তিন
বালীগঞ্জ ময়দানে ফুটবল ম্যাচ ছিল : পার্ক ইউনাইটেড ক্লাব বনাম রেইনবো ক্লাব। রেইনবো ক্লাব বালীগঞ্জ পাড়ার ছেলেদের দল আর পার্ক ইউনাইটেড ক্লাব পার্ক সার্কাস পাড়ার। কণিকা মেমোরিয়াল কাপ টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল খেলা।
টুর্নামেন্টে প্রবেশের একটা শর্ত, খেলোয়াড়দের উচ্চতা চার ফুট দশ ইঞ্চির বেশি হলে চলবে না। সিদ্ধ দৈর্ঘ্যের চাইতে আমি ইঞ্চি দেড়েক লম্বা ছিলাম। তবু ক্লাব কর্তৃপক্ষ নাছোড়বান্দা, আমাকে খেলতেই হবে, ‘লেফট-ইনে’ দলের স্টার খেলোয়াড়।
সরল পাঠকের মনে হতে পারে এটা কি করে সম্ভব? আমার দৈর্ঘ্য থেকে রাতারাতি দেড় ইঞ্চি প্রমাণ বাহুল্যটুকু ছেঁটে ফেলা কি করে সম্ভব? কিন্তু যাঁরা ফুটবল খেলেন তাঁদের কাছে এ বাঁ-হাতের খেলা। অবশ্য যে খেলোয়াড়ের ওপর হঠাৎ শরীর সংস্কার করবার আদেশ জারি হয়, তার নাজেহালের সীমা থাকে না। আমার দুর্ভোগটাই কি কিছু কম হয়েছিল।
দৈর্ঘ্য-সঙ্কোচের জন্য আমাদের জানা এক অভিনব কৌশল ছিল, শক্ত করে কোমরে দড়ি বাঁধা। আমাকেও এতো শক্ত করে কোমরে দড়ি বাঁধতে হয়েছিল যে, কোমরের চারপাশে প্রায় ইঞ্চিখানেক গর্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে শারীরিক পরিধির সঙ্কোচ কেবল দৈর্ঘ্যেই নয়, প্রস্থেও সাধিত হয়েছিল।
আমি ছিলাম রেইনবো ক্লাবের ‘লেফট-ইন’—দলের একমাত্র মুসলমান খেলোয়াড়। সেদিন বৃষ্টির পর মাঠ ছিল ভেজা। ভেজা মাঠে বরাবরই আমার খেলা যায় খুলে। অথচ খেলা শুরু হবার পনের মিনিটের মধ্যেই পার্ক ইউনাইটেড ক্লাব দুটি গোল দিয়ে দিল। খেলা শেষ হবার পনের মিনিট আগে পর্যন্ত তারা দুটি গোলে এগিয়ে থাকল। দুটি গোলই দিল মুশতাক।
এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলা দেখবার জন্য সেদিন মাঠে অবিশ্বাস্য রকম ভিড়। রেইনবো ক্লাব দু’গোলে হারছে, বালীগঞ্জের ছেলেদের মুখে চুন। খেলা শেষ হতে পনের মিনিট মাত্র বাকি। পার্ক ইউনাইটেডের মুশতাকের খেলা দেখে সবাই চমৎকৃত। এমনকি প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকরাও হতবুদ্ধি।
সুন্দর ছিপছিপে ফর্সা ছেলে; পায়ে বুট, হাঁটুতে ‘নি-কাপ’, পরনে কালো রঙের ফুটবলপ্যান্ট, গায়ে সাদা-লাল জার্সি! মাথায় ঝাঁকড়া চুল কখনো কপালের ওপর নেবে আসছে, কখনো মাথার এক ঝাঁকানিতে আবার পেছনে সরে যাচ্ছে। লিকলিকে পা দিয়ে বল নিয়ে আসার ভঙ্গিটাও অপূর্ব। মাঠসুদ্ধ লোক তাকেই দেখছে, তারই খেলা দেখছে।
এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি নাবল। আশেপাশেই কোথায় যেন বাজ পড়ল। দর্শকদের উত্তেজনা গেল আরো বেড়ে।
আমি এ পর্যন্ত কিছুই করতে পারি নি। আমার দল দু’গোলে হারছে। সেদিন যে আমার কি হয়েছিল আল্লাহ্ই জানে। পায়ের ফাঁক দিয়ে বলা যায় গলে, পায়ে পা যায় জড়িয়ে, কখনো যদি বল ধরতে পারি তো পরক্ষণেই প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় নেয় কেড়ে। আমি যেন খেলছি না, মুশতাকের খেলা দেখছি।
এমন সময় এলো বৃষ্টি
পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখে পুরলাম, সেকালে এই আমার একটি অভ্যাস ছিল। কুকুর যেভাবে দাঁত দিয়ে হাড় কামড়ে ধরে সেইভাবে রুমালটি দাঁতে চেপে বল পায়ে ছুটলাম। মাথাটি নিচু করে ছুট, ঠিক যেন ষাঁড়ের মতো। ডাইনে বাঁয়ে সম্মুখে পশ্চাতে কোনোদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে ছুট। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা ঢিল খাওয়া মৌমাছির মতো আমার পিছনে পিছনে ছুটে এলো। আমার দলের সমর্থকরাও উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল। গোলপোস্ট একদিকে আর আমি বল নিয়ে অন্ধের মতো ছুটছি আর একদিকে। বল নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বিপক্ষ দলের কর্নার লাইনের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। বেশ বুঝতে পারছিলাম, সকলের নিশ্বাস তখন বন্ধ।
ডান পা দিয়ে বলটি থামালাম। একবার দেখলাম ধাবমান বিপক্ষ খেলোয়াড়রা তখন কোথায়। একবার ভালো করে দেখে নিলাম গোলপোস্টটা কোথায়। তারপর তবলচি যেভাবে তবলা ঠুকে ঠুকে দেখে সেইভাবে ডান পা দিয়ে বলটি টিপে টিপে দেখলাম।
কিন্তু এসবই এক নিমেষের মধ্যেই ঘটে গেল।
তারপর বাঁ পায়ের এক মার। জ্যা-মুক্ত শরের মতো বলটি পাঁচজন ছেলের মাথার ওপর দিয়ে পোস্টের মধ্যে গলে গেল।
এক গোল শোধ হলো।
খেলা শেষ হতে আর মাত্র মিনিট তিনেক বাকি।
তার পরের কাহিনী যেমন ক্ষিপ্র তেমনি সংক্ষিপ্ত।
আমি তখন অপ্রতিরোধ্য। আমি জানি প্রবল উত্তেজনায় আমার চোখমুখ ঘোলাটে হয়ে ওঠে। সেদিনও নিশ্চয়ই তাই হয়েছিল।
একটি ক্ষুদ্র চামড়ার বল ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর যেন আমার মান-সম্মান, জীবন- মরণ সবকিছু নির্ভর করছে। ভিড়ের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে, অন্যের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলিয়ে দিয়ে, কখন দৌড়ে, কখন থমকে দাঁড়িয়ে আমি পরপর আরো দুটি গোল দিয়ে দিলাম। মাঠসুদ্ধ লোক বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অবাক এবং কিছুটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমাদের খেলা দেখল।
শেষ গোলটির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খেলাও শেষ হলো। এইবার আমি মুখ থেকে রুমাল বের করে পকেটে পুরলাম।
একবার মাত্র ঘাড় ফিরিয়ে মুশতাককে দেখলাম। ভাবভানা যেন এই, খেলা কাকে বলে দেখলে! তারপর ছুট।
বাঁধ-ভাঙা স্রোতের মতো ভিড়-ভাঙা লোক আমার পিছনে পিছনে ছুটে এলো; কিন্তু সবার আগে এলো মুশতাক।
শাবাশ! খুব খেলেছ। এমন না হলে খেলা।
মুশতাকের আব্বা সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার। বেনিয়াপুকুর পাড়ার ক্রিমেটোরিয়াম রোডে সুন্দর একতলা বাড়ি। তাঁর নাম এহসান সাহেব। সুন্দর বলিষ্ঠ চেহারা। মুশতাকের বাড়ি এসে আমার চোখ জুড়িয়ে গেল। এ বাড়ির সবকিছুই ছবির মতন। সাজনো-গোছানো বৈঠকখানা, শোবার ঘর, খাবার ঘর।
মুশতাকের আম্মা একটা মোড়ার ওপর বসে উলের সোয়েটার বুনছিলেন। তার বুবু সেলিনা একটা লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে খোঁপা বাঁধছিলেন। আমার এ কাহিনী রহস্য-উপন্যাস নয়; সুতরাং এখানেই এ কথা স্বীকার করলে লোকসান নেই যে, সেলিনার প্রসাধনের দৃশ্য আজও আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
সে সময় মুশতাকের আব্বা বাড়ি ছিলেন না।
মুশতাক আমার অনিচ্ছুক দুটি পায়ের সমস্ত আপত্তিকে উপেক্ষা করে হাত ধরে টানতে টানতে সোজা খাবার ঘরে নিয়ে এলো।
—ছেলেটি কে রে?
—হাফেজ রশীদ।
দুষ্টুমিতে মুশতাকের চোখ নৃত্য করে উঠল
—বেশ, বাবা বেশ। এই বয়সেই কোরআন শরীফ মুখস্থ করেছ। বলি তোরাও শেখ।… মুশতাকের আম্মা আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন।
আমি কিন্তু হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। আমি হাফেজও নই, নামও রশীদ নয়। একি পরিহাস! প্রতিবাদ করে বললাম, আমি হাফেজ নই। নামও রশীদ নয়। আমার নাম শাকের।
মুশতাক তবু দমবার পাত্র নয়। সে আবার বললো, আম্মা তুমি যদি আজ শাকেরের খেলা দেখতে। কে বলবে হাফেজ রশীদ নয়।
—তাই না কি। তা তোদের খেলার হলো কি?
মুশতাক সেদিনকার খেলার পুরো ইতিহাস বলে গেল। বলা বাহুল্য, তার মহাকাব্যের নায়ক আমিই।
মুশতাকের ভক্তির আতিশয্য দেখে তার আম্মা আর বুবু হেসে ফেললেন। আমি সঙ্কুচিত হয়ে উঠলাম।
বস্তুত গোড়া থেকেই আমি অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আমার কাদা-মাখা ছেঁড়া হাফ প্যান্ট, কোমরে বেল্টের বদলে দড়ি, নগ্ন পা, এলোমেলো রুক্ষ চুল, এ সবের জন্য বড়ই ব্ৰিত বোধ করছিলাম। কেমন করে যেন মনে হচ্ছিল, মহাকাব্যের নায়কের উপযোগী সাজ এ নয়। তাছাড়া এ বাড়ির পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপছাড়া লাগছিল।
খাবার টেবিলের সামনে একটা চেয়ার টেনে যখন বসলাম, তখন একেবারে অকস্মাৎ একটা কথা আমার মনে হলো। আমরা বড় গরিব। এ কথাটি এভাবে আগে কখনো মনে হয় নি।
সচেতনভাবে সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের বয়স সেটা নয়। কিন্তু আজ তো বুঝতে পারি। তাছাড়া সে বাড়ির সামগ্রিক প্রভাব আমার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। মুশতাকের বাড়ির সুন্দর সচ্ছল পরিবেশের বিরুদ্ধে আমার সেই অপরিণত মন হঠাৎ বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসল। আমি গুম হয়ে বসে থাকলাম।
মুশতাক তার মনের স্বাভাবিক আনন্দের তাগিদে একটি করে ভোজ্যবস্তুগুলোর সদ্ব্যবহার শুরু করে দিয়েছিল। তালতলার লাড়ুয়া, মাখন-রুটি, নিউমার্কেটের চাকা চাকা পনির, কপির সিঙাড়া, জিলিপি, এইসব সামনে সাজিয়ে মুশতাকের আম্মা আমাদের নাস্তা করতে দিলেন।
এসবই অতি লোভনীয় বস্তু, তবু আমার হাত সরছিল না।
বুবু আর আম্মা এক সময় লক্ষ্য করলেন আমি কিছুই খাচ্ছি না। তাঁদের উপস্থিতিটাই তার কারণ অনুমান করে তাঁরা উঠে চলে গেলেন। যাবার আগে মুশতাকের আম্মা বললেন, বাবা খাও। লজ্জা করো না।
মুশতাক মাত্র একবার তার তশতরি থেকে চোখ তুলে বললো, হ্যাঁ, খা খা। বলেই সে আবার আহারে মনোনিবেশ করল। আমিও কোনোমতে নাস্তা সারলাম। তারপর দু’বন্ধু উঠে পড়লাম।
মুশতাক আমাকে নিয়ে তার পড়বার ঘরে এলো। বসবার ঘরেই মুশতাকের পড়বার টেবিল। বই খাতা ইনস্ট্রুমেন্ট বক্স, কালার বক্স, ড্রইং বুক, একটা বড় এ্যাটলাস আর সুন্দর একটা লাল ফাউন্টেন পেন টেবিলের ওপর সাজানো ছিল। মুশতাক এরই মধ্যে তার খেলবার সাজ বদলে একটা লাল স্পোর্টস শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরে নিয়েছে। তার চুল থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। গন্ধটি যেন সদ্য পরিচিত। একটু আগেই যেন কোথায় খুঁজে পেয়েছি আর একটু আগেই যেন কোথায় হারিয়ে এসেছি। মুশতাক তার পড়বার টেবিলে বসে এটা- সেটা দেখাতে লাগল। এরই মধ্যে আমাদের ভাব বেশ জমে গেছে। বন্ধুত্বের তাগিদটা মুশতাকের দিকেই প্রবল। কিন্তু এ কথাও সত্য, আমিও তার প্রতি বেশ একটা টান বোধ করতে লাগলাম।
আমরা দু’জনেই ক্লাস নাইনে পড়ি। মুশতাক পড়ে হেয়ার স্কুলে আর আমি তালতলার একটা অখ্যাত স্কুলে। একটু আগেই এই সত্যটি আবিষ্কার করে আমরা অবাক হয়ে গেছি।
কথায় কথায় বেশ রাত হয়ে গেছে, আমরা টের পাই নি। এক সময় মুশতাকের আম্মা এসে বললেন, ছেলেরা খাবে চলো। রাত ন’টা বাজে।
পিছনে কুর্তা-পাজামা পরা এক ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন। ফর্সা সুন্দর চেহারা, সুঠাম বলিষ্ঠ গড়ন। মুশতাকের আব্বা এহসান সাহেব কখন অফিস থেকে ফিরে এসেছেন, কাপড়- চোপড় ছেড়ে ঘরোয়া লেবাজ পরেছেন, আমরা কিছুই জানি না।
আমি বাড়ি যাব বলে উঠে দাঁড়ালাম।
মুশতাকের আম্মা কিন্তু বললেন, চললে কোথায়? এখানেই খেয়ে যাও।
মায়ের এই প্রস্তাবে মুশতাকও উৎসাহে সায় দিল।
এমন সময় একটা গম্ভীর গলার আওয়াজ ভেসে এলো।
—তোমার আব্বার নাম কি?
এহসান সাহেবের প্রশ্ন।
—সৈয়দ আবু নাসের।
—তিনি কি করেন?
—ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
এহসান সাহেব কি যেন ভাবলেন। তারপর আবার প্রশ্ন করলেন : তোমরা আগে কোমেদান বাগান লেনে থাকতে না?
—জি!
—তোমার আব্বা ডিপুটি—না সাব-ডিপুটি?
চোর ধরা পড়লে যেমন হতবুদ্ধি হয়ে যায়, আমি সেই রকম মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম! বস্তুত আমার আব্বা সাব-ডিপুটি কালেক্টর। কিন্তু সেই বয়সেই আমার এই এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, আব্বার এই পরিচয়টা তেমন গৌরবের নয়। অন্য নিকট-আত্মীয়রা কেউ ডি-এম, কেউ ডিপুটি সেক্রেটারি। আমি দেখেছি, তাঁরা পর্যন্ত আব্বার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। এই রিশতাদের বাড়িতে যখন জেয়াফত থাকে, তাঁরা পরস্পর সহজে কথা বলে যান, সেক্রেটারি আর কমিশনার সাহেবদের অন্দরমহলের কতো কাহিনী, অথচ আব্বার কেমন যেন নম্র বিব্রত অপদস্থ ভাবভঙ্গি, তাঁকে কেউ ভালো করে আমলই দিচ্ছে না। লগি দিয়ে পানি দেখে ডিঙি চালাবার মতো করে তিনি যদি সাবধানে সন্তর্পণে দুটি একটি কথা বলেন, অমনি অন্য পদস্থ ব্যক্তিদের বাক্যালাপ যায় বন্ধ হয়ে, তাঁরা কেমন যেন অবাক দৃষ্টিতে আব্বার দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেই থেকে এই পদটাই আমার মনের সমস্ত ধিক্কারবোধের প্রতীক হয়ে আছে।
তাই এহসান সাহেবকে আমি বলতে পারি নি আমার আব্বা সাব-ডিপুটি, একটু বাড়িয়ে বলেছি, ডিপুটি। কিন্তু এইভাবে ধরা পড়ে গিয়ে আমি ঘামতে লাগলাম।
ঠিক সেই মুহূর্তে দুটি প্রখর চোখের দৃষ্টি আমার দিকে কঠিন প্রশ্ন-চিহ্নের মতো নির্মম প্রত্যাশায় উদ্যত হয়ে থাকল, সেলিনার চোখের ভ্রূকুটি। তাঁর ঠোঁটের কোণে প্রথমার চাঁদের মতো তির্যক হাসি।
আমি এহসান সাহেবের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলাম না। খেতেও রাজি হলাম না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তাঁরাও আর বিশেষ পীড়াপীড়ি করলেন না।
সেলিনাই বললো, আম্মা জোর করো না। ওর বাড়িতে হয়তো ভাববে। আমি আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলাম।