ইহুদি ঔদ্ধত্যপনা

ইহুদি ঔদ্ধত্যপনা

এখন আমরা এমন একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি, যখন বড়োদিন পালনের জন্য ইহুদিদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতে হয়! ইহুদিরা যে শহরগুলোতে বসবাস করছে, সেখানে তাদের অনুমতি ব্যতীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, এমনকী গির্জাগুলোতেও বড়োদিন পালন করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যদি তারা আমাদের বড়োদিন পালনে অনুমতি প্রদান করে, তবে একটি বিষয় ফলাও করে প্রচার করা হবে যে, বাহ! ইহুদিরা তো অন্য ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি অনেক উদার। আদৌ ইহুদিরা আমাদের বড়োদিন পালনের অনুমতি দেবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নই। ১৯২১ সালের ৩১ অক্টোবর Brooklyn Eagle পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ পায়, যার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘Canon William Sheafe Chase কিছুদিন আগে জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের সচিবের কাছে একটি চিঠি লিখেন। বড়োদিনের প্রাক্কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতঃপূর্বে যীশুখ্রিষ্টের জীবনী নিয়ে যে আলোচনা হতো, তা বন্ধের জন্য নতুন কোন নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে তিনি এই চিঠি লিখেন। আমেরিকান গির্জা ফেডারেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন—গত বছর কিন্ডারগার্ডেনের এক শিক্ষক বড়োদিন উপলক্ষ্যে ছাত্রদের মাঝে যীশুখ্রিষ্টের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে তাকে হুঁশিয়ার করা হয়। সেইসঙ্গে এমন কাজ যদি পুনরায় করেন, তবে তৎক্ষণাৎ তাকে বরখাস্ত করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।’

আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, আমেরিকা হলো খ্রিষ্টানদের দেশ। তারপরও হিব্রু সম্প্রদায়ের প্রতি আমেরিকার প্রশাসন যতটা উদারতা দেখিয়েছে, ততটা অন্য কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি কখনোই দেখানো হয়নি। খ্রিষ্ট আদর্শকে অক্ষুণ্ণ রেখে পৃথিবীর যেকোনো সম্প্রদায়ের মানুষ আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

আমি বিশ্বাস করি, খ্রিষ্টধর্মকে আমাদের সমাজব্যবস্থা থেকে মুছে দিতে যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার পেছনে পুরো হিব্রুজাতি নেই; বরং তাদের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী রয়েছে। তারা বারবার নিজেদের ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এই হলো আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব পালনের বর্তমান অবস্থা। জাঁকজমকতা আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই থাকবে কিংবা আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু যে নিগূঢ় ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে একসময় বড়োদিন পালিত হতো, ভবিষ্যতের দিনগুলোতে তা হারিয়ে যাবে। ধর্মীয় উৎসব রূপ নেবে বিভিন্ন অশালীন কর্মকাণ্ডে। বিংশ শতাব্দীতে গড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম হয়তো বুঝতেই পারবে না, কেন এবং কী কারণে এই দিবস পালন করা হয়। তাদের কাছে সবকিছুই হবে আমোদ-ফূর্তির অংশ।

Dr. William Carter দীর্ঘদিন ব্রোকলিন শহরের Throop Avenue Presbyterian Church-এর পাদরি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু বইয়ের নাম হলো—The Gate of Janus : an epic story of the world war, Milton and His Masterpiece’ ও ‘ Studies in the Pentateuch। সুবক্তা হিসেবে বিভিন্ন মহলে তার ছিল অসামান্য সুনাম। তা ছাড়া ইতিহাস ও সাহিত্যের ওপর তার মস্তিষ্ক ছিল ঈর্ষণীয় জ্ঞানে পূর্ণ।

Y.M.C.A-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখায় তিনি পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহের ওপর টানা ৩০ সপ্তাহ বক্তৃতা প্রদান করেন। পরে নিউইয়র্ক শিক্ষাবোর্ড তাকে একই বিষয়ের ওপর Erasmus High School-এ নিয়মিত বক্তৃতা প্রদানের অনুরোধ করে। ১৯১১-১৯২১ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সান্ধ্যকালীন ক্লাসগুলোতে চলমান বিভিন্ন বিষয়াবলির ওপর বক্তৃতা প্রদান করেন।

শুরুতে খুব একটা সাড়া না পেলেও মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যাবধানে তার শ্রোতা সংখ্যা ৩৫ থেকে ৩৫০-এ গিয়ে পৌঁছায়। প্রতিদিন তিন ধাপে এই বক্তৃতা চলত। প্রথম ধাপে, শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। দ্বিতীয় ধাপে, সমকালীন ঘটনাবলির সাথে মিল রেখে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনা করতেন। তৃতীয় ধাপে, উপস্থিত শ্রোতামণ্ডলীরা তাকে আলোচিত বিষয়সমূহের ওপর প্রশ্ন করতেন।

১৫ নভেম্বর, ১৯২০ সালের কথা। উক্ত সপ্তাহে শিক্ষাবোর্ড আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেয়—’আমেরিকার বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর পরিচয়।’ Dr. Carter বক্তৃতা শুরু করেন—’বিশ্বযুদ্ধ শুরুর হওয়ার মাত্র এক মাস আগে প্রচুর বিদেশি নাগরিক আমেরিকায় অভিবাসী হয়ে প্রবেশ করে। সংখ্যাটা প্রায় ১৪ লক্ষ ৩ হাজারের কাছাকাছি; যার মধ্যে ৬ শতাংশ গ্রেট ব্রিটেনের নাগরিক, ২ শতাংশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এবং ১০ শতাংশ ইহুদি।’

পরবর্তী সপ্তাহে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়—’অভিবাসীরা আমেরিকার জন্য কী করেছে?’ Dr. Carter বলেন—’ইউরোপের কিছু কিছু মানুষ বহু কষ্টে সামান্য আশ্রয়ের আশায় আমেরিকায় প্রবেশ করেছে, তারপরও আমেরিকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ দেশের উন্নয়নে তারা নিজেদের সর্বোচ্চটা ঢেলে দিতে ন্যূনতম কার্পণ্য করেনি। তারা প্রত্যেকেই এসেছে অনুন্নত ও কম উন্নত দেশগুলো থেকে।’ (তিনি উন্নত বলতে ইতালির মতো সমপর্যায়ের দেশগুলোকে এবং অনুন্নত বলতে কালো ও বাদামি বর্ণের মানুষদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

আলোচনার একপর্যায়ে ইহুদিদের প্রসঙ্গ চলে আসে। সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প- সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, উন্নয়নকর্ম ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি ইহুদিদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে ইহুদিদের বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেন। যেমন : Disraeli, Rubinstein, Schiff, Kahn এবং Rabbi Wise ব্যক্তিগতভাবে যে তারও অনেক ইহুদি বন্ধু-বান্ধবী রয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন।

কিছু মানুষের কাছে ভয় দুই ধরনের। এক, অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে ন্যায়বিরুদ্ধ কাজ করার ভয়। দুই, অনিবার্য বিপদ জেনেও বিবেকের তাড়নায় সত্য না বলতে পারার ভয়। Dr. Carter-এর ক্ষেত্রে ঘটেছেও তা-ই।

তিনি ইহুদিদের যে এত এত অবদানের কথা উল্লেখ করলেন, তবে তাদের সেই অবদান কোথায়? রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিল্প-কলকারখানা ইত্যাদি সব তো জ্যান্টাইলদের রক্ত-ঘামে তৈরি হচ্ছে। অপরদিকে ইহুদিরা নরম-মোলায়েম কেদারায় বসে সুদের ব্যবসায় করে যাচ্ছে। ইহুদিদের খুশি করতে তিনি নাহয় কয়েকটি প্রশংসাসূচক বাক্য বলেছেন, কিন্তু তিনি তো দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ! বিবেকের তাড়নায় সত্য বলা থেকে বিরত থাকতে পারেননি।

রাশিয়া থেকে আগত ইহুদিদের একদল অভিবাসী সম্পর্কে তিনি বলেন—

‘প্রত্যেক জাতির মধ্যে খারাপ কিছু উপাদান পাওয়া যায় এবং এটাই স্বাভাবিক। ইহুদিদের বেলাও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইহুদিদের প্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার অভিবাসী রাশিয়া থেকে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে। ভুলে গেলে চলবে না, ইহুদিদেরে পুরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাশিয়ান ইহুদিরা হলো সবচেয়ে খারাপ।’

উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ বরাবরের মতোই স্বাভাবিক ছিলেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শুরু হলে দুজন ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেন—কেন তিনি রাশিয়ান ইহুদিদের নিয়ে এত বেশি সমালোচনা করলেন? উত্তরে তিনি বলেন—

‘আমি সকল জাতিগোষ্ঠীর ব্যাপারে নিরপেক্ষ দৃষ্টিপাত করেছি। তা ছাড়া ইহুদি রাশিয়ান জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে পৃথিবীর সবাই একই মন্তব্য করেছে।’

কিছুদিন পর শিক্ষাবোর্ড থেকে নোটিশ পাঠিয়ে বলা হয়, বক্তৃতার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার দায়ে তার বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তি অভিযোগ করেছে। পরে খবর নিয়ে জানা যায়, সেই আলোচনাসভায় প্রশ্নকারী দুজনই ইহুদি। ভাবা যায়! ৪০০ শ্রোতার মাধ্য থেকে মাত্র দুজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, আর এতে চারদিকে তুলকালাম কাণ্ড বেধে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও অনেক অভিযোগ শিক্ষাবোর্ডে জমা হতে শুরু করে। ফলে Dr. Carter-এর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। স্বাধীন দেশের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও আজ সবার বাক্‌স্বাধীনতা রুদ্ধ। এ জাতীয় ঘটনা ইতঃপূর্বে আরও অনেক ঘটেছে। সুতরাং অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তদন্ত কমিটির ডাকে Dr. Carter হাজির হলেন। তার সামনে বসে ছিল সাতজন ইহুদি। এর মধ্যে চারজন স্বীকার করে তারা সেই বক্তৃতা সভায় উপস্থিত ছিল না এবং সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, তার কিছুই ভালোভাবে জানে না। এই পুরো তদন্ত কার্যক্রম যার নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে, তিনি হলেন রাবাই C.H. Levy। তিনি রাবাই ইউনিয়ন, মন্ত্রীপরিষদ ও Kehillah-এর অন্যতম একজন সদস্য। তিনি দীর্ঘকাল ধরে এ দেশে নিজের জাতিগোষ্ঠীর জন্য গুপ্তচর হয়ে কাজ করেছেন। সেই বক্তৃতাসভায় তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন না।

তদন্ত কার্যক্রম যথারীতি শুরু হলে এক এক করে ছয়টি চিঠি খোলা হয় এবং সবার সামনে তা পাঠ করা হয়। প্রতিটি চিঠির বিষয়বস্তু প্রায় কাছাকাছি; ইহুদিদের ব্যাপারে খারাপ বা ভুল মিশ্রিত কোনো তথ্য যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা না হয়, চিঠিগুলোতে তা-ই বলা হয়েছে। সবগুলো চিঠি পাঠানো হয়েছিল নিউইয়র্ক শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্য Dr. W. L. Ettinger-এর নিকট। চিঠি পাঠ করা শেষ হলে Dr. Carter-কে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হলো। তিনি বললেন—

‘মনে হচ্ছে সবগুলো চিঠি কেবল একজন ব্যক্তির নির্দেশনায় লেখা হয়েছে। কারণ, তাদের প্রত্যেকের আপত্তির বিষয়বস্তু এক। যদি পৃথক পৃথক মানুষের থেকে চিঠিগুলো আসত, তবে বিষয়বস্তুতে কিঞ্চিৎ হলেও পার্থক্য পাওয়া যেত।’

তিনি পরোক্ষভাবে Levy সাহেবকে বুঝিয়ে দিয়েছেন সেই ব্যক্তির কথা, যার নির্দেশনায় এগুলো লেখা হয়েছে। এরপর তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু সাক্ষী হাজির করার অনুমতি চাইলেন, কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হলো না। অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ ইহুদি ট্রাইব্যুনালের বিপক্ষে বসে আছেন একজন জ্যান্টাইল শিক্ষক।

তদন্তের একপর্যায়ে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তিনি বক্তৃতায় যা কিছু বলেছেন, তা ইচ্ছা করে বলেননি এবং তাতে কোনো মিথ্যা তথ্য ছিল না। তা ছাড়া তিনি কোন বিষয়ের ওপর আলোচনা করবেন, তা তো শিক্ষাবোর্ড-ই নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে তার কিই-বা করার আছে! ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা যখন বিতর্কে পেরে উঠছিল না, তখন তারা ভিন্ন পথ অনুসরণ করে। রাবাই Levy হাস্যকর টিপ্পনী কেটে প্রশ্ন করেন—

‘মহোদয়, জানতে পারি কি আপনি আদৌ আমেরিকান না অন্য দেশের নাগরিক?’

Dr. Carter ১৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকায় আসেন। বেশ কিছুদিন এখানে থাকার পর নাগরিকত্ব পেয়ে যান। তারপর থেকে আমেরিকার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। জবাবে তিনি বলেন—

‘আমি ত্রিশ বছর আগে এ দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি এবং তার প্রমাণও আছে। আপনি বললে আমি সেই প্রমাণ হাজির করতে পারব। আশা করি আপনি নিজেও আপনার নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে পারবেন।’

তিনি রাবাই Levy-কে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। জবাবে Levy বলেন—

‘আমি দেখে নেব, তোমার মতো নোংরা ইংরেজ কীভাবে নিউইয়র্কের কোনো জনসভায় বক্তৃতা দেয়!’

এমন অপমানজনক বাক্য শুনে Dr. Carter মুহূর্তে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তার চোখে রাগের অভিব্যক্তি ঠিকরে পড়ছিল, কিন্তু পুরো ট্রাইব্যুনাল বিপক্ষে হওয়ায় কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ভাগ্য ভালো, ট্রাইব্যুনালে সেদিন তিনি ছাড়া আরও একজন জ্যান্টাইলন উপস্থিত ছিলেন; Ernest L. Crandall। তিনি সেই শিক্ষাবোর্ডের সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের সুপাভাইজার ছিলেন। তিনি রাবাই Levy-কে উদ্দেশ্য

করে বলেন-

‘একজন ভদ্রলোককে নোংরা ভাষায় যেভাবে অপমান করলেন, তা নিজ চোখে এর আগে কখনো দেখিনি। আপনারা যা করলেন, তার জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত। এমন নোংরা বাক্য যদি দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করেন, তবে আপনাদের এখান থেকে বের করে দিতে বাধ্য হব।’

এরপর Crandall সাহেবের ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে এ আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাই না। তদন্তে Dr. Carter নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাকে সসম্মানে সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। পুনরায় তিনি Erasmus School-এ ফিরে যান। কিছুদিন পর একটি নোটিশের মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়—আইরিশ ও ইহুদি বিতর্ক নিয়ে তিনি যেন আপত্তিকর কোনো মন্তব্য না করেন, যদিও তা আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলে যায়।

১৯১৮ সালের পর থেকে আয়ারল্যান্ডজুড়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে এক প্রকার গৃহযুদ্ধও বলা যায়। আইরিশ অধিবাসীরা চাচ্ছিল তাদের নিয়ে চারদিকে আলোচনা হোক, কিন্তু জায়োনিস্ট সংগঠনগুলো তা চাচ্ছিল না। কারণ, তাদের মনে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার ভয় ছিল। কারণ, ব্রিটিশ-আয়ারল্যান্ডের মধ্যে যে যুদ্ধের সূত্রপাত, তার পেছনে ছিল এই জাতিগোষ্ঠীটিরই কূট-পরিকল্পনা। সরকারিভাবে আইন পাশ করা হয়, যেন আইরিশ বিতর্ক নিয়ে কোথাও সামান্য টু শব্দ পর্যন্ত করা না হয়।

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ বক্তৃতা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পর ডিসেম্বর মাসে Dr. Carter স্বেচ্ছায় এই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তখন থেকে তার জীবনে শুরু হয় নিত্য অভাব- অনটন। বিবেকের তাড়নায় তিনি অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেননি। পরবর্তীকালে এই পদে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তার আদৌ সেই ভয় থাকবে কি না—নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না; তবে আশার আলো খুবই ক্ষীণ। বাক্‌স্বাধীনতার নামে এ দেশের পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো যে বুলি আওড়ায়, তা যে কতটা মিথ্যা, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা সম্ভব।

ইহুদিদের মায়াকান্না

‘ইহুদি বিতর্ক’ ও ‘সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন’ বিষয় দুটি যে এক নয়, তা একজন সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষও স্বীকার করবে। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে—যারা নিজেদের সম্পর্কে ন্যূনতম অভিযোগ বা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য না মিথ্যা, তা কখনোই বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তাদের নিয়ে বাজারে কোনো প্রকার বিতর্ক সৃষ্টি করা যাবে না—এটাই মুখ্য বিষয়। আর এ জাতীয় মানুষগুলো ক্ষমতায় গেলে যে কতটা স্বৈরাচারী হতে পারে, সেই শিক্ষা আমরা ইতিহাস থেকেই নিতে পারি। যে বিষয়টি তারা সবচেয়ে বেশি ভয় পায়—তা হলো সত্যের উন্মোচন। কারণ, এটাই একমাত্র বিষয় যা সর্বস্তরের মানুষকে একতাবদ্ধ করতে পারে। তাই সত্যকে ধামাচাপা দিতে প্রায়শই তারা এমন কিছু বাহানা সামনে নিয়ে আসে, যা দ্বারা সাধারণ মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে পুরো ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব।

পূর্বের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে—যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সামান্যতম সমালোচনার চেষ্টা করে, তখন তাদের ওপর অ্যান্টি- সেমাইট লেবেল চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিতর্কের নামে ইহুদিদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ চালানো হচ্ছে—এমন মায়াকান্নার রুল চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের আবেগ নিজেদের পক্ষে নিয়ে পুরো বিষয়কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, আজকের যুগে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে স্বৈরাচারী ইহুদিদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়ন চালানো সম্ভব! আজকের দিনে তো একজন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাহেবও নিউ টেস্টামেন্ট হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না। উপরন্তু প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ থেকে ‘খ্রিষ্টান’ শব্দটির ব্যবহার বাদ দেওয়া হয়েছে।

১৯২০ সালের মে মাসে আমেরিকার ওহিয়ো প্রদেশের দৈনিক পত্রিকা Daily American Tribune প্রকাশ করে—’আজকের দিনে যা হচ্ছে, তা ইহুদি নিপীড়ন নয়; খ্রিষ্টান নিপীড়ন।’ বিখ্যাত লেখক ও রাজনীতিবিদ Dean Swift বলেন—’বুঝতে পেরেছি, সহ্য যা করার সব আমাদেরই করতে হবে। আমাদের কোনো কিছু ইহুদিরা সহ্য করবে না

এপ্রিল-মে মাসের দিকে The Jewish Times-এর সম্পাদক H. Lissauer একটি কলাম লিখেন, যার শিরোনাম ছিল—

‘ক্রুশ চিহ্ন ইহুদিদের জন্য আপত্তিকর। খ্রিষ্টানদের উচিত মাগান ডেভিডকে ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা। আমরা কখনো সামান্য একটি ক্রুশ চিহ্নের নিকট নিজেদের ধর্ম, আদর্শ ও বিবেকবোধকে ঢেলে দিতে পারি না।

ক্লিভল্যান্ডের পত্রিকা Jewish Independent প্রকাশ করে—’Gideons-এর যথেচ্ছা ব্যবহার ইহুদিদের জন্য আপত্তিকর।’ Gideons বাইবেলে উল্লিখিত এক পয়গম্বর, যিনি একাধারে মহাবীর, যুদ্ধের সেনাপতি ও ন্যায়বিচারক। আমেরিকার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার ছবি ঝুলিয়ে রাখা হতো। তিনি আমাদের নিকট একজন আদর্শ পুরুষের প্রতীক। আমাদের আদালত ঘরগুলোতে Gideons-কে একজন আদর্শ বিচারকের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়। ইহুদিরা দাবি করে, সকল স্থান থেকে যেন তার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। C.A. Johnson একবার চেঁচিয়ে বলেছিলেন—

‘আদালত ঘরে ন্যায্য বিচারের প্রতীক হিসেবে Gidoens-কে স্মরণ করার কী দরকার, নিজে সৎ বিচারক হলেই তো হয়।

১৯০৯-১০ সালের দিকে আমেরিকার গির্জাগুলো পথভ্রষ্ট ও মানসিক বিকারগ্রস্ত ইহুদিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা, কিন্তু ইহুদিদের সংগঠনগুলো ঔদ্ধত্যের সুরে বলে ওঠে—

‘খ্রিষ্টানদের এত বড়ো স্পর্ধা, আমাদের জ্ঞান দিতে আসে! আমাদের কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন নেই।’

প্রতিশোধস্বরূপ ১৯১১ সালে তারা নিউইয়র্কে একটি আইন পাশ করে—

‘১৬ বছরের কম বয়সি কাউকে অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া ধর্মীয় কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত করা বা নিয়মিত গির্জায় যাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।’

শিকাগো বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শিকাগো গসপেল মিশন সংগঠনটির একজন নিয়মিত সদস্য ছিলেন। রাবাইরা তাকে নিয়ে একের পর এক নিন্দনীয় কলাম লিখে যাচ্ছিল। যেমন :

‘খ্রিষ্টান অভিভাবকদের আজ কী হলো, তারা সন্তানদের একজন ভণ্ড ও দুশ্চরিত্র ধর্ম ব্যবসায়ীর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠাচ্ছে! কীভাবে তারা একজন ধর্ম ব্যবসায়ীর নিকট শিক্ষা আশা করছে!”

একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের নৈতিক চরিত্র গঠনে ধর্মের প্রতি উৎসাহী করতেই পারেন। তাই বলে কি তিনি ধর্ম ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন? এ দেশের শিক্ষাবোর্ড ইহুদিদের কথামতো সেই অধ্যক্ষকে বিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করে। কিন্তু যখন কোনো রাবাই-এর বিরুদ্ধে মাদক ব্যাবসা, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও কূট-পরামর্শের মতো জঘন্য সব কাজের সাথে জড়িত হওয়ার প্রমাণ মেলে, তখন তাদের ধর্ম ব্যবসায়ী বলা হয় না কেন?

২৬ নভেম্বর, ১৯২০, ‘Jewish Sentinel’ প্রকাশ করে—

‘আমাদের সবচেয়ে পুরাতন এবং বিপজ্জক শত্রু হলো রোমান সম্প্রদায়। তারা যে শাখায় বিচরণ করে, তার প্রত্যেকটি-ই আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। যেদিন রোমের সূর্যাস্ত হবে, মনে রাখবেন! সেদিনই জেরুজালেমের সূর্যোদয় হবে।’

ক্লিভল্যান্ড ও লেকউড শহরের খ্রিষ্টানরা যখন বড়োদিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ইহুদিদের পত্রিকাগুলো কটাক্ষ করে বলতে শুরু করে—

‘আপনাদের কি ধারণা আছে, ক্লিভল্যান্ড ও লেকউড শহরে কি পরিমাণ ইহুদি বাস করে? যদি আমাদের একজন সদস্যও এ শহরে বাস করে, তবে এখানে সাম্প্রদায়িক কোনো উৎসব হতে পারে না।’

পরবর্তী বছরের পহেলা জানুয়ারি ইহুদিদের পত্রিকাগুলো প্রকাশ করতে শুরু করে—

‘আরেকটি বড়োদিন ফিরে আসার পূর্বে আমাদের হাতে মাত্র ৩৬০ দিন বাকি আছে। আমাদের উচিত খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাকি সময়টার উপযুক্ত ব্যবহার করা।’

ইহুদি ব্যবসায়ীরা গত কয়েক বছর যাবৎ নতুন এক খেলায় মেতে উঠেছে। ইস্টার সানডে ও বড়োদিন বন্ধ করতে পারেনি বলে ইহুদিদের দোকান ও মার্কেটগুলো যেকোনো উৎসবের দিন এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে শুরু করে। যেমন : Levys, Issac, Goldsteins ও Slivermans; কিন্তু নিজেদের উৎসবের দিনগুলো এলে ঠিকই পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়।

রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে পালন করাতেও ইহুদিরা আমাদের নিয়ে কম বাজে কথা বলেনি। যেমন—

‘ছি, ছি! আধুনিক যুগে এসেও খ্রিষ্টানরা কীভাবে পুরাতন একটি কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে! তাদের বিশ্বাসের কী যে শ্রী, রবিবার নাকি মৃত যীশু পুনরায় জীবিত হয়েছিলেন!”

American Israelite পত্রিকা কয়েক বছর আগে একটি কলাম প্রকাশ করে—

‘তখন আর কোনো ইহুদিকে লুকিয়ে থাকতে হবে না, যখন প্রতিটি খ্রিষ্টানকে উদারপন্থি ও মুক্তমনা করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

একসময় ইউরোপ-আমেরিকার খ্রিষ্টান নারীগণ পর্দা মেনে বাইরে চলাফেরা করত। আজ সে জায়গায় তাদের ছোটো ছোটো কাপড় পড়তে দেখছি। নগ্ন চলচ্চিত্র, নেশাদ্রব্যের যথেচ্ছা ব্যবহার এবং যৌনতার ছড়াছড়িতে আমাদের সমাজ ছেয়ে গেছে। এগুলোর কোনোটিই যীশুর বার্তা ছিল না। এসবই প্রমাণ করে, তারা আমাদের মন থেকে যীশুকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

এমন কোনো ক্যাথলিক চার্চ নেই, যার ওপর তারা আক্রমণ করেনি। তারা বলে—’এ কেমন খ্রিষ্টসমাজ, যারা উপাসনা করে এক ইহুদি নারীর!’ এটাকে নিছক আক্রমণ বললে ভুল হবে। যীশু মাতা ‘কুমারী মেরিকে’ নিয়ে তারা কত নোংরা ও অকথ্য গল্পের জন্ম দিয়েছে, তা কল্পনাও করা সম্ভব নয়।

সামাজিক যেকোনো অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা গীত করা পৃথিবীর অতি প্রাচীন একটি সংস্কৃতি, কিন্তু এই সংস্কৃতি আজ লোপ পেতে বসেছে। ইহুদিরা সর্বত্র বাইবেলের বিরোধিতা করে, কিন্তু সুযোগ পেলে নিজেদের ব্যাপারে স্তুতি গাওয়া থেকে বিরত থাকে না। প্রায়শ ইহুদি রাবাইগণ খ্রিষ্টানদের গির্জা ও বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে জোর গলায় বলে বেড়ায়—

‘আমরা বাইবেল লিখেছি এবং তোমাদের জন্য তা আমরাই সংরক্ষণ করেছি। তাই আশীর্বাদ চাইলে ইজরাইলের সেবা করো।’

তা ছাড়া, যে যীশু পৃথিবীর কোটি কোটি খ্রিষ্টানের হৃদয়ে দেবতারূপে এতদিন পর্যন্ত টিকে আছে, তাকে নিয়ে যথেচ্ছা গল্প রচনা করতে ইহুদিদের জুড়ি নেই। তারা এটাও প্রচার করে, যীশু ছিলেন ইহুদি। তিনি কস্মিনকালেও খ্রিষ্টান ছিলেন না। তাই আজ যারা খ্রিষ্টান এবং যারা যীশুর উপাসনা করছে, তারা সবাই বিপথগামী

এত কিছুর পরেও কি বলতে হবে আমরা ইহুদিদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়ন চালাচ্ছি? সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে আজ ইস্টার সানডে, গুড ফ্রাইডে, বড়োদিন, বড়োদিন সংগীত ইত্যাদি পালিত হয় না। তাদের মতে, একটি অদর্শ ও ধর্ম সহিষ্ণু দেশ গড়ে তোলার পূর্বশর্ত হলো—দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ (সেক্যুলার) হতে হবে। অন্যথায়, সে দেশ কুসংস্কারের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়বে। কিন্তু ইহুদি রাবাইগণ নির্বিগ্নে বিভিন্ন শহরে নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করে যাচ্ছে এবং খ্রিষ্টান যুবকদের মধ্যে জুদাইজমের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

সবশেষে বলতে চাই, ধর্ম পালন এবং ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে খ্রিষ্টান ধর্মকে কলুষিত করার যে নিরন্তর প্রয়াশ ইহুদিরা চালিয়ে যাচ্ছে, আশা করছি এই অধ্যায়টি কিছুটা হলেও জ্যান্টাইলদের মধ্যে চিন্তার খোরাক জোগাতে পারবে।

ইহুদি সন্ত্রাসীদের নানা অপকর্মের চিত্র

পূর্বে বলেছি, এখনও বলছি—আমার বই লেখার উদ্দেশ্য পুরো ইহুদি সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা নয়। তাদের মাঝেও এমন অনেক সদস্য আছে, যারা একজন নীতিবান ও আদর্শ জ্যান্টাইলের ন্যায় পুরো জীবন অতিবাহিত করতে উৎসুক। এ সকল অপরাধ কর্মকাণ্ডের পেছনে তাদের কোনো প্রকার সম্মতি নেই। তবে এটা ঠিক যে, Kehillah, B’nai B’rith, Anti-Defamation League, American Jewish Committee, Zionism ইত্যাদি সংগঠন ও মতবাদগুলো তাদের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং তারাই আজ পুরো বিশ্বে এক একটি বিষফোড়ায় পরিণত হয়ে উঠেছে। তবে ইহুদিদের পুরো সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এতে সে সকল ইহুদিরাও অভিযুক্ত হবে, যারা আজ বিশ্বশান্তির জন্য জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কেবল অপরাধীদের পরিচয় উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে যে সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি লাভ করছে, তার মূলে রয়েছে ইহুদিরা; যারা ধর্মকে বিশেষভাবে ব্যবহার করছে।

আমেরিকার এমন কোনো শহুরে মেজিস্ট্রেট ও থানা-আদালত পাওয়া যাবে না, যেখানে ইহুদিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যাবে না। থানা-আদালতগুলোতে শত শত ফৌজদারি মামলা হওয়ার পরও পত্র-পত্রিকায় ইহুদিদের নাম দেখা যায় না।

উকিল, বিচারক ও আইনজীবীরা যে বহু আগেই তাদের উপঢৌকনের নিকট বিক্রি হয়ে গেছে, সে গল্প তো আগেই উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯০৯ সালে নিউইয়র্কের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার General Bingham চারদিকে ঘটমান বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীটির অপরাধ কর্মের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা নিয়ে চতুর্দিকে হইচই পড়ে যায়। তিনি বলেন—

‘আমি নিশ্চিত, আমেরিকার নিকৃষ্টতম বিচারব্যবস্থায় এমন অনেক উকিল ও আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা এই প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্য মিথ্যা প্রমাণ করার প্রচেষ্টা চালাবে।’

প্রতিটি জাতি ও সম্প্রদায়ে অসহায় ও বিপর্যস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ কিছু সংগঠন থাকে। যেমন : খ্রিষ্টানদের এমন কিছু সংগঠনের নাম হলো— Magdalen Home, Protestant Episcopal House of Mercy Catholic House of the Good Shepherd। এখানে ব্যতিক্রম কেবল ইহুদিরা।

নিউইয়র্কের সকল মেজিস্ট্রেট আদালতের সংগৃহীত তথ্য মতে, সমাজের দুই-তৃতীয়াংশ অসহায় নারী সমাজ ইহুদি জনগোষ্ঠীর অংশ। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই অসহায় নারীদের দায়ভার গ্রহণ ও পুনর্বাসনের জন্য ইহুদিদের নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন নেই! একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা তা বারবার ভঙ্গ করেছে। সবশেষে মানবিক মূল্যবোধ থেকে Protestant Episcopal House of Mercy সংগঠনটি এই অসহায় নারীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

নিউইয়র্কের এক ইহুদি আইনজীবীর নাম শোনা যায়, যে ওয়ালস্ট্রিট শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সদস্যকে সুকৌশলে কুৎসিত সব কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ব্লাকমেইলের চেষ্টা করত। পুরো বাজারে সে ‘Wolf of Wall Street’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে এই নেকড়ে বাঘকে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে জেলখানায় পাঠানো হলে তাকে রক্ষার এগিয়ে আসে Kehillah। অনেক প্রচেষ্টার পর তাকে জেল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। যেহেতু বয়সে সে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছে, তাই তার সঠিক চিকিৎসা দরকার—এমন একটি অজুহাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় মেজিস্ট্রেটের বর্ণণা অনুযায়ী-

‘ইহুদিরা এত বেশি আত্মকেন্দ্রিক যে, তাদের প্রতিটি প্রজন্মই জন্মের পর হতে বাবাদের চাপিয়ে দেওয়া ভ্রান্ত শিক্ষার ছায়ায় বড়ো হতে থাকে। খুব অল্প বয়সে ইহুদি সন্তানদের মগজে এমন কিছু খারাপ চেতনার বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যার দরুন পরিণত বয়সে তাদের হৃদয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত করা সম্ভব হয় না। পুরো পৃথিবীকে ইহুদিদের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে –

এটাই তাদের বিশ্বাস। সাব্বাত হলো এমনই একটি উদাহরণ, যা তারা জোরপূর্বক অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে। ইহুদিদের কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো দাম নেই।’

যে ইহুদিদের কথা এখানে বলা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশ মূলত পূর্ব ইউরোপীয় দেশ থেকে আগত। যেমন : রাশিয়া, গ্ল্যাশিয়া ও পোল্যান্ড। নিজ সম্প্রদায়ে মাঝে ইহুদিরা সর্বদা ইডিশ ভাষায় কথা বলে। জ্যান্টাইল ব্যবসায়ীদের সাথে লেনদেন করার পর তারা যে রশিদ ও ক্যাশমেমো ধরিয়ে দেয়, তাও ঠিক একই ভাষায়। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কর্মস্থলে আসতে বাধ্য করার জন্য যখন ইহুদিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তখন তাদের রক্ষা করতে ইহুদি আইনজীবীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ইহুদিদের রক্ষার জন্যই বিচার বিভাগে প্রতিদিন নিত্যনতুন আইন তৈরি হতে থাকে।

আদালতে দাখিল করা হলে ইহুদি আইনজীবীরা বলে, পূর্ব ইউরোপে দেশগুলোতে বসবাসকালে তারা শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি পালন করত। তাই সেই সংস্কৃতি থেকে ইহুদিরা এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। আদালত পরামর্শ দেয়, শনি-রবি উভয় দিবসে যেন ইহুদিরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। কিন্তু অর্থের প্রতি তারা এতটা লোভী যে, সপ্তাহে দুই দিন ব্যবসায়-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে—এমনটা মেনে নিতে পারেনি। তবে সমঝোতার ভিত্তিতে ইহুদিদের কিছু কিছু সংগঠন এ দিনে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে রাজি হয়। যেমন : The Independent Ladies Garment Merchant Association Incorporated জুনের শেষ হতে আগস্টের শেষ পর্যন্ত রবিবার ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে রাজি হয়। কিন্তু যে শহরগুলোতে জ্যান্টাইলদের কোনো আধিপত্য নেই এবং আইনিব্যবস্থা খুব একটা জোরালো নয়, সেখানে শনিবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রেখে রবিবার সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু রেখেছে।

তা ছাড়া রবিবার যেহেতু জ্যান্টাইলদের সব শপিংমল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো বন্ধ থাকে, তাই এ দিনে যদি ইহুদিরা নিজেদের দোকানপাট খোলা রাখতে পারে, তবে প্রতি ঘণ্টায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। কারণ, বাজার তখন প্রতিদ্বন্দ্বীশূন্য থাকে। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কের পঞ্চম অ্যাভিনিউ রেলওয়েতে একটি বড়ো বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যেখানে উল্লেখ ছিল—প্রতি রবিবার, বিকেল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ইহুদিদের একটি পাইকারি দোকান খোলা থাকবে। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে যেই না পুলিশ ব্যবস্থা নিতে যাবে, অমনি বিজ্ঞাপনটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তারা ভাবে, চুরি-চামারি করেও যদি এ দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা রাখা যায়, তাহলেও অনেক নগদ পয়সা উপার্জন করা যাবে।

নিউইয়র্ক প্রশাসন এই অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিশেষ একটি আইন পাশ করে। Penal Law ২১৪৯ অনুযায়ী-

‘সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে যদি কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালু রাখে, তবে শহরের মেজিস্ট্রেটগণ কোনো প্রকার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া তাদের সকল পণ্য বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে এই পণ্য সমাজের দুঃস্থ, গরিব ও দাতব্য সংস্থার মাঝে বণ্টন করা হবে।’

সত্যি যদি এই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তবে ইহুদি অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা উচিত শিক্ষা পাবে।

তৃতীয় মেজিস্ট্রেটের বর্ণণা অনুযায়ী—

‘আমেরিকাকে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করবে—এমন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে পূর্ব ইউরোপিয়ান ইহুদিরা এ দেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রতিদিন যেন বেড়েই চলেছে। ইহুদিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অসংখ্য ফৌজদারি মামলায় আমেরিকার আদালতগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর ইহুদি নারীদের কথা বলে তো লাভ নেই।

তারা এমনভাবে নিজেদের উপস্থাপন করে, যেন সমাজের স্বর্বহারা দুঃখী জনগোষ্ঠী। আমি কখনোই বলব না—তারা অসহায় বা অবলা নারী; বরং তারা নতুন একটি মতবাদকে এ সমাজে চাপিয়ে দিতে চাইছে আর তা হলো—ফেমিনিজম। নারী স্বাধীনতার নাম করে ইহুদি নারীরা সমাজে যে নোংরা সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে, তা যে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি সভ্য দেশে বিষফোড়ায় রূপ নেবে, তা এখনই বলে রাখছি।

অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রীয় প্রশাসন আজ ইহুদিদের অধীনে চলে গেছে। বাকি অংশটুকু গ্রাস করতেও মনে হয় না খুব বেশি সময় লাগবে। ক্ষমতার প্রতি লোভ সবারই থাকে। কিন্তু এই ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরই যে ইহুদিরা অত্যাচারী হয়ে ওঠে, তার নজির ইতিহাসে ভূরিভূরি পাওয়া যাবে। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কের এক লভি ব্যবসায়ী আমার নিকট অভিযোগ করেছে, ইহুদিরা সিন্ডিকেট উপায়ে এ শহরের পুরো লন্ড্রি ব্যবসায়কে নিজেদের করে নিয়েছে এবং তাকে সেখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। ইতিহাস বারবার এটাই প্রমাণ করে, সুযোগ হাতে পেয়ে প্রতিবারই ইহুদিরা অত্যাচারী হয়ে উঠেছে।

এ শহরের পোস্ট অফিসগুলোতে প্রায় ১১,০০০ কর্মী কাজ করে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি ইহুদি। পোস্ট ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও তারা পৌঁছে গেছে। ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলো যেমন : রোশ হাসানা, নববর্ষ, ইয়ম কিপুর, প্রায়শ্চিত্ত দেবোস ইত্যাদি দিনগুলোতে তারা অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখে। অপর দিকে বড়োদিন, খ্রিষ্ট নববর্ষ, গুড ফ্রাইডে ইত্যাদি দিনগুলোতে পূর্ণ কর্ম দিবস পালন করে; এমনকী জ্যান্টাইলদেরও সেদিন কোনো ছুটি দেয় না।

প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ইহুদিরা ইতোমধ্যেই প্রবেশ করতে শুরু করেছে, যা তাদের নতুন শক্তি এনে দিয়েছে। এখন ইহুদিরা নিজেরাই নতুন নতুন আইন তৈরি করতে পারবে এবং সুকৌশলে তা আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দেবে, যা পাঠ করে এ দেশের নতুন প্রজন্ম বড়ো হয়ে উঠবে। তাদের আইন অনুযায়ী শনিবার ইহুদিদের জন্য আদালত ও ফৌজদারি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং রবিবার ব্যবসায়িক কার্যক্রম খোলা রাখার অনুমতি থাকবে।’

আরও একজন মেজিস্ট্রেটের বক্তব্য অনুযায়ী-

‘কয়েক বছর আগে যখন লন্ডন ভ্রমণে যাই, দেখি—রবিবার সরকারি ছুটির দিনে ইহুদিরা পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সুযোগ সবার জন্য ছিল না। কেবল ঘেটো অঞ্চলগুলোতে এই দিনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেদিন খুব দূরে নয়, যখন তারা মুক্ত পদাঘাতে সকল ঘেটোর সীমানা পেরিয়ে আমাদের সমাজে বসবাস শুরু করবে এবং ইহুদি আইনসমূহ সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবে।’

ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর ইহুদিদের আক্রমণ

আন্তর্জাতিকভাবে ইহুদিদের চূড়ান্ত আক্রমণ আসে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় চেতনার ওপর। ধর্মীয় চেতনাই ছিল শেষ শিকড়, যা আঁকড়ে ধরে আমরা বহু শতাব্দী অবধি নিজেদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু বিশেষ সেই গোষ্ঠীর কাছে এই ধর্মভীরু চেতনা ছিল ইহুদি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার পথে সর্বশেষ প্রতিবন্ধকতা। কীভাবে একটি জাতিকে নাস্তিক জাতিতে পরিণত করা যায়, সে সম্পর্কে তাদের প্রটোকলগুলোতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন :

‘খোদাভীতি ও সৃষ্টিকর্তাকেন্দ্রিক ধর্মীয় বিশ্বাস মুছে ফেলার জন্য আমরা জ্যান্টাইলদের হৃদয়ে গাণিতিক বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের ধারণা প্রতিস্থাপন করব এবং বস্তুবাদী পৃথিবীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলব।

নাস্তিক জাতিতে পরিণত হওয়ার দরুন নির্দিষ্ট কোনো শাসনব্যবস্থায় তাদের আর বিশ্বাস থাকবে না। ফলে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার বিষয়টি হয়ে যাবে জনগণের সম্পত্তি, যা থেকে আমরা ইচ্ছামতো ফায়দা লুটে নেব।

আমরা তাদের ওপর এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেবো, যা তাদের নৈতিক চেতনা পঙ্গু করে দেবে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত ধ্বংস করে দেবে।’—৫ম প্রটোকল

‘প্রভাবশালী জ্যান্টাইল পাদরিদের ক্ষমতা হ্রাস করতে বহু আগ থেকেই আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছি।’—১৭তম প্রটোকল

‘বিশ্ব শাসনক্ষমতার একক অধিপতি হওয়ার পর আমরা কেবল নিজেদের ধর্ম প্রচার করব। এর বিষয়বস্তু হবে—এক ঈশ্বর; আমরাই সৃষ্টিকর্তার মনোনীত সম্প্রদায় এবং পুরো বিশ্ববাসীর ভাগ্য একমাত্র আমাদের ভাগ্যের সঙ্গেই জড়িত। ফলে আমাদের ধর্ম ব্যতীত পৃথিবীর সকল ধর্ম ধ্বংস হবে এবং সবাই ইহুদি ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন শুরু করবে। এর মধ্যে যদি কোনো গোঁড়া নাস্তিকের জন্ম হয়, তবে সে আমাদের জন্য কোনো হুমকির কারণ হবে না।’—১৪তম প্রটোকল

‘সকল ধর্মের সমান অধিকার’ বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইহুদিরা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ইউরোপ তৈরি করল। ১৯০৬ সাল থেকে আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেবাস থেকে ধর্মীয় শিক্ষা পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার জন্য ইহুদিরা ক্রমান্বয়ে চাপ বৃদ্ধিত করতে থাকে। এবার ইহুদি ও আমাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইহুদি আক্রমণের ঘটনা পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো—

৫৬৬১ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রি.) ভার্জিনিয়া প্রদেশের সকল প্রশাসনিক অফিস থেকে ‘খ্রিষ্টান শব্দটি সরিয়ে দিতে ইহুদিরা আন্দোলন করে।

৫৬৬৭ ( ১৯০৬-১৯০৭ খ্রি.) সংবিধান থেকে যীশুর নাম সরিয়ে দিতে ওকলাহোমায় আন্দোলন করে। ইহুদিদের মতে, সেক্যুলার রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মীয় পরিভাষা ব্যবহার করা নিন্দনীয়।

৫৬৬৮ (১৯০৭-১৯০৮ খ্রি.) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরি দাবিতে চারদিকে ইহুদি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

৫৬৬৯ (১৯০৮-১৯০৯ খ্রি.) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন দিবসে (Thanks Giving Day) খ্রিষ্টধর্মীয় সকল পরিভাষা বর্জন করতে হয়। ইহুদি প্রফেসর Gotthard Deutsch বলেন- ‘উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রার্থনা সংগীত চর্চা বন্ধ করতে হবে।’

৫৬৭৩ (১৯১২-১৯১৩ খ্রি.) নিউইয়র্কে ইহুদি জনসংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে সচিব ও কেরানির চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

অনেক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করত ‘Christian preferred’ বা ‘Jews please do not apply’। সে বছর ইহুদি সংগঠনগুলো এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইহুদিরা বলে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা এসব বিজ্ঞাপন থেকেই বোঝা সম্ভব।

৫৬৭৯ (১৯১৮-১৯১৯ খ্রি.) সামরিক বাহিনীতে নতুন কিছু রাজমিস্ত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং সেখানে ‘ Christian preferred’ উল্লেখ করা হয়। কেন এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলো, তার কৈফিয়ত জানতে Newton D. Baker-কে তলব করে Louis Marshall-এর নিকট পাঠানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে—এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কয়জনই- বা রাজমিস্ত্রী পেশায় জড়িত!

সৈন্য নিয়োগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা Provost Marshall Crowder এক বিবৃতিতে বলেন—’যারা জন্মসূত্রে আমেরিকান নয়; বিশেষ করে ইহুদিরা, সামান্য কয়েকদিনের পরিশ্রমে একেবারে ভেঙে পড়ে। তাদের পক্ষে সমরিক বাহিনীতে বেশিদিন টিকে থাকা অসম্ভব।’ বিষয়টি Louis Marshall-এর কানে পৌঁছা মাত্র তিনি Mr. Crowder-কে টেলিগ্রাম করে বিবৃতিটি সরিয়ে নিতে বাধ্য করেন।

ইউনাইটেড শিপিং বোর্ড নতুন কিছু খ্রিষ্টান কর্মী চেয়ে Times পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে তারা বিজ্ঞাপনটি সংশোধন করে প্রকাশ করে, আগ্রহী প্রার্থীরা যেন আবেদনপত্রে ধর্ম ও জাতীয়তা উল্লেখ করে। কেউ এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্ৰদান করেছে কি না, তা ভাইভা বোর্ড খতিয়ে দেখে খ্রিষ্টানদের চাকরিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কেন ধর্ম ও জাতীয়তা নিয়ে তারা এত বাড়াবাড়ি করল, তা নিয়ে ইহুদি সংগঠনগুলো কৈফিয়ত দাবি করে।

Kehillah বলে—’আমি যে ইহুদি, এটা শুধু আমি জানলেই চলবে। বাহিরের মানুষ এসব জেনে কী করবে?’ পরে প্রেসিডেন্ট সাহেবকে দিয়ে আইন পাশ করিয়ে শিপিং কোম্পানিটিকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।

একই বছর ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম এবং লিবার্টি লোন কমিটি কিছু খ্রিষ্টান শর্টহ্যান্ড লেখক চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তাৎক্ষণিক Benjamin Strong প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যানের নিকট প্রতিবাদপত্র প্রেরণ করেন। পরে তারা বাধ্য হয়ে বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেয়। এমন বিজ্ঞাপনের জন্য ট্রেজারি সেক্রেটারি McAdoo আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান।

৫৬৮০ (১৯১৯-১৯২০ খ্রি.) এ বছর থেকে ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপনগুলোতে ইহুদি প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করতে সক্ষম হয়। আগের বছর যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান খ্রিষ্টান কর্মী চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারত না, সেখানে এ বছর তারা ইহুদি কর্মী চেয়ে বিজ্ঞাপণ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। এটাই ইহুদিদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি থেকে যেন ধর্মীয় শিক্ষার রীতিনীতি উঠিয়ে দেওয়া হয়, তা নিয়ে ইহুদিরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। অবশেষে সফলও হয়েছে। তা ছাড়া ইহুদিদের আন্দোলনের ফলে এ জাতীয় প্রতিটি ঐতিহাসিক বই ও গল্প-কবিতা বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরূপ কিছু নমুনা নিচে উপস্থাপন করা হলো—

৫৬৬৮ (১৯০৭-১৯০৮ খ্রি.) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাইবেল পাঠ ও বড়োদিন উদযাপন বন্ধ করার জন্য ইহুদিরা আন্দোলন শুরু করে। গালভেস্টোন, ক্লিভল্যান্ড, এল পাসো এবং ইংগস্টাওন-এর শিক্ষাবোর্ডগুলোকে বাধ্য করে, যেন পরবর্তী বছরের পাঠ্যসূচিতে ‘Merchant of Venice’ অন্তর্ভুক্ত করা না হয়।

৫৬৬৯ (১৯০৮-১৯০৯ খ্রি.) ইহুদিদের ভীষণ চাপের মুখে পেনসিলভানিয়ার বিদ্যালয়গুলো প্রাত্যহিক বাইবেল পাঠ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। নিউ জার্সির বিদ্যালয়গুলোতে বাইবেল পাঠ শিক্ষার্থীদের জন্য ঐচ্ছিক করা হয়। অর্থাৎ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া যাবে না। লুইসিয়ানার বিদ্যালয়গুলোতে বাইবেল পাঠ বন্ধ করতে স্থানীয় সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। বাল্টিমোরে ইহুদি নারী সমিতি শিক্ষাবোর্ডের নিকট দরখাস্ত করে, যেন বিদ্যালয়গুলোতে বড়োদিনের চর্চা বন্ধ করা হয়। ইহুদিদের চাপের মুখে ফিলাডেলফিয়ার শিক্ষাবোর্ড বড়োদিন চর্চা বন্ধ করে দেয়। রবিবারে ইহুদিরা যেন নিজেদের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত চালু রাখতে পারে, তার অনুমতি চেয়ে নিউইয়র্ক হিব্রু পরিষদ স্থানীয় সরকারের নিকট আবেদন করে।

৫৬৭০ (১৯০৯-১৯১০ খ্রি.) পেনসিলভানিয়ার ব্রিজপোর্ট শিক্ষাবোর্ড সেখানকার বিদ্যালয়গুলোতে প্রার্থনা সংগীত গাওয়া বন্ধ করে দেয়। একই ঘটনা কেনটারি বিদ্যালয়গুলোতেও ঘটে। ক্লিভল্যান্ডের কিছু শিক্ষকের প্রচেষ্টায় ‘Merchant of Venice’ পুনরায় পড়ানো শুরু হলে একদল চরমপন্থি ইহুদি এপ্রিল মাসের গোড়াতে বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে জোরপূর্বক গল্পটি সরিয়ে নিতে বাধ্য করে।

৫৬৭১ (১৯১০-১৯১১ খ্রি.) ক্যালিফোর্নিয়ার ডেট্রইট শহরে অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতে প্রাত্যহিক বাইবেল পাঠ ও হামদ-নাত গাওয়ার বিরুদ্ধে ইহুদিরা প্রতিবাদ করে। নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে শনিবারের কর্ম দিবস বন্ধ রেখে রবিবার সবকিছু খোলার আইনি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

৫৬৭২ (১৯১১-১৯১২ খ্রি.) কনেকটিকাট প্রদেশের হার্টফোর্ড শহরে অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মচর্চা বাতিল করা হয়। নিউজার্সির বিদ্যালয়গুলোতে বাইবেল পাঠ ও ধর্মীয় সংগীত বন্ধ করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব করা হয়। তিনজন প্রভাবশালী রাবাইয়ের অনুরোধে ম্যাসাচুসেট প্রদেশের রক্সবারি জেলার বিদ্যালয়গুলো থেকে Christmas tree ও খ্রিষ্টীয় সকল চিহ্ন সরিয়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে হার্টফোর্ড ও কানেকটিকাট শিক্ষাবোর্ড সকল সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে ‘Merchant of Venice’ সরিয়ে নেয়।

৫৬৭৩ (১৯১২-১৯১৩ খ্রি.) টেনসি শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাইবেল বন্ধ করানো হয়। ভার্জিনিয়া প্রদেশের রিচমন্ড শিক্ষাবোর্ড পুনরায় বাইবেলকে নিজেদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে। পেনসিলভানিয়ার স্থানীয় সরকারের নিকট আবেদন করা হয়, যেসব শিক্ষক এখনও বাইবেল পড়াচ্ছে, তাদের যেন চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের চাপের মুখে পড়ে শিকাগো ও ম্যাসাচুসেটের শিক্ষাবোর্ড ধর্মীয় শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউ জার্সিতে রবিবার কর্ম দিবস হিসেবে বরাদ্দ করার দরখাস্ত করা হয়।

৫৬৭৪ (১৯১৩-১৯১৪ খ্রি.) আমেরিকান সরকার অভিবাসন বিষয়ে নতুন নীতি প্রণয়ন করে। তখন ইহুদিরা জোর প্রচেষ্টা চালায়, যেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইন পাশ না হয়।

৫৬৭৫ (১৯১৪-১৯১৫ খ্রি.) ক্যালিফোর্নিয়ার শিক্ষাবোর্ডকে কিছু বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, যেন সেগুলো শিক্ষার্থীদের পড়ানো না হয়।

৫৬৭৬ (১৯১৫-১৯১৬ খ্রি.) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে বাইবেল পাঠ বন্ধ করা নিয়ে ইহুদিদের এতসব আন্দোলন এ বছর সফল হয়। এ বছর থেকে ইহুদিরা ‘Merchant of Venice’-এর সাথে ‘Lamb’s Tales’ গল্পটিকেও সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে নামে।

৫৬৭৭ (১৯১৬-১৯১৭ খ্রি.) অভিবাসন আইন নিয়ে ইহুদিরা এ বছর খুব ব্যস্ত ছিল। পরিশেষে সফলও হয়। এই বছর থেকে আমেরিকায় ইহুদিদের প্রবেশে আর কোনো বাধা থাকল না।

১৯১৯ সালের মধ্যে আমেরিকার ১৫০টি শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইহুদিরা Merchant of Venice’ ও ‘Lamb’s Tales’ গল্প দুটিকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। শিকাগো শিক্ষাবোর্ডের নিকট ইহুদিদের পাঠানো চিঠির অংশ বিশেষ নিচে উপস্থাপন করা হলো :

‘আমরা জানতে পেরেছি, উচ্চমাধ্যমিক অনেক বিদ্যালয়ে এখনও Merchant of Venice নিয়মিত পড়ানো হচ্ছে। আমরা এই ভেবে ভীত হচ্ছি না যে, গল্পটি পাঠ করানোর দরুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীরা মানসিক হীনম্মন্যতার স্বীকার হবে; বরং জ্যান্টাইল সন্তানদের অবচেতন মনে এটি ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম দেবে। এটা মানতে হবে, শেক্সপিয়র গল্পটি লিখেছেন কয়েক শত বছর আগে। তখনকার এবং আজকের পারিপার্শিক অবস্থা এক নয়। গল্পটি তিনি তৎকালীন সমাজব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। এটা কেবল আপনাদের মতো পূর্ণবয়স্করা বুঝতে পারবে; নাবালক বাচ্চার এর কিছুই বুঝবে না।

শেক্সপিয়রকে যেমন আপনারা ভালোবাসেন, তেমনি আমরাও ভালোবাসি। গল্পটির ‘Shylock’ চরিত্রটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সত্যি নাবালক সন্তানদের মনে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্ম দেবে। এই মানসিকতা নিয়ে বড়ো হলে আমরা কখনো একে অপরের বন্ধু হতে পারব না।

আমাদের বিষয়টির গুরুত্ব অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে এই গল্প ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস হতে বাদ দিয়েছে। আসা করি আপনারাও গল্পটি পাঠের ক্ষতিকর দিকগুলো উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে তা অবিলম্বে পাঠ্যসূচি হতে অপসারণ করবেন।’

মজার বিষয় হলো—তারা আগে থেকেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আলাপ সেরে রাখত। চিঠি পাঠানো ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। এটা ঠিক যে, বিদ্যালয়গুলোতে আর এই গল্পটি পড়ানো হবে না। তারপরও কোনো জ্যান্টাইল সন্তান যদি ঘরে বসে এই গল্পটি পাঠ করে, তবে তারা কি আর বাধা দিতে পারবে? মূলত ইহুদিরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, যেন এই গল্পটি সমাজ থেকে মুছে দেওয়া যায়। মানুষ তো এখন আর বই পড়ে না। সিনেমা হলে গিয়ে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে। অতঃপর ইহুদিরা গল্পটির মূল কাহিনি যতটা সম্ভব পরিবর্তন করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে শুরু করে। কিছু উক্তি বাছাই করে তারা এমনভাবে প্রচার শুরু করে, যেন শেক্সপিয়র তার অমৃত বাণীগুলো ইহুদিদের জন্যই রেখে গেছেন! যেমন :

‘হ্যা, আমি একজন ইহুদি। ঈশ্বর কি আমাদের দেখার জন্য চোখ দেননি? তিনি কি আমাদের হাত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, আবেগ, ভালোবাসা, অনুভূতি কিছুই দেননি?

এরপর ইহুদিদের রোষানলে পড়ে আরেকটি কালজয়ী নাট্য-উপন্যাস, Macbeth। ধীরে ধীরে এমন আরও অনেক গল্প যে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে, তা সময়-ই দেখিয়ে দেবে। এসব ঘটনা প্রতিদিন-ই ঘটে চলছে। শুধু আমেরিকায় নয়; গোটা পৃথিবীকেই তারা ধর্মনিরপেক্ষ করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে ইহুদিরা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারছে না, সেখানে কাজ করছে এজেন্ট। আগেই বলেছি, জ্যান্টাইলরা অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে অভ্যস্ত নয়; বরং অন্যের অধিকার রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করাই তাদের রীতি। যে উদারপন্থি ও মুক্তমনা নীতিকে আমরা প্রগতির অংশ বলে মনে করেছি, তা-ই আমাদের সর্বহারা করে দিচ্ছে। একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষাই পারে একটি জাতিকে আদর্শ ও শালীনরূপে গড়ে তুলতে। যে শিক্ষা নিয়ে আমরা শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জগতের মুখোমুখি হব, তার সাথে যদি ধর্মীয় জ্ঞানের সমন্বয় না থাকে, তবে একসময় আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হব। কারণ, তখন আমাদের বিবেকবোধ ও নৈতিকতা বলতে কিছুই থাকবে না। অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ইহুদিদের আরও কিছু কুকর্মের বিবরণ নিচে উপস্থাপন করা হলো-

৫৬৬৯ (১৯০৮-১৯০৯ খ্রি.) ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইহুদিরা সাব্বাতকে জনসাধারণের মাঝে প্রচার করতে থাকে। ইহুদি উকিলরা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে শনিবারের ফৌজদারি মামলাগুলোকে পিছিয়ে দেয়। ব্যবসায়ীগণ এ দিনে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ রেখে বেআইনিভাবে সবকিছু রবিবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ধীরে ধীরে অনেক আমেরিকান এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

৫৬৭০ (১৯০৯-১৯১০ খ্রি.) ইহুদিরা শনিবারকে রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালায়। সেইসঙ্গে শুক্রবার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালত যেন অর্ধ দিবস করা হয়, সেই আবেদনও করে। কারণ, সাব্বাত শুরু হয় শুক্রবার বিকাল থেকে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।

৫৬৭১ (১৯১০-১৯১১ খ্রি.) নিউইয়র্কের সুপ্রিমকোর্টে হিব্রু শিরোনামে ইহুদিরা একটি দরখাস্ত জমা দেয় ‘Agudath Achim Kahal Adath Jeshurun’। তারা ভেবেছিল, বিচারক সাহেব হয়তো শিরোনামটুকু বাদ দিয়ে বাকি অংশ পড়ে নেবেন, কিন্তু তিনি পুরো দরখাস্ত পুনরায় ইংরেজিতে লিখে আনার কড়া নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, ইহুদিরা শিকাগো নির্বাচন পিছিয়ে দেয়! কারণ, তা শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

৫৬৭৩ (১৯১২-১৯১৩ খ্রি.) নিউ জার্সি, বেয়ন, হবকন ও ইউনিয়ন হিলসহ আরও অনেক শহরে ইহুদিরা শনিবার রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

৫৬৭৪ (১৯১৩-১৯১৪ খ্রি.) অভিবাসন বিভাগ ইহুদি কর্মীদের জন্য শনিবার ছুটির ব্যবস্থা করে। ইহুদিদের পশু হত্যা প্রথা the Shehitah-এ বছরই প্রথম আলোচনায় আসে।

Kosher food হলো ইহুদিদের এক ধরনের ধর্মীয় ভোজ। সরকারি স্কুলগুলোতে একসময় এই খাবার নিষিদ্ধ ছিল। কারণ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে তা গ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ইহুদিরা প্রতিবাদ করে বলে, তাদের অনেক সন্তানও তো এসব স্কুলে অধ্যয়ন করছে, অন্তত তাদের জন্য যেন এই খাবারের বৈধ্যতা দেওয়া হোক। সেই প্রস্তাবনা বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়।

৫৬৭৭ (১৯১৭-১৯১৮ খ্রি.) হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় শনিবার কেন ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করল, তা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা শুনতে হয়। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদিদের প্রতি অধিক সচেতন হয়।

এভাবে চলতে থাকলে প্রতিবছরের ক্যালেন্ডার এমনভাবে সাজাতে হবে, যেন সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়টির সাথে কোনো ধরনের ঝামেলা না বাধে। তবে পৃথিবীতে অনেক ভালো ইহুদি খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা পরিবর্তিত তালমুদের অনুসারী নয়।

কিন্তু এই গোষ্ঠীটি সংখ্যায় খুবই কম। আসলে পয়গম্বর মোজেসের ওপর আসা সেই তাওরাত আজও অক্ষুণ্ণ আছে কি না, তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। বাজারে এর অনেক ভার্সন খুঁজে পাওয়া যাবে।

একটি বিষয় লক্ষণীয়, ইহুদিদের এই ভালো জ্ঞাতি ভাইদের কখনো মিডিয়ার সামনে দেখা যায় না; মূলত আসতে দেওয়া হয় না। কারণ, ইহুদিরা চায় না, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত ইহুদিদের মধ্য থেকেই হোক।

ইহুদিদের ধর্মীয় সংগীত ‘Kol Nidre’ ও ‘Eli, Eli’ সম্পর্কে আলোচনা।

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার তিনটি শহরের (নিউইয়র্ক, ডেট্রইট, শিকাগো) থিয়েটার হলগুলোতে ইহুদিদের একটি ধর্মীয় সংগীত নিয়মিত পরিবেশিত হতে শোনা যাচ্ছে। প্রতিবার আমাদের এটাই বলা হচ্ছে যে, বিশেষ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গানটি পরিবেশিত হচ্ছে। কিন্তু কারা এই সংগীতটি শোনার জন্য অনুরোধ করছে? এমন মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য কী হতে পারে? সংগীতটির নাম হলো Eli ।

১৯২০ সালে Jewish Daily News পত্রিকায় একজন ইহুদি লেখক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ইহুদি বর্ষ ৫৬৮১-কে অরাজকতাময় বর্ষ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন—

‘নিজেদের জীবনধারায় ইহুদিরা যে একের পর এক ভুল করে চলেছে, তা তারা কখনোই আমলে আনবে না। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে তারা যে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে, তা বর্ণণাতীত।’

বিগত বছরে বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা যে অরাজকতার জন্ম দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্যালেস্টাইনে বিশৃঙ্খলতা, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ-বিগ্রহে হস্তক্ষেপ, নিজ জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা, আত্ম-বিভ্রম ইত্যাদি। ইহুদিরা মানসিকভাবে অসুস্থ।

৫৬৮২ সালকে সামনে রেখে বলতে চাই, তাদের আর ইহুদি বলে সম্বোধন না করে ইজরাইলি বলে সম্বোধন করাই শ্রেয়। তাদের বিশ্বাস, এই জাতির ভবিষ্যৎ সফলতা কেবল ইজরাইল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সম্ভব এবং এটাই চূড়ান্ত ঠিকানা। ইহুদিদের পররাষ্ট্রনীতির সারসংক্ষেপ এই যে, পুরো পৃথিবী তাদের আধিপত্য ও বশ্যতা নির্দ্বিধায় মেনে নেবে।

এ জাতির প্রকৃত শত্রু মূলত তারাই, যারা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের মুনাফার পকেট ভারী করছে। যেমন : American Jewish Committe এবং রাজনৈতিক রাবাইগণ। বর্তমানে আমরা এমন এক মহান নেতার জন্য অপেক্ষা করছি, যিনি আমাদের নির্দয়, স্বার্থপর ও দুর্নীতিবাজ সমাজ থেকে মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে ধ্বংস করবেন সে সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের, যারা আমাদের ধর্মকে কলুষিত করেছে। প্রকৃত মুক্তি তখনই মিলবে, যখন অন্যের সম্পদ জবরদখল করার পরিবর্তে আমরা পরিশ্রমের মাধ্যমে রুটি-রুজি উপার্জন করতে শিখব।

তখন দেখা যাবে—আমরাও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। আসলে ‘ইহুদি’ ও ‘ইজরাইলি ইহুদি’ বিষয় দুটির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মাঝে কিছু বহিরাগত জীবের আগমন ঘটেছে। তাদের সনাক্ত করা হলেও আমাদের নেতাগণ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কারণ, তাদের বিশ্বাস, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এ জাতীয় কিছু শক্তিশালী প্রাণীর প্রয়োজন। এই বহিরাগত প্রাণীরা ভবিষ্যতে যে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দেবে—তা এখনই বোঝা যাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, সত্যকে দমিয়ে রেখে কখনো একতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রকৃত একতা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে মিথ্যাকে স্থান দেওয়া যাবে না। সত্য যতই কঠিন হোক না কেন, তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। একই আদর্শ ইহুদিদেরও হওয়া উচিত Dearborn Independent যে সত্য প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, তার উদ্দেশ্য মূলত দুটি। এক, ইহুদিরা যেন নিজেদের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। দুই, জ্যান্টাইল সম্প্রদায়গুলো যেন বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীটির সকল ছলচাতুরী সম্পর্কে নিজেদের সচেতন করে তুলতে পারে।

আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো থিয়েটারের চূড়ায় অঙ্কিত হয়েছে স্টার অব ডেভিডসহ আরও অনেক ইহুদি প্রতিকৃতি। যেকোনো অনুষ্ঠানের শুরুতে কীর্তন করে গাওয়া হয় ইহুদিদেরই লেখা স্মৃতি-সংগীত, যা একসময় অসম্ভব ছিল। তবে Anti-Defamation League-এর ক্ষমতার বলে ইহুদিরা এ কাজ আজ ছোটো-বড়ো প্রায় প্রতিটি শহরে করে যাচ্ছে।

তাদের ‘Kol Nidre’ সংগীতটির অর্থ হলো—’সকল প্রতিশ্রুতি’। ইহুদিদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সংগীত তালমুদ ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে—

‘যে ব্যক্তি এই আকাঙ্ক্ষা করে, তার সকল শপথ ও প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য থাকবে না এবং তা পূরণে সে বাধ্য থাকবে না, তবে সে যেন বছরের শুরুতে Kol Nidre সংগীতের চর্চা করে।’

সত্যি বলতে, এই Kol Nidre সম্পর্কে প্রাচীন তালমুদে পৃথক কোনো ঘোষণা আসেনি। ১৯১৯ সালে নিউইয়র্কে অবস্থিত Hebrew Publishing Company কর্তৃক প্রকাশিত ‘Festival Prayers (প্রার্থনা সংগীত)’ খণ্ডে প্রথমবারের মতো এই সংগীতটির উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা পরবর্তী সময়ে ইহুদি সংগঠনগুলো অনুমোদন করে। ১৯১৯ সালে প্রথমবার সংগীতটি যেভাবে প্রকাশিত হয়—

‘বিভিন্ন নিবেদিত নামের ওপর কসম কেটে শপথ, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করেছি, এক প্রায়শ্চিত্র দিবস (ইয়ম কিপুর) হতে অপর প্রায়শ্চিত্র দিবস (ইয়ম কিপুর) পর্যন্ত, যা পরিপূর্ণ করতে আমরা সবাই বাধ্য ও অনুগত; নতুবা অনুতপ্ত,
তা হতে আজ আমাদের মুক্তি দেওয়া হলো।
আজ হতে আর কোনো শপথ আমাদের নিকট শপথ বলে গণ্য হবে না,
কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণের বাধ্যবাধ্যকতা থাকবে না
এবং কোনো অঙ্গীকারের প্রতি আমাদের আনুগত্য থাকবে না।’

এটা যদি ইহুদিদের রহস্যময় অতীতের পরিচয় বহন করে, তবে তা কখনো অবহেলার চোখে দেখা উচিত নয়। এমন একটি সংগীত যা কখনো তাদের গ্রন্থে ছিল না, কিন্তু ১৯১৯ সালের সংশোধিত খণ্ডে প্রকাশ পেয়েছে। তখন বোঝা যায়, এটা নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। ইহুদিদের কাছে এই সংগীতের গুরুত্ব নেহাত কম নয়। বছরের শুরুতে কিছু ইহুদি বেহালা বাদক নিউইয়র্কে হাজির হয় এবং তাদের ঘিরে হাজারো ইহুদি ভক্ত কান্না শুরু করে। বেহালা বাদকের Kol Nidre গাওয়ার মধ্য দিয়ে ভক্তদের কান্নার পরিসমাপ্তি ঘটে। শেষ মুহূর্তে তারা এমনভাবে কাঁদতে শুরু করে, যেন নির্বাসিত জনগোষ্ঠী বহু বছর পর নিজ ভূমিতে ফিরে এসেছে।

এই সংগীত ইহুদিদের হৃদয়ের পবিত্র আবেগ ও ভালোবাসার একটি অংশ। তবে এই সংস্কৃতি জ্যান্টাইল সমাজব্যবস্থার জন্য কতটা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা এই সংগীতের প্রতিটি বাক্যের ওপর গভীরভাবে দৃষ্টিপাত না করলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এর সাথে যে বাদ্যসুরের চর্চা করা হয়, তা প্রাচীন ও জনপ্রিয়। Jewish Encyclopedia- তে এর প্রেক্ষাপট যেভাবে বণর্না করা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়—চাইলেও এ সংগীত অর্চনা বন্ধ করা সম্ভব নয় এবং ইহুদিদের পাঠ্যপুস্তক থেকে এটি মুছে দেওয়া অসম্ভব। তবে হ্যাঁ, সময়ের প্রয়োজনে ইহুদিরা এর প্রতিটি বাক্য ও শব্দ বিন্যাসে পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, নিয়মিত পরিবর্তন ও পরিমার্জন করাও ইহুদি সংস্কৃতির একটি অংশ।

যদি এমন হতো, ইহুদিদের প্রার্থনা সংগীতে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ভুল- ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে, তবে তা ভিন্ন বিষয় ছিল। মানুষ স্বভাবতই ধর্মের প্রতি উদাসীন এবং মন্দ কাজের প্রতি অধিক আগ্রহী। তবে পুনরায় যখন ধর্মের কথা স্মরণ হয়, তখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি পূর্বের সকল কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায় এবং লজ্জিত হয়। এমনটা সব ধর্মেই দেখা যায়।

কিন্তু ইহুদিদের প্রার্থনা সংগীত Kol Nidre যেন অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে রাখছে—ভবিষ্যৎ যেকোনো প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পালনে তারা আর বাধ্য থাকবে না। এটা যদি সত্যি ইহুদি ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ হয়, তবে তাদের সঙ্গে কখনোই ব্যবসায়িক বা সামাজিক লেনদেনে যাওয়া উচিত নয়।

Kol Nidre-এর প্রকৃত প্রেক্ষাপট মূলত ব্যাবিলন থেকে শুরু। সেখানে ইহুদিদের দীর্ঘ একটি সময় বন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল, যা তাদের মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছিল।

কী উদ্দেশ্য নিয়ে Kol Nidre-এর আবির্ভাব, তা অনেকেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। নতুন একটি ভালো ব্যাখ্যা সামনে দাঁড়ানো মাত্রই পূর্বের ব্যাখ্যাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে সবাই একটি বিষয়ে একমত, বহু শতাব্দী ধরে রক্তপিপাসু খ্রিষ্টান জাতি পবিত্র যীশুর নামে ইহুদিদের ওপর যে বর্বর নিপীড়ন চালিয়েছে এবং খ্রিষ্টধর্মের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে, তা থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসেবে তারা এই সংগীত-অর্চনা সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। রক্ত-পিপাসু খ্রিষ্টানরা যদি ইহুদিদের খ্রিষ্টধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য করে, তবে মুখে তারা সে বশ্যতা স্বীকার করলেও মন থেকে কখনো করবে না।

এই সংগীতের সঠিক উৎপত্তিকাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বেশ মতোভেদ রয়েছে। ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর Cleveland Jewish World সমাচার থেকে এই সংগীতের ওপর একটি কলাম প্রকাশ করা হয়, যার অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘অনেকে বিশ্বাস করে, স্পেনে যখন ইহুদিদের ওপর প্রথম নির্যাতন শুরু হয়, তখন তারা Kol Nidre সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তারা নিয়মিত বাঙ্কারে জমায়েত হতে শুরু করে এবং দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে এই সংগীত রচনা করে, যা স্বীকার করে আগামী বছরগুলোতে ইহুদিদের যে শপথ বা প্ৰতিশ্ৰুতি গ্রহণে বাধ্য করা হবে, তাদের নিকট এর কোনো মূল্য থাকবে না…

একসময় খ্রিষ্টানরা যখন এই গুপ্ত অবস্থানের কথা জেনে যায় এবং বাঙ্কারের নিচ থেকে শত-সহস্র ইহুদিদের খুঁজে বের করে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাতে শুরু করে, তখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য ইহুদি সদস্যরা Kol Nidre-কে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ বলে গ্রহণ করতে শুরু করে।

এ সকল বিবৃতির একটিও সঠিক নয়। এই সংগীতের ইতিহাস আরও পুরোনো। স্পেনিশ নিপীড়নেরও বহু শতাব্দী পূর্বে ইয়ম কিপুরের কোনো এক রাতে এই সংগীত রচিত হয়েছিল। নবম শতাব্দীতে রাবাই Arman Goun-এর লেখা একটি সংগীতগ্রন্থে প্রথমবারের মতো এর সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি এমন একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন, যা দ্বারা প্রমাণ করতে চান, ইয়ম কিপুরের রাতে সৃষ্টিকর্তার নিকট তারা যে সকল প্রতিজ্ঞা-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবে, তার কোনোটি পালনে আজ্ঞাবহ থাকবে না। তার সূত্র অনুযায়ী—এটা Kol Nidre ছিল না; বরং Kol Nidrim-এর সঠিক রচনাকাল নিয়ে অসংখ্য বিতর্ক থাকলেও সবাই এই মর্মে একমত, তালমুদের প্রাচীন ও আধুনিক সংস্করণ এই সংগীতটিকে পরিপূর্ণরূপে সমর্থন করে।

এবার আসি ইহুদিদের খুব জনপ্রিয় একটি হামদ ‘Eli, Eli’ প্রসঙ্গে। Book of Psalm- এর বাইশ নম্বর হামদের প্রথম শ্লোকের প্রেক্ষাপটকে ভিত্তি করে Eli Eli নামটি চয়ন করা হয়েছে। খ্রিষ্টান দেশগুলোতে এটি ‘Cry of Christ on the Cross’ নামে পরিচিত।

আশা করি আপনাদের Vaudeville Genre-এর কথা মনে আছে, যা দ্বারা আমেরিকার পুরো থিয়েটারশিল্পকে ইহুদিরা নিজেদের করে নিতে সক্ষম হয়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইহুদি মালিকানাধীন থিয়েটার ও সিনেমা হলগুলোতে নাটক বা চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পূর্বে এই হামদটি একবারের জন্য হলেও পরিবেশন করা হতো। উপস্থিত দর্শকদের বলা হতো, বিশেষ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছে। কিন্তু কারা এ সংগীত পরিবেশনের জন্য অনুরোধ করছে, তা কারও মগজে ঢুকত না। অবশ্য এ নিয়ে তেমন কেউ চিন্তাও করত না।

সত্যি বলতে, বিশেষ কোনো অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নয়; বরং বিশেষ এক সংগঠনের ক্ষমতাবলে এই সংগীতটি নিয়মিত পরিবেশন করা হতো। তারা হলো Kehillah। এই হামদের প্রতি জ্যান্টাইলদের ন্যূনতম কোনো আগ্রহ নেই, তবুও জোর করে তা শোনানো হচ্ছে। হয়তো জ্যান্টাইলদের ওপর এটা বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলছে না ঠিক, তবে মানসিকভাবে তা ইহুদিদের উসকে দিচ্ছে—যেন তাদের অনাগত সন্তানরা ছোটোকাল থেকেই জ্যান্টাইলদের বিরুদ্ধে এক বিষম ঘৃণা ও অশ্রদ্ধাবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠে 1

Eli Eli কখনো ধর্মীয় সংগীত হতে পারে না। এই সংগীত জ্যান্টাইলদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ। নিউইয়র্কের যে কফি হাউজগুলোতে ইহুদিরা বলশেভিক বিপ্লবের পরিকল্পনা করত, সেখানে নিয়মিত এ গানের চর্চাও করত। রাশিয়া ও পোল্যান্ডসহ ইউরোপের অসংখ্য দেশে এই সংগীত চর্চার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বলশেভিক বিপ্লব নিয়ে তারা যত পত্রিকা বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করত, সেখানে এর বাক্যগুলো নিয়মিত ছাপানো হতো। সহজভাবে বলতে গেল, খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে এই সংগীত ব্যবহার করা হয়। এটা তাদের মস্তিষ্কে মর্ফিনের মতো কাজ করে। গানটি মূলত ইডিশ ভাষায় রচিত। এর অনূদিত অংশ নিচে উপস্থাপন করা হলো—

‘হে খোদা! হে খোদা! কেন আমাদের করেছ পরিত্যক্ত?
আগুনের তপ্ত শিখায় তারা আমাদের করেছে অগ্নিদগ্ধ,
সর্বত্র আমাদের নিয়ে করেছে পরিহাস,
তথাপি ধৃষ্টতা করিনি ছেড়ে যেত সে ঐশী গ্রন্থ
যাতে আছে আমাদের বাণী ও পথ নির্দেশিকা।
হে খোদা! হে খোদা! কেন আমাদের করেছ পরিত্যক্ত?
দিন-রাত কেবল এই প্রার্থনা করি,
যেন ধর্মের বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারি
আরও প্রার্থনা করি, যেন তুমি আমাদের পুনরায় রক্ষা করো!
আমাদের সকল পিতামহের দোহাই করে বলছি!
আমাদের প্রার্থনা ও আর্তনাদ ফিরিয়ে দিয়ো না,
কেবল তোমার করুণাতে আমরা রক্ষা পাব। কেননা, ঈশ্বর তুমি কেবলই এক।
শোনো ইজরাইলবাসী, ঈশ্বর শুধু আমাদের,
তিনি কেবলই একজন!’

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই সংগীত নিয়মিত প্রতিটি থিয়েটার ও সিনেমা হলে পরিবেশন করা হতো। আর অবুঝ খ্রিষ্টানরা অর্থ খরচ করে সেই হলগুলোতে এসব খাদ্য গিলতে যেত। বিগত শতাব্দীর কয়েক দশক ধরে এটি নিয়মিত পরিবেশিত হওয়ার ফলে এই সংস্কৃতি আমেরিকার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। তারপর তা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংস্থার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবীজুড়ে। আজ হয়তো এই সংগীত সিনেমা হলগুলোতে নিয়মিত পরিবেশন করা হয় না, কিন্তু ইহুদিদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নানান প্রতিকৃতি সাংকেতিক চিহ্ন আকারে বিশ্বের অসংখ্য অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব প্রতিকৃতি ও সাংকেতিক চিহ্নের অর্থ সাধারণ জ্যান্টাইলরা বুঝতে না পারলেও ইহুদি সন্তানরা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে। এর মাধ্যমে তারা নিজ সম্প্রদায়কে জানান দিচ্ছে আমরা আছি, থাকব এবং আমরাই শক্তিশালী।

যারা Eli Eli সংগীতটি শুনেছে, তারা হয়তো ইডিশ ভাষা না জানার দরুন এর অর্থ বুঝতে পারেনি। তবে এর সাথে বাদ্যযন্ত্রের যে সুরেলা ধ্বনি পরিবেশন করা হয়, তা যে কতটা হৃদয়স্পর্শী, তা হয়তো অনেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। এখানে বলা হয়েছে, আগুনের তপ্ত শিখায় ‘তারা’ আমাদের পুড়িয়ে মেরেছে এবং সর্বত্র করেছে পরিহাস। এই তারা দিয়ে কাদের বোঝানো হচ্ছে? অবশ্যই জ্যান্টাইল জাতিদের! হৃদয়স্পর্শী সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের সাথে এ সংগীত গাওয়ার সময় যখন তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় পৌঁছে যায়, তখন কি মনে হয় না—ইহুদিরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছে এবং এজন্য তারা পূর্ণরূপে প্রস্তুত!

প্রকৃতপক্ষে জ্যান্টাইলদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের বহু বছরের প্রতিক্ষিত যুদ্ধ যে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, তা চারদিকে তাকালেই উপলব্ধি করা সম্ভব। ইহুদিদের প্রটোকলসমূহের কতটুকু অংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, এই যুদ্ধ তার একটি বড়ো ইঙ্গিত দিচ্ছে। আজকের জ্যান্টাইল সমাজ যে চলচ্চিত্র ও সংগীত সাধনায় মেতে উঠেছে, তা মূলত ইহুদিদের সংস্কৃতি চর্চা ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *