1 of 3

উইকিপিডিয়া

উইকিপিডিয়া  

আমার উইকিপিডিয়া পেইজে লেখে কারা? সেই আদিকালে আমার ওপর একটা পেইজ খোলা হয়েছিল। কে খুলেছিল কে জানে। আজগুবি তথ্য থাকতো। ওসব তথ্য চোখে পড়লে দ্রুত সরিয়ে নিতাম চোখ। অনেক বছর পর নিজে একবার সঠিক তথ্য দিয়ে উইকিপিডিয়ার ভুল সংশোধন করলাম। করলে কী হবে, পরদিনই আবার সঠিক তথ্য পুরোটাই মুছে দিয়ে ভুল তথ্য এসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেল। আবারও সংশোধন করলাম। ওই একই অবস্থা। এরপর তৃতীয় বার সংশোধন করতে গেলে উইকিপিডিয়ার সিকিউরিটি গার্ড ফার্ড এসে আমাকে রীতিমত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। সম্ভবত আমার নামটাই ওদের খাতায় সাইবার ক্রিমিনাল হিসেবে লেখা হয়ে গেছে। উইকিপিডিয়াকে আমি একটা চিঠিও পাঠিয়েছিলাম। লিখেছিলাম এই যে আমার সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বসে আছো অথচ আমাকে দিচ্ছে না সংশোধন করতে! এ কেমন বিচার! খুব তো ভাব ধরছো সব জানো সব বোঝো, তবে আমাকে চিনতে পারছো না কেন! কেন জানো না যে যাকে নিয়ে এই পেইজ, সে স্বয়ং আমি! নাহ, আমার কথা কারও কানে পৌঁছয়নি। এরপর আশা ছেড়ে দিয়েছি। যারা আমার সম্পর্কে লেখে উইকিপিডিয়াতে, তারা বেশির ভাগ না জেনে অথবা ভুল জেনে লেখে। ভুলভাল খবর যেসব বেরোয় পত্রপত্রিকায়, ওগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখে। যার যা খুশি লেখে লিখুক। ও আমি দেখবোও না, পড়বোও না, শুনবোও না। মাঝে মাঝে ভাবি, আমি সাত খণ্ডে আমার আত্মজীবনী লিখেছি। এত বড় আত্মজীবনী খুব কম লেখকই লিখেছেন। আত্মজীবনীতে পুরো জীবনের কথাই লিখেছি আমি, অর্ধেক জীবনের নয়। কিছু গোপন করিনি। কিছু মিথ্যে লিখিনি। এই যে এতকাল ধরে আমার আত্মজীবনী পড়ছে লোকে, বছরের পর বছর ধরে ওসব ছাপা হচ্ছে, ফুরোচ্ছে, আবার ছাপা হচ্ছে। এসবের পাঠকেরা কোথায়? তারা কেন উইকিপিডিয়ার ভুল সংশোধন করছে না? তারা তো অন্তত জানে আমার জীবনের খুঁটিনাটি সব!

আজ হঠাৎ বাংলা উইকিপিডিয়ায় চোখ পড়লো। এ তো আরও অখাদ্য। চোখ বুলিয়ে দেখি আমার নাম নাকি ছিল নাসরিন জাহান তসলিমা, আমি নাকি কবিতা টবিতা লেখার সময় তসলিমা নাসরিন নাম দিয়েছি নিজের। আমার মা নাকি আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। তারপর আমার হরেক রকম স্বামীর প্রসঙ্গ তো আছেই।

নকলবাজদের তো অভাব নেই। তারা কোথায়? তারা তো আমার ওয়েবসাইট, ফ্রিথট ব্লগইত্যাদি থেকেও আমার সম্পর্কে সঠিক তথ্য কপি পেস্ট করে উইকিপিড়িয়ায় দিতে পারে। নাকি সঠিক তথ্যে মজা নেই। মজা ভুল আর মিথ্যে তথ্যে? আমার মনে হয়, আমার সম্পর্কে এতকাল ধরে মৌলবাদী আর নারীবিদ্বেষী লোকেরা যে সব অপপ্রচার চালিয়েছে, ওগুলো সত্য তথ্য বলে একরকম প্রতিষ্ঠিতই হয়ে গেছে। মানুষের মস্তিষ্কেই ঢুকে বসে আছে ওসব। মানুষের মস্তিষ্ক এমন এক জিনিস, যেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া সহজ, বের করা মোটেও সহজ নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *