ঈদ: এখন এবং তখন

১.
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন টেলিভিশন বলে কিছু ছিল না। তাই ঈদটি ছিল মাত্র একদিনের, সকালে শুরু হয়ে রাতে শেষ হয়ে যেত। এখন অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল, মাত্র একদিনের ঈদে তাদের পোষানোর কথা না, তাই ঈদকে টেনে অনেক লম্বা করা হয়েছে। ‘ঈদের প্রথম দিন’, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন’ এভাবে চলতেই থাকে এবং প্রায় সপ্তাহখানেক পরেও আবিষ্কার করি ঈদ-উৎসব চলছে!

আনন্দকে টেনে লম্বা করার মাঝে দোষের কিছু নেই। কাজেই আমার ধারণা, ঈদ-উৎসবকে এভাবে সপ্তাহ বা দশ দিন করে ফেলার ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঈদের উৎসবকে টেনে লম্বা করার কোনো উপায় ছিল না। সত্যি কথা বলতে কী, দিন শেষ হয়ে অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে আমাদের মনে দুঃখের অন্ধকার নেমে আসত এবং এত আনন্দের ঈদটি শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটা চিন্তা করে আমরা রীতিমতো হাহাকার করতে থাকতাম।

আমার জানামতে, ঈদকে একটু লম্বা করে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত টেনে নেওয়ার প্রথম চেষ্টা করেছিল আমাদের বড় ভাই, হুমায়ূন আহমেদ। ঈদের অনেক আগেই সে ঘোষণা দিল, এখন থেকে ঈদের রাতে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। কাজেই ঈদের আনন্দটা যে শুধুমাত্র ঈদের রাতে অনেকক্ষণ টেনে নেওয়া হল তাই নয়, ঈদের অনেক আগে থেকেই বিচিত্রানুষ্ঠানের নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক এসবের রিহার্সেলের মাঝে এই আনন্দ শুরু হয়ে গেল। (টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও ইচ্ছে করলে ঈদ-উৎসব ‘ঈদের আগের রাত’, ‘ঈদের আগের রাতের আগের রাত’ সেভাবেও ঠেলে দিতে পারে এবং আমি আমার শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সেটা বেশ ভালো কাজ করার কথা!)

ঈদের রাতে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করার কারণে আমাদের ভাই-বোনদের ঈদ-উৎসবটি সব সময়েই একটা ভিন্ন মাত্রায় চলে যেত। অন্যেরা নূতন জামা পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে খেয়েদেয়ে ঈদ শেষ করে ফেলত; আমরা তার সাথে নাচ, গান, কবিতা, নাটক এইসব যোগ করে সেটাকে আরও চমকপ্রদ করে ফেলতাম।

কেউ যেন মনে না করে এগুলো শুধু আমাদের পারিবারিক একটা অনুষ্ঠান হত– মোটেও তা নয়। বাসায় বারান্দায় স্টেজ বানিয়ে পর্দা ফেলে রীতিমতো হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলা হত। কোনো রকম প্রচার করা হত না, তারপরও অনুষ্ঠান শুরু করার সাথে সাথে এই এলাকার সবাই দর্শক হিসেবে চলে আসত এবং তারা ধৈর্য ধরে সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করত। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সবকিছু পরিচালনা করত হুমায়ূন আহমেদ। শুধু যে পরিচালনা করত তা নয়, সে খুব সুন্দর অভিনয়ও করতে পারত।

ঈদের পরদিন আমরা সবাই মন খারাপ করে ঘুম থেকে উঠতাম। তবে সবচেয়ে বেশি মন খারাপ হত আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলের। অবধারিতভাবে সব দর্শক মিলে পা দিয়ে মাতিয়ে ঈদের রাতে তার চমৎকার ফুলের বাগানটা তছনছ করে দিত। তবে সে জন্যে কখনও এই অনুষ্ঠান বন্ধ থাকেনি।

ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, কিন্তু যখন ছোট ছিলাম তখন কখনও-ই ধর্মীয় অংশটুকু চোখে পড়েনি– শুধুমাত্র আনন্দ আর উৎসবরের অংশটুকু চোখে পড়েছে। তবে মনে আছে, একবার ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছি, নামাজের সময় খোতবা পড়া হচ্ছে, হঠাৎ একজন মানুষের ক্রুদ্ধ গালি-গালাজ শুনে তাকিয়ে দেখি ঈদের জামাতের পাশে একজন বিশালদেহী মানুষ লম্বা দাড়ি, মাথায় টুপি, দীর্ঘ পাঞ্জাবি পরনে আঙুল তুলে আমাদের অভিশাপ দিয়ে বলছে, আমাদের ক্ষমার অযোগ্য গুনাহের কারণে আমরা সবাই জাহান্নামে যাব!

আমি রীতিমতো আতঁকে উঠেছিলাম। বড়দের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, ঈদের চাঁদ উঠেছে কী উঠেনি সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে এবং মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক ভাগ আজকে ঈদ করছে, অন্যভাগ আগামীকাল। এই বিশালদেহী মানুষটি আগামীকাল ঈদ করার দলে। তার ধারণা, একদিন আগে ঈদ করে আমরা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি এবং তাই আমাদের রক্ষা করার জন্যে শেষ চেষ্টা করতে এসেছে!

যাই হোক, ঈদের জামাতে যারা ছিল তারা ব্যাপারটাকে সহজভাবেই নিল, তাই কোনো গোলমাল হল না। কিন্তু মাঝে মাঝেই গোলমাল লেগে যেত। এখন চাঁদ দেখার কমিটি হয়, তারা সবাই মিলে একটা ঘোষণা দেয়, তাই আগের মতো কোন দিন ঈদ হবে সেটা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকে না। তবে মজার ব্যাপার হল, তারপরও প্রতি বছর দেখি আমাদের দেশের কোথাও ঈদ উদযাপন করা হয় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে– ব্যাপারটা কেন ঘটে এখনও আমি বুঝতে পারিনি।

এখানে বলে রাখা ভালো, চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে কীভাবে ঘুরছে সেটি এখন এত সুক্ষ্মভাবে জানা সম্ভব যে কেউ আকাশের দিকে না তাকিয়েই বলে দিতে পারে চাঁদটি আকাশের কোন জায়গায় কোন অবস্থায় আছে। (স্বীকার করছি এ কারণে ঈদের চাঁদ খুঁজে বের করার পুরো আনন্দটি মাটি হয়ে যাবার আশংকা আছে!)

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেশের মানুষের কাপড়-জামা খুব বেশি ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ বছরে একবারই নূতন জামা-কাপড় কিনত আর সেটা হত ঈদের সময়। প্রতি ঈদে আমরা নূতন জামা-কাপড় পেতাম তা-ও নয়– কোনো কোনো ঈদে কেউ কেউ পেত, তাতেই আমরা মহাখুশি ছিলাম। একবার ঈদে আমাকে জুতো কিনে দেওয়া হল, ঈদের আগে সেই জুতো পরা ঠিক হবে না, কিন্তু পায়ে দিয়ে দেখতেও ইচ্ছে করে। জুতো পায়ে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করলে ময়লা হয়ে যাবে, তাই সেই জুতো পরে আমি বিছানায় হাঁটাহাঁটি করি! মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেটা দেখে কেউ অবাকও হয় না।

তখন লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের কালজয়ী বইগুলো আমরা পড়ছি, বাংলায় অনুবাদ করেছেন জাহানারা ইমাম, আমাদের সবায় প্রিয় বই ‘ঘাসের বনে ছোট্ট কুটির’। (আমাদের শৈশবের এই প্রিয় বইগুলো যে জাহানারা ইমাম অনুবাদ করেছিলেন সেটি আমি জেনেছি বড় হয়ে, জাহানারা ইমাম মারা যাবার পর। এটা নিয়ে আমার ভেতরে খুব একটা আফসোস রয়ে গেছে। জাহানারা ইমাম আমার খুব প্রিয় মানুষ। আমেরিকায় থাকার সময় তাঁর খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল, কত কিছু নিয়ে গল্প করেছি, কিন্তু তাকে কখনও ধন্যবাদ দিতে পারিনি এই অসাধারণ বইগুলো অনুবাদ করার জন্যে)।

যাই হোক, ‘ঘাসের বনে ছোট্ট কুটির’ পড়ে আমরা জানতে পারলাম, ক্রিসমাসে শুধু যে নূতন কাপড় উপহার দেওয়া যায় তা নয়– অন্য কিছুও উপহার দেওয়া যায়। তাই একবার আমরা সব ভাই-বোনেরা মিলে ঠিক করলাম, ঈদে আমরা নূতন কাপড় পাই আর না পাই, আমরা নিজেরাই একে অন্যকে উপহার দিব! অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ছোট ছোট উপহার দিয়ে ঈদের দিনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলাম। সেই ছোটবেলায় আবিষ্কার করেছিলাম, উপহার পাওয়ার থেকেও অনেক বেশি আনন্দ উপহার দেওয়াতে। যারা আমার কথা বিশ্বাস করে না, তারা ইচ্ছে করলেই ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখতে পারে।

তারপর দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলাম। একসময় আবিষ্কার করেছি যে আমি দেশের বাইরে। আমার ছোট ছোট দুটি ছেলেমেয়ে আমেরিকার মাটিতে, তাদের হাজার রকম আনন্দ, কিন্তু ঈদ ব্যাপারটি তারা সত্যিকারভাবে কখনও দেখেনি! আমার ছেলেমেয়ে সত্যিকার অর্থে প্রথম ঈদ দেখেছে আমরা দেশে ফিরে আসার পর।

আঠারো বৎসর আগে যখন দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম তখন সবাই মিলে শুধুমাত্র টিকে থাকার সংগ্রাম করছি। যখন ফিরে এলাম তখন মোটামুটিভাবে সবাই দাঁড়িয়ে গেছে। বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ ততদিনে ‘হুমায়ূন আহমেদ’ হয়ে গেছে। সেই শৈশবে সে যে রকম আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে ঈদের আনন্দ করত– এখন সে আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে সেই আনন্দ করে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ‘সেলামি কালচার’ ছিল না, ফিরে এসে দেখি ‘সেলামি কালচার’ শুরু হয়ে গেছে। সালাম করলেই টাকা! বড় ভাই একটা নিয়ম করে দিয়েছে, যার যত বয়স তার দ্বিগুণ টাকা সেলামি দেওয়া হবে। একবার আমার বোনের মেয়ে, ঈদে ঢাকা নেই, তার বয়স সাত। কাজেই ঈদের সেলামি হিসেবে তাকে মানি অর্ডার করে সাত দ্বিগুণে চৌদ্দ টাকা পাঠিয়ে দিল। পিয়ন সেই টাকা পৌঁছে দিতে গিয়ে খুবই অবাক-– একজন মানুষ কেমন করে এত যন্ত্রণা করে মানি অর্ডারে মাত্র চৌদ্দ টাকা পাঠায়? কেন পাঠায়?

আমরা তখন বড় হয়ে গেছি, আমাদের পরের প্রজন্ম ছোট ছোট শিশু, ঈদের দিনে এখন তাদের দেখে আমরা আনন্দ পাই। ভাইবোন সবার বেশিরভাগই মেয়ে, ঈদের আনন্দ তাদের মনে হয় একটু বেশি। ঈদের আগের রাতে সবাই মিলে হাতে মেহেদি দেয়– আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই ছবি আকঁতে পারে, কাজেই হাতে মেহেদি দেওয়া যে রীতিমতো শিল্পকর্ম হয়ে যাবে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। হাতে মেহেদি দিয়ে সেই মেহেদি হাতে নিয়ে রাতে ঘুমাতে যায়, ভোরবেলা দেখা হয় কার মেহেদির রঙ কত তীব্র হয়েছে। সেটা দেখেই তাদের আনন্দ।

ঈদের সারাটি দিন সবাই নানা কাজে ব্যস্ত, রাত্রিবেলা সবাই আমরা মায়ের কাছে হাজির হই। হৈ-হুল্লোড় করে সময় কাটে। বাসায় ফিরে যাবার আগে হুমায়ূন আহমেদ পকেট থেকে এক হাজার টাকা বের করে টেবিলে রেখে বলে, এখন লটারি করে দেখা যাবে কে টাকাটা পায়। ছোট ছোট কাগজে সবার নাম লেখা হয়, কাজে সাহায্য করার মানুষ, গাড়ির ড্রাইভার কেউ বাকি থাকে না। তারপর একটি একটি করে সেই কাগজের টুকরোগুলো তোলা হয়। শেষ পর্যন্ত যার নামটা থেকে যায় সেই হচ্ছে বিজয়ী! এ রকম উত্তেজনার লটারি আমার জন্মে খুব বেশি দেখিনি!

এরপর আরও অনেক দিন কেটে গেছে, যারা ছোট ছোট শিশু ছিল তারাও বড় হয়ে যাচ্ছে। কারও কারও বিয়ে হয়েছে। তাদের বাচ্চারা এখন ঈদের আনন্দ করে, আর আমরা তাকিয়ে দেখি।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন লেখালেখি বা সাহিত্যের পুরো বিষয়টি ছিল কলকাতা-কেন্দ্রিক। পূজার সময় শারদীয় সংখ্যা বের হত আর আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। বলা যেতে পারে, আমাদের চোখের সামনে ‘ঈদ সংখ্যা’ নামে বিষয়টি শুরু হয়েছে এবং আজকাল সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে ঈদ সংখ্যার জন্যে অপেক্ষা করেন।

আমরা যারা অল্পবিস্তর লেখালেখি করে একটু পরিচিতি পেয়েছি ঈদের আগে আমাদের ঈদ সংখ্যায় লেখার জন্যে চাপ আসতে থাকে। পুরোটা যে সাহিত্যের জন্যে ভালোবাসার কারণে তা নয়, এর মাঝে বাণিজ্যের অংশটা প্রবল বলে আজকাল উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি। টেলিভিশনে ঈদের নাটকের ফাঁকে ফাঁকে যে রকম বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, ঈদ সংখ্যার লেখার ফাঁকে ফাঁকে যে বিজ্ঞাপন থাকে সেটা কি সবাই লক্ষ্য করেছে!

ছেলেবেলায় ঈদের আগে যত্ন করে নিজের হাতে অনেক ঈদ কার্ড তৈরি করেছি, বেশিরভাগই ছোট বাচ্চাদের দেওয়ার জন্যে। তারাও আমাকে ঈদ কার্ড তৈরি করে দিয়েছে। আমার মনে হয় নিজের হাতে তৈরি করা ঈদ কার্ড পাওয়ার আনন্দ খুব বেশি মানুষের হয়নি, সেই হিসেবে আমি খুব সৌভাগ্যবান। এই দেশের ছোট ছোট বাচ্চারা এখনও নিয়মিতভাবে নিজের হাতে ঈদ কার্ড তৈরি করে আমাকে পাঠায়।

তবে যে বিষয়টি আগে একেবারেই ছিল না এখন প্রবলভাবে হয়েছে সেটি হচ্ছে, ঈদ উপলক্ষে পাঠানো এসএমএস। অন্যদের কথা জানি না, আমার ‘ঈদ এসএমএস’ পড়ে শেষ করতে কয়েকদিন লেগে যায়!

২.

এই লেখাটি যখন ছাপা হবে তখন ঈদ সবেমাত্র শেষ হয়েছে, তাই সবার জন্যে রইল ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের শুভেচ্ছা কথাটি লিখতে গিয়েও আমি থমকে দাঁড়িয়েছি, আমি কি সবাইকে এই শুভেচ্ছাটি দিতে পারব! প্রতিদিন খবরের কাগজ অবরুদ্ধ গাজার স্বজনহারা ফুটফুটে শিশুদের আতঙ্কিত ছবি ছাপা হচ্ছে। (যখন এটি লিখছি তখন এক হাজারের বেশি মানুষকে ইজরায়েলি সৈন্যরা হত্যা করে ফেলেছে!) আমি যদি সেই শিশুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাই তাহলে তারা কি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না?

তাদের চোখের সেই নিরব অভিশাপ থেকে নির্বিকার পৃথিবীর নির্বিকার মানুষ কখনও কি মুক্তি পাবে?

২৭.৭.১৪

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *