ঈদের চাঁদ
সিঁড়ি-ওয়ালাদের দুয়ারে এসেছে আজ চাষা মজুর ও বিড়িওয়ালা; মোদের হিস্সা আদায় করিতে ঈদে দিল হুকুম আল্লাতালা! দ্বার খোলো সাততলা-বাড়িওয়ালা, দেখো কারা দান চাহে, মোদের প্রাপ্য নাহি দিলে যেতে নাহি দেব ঈদ্গাহে! আনিয়াছে নবযুগের বারতা নতুন ঈদের চাঁদ, শুনেছি খোদার হুকুম, ভাঙিয়া গিয়াছে ভয়ের বাঁধ। মৃত্যু মোদের ইমাম সারথি, নাই মরণের ভয়; মৃত্যুর সাথে দোস্তি হয়েছে – অভিনব পরিচয়। যে ইসরাফিল প্রলয়-শিঙ্গা বাজাবেন কেয়ামতে– তাঁরই ললাটের চাঁদ আসিয়াছে, আলো দেখাইতে পথে। মৃত্যু মোদের অগ্রনায়ক, এসেছে নতুন ঈদ, ফিরদৌসের দরজা খুলিব আমরা হয়ে শহিদ। আমাদের ঘিরে চলে বাংলার সেনারা নৌজোয়ান, জানি না, তাহারা হিন্দু কি ক্রিশ্চান কি মুসলমান। নির্যাতিতের জাতি নাই, জানি মোরা মজলুম ভাই – জুলুমের জিন্দানে জনগণে আজাদ করিতে চাই! এক আল্লার সৃষ্ট সবাই, এক সেই বিচারক, তাঁর সে লীলার বিচার করিবে কোন ধার্মিক বক? বকিতে দিব না বকাসুরে আর, ঠাসিয়া ধরিব টুঁটি এই ভেদ-জ্ঞানে হারায়েছি মোরা ক্ষুধার অন্ন রুটি। মোরা শুধু জানি, যার ঘরে ধনরত্ন জমানো আছে, ঈদ আসিয়াছে, জাকাত আদায় করিব তাদের কাছে। এসেছি ডাকাত জাকাত লইতে, পেয়েছি তাঁর হুকুম, কেন মোরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মরিব, সহিব এই জুলুম? যক্ষের মতো লক্ষ লক্ষ টাকা জমাইয়া যারা খোদার সৃষ্ট কাঙালে জাকাত দেয় না, মরিবে তারা। ইহা আমাদের ক্রোধ নহে, ইহা আল্লার অভিশাপ, অর্থের নামে জমেছে তোমার ব্যাঙ্কে বিপুল পাপ। তাঁরই ইচ্ছায় – ব্যাঙ্কের দিকে চেয়ো না – ঊর্ধ্বে চাহো, ধরার ললাটে ঘনায় ঘোলাটে প্রলয়ের বারিবাহ! আল্লার ঋণ শোধ করো, যদি বাঁচিবার থাকে সাধ ; আমাদের বাঁকা ছুরি আঁকা দেখো আকাশে ঈদের চাঁদ! তোমারে নাশিতে চাষার কাস্তে কী রূপ ধরেছে, দেখো, চাঁদ নয়, ও যে তোমার গলার ফাঁদ! দেখে মনে রেখো! প্রজারাই রোজ রোজা রাখিয়াছে, আজীবন উপবাসী, তাহাদেরই তরে এই রহমত , ঈদের চাঁদের হাসি। শুধু প্রজাদের জমায়েত হবে আজিকার ঈদ্গাহে, কাহার সাধ্য, কোন ভোগী রাক্ষস সেথা যেতে চাহে? ভেবো না ভিক্ষা চাহি মোরা, নহে শিক্ষা এ আল্লার, মোরা প্রতিষ্ঠা করিতে এসেছি আল্লার অধিকার! এসেছে ঈদের চাঁদ বরাভয় দিতে আমাদের ভয়ে, আবার খালেদ এসেছে আকাশে বাঁকা তলোয়ার লয়ে! কঙ্কালে আজ ঝলকে বজ্র, পাষাণের জাগরণ, লাশে উল্লাস জেগেছে রুদ্র উদ্ধত যৌবন! দারিদ্র্য-কারবালা-প্রান্তরে মরিয়াছি নিরবধি, একটুকু কৃপা করনি, লইয়া টাকার ফোরাত নদী। কত আসগর মরিয়াছে, জান, এই বাপ মা-র বুকে? সকিনা মরেছে, তোমরা দখিনা বাতাস খেয়েছ সুখে! শহিদ হয়েছে হোসেন, কাসেম, আসগর, আব্বাস, মানুষ হইয়া আসিয়াছি মোরা তাঁদের দীর্ঘশ্বাস! তোমরাও ফিরে এসেছ এজিদ সাথে লয়ে প্রেত-সেনা, সেবারে ফিরিয়া গিয়াছিলে, জেনো, আজ আর ফিরিবে না। এক আল্লার সৃষ্টিতে আর রহিবে না কোনো ভেদ, তাঁর দান কৃপা কল্যাণে কেহ হবে না না-উম্মেদ ! ডাকাত এসেছে জাকাত লইতে, খোলো বাক্সের চাবি! আমাদের নহে, আল্লার দেওয়া ইহা মানুষের দাবি! বাঁচিবে না আর বেশিদিন রাক্ষস লোভী বর্বর, টলেছে খোদার আসন টলেছে, আল্লাহু-আকবর! সাত আশমান বিদারি আসিছে তাঁহার পূর্ণ ক্রোধ। জালিমে মারিয়া করিবেন মজলুমের প্রাপ্য শোধ।