপ হয়ে গেলে। কোরা খােল সবুজ পাড়ের একটা শাড়ি পরে আসতে। আমরা বাসে একসঙ্গে য়ুনিভার্সিটি থেকে ফিরেছি। লম্বা রাস্তা। একটাও কথা হয়নি। তখনই আমি জানি কী জানতে?
তুমি কাউকে ভালােবাসতে। সে আর বাসে না তােমায়। তােমার চোখ বলে দিত একথা।
সুভাষ আমায় ঠকিয়েছিল।
অবিশ্যি সে অবস্থা তােমার কেটে গেল। প্রফেসর হিসেবে তরুণ কিরণ বলতে তখন অবনীশবাবু। সবে এসেছেন। তুমি পাশ করতেই তােমাদের বিয়ে হয়ে গেল।
তাই আর তােমার কথাটা বলতে পারলে না! সময় দিলে ? পি এইচ ডি করতে করতেই তাে ছাঁদনাতলায় চলে গেলে। ছাঁদনাতলা থেকে দুজনেই বিদেশে পাড়ি দিলে। পাক্কা দশ বছর পর কলকাতায় ফিরে এলে দুজনে। তখন অবনীশবাবু ডিভাের্স চাইছেন—
আর তুমি আমাকে দেখতে এসে আমার মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছ। আমি কাঁদছি বসে বসে—
নীতা তুমি আসলে খ্যাতির পেছনে ছুটতে ভালােবাস।
মােটেই না। অবনীশ নিজেই প্রােপােজ করেছিল। আমরা তাে অবাক। অমন কৃতী মানুষ—অথচ আমাকে দেখে
তুমিই বা কম কীসের নীতা? পি জি ক্লাসে পড়ার সময় তােমার একবার খুব জ্বর হয়। বর্ষাকাল। তােমার মাথায় জলপটি দেওয়া চলছে। তােমার প্রেসিডেন্সির বি এ ক্লাসের বান্ধবীরা দেখতে এসেছে তােমায়। আমিও গিয়েছিলাম।
এতদিন পরে তােমার মনে আছে ? তােমাদের দোতলার বসার ঘরের পাশের ছােটো ঘরখানায় ছােট্ট খাটে শুয়ে আছ।
সেই ছােট্ট খাটে বসেই তােমার সঙ্গে এখন কথা বলছি। এ খাটেই আমি শুই। বেশি রাত অব্দি পড়ে এ ঘরে চলে আসি। হাঁপানিতে যখন কষ্ট পাই—তখন এই খাটই আমার শয্যা। এই খাটে শুয়ে আমার ছােটোমামা বিয়ের পর পরই সুইসাইড করেন।
অমন অলুক্ষণে খাট রাখা কেন?
আমার কোনটা সুলক্ষণে! বলতে পার? বছরে তিন মাস শুয়ে থাকি হাঁপানিতে।
বাকি কমাসের অনেকটাই থাকো বিদেশে। ভিজিটিং প্রফেসর হও নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে। উড়ে উড়ে যাও বিদেশে—সেদেশে অবনীশবাবুর সঙ্গে দেখা হয় না?
হয়। আগে খুব হত। অসময় নেমন্তন্ন করে খাওয়াল একবার বড়াে এক রেস্তোরাঁয়। মেনু দেখে আমার চক্ষুস্থির।
কেন? কেন?
হাঁপানি যা খেলে বাড়ে—সেই সব খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে অবনীশ। যেমন চিংড়ি মাছ—
ও জানত না? খুব জানত। চিংড়িতে আমার অ্যালার্জি। ভুলে যেয়াে না-টানা দশ বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী ছিলাম।
ও কি তুমি হাঁপাচ্ছ কেন? কিছু না। দাঁড়াও। আমি যাচ্ছি—
না। এখন এসাে না।
বুঝেছি তােমার টান উঠেছে। আমি আসছি—
দক্ষিণ কলকাতার একটা সাধারণ পাড়া থেকে বেরিয়ে অমল এক মাঝবয়সি বড়াে রাস্তায় পড়ল। গত বিশ বছরে তার শরীরের নানান জায়গায় যেসব চর্বি জমেছে—তাতে ঝাকুনি দিয়ে সে হেঁটে গিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরল।
বেল টিপতেই শংকর দরজা খুলে দিল। বাইশ-তেইশ বছরের সুশ্রী যুবক। অমলকে দেখে বলল, এই না ফোনে কথা বলছিলে—
হুঁ। তােমার মা মনে হল অসুস্থ—
ক-দিনই তাে শুয়ে। এখন একটু ঘুমিয়েছে মনে হল। শব্দ না করে ওপরে যাও—দিদিমার একটুতেই ঘুম ভেঙে যায়।
তিনি কোথায় ? তেতলায়—
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অমলের মনে হল—এমন দামি পাড়ায় এত সুন্দর বাড়িতে সুখের ঢােকা নিষেধ আছে। বত্রিশ তেত্রিশ বছর আগেও সে এমনি ভীরু পায়ে এই দোতলায় উঠে এসেছিল। নীতার সঙ্গে। তখন ওর বাবা বেঁচে।
আর এখন?
আমরাই মাঝবয়সি। আস্তাকুঁড়ের এঁটো কলাপাতার মতাে বয়স, স্মৃতি কবে গড়াগড়ি গেছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে বড়াে ঘর পেরিয়ে পর্দা সরিয়েই থমকে দাঁড়াল অমল। গত তিরিশ বছরে সে তেতাল্লিশখানা উপন্যাস, আশিটি গল্প লিখেছে। এসবের চেয়েও কঠিন অবস্থার সামনে সে এখন।
কাশতে কাশতে একটা সাত পুরনাে লােহার খাট থেকে বাঁ-হাত নীচে ঝুলিয়ে দিয়ে নীতা আন্দাজে পিকদানিটা খুঁজছে।
নিঃশব্দে পিকদানিটা তুলে অমল এগিয়ে ধরল। পিকদানি থেকে মুখ তুলে নীতা জানতে চাইল, কে? শংকর ? না। আমি—তুমি? তুমি কেন? রেখে দাও বলছি–আঃ কখন এলে? আমি এগিয়ে দিলে দোষের কী? আঃ। রাখাে। এখন এলে কেন? এখন আমি অসুস্থ। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। এখনই তাে আমার আসা উচিত। এই ধরেছি। নাও ফ্যালাে।
গলা বুক যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে নীতা বলল, এই সময়েই কাজের লােক সবাই হাওয়া হয়ে যায়। আর থাকবেই বা কেন? মা জ্বরের ঝেকে ওদের বকে। আমিও বােধহয় চুপ করে থাকি না—
তােমার গা তাে পুড়ে যাচ্ছে নীতা ? এখন কিছু কম। ওষুধের ওই বাক্সটা এগিয়ে দেবে—
ওষুধ এগিয়ে দিয়ে দুহাতে নীতাকে ধরল অমল। নয়তাে ঝুঁকে পড়ে যেতে পারত।
শান্ত গলায় নীতা বলল, ছাড়। এত ঘনিষ্ঠ হতে কে বলেছে তােমায় ? তুমি পড়ে যেতে পারতে সরাে। আমার ছেলে বড়াে হয়েছে। সে দেখলে কি ভাববে? কিছুই ভাববে না। আমাকে শংকর ছােটোবেলা থেকে দেখছে।
ভাবতেও পারে। শংকর এখন একজন যুবক।
শংকর যুবক বলেই তাে আমাকে বুঝবে নীতা। যৌবনেই ভালােবাসা ভালাে বােঝা যায়।
কিন্তু আমি তাে তােমাকে ভালােবাসি না।
তাতে কী। আমি তাে বাসি।। তুমি তাে শান্তিকেও ভালােবাস। নিশ্চয় বাসি নীতা।
আমি আর কথা বলতে পারছি না।
বলতে হবে না। শুয়ে পড়। এত বড়াে বাড়িতে এই ভাঙাচোরা লােহার খাটটায় শােও কেন?
স্টুডেন্ট লাইফ থেকে এই ঘুপচি ঘরটাই আমার পছন্দ। এখানে বই। এখানে টেলিফোন। এ ঘরে শুয়ে শুয়ে নীচের রাস্তা দেখা যায় অমল।
এখানে শুয়ে তুমি ১৯৫৬ দেখতে পাও? ডবল ডেকারের জানলায় রাস্তার গা থেকে কৃষ্ণচূড়া আছড়ে পড়ছে?
অল্প বয়সে সব জিনিসই কত সুন্দর লাগে অমল। বেশি বয়স জিনিসটাই এত খারাপ। আগে রােজ সন্ধ্যায় মনে হত কত আলাে। কত লােক আসত। এমন যেন আলাে কমে গেছে। কে আর আসে!
কথা বােলাে না। তােমার কষ্ট হচ্ছে।
শুয়ে আছি সাতদিনের ওপর। শক্ত কিছু খাই না তিনদিন। চান করি না কতদিন। একটু কথাও বলতে পারব না? তাহলে থাকল কী আমার?
সবই তােমার আছে নীতা। এখনাে তুমি সুন্দরী। বিদুষী তাে বটেই। টাকা পয়সা নিয়ে কোনােদিনই তােমায় ভাবতে হবে না।
কিন্তু আমার জীবন অমল? একটা জীবনের কতখানি গড়িয়ে পড়ে গেছে।
কিছুই যায়নি। তুমি চিন্তা করছ—তােমার অহংকার নিয়ে। আর তা তােমায় কুরে কুরে খাচ্ছে। তুমি ভাবছ—-আমায় ছেড়ে চলে গেল। আমার তাহলে কী নেই?
চোদ্দো বছর হয়ে গেল—অবনীশকে ডিভাের্স দিয়েছি। এখন আর ওসব মাথায় আসে না।
খুব আসে। ওই একটি চিন্তাই তােমার ভ্যানিটিকে খোঁচায়। তাই তুমি এত বড়াে পৃথিবীর বাকিটা দেখতে পাও না। এখনাে তােমার গবা-অবনীশ ক-টা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভােকেশন অ্যাড্রেস করেছে! খ্যাতি, গৌরব তােমার কাছে ধ্রুবতারা। এদের জায়গা হয়ে গেলে তবে তুমি ভালােবাসাকে বসতে দিতে পার। নয়তাে নয়।
আমায় পুড়িয়ে কথা না বললে তােমার সুখ হয় না অমল। নাও কাত হয়ে শােও। ভিজিটিং প্রফেসারি করতে বছর বছর দেশে দেশে এত ঘােরাে কেন নীতা ?
বাঃ। এটা একটা সম্মান
এমন সম্মান তাে বহুবার পেয়েছ তুমি। ঠান্ডা লাগার ধাত। এই শরীরে ঠান্ডার দেশে ঘােরাঘুরি কি ঠিক? আর
আর কী অমল ? টাকার তাে তােমার অভাব নেই। আর কী দরকার টাকায়! নাই বা পড়াতে যেতে বিদেশে। এত কী দরকার টাকার
টাকা যে কত দরকারি অমল। মা ভুগছে। আমি প্রায়ই ভুগি। এ পাড়ায় কাজের লােকের মাইনে তুমি জান না।।
তুমি তাে ভালাে মাইনে পাও। তােমার তাে জমানাে টাকাও আছে। একতলা ভাড়া দিয়ে ভাড়া পাও।
সে সেই মান্ধাতার আমলের ভাড়া। এ পাড়ায় মােটে আটশাে টাকা।
কত টাকা লাগতে পারে তােমাদের? অবনীশবাবু ছেলেমেয়েদের জন্যে নিশ্চয় পাঠান।
তা পাঠায়। ওর আয় তাে ডলারে—পাউন্ডে এটাও তােমার গর্বের পয়েন্ট। হতে পারে। এত সিকিউরিটি, এত শােক ভালাে না নীতা। তবুও তাে তােমায় ভালােবাসি না অমল।
তাতে কিছু যায়-আসে না। এই গাদাগুচ্ছের ওষুধ—এগুলাে সব খেতে হবে?
সব অমল। স্টেরয়েড না হলে আজকাল আমি চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারি—
তােমার দরকার বন্ধু। যে তােমায় বলবে—তােমার সব আছে। নিরাপত্তা, টাকা, রূপ, ভালােবাসা—
ওসব মিথ্যে কথা। রােজ ভাের হলে ভাবি—ওগুলাে আমার নেই কেন? দ্যাখাে তাে অবনীশ কেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমায় ছাড়ল। ডােরা চলে গেল। তবুও ও থেমে নেই। আরেকজনের সঙ্গে দিব্যি থাকছে। সারা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।