দুই
কাহিনীতে পরের কথা আগে, এবং আগের কথা পরেও বলা হবে। এটাকে রচনার আদর্শ বলা যায় না। কিন্তু সব লেখকই তাঁর নিজস্ব রচনারীতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে বন্দি। তিনি নিজের মতো করে নিজের কথাটি বলতে পারলেই নিজের মনের মতো করে বলতে পারেন। তা সত্ত্বেও যদি রচনা পাঠকের মনের মতো না হয়, তাহলে এই প্রমাণিত হয়, অন্যভাবে লিখলে তা আরো অমনোনীত হতো।
গল্প পড়তে বসে পাঠকের একটাই গরজ থাকে। তিনি গল্পই পড়তে চান। তাঁর কাছে বহু কথাই বাহুল্য, বহু ঘটনাই অনাবশ্যক মনে হয়। মূল গল্পাংশের দিকে লেখক কিভাবে অগ্রসর হন, বিজ্ঞ পাঠকের কাছে সেই ভঙ্গিটুকু সুপরিচিত। তাই বহু পাঠকই কাহিনীর প্রথম পৃষ্ঠাগুলোর ওপর দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেন। তারপর ঝাঁপ দেন একেবারে কাহিনী সরোবরের মাঝখানে।
লেখক কেবল লেখকই নন। তিনি পাঠকও। তাই পাঠকের রুচি-অরুচির কথা তিনি জানেন। গল্পের মধ্যগগনে পৌঁছবার জন্য যে সোপানগুলো অতিক্রম করতে হয় সেগুলো যদি- বা ক্লান্তিকর হয়, তবু অপরিহার্য।
পূর্ণচন্দ্রের যে-রূপ তা ধীরে ধীরেই গড়ে ওঠে। সাহিত্য-রসের পূর্ণিমাও সেইভাবেই সৃষ্টি হয়। সাহিত্যের প্রথমা আর দ্বিতীয়াও বৈশিষ্ট্যহীন নয়। তারো একান্ত নিজস্ব একটি রূপ আছে। এই কাহিনীতে অনেক কথা আছে, যা সোজা গল্পাংশের দিকে এগিয়ে যায় না; দক্ষিণে-বামে বিপথগামী হয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে অযথা বিলম্ব করে দেয়।
এর একটি মাত্র কৈফিয়ত আছে।
মানব জীবনের ঘটনাপ্রবাহ একটানাভাবে একটি গল্পই বলে না। তার সব ঘটনাই একটি মাত্র গল্পের বিভিন্ন স্তম্ভ নয়।
গল্প বলাই গল্পলেখকের একমাত্র কাজ নয়। তাঁকে কিছু কিছু জীবনের কথাও বলতে হয়।