ঈশানচন্দ্র ব্যানার্জি ও মহেশচন্দ্র ব্যানার্জি
সুশিক্ষিত’ভারতীয়দের মধ্যে গণ্য প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় এই অধ্যাপকদ্বয় দীর্ঘকাল সাফল্যের সঙ্গে সরকারের শিক্ষা-বিভাগের কাজ করেছেন।
জ্যেষ্ঠ ঈশানচন্দ্রের জন্ম ১৮১৪-তে। তিনি শিক্ষা লাভ করেন হিন্দু কলেজে, ছাত্র জীবন ছিল তাঁর উজ্জ্বল; বহু পুরস্কার যেমন পেয়েছিলেন তেমনি এক শ্রেণি থেকে উচ্চতর শ্রেণিতে তিনি দ্রুত উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। মেসার্স পামার অ্যান্ড কোম্পানির পত্তনের ফলে কতক অসময়ে কলেজ ছাড়তে তিনি বাধ্য হলেন; বাধ্য হলেন জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশানের অধীনে চাকরি নিতে; এ প্রতিষ্ঠানে থেকে স্যার চার্লস ট্রেভেলিয়ন তাঁকে কোলদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করতে চাইবাসা পাঠালেন। এখানে গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট ক্যাপটেন উইলকিন্সের সুসমৃদ্ধ গ্রন্থাগারটি ইচ্ছামত ব্যবহার করবার সুযোগ পাওয়ায় তাঁর অসময়ে স্কুর ছাড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেবার এবং ভবিষ্যৎ উন্নতির পথে অগ্রসর হবার পথ প্রশস্ত হল। এখানকার আদিবাসীদের আচার ব্যবহার জীবনযাত্রা পদ্ধতির ওপর তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণী দিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন; এটি প্রকাশিত হয় ক্যালকাটা খ্রিস্টীয়ান অবজারভার পত্রিকায়। পান্ডিত্যপূর্ণ এই প্রবন্ধ অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট করে; ফলে সদর কোর্টের মিঃ ডি সি স্মিথ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জমিদারী স্কুলে তাঁকে বদলী করে আনা হয়। কিছু পরে তাঁকে বদলী করা হয় হাজি মহম্মদ মহসিন কলেজে। অল্প কিছুকালের জন্য তাঁকে বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরেও বদলী করা হয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে হুগলী কলেজেই স্থায়ী অধ্যাপকরূপে রাখা হয়। অধ্যাপকরূপে তাঁর প্রতিভার চরম বিকাশ ঘটে এই কলজেই। শিক্ষা বিভাগে তিনিই প্রথম ভারতীয় গ্রেডেড অফিসার।
ছোট ভাই মহেশচন্দ্রের শিক্ষা শুরু হয় জেনারেল অ্যাসেমরিল ইন্সটিটিউশনে রেভারে- ডাঃ ডাফের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। পরে তিনি রেভারেন্ড ম্যাকে ও রেভারেন্ড এওয়াটের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনিই প্রথম (১৮৩৭) পদক লাভ করেন। তিনটি বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি প্রবন্ধ লেখার জন্য পান তিনটি রৌপ্য পদক; এছাড়া মিঃ মুইর (পরে স্যার উইলিয়াম মুইর) তাঁকে তাঁর ‘হিন্দু ও হিব্রু শাস্ত্র’-এর ওপর লিখিত প্রবন্ধের জন্য একটি পুরস্কার দেন।
মহেশচন্দ্রের কর্মজীবন শুরু হয় মেজর জেনারেল কফিলডের অধীনে কেরাণীর চাকরি নিয়ে। কিছুকাল পরেই স্যার এড্ওয়ার্ড রায়ান তাঁকে হুগলী কলেজের অ্যাংলো পার্শিয়ান বিভাগের হেডমাস্টার নিয়োগ করেন। পরবর্তীকালে তাঁকে হিন্দু স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারের পদে নিয়োগ করে কলকাতায় আনা হয়। অধীনস্থ শিক্ষকগণ এই নিয়োগের বিরুদ্ধে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিরূপতার কারণ তিনি বহিরাগত এবং দ্বিতীয় কারণ তিনি পাদ্রী মনোনীত শিক্ষক। কিন্তু অল্পকাল পরেই তাঁকে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। বাঙলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার সিসিল বীডন তাঁকে ফোর্থ গ্রেড অফিসারে উন্নীত করেন। জ্যেষ্ঠের মতো এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত ও পেনসন ভোগী। জেলা দাতব্য সমিতির সদস্য মহেশচন্দ্র অত্যন্ত দায়িত্ব সচেতনভাবে স্বীয় কর্তব্য পালন করে চলেছেন।