2 of 2

ঈশ্বরের বাগান – ৫৬

॥ ছাপ্পান্ন ॥

সমসেরের চোখ মুখ ক্রমেই কেমন গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। ময়নাকে সঙ্গে নিচ্ছে, নেওয়া শেষ পর্যন্ত ঠিক কিনা, এই অন্ধকার এবং রুক্ষ মাটিতে ময়না শেষ পর্যন্ত কতটা এগোতে পারবে তা ছাড়া সে মিনুর কথা ভেবেই এটা করছে এবং আবুলের কথা ভেবে, অর্থাৎ সে নিজের জন্যই করছে তারপর মনে হল, না, তার চেয়েও বেশি দরকার কাঠের পেটিটা এবং ওটা না পৌঁছলে, তারা থানার দখল আর বেশিদিন রাখতে পারবে না। কারণ গোপেরবাগে সামরিক ছাউনি পড়ছে। ছোট্ট একটা ইউনিট ওখানে কতদিন থেকেই আছে সেই আয়ুব খাঁর আমল থেকে। সেই ছাউনিতে আরও সিপাই আসছে, ছাউনি বড় করা হচ্ছে, ঝিলের ধারে ধারে কাঁটাতারের বেড়া, আর তাঁবু পড়ছে সুতরাং এখন কাঠের পেটিটাই সব। সে মেহেরকে বলল, আর একটা সাইকেল হলে ভাল হয়।

মেহের বলল, ময়নার সাইকেল আছে। ওরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে। সামনে বড় বড় খড়ের গাদা, এক চিলতে সবুজ ঘাস এক পাশে। অন্য দিকে লম্বা গোয়ালঘর, চৈত্র মাস বলে হালের গরু দুধের গরু সবই বাইরের খুঁটিতে বাঁধা। গোয়ালঘরটা দরকারে আসে না। ওখানেই খড়ের মধ্যে সাইকেলগুলি জড়াজড়ি করে পড়ে থাকে। কেউ টের পায় না। মেহের আবার বলল, ঐ তো ওখানে আছে।

—আমার জন্য হবে একটা?

—আপনি ভাই আবার কোথায় যাবেন? জানের কথা ভাবেন।

সমসের গলা ভারি করে বলল, মঞ্জুদির ওখানটায় যাব। অবনীর সেদিনই ফিরে যাবার কথা ছিল। বুঝতে পারছি, ওর ফিরতে দেরি হবে। খবরটা দিতে হবে।

অরুণ বলল, আমরা যাবার সময় খবরটা দিয়ে যাব।

সমসের জানে, ওরা পানামের ব্রিজ পার হয়ে আমিনপুরের দিকে যাবে। তারপর নারাণ পোদ্দারের সুবিশাল পরিত্যক্ত প্রাসাদের মতো আবাস পার হয়ে উত্তরের দিকে সোজা নেমে গেলে খাল, একটা বড় মাঠ এবং কিছু গাছপালা। শেষে পড়বে বিস্তৃর্ণ মরুভূমির মতো বড় একটা অঞ্চল। মেঘনা সরে যাবার সময় ওখানে একটা বালির চরা রেখে গেছে। সেখানে তরমুজের চাষ হয়, দূরে দূরে ঝোপড়ি বানিয়ে তরমুজ পাহারা দেয় মানুষেরা। ওদের ওটাও পার হয়ে যেতে হবে। তারপর গোপেরবাগের ঝিল। তারপর কিছুদূরে গেলেই শোনা যাবে জব্বার চাচার হামান দিস্তার শব্দ। অনেক দূর থেকে সেই শব্দটা কানে এলেই বোঝা যাবে মঞ্জুদির লালরঙের ছিমছাম বাড়িটা আর বেশিদূরে নেই। অবনী না থাকলে, তার কবিরাজীর কাজকর্ম জব্বার চাচা করে থাকে। সে ভাবল, যত রাতেই যাক, ঠিক জব্বার চাচাকে ডিসপেনসারিতে পেয়ে যাবে। রাতে ডিসপেনসারিতেই শুয়ে থাকবে। ডাকাডাকি করে আর মঞ্জুদির ঘুম ভাঙাব না।

সে বলল, না আমাকে যেতে হবে।

সমসের আর কোন কথা বলল না। অরুণ আবেদালি ফিরোজ মাথায় টুপি পরে নিয়েছে। ওরা এসে সমসেরের সামনে দাঁড়াল। তারপর একে একে বের হয়ে গেল খড়ের গাদা থেকে সাইকেল বের করতে। মেহের ওদের পিছু পিছু গেল। এবং সমসের দেখল তার আগে ভাগে আর কেউ মিঞা মতো মানুষ যাচ্ছে। সে চিনতে না পেরে বলল, কে?

—আমি। বলে সেই মিঞামতো মানুষটা কাছে এসে দাঁড়াল। নতুন লোক মনে হচ্ছে! এ সময় কোনও নতুন লোক দেখলেই সমসের ঘাবড়ে যায়। সে ডাকল, মেহের মেহের? মেহের গোয়ালঘর থেকে বলল, যাই।

নতুন লোকটা সমসেরের সামনে দাঁড়িয়ে। সরু গোঁফ আর এর মধ্যেও সমসের দেখতে পাচ্ছে লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে মজার হাসি হাসছে। এ-সব দেখে সমসেরের কিছুটা বিরক্তি কিছুটা অস্বস্তি এবং কপালে ঘাম দেখা দিলে সে বুঝতে পারল মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এ-সময় মাথা গরম করা একেবারেই ঠিক না। মেহের অরুণ অথবা নানু মিঞা কেউ এই নতুন লোকটা সম্পর্কে তাকে কিছু বলে নি। মেহের খড়ের গাদায় এখনও সাইকেল খুঁজছে। কেউ আসছে না। সে বলল, মিঞা সাবের মোকাম?

এবার আর ময়না পারল না। খিলখিল করে হেসে উঠল, সমসের ভাই আমারে চিনতে পারলা না। তুমি কেমন ভাইসাব?

—ময়না তুই!

তারপরই ময়না বগলে পুঁটলি ঝুলিয়ে খুব গম্ভীর গলায় বলল, হা আমি, আমি ময়না। বলেই সে গেয়ে উঠল, ময়না কনো কথা কয় না।

সমসের কেবল বলল, সাবধানে যাবি।

অরুণ বলল, আমার কাছে একটা মানচিত্র আছে, গ্রামের নাম, মৌজা এবং সব আছে। কত নম্বর মৌজায় কে কেমনভাবে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তার একটা লিস্ট আছে।

সমসের চশমাটা খুলে অরুণের মুখ দেখল। তারপর বলল, সব রেখে যা। সময় মত আমি সব দেখে নেব।

অরুণ বলল, কামাল সাহেবের খবর কি?

—কিছুই জানি না। ওর খবর বোধহয় আমাদের এখন রাখার নিয়ম নেই।

কামাল সাহেবের খবর এখন রাখতে নেই, অর্থাৎ কে কোথায় থাকবে, কিভাবে কে দিনযাপন করবে—এসব খবর রাখা এদের ঠিক না। কারণ ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে খান সৈন্যরা। অমন অনেককেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। সুতরাং অরুণ কামাল সাহেব সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন করতে পারল না। কামাল সাহেবকে সে এ অঞ্চলে নিয়ে এসে ভোটের আগে মিটিং করেছিল। সাত-আট দিন ছিল ওর সঙ্গে। ওর বাড়িতেই সে থেকেছে। এবং সাত-আট দিনেই মানুষটা এমন জাদু জানে যে সবাইকে প্রাণের চেয়ে আপন করে ফেলেছিল। সমসের সে সময় কামাল সাহেবের সঙ্গে আসতে পারে নি। সে কামাল সাহেবের নির্দেশে কালীগঞ্জের দিকে মিটিং করতে গিয়েছিল। কামাল, সে এবং সমসের একসঙ্গে থাকলে সে দিনগুলো হয়তো আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হত। অরুণ এমন ভেবে চোখ তুলতেই দেখল সমসের সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসছে। চশমাটা সমসের রুমালে মুছে চোখে দিচ্ছে। চশমা চোখে না থাকলে ভাল দেখতে পায় না। চশমা খুলে দেখলেই অরুণের মনে হয় সমসের ওকে দেখছে না। যেন আরও গভীরে তার চোখ। সমসেরকে তখন ভারি গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ মনে হয়। এবং তখন অরুণ আর কথা বলতে সাহস পায় না।

অরুণ ঢাকার কাছে নারাণগঞ্জে থাকত। কালীবাজারে থাকত সে। ওরা এক স্কুলে পড়ত। কলেজে পড়ত একসঙ্গে। এবং মিনুর সঙ্গে ভালবাসাবাসির সময় অরুণ ছিল তার নিত্যসঙ্গী। আর কতদিন সে অরুণকে নিয়ে মিনুর সঙ্গে মিশনারি স্কুলের বড় দেয়ালের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছে। ওরা ঘাসের উপর বসে নানারকমের গাছপালা দেখতে দেখতে নদীর জল দেখতে পেত। চাষী মানুষের মুখ উঁকি মারত তাদের মনে। কোথায় যেন ওরা এক অতীব হীনমন্যতায় ভুগে বলে উঠত, এভাবে একটা জাতি বাঁচে না। কে বলবে তখন সমসের এসেছে অভিসারে। সঙ্গে অরুণ থাকছে সাহস দেবার জন্য। নাকি সমসের এবং মিনুর মধ্যস্থতায় অরুণ থাকছে। মান অভিমানের ব্যাপারটা বেশীদূর গড়ালেই অরুণের ডাক পড়ত। কি করি বল তো? মিনু কিছুতেই বুঝতে পারছে না। চাকরি-বাকরি কিছু করছি না, দুম করে একটা কিছু করে বসলেই তো হয় না!—এমন কথাই ছিল চিরাচরিতের কথা। আশ্চর্য, অরুণকে দেখলেই মিনু বুঝতে পারত সালিশির জন্যে আসছে। মিনু তখন সমসেরের ভীরুতার কথা ভেবে হা হা করে হেসে উঠত। তারপর ওরা ভুলে যেত কেন এসেছে। ওরা এসেছে বুঝি একটা নতুন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। ওদের কথাবার্তা শুনলে তখন এমনই মনে হত।

সুতরাং অরুণ সমসেরকে ভালভাবে জানে বলেই আর কিছু বলে নি। এখন এমন সময় নয় যে ধমক দিয়ে বলবে, না, যাবে না। কারণ সে এখন সমসেরের আজ্ঞাবহ। ফ্রন্টে বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই, তার দাবীও সামান্য। সমসের চশমা খুলে তাকালেই অরুণ আর কিছু বলতে পারে নি।

ময়নাকে তো এখন আর চেনাই যাচ্ছে না। ময়নাকে ওরা সবুজ রঙের ইউনিফরম পরিয়ে নিয়েছে। মাথায় হেলমেট। পিঠে কিড্‌ব্যাগ। এবং কাঁধে রাইফেল। পায়ে বুটজুতো। ওর মুখ দেখলে এখন শুধু মনে হয় নতুন গোঁফ ওঠা এক তরুণ যাচ্ছে যুদ্ধ করতে। চোখ বড় বড়। এবং সজীব চোখে নীল রঙের ভালবাসা। কোমল, অতীব এক সৌন্দর্য নিয়ে মেয়েটা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে।

সমসের ময়নাকে দেখলেই যেন কেমন একটা সাহস পায়। স্বামী নেই। একা। এবং একা বলেই যেন সে মুক্ত। এমন মুক্ত যে সে আর দশটা পুরুষের চেয়ে কোনও ব্যাপারে কম যায় না। অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্য। সারা বিকেল খেটেছে। যাদের আসার কথা তাদের জন্য খাবার তৈরী করেছে। সকালবেলা নানুমিঞার দ্বিতীয় পক্ষের বিবি বলেছিল, ঘুম গেলে হয়। ময়না ঘুমোয় নি। ঘুমানো দরকার বিশ্রামের দরকার। তবু মেহের এবং অরুণের ইচ্ছার কথা ভেবে, ঠিক ওদের ইচ্ছার কথা ভেবে বোধহয় সমসের এতটা করেনি, এখন মনে মনে সেটা সে টের পাচ্ছে। আবুল, মিনু, বেশি করে মিনুর কথা ভেবেই সে যেন ময়নাকে ওদের সঙ্গে পাঠাচ্ছে। নদীর পানিতে অথবা খেয়াঘাটে যে সব ছাউনি পড়েছে তার ব্যুহ ভেদ করে আসা এক ভীষণ কঠিন ব্যাপার। এবং মন্দিরের পাশ দিয়ে যে নদী গেছে সেখানে পানি কম, উজানে তবু পানি থাকে, ভাটার সময় কাদামাটি, বিশাল বিলেন অঞ্চল। জ্যোৎস্নায় মনে হয় সেই বিলেন কাদামাটি শক্ত পাথুরে জায়গা। ভুলে মানুষ পথ হারায়। গরু ছাগল মানুষ কখনও কাদায় আটকে পড়ে থাকে। এমন একটা জায়গাতেই ওরা ওদের রাইফেল খালাস করার জায়গা ঠিক করেছে।

ময়না এসেই ওর সাইকেলের চাকার হাওয়া, কেমন আছে দেখে নিল। সে নুয়ে দেখছিল বলে চুলের বেণীটা নিচে পড়ে গেছে। টুপি তার এখন হাতে। সমসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সে ফিরোজকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। ওখানে হাসিম আছে। প্রথম ওদের বাড়িতেই ওগুলো উঠে যাবে। ওদের একটা মুলিবাঁশের ঘর আছে। এবং পাঠকাঠির মাচা আছে। সেই মাচার ভিতর এবং বাঁশের ভিতর গুঁজে রাখা হবে। তা ছাড়া অবনীদের আসতে দেরি দেখলে এবং বেলা হয়ে গেলে ময়নাকে অরুণের কাছে রেখে ফিরোজ মেহের যেন চলে যায় গড়িপরদির মঠের পাশে যে বড় বটগাছটা আছে এবং ভাঙা পোড়ো মন্দির আছে, সেখানে। সেখানে নদী বাঁক নিয়েছে। বাঁকের মুখে দুদিকের অনেকটা নদী জুড়ে সব দেখা যায়।

ময়না উঠে বেণী দুটো মাথার উপর গোলকরে বেঁধে নিল। তারপর মাথায় টুপি চড়িয়ে ফল- ইনে দাঁড়াবার মত ছুটে গেল। মেহের হুইশেল বাজাচ্ছে। হুইশেল বাজতেই যে যার মত লাইনে ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে গেল। সমসের ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। পিছনে নানু মিঞা এবং হাতে তার হ্যারিকেন। সে হ্যারিকেনটা উপরে তুলে ধরলে, আলোর মুখে সমসের সবাইকে এক এক করে দেখতে পাচ্ছে। কঠিন মুখ। তবু কেন জানি ময়নার কাছে এসে মনে হল, এই মুখ এত কোমল এবং নিরীহ যে ভয় পেলে সব ভেস্তে যাবে। সে ময়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, কি রে ভয় পাবি না তো?

ময়না হাসল সামান্য! এই হাসিটুকু সমসেরের কাছে কঠিন প্রতিজ্ঞার মত মনে হয়েছে। সে দেখল অরুণ একটা নীল রঙের প্যান্ট পরে আছে এবং ছাই রঙের হাওয়াই শার্ট। ওর পায়ে চপ্পল। একমাত্র মেহেরের শরীরে ই. পি. আর-এর পোশাক। ফিরোজ পায়জামা পরেছে। এবং কালো রঙের শার্ট। সাদারঙের পায়জামা পরা ঠিক না। সে মেহেরের দিকে তাকাল। হ্যাঁরে মেহের, তুই ওকে নিয়ে যাচ্ছিস, তোর সব দেখে-শুনে নেওয়া উচিত। কোথাও ত্রুটি ঘটে গেছে ভেবেই মেহের অস্বস্তি বোধ করছে। সে দেখছে সমসের ভাই ফিরোজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এবং সাদা রঙ যুদ্ধক্ষেত্রে ঠিক না, দূর থেকে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। সে বলল, তাড়াতাড়ি আমরা বের হয়ে পড়ছিলাম। খেয়াল করিনি। এবং তখনই নানু মিঞার ছোটছেলে দৌড়ে একটা খাকি পাজামা নিয়ে এল। ওরা প্রস্তুত হয়ে গেল। সেই পাগল যে প্রতিদিন মসজিদে মোমবাতি জ্বালায়, যে গান গায় অফুরন্ত এবং মাঝে মাঝে যে দুহাত উপরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে পীর মুর্শিদের কাছে দোয়া ভিক্ষা করে, সেই মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে গাছের নিচে। সে বসবে ক্যারিয়ারে। ওকে কিছুটা পথ টেনে নিয়ে যাবে অরুণ, কিছুটা পথ মেহের এবং বাকি পথটা আবেদালি। দন্দির বাজারে ওঠার মুখে বড় পাঁচটা তালগাছ জড়াজড়ি করে আছে যেখানে, ওরা ওকে তার নিচে ছেড়ে দেবে।

তারপর পাঁচটা সাইকেলে ওরা চেপে বসার আগে গান গাইল—পূব আকাশে সূর্য উঠেছে / আলোকে আলোকময় / জয় জয় জয় জয়। হ্যারিকেনের মৃদু আলো এবং অন্ধকারে জোনাকিপোকা অথবা মসজিদের গম্বুজে লাল-নীল নক্ষত্রের ছবি ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে আসছে। গাছের ছায়ায় এবং মাঠের অন্ধকারে ওরা হারিয়ে গেল। ওদের গলার স্বর আর চেনা যাচ্ছে না। যেন ঘাস ফুল পাখি মিলে এক জগৎ এবং সূর্য উঠলে, নদীর জলে পাখি উড়লে, বাংলাদেশকে ঠিক ঠিক চেনা যায়। সমসের মসজিদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই সব শুনতে শুনতে সব ভীরুতা থেকে কেমন মুক্ত হয়ে গেল। তাকে মাঝে মাঝে যে ভীরুতা এসে আক্রমণ করে এবং মাঝে মাঝে সে যেভাবে মিনু এবং আবুলকে নিয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যাবে ভাবে—ওদের চলে যাওয়া দেখে কেমন সেটা অর্থহীন মনে হয়। সে কোথায় যাবে, বাংলাদেশ ছেড়ে সে আর কোথায় যেতে পারে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *