ইহুদি সমাজে ঘেটো ব্যবস্থা

ইহুদি সমাজে ঘেটো ব্যবস্থা

পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি ও কাহালভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রতি ইহুদিরা কতটা অনুগত, তা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই প্রতিটি বিষয় ইহুদিদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ, যা আজ পর্যন্ত নিজেদের রক্ত প্রবাহে অক্ষুণ্ণ রেখেছে। একই কথা পুনরায় বলার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে।

প্রাচীন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অনুশাসন কখনো এক নয়। যখন কোনো মানব সম্প্রদায় তাদের আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক জীবনশৈলীকে বংশপরম্পরায় বহন করে থাকে, তখন তাকে বলা হয় ঐতিহ্য। এটা মূলত অঞ্চলকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অপরদিকে, ধর্মীয় অনুশাসন হলো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জীবনবিধান। একজন মানুষ কীভাবে তার প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করবে, ভালো ও খারাপের পার্থক্য বুঝবে এবং সকল কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তার শাশ্বত পাথেয় হলো ধর্মীয় অনুশাসন। এটা মূলত গ্রন্থকেন্দ্ৰিক।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দস্যুর আক্রমণ, সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, জীবিকার তাগিদ ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ যখন তার জন্মভূমি ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, তখন নতুন সংস্কৃতির ছোঁয়ায় জীবন প্রবাহে পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সর্বদা প্রবহমান ও পরিবর্তনশীল। শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখেছে—এমন অসংখ্য নজির পৃথিবীতে পাওয়া যাবে। এ কারণে খ্রিষ্টবাদ ও ইসলাম আন্তর্জাতিক ধর্মে রূপলাভ করেছে। যদি কোনো সামাজিক রীতিনীতি বা প্রাচীন ঐতিহ্য ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তবে তা গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা নেই। এ কারণে তাদের মাঝে পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি বলতে কিছু ছিল না। পৃথিবীর যে অংশের মানুষের সাথে তারা বসবাস করেছে, সেখানেই তারা মিশে গেছে। মুসলিম, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষ একই পাড়ায় বসবাস করেছে, কিন্তু তাদের মাঝে সৌহার্দ্যের কোনো অভাব ছিল না। সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হলেও তা অল্পতেই শেষ হয়ে যেত।

এবার ইহুদিদের সম্পর্কে আসি। ধর্মীয় বিশ্বাসের চেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্য ও সামাজিক রীতিনীতির গুরুত্বই ইহুদিদের নিকট অধিক বেশি। তবে যাযাবর জাতি হয়েও যে ইহুদিরা আজ অবধি নিজেদের জ্যান্টাইল সম্প্রদায় হতে অচ্ছুত রাখতে পেরেছে—এ জন্য অবশ্যই প্রসংশা করা উচিত।

এর পেছনে অবশ্য ইহুদিদের বিশেষ একটি সমাজব্যবস্থার অবদান রয়েছে, যার নাম ‘ঘেটো’। এটি অনেকটা গ্রাম বা মহল্লার মতো, যেখানে সংঘবদ্ধ উপায়ে বসবাসের জন্য গড়ে তোলে পৃথক কোনো উপনিবেশ। যতদিন পর্যন্ত না ইজরাইল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, ততদিন ইহুদিরা এই উপায়ে বসবাস করবে—এটাই ছিল প্রতিজ্ঞা।

এ সম্পর্কে নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কের পাশে অবস্থিত Congregation Shearith Israel সিনাগগটির রাবাই David de Sola Pool তার একটি বিবৃতিতে বলেন—

‘ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। ইহুদি জাতীয়তাবাদের প্রকৃত স্বাদ কেবল এই সমাজব্যবস্থার মাঝেই নিহীত। মুখে দাড়ি রাখা, মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা, ধর্মীয় বই সঙ্গে রাখা, দ্রুত পদক্ষেপে রাস্তায় হাঁটা ও সাব্বাতসহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করা কেবল এই সমাজব্যবস্থার কল্যাণেই সম্ভব হচ্ছে।’

অপর একটি বিবৃতিতে রাবাই Dr. M. H. Segal বলেন—

‘শেষ বিশ্বযুদ্ধটি পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ায় বসবাসরত ইহুদিদের পুনরায় তাদের পূর্ব সমাজব্যবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে ইহুেিদর অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। এই অভিবাসীরা পৃথিবীর যেখানে গিয়েছে, সেখানেই ঘোটো সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বলা বাহুল্য, এই মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির কল্যাণে ইহুদিরা আজও নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সগর্বে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জাতীয়তা টিকিয়ে রাখার অধিকার পৃথিবীর প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর আছে। কিন্তু সমস্যা হয়—যখন এই পৃথক জাতিসত্তা নীতি সহ্যের চরমসীমা অতিক্রম করে এবং স্বাধীন একটি সমাজব্যবস্থার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখার আন্দোলনে Israel Friedlaender হলেন অন্যতম এক পথিকৃৎ। ১৯০৯ সালে The Problem of Judaism in America শিরোনামে তিনি একটি বক্তৃতা প্রদান করেন। সেখানে বলেন-

‘যেকোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠার কিছু উপায় আছে—

১. অ্যান্টি-সেমিটিজম ছড়িয়ে দিতে হবে।

২. ইহুদি অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

৩. স্বাধীন দেশগুলোতে ঘেটো সংস্কৃতি জোরদার করতে হবে।’

কিছুদিন পর তিনি একটি আর্টিকেল প্রকশ করেন, যার নাম ‘The Americanization of the Jewish Immigrant।’ সেখানে তিনি বলেন—

‘যতই অনাকর্ষণীয় বা কুৎসিত হোক না কেন, আমাদের প্রাচীন ও সেকেলে পোশাক রীতি বজায় রাখা উচিত। পৃথিবী যতই আধুনিক হোক না কেন, আমরা প্রাচীন শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে পারি না।’

তার পরামর্শে সে সময় পোল্যান্ড থেকে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় প্রবেশ করে, যাদের পোশাক-আশাকে ছিল সেই প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি প্রজন্ম যেন এই সংস্কৃতিকে নিজেদের রক্তে ধারণ করে বড়ো হয়, সেজন্য একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ইহুদি সন্তাদের এ জাতীয় পোশাক পরিধান করতে বাধ্য করা হয়। আগেই বলেছি, যদি এমন হতো—তারা কেবল নিজেদের নিয়ে পড়ে আছে, ইহুদিদের সামাজিক রীতিনীতি অন্যান্যদের জীবন-প্রবাহে কোনো সমস্যা তৈরি করছে না, তবে এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু দিনে দিনে ইহুদিরা যে আমাদের ওপর চড়াও হয়ে উঠছে, তা চতুর্দিকে চলমান বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালেই উপলব্ধি করা সম্ভব।

যেমন : বেশ কিছুদিন আগে আমেরিকার এক বিজ্ঞাপনী সংস্থা তার ইহুদি মক্কেলের জন্য একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে, যেখানে তারা ‘আমেরিকানিজম’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করে। তৎক্ষণাৎ এই খবর Anti-Defamation League ও B nai Brith সংগঠন দুটির নিকট চলে যায়। তারা বিজ্ঞাপন সংস্থাটিকে মাফ চাইয়ে ছাড়ে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দেয়, যেন এমন ভুল দ্বিতীয়বার না হয়।

ইহুদিরা বিশ্বাস করে, সংখ্যায় অতি অল্প হয়েও তাদের যে শক্তি, তা কেবল ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তার ফলেই সম্ভব হয়েছে। যদি ঘেটো সংস্কৃতি সমাজ থেকে হারিয়ে যায়, তবে এই ঐক্যবদ্ধ শক্তিও হুমকির মুখে পড়বে। যে আধ্যাত্মিক ও অতিমানবীয় শক্তি তারা অর্জন করেছে, তা খড়কুটার ন্যায় দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই এ সমাজব্যবস্থার গুরুত্ব বর্ণণা করতে গিয়ে রবাই David de Sola Pool বলেন-

‘আমাদের নতুন প্রজন্মগুলো এমন সব পারিপার্শিক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড়ো হচ্ছে, যেখানে ধর্মীয় অনুশাসনের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত নেই। চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, আগামী দিনগুলোতে এই অনুশাসন মেনে চলা প্রতিটি ইহুদির জন্য আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। নিজ জাতিসত্তার প্রকৃত পরিচয় পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমাদের পুনরায় মধ্যযুগীয় ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত; নতুবা একদিন আমরা খড়কুটোর ন্যায় দুর্বল হয়ে পড়ব।’

“The beginning of the decay’ আর্টিকেলটিতে Israel Friedlaender উল্লেখ করেন—

‘ইহুদিদের ধর্মীয় ও জাতিতাত্ত্বিক অধঃপতন সেদিন থেকে শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে তারা ঘেটো সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে জ্যান্টাইলদের সমাজব্যবস্থায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে।’

কীভাবে এই অধঃপতনের সূচনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে David de Sola Polo বলেন—

‘জ্যান্টাইলরা যেভাবে তাদের মস্তক অনাবৃত রেখে প্রার্থনা করে, ইহুদিরাও আজ একই উপায়ে প্রার্থনা করছে। হিব্রু ভাষাকে উপেক্ষা করে অন্যদের ন্যায় তারাও আজ ইংরেজিতে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করছে। সাব্বাতের গুরুত্ব আমাদের অনেকের নিকট বহুলাংশে কমে গেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে আজ যে সংগীত ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও জ্যান্টাইলদের হাতে তৈরি হচ্ছে।’

এজন্য Mr. Friedlaender তার বিভিন্ন বিবৃতিতে বলেছেন—

‘ইতিহাসজুড়ে যে সকল ধর্মীয় সহিংসতার দরুন আমরা অসংখ্যবার রক্তাক্ত হয়েছি, তা একদিক থেকে আমাদের অনেক উপকারও করেছে। এটা আমাদের বুঝিয়েছে, জাতীয় একতা ও জাতিতাত্ত্বিক পরিচয়ের গুরুত্ব কতটুকু। সংখ্যায় অধিক হয়েও কেবল একতার অভাবেই যে অনেক জাতি বিলীন হয়ে গেছে, এমন অনেক উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলালেই পাওয়া যায়। যখনই আমরা জাতীয় স্বার্থকে ছোটো করে ব্যক্তিস্বার্থকে বড়ো করে দেখছি, তখনই বিপদে পড়তে হয়েছে। সে সময় সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। কারণ, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই নিজেদের শক্তিশালী করতে আমাদের পুনরায় ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে আসতে হবে।’

Cyril M. Picciotto Conceptions of the State and the Jewish Question’-এ উল্লেখ করেন—

‘আধ্যাত্মিকতা হরিয়ে গেলে আর কখনো ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের মধ্য হতে এমন একটি দল থাকা বাঞ্চনীয়, যারা সবাইকে ধর্মের পথে আহ্বান করবে এবং ধর্মীয় অনুশাসনে উৎসাহিত করবে। আরেকটি দল থাকবে রাজনৈতিক সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে যেকোনো ধ্বংসাত্মক কাজে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকবে। সাম্প্রতিক বলশেভিক বিপ্লব এমনই একটি উদাহরণ।’

রাবাই Segal তার আর্টিকেল ‘The Future of Judaism’-এ উল্লেখ করেন—

‘আগাগোড়া ভণ্ডামিতে পরিপূর্ণ যে বিজাতীয় সমাজব্যবস্থায় আজ আমরা বসবাস করছি, তার চেয়ে মধ্যযুগীয় নিপীড়িত সমাজব্যবস্থা অনেক মধুর ছিল। নির্যাতনের স্বীকার হলেও সে সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে— কীভাবে পারস্পরিক সম্প্রিতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন-

‘কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও অনুশাসন মেনে চলা যেন একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র শাসনের পূর্ণ ক্ষমতা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠদের হাতে চলে যায়, তবে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হবে এটাই স্বাভাবিক। উঁচু পদগুলোতে সংখ্যালঘুরা জায়গা করে নিতে না পারলে একদিন তারা হারিয়ে যাবে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে আজও অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেখা মেলে, যারা বহু বছর ধরে সেখানে টিকে আছে। এর কারণ, জাতীয়তাবাদ নীতি এবং সাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থা। কেবল নির্যাতন-নিপীড়নে একটি জাতি ধ্বংস হয় না—প্রকৃত ধ্বংস হয়; যখন তারা নিজেদের শিকড় হারিয়ে ফেলে। এ কারণে বলতে চাই, মধ্যযুগীয় ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ব্যতীত আমাদের আর কোনো উপায় নেই। ‘

আশা করি, ইহুদিদের নিকট ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থার গুরুত্ব কতটুকু, তা আপনারা বুঝতে পারছেন। তবে একটু ভালোভাবে লক্ষ করলে ইহুদিদের প্রত্যেকটি কাজের মাঝেই দুমুখো নীতির ছাপ খুঁজে পাবেন। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বাইবেল পাঠ উঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু নিজ সন্তানদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাশ করেছে—গির্জায় যাওয়া কিংবা ধর্মীয় বই পাঠে খ্রিষ্টান অভিভাবকরা সন্তানদের জোর করতে পারবে না, কিন্তু নিজেদের বেলায় ঘটেছে এর উলটো। সম-অধিকারের নামে ইহুদিরা নারীসমাজকে দিয়ে উগ্রতার চাষ করাচ্ছে, কিন্তু তারা পুরো পরিবার এক হয়ে ঠিকই সাব্বাত পালন করছে। জ্যান্টাইল তরুণদের শরীরে আধুনিকতা ও নাস্তিকতার রং ছিটিয়ে দিলেও নিজেদের জন্য বেঁধে দিয়েছে ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।

আসলে জাতীয়তাবাদের চেতনায় ইহুদিরা নিজেদের অবস্থান যতটা শক্ত করতে পেরেছে, জ্যান্টাইল সমাজ তা পারেনি। তবে একই ভূখণ্ড যে বহুজাতিক মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারে না—এমনটা ভাবা কখনো উচিত নয়। কারণ, পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে শ’খানেক মানুষ একত্রে বসবাস করছে। এমনকী তাদের রয়েছে বহুরূপী ভাষা, তবুও তারা শান্তিতে বসবাস করছে! তাহলে ইহুদিরা কেন পারবে না? আসলে সমস্যাটা মানসিকতায়।

আজ পর্যন্ত ইহুদিদের যতজন সদস্য এই মানসিক সমস্যা হতে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, তারাই আমাদের সাথে আনন্দচিত্তে মিশে যেতে পেরেছে। তাই বলে তারা যে—ধর্ম জলাঞ্চলি দিয়ে এসেছে, তা কিন্তু নয়। আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত উঠাবসা করলেও তারা কখনো সাব্বাত পালনে ছাড় দেয় না এবং উৎসবের দিনগুলোতে সিনাগগে যাওয়ার কথা ভুলে যায় না।

তবে ইহুদিদের অধিকাংশ সদস্য এই চেতনা গ্রহণ করতে পারেনি। তাদের বিশ্বাস, এই জাতীয়তাবাদ কখনো ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সাময়িক সময়ের জন্য বাধ্য হয়ে ইহুদিরা এই অঞ্চলগুলোতে খুঁটি গেড়ে বসলেও দ্রুতই তাদের জেরুজালেম ফিরে যেতে হবে; নতুবা ইহুদিদের আত্মা পরিপূর্ণতা পাবে না এবং মহান মসিহের সাথে সাক্ষাৎ মিলবে না। তাই খুব সুচতুর উপায়ে তাদের জ্যান্টাইল সমাজে কাজ করে যেতে হবে। ঠিক যেমন Cyril M. Picciotto বলেছেন, ‘একটি দল থাকবে যারা নিয়মিত ধর্মের প্রতি আহ্বান করবে; দ্বিতীয় দলটি বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাবে এবং শেষ দলটি ধ্বংসাত্মক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর শক্তিধর সব রাষ্ট্রের পতন ঘটাবে—যা জেরুজালেমে ফিরে যাওয়ার পথ সহজতর করবে।’

ইহুদিদের কিছু গুপ্ত সংগঠনের পরিচয়

অনেকে বলে—ইহুদিদের গুপ্ত সংগঠনগুলো চারপাশ থেকে আমাদের অক্টোপাসের মতো পেচিয়ে ধরেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে যখন এমন কয়েকটি সংগঠনের নাম জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তারা কিছুই বলতে পারে না। The Jewish Kehillah, American Jewish Committee ও B’nai Brith-এর নাম কয়জন শুনেছে? ভালোভাবে জরিপ করলে এক শতাংশ মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা এদের নাম পর্যন্ত শুনেছে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নে তাদের রয়েছে অসীম ক্ষমতা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী—১৯২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকাতে তাদের ৬,১০০টি সংগঠন গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে ৩,৬৩৭টি কেবল নিউইয়র্কেই অবস্থিত। তাদের যে সংগঠনটির সঙ্গে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তা হলো— B’nai B’rith। সংগঠনটির আরও এক নাম আছে—Independent Order of Bnai Brith, যার সদর দপ্তর শিকাগোতে অবস্থিত। ১৮৪৩ সালে Henry Jones-এর হাত ধরে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

Mr. Jones একবার তার কিছু বন্ধুর সঙ্গে এসেক্সের কোনো মদের দোকানে বসে এমন একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন, যা বিশ্বব্যাপী ইহুদিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। সংগঠনটির নাম হিব্রুতে করা হয় B’nai B’rith; অর্থাৎ ভাইদের চুক্তিনামা। পরিচালনা পর্ষদে থাকা সবাই একে অন্যকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের শাখা প্রতিষ্ঠান ভারত, প্যালেস্টাইন, পারস্য, আরব ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেছে। সাম্প্রাদায়িকতার বিষ ঢেলে দিয়ে প্রতিটি দেশে ইহুদিরা যে অন্তর্কোন্দলের জন্ম দিয়েছে, তার শেষ কোথায়—তা কেউ জানে না।

তাদের প্রতিটি সংগঠনকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করছে Alliance Israelite Universal। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জমজ ভাইয়ের মতো Kehillah ও Jewish Committee সংগঠন দুটি গড়ে ওঠে। তখন General Bingham মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের ক্ষমতায় ছিলেন। তার নির্দেশে নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ওপর তদন্ত শুরু হয়।

উনিশ শতাব্দীর শুরুতে একদল আমেরিকান পর্ন বাণিজ্যে মেতে ওঠে। শিশু পর্ন থেকে শুরু করে তারা সব ধরনের পর্ন নির্মাণ করত। সেখানে সাদা চামড়ার মেয়েদের বিশেষভাবে ব্যবহার করা হতো। এই পুরো অপরাধ চক্রটিকে তখন বলা হতো—’White Slave Traffic’। তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশিত হয়, এই অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত ৫০ ভাগেরও অধিক সদস্য হলো ইহুদি। এই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তাদের গুপ্ত সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসে।

ইহুদিরা চায় না বিশ্ববাসী তাদের কুকর্মের কথা জেনে যাক। তারা Mr. Bingham-কে চাপ দিতে শুরু করে, যেন এ নিয়ে আর কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা না হয়। সামনের দিনগুলোতে তাদের যেন এ জাতীয় অযাচিত কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয়, সেজন্য ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় American Jewish Committee। পরে এর শাখা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর আরও বহু দেশে।

‘Kehillah’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘Kahal’ শব্দ থেকে, যার অর্থ সম্প্রদায়, জনসমাবেশ বা নির্বাচিত সরকার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি আলোচনার মধ্য দিয়ে পোল্যান্ড ও রুমানিয়াতে Kahal প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে তা নিউইয়র্কেও বিস্তার পায়। অর্থাৎ আমেরিকায় বসবাসরত খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের জন্য রয়েছে পৃথক বিচারব্যবস্থা। পৃথিবীতে সংগঠনটির যতগুলো শাখা রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো নিউইয়র্কের শাখাটি। ক্যাথলিকদের জন্য ভ্যাটিকান, মুসলিমদের জন্য মক্কা এবং ইহুদিদের জন্য নিউইয়র্ক একই অর্থ বহন করে। এই শহরটি জেরুজালেমের চেয়েও অধিক নিরাপদ। সংগঠনটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হলো—

‘নিউইয়র্কে ইহুদিদের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সর্বস্তরে নিজেদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা।’

এটি মূলত ইহুদিদের একটি মৈত্রী সংগঠন। নিউইয়র্কে গড়ে উঠা ইহুদিদের বিভিন্ন ব্যাবসা, শিল্প, ব্যাংকিং, গুপ্ত, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও স্বেচ্ছা সংগঠনগুলো এর সদস্য। সংগঠনটি যতটা না রক্ষণাত্মক, তারচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক। পুরো নিউইয়র্ককে তারা ১৮টি জেলায় বিভক্ত করেছে এবং প্রতিটি জেলাকে কেন্দ্র করে নতুন কিছু ঘেটো গড়ে তুলেছে। এখান থেকে পাশ হওয়া আইনগুলো পৌঁছে যায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা অফিসে।

প্রথম বছর ২২২টি সংগঠন Kehillah-এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৭৪টি সিনাগগ, ১৮টি দাতব্য সংস্থা, ৪২টি সমবায় সংগঠন, ৪০টি ক্লাব, ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৯টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ৯টি সংগীত প্রতিষ্ঠান, ৯টি জায়োনিস্ট সংগঠন এবং ৯টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পরবর্তী বছর আরও ২৩৮টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ১৩৩টি প্রার্থনা গৃহ, ৫৮টি ক্লাব সংগঠন, ৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিবছরই এর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এর কত হাজার সদস্য রয়েছে—তা গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। এত বড়ো একটি সংগঠন হওয়ার পরও অধিকাংশ মানুষ Kehillah সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। প্রথম জায়োনিস্ট সম্মেলনে Judha L. Magnes সংগঠনটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন—

‘ইহুদিদের স্বার্থ, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ধরনের একটি সংগঠন গড়ে তোলা আবশ্যক।’

তার এই বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে রাবাই Asher উচ্চৈঃস্বরে বলে ওঠেন—

‘গোটা আমেরিকার স্বার্থ এক, আর আমাদের স্বার্থ হবে আরেক।

১৯১৭-১৮ সালে নিউইয়র্কের একটি অ্যাজেন্সি সেখানে বসবাসরত ইহুদিদের জনসংখ্যা প্রকাশ করে। সেখানে দেখানো হয়—ম্যানহ্যাটন ৬,৯৬,০০০, ব্রোকলাইন ৫,৬৮,০০০, ব্রোনক্স ২,১১,০০০, কুইন্স ২৩,০০০, রিচমন্ড ৫,০০০ সর্বমোট ১৫,০৩,০০০ জন ইহুদি। এরা প্রায় তিন বছর আগে নিউইয়র্ক শহরে বাস করত। এবার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ককে ১৮টি জেলা ও ১০০টি ঘেটোতে বিভক্ত করা হয়েছে।

এই ঘেটোগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বিভাজন রয়েছে। যেমন : বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, আবাসিক এলাকা ইত্যাদি। West Side and Harlem District-এ তাদের আবাসিক ঘেটোগুলো অবস্থিত।

১৯১৫ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্কের প্রতি বর্গমাইলে ১৬,০০০ মানুষ বসবাস করত, যার এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫,৩৩৩ জনই ছিল ইহুদিদের সদস্য। কিছু কিছু জায়গায় বর্গমাইল প্রতি ইহুদিদের জনসংখ্যা ছিল ২০,০০০-৩০,০০০-এর বেশিও। বোঝাই যাচ্ছে, এই শহরে তাদের সদস্য সংখ্যা কতটা সমৃদ্ধ।

মূলত সংগঠনটি প্রতিষ্ঠাকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের সদস্যদের এখানে জড়ো করা হয়েছিল, যেন মার্কিন প্রশাসনের বিশেষ নজর আকর্ষণ করা যায়। পরে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া ও পোল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি হলেও আমেরিকার সকল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু নিউইয়র্ক। তাই এই শহরটিকে নিয়েই ইহুদিদের এত পরিকল্পনা। কেউ যদি আমেরিকার সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে চায়, তবে নিউইয়র্ক শহর কেন্দ্র করেই করতে হবে। তাই আজ হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাদে এই শহরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ইহুদিদের দখলে।

আমেরিকার প্রতি দশজনের মধ্যে নয়জন ইহুদি American Jewish Commitee-এর সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। কোথাও যদি তাদের ৩০ থেকে ৭৫ জনের একটি গোষ্ঠী থাকে, তবে তা পরিচালনার জন্য অবশ্যই একজন দলপতি, রাবাই বা অফিসার থাকবে; যে Kehillah-এর প্রধান সদরদপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। মজার বিষয় হলো—তাদের তালিকায় এমন অনেক খ্রিষ্টান পাদরির নাম রয়েছে, যাদের প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা হবে বলে পরিকল্পনাভুক্ত করা হয়েছে; এমনকী কীভাবে ব্যবহার করা হবে—সে পরিকল্পনাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শুরুতে তাদের কিছু দুশ্চিন্তা ছিল। যদি সাধারণ মানুষ সংগঠনটির কথা জেনে যায়, তাহলে আন্দোলন শুরু করতে পারে। পরে সেই ভয় কেটে যায়। কারণ, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়, আদালত, সংবাদপত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই ইহুদিদের সদস্য দিয়ে ভরে গেছে। কীভাবে সাধারণ মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়, তা ইহুদিদের ভালো করেই জানা আছে। মূলত আমেরিকানদের মতো ব্রেইন ওয়াশড জাতি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।

১৯১৮ সালের সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য হিসেবে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের কয়েকজনের পরিচয় দেওয়া হলো। ব্যাংকার Jacob H. Schiff, আইনজীবী ও American Jewish Committee-এর প্রেসিডেন্ট Louis Marshall, নিম্ন আদালতের বিচারক Otto A. Rosalsky, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার মালিক Adolph S. Ochs, Kuhn Loeb & Company-এর সদস্য Otto H. Kahn, লেনিনের সাথে সদ্য বৈঠক শেষ করে আসা Benjamin Schlesinger, Amalgamated Clothings Workers-এর মহাপরিচালক Joseph Schlossberg, বলশেভিক বিপ্লবের উপদেষ্টা Max Pine, শ্রমিক নেতা Joseph Barondess, আমেরিকার War Risk Insurance-এর প্রধান পরিচালক Judge Mack।

এ ছাড়াও আরও অনেক ইহুদি সংগঠন এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। যেমন : Central Conference of American Rabbis, Easter Council of Reform Rabbis, Independent Order of B’rith, Independent Order of B’rith Sholom, Independent Order Free Sons of Israel, Independent Order B’rith Abraham, Federation of American Zionists, Orthodox Jews, Reform Jews, Apostate Jews, Zionist Jews, American Jews, Rich Jews, Poor Jews, Red Revoulationary Jews এবং আরও অনেক।

এই প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়েছে ইহুদিদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে—তারা কী এমন বিপদ বা হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চাইছে? এ দেশে কি এমন কেউ আছে, যে অন্যের অধিকার হরণ করতে চায়? আমেরিকার সাধারণ মানুষরা কি এমন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, যা তারা পাচ্ছে না? তাহলে তারা কাদের বিরুদ্ধে এবং কী উদ্দেশ্যে সংগঠিত হচ্ছে? কোন অত্যাচার-নির্যাতনের দোহাই দিয়ে তারা এই মায়াকান্না দেখাচ্ছে?

যদি American Jewish Committee নিয়ে অনুসন্ধান করা যায়, তবে তাদের মাঝেও একই উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে। সংগঠনটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পুরো আমেরিকাকে ১২টি জেলায় বিভক্ত করেছে। সর্বশেষ জেলাটি হলো নিউইয়র্ক, যা তারা District XII বলে। এবার সাংগঠনিক উদ্দেশ্যগুলো নিচে উপস্থাপন করা হলো—

১. ইহুদিরা যেন বিশ্বের কোথাও কোনো প্রকার নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা।

২. কোথাও যেন বৈষম্যের স্বীকার হতে না হয়, সেজন্য প্রয়োজনে আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা করা।

৩. অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষায় সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

৪. যেকোনো সামাজিক নিপীড়ন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা করা।

মূলত ইহুদিদের নিরাপত্তার অর্থ হলো—জ্যান্টাইল সমাজ কখনো তাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে পারবে না। এককথায় অবারিত স্বাধীনতা। রাবাই Elias L. Solomon-এর একটি উক্তি নিচে উল্লেখ করা হলো—

‘আমেরিকার বাইরে এমন কোনো ইহুদি নেই, যে তার ভাগ্যের জন্য এই দেশটির দিকে তাকিয়ে নেই। ইহুদিদের নিকট এই দেশ হলো অনন্ত স্বাধীনতার দেশ। এটা এজন্য নয় যে, আমেরিকার মানুষ আমাদের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দিচ্ছে; বরং প্রকৃতি আমাদের জন্য এভাবেই গড়ে তুলেছে।’

তারা বর্হিবিশ্বের নিকট আমেরিকাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন এটি একটি স্বর্গরাজ্য; এখানে যা ইচ্ছা করা সম্ভব। সবার জন্য আমেরিকা একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত দেশ। এখানে সকল ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচার গ্রহণীয়। স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে উদারপন্থি নীতি দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একটা বিষয় ভাবুন, আমরা যদি সত্যিই স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, তাহলে এত আইনের কড়াকড়ি থাকতে হবে কেন? মূলত এসব ছিল তাদেরই পরিকল্পনার অংশ, যা দ্বারা আমেরিকাকে সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সামনেই এর প্রমাণ পাবেন।

ইহুদি বর্ষ ৫৬৬৮ (১৯০৭-১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ) অনুযায়ী—

‘আমেরিকার সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধর্মনিরপেক্ষকরণ এবং তা হতে খ্রিষ্টান ও সকল ধর্মের চিহ্ন সরিয়ে দেওয়া ইহুদিদের সাংবিধানিক অধিকার।’

ইহুদিদের প্রটোকলের একটি ধারায় বলা হয়েছে—পৃথিবীর সকল ধর্ম মুছে দিয়ে একমাত্র ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের হাজার বছরের উদ্দেশ্য। প্রথম ধাপে মানুষকে নাস্তিক্যবাদে ধাবিত করতে হবে। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও উদারপন্থি নীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এভাবে একটি-দুটি প্রজন্ম পেরিয়ে গেলে মানুষের মনে ধৰ্মীয় চেতনা এমনিতেই হ্রাস পেতে শুরু করবে।

কিছু মানুষ থাকবে যারা নিজ ঘরে ধর্ম পালন করা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। রাস্তায় নেমে কথা বলার মতো সাহস তাদের হবে না; তার ওপর নগ্নতা ভরা যৌন চলচ্চিত্রের প্রদর্শন তো আছেই। একসময় মানুষ ধর্ম কী, তা-ই ভুলে যাবে; প্রতিষ্ঠা পাবে নাস্তিক্যবাদ। যখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না, তখনই ইহুদিরা নিজেদের ধর্ম নিয়ে আবির্ভূত হবে।’

আমেরিকানদের কপালে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। আজ সরকারি অফিসগুলোতে ‘Christmas Tree’ এবং ‘Christmas carols’-এর কোনো আয়োজন করা হয় না। যীশুখ্রিষ্টের ক্রুশচিহ্ন এখন আর কোনো সরকারি অফিসে ঝুলিয়ে রাখা হয় না। ধর্মের ওপর এত কেন বল প্রয়োগ, তা নিয়ে তদন্ত করতে গেলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। যদি কেউ মুখ খুলতে চায়, তবে তাকে অ্যান্টি-সেমাইট বলে থামিয়ে দেওয়া হয়। Justice Brewer তার একটি আর্টিকেলে উল্লেখ করেন—

‘খ্রিষ্টধর্ম আমেরিকায় বহু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। যারা এই ধর্মকে নিয়ে কুৎসিত বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো—Herbert Friedenwald নিউইয়র্ক, Isaac Hassler ফিলাডেলফিয়া ও Rabbi Ephraim Frisch আরক্যানসাস থেকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাইবেল পাঠ এবং বড়োদিনের সংগীত অর্চনা বন্ধ করতে Central Conference of American Rabbis সংগঠনটি আইনি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু নিউইয়র্কে পালটা আন্দোলনের মুখোমুখি হলে তারা বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছা- অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়। ফিলাডেলফিয়া, সিনসিনাটি, স্টেন্ট পাওয়েল ও আরও অনেক জায়গায় ইহুদিরা পালটা আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছে।’

এগুলোই ইহুদিদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমেরিকার ডজনখানেক প্রদেশ ও শতশত শহরে তাদের এই পরিকল্পনা ইতোমধ্যে সফল হয়েছে। কিছু জায়গায় তারা ব্যর্থ হয়েছে, তবে সাময়িক সময়ের জন্য।

যদি কেউ ইহুদিদের পরিকল্পনায় সম্মতি না দেয়, তবে তার ওপর সেই পুরোনো কায়দায় অর্থনৈতিক অবরোধসহ বিভিন্ন ধরনের চাপ আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তারা আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয়।

একটি বিষয় বলে রাখা জরুরি, এখানে কিন্তু ইহুদিরা সরাসরি কাজ করছে না; বরং তারা জ্যান্টাইল ফ্রন্ট ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেন ইহুদিদের কেউ দোষারোপ করতে না পারে। আমেরিকান সরকার, প্রাদেশিক সরকার ও সিটি মেয়রকে ব্যবহারের মাধ্যমে তারা এই উদ্দেশ্যগুলো আদায় করে নিচ্ছে। এর পাশাপাশি পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো তো রয়েছেই। মানুষ চিন্তা করে পায় না—তাদের ক্ষমতাধর খ্রিষ্টান ভাইয়েরা কেন নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছে!

এবার ইহুদিদের এমন কিছু অধিকারের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো, যার জন্য তারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে এবং ইতোমধ্যে সফলও হয়েছে।

১. পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে আমেরিকায় ইহুদিদের পূর্ণাঙ্গ প্রবেশাধিকার। Kehillah গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে। Kehillah দাবি জানিয়েছে, আমেরিকায় প্রবেশে যেন তাদের কোনো সদস্যকে আইনি ঝামেলা পোহাতে না হয়। পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন—রাশিয়া, পোল্যান্ড, সিরিয়া, আরব বা মরক্কো, আমেরিকায় যেন তারা নিরাপদে প্রবেশে করতে পারে। অর্থাৎ তাদের ভিসার কোনো প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে এই প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে।

২. শহর, উপশহর, রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সকল পর্যায়ে ইহুদি ধর্মকে স্বীকৃতি প্রদান। ইহুদিরা দাবি জানিয়েছে, ইহুদি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাৎসরিক উৎসবের দিনগুলোতে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন : ইয়ম কিপুর। এ জন্য তাদের কোনো বেতন কাটা যাবে না। এ দিন হলো বাৎসরিক ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাসের দশম দিন, যেদিন তারা পাপমুক্তির জন্য প্রার্থনা করে থাকে।

কিন্তু যদি কোনো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান তার লেটেন দিবসগুলো পালনের জন্য কর্ম-বিরতি পালন করে, তবে তার বেতন কাটা যাবে। খ্রিষ্টান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একটানা ৪০ দিন তাদের রোজা রাখতে হয়, যা লেটেন দিবস নামে পরিচিত। কেন উভয় ধর্মের এক নীতি হলো না?

৩. শহর, উপ-শহর, রাষ্ট্রীয় সরকারি সকল স্থান থেকে খ্রিষ্টধর্ম অপসারণ।

১৯১৪-১৫ সালের দিকে ওকলাহোমার ইহুদিরা আদালতে একটি মামলা করে, যেন রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে খ্রিষ্টধর্ম ও যীশুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর একজন রাবাই আরক্যানসাস গভর্নরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, কেন Thanksgiving Day Proclamation-তে তিনি যীশুর নাম উল্লেখ করলেন?

৪. রাষ্ট্রীয়ভাবে সাব্বাত দিবসকে স্বীকৃতি প্রদান।

আমেরিকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলো রবিবার। এই দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিসসহ কল-কারখানা বন্ধ থাকে। তারা বহু বছর চেষ্টা করেছে–সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার করতে। তারপরও যখন ইহুদিরা নিজেদের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়, তখন জোরপূর্বক নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার বন্ধ রেখে রবিবার খোলা রাখতে শুরু করে। ইহুদি বিচারকগণ শারীরিক অসুস্থতার ভান করে শনিবারে আদালতে আসা বন্ধ করে দেয়। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো শনিবারে আংশিক বা পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ রাখে।

৫. রবিবার সরকারি ছুটির দিন হলেও এ দিনে তাদের সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক থিয়েটার খোলা থাকবে।

Jewish Sabbath Alliance-এর প্রধান Rabbi Bernard Drachman বলেন—’পবিত্র সাব্বাত পালন করাতে যা করা দরকার, আমরা তাই করব।’ এজন্য তিনি নিউইয়র্কের সকল সদস্যদের একত্রিত করে সমঝোতা করেন যে, সাব্বাত ইস্যুতে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ইহুদি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত যত খ্রিষ্টান আছে, তারা শনিবার ছুটি পালন করে রবিবার কাজে উপস্থিত হবে। এভাবে তারা কোনো কোনো শহরে ছোটো পরিসরে হলেও সাব্বাত দিবস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

৬. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশ স্টেশন, রাস্তা, পার্ক, দোকান, শপিংমল ইত্যাদির কোথাও বড়োদিন পালন করা যাবে না; এমনকী Christmas treeও প্রদর্শন করা যাবে না। নিউইয়র্কের যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খ্রিষ্টান ধর্ম পাঠ করানো হয়, সেগুলোকে তারা সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যায়িত করে। সেখানে যেন আর বড়োদিনের সংগীত অর্চনা করা না হয়, সেজন্য আদালতে মামলা করে। ইহুদিরা নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরিষদকে বাধ্য করে, যেন সেখানে Christmas tree না রাখা হয়। এ ছাড়াও আরও তিনটি বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালকে বড়োদিন পালন বন্ধ করে Christmas tree সরিয়ে নিতে বাধ্য করে।

৭. যদি কেউ ইহুদি ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে বা কোনো কটূক্তি করে, তবে অবশ্যই তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। প্রয়োজনে জনসম্মুখে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিউইয়র্কে সে সময় ঘটে যাওয়া কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য City Magistrate Cornell কেন ইহুদি যুবকদের দোষারোপ করলেন, তা নিয়ে ইহুদিদের সংগঠন Kehillah উঠেপড়ে লাগে। এই ঘটনার কিছুদিন আগে কোনো এক পুলিশ কমিশনার বিংগহামে অবস্থানবরত ইহুদিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সমালোচনা করলে সিটি মেয়রের সাহায্যে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

৮. সরকারি আদালতগুলোতে ইহুদিদের জন্য পৃথক বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার জন্য ইহুদি ধর্মাবলম্বী অপরাধীরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। নিউজার্সিতেও তাদের জন্য পৃথক বিচারব্যবস্থা করা হয়েছে।

৯. ইহুদি ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, এমন সকল বিষয় স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

Kehillah বাধ্য করেছে, যেন আমেরিকার সকল স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি থেকে শেক্সপিয়রের ‘Merchant of Venice’ এবং লাম্বের ‘Tales from Shakespeare’ বাদ দেওয়া হয়। টেক্সাস, ক্লিভল্যান্ড, ওহিও, ইয়ংগস্টাওন, এল পাসো, গালভস্টোনসহ আরও অনেক শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের জোরাজোরির কাছে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত নিয়মমাফিক পাঠ্যসূচি সাজিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি লাইব্রেরিতে চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে লেখা প্রতিটি বই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১০. যেকোনো পোস্টার বা বিজ্ঞানের শুরুতে ‘Christian’ পারিভাষিক কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘State, Religion বা Nationality’। একবার American Jewish Committee-এর প্রেসিডেন্ট Louis Marshall তার পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন ছাপাতে Christian পারিভাষিক একটি শব্দ ব্যবহার করেন—যা ইহুদিদের নীতির মধ্যে পড়ে না। পরবর্তী সময়ে এ কাজের জন্য তিনি Charles M. Schwab, Bejamin Strong ও McAdoo ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।

১৯২০ সালে একবার ইহুদিদের বেশ কিছু পত্রিকা প্রতিষ্ঠান না বুঝে খ্রিষ্টানদের থেকে অধিক বিজ্ঞাপন পাওয়ার আসায় Chrisitan শব্দটি ব্যবহার করে। তৎক্ষণাৎ Kehillah হতে সেই পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার্তা পাঠানো হয়, যেন তারা অবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং এমন কাজ দ্বিতীয়বার না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এগুলোই হলো ইহুদিদের দাবি-দাওয়ার পরিচয়। এত সব আন্দোলন চালাতে যে বিশাল অর্থ-সাহায্যের প্রয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ইহুদিদের আছে অজস্র ব্যাংক।

প্রতিবছর তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের একটি অংশ এসব আন্দোলন চালানোর ফান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইহুদিরা আজ শুধু আমেরিকাই নয়; পুরো পৃথিবীকে নিজেদের কবজায় নিয়ে এসেছে।

ইহুদিদের বিরুদ্ধে জ্যান্টাইলদের যে বৈরী আচরণ, তা নিছক কাকতালীয় ঘটনা নয়।

কারণ, তারা পৃথিবীর যে অংশেই একত্রে বসবাস করেছে, সেখানেই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা ইহুদিরা বংশ পরম্পরায় নিজেদের চরিত্রে জড়িয়ে রেখেছে। এর দরুন জ্যান্টাইলদের সাথে ইহুদিদের দ্বন্দ্ব চিরকাল অব্যাহত থেকেছে এবং থাকবে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।’ Jesse H. Holmes, in The American Hebrew

আশাহত এক ইহুদির চোখে তার সম্প্রদায়ের চিত্র

এই অধ্যায়ে আমরা ইহুদিদের মঙ্গল কামনায় একজন ইহুদির বক্তব্য উপস্থাপন করব। তিনি হলেন Bert Levy, যিনি Jewish Women’s Councils 3 B’nai B’rith-এর সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। সেই বক্তৃতায় তিনি এমন কিছু অকাট্য সত্য তুলে ধরেন, যা তার জ্ঞাতি ভাইদের মাঝে প্রবলভাবে বিদ্যমান। তিনি সেই বক্তব্যের শিরোনাম নির্ধারণ করেন—’স্বজাতির মঙ্গল কামনায়। এবার বক্তব্যটি নিচে উপস্থাপন করা হলো :

স্বজাতির মঙ্গল কামনায় : ‘বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে, ব্যথাতুর-বিষণ্ণ হৃদয়ে, স্বজাতির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা বুকে ধারণ করে আমি এ দেশে প্রবেশ করি। পোলিশ ও রাশিয়ান পিতা-মাতার সন্তান হওয়ায় খুব ছোটোকাল থেকেই কোত্থেকে যেন দুঃখের একখণ্ড কালো মেঘ আমার হৃদয়ে জেঁকে বসে। আমার পিতা-মাতা জীবদ্দশায় যে নিপীড়নের সাক্ষী হয়েছেন, সে দুঃখই হয়তো পৈতৃকসূত্রে আমার বুকে এসে স্থান পেয়েছে। বাল্যকাল থেকে সহপাঠীদের অ্যান্টি-সেমিটিক আচরণ আমাকে আরও বেশি অভিমানি করে তুলেছে।

কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছলে একটি দেশের নাম নিয়মিত শুনতে পেতাম, যেখানে আমার জাতির প্রতি কোনো প্রকার অবহেলা বা বৈষম্য করা হয় না। সেখানে তারা উড়ে বেড়াতে পারে স্বাধীন পাখির ন্যায়। সে দেশটির নাম নিউ জেরুজালেম (নিউইয়র্ক)।

যদি আমেরিকার কোনো বই বা ম্যাগাজিন হাতে পেতাম, গভীর ভালোবাসায় লাজুক হাসি মেখে সেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরতাম। গর্বের সাথে ম্যাগাজিনের পাতাগুলোতে হাত বোলাতাম, যেখানে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য আমার স্বজাতিদের মুখচ্ছবি বড়ো করে ছাপানো হতো। এই হাজার মুখচ্ছবির মাঝে একদিন নিজেও জায়গা করে নেব—এটাই ছিল আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

বাবা আমার কত কাছের বন্ধু ছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সেই বাবাকে ছেড়ে পরিস্থিতির চাপে একসময় নিউ জেরুজালেমে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বন্দর থেকে জাহাজ ছাড়ার আগ মুহূর্তে শেষবারের মতো বাবার চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বাবা আমাকে কাছে ডেকে বললেন-

“কখনো ভুলে যেয়ো না তুমি একজন ইহুদি। যখন তোমার ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রয়োজন হবে, তখন নিজ জ্ঞাতি-ভাইদের নিকট ফিরে যাবে এবং কোনো অবস্থায় আরবা কানফোট[৩০] পরিধান করা বন্ধ করবে না।”

শেষ মুহূর্তের উপদেশবাণীগুলো বুকে নিয়ে জাহাজে উঠে পড়ি। কিন্তু তার অশ্রুময় মুখাবয়ব প্রতি মুহূর্তে যেন তির হয়ে আমার বুকে বিঁধতে থাকে। জাহাজের এক কোণে বসে কতক্ষণ কেঁদেছিলাম জানি না। ভাবতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল যে, বাবা আর আমার পাশে নেই। শত কষ্ট ও হতাশার মাঝে আমি তার বাণীগুলো বিশ্বাস করে নিলাম, ইহুদিরাই আমার ভাই-বোন।

দূর থেকে আমেরিকার দ্বীপগুলো যখন ভেসে উঠতে শুরু করল, তখন কল্পনার জগতে নতুন এক পৃথিবীর চিত্র আঁকতে শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল—Robert Louis Stevenson- এর রূপকথার রাজ্যটি দূরের দ্বীপগুলোর পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছে। দীর্ঘকাল যাবৎ নিপীড়নের জাঁতাকলে প্রাণ-সর্বস্ব থাকার পর যখন জানতে পারলাম, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই স্বাধীন এক রাজ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, তখন আমার হৃদয়ে যে দোলা বইতে শুরু করে, সে অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।

নীল সাগরের তারাময় সেই রাতে স্রষ্টা যেন আমাদের খুব কাছে নেমে এসেছিল। তার নিজ গুণে রাঙিয়ে দেওয়া সেই রাত্রির সৌন্দর্যকে ইঞ্জিনের প্রতিটি কম্পনময় আওয়াজ যেন বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। জাহাজের ডেকে বসে একটি সংগীতদল সুর তুলেছিল বিখ্যাত অপেরা শিল্পী Puccini-এর রচিত গান La Boheme-এর। জাহাজের প্রত্যেক যাত্রী নীরব হয়ে সে সুর উপভোগ করছিল; সাথে আমিও। হয়তো সবাই তখন অতীত স্মৃতিচারণে ব্যস্ত ছিল। কেউ সুখের, কেউ-বা দুঃখের।

আমার হৃদয়ের মানসপটে তখন অজস্র তারা ভেসে উঠেছিল, যার প্রত্যেকটিই বহন করছিল এক-একটি দুঃখের চিত্র। চারদিকে বইছিল সুনসান নীরবতা। জাহাজের পাটাতনে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পরার শব্দ কানে ভেসে আসছিল। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে হাভার্ডফেরত এক যাত্রী ডেকের ওপর উঠে বললেন—

“ওহ! এটা শয়তান ইহুদি ছাড়া আর কারও কাজ নয়।”

বলেই তিনি পড়ে গেলেন এবং কিছুটা আঘাত পেলেন।

এই ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্যটা আমার হৃদয়ে যেন বিষমাখা তির হয়ে আঘাত হেনেছিল। পরে যখন শুনলাম তিনি ইহুদিদের দ্বারা আহত হয়েছেন, তখন স্বজাতীর কথা ভেবে মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলাম। তাকে যে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে গেলাম। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে একেবারে বিমোহিত হয়ে গেলাম। প্রবীণ সেই ব্যক্তিটি জীবনের পুরোটা সময় ধর্ম-মত নির্বিশেষে সকলের পরোপকারে ব্যয় করেছেন এবং জীবনের অন্তিম মুহূর্তে কেবল একটিবারের জন্য জেরুজালেমে যেতে চাইছেন, যেন সেখানকার পবিত্র পাথরগুলো ছুঁয়ে জীবনের সকল পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে ক্রন্দন করতে পারেন।

কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে কার্ড খেলায় অংশগ্রহণ করতে বলেন। তাকে মনে করিয়ে দিলাম, “আমিও একজন শয়তান ইহুদি।”

বললেন—সে রাতে তিনি যা বলেছেন, তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আচমকা তা মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে এবং তা নিছক একটি বাক্য ছাড়া অন্য কিছু যেন না ভাবি।

আমরা খুব দ্রুত বন্ধু হয়ে গেলাম। রুমের এক কোণে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তার খুব কাছে চলে এলাম। কথায় কথায় তার মনে আমার স্বজাতি সম্পর্কে ভালো ধারণা জন্মানোর চেষ্টা করলাম। আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি বললেন—

“এক বছর তোমার স্বজাতিদের সাথে আমেরিকায় থাকো, তারপর তোমার মনোভাব কী হয়—তা আমাকে জানিয়ো।”

তারপর আমেরিকার বিভিন্ন বড়ো বড়ো শহরে হেঁটেছি এবং স্বজাতীয় ভাইদের কান্নার সুরে বলেছি—”নিজেদের সংযত করো!” নিউইয়র্কে পা ফেলার পরপরই জানতে পারলাম, আমার বাবা পরলোকগমন করেছেন। ধর্মীয় আচার অনুযায়ী পরলোকগত পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে কাদ্দিশ[৩১] প্রার্থনা সংগীত গাইতে হয়। প্রতিটি পুরুষ, যার শরীরে ইহুদিদের রক্ত রয়েছে, তাদের জন্য এ সংগীত অর্চনা করা বাধ্যতামূলক। ধর্ম-কর্ম থেকে দূরে থাকলেও সবাইকে একদিন এই সংগীত গাইতে হবে, এ থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই।

এই প্রার্থনা সংগীত অন্তত দশজন প্রাপ্তবয়স্ক ইহুদির উপস্থিতিতে অর্চনা করতে হয়, আর এই সমাবেশকে বলা হয় মিনিয়ান[৩২]। ভেবেছিলাম, এমন একটি শহরে খুব সহজেই এই কাজটি করতে পারব। সেই ম্যাগাজিন ও পত্রিকাগুলোতে আমার যে বিখ্যাত জ্ঞাতি- ভাইদের মুখচ্ছবি দেখেছিলাম এবং যাদের নাম পুরো পৃথিবীর সবাই জানত—এমন একজনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম; ঠিকানা সংগ্রহ করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না।

অফিসের দরজায় পৌঁছলে দারোয়ান আমার উদ্দেশ্য জানতে চাইল। বললাম—কাদ্দিশ অর্চনার জন্য আমি এক মিনিয়ানের আয়োজন করতে চাই। দারোয়ান ছিল একজন হিব্রু। সে চোখের ইশারায় আমাকে আরও কিছু হিব্রু ক্লার্কের টেবিল দেখিয়ে দিলো। সবার চোখ যেন আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরায় পরিপূর্ণ। মশকরা করে তারা আমার নাম দিলো “Greehorns” (গ্রাম থেকে শহরে আগন্তুক লোকেদের দেখে যেমন গ্রাম ভূত বলে কটাক্ষ করা হয়)। এত সব ভেংচি কাটা মুখায়বের ধাক্কা পেরিয়ে আমি সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলাম।

এক মিনিট কথা বলে বুঝলাম, তিনি শুধু পোশাক-আশাকেই ইহুদি। এ ধর্মের শিল্প, ঐতিহ্য, ও ভালোবাসার প্রতি তার ন্যূনতম কোনো আকর্ষণ নেই। মিনিয়ান কী, সেটাই তিনি জানেন না। উদ্দেশ্য শুনে অবজ্ঞার স্বরে তিনি আমাকে পাশের একটি দোকানে চলে যেতে বললেন। বুঝতে পারলাম, স্বজাতিদের পাশে থেকেও আমি আজ খুব অপরিচিত। নিউইয়র্কের রাস্তায় হাঁটার সময় খেয়াল করলাম, আমার জ্ঞাতি ভাই-বোনেরা কী পরিমাণ ব্যস্ত। সবাই কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। ধর্মীয় বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার ছাপ যেন তাদের মন থেকে হারিয়ে গেছে।

“ওহ খোদা! এরা কি ইসরাইলের সন্তান? এরা কি সেই জাতি, যারা নিপীড়নের শিকার হয়ে পৃথিবীর চতুষ্কোণে ছড়িয়ে পরেছিল?”

বিলাপ করে সেদিন শুধু এসবই বলছিলাম।

ক্লান্ত-ক্ষুধার্ত শরীরে এক হোটেলে হাজির হলাম। মার্বেল পাথরের তৈরি মেঝে, ফুলেল সুবাস, চাকচিক্যময় কারুকাজ, আলোকসজ্জা, অর্কেস্ট্রা দল ইত্যাদি সবই আমার নিকট মিথ্যে বলে মনে হলো। কোনো কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যে টেবিলে বসতে গেলাম, বলা হলো—এটা দখল হয়ে গেছে। বসার জন্য একটি টেবিলও পেলাম না। ডায়মন্ডের গহনা আর ঝকমকে গাউন পরিহিত ইহুদি নারীরা তাদের মতোই অমার্জিত ও কুরুচিপূর্ণ পুরুষদের সাথে প্রতিটি টেবিলে বসে আছে। মুখ ভর্তি খাবার ও হুইস্কি খেতে খেতে তারা শরীর দুলিয়ে গাচ্ছে Mississippi ও Georgia। তারা কি দেখতে পায়নি, তাদেরই স্বজাতি এক ইহুদি সেদিন ক্ষুধায় কাতরাচ্ছিল? আমার বাবার বলে দেওয়া আরবা কানফোট পরেই আমি সেদিন তাদের সামনে হাঁটছিলাম, তারপরও তারা আমাকে চিনতে পারেনি!

এরপর রাস্তা, মহাসড়ক, উপসড়ক, যানবাহন বা দোকানপাট যেখানেই হাজির হয়েছি, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কারও পথের সামনে পড়েছি, তো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতসব রূঢ় ব্যবহার দেখেও তাদের অভিশাপ দিইনি; বরং হৃদয়ের গভীর থেকে চিৎকার করে কেঁদে বলেছি—

“ওহে আমার ভাই-বোনেরা! স্বজাতির মঙ্গল কামনায় তোমরা নিজেদের সংযত করো!”

আজ আমরা আমেরিকায় যে স্বাধীনতা আমরা পাচ্ছি, তা ইতঃপূর্বে অন্য কোনো দেশে পাইনি। আফসোস হচ্ছে, আমরা এ স্বাধীনতার পূর্ণ অপব্যবহার করছি। পত্রিকার পাতায় খুনি, ঘুসখোর, ডাকাত, জুয়াড়ি, অবৈধ্য অস্ত্রধারী ইত্যাদি বিভিন্ন অভিযোগের তির আমাদের সম্প্রদায়ের দিকে ছুড়ে মারা হয়। এটা ঠিক যে, অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের মাঝেও এ জাতীয় অনেক অপরাধী খুঁজে পাওয়া যায়। তবে আমরা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। আমাদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এমনিতেই আলাদা। তাই ভদ্র ও মার্জিত উপায়ে নিজেদের শুধরে নেওয়ার এটাই ভালো সময়। এর চেয়ে বেশি দুঃখের আর কী হতে পারে, যখন আমাদের স্বজাতিরা ইহুদিদের মতো মুখাবয়ব থাকার পরও খ্রিষ্টানদের সাথে মিলিয়ে নিজেদের নাম রাখছে!

কখনো ভাবতে পারি না, আমার স্বজাতিরা দেরি করে থিয়েটারে এসে একদম সামনের সারিতে গিয়ে আসন গ্রহণ করবে। সবার সমানে দাঁড়িয়ে গায়ের কোট ও হাতমোজা খুলে সেখানে আসন গ্রহণ করবে, যার দরুন সাধারণ দর্শকেরা বিরক্ত হবে। কিন্তু তিনি যদি ধৈর্যসহকারে টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট ক্রয় করতেন এবং যানবাহনে চলাচলের সময় বৃদ্ধ কোনো মহিলাকে আসন ছেড়ে দিতেন, তবে তিনি খুব সহজেই সাধারণ মানুষের বন্ধু হতে পারতেন। তবে অধিকাংশ ইহুদি আজ খুবই আক্রমণাত্মক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এটা ঠিক যে, এই ব্যক্তিত্বের দরুন তারা অনেকে দ্রুত বাড়ি- গাড়ি, সম্পদ ও প্রতিপত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও এই ব্যক্তিত্ব ইহুদিদের অনেকটা নিষ্ঠুর ও নির্মম করে তুলেছে।

বাবার কথাগুলো স্মরণ করে খুব কষ্ট হয় –

“যখন তোমার ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রয়োজন হবে, তখন নিজ জ্ঞাতি-ভাইদের নিকট ফিরে যাবে।”

কিন্তু এ দেশে আমি যতবার বিপদে পড়েছি, তার প্রত্যেকটির জন্য আমার ইহুদি ভাইয়েরাই দায়ী। আমি ধোঁকা খাই এক মতলববাজ উকিলের কাছে, একদল নীতিহীন কেরানির কাছে, উদাসীন এক টিকিট কালেক্টরের কাছে এবং সবশেষে হোটেল বালকদের কাছে। যদি এমন হতো, এই প্রতিটি দুঃখ আমাকে সহ্য করতে হয়েছে জ্যান্টাইলদের কারণে, তাহলে নীরবে মেনে নিতাম।

এমন একটা সময় ছিল, যখন আমার পকেটে কোনো পয়সা ছিল না। কাজের জন্য ব্যাকুল হয়ে এদিক-ওদিক ছুটেছি। এক হিব্রু সাহেবের দোকানে গিয়ে বলি—”আমি এক গোঁড়া ইহুদি। ধর্মীয় বিধান মেনে পুরোটা জীবন পার করছি। ধর্মের জ্ঞাতি-ভাই হিসেবে আপনার নিকট আমি একটি চাকরি দাবি করছি।” তিনি আমার কথা শুনে হা…হা…হা… করে হাসতে শুরু করলেন।

তিনি বলেন—

“আমার জ্ঞাতি-ভাই! আমরা এখন আধুনিক যুগে বাস করি। এই যুগে ইহুদিতন্ত্র কেউ মেনে চলে না এবং মানারও প্রয়োজন নেই। আমি ইহুদি হয়েও খ্রিষ্টানদের অর্চনায় অভ্যস্ত। এতে আমার ব্যাবসা ভালোই চলে।”

তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল, বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে উঠপাখির মতো মাথা তুলে তিনি জানানোর চেষ্টা করছেন, তিনি সবার চেয়ে আলাদা।

তাকে বুঝিয়ে বললাম, ইহুদিতন্ত্র কেবল ধর্মীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়; এটা শরীরের রুধি ধারার মাঝে প্রবহিত। যদি কোনো চিতাবাঘ নিয়মিত সিনাগগে যাওয়া বন্ধ করে গির্জায় যাওয়া শুরু করে, তবে এটা নয় যে সে খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। সে আগেও চিতা ছিল, এখনও তা-ই আছে। এভাবে কথা বলার দরুন নিশ্চিত ছিলাম, সেই দোকানে কাজ করার সুযোগ পাব না।

এরপর আরও অনেক অফিসে চাকরির জন্য ধরনা দিলাম। সবশেষে বুঝলাম, ইহুদিতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আমার স্বজাতিদের মন থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে। নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে একসময় বহু পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের নিয়ে এ দেশে পাড়ি জমিয়েছিল, কিন্তু সেই সন্তানরা আজ বধ্য উন্মাদের মতো থিয়েটার হলগুলোতে রাতের পর রাত আমোদ-ফূর্তি করে কাটাচ্ছে। ঘরে বসে অভিভাবকগণ যেখানে সন্তানদের মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত, সেখানে তাদের সন্তানরা উগ্র আমোদ-ফূর্তিতে ব্যস্ত। লেখক, অভিনেতা, সমালোচক, শিল্পী, কারিগর ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গনে তারা প্রতিষ্ঠা লাভ করছে, তবে নিজ নামে নয়; খ্রিষ্টানদের ছদ্মনামে।

ক্লান্ত পায়ে বহু পথ হাঁটার পর সিটি হলের এক তরল দুধের দোকানে এসে থামলাম। এক সেন্টের সমপরিমাণ তরল দুধ আমাকে বিনা পয়সায় দেওয়া হলো, যার স্বাদ অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। আমার পাশে বসে এক ভদ্রলোক ঠোঁট চাটতে চাটতে বলল—

“এটা খুব প্রশংসনীয় কাজ। যিনি বিনামূল্যে এভাবে তরল দুধ বিতরণ করছেন, তার দরুন অনেক ছোটো ছোটো শিশুর জীবন রক্ষা পাচ্ছে। তিনি একজন সম্পদশালী ইহুদি। ঈশ্বর তার মঙ্গল করুক। আমার তিনটি সন্তান আছে।”

স্বজাতি সম্পর্কে হঠাৎ এমন প্রশংসার বাণী শুনে হৃদয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আমি সে লোকটির পাশে আরও এক ঘণ্টা বসেছিলাম এবং কীভাবে সেই ইহুদি ব্যক্তিটি ধর্ম- মত নির্বিশেষে লাখো শিশুর প্রাণ রক্ষা করছে, সেই গল্প শুনলাম। আমেরিকায় আগমনের পর এটাই ছিল প্রথম কোনো ঘটনা, যার দরুন আমি গর্ববোধ করছি।

এরপর ছোটো এক পার্কে গিয়ে বসলাম। আমার পাশ ঘেঁষে ছোট্ট একটি মিছিল চলে গেল। সেই মিছিলটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মাঝে এক আশ্চর্য সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম।

দেখলাম, এটা ছোট্ট কোনো মিছিল নয়; বরং একটি প্যারেড। বিভিন্ন প্লাটুনে বিভক্ত হয়ে আমার স্বজাতিরা সেখানে প্যারেড করছে। প্রথম প্লাটুনে কমান্ডারের পেছনে পতাকাবাহী সদস্যটির হাতে বড়ো একটি ব্যানার, যাতে লিখা ছিল—”স্বজাতির মঙ্গল কামনায়”। সে প্লাটুনে প্রত্যেক সদস্যের হাতে ছিল একটি করে সিল্কের ব্যানার, সেখানে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ছিল তাদের প্রকৃত ইহুদি নাম। এদের পর আসে জুয়াড়ি ইহুদিদের প্লাটুন। তাদের হাতে থাকা ব্যানারই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তারা কোনো নোংরা কাজের প্রতিনিধিত্ব করছে।

এরপর আসে একদল দাস-দাসী, যাদের সামনে রয়েছে ক্ষমতালোভী ও সুবিধাবাজ রাজনীতিবিদ। তদের হাতে থাকা প্লেকার্ডে লেখা ছিল—”শর্ত সাপেক্ষে আমরা কাজে ফেরত যাব।” এরপর আসে একদল সুদি ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সিন্ডিকেট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ। প্যারেডের এ অংশটি ছিল অনেক বড়ো। তারা এসেছে সাধারণ ও মার্জিত বেশভুশায়। তাদের হাতে থাকা ব্যানারগুলোতে লিখা ছিল—”আমরা আর মিথ্যে বলব না, আর অতিরিক্ত সুদের বাণিজ্য করব না” এবং আরও অনেক প্রতিজ্ঞা। উপস্থিত জনতা খুশি হয়ে বলল—”Missouri! Missouri!”

এরপর আসে Hebrew Firebugs Union-এর একটি দল। তাদের পরনে ছিল জেল কয়েদিদের পোশাক। সেটি ছিল একদল আক্রমণাত্মক সৈন্যবাহিনী; সংখ্যায় ছিল হাজার হাজার। তাদের ব্যানারের লেখা ছিল—”আমরা নিজেদের সংযত করে চলব, “নিজেদের শুধরে নেব এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবন পরিত্যাগ করব।”

হঠাৎ এক ইহুদি পুলিশ কর্মকর্তার ঝাঁকুনিতে আমার ঘুম ভাঙে। তিনি আমাকে জোড় করে থানায় নিয়ে গেলেন। পার্কে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য দায়িত্বরত এক ইহুদি মেজিস্ট্রেটকে জরিমানা দিতে বললেন। কিন্তু আমার পকেট যে পুরো ফাঁকা। মেজিস্ট্রেট সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন—”অকর্মণ্য-আগাছা, পরেরবার থেকে পার্কে গিয়ে সজাগ থাকবে।”

সজাগ থাকবে! এর চেয়ে বাজে উপদেশ আর কী হতে পারে? স্বজাতির মঙ্গল কামনায় যে স্বপ্ন দেখছিলাম, তার ব্যাঘাত ঘটল অপর এক স্বজাতি ভাইয়ের আঘাতে। এরপর সেই থানাতে ঘটল এক আকস্মিক ঘটনা। সেখানে উপস্থিত প্রৌঢ় বয়স্ক এক বিদ্বান ইহুদি আমার বেশভূষা দেখে কাছে এলেন। আমার চেহারা দেখেই তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, নতুন দেশে আমি কী বিপদের মুখে পড়েছি। তিনি আমাকে বস্তির মতো এক ঘেটোতে নিয়ে গেলনে। রাতের খাবারের পর তিনি আমাকে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। পাড়ার সকল ইহুদিদের তাদের প্রথম নামে ডাকতে শুরু করলেন। এক এক করে অনেকে জমা হলো। বাবার মৃত্যু উপলক্ষ্যে কাদ্দিশ অৰ্চনা সেখানেই শেষ করলাম। তখন থেকে হতো-দরিদ্র গরিব ইহুদিদের আমার বন্ধু করে নিয়েছি। কারণ, প্ৰকৃত ধর্মের স্বাদ-গন্ধ কেবল এই দলটির মাঝেই পেয়েছি। দারিদ্র্য-পীড়িত এই দলটি জীবনে বহু নির্মমতা দেখেছে, কিন্তু তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন পালন করা ভোলেনি। প্রৌঢ়-বয়স্ক-বিদ্বান ইহুদিরা বহু দিন ঠোঁট আওড়িয়ে আমাকে অমৃত বাণী শুনিয়েছে। তারা আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন—“ঈশ্বরের ওপর ভরসা রেখ এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করো।” এতসব হতাশার মাঝে সেদিন নিজেকে তাদের মাঝে আবিষ্কার করতে খুব গর্ববোধ হয়।

প্রকৃত ইহুদিদের নিকট স্বর্গ, পার্থিব কোনোটিই উপেক্ষিত নয়। স্বর্গ-নরকের ভয় আছে বলে তারা সকল কু-কর্ম হতে নিজেদের পৃথক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। মৃত্যু নিয়েও আমাদের রয়েছে সুন্দর দর্শন। মৃত্যুর পর আর কোনো শারীরিক যন্ত্রণা নেই। শারীরিক মুখোশ থেকে বেরিয়ে যারা একবার রৌদ্রোজ্জ্বল নতুন সে পৃথিবীতে প্রবেশ করবে, তাদের আর কোনো কষ্ট নেই। পৃথক এ দুটি জগতের মাঝে মৃত্যু একমাত্র প্রতিবন্ধকতা, যা অতিক্রম করে মানুষ অমরত্বের জগতে পৌঁছে যায়। The Old Curiosity Shop অধ্যায়ে মৃত্যু সম্পর্কে Charles Dickens বলেন-

“একবার যিনি মারা যান, তার জন্য আশেপাশের আত্মীয়স্বজন যতই বিলাপ করুক না কেন, তার মৃত্যুপরবর্তী জীবনে কোনো রকম পরিবর্তন আসে না। তা মূলত পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। গরিব-দুঃখী ইহুদিদের নিকট এগুলো অমৃত বাণী, যার দরুন তারা আজও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পায় এবং নোংরা বস্তিতে থেকেও প্যালেস্টাইনের সুগন্ধ শুকতে পায়।”

শহরের অপর প্রান্তে থাকা আমার স্বজাতীয়দের বড়ো এক অংশের হয়তো প্রচুর সম্পদ হয়েছে, কিন্তু তাদের মনে ধর্মের কোনো স্থান নেই। তারাই আজ উদ্ভ্রান্তের মতো বিবেক-বিবর্জিত নিষ্ঠুরতাকে পুঁজি করে বিশ্ব দখলের পথে ছুটে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই জ্যান্টাইলদের মনে অ্যান্টি-সেমেটিক মনোবৃত্তির জন্ম দিয়েছে। ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে, দেখিয়ে দেয় তাদের ঘরেও তালমুদ আছে, কিন্তু তারা তা কখনো পড়ে দেখে না; অনুসরণ করা তো দূরের কথা।

এই সম্পদশালী ইহুদিদের পিতা-মাতারা কী পরিমাণ নিপীড়ন সহ্য করে বহু সাগর পাড়ি দিয়ে এ দেশে থাকার সৌভাগ্য পেয়েছে, সেই মর্ম তারা বুঝবে না। যে কমেডিয়ানগণ Vaudeville Genre সংগীতে করে, থিয়েটার বাণিজ্য করে রাতারাতি বহু অর্থ উপার্জন করছে, তাদের দশজনের মধ্যে নয়জনই ইহুদি সন্তান। গল্প-উপন্যাস, কৌতুক-অভিনয়, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি নানা ছলে তারা আদি পিতা-মাতাদের নিপীড়নের চিত্র সাধারণ দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। তাদের নিকট সবকিছু যেন অর্থ উপার্জনের রাস্তায় রূপ নিয়েছে।

প্রৌঢ় বয়স্ক দরিদ্র ইহুদিদের জীবনে আমোদ-প্রমোদের কোনো স্থান নেই। তারা দিন আনে দিন খায়। একই সঙ্গে চালিয়ে যায় ধর্মীয় অনুশীলন। একদিন এক মুরগির খামারের পেছনে অন্ধকার একটি স্থানে বসে দেখছিলাম, এক ১০৪ বছরের বৃদ্ধ তালমুদের ৬০ তম পৃষ্ঠার ওপর কিছু গরিব যুবককে জ্ঞান প্রদান করছে। সেখানে একটি যুবক তার সবজির ভ্যান পাশে রেখে বৃদ্ধের নিকট জ্ঞান লাভের জন্য বসে আছে। যুবক জানে, ভ্যানের ওপর যে সবজিগুলো পড়ে আছে তা পচনশীল। তারপরও জ্ঞান লাভের জন্য সেখানে বসে আছে। পাশ থেকে অসংখ্য শিশু-বাচ্চা সেই ভ্যানগাড়িটি নিয়ে খেলা করতে শুরু করে, তারপরও সে নির্বিকার। এমন সময় অন্য পাশ থেকে কোনো বৃদ্ধ কাগজে মোড়ে এক টুকরো মুরগির মাংস সেই যুবককে উপহার দেয়, যেন সে তালমুদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার উৎসাহ পায়। এই গরিবদের জীবনে ফূর্তি করার কোনো অবকাশ নেই। আমি সেই বিদেশি বন্ধুকে ডেকে বলতে চাই, প্রকৃত ইহুদিদের স্বাদ আমি এই গরিবদের মাঝেই খুঁজে পেয়েছি।

সম্পদশালী ইহুদিদের দুর্ব্যবহার, অসভ্যতা ও নোংরামি দেখে যখন লজ্জিত হই, তখন বলতে চাই—কোনো ইহুদিকে যদি ধর্মের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়, তবে যেন এই গরিবদের বিচারের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তালমুদের কিছু বাণী রাবাই Myers-এর মুখে প্রায় শোনা যায়; যার অর্থ বুঝতে পারা কারও জন্যই কঠিন নয় :

“Which is the path, both right and wise,
That for himself a man should find?
That which himself much dignifies,
And brings him honor from mankind.”

*

৩০. আরবা কানফোট (Arba Kanfoth) – ইহুদিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

৩১. কাদ্দিশ (Kaddish) – পারিবারিক বা প্রিয় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুতে তার আত্মার সন্তুষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার স্তুতি গেয়ে ইহুদিরা যে প্রার্থনা সংগীত করে, তাকে কাদ্দিশ বলে।

৩২. মিনিয়ান (Minyan) -কাদ্দিশ পালনে আয়োজিত সমবেত সংগীত মঞ্চকে কাদ্দিশ বলা হয়। এজন্য ১৩ বয়সোর্ধ্ব অন্তত দশজন ইহুদি সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *