উকিল মুনশির গান
১
অপরাধী হইয়া রে যদি থাকি ওরে বন্ধু
আমারে কাঁদাইয়া মাইরো না
আমি জনম ভরা অপরাধী
তোমার বিনামূল্যে কিনা।
আমি মইলে বোধ হয় তোমার
যন্ত্রণা রবে না,
আমার গলে ফাঁসি দিয়া মারো
তোমায় বাধা দিব না।
চন্দ্রার কুঞ্জে কুজার কুঞ্জে
যেথায় আনাগোনা
তুমি সবার মন রক্ষা করো
আমি যে সুখ চাই না ৷
তুমি দয়ার মৌলা বলে
জগতে ঘোষণা
মিছামিছি আশা দিয়া
কাঙাল উকিলরে কাঁদাইও না।
২
আইও আইও আমার গগনেরই চান
বাটা ভরিয়া রাখছি সোনামুখী পান
বন্ধু আইও।
আতর গোলাপ ছিটাইলাম ফুলের বিছানায়
বাসর সাজাইয়া রাখলাম তোমারই আশায়
বন্ধু আইও।
দুই ভাগ করিয়া রাখলাম মাথার লম্বা চুল
চুলের আগায় বান্ধিয়াছি রক্তজবা ফুল
বন্ধু আইও।
সারাটা রজনী রাখলাম জ্বালাইয়া মশাল
না জানি কোন অপরাধে ভাঙিল কপাল
বন্ধু আইও।
কতজনার মুখ পানে চাই মেলিয়া নয়ন
তুমি বিনে অন্ধকার মোর এ সারা ভুবন
বন্ধু আইও।
তোমার বিরহানলে যদি উকিল মরি
জগৎ জুড়ে রবে বন্ধু কলঙ্ক তোমারই
বন্ধু আইও।
৩
আগে জানলে এমন প্রেম আর করতাম না
বন্ধুর কারণে গেল রে জীবন
প্রেমের মতন জ্বালা আর দেখি না।
বন্ধু দিয়া মুখের কথা লাগাইল মমতা
কেমন নিঠুরতা আর ফিরে চাইল না।
আমি সারাটা নিশি জ্বালাইয়া বাতি
পোহাইলাম রাত্রি বন্ধে দেখা দিলো না।
আমি যাই যদি জলে আরো বেশি জ্বলে
জল ঢালিলে আগুন আর নিভে না।
পাগল উকিলে বলে বিধি কী লিখেছিলে
আমার কপালে বুঝি এই লাঞ্ছনা।
৪
আমি কই যাই কই যাই গো এই সন্ধ্যাকালে
না বুঝিয়া সব হারাইলাম সর্বনাশা ধরাতলে।
মহাজনের পুঞ্জি লইয়া বেপারেতে আই
ঘাটে আমার বান্ধা তরি পাপেতে বোঝাই
আমি এদিক-সেদিক ঘুরিফিরি
কড়ি আমার নাহি মিলে।
সারা জনম ভাসলাম আমি দুই নয়নের জলে
ভাসতে ভাসতে জনম গেল কেউ নিল না কূলে,
দুঃখের পরে সুখ বুঝি আর
বিধি লিখল না আমার কপালে।
এই কূল যদি ভাঙে নদীর সে কূল দিয়ে গড়ে
আমার আশানদীর দুকূল ভাঙা কপালেরই ফেরে
ভবযন্ত্রণা দূর হবে না
বুঝলাম উকিল না মরিলে।
৫
আমি কেমনে কেমনে দিব পাড়ি
এখন আমি উপায় কী করি।
একে আমার ভাঙা তরি পাপেতে বোঝাই
বেলা গেল সন্ধ্যা হলো দেশে কেমনে যাই
এ দেশে সবাই আমার বৈরী।
হীরামন পরশমণি সঙ্গেতে ছিল
মদনাচোরায় নাগাল পাইয়া সর্বস্ব নিল
কী লইয়া কী লইয়া দিব পাড়ি।
উত্তর দিকে সাজ করিয়া আসিল তুফান
কখন জানি অগাধ জলে ডোবে তরিখান
ও উকিল ও উকিল ঘাটে বাঁধো তরি ॥
৬
আমি খাড়া নদীর পাড়ে রে আমি ঘুরি নদীর পাড়ে রে
আমি কেমনে যাই কেমনে যাই সেই পাড়ে।
নদীর পাড়ে বাঘের গাড়া
আমি দেইখা হইলাম আত্মহারা রে
সঙ্গে সাথী ছিল যারা সবই গেল দূরে রে।
বেলা হলো অবসান
কোন সময় জানি ছোটে তুফান রে
ক্রমে ক্রমে ঘিরিল আঁধারে রে।
আশা নদীর পাড়ে বইয়া
উকিল রইলাম পন্থ চাইয়া
মথুরার বিকি যায় ফুরাইয়া রে।
৭
আমি মইলে কী লাভ হবে তোর বন্ধুয়া রে।
বন্ধু রে, মইলে যদি হও সুখী
প্রাণ নিতে রেখো না বাকি
পাখি উড়ে শূন্য হউক পিঞ্জর,
দেহপিঞ্জর হলে শূন্য
লোকে মোরে বলবে ধন্য
এই মরণের করি না আর ডর।
বন্ধু রে, তোমার সনে করে পিরিতি
আঁধার হলো চোখের জ্যোতি
পুড়িয়া ছাই করিলাম পাঁজর,
এখন বুঝিলাম তোমার চাতরি
কেবল ছাড়াইলা ঘরবাড়ি
ভাবে বুঝি উকিল তোমার পর।
৮
আমি যে ধন হারাইয়াছি তোমরানি কেউ দিতে পারো
দিতে পারলে বুঝতে পারি তোমরা আমায় আদর করো।
কোনো ধন নাই সেই ধনের কাছে
যেজন সেই ধন পাইয়াছে
রাজা হইয়া বসিয়াছে
পাইয়া তার আপন ঘর।
কাঙাল উকিল যে ধনের ভিখারি
সেই ধন আছেনি কারও বাড়ি
দিতে যদি দয়া করি
জুড়াইতো পোড়া অন্তর।
৯
আমায় কেবা পার করে
বসলাম নদীর পাড়ে গো।
নাও আছে কাণ্ডারি নাই
শুধু ডিঙা ভাসে
মাঝি ভাইয়ের নাম জানি না
আমি ডাক দিমু কারে।
কালো জলের কালো কুম্ভীর
উঠল বালুচরে
কালো কুম্ভীর কারে ধরে
উকিলের প্রাণ কাঁপে ডরে।
১০
আমার গায়ে যত দুঃখ সয়
বন্ধুয়া রে করো তোমার মনে যাহা লয়।
পাষাণ বন্ধু রে
বলেছিলে আমার হবে
মন দিয়াছি এই ভেবে
সাক্ষী কেউ ছিল না সেই সময়, ও বন্ধু রে।
সাক্ষী শুধু চন্দ্র-তারা
একদিন তুমি পড়বে ধরা রে বন্ধু
ত্রিভুবনের বিচার যেদিন হয়।
পাষাণ বন্ধু রে
দুঃখ দিয়া হিয়ার ভিতর
একদিনও না লইলে খবর
একি তোমার প্রেমের পরিচয়, ও বন্ধু রে।
মিছামিছি আশা দিয়া
কেন বা প্রেম শিখাইয়া রে বন্ধু
দূরে থাকা উচিত কি আর হয়।
পাষাণ বন্ধু রে
বিচ্ছেদের বাজারে গিয়া
তোমার প্রেম বিকি দিয়া
করবো না প্রেম আর যদি কেউ কয়, ও বন্ধু রে
উকিলের হইয়াছে জানা
কেবলই চোরের কারখানা রে বন্ধু
চোরে চোরে বেওয়াইয়ালা হয়।
১১
আমার দিবার বলতে কী ধন আছে
কী ধন দিব তোমারে
আমার যা ছিল সব পুড়ে গেল
তোমার বিরহ অনলে গো
তুমি দয়া করো দয়ার ভাণ্ডার
দয়া করো মোরে রে।
হাতে নাই মোর টাকাকড়ি
আমি কী দিয়া তোমার চরণ ধরি গো
দয়া করো দয়ার ভাণ্ডার
দীনহীনের মুক্তি চাই রে।
নাই গো আমার বসতবাড়ি
আমি তোমায় আশা করি গো
উকিল তোমার চরণের ভিখারি
চরণ দেও আমারে রে।
১২
আমার মতো প্রেমের মরা
মরে যেন সে বৃন্দাবনে
এই অভিশাপ দিলাম মনে মনে।
আমায় যারা কলঙ্কিনী
করিয়াছে প্রাণসজনী গো
তারাও যেন দিনরজনী
মরে সেই প্রেম জ্বালাতনে।
কান্দি আমি ধোঁয়ার ছলে
কোথায় সেই গোবিন্দ বলে গো
সেও যেন এমনিভাবে
ভাসে দুই নয়নের জলে।
ভাবছি উকিল নিশিদিনে
কেউর ক্রন্দন আর কেউ না শুনে গো
যার পিরিতে যে মইজাছে
তার মর্ম সেই জানে।
১৩
আর কত দিনে রে শ্যাম আর কত দিনে
হইবে দেখা ভঙ্গি মাখা ওই নিকুঞ্জবনে রে
তুমি ছাড়া ওই ঘরেতে রহিব কেমনে
দূরে ফেলে এ দাসীরে থাকবেনি মনে।
আইসো বন্ধু বইসো আমার হৃদয় সিংহাসনে
নিশি পোহাইব প্রেম আলাপনে রে।
কাতরে মিনতি করি নিবেদি চরণে
কাঙাল উকিলেরে রাখিও তোমার যুগল চরণে।
১৪
আর নি আসিবে কৃষ্ণ কলঙ্কী রাই না মইলে গো
হায় গো দূতি কইও গো শ্যামবন্ধুর নাগাল পাইলে।
কইও কইও কইও রে দূতি
কইরো করুণা
রাধার নয়নে বহে ধারা
গঙ্গা আর যমুনা গো।
প্রথমে করছিলাম পিরিত
তুমি আর আমি
এখন কেন এইসব কথা
লোকের মুখে শুনি গো।
পুষ্কুনির চারিপাশে
চাম্পা নাগেশ্বর
ডাল ভাঙিয়া পুষ্প তোলে
বৈদেশি নাগর গো।
উকিলে কয় বড়ো পাপী
আমি হইলাম এই ভুবনে
দয়ানি করিবেন আল্লায়
হাশরের দিনে গো।
১৫
আরে ও আষাঢ়িয়া পানি
কার্তিক মাসে থাকবে না তোর সাধের জোয়ানি ॥
ঘাটে ঘাটে বান্ধা আছে সুন্দর তরণী
সুন্দর বউ আসে ঘাটে শুনে খলখলানি ॥
শ্রাবণ সংক্রান্তি মাসে লাগে নাও দৌড়ানি
লাছাইতে লাছাইতে ভাঙে সুন্দর নাওখানি ॥
কেউ হারে কেউ জিতে কেউ খায় মুণ্ডা-চিনি
কেউর নাও যায় ভাঙিয়া কেউর মাথা ঘুরানি ॥
মনউল্লাসে কতজনায় নাও দিয়া যায় বেড়ানি
উকিলের ভাঙা নাও, সেচিলেও না ফুরায় পানি ॥
১৬
আরে ও জারমুনিয়ার দল
প্রাণবন্ধু কোথায় আছে তোরা বল।
নদীর স্রোতে উজান যাস একি তোর কৌশল
বন্ধুর দেশের বাতাসই বুঝি তোরা বল।
দক্ষিণ দেশের লোকে আমায় করেছে পাগল
তোরা যদি হস দরদি সেথায় নিয়ে চল।
আষাঢ় মাসের ভরা নদী করে টলমল
দিবারাত্র বারণ হয় না উকিলের চোখের জল।
১৭
আরে ও নগরের লোক
বন্ধুর দেখা পাইলে কইও আমার যত দুখ রে।
এ দেশেতে থাকতে আমার বান্ধে না রে বুক
কেমনও সোনার দেশে হইবে আমার সুখ রে।
এ দেশের মানুষগুলি ভিতরে লাল টুকটুক
লাল রূপ দেখায়ে আমার খালি করল বুক রে।
উকিলে কয় মরণ আমার আসিল সম্মুখ
মরণকালে দেখিতাম আমার সোনাবন্ধের মুখ রে।
১৮
পুবালি বাতাসে আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে
বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি আমার নি কেউ আসে রে।
যেদিন হইতে নুয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে সখি রে
অভাগিনীর মনে কত শত কথা ওঠে রে।
গাঙে দিয়া যায় রে কত নায়-নাইওরির নৌকা সখি রে
মায়ে-ঝিয়ে বইনে-বইনে হইতেছে যে দেখা রে।
আমি যে ছিলাম গো সখি বাপের গলার ফাঁস সখি রে
আমারে যে দিয়া গেল সীতা-বনবাস রে।
আমারে নিল না নাইওর পানি থাকতে তাজা সখি রে
দিনের পথ আধলে যাইতাম রাস্তা হইত সোজা রে।
কতজনায় যায় রে নাইওর এই না আষাঢ় মাসে সখি রে
উকিল মুনশির হইবে নাইওর কার্তিক মাসের শেষে রে।
১৯
উড়ে যাও রে বনের পাখি যে দেশে বন্ধুয়ার ঘর
কইও গিয়া দুঃখিনীর খবর।
পাখি তোরে বিনয় করি কাল-যৌবন হইল বৈরী গো
কইও খবর তাড়াতাড়ি প্রাণে না লয় বাড়িঘর।
কইও কইও বনের পাখি আমি বন্ধুর প্রেমের মরা গো
বন্ধু আমার নয়ন-তারা কান্দি বসে নিরন্তর।
লোলছি দেখাইয়া আমার মনপ্রাণ হরে নিছে গো
বোধ হয় বন্ধে ভোলায় পড়েছে পাইয়া কামিনী সহচর।
দীনহীন উকিলে বলে সাধের জীবন গেল বিফলে গো
সারাজীবন ভাবতে ভাবতে সোনার অঙ্গ হইল জরজর।
২০
এসো বন্ধু তোমায় নিয়ে
মন-আনন্দে করিব খেলা
তোমারে লইয়া নাচিয়া গাইয়া
খেলিব প্রেমেরই খেলা।
আমি নয়ন জলে স্নান করাবো
অঙ্গেতে চন্দন ছিটাবো
মন-সাধে সাজাইবো
গলে দিব পুষ্পমালা।
করে করে কর মিশিয়ে
অধরে আদর মিশায়ে
তোমার প্রেমবারি পরশিয়ে
মিটাও মোর বিরহজ্বালা।
উকিলের মন উতালা
শোনো রে চিকন কালা
যখন আসবে মউতের পালা
পাই যে তোমায় সেই বেলা।
২১
এসো হে কাঙালের বন্ধু তুমি দেখা দেও আসিয়া
আমার তাপিত প্রাণ জুড়াই একবার তোমারে দেখিয়া রে ॥
তোমার বলে বলবান আমারে সাজাইয়া
তোমার কর্ম তুমি করো আমায় উপলক্ষ দিয়া রে ॥
ঘরে ঘরে তোমারই প্রেম দিয়াছ বিলাইয়া
নইলে কি আর আসলাম ভবে মানবজনম লইয়া রে ॥
রহমতেরই একবিন্দু জল আমায় দান করিয়া
ভবযন্ত্রণা দূর কইরা দাও তুমি আমার হইয়া রে ॥
এ বিশ্বে বিরাজ করো বহুরূপ ধরিয়া
কাঙাল উকিলের কি আছে শক্তি তোমায় লয় চিনায়া রে ॥
২২
ও তুমি মথুরার রাজা পাইলে কী মজা
কুজায় তোমারে দিলো কী ধন
বন্ধু রে এখন আমায় চিনবে কেন।
ও তুমি ব্রজে থাকিতে ধেনু চরাতে
চুরি করিতে ননী-মাখন,
তুমি রাখালের সনে ঘুরতে বনে বনে
মারিতে পরানে নয়নবাণ।
এই কী রে স্বভাব স্বভাবের অভাব
সকলের অভাব করো পূরণ,
কাঙাল উকিলের দোষে তোমার প্রেমপরশে
চিনতে পারলাম না মতি-কাঞ্চন।
২৩
ও প্রাণনাথ পার করো নিজ গুণে
পাতকীর বন্ধু তুমি আমি শুইনাছি কোরানে।
ভবসিন্ধু পারি দিলো যে বা ছিল ধনী
এপারে রহিলাম আমি কলঙ্কিনী।
গুণমন্ত্রী যে বা ছিল পার হইল তার গুণে
আমি পাপীর লক্ষ্য নাই তোমার চরণ বিনে।
রাহমাতুল্লিল আলামিন ভবে জাহের করিলা
মুহম্মদ নামেতে উম্মত উদ্ধারিলা।
বেলা গেল সন্ধ্যা হইল সকলেই পার হইল
ভবনদীর পারে তোমার উকিল রহিল।
২৪
ও বন্ধু আয় আয় রে আয়
নিরলে বসিয়া তোরে প্রাণে দেখিতে চায় রে ॥
দেখা দিয়া প্রাণের বন্ধু রাখো রে জীবন
পাতকীর পরান তুমি নির্ধনিয়ার ধন রে ॥
এবার না আসিলে বন্ধু আর আসিবে কবে
মানুষ দুর্লভ জনম আরনি লইবে ভবে রে ॥
সয়ালের দয়াল তুমি, তুমি হও রাসুল
মোনাজাত মাগি দরগায় করবায়নি কবুল রে ॥
উকিল মুনশির কী ধন আছে তোমার চরণ বিনে
আর কার কাছে দাঁড়াইব জীবন-মরণে রে ॥
২৫
ওরে ও বনের কোকিল
কোকিল আমার বন্ধুরেনি চিনো
তুমি দাঁড়াইয়া যাও শুনিয়া রে কোকিল
দুঃখিনীর বেদন রে।
পাখা তোমার আছে বলে উড়ে যেতে পারো
উড়ে গিয়া তোমার সখা তুমি দেখিতে যে পারো।
আসার পথে চাইয়া থাকি চাতকের মতন
কবে আসবে বন্ধু আমার জুড়াইতাম জীবন রে।
দিবানিশি জলে ভাসে আমার দুই নয়ন
বন্ধুর লাগি কেন্দে কেন্দে গেল উকিলের জনম রে।
২৬
করিলে না চিন্তা খুঁজিলে না পন্থা
মইলে কী হবে গতি রে।
আসিয়া ধরায় কত কষ্ট পায়
নবিজি শুধু উম্মতের চিন্তায়
যাহারই কারণ সৃজিল ভুবন
দোস্ত ডাকিলেন জগৎপতিরে।
পাপ-পুণ্যের যেদিন হইবে ওজন
সঙ্গে নিবেন নবি পাক-পাঞ্জাতন
বলবেন আমার উম্মত গোনাহগার
মাফ করো পরোয়ার
কমতি হবে না এক আনা রে।
কেন রে উকিল আসিয়া ধরায়
লাগলে না নবিজির আওলাদের সেবায়
করিলে না কর্ম বুঝিলে না মর্ম
এখন কেন কান্দো দিবারাতি রে।
২৭
কলঙ্কের ডালি মাথায়
ঘোরো গিয়া বন-জংলায়
তারেনি কেউ সহজে পায়।
আগে তুচ্ছ করো ঘরবাড়ি
আরচালা টিনের চৌকারি
কাজ কিরে তোর পাকাবাড়ি
বাসা করে রও নিরালায়।
কুলমানের গৌরব ছাড়ো
উঁচা-নিচা সমান করো
ভাবের ঘরে তারে ধরো
থাকে না সে বালখানায়।
প্রেমনদীর দক্ষিণ ধারে
মুন্সিগঞ্জের বাজারে
উকিলে কয় দেখলে না রে
কত রঙের খেলা খেলায়।
২৮
কাম-নদীতে হুঁশে বাইও তরি
ধার চিনিয়া সাঁতার দিলে
ঘটবে না বিপদ ভারি।
যখন নদীর জোয়ার ওঠে
ঢেউ গিয়া আকাশে ওঠে
কত নদ-নদী জলে ভাসে
ডুবায় কত ঘরবাড়ি।
একটি নদীর তিনটি সুতা
আছে তিন গাঙের মাথা
তিন সুতাতে হরফ তিনটা
আলিফ লাম মীম যোগ করি।
বিরহী উকিলের ইচ্ছামতে
কাম-নদীতে বাইতে বাইতে গো
দেহেতে ধইরাছে রোগে
ঠিক নাই কোন দিন যাই মরি।
২৯
কার সনে করিয়া প্রেম তুই হইলে রে পাষাণ
নিঠুর কালাচান।
যাও বন্ধু থাকো দূরে এসো না আর রাধার ঘরে
জুঠা-হাতে ছুঁইও না রে বাটায় ভরা পান।
আমায় তুমি বলেছিলে
যাইবে না আমারে ফেলে
এখন বুঝাইলে তুমি কালার মনপ্রাণ।
কাঙাল উকিল তোমায় জানাই
তুমি আমার প্রাণের কানাই
মিনতি করিয়া শুনাই কইরো না হয়রান।
৩০
কালমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদ রাসুল
ওই নাম জপো সদায় রে মন হয় না যেন ভুল।
কালমা শাহাদাতে
ইসমে আজম মিশা তাতে
মুক্তা যেমন ঝিনুকেতে
বাছিয়া তারে তোল।
ত্রিশ পারা কোরান পড়িয়া
পায় না তারে কেউ খুঁজিয়া
সহজে লও রে বুঝিয়া
বর্জকে চিনো মূল।
ইসমে আজম কারে বলে
জানে না কাঙাল উকিলে
দয়াল জাহাগীরের দয়া বলে
পাই যেন তার চরণ ধুল।
৩১
কালো কোকিল রে
ওরে কোকিল কুহু কুহু স্বরে
কারে ডাকিছ বারেবারে।
তুমি কালো আমার বন্ধুও কালা রে
ওরে কোকিল তাই তো বলি তোমারে
তুমি আর ডাইকো না বারেবারে
দিবারাত্রি ভরে রে।
আমার বন্ধু চিকন-কালা রে
ওরে কোকিল থাকে মধুপুরে
ব্রজ হতে মুক্তা-মণি
নিল হরণ করে রে।
তোমার দুটি পাখা আছে রে
উড়ে গিয়ে সাধ মিটাইতে পারো
এই উকিলের নাই রে পাখা
ঘরে বইসা কান্দি রে।
৩২
কী রূপ দেখে আইলাম সই গো সুরধুনীতে
এক মুখে পারি না সই গো কালো রূপ তার বর্ণিতে।
একদিন সন্ধ্যাবেলাতে
হায় গো আমার কেহ নাই সাথে
একাকিনী গিয়েছিলাম সুরধুনীতে
জলে ঢেউ দিয়া রূপ দেখলাম সই গো
রূপ লাগল আমার হিয়াতে।
ও রূপ খচিত কাঞ্চন
হায় গো কী গৌরবরণ
কোটি চন্দ্র যোনির রূপ ভুবনমোহন
চান্দে চান্দে চান্দ পাইতেছে সই গো
উকিলের মনমৃগ চায় তারে ধরিতে।
৩৩
কুটুম পাখি রে
কুটুম কুটুম বলে ডাকো কারে
আমার কুটুম কোন দিন আসিবে
খবরনি তার রাখো রে।
আমার কুটুম কইয়া গেল
আশায় আশায় থাকো
আসি আসি কইরা থুইয়া গেল
চৌরাশির ফাঁক রে।
যে দারুণ শেল দিয়া গেল
মুই দুঃখিনীর বুকে
বুকের দুঃখ মুখে কই না
ডরাই পাড়ার লোকে রে।
আমার কুটুম চিকন-কালা
দেখলে রয় না দুখ
এই উকিলের ভাগ্য মন্দ তাই
কালা হইল বিমুখ।
৩৪
কুটুম পাখি রে
প্রেমপত্র লইয়া যাও বন্ধের বাড়ি
যে আমার জীবন-যৌবন কইরা নিল চুরি রে
পাখি তোরে বিনয় করি পত্র পৌঁছাইও তাড়াতাড়ি
কইও তারে গোপনে
তার লাগিয়া কান্দে এ রাইকিশোরী রে।
বিরহী উকিলের কিবা উপায় পাখা যদি থাকতো ডানায়
উড়িয়া বেড়াইতাম হাওয়ায়
বন্ধের তালাশ করি রে ।
৩৫
কুটুম পাখি রে ওরে পাখি
কুটুম কুটুম বলে
কারে তুমি ডাকিছ
বসি গাছের ডালে রে।
আমার কুটুম শ্যামকালা রে
ওরে পাখি বসি কদমডালে
দিবানিশি বাজায় বাঁশি
রাধা নাম বলে রে।
বাঁশির সুরে পাগল করে রে
ওরে পাখি রইতে না দেয় ঘরে
জল ভরিবার ছল করিয়া
যাই জল আনিবারে রে।
বহুদিন হলো গত রে
ওরে পাখি শ্যামবন্ধু নাই দেশে
উকিল পাগলা আর কতকাল
থাকিব বিদেশে রে।
৩৬
কুলমান যৌবন দিলাম বিসর্জন
দেহ কুলমান আমার দিলাম তারে
যার নয়নে লাগলো যারে।
আমারে ছাড়িয়া যায় রে শ্যামকালিয়া
রইলো ভুলিয়া কুজারই ঘরে,
শোনো কুজাকামিনী রাধা কলঙ্কিনী
কালো রূপ জানি সাধন করে।
প্রেমিকের বাহার ফরহাদ বেকার
কাটিল পাহাড় যার খাতিরে,
পাহাড় কাটিয়া মূর্তি বানাইয়া
শিরি নাম ধরিয়া ডাকতো তারে।
প্রেমের বিষয় লাইলি তো কম নয়
চিরিয়া হৃদয় দেখায় মজনু রে,
মজনু আশিকের দেওয়ানা খোদারেও চিনে না
লাইলি লাইলি নাম জপে অন্তরে।
তৈমুর বাদশার বালিকা নামে জুলেখা
স্বপনে দেখলো ইউসুফ নবি রে,
জুলেখা আগে ছিল ছুড়ি পরে হইল বুড়ি
ইউসুফের রূপ ছিল তার অন্তরে।
বাউল উকিলের আশা কত ভালোবাসা
মিটলো না এই সংসারে,
আর যে মিটে না মিটাইতে চাইও না
মিটে যে একদিন রোজহাশরে।
৩৭
কোকিল রে কোন দেশে উড়িয়া যাও বলো
তুমিনি বলিতে পারো আমার বন্ধু কোথায় রইল ॥
পাখা তোমার আছে বলে যথায় ইচ্ছা চলো
কেন আমায় দারুণ বিধি পাখা নাহি দিলো ॥
একাকিনী চলছো রে কোকিল সঙ্গী কোথায় রইল
তোমার দশা আমার দশা একদশা ঘটিল ॥
সকল দুঃখ উকিলের বুকে ফুটিয়া রহিল
অনুমানে বুঝলাম রে আমার মরণ সামনে আইলো ॥
৩৮
খোদা দুঃখ দিয়াছ তুমি যারে,
বুক ভরা যার দুঃখ মলিন তাহার মুখ
দুঃখ বিনে সুখ নাই এ সংসারে।
জলে বানলে ঘর তাতেও জ্বলে রে আগুন
পুড়িয়া দালানকোঠা হয় রে ছালি চুন,
যার কপালে যেদিন লাগে রে আগুন
লোহার ঘরেতে ঘুণ ধরে রে।
বাণিজ্যের নামেতে ঘুরি নানান দেশে
কিনিলাম খাঁটি সোনা নিজ হাতে বাইছে,
আমার কপাল দোষে হয় তা রাং দস্তা সিসে
হিরা বেচলাম জিরার দরে রে।
যার ঘরে প্রবেশ তুমি করো ব্যাধি
সে মরে আর মরে পুত্রপুত্রাদি,
কন্যা ইত্যাদি জামাতাও থাকে যদি
পোষ্য পুত্রও তার মরে রে ।
খেতে ফলে না ফসল বৃক্ষে ধরে না ফল
দুগ্ধবতী গাভি হয় দুগ্ধহীন সকল
পুকুরে নাই রে জল উকিলের সকলই বিফল
পানি বিহনে মাছ মরে রে ।
৩৯
গৌরা তুই আমারে রে
পাগল বানাইলে গৌরা রে
অনাথের নাথ গৌরা রে।
পাগল বানাইলে গৌরা রে
আরেও গৌরা শান্ত না করিলে
অকূলারে দিয়া কূল
আমায় অকূলে ভাসাইলে রে।
বলেছিলে স্বর্ণ দিবে রে গৌরা
আরেও গৌরা রূপাও না দিলে
তামা আর পিতল দিয়া
অবলা ভুলাইলে রে।
তুমি সর্প হইয়া দংশো গৌরা রে
আরেও গৌরা ওঝা হইয়া ঝাড়ো
তুমি ঝাড়িয়া বিষ নামাইতে পারো
যদি দয়া করো রে।
গাছের বল বাকল-চাকল রে গৌরা
মাছের বল পানি
দুধের বল ঘৃত ননী
উকিলের বল তুমি রে।
৪০
ঘরের দ্বারে কাল-যম আছে খাড়া
সমন লইয়া রে
ও তুই হেলায় হেলায় দিন কাটাইলে
বিভোর হইয়া রে।
আসিয়া মন এই বিদেশে
ঘুমাইলে তুই কোন সাহসে রে
ও তুই আপনারে পর ভাবিলে
পরের শল্লা লইয়া রে।
আপন ঘরে অমূল্য ধন
তারে তুই করলে না যতন রে
ফুরাইলে তোর বাক্সের ধন
থাকবে অচল হইয়া রে।
শ্রীগুরু হয় পাড়ের কাণ্ডারি
মজো গিয়া পায়ে পড়ি রে
কাঙাল উকিল আর কইরো না দেরি
তোমার সময় গেল ফুরাইয়া রে।
৪১
চান্দমুখে মা বলো নিমাই চান
মা বলিয়া ডাকো রে যাদু
কোলে আয় রে নিমাই চান।
তুই রাধা রাধা বলে পাগল
এই নাম তোরে কে শিখাইল রে
তুই মায়ের কথা ভুলে গেলে
কেমনে হইলে পাষাণ।
কে দিলো তোর হাতে বাঁশি
নিমাই তুই হলে সন্ন্যাসী
বনপোড়া হরিণের মতন
উকিলরে করলে হয়রান।
৪২
ডাকি হে তোমারে বন্ধু রহিলে কোথায়
খুঁজিয়া হইলাম শেষ।
না পাইলাম তোমার উদ্দেশ।
বন্ধু রে, সাজাইয়া বাসর আমি রইলাম একা বসি
না পাইলাম দোসর আমায় দেখল না কেউ আসি
তোর লাগিয়া রে বন্ধু তোর লাগিয়া
কান্দিয়া রজনী করলাম শেষ।
বন্ধু রে, সাপে দংশিল যারে সে বলিতে পারে
কেমন যন্ত্রণা তার প্রাণে যে কি করে
বিষে অঙ্গ রে বন্ধু বিষে অঙ্গ জরজর
ধরলাম পাগলিনীর বেশ।
বন্ধু রে, বলবো দুঃখ কার ঠাঁই এমন দরদি নাই
এ পোড়া পরান কারে দেখিয়া জুড়াই
তোমার উকিলরে বন্ধু তোমার উকিল
পুড়িয়া হইলাম শেষ।
৪৩
ঢেউ দিস না তোরা কালো যমুনায়
তোরা দেখো গো সখি মেলে দুটি আঁখি
আমার কালারে নি জলে দেখা যায়।
আমি জল ভরিবার ছলে
কালা আসিয়া জলে
দেখছিলাম কালারে জলেরই ছায়ায়,
আমি সে রূপের মাধুরী
আজ কেন না হেরি
ঢেউ হইল বৈরী ভাবে বোঝা যায়।
জলের ছল করিয়া
আইলাম কার লাগিয়া
পাইলাম না খুঁজিয়া করি কী উপায়,
আমি কালার চাতরি
বুঝিতে না পারি
এই উকিলের দোষ পাইলে পলকে লুকায়।
৪৪
তুই আমার সম্বল রে বন্ধু তুই আমার সম্বল
পড়িয়া কুমতির ফান্দে দূরে গেল বুদ্ধি-বল।
লক্ষ যোনি ভ্রমণ করে
লইয়াছি মানব জনম
পাইতে তোমারে,
তুমি আমার সহায় থাকিলে
ঠিক থাকে মোর বাহুবল।
উকিলে কয় প্রাণবন্ধু রে
মায়ার বাঁধন করো ছেদন
দেখতাম তোমারে,
নিজেরই কর্মদোষে ধরিয়াছে
মিঠা গাছে চুকা ফল।
৪৫
তুই আমারে দিলে কত জ্বালা
কালা রে
জানতাম না প্রেম কারে বলে
তুই আমারে প্রেম শিখাইলে
প্রেম শিখায়ে নিলে কদমতলা,
শ্যামসোহাগী রাধা
মানে না কারো নিষেধ-বাধা রে
দিনে দিনে দেহ করলাম কয়লা ।
কালা রে
তোর প্রেমেতে অঙ্গ কাতর
নিলে না অভাগীর খবর
দিনে দিনে সোনার অঙ্গ কালা,
একবার যদি পাইতাম তোরে
সকল দুঃখ যাইত দূরে রে
কাঁদে উকিল বসিয়া নিরালা।
৪৬
তুই যদি আমার হইতে রে
ও বন্ধু আমি হইতাম তোর
কাছেতে বসাইয়া তোরে করিতাম আদর রে।
আশার আশে জনম গেল বন্ধু তোর লাগিয়া
প্রেমাগুনে অন্তর পোড়ে বন্ধু তোর লাগিয়া রে।
নয়ন জলে বুক ভেসে যায় বন্ধু তোর লাগিয়া
প্রেমবিষে দেশ-বিদেশে ঘুরি তোর লাগিয়া রে।
বিধি যদি দিত পাখা দেখিতাম উড়িয়া
তোমার দেখা পাবো আমি কোনবা দেশে গিয়া রে।
উকিল মুনশির মনের আশা কে দিবে পুরাইয়া
তুই বিনে এই অধমেরে কে নিবে তরাইয়া রে।
৪৭
তুমি আমায় বানাইলা দোষী
ওরে কালাচান
তুমি আমায় বানাইলা দোষী।
বন্ধু রে, তোমার হাতে হাত ধরি
চোখে চোখ নেহারি
অধরে অধর মিশামিশি
বুকের উপর বুক রাখিয়া
মুখের উপর মুখ তুলিয়া
কত রঙ্গে করলা হাসাহাসি।
বন্ধু রে, আমার বলতে যা আছিল
দিতে বাকি নাহি রইল
তুমি জানো কম আর বেশি
বাকি শুধু আছে প্রাণ
চাহিলে করিতাম দান
নিতে বাকি আছে মোর পরানি।
বন্ধু রে, মনে তো মানে না মানা
মিটাইলে না আর বাসনা
গলে বাঁধা আছে প্রেমফাঁসি
তোমার পিরিতের এই ফলাফল
শেষে দিও তার প্রতিফল
তোমার উকিল ডুবি কিম্বা ভাসি।
৪৮
তুমি বিশ্বাস ভক্তি নিয়া দেখো চেষ্টা করিয়া
মানুষনি একটু হইতে পারো
মরণের আগে তুমি একবার মরো।
আগে শুদ্ধ করো মন
ভজো গুরুর চরণ
তোমার মতো ধন অর্পণ করো,
তোমার মনপ্রাণ দিয়া
পুঁটলি বানাইয়া
বিনামূল্যেনি সে ধন বিকাইতে পারো।
যদি পায়ে দেয় ঠেলিয়া
যাও তুমি পড়িয়া
দিও না ছাড়িয়া জড়াইয়া ধরো,
তুমি করো মালির কর্ম
হবে প্রেমের জন্ম
দেখো প্রেমের ফুলনি ফুটাইতে পারো।
সোনা পিতল এক দোকানে
বিক্রি করে মহাজনে
চিনিয়া সোনা খরিদ করো,
কিনতে পারলে সোনা
লাভ হবে দুনা।
লোকসান দিয়া উকিল বসল ঘর।
৪৯
তোমারে দেখিবার মনে লয় সুজন বন্ধু রে
তোমারে দেখিবার মনে লয়।
তোমার বিরহ অনলে
সদায় আমার অঙ্গ জ্বলে
দুই নয়নে ধারা সদায় বয়।
যদি তোমার মনে চায়
আর কাঁদাইও না আমায়
তোমায় ছাড়া উকিল কেমনে রয়।
৫০
তোমারই নয়নে আমার নয়ন রাখিয়া
তোমার কালো রূপ আমি হেরেছি,
জীবনে কাউকে বাসিনি ভালো
শুধু তোমারে বেসেছি।
হেসে ভেসে যবে পাপিয়ার স্থান
তোমারই মুরতি জোছনা মাখান,
ভাসে অনলে সলিলে
আঁখি ধারাতলে
যখন যেভাবে চেয়েছি।
তব রূপে ধরা আলোকিত বলে
পূর্ণিমার চাঁদ নিভে গেল জলে,
সেথা নিশীথে তোমার হাসিতে
তোমাকে ভালোবেসেছি।
পাষাণের মতন তুমি হইও না নির্দয়
উকিলের বুকে কত প্রলয় আর উদয়,
তবু তোমারই ছবিটি আঁকিয়া
আমার হৃদয় মাঝারে রেখেছি।
৫১
তোর আশা করিয়া রে বন্ধু
বাসর সাজাইলাম রে
সারা নিশি পোহাইলাম
দুই নয়নের জলে।
বন্ধু রে
ইহাই যদি ছিল মনে
কেন প্রেম বাড়াইলে রে বন্ধু
কেন প্রেম বাড়াইলে
চিরসুখী হইও তুমি
এ দাসী মরিলে।
বন্ধু রে
আমি ভুল করিয়া ঘুমাইলাম
কেন জাগাইলে রে বন্ধু কেন জাগাইলে
জাগিয়া না পাইলাম দেখা
কোথায় লুকাইলে।
বন্ধু রে
প্রভাতকালে কুহু সুরে
কোকিল ডাকে ডালে রে বন্ধু
কোকিল ডাকে ডালে
কোকিলেরই ডাকে উকিল
পোড়ে প্রেমানলে।
৫২
ত্রিফলা একটি ফুল ফুইটাছে
ফুলের দুইটি পাতা কী সুন্দর গাঁথা
মাঝখানে একটি কলি ধইরাছে।
প্রেমের বাগানে অতিশয় গোপনে
রাত্রদিনে সদায় ফুল জ্বলিতেছে,
বাইন-সুতার বেড়া ফুল আছে ঘেরা
ফুলের মালিক সদায় ফুল দেখিতেছে।
প্রতি মাসে মাসে সপ্ত দিবসে
তিন রকম রস ফুলে পড়িতেছে,
সেই ফুলের গন্ধে সেই সাত দিনে
যায় যদি কেহ মরণ আছে।
সেই ফুলের লোভে ঘুরে মরে
সবে ফকির সাধু কত জগতে আছে
যার মনে চায় পান করো সদায়
উকিলের সাধ ভবে মিটিয়াছে।
৫৩
থাকিতে পাইলাম না যারে
মরিলে কি পাওয়া যায়
মইলাম মইলাম গো
দারুণ প্রেমজ্বালায়।
প্রাণবন্ধুর বিচ্ছেদানলে
সদায় আমার অঙ্গ জ্বলে
প্রেমের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে
নিভাইবার নাই উপায়।
নতুন নতুন পুষ্প দিয়া
বিনা সুতায় হার গাঁথিয়া
আমি রেখেছি সাজাইয়া
দিবো মালা কার গলায়।
যে জ্বালা দিয়াছো চিত্তে
খুলিয়া দেখাইব কারে রে
বিনা দোষে উকিলে
বনবাসে দিন গুজরায়।
৫৪
দয়াল মা মাগো
তোর ছেলে মা কান্দে তোর দায়।
মাগো মা
ছেলের কান্দন শুনিয়া
কেউ যদি লয় কোলে তুলিয়া
তখন ছেলে মুখ পানে চায়
পরের মায়ের মুখ দেখিয়া ছেলে কান্দন বাড়ায়।
মাগো মা
ছেলের কান্দন শুনিয়া
মায়ে যদি লয় কোলে তুলিয়া
তখন ছেলে মুখ পানে চায়
মায়ের চান্দমুখ দেইখা ছেলে হাত-পা নাচায়।
মাগো মা
উকিল তোমার পাগলা ছেলে
ভাসাইলে গহিন জলে
তোমার ছেলে কুম্ভীর রে ডরায়
দয়াল মা কাছে না থাকলে তোমার ছেলেরে কে বাঁচায়।
৫৫
দুঃখ দিতে ভালোবাসো জানিলাম এবার
তোমার দান করা দুঃখ বুক পাতিয়া নিব অনিবার।
বন্ধু রে, দুঃখ-সুখে তুমি রাজা
আমার মাথে দেও বোঝা
এই দুঃখেরে ভয় করি না আর,
তুমি সুখী করো শত শত
দুঃখ আমার আছে কত তব
পদে স্থান রাখিও আমার।
বন্ধু রে, এ জগতে সুখী যারা
দুঃখ মনে পায় না তারা
দুঃখ প্রাণে সহিবে না তার,
আমি হই দুঃখের ভাগী
দুঃখ রাখিও আমার লাগি,
উকিলের দুঃখ কে বুঝিবে
তুমি না হইলে আমার।
৫৬
দুঃখ রইল আমার বুকেতে
পারলাম না সাধ মিটাইতে।
আমার রূপ গেল যৌবন গেল
গেল রে বন্ধুর আশাতে।
আমারে করিয়া দোষী
বন্ধুয়া হইল বিদেশি রে
আমি দাসী দিবানিশি ভাসি রে
নয়ন জলেতে।
হায় হায় রে নয়নের পানি পানি রে
মজাব যত দিনরজনী রে
পাইতাম যদি তার চরণখানি
লাগতাম তার সেবাতে।
তোমরা সখি আমার হইয়া
বন্ধুর সনে দেও মিলাইয়া গো
আমার বন্ধুর নামের দুইটি অক্ষর
লেখো উকিলের সিনাতে।
৫৭
দুঃখিনীর বন্ধু রে অভাগীর বন্ধু রে
একবার সামনে দাঁড়াও
কী কারণে আমার সনে করো না রাও রে।
তোমারই বিরহানলে সদায় জ্বলে গাও
তবে কেন এ দাসীরে শতবার কাঁদাও রে।
ভুবনমোহন রূপে জগৎ ভোলাও
অভাগিনীর কী দোষ পাইয়া হঠাতে লুকাও রে।
চরণধূলি মাথায় দিতে যদি দুঃখ পাও
ধুলায় উকিল শুয়ে আছি বুকে রাখো পাও রে।
৫৮
দূর গো দেশের মাঝি ভাই
ছাড়ছ রঙিন তরি
আমায়নি নিবা নাইওর
যাইতাম বাপের বাড়ি।
খাইতে গেলে ভাত মিলে না
পরনে নাই কাপড়
আর কত দিন রইবো মাঝি
বোবা স্বামীর ঘর,
ভিজা মাটি ভাঙা চাটি
উপরে নাই মশারি।
চারি বেহারায় নিবে আমায়
বাঁশের পালঙ্ক করি,
যতন করে রাখবে আমায়
সাড়ে তিন হাত বাড়ি,
উকিল বলে নাইওর গেলে
আসবো না আর ফিরি।
৫৯
দোষী না দোষী না রে বন্ধু
বন্ধু দোষী না তোমারে
যা কিছু হইয়াছে আমার
এই কপালের ফেরে রে।
আজ আসবে কাল আসবে বলে
গেলা বৃন্দাবনে
কাল বুঝি তোমার কালে খাইল
তুমি না আসিলে কেনে রে।
কাঙাল উকিল মুনশির কপাল মন্দ
ঘুরি দেশ-দেশান্তরে
একবার তুমি দিয়ে দেখা
যা খুশি করিও রে।
৬০
ধরলাম পাড়ি বিষম দরিয়ায় দীনবন্ধু রে
ও বন্ধু রে
যারে তুমি পারো করো
ডোবে না তরি তার
আবার কত সাধুজনায় ডুবে মারা যায়,
ভবদরিয়ার ঢেউ দেখিয়া
প্রাণ আমার ওঠে কাঁপিয়া
সামনে ভীষণ আঁধার দেখা যায়।
ও বন্ধু রে
অকূলের কূল গো তুমি
অবান্ধবের বান্ধব তুমি
আবার শুনি তোমার নামের দয়ার সীমা নাই,
তুমি যারে দয়া করো
ভয় নাই অকূল সাগর
ছাড়লাম তরি কূলেরই আশায়।
ও বন্ধু রে
ভাবের বৈঠা ধরল যারা
প্রেমের সারি গাইল তারা
ভক্তি রসের বাদাম দিয়া যাইতেছে পার হইয়া,
বিশ্বাসে পাইল ধন
গুরুর পদ করে ভজন
উকিল শুধু রইলাম তোমার আশায়।
৬১
নগরবাসী রে
তোমরা সুখে থাকো রে
আমি মইলে দেখাইয়া দিও প্রাণবন্ধু রে।
নগরবাসী রে
কি জানি কী রোগ হইয়াছে আমার অন্তরে
খাইলাম কত ওষুধ-বড়ি এই রোগ দিনে দিনে বাড়ে।
নগরবাসী রে
ভাগ্যগুণে আইলে কইও হাতে ছুঁইত মোরে
মইলে পরে মৃতদেহ দেখবে নয়ন ভরে।
নগরবাসী রে
বন্ধুর প্রেমে যে মইজাছে এই ভবসংসারে
উকিলে কয় প্রেমের মরা মরিলেও না মরে।
৬২
নবগৌর হেরে
আমার মন কেমন করে গো
মন চলে না গৃহে যাইতে
পারি না আর কুল রাখিতে,
গৌরার রূপে আমায় পাগল করলো গো সখি
যাবো গৌরার সঙ্গেতে।
যে অবধি গৌর হেরেছি
আপন হস্তে প্রেমফাঁসি গলায় লইয়াছি,
গৌরার প্রেমফাঁসি শক্ত ভারি গো সখি
ফাঁসি লাগল আমার গলেতে।
আমি কুল-কলঙ্কের প্রসাদ সাজাব
যে দেশে কলঙ্ক নাই সেই দেশে যাবো,
আমি কুল পুড়িয়া কয়লা করবো গো সখি
আমি উকিল ভাসাবো কুল জলেতে।
৬৩
নয়ন কেন হইল রে বৈরী
আমি ভুলিতে পারি না ভোলা তো যায় না
দেখা দিল না শ্যাম বংশীধারী।
এমন দরদি থাকত যদি
আনিয়া দিত তারে তাড়াতাড়ি,
বন্ধুর কেমন ভালোবাসা
করিতাম জিজ্ঞাসা
দিয়া আশা কেন করল চাতরি।
থাকলে পাখা করতাম দেখা
উড়িয়া যাইয়া বন্ধের বাড়ি
নিয়া আমার মন
না করল স্মরণ
না জানি উকিল কোন দিন মরি।
৬৪
নয়ন তুলে চাও গো কিশোরী
মান ভাঙো গো রাধে আমি তোমার পায়ে ধরি ॥
কিশোরী গো, অপার মহিমা তোমার বুঝিতে না পারি
কখনো রাজার নন্দিনী কখনো গো পিয়ারি ॥
কিশোরী গো, চূড়া-ধরা মোহন বাঁশি দিয়া বিনয় করি
ভবনদী পার হতে দাও চরণ তোমারই ॥
কিশোরী গো, মানবজীবন উদ্ধারিলা হইয়া কাণ্ডারি
সয়ালকে করিলা পার উকিল কত ভারী ॥
৬৫
নয়ন পলক না থাকিলে
হেরিতাম রূপ নিরবধি,
কেন গো সই দুই নয়নের
পলক হইল বাদী।
চিত্রপটে যা দেখলাম সখি
শয়নে স্বপনে সেই রূপ ভুলিতে না পারি,
আমি অচেতনে ছিলাম ভালো
চেতন হইয়া বসে কাঁদি।
জল ভরিতে আইলাম গো সখি
জলের ছায়ায় রূপ দেখিতে ঢেউ হইল বাদী,
উকিলে কয় মনের খেইদে
দাগা দিলো দারুণ বিধি।
৬৬
পরকে দোষ দেই না রে কেবল
আমি নিজেই হইলাম পদ্মপাতার জল।
ওই নায়ের ব্যাপারী লড়া
কর্মদোষে ডুবলো ভরা
হায় গো নায়ের মাঝি-মাল্লা রে
দোষ দেওয়া বিফল।
যখন রতি হবে স্থিতি
আমার অবশ্যই মিলিবে পতি,
হায় গো আমি মিঠার লোভে খাইয়াছি গরল।
কাঙাল উকিল কেন্দে বলে
ভাণ্ডারের ধন সব দিলাম ফেলে,
হায় গো আমি অচল পয়সা
কেমনে হই সচল।
৬৭
পরের লাইগা কান্দে আমার মন
সখি পর কি কখনও হয় আপন ।
সখি রে
যখন কালায় বাজায় বাঁশি
তখন আমি রানতে বসি
ধোঁয়ার ছলে কান্দি বসি গো সখি
হলদি বলে দেই লবণ।
সখি রে
প্রেমপিরিতের এমনই ধারা
জাতিসাপের লেজে ধরা
উল্টিয়া মারিলে কামড় রে
সখি বাঁচে না রে এ জীবন।
সখি রে
যে করে পরেরই আশা
তার কপালে এই দুর্দশা
আমার দশা দেখো বর্তমানে,
উকিলে কয় শ্যাম দয়াময়
দেখা দিও শেষের দিনে।
৬৮
পরের লাগিয়া রে পুড়ে সদায় হিয়া রে
আগে না জানিয়া প্রাণ সঁপিলাম যারে।
সখি গো, যাইচে দিয়াছি আমি
জাতি কুল যৌবন সই গো
হিয়ার মাংস কাটিয়া দিলে
পর কি হয় আপন রে।
সখি গো, মুখ দেখিলে দুঃখ বাড়ে
আগে তো না জানি সই গো
ভুলিতে পারি না হায়
সেই চান্দ মুখখানি রে।
সখি গো, পিঞ্জরের পাখি যেমন
উড়িতে না পারে সই গো
উকিলের এমনই দশা
ঘটিল সংসারে।
৬৯
পাগল করলো সে আমারে
আমি কোথায় গিয়া পাবো তারে।
আমারে হরে নিল প্রাণে জ্বলন্ত আগুনে
আগুন জ্বালাইয়া গেল হৃদয়মন্দিরে,
আমি যারে সামনে পাই
তার কাছে জিগাই
কেউ না বলে দেখছি তারে।
বন্ধু মন নিতে জানে
দেয় না ধরা কেনে
হয়েছে বেইমান কোন বিচারে,
কয় উকিল পাগলায়
কান্দি যদি সদায়
তার বিচার যে একদিন করে।
৭০
ফিরিও না গো চাইয়া থাকি
আমারে দেখো তোমারে দেখি।
বহুদিন পরে হইল দেখা
হৃদয়ে তোমায় রাখিব একা
ছাড়ব না গো পরানসখা
করো না তুমি লুকালুকি।
পূজিতে চরণ নাহি কোনো ধন
রেখেছি শুধু এ দাসীর জীবন
পুরাব আমার মনের আকিঞ্চন
জুড়াব কাঙাল উকিলের আঁখি।
৯০
ফুলের গন্ধ লাগল না মোর গায়
প্রাণ যায় রে যায় ॥
ও মন রে
আওয়ালে ফুটিল ফুল আখেরে পাঠায়
কেউ না ধরতে পারলো সে ফুল ধরল আমিনায় ॥
ও মন রে
মক্কাতে ফুটিল ফুল মদিনায় লুকায়
চারিদিকে চার আছাব কান্দে ধরিয়া গলায় ॥
ও মন রে
আয়শা সিদ্দিকা কান্দে কী করি উপায়
আজ হতে আসমানি খবর বন্ধ হইয়া যায় ॥
ও মন রে
হাসান আর হোসেন কান্দে ধুলাতে লুটায়
আজ হতে নানাজি আমার কোথায় চইলা যায় ॥
ও মন রে
ফুলের গন্ধে কত অলি ঘুরিয়া বেড়ায়
উকিল মুনশি আছে আজও সেই ফুলের আশায় ॥
৭২
বন্ধু আমার নির্ধনিয়ার ধন রে
বন্ধু রে আমার,
যারে দেখলে জুড়ায় পরান আমার
না দেখিলে মরণ রে।
যে অবধি বন্ধুহারা
হয়েছি পাগলের ধারা গো
দুই নয়নে বহে ধারা
কে করিবে মোচন রে।
আইলো না শ্যাম প্রাণ থাকিতে
চিতার আগুন জ্বলে চিতে গো
ঠেকাইয়া দারুণ পিরিতে
বন্ধু না করলো স্মরণ রে।
দারুণ বিধি হইলো বাদী
এলো না শ্যাম গুণনিধি গো
কাঙাল উকিলের নিরবধি
সার হইলো রোদন রে।
৭৩
বন্ধু রে, আমি মইলে কী লাভ হবে তোর,
মইলে যদি হও সুখী প্রাণ নিতে রেখো না বাকি
পাখি উড়ে শূন্য হোক পিঞ্জর ও বন্ধু রে।
আমার দেহপিঞ্জর হলে শূন্য
লোকে তোমায় বলবে ধন্য রে
এই মরণের করি না আর ডর ও বন্ধু রে।
বন্ধু রে, তোমার সনে করিয়া পিরিতি
আমার আঁধার হলো চোখের জ্যোতি
পুড়িয়া ছাই করিলাম পাঞ্জর,
এই বুঝি তোমার চাতরি
কেবল ছাড়াইলা ঘরবাড়ি
ভাবে বুঝি উকিল তোমার পর বন্ধু রে।
৭৪
বিনামূল্যে বিকাইয়াছি রাঙা চরণে
ভুলো না রে সোনাবন্ধু অধীনজনে।
সরল পিরিতি রে সরল পিরিতি
জানলে পরে লোকে হবে দুর্গতি
ঘরে আছে কাল-ননদী শুনলে মারবে পরানে।
তোমার লাগি যত জ্বালা সই রে যত জ্বালা সই
লোকালাজে ভয়ে আমি পোকারিয়া না কই
তোমার গোপন পিরিতি লোকে যেন না শোনে।
তোমার লাগি মানে দিলাম ছাই রে মানে দিলাম ছাই
তুমি বিনে এই উকিলের আর কেহ নাই
ধন্য হইত জীবন ঠাঁই দিলে তোমার চরণে।
৭৫
ভাটির দেশের মাঝি ভাই রে
নাও বাইয়া যাও ভরা গাঙে দিয়া
বন্ধুর খবর জানলে তুমি কইয়া যাও ভিড়াইয়া রে।
আমার বাড়ির সামনে ভরা সুরমা নদী
আমি জল তুলিয়া স্নান করাইতাম আবার আসত যদি
আমি মিষ্ট মিষ্ট ফল রেখেছি বন্ধুয়ার লাগিয়া রে।
আমি করি যার ভরসা সে পুরায় কার আশ
আমার চোখের পানি দূর হইল না কেবল বারোমাস
মিছা কলঙ্কিনী উকিল পিরিতি বাড়াইয়া রে।
৭৬
ভিখারি দুয়ারে খাড়া ভিক্ষা দিয়া বিদায় করো
ঘরের মালিক রে ক্ষুধায় ভিখারি মইলে কলঙ্ক তোর ॥
ও মালিক রে, বান্ধিয়া রঙমহল করতেছ বসতি
ভিক্ষা চাইলে রাও করো না এই কি তোমার রীতি
যার কাছে যাই বলে ভিখারি সর্ রে সর্
কোরানে বলেছ তুমি কেউ নাই আপন-পর ॥
ও মালিক রে, তোমার কাছে আছে জানি মধু আরো চিনি
শরাবান তহুরা আছে কাওসারের পানি
তোমার কাছে হুর ফেরেস্তা গেলেমানের আদর
যার কেহ নাই তুমি তার তরে হও অগ্রসর ॥
ও মালিক রে, নাম বড়ো যার কাম বড়ো তার সদায় হওয়া চাই
তা না হলে এ কলংক রটিবে ঠাঁই ঠাঁই
ভিক্ষার ছলে কাঙাল উকিল ছাড়লাম বাড়িঘর
একদিনও তো এই ভিখারির না লইলা খবর ॥
৭৭
মন কান্দে রে দিল কান্দে রে
কোথায় পাব তোমারে
প্রাণধন চিকন-কালা।
আগে যদি জানতাম
পিরিতি না করিতাম
বসিয়া থাকতাম একেলা,
যেত সুখে দিন
কেউ না বাসিত ভিন
নীবন বয়সে দিলা জ্বালা।
জীবন যৌবন
দেহ প্রাণধন
সর্বস্ব তুমি কেড়ে নিলা,
আকুল চিত্ত
কাঁদি দিবারাত্র
আর কত সইব অবলা।
তোমারই লাগিয়া
আকুল হইয়া
দিবারাত্রি বাজাই বেহালা,
দাও রে দেখা
হে প্ৰাণসখা
কত কাঁদিব আর উকিল পাগলা।
৭৮
মন কেন আজ কেন্দে কেন্দে ওঠে ভাই রে নিতাই
যার কারণে বাঁশি হাতে তারে কোথায় পাই রে।
গোকুল মাঠে ধেনু চরাই ডাকি সর্বদাই
কোথায় আমার চূড়া-ধরা প্রেমময়ী রাই রে।
পরান বান্ধা যার যেখানে
না-দেখিয়া থাকি কেমনে
বহুদিন হয় ব্রজছাড়া প্রাণে শান্তি নাই রে।
আমার রাই বিরহে আঁখি ঝরে
তনু মন হইল অঙ্গার রে
হায় উকিল কান্দে বন্ধের লাগি
যেমন শ্যাম কান্দে বলে রাই রাই রে।
৭৯
মন চলো যাই আনন্দকাননে
যথায় রাজা প্রজা-দীন-ধনী কোনো ভেদ নাহি মানে।
যথায় গেলে দুঃখ-তাপ হয় অবসান
নিত্যসুখ শান্তি বিদ্যমান সুখ কি সম্মান
দুঃখ কি অপমান সকলই সমান হয় সেখানে।
বিরোধ-বিবাদ মায়া কি মমতা
হিংসা বিদ্বেষাদি নাহি যথা, সাঁই আছেন তথায়
সদায় নাহি কোনো ব্যথা কাহারো মরমে।
জাহাগীর ধন অমূল্য রতন ভজো পাগল মন পরম যতনে,
আরে উকিল তুমি চিনলে স্বামী, দিন গেল তবু অকারণে।
৮০
মনের দুঃখ কই না গো
দরদি মেলে না
যে ডাল ধরি সে ডাল ভাঙে
কোন ডালে আর ভর করি গো।
সাধ করিয়া প্রেম করিলাম রে
জানিয়া আপনা
সর্ব অঙ্গে প্রেমে পোড়া
বন্ধু কি জানে না গো।
আজ আসবে কাল আসবে বলে
করলো বাহানা
কাল কাটালো কুজার ঘরে
একদিন মনে কি পড়লো না।
কর্ম মন্দ নইলে কি আর
দেখা মিলে না
কাঙাল উকিলের জনম গেল
একদিন তো দেখলাম না।
৮১
মরলে না তোরা ভাবের মরা
ভাবের মরা যেইজন মরছে রে অবুঝ মন
গুরুধন লইয়া তারা মারছে গো উড়া।
ভাব আছে যার অন্তরায় ভাসে তার গায়
দেখিলে চেনা যায় আগুনে পোড়া,
ও তার আচার-আলাপনে ভাসে দুই নয়নে
সাক্ষী-প্রমাণে তারে যায় ধরা।
হিংসা-দ্বেষ ছাড়ো কাম রিপু মারো
মরার আগে মরো মানুষ যারা,
আসিয়া ভূমণ্ডলে ঘুমাইয়া রইলে
কামিনীর কামসাগরে ডুবাইয়া ঘড়া।
আসিবে যেই দিন বুঝিবে সেই দিন
সমন এসে থাকবে সামনে খাড়া,
উকিল মুনশি বলে গুরুর নাম নিলে
যমদূত আসিলেও থাকিবে দূরা।
৮২
মাঝি ভাই কই যাও রে
কই যাও বাইয়া তরি
আমারেনি নিতে পারো
যাইতাম বন্ধের বাড়ি রে।
উজান নাইয়া ভাইটাল আইয়া
বইয়া বইয়া ঢেউ গুনি
সোনাবন্ধের কথা জিগাইলে কয়
আমরা কি তা জানি রে।
আর কত দিন নদীর কূলে
থাকিব বসিয়া
চোখের জল নদীর জলে
যাইতেছে ভাসিয়া রে।
মাছে চিনে উঁচা-নিচা
পাইন্যে চিনে ধার
মায়ে জানে পুত্রের বেদন
যার কলিজার সার রে।
এই অভাগীর দুঃখের কথা
কইবার জায়গা নাই
কারো কাছে কইলে কথা
উত্তর নাহি পাই রে।
না লয় মনে ঘরবাড়ি
কান্দে সদাই দিল্
এমনি করে কোন দিন জানি
মরি এ উকিল রে।
৮৩
মায়ের পাও লাড়া ধন বাপে খায়
ভজো গিয়ে মায়ের পায়।
মা হলো জগতের গুঁড়ি
মায়ের পেটে মোহাম্মদ নুরী
মায়ের ভিতর পানি ভরি
মাটি দিয়া মানুষ বানায়।
মায়ের পেটে সারা জাহান
রাখিয়াছেন পাক সোবহান
মায়ের লাগি সবি হয়রান
কেউ মরে কেউ জেলখানায়।
মায়ের ভিতর মধুর চাকে
ভ্রমরা এক গুনগুন ডাকে
যে শুনছে সেই গুনগুনানি
থাকে না হুঁশ দিক-দিশায়।
জলের নিচে পদ্মের চাকা
সেখানে মউলা আছে ঢাকা
বেশি বলা উচিত নয় রে
কিছু কইলো উকিল পাগলায়।
৮৪
মুর্শিদ নামে সারি গাইয়া দিয়াছি সাঁতার
পার করো ডুবাইয়া মারো ভরসা তোমার।
মুর্শিদ আমার পারের কর্ণধার
মুর্শিদ নাম ভরসা করে দিয়াছি সাঁতার
আমি যদি ডুবে মরি কলঙ্ক তোমার।
মুর্শিদ আমার জীবনের জীবন
মুর্শিদ আমার নয়নমণি অমূল্য রতন
তুমি বিনে এ সংসারে কে আছে আমার।
দীনহীন কাঙাল উকিলে বলে
মুর্শিদ তোমার চরণতলে রাখিও মোরে
ইহ-পরকালে মোরে করিও উদ্ধার।
৮৫
রজনী, রজনী পোহাইলো রে সখি
শ্যাম তো কুঞ্জেতে আইলো না।
কুহু কুহু স্বরে রে
ডাকিছে কোকিল শোনো না।
বাসরশয্যা হলো রে বাসি
না আসলো মোর কালো-শশী
বুঝল না বেদনা,
না জানি কার সঙ্গ পাইয়া
আমারে দেখিল না।
জানতাম যদি হইবে রে এমন
তবে কি দেই জীবন-যৌবন রে
আপন জানিয়া,
পর কোনো দিন আপন হয় না রে
ভাবে গেল জানা।
বন্ধু যদি আমার হইত
কান-কথা না কানে লইত
পুরাইত কামনা,
সকল দোষের দোষী উকিল
আর কেউ রে দোষী না।
৮৬
রূপে মারিস না রে কামবাণ
থাকিস রে সাবধান,
হিসাব-নিকাশ পুঞ্জি-পাট্টা
ঠিক রাখিস নায়ের চালান।
রূপের ঘরে কুম্ভীর থাকে
ভক্ষণ করে যদি কুম্ভীরি দেখে রে
মারে মানুষ লাখে লাখে
না জানলে তাহার সন্ধান।
যে রূপে মোর নয়ন-তারা
করুণ রসে বহায় ধারা রে
দমের ঘরে দিয়া তালা
ইল্লাল্লাহু দম টান।
রূপের ঘরে অমূল্য ধন
পাইছে যারা হইছে সুজন রে
কাঙাল উকিল কেন হইল বামন
ধরতে চায় গগনের চান।
৮৭
ললিতে, যাও গো শ্যামকে আনিতে
শ্যাম বিনে কী ধন আছে সখি দেখে নয়ন জুড়াইতে।
ছিলেন শ্যামের আদরিণী শ্যাম গৌরবে গরবিনী
না পেয়ে শ্যাম গুণমণি সখি ঝাঁপ দিব যমুনাতে।
আমার মরণকালে না ভাসাইও গঙার জলে গো
আমায় বেঁধে রেখো নীল বসনে সখি তমালেরই ডালেতে।
যদি আসে কোনোকালে দেখাইও হস্ত তুলে গো
উকিলের মৃতদেহে প্রাণ আসিবে শ্যামসুন্দর দরশনেতে।
৮৮
লিলুয়া বাতাসে প্রাণ না জুড়ায় না জুড়ায়
একা ঘরে ঘুম আসে না শুইলে বিছানায় ॥
নিষেধ করি ওরে হাওয়া লাগিস না মোর গায়
যার পিরিতে পোড়া অঙ্গ তারে মনে চায় ॥
ঘরে আর বাহিরে উকিল ঘুরি সর্বদায়
এমন বান্ধব নাই রে আমার বন্ধুরে দেখায় ॥
৮৯
শোনো রে দারুণ কোকিল চুপ করিয়া থাকো
যেই দেশে তোর প্রেমের মাধব সেই দেশে গিয়া ডাকো।
বন্ধের কথা মনে হইলে ফেটে যায় বুক
না জানি কার আশা পুরায় আমায় দিয়া দুখ।
ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস গেল আইলো রে বৈশাখ
না দেখিয়া কেমনে রবো বন্ধের চান্দমুখ।
উকিলের কপাল মন্দ বিধি হইয়াছে বিমুখ
আমার বন্ধু যদি থাকে সুখে আমি আর চাই না সুখ।
৯০
শ্যামচার আর কতকাল
রবো তোমার আশায়
পাসরিতে নাহি পারি
সদায় জাগে অন্তরায়।
ছেড়ে দিয়া ঘরবাড়ি
পাশরিলাম সহচরী রে
শুধু তোমার আশা করি
কেউ নাই আমার এ ধরায়।
তোমার এই প্রেমযাতনা
অভাগীর প্রাণে সহে না রে
কেন আর এই ছলনা
ভুইলা আছো কার বাসায়।
প্রেমফাঁসি গলে লইয়া
উকিল যদি যায় মরিয়া রে
হয় যদি তোমার নামের কলঙ্ক
দোইষো না শ্যাম তুমি আমায়।
৯১
সখি তোরা কেউ গেলে না রে মথুরা নগর
আনতে আমার প্রাণবন্ধুরে দেখতাম একনজর রে ॥
হাতে বাঁশি মাথে চূড়া এই তো বন্ধের চিন্
নামের মালা গলায় লইয়া সাজলাম দীনহীন রে ॥
মথুরাতে কত নারী স্বামীর গৌরব করে
আমার কি আর লয় না মনে রূপ দেখাইতাম তারে রে ॥
কত কত মানুষ মরে কত কত রোগে
কাঙাল উকিল মরে যাব প্রাণবন্ধুয়ার শোকে রে ॥
৯২
সখি তোরা ধইরা ধইরা নে আমারে ধীরে ধীরে
আমার হাঁইট্টা যাইতে পাও চলে না
দাঁড়াইলে মাথা ঘোরে।
সখি গো সখি তোরা আমার হইয়া
প্রাণবন্ধুয়ারে দে আনিয়া গো
সে বিনে আর পোড়া দেহ কেমনে জুড়াই রে।
সখি গো সখি কলঙ্কিনী বলে সবে
মইলাম আমি লোকসমাজে গো
যে পোড়ায় অন্তর পোড়া
দেখাইবো আর কারে গো
সখি গো সখি তারে যেন আনতে পারো
এই প্রতিজ্ঞা শুধু করো গো
সে বিনে আর পাগল উকিল
দুঃখ জানাই কারে।
৯৩
সখি ধইরো গো আমায়
কৃষ্ণ অনুরাগে যদি আমার প্রাণ যায় ॥
সখি গো, ললিতায় লোলক নেও গো খুলে নেও গো চুড়ি
চন্দ্রায় নেও গো চন্দ্রহার সখা নেও অঙ্গুরি
দেহের বসন নেও গো দেবী চম্পহার
সবাই মিলে পাপিনীরে দেও গো বিদায় ॥
সখি গো, আমি মইলে ওই করিও না ভাসাইও জলে
আমারে বাঁধিয়া রাইখো তমালেরই ডালে
তমাল তো সামান্য নয় গো বন্ধু মনোহর
সেই তমালে আসবে কৃষ্ণ জানিবে নিশ্চয় ॥
সখি গো, আমার অন্তিমকালে থাকিও নিকটে
প্রাণ থাকিতে লইয়া যাইও জাহ্নবীর ঘাটে
কৃষ্ণ নাম দিও লিখিয়া গঙ্গা মৃত্তিকায়
সে নামের সহিত যদি উকিলের প্রাণ যায় ॥
৯৪
সাধের বাজার ভাইঙা যায়
হায় হায় হায়
সন্ধ্যাকালে জিনিস পাওয়া দায়।
মন রে
প্রেমবাজারে বেচাকেনা
মতি রূপা হীরা সোনা
অপ্রেমিক যাইতে পারে না
প্রেমিক যারা তারা জিনিস কিনতে পায়
অবিশ্বাসী কানা যারা তারা বাজারে ঘোরায়।
মন রে
আমায় মায়াবিনী পাইয়া
মারিল সদায় ঘুরাইয়া
কী উত্তর দিব যাইয়া
যেদিন মহাজন জিগায়,
শেষ দিনে উকিল তোমার গো
বলো হবে কী উপায়।
৯৫
সারা জনম কাটাইলাম নগরে নগরে
সুজন বন্ধু রে
আর কী ভরসা মোর অন্তরে ॥
বন্ধু রে, আমি ঘরবাড়ি ত্যাজ্য করি
শুধু তোমার আশা করি
হইলাম বৈরী ঘরে আর বাহিরেও, ও বন্ধু রে
কইতো মন্দ ভাবছিলাম না
তুমি যদি বুঝতে বেদনা
আমার হিয়ার বেদন জানবে কি আর পরে ॥
বন্ধু রে, জানতাম যদি পরে তুমি
আমারে করবে বদনামী
একাকিনী বসে থাকতাম ঘরে, ও বন্ধু রে
কে জানিত দিবে ফাঁকি
করবে সদায় লুকালুকি
জানলে কি আর প্রাণ সঁপিতাম তোমারে ॥
বন্ধু রে, আমার মনে তো মানে না মানা
মিটিল না আর বাসনা
বুঝিলাম আমার কর্মের ফেরে, ও বন্ধু রে
উকিল অপরাধী বলে পায়ে তুমি দিও না ঠেলে
তুমি বিনে যাবো কার ধারে ॥
৯৬
সুজন বন্ধু রে আরে ও বন্ধু কোন বা দেশে থাকো
এই দাসীরে কান্দাইয়া রে
কোন দাসীর মন রাখো সুজন বন্ধু রে।
প্রেম শিখাইয়া চইলা গেলা রে আরে ও বন্ধু
লাগাইয়া মমতা
বুকের ওপর দিয়া গেলা রে
বিনা কাষ্ঠের চিতা সুজন বন্ধু রে।
জ্যৈষ্ঠ মাসে টলমল করে আরে ও বন্ধু
কচুপাতার পানি
সেই মতন ঝরিয়া পড়ে রে
নারীর যৌবনখানি সুজন বন্ধু রে।
উজান বাঁকে থাকো বন্ধু রে আরে ও বন্ধু
ভাটির দেশে থানা
চোখের দেখা মুখের হাসি রে
কে করেছে মানা সুজন বন্ধু রে।
নতুন ঝাড়ের বাঁশ কাটিয়া রে আরে ও বন্ধু
গাঙে দিলাম বানা
রাইতে আইও রাইতে যাইও রে
দিনে করি মানা সুজন বন্ধু রে।
কোন কলিমায় ডাকবো তোমায় রে আরে ও বন্ধু
কেমনে হবে সুখী
বিরহী উকিলের এ ভাবনায় রে
অন্ধ হইল আঁখি সুজন বন্ধু রে।
৯৭
সোনাবন্ধু আমারে কী মায়া লাগাইয়া গেলা রে।
আজ আসবে কাল আসবে বলে আমায় ফাঁকি দিলে
বন্ধু রে অভাগিনীর বুক ভাসে দুই নয়নের জলে রে।
বাসর সাজাইলাম আমি নানান জাতি ফুলে
বন্ধু রে নিশি পোহাইয়া গেল কোকিল ডাকে ডালে রে।
থাকো বন্ধু সুখে থাকো এই উকিলে বলে
বন্ধু রে থাকতে তোমায় না পাইলে পাইবো কি মইলে রে।
৯৮
সোনাবন্ধে আমায় করলো উদাসিনী
তোর কারণে নিশি-দিনে রে বন্ধু
আঁখির ঝরে পানি রে।
প্রথম প্রেম করেছিলাম রে বন্ধু
তুমি আর আমি
এখন কেন সেইসব কথা
লোকসমাজে শুনি রে।
ধন দিলাম মন দিলাম রে বন্ধু
দিলাম নয়ন দুইখানি
লোকসমাজে হইলাম দোষী
কইরা কানাকানি রে।
আগে যদি জানতাম রে বন্ধু
ও বন্ধু ছাড়বে অভাগিনী
মাথার কেশ দুই ভাগ কইরা
বানতাম চরণখানি রে।
তোর পিরিতের এই কর্মফল
আগে তো না জানি
ফান্দে পড়ে কাঙাল উকিলের
কোনদিন যায় পরানি রে।
৯৯
সোনাবন্ধু রে, তোর সনে কী কথা ছিল
তোর পিরিতে নয়ন দিয়া আমার জাতি-কুলমান গেল ॥
বন্ধু রে, যা বলেছিলে গোপনে কুঞ্জবনে যখন কেউ না ছিল
খেলিয়া প্রেমের খেলা আমায় দোষী কেন বানাইলা
দোষের ভাগী কলঙ্কিনী এখন আমি কোথায় যাব বলো ॥
বন্ধু রে, চাঁদবরণ মুখের হাসি দেখে জুড়ায় দাসীর প্রাণ
তুমি বিনে কে আছে সম্বল।
পিরিতের শেল বুকে দিয়া আছো কোথায় লুকি দিয়া
উকিলের মনোবাসনা থাকতে না পুরাইল ॥
১০০
সোনার পিঞ্জরায় কাক ভরিলে সুবোল বোলে না।
হায় রে কুকুররে কেউ আদর করে
ঘৃত ননী সামনে দিলে মুখে না তোলে
পাড়ায় পাড়ায় ঘোরেফিরে বিষ্ঠা ছাড়া বুঝে না।
পচা-গলার গন্ধ গো পেয়ে
পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ দেখে তাকিয়ে,
খোঁজ করিয়া আহার করে
জাতের স্বভাব ছাড়ে না।
হায় রে হায় দেখলাম কত এ জগৎজুড়ি
সত্য কথার দাম পাইলাম না এ মিথ্যার পুরী,
উকিল মুনশি জনমভরা আসল নকল চিনলো না।