ইহুদি ইতিহাস

ইহুদি ইতিহাস

ইহুদিদের আবির্ভাব মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল কোনো যুগেই কম ছিল না। আজকের আধুনিক বিশ্ব যেসব খুঁটির (অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি) ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ইহুদিদের অদৃশ্য আধিপত্য। জেরুজালেম থেকে নির্বাসিত হয়ে এক টুকরো নিরাপদ ভূমির খোঁজে তারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে যাযাবরের মতো।

পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০০০ বছর। নির্যাতন-নিপীড়ন এখন তাদের জন্য নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয়। এ নির্যাতন ভোগের পেছনে তাদের প্রতি যে অন্যান্য সম্প্রদায়দের অ্যান্টিসেমেটিক[১] মনোভাব ছিল, তা বলা যায় না। কারণ, নিজেদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা আজ পর্যন্ত যত কৌশল উদ্ভাবন করেছে, তার অধিকাংশই সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধুসুলভ ছিল না। পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি ও অসাধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরুন তারা বারংবার বিতর্কিত জাতিতে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়ায় ইহুদিরাই ছিল বলশেভিক[২] বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে তারা জবাই করেছে লাখো তাজা প্রাণ। সেই বিপ্লবের যারা খলনায়ক, তারাই আজ আমাদের চোখে মহানায়ক। জার্মান সাম্রাজ্য পতনের পেছনেও তারা সবচেয়ে বড়ো প্রভাবক ছিল। তারা বিষাক্ত অণুজীব হয়ে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। এক এক করে দখল করে সেখানকার প্রতিটি শিল্প ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে তারা ইংল্যান্ডকে বানিয়েছে হাতের পুতুল। স্বর্ণ-রৌপ্যের মতো মহা মূল্যবান সম্পদ চুরি করে নিজেদের প্রাচুর্যতাকে করেছে পাহাড়সম। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে রক্তক্ষয়ী অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে হাসিল করেছে নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।

প্রবীণ ও তরুণ ইহুদিরা নিজেদের প্রাচুর্যতা ও উচ্চাভিলাষী মনোভাব কাজে লাগিয়ে আমেরিকাকে একটি যুদ্ধবাজ দেশে পরিণত করেছে, যা আজ তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার। যেকোনো সরকারের শাসনামলে তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক পদ বিশেষভাবে বরাদ্দ রাখা হয়। হোয়াইট হাউজেও রয়েছে তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বিষাক্ত মতবাদ ঢুকিয়ে দিতে ইহুদি রাবাইদের[৩] যেন পরিশ্রমের শেষ নেই। তারা বলে—‘আশীর্বাদ চাইলে ইজরাইল যাও। কারণ, আমরাই সৃষ্টিকর্তার একমাত্র মনোনীত সম্প্রদায়।’

জনসংখ্যায় এত অল্প হয়েও তারা যেভাবে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা ইতঃপূর্বে অন্য কোনো জাতি পারেনি। পুরোনো ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির সবকিছু আজ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অধিক পরিশ্রমী পদে কাজ করার ব্যাপারে তাদের রয়েছে তীব্র অনীহা। উৎপাদন ও যন্ত্রপাতি পরিচালনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদগুলোতে সাধারণত জ্যান্টাইলদের[৪] ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে সেলসম্যান, ম্যানেজার এবং ক্লার্কের মতো সহজ পদগুলো তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। প্রাচীন প্রুশিয়ানদের[৫] এক সমীক্ষা অনুযায়ী—তাদের মোট জনসংখ্যা ছিল ২৬৯৪০০ জন। এর মাত্র ছয় শতাংশ অর্থাৎ ১৬১৬৪ জন ছিল ইহুদি, যার মধ্যে ১২০০০ জনই ছিল ব্যবসায়ী এবং ৪১৬৪ জন শ্রমিক। অন্যদিকে ৯৬ শতাংশ জ্যান্টাইল অর্থাৎ ২৫৩২৩৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৭০০০ জন ব্যবসায়ী।

বর্তমান প্রেক্ষাপট অবশ্য ইতিহাস থেকে অনেক ভিন্ন। ব্যাবসা-বাণিজ্যের উঁচু পদগুলোতে আজ জ্যান্টাইলদের উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তাদের সংখ্যা যে হ্রাস পেয়েছে তা নয়—Jews Encyclopedia অনুযায়ী—বর্তমানে বিশ্বের বৃহদাকার প্রায় সকল বিপণিবিতান তারাই পরিচালনা করছে। ট্রাস্ট, ব্যাংক, কৃষি ও খনিজ সম্পদের মতো আরও অনেক শিল্প রয়েছে, যা তাদের কবজাধীন হয়ে পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও জ্যান্টাইলদের মালিকানায় রয়েছে, তার পেছনেও ইহুদিদের বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী কাজ করছে। প্রকাশনা শিল্পে তারা কতটা ক্ষমতাধর, তা সামনের অধ্যায়গুলোতে আলোচনা করা হবে। থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে তাদের দ্বিতীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

জার্মান লেখক Werner Sombart তার বই Jews and Modern Capitalism-এ উল্লেখ করেন—

‘যদি আমেরিকার অভিবাসন হার প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর জন্মহার এবং উন্নয়নসূচক একই ধারায় চলতে থাকে, তবে আগামী পঞ্চাশ বা একশো বছর পর এ দেশ হবে নিগ্রো, ক্রিতদাস ও ইহুদিদের দেশ; যেখানে তারাই হবে ক্ষমতাধর জনগোষ্ঠী।’

আলোচনার গভীরে যাওয়ার আগে দুটি বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান রাখা উচিত।

প্রথমত : পৃথিবীর সব ইহুদিই সম্পদশালী নয়; তাদের মাঝেও ধনী-গরিব শ্রেণি আছে। তবে গরিব শ্রেণির দরিদ্রতার মূল কারণ—তাদের সম্পদশালী জ্ঞাতি ভাইয়েরা। মূলত কৌশলগত কারণেই তারা নিজেদের মাঝে এই শ্রেণি-পার্থক্যের জন্ম দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত : শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা নিজেদের ঐক্য ও জাতীয়তায় বিভাজন তৈরি করেনি। ফলে কৃতিত্ব ও সফলতা অর্জনের দিক দিয়ে অন্য কোনো সম্প্রদায় কখনোই তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। আজকের আমেরিকা তো তারাই তৈরি করেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক শাসন ও ক্ষমতার লড়াই নিয়ে পুরো পৃথিবী যখন ক্ষতবিক্ষত, তখন অসংখ্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আমেরিকায় অভিবাসী হয়। আর এই সুযোগ লুফে নিয়ে ইহুদিরাও দলে দলে আমেরিকায় প্রবেশ করা শুরু করে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর যেখানে একমাত্র অবলম্বন ছিল মেধা ও পরিশ্রম, সেখানে তাদের অবলম্বন অঢেল অর্থ-সম্পদ। তারা জন্ম দেয় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার। শুরু হয় শ্রমবাজারের সাথে পুঁজিবাজারের দ্বন্দ্ব। নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পুঁজিপতিরা কিনে নিতে থাকে সাধারণ মানুষের মেধা ও শ্রম।

একটা সময় ছিল যখন তারা শুধু কৃষি কাজ করত। রোমান সম্রাট কর্তৃক জেরুজালেম থেকে নির্বাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল তাদের মূল পেশা। তাহলে কীভাবে তাদের আমূল পরিবর্তন হলো, আর কীভাবেই-বা উত্থান ঘটল?

আসলে Formative Period (1000 BC -500 AD)-এর বিশেষ একটি শাসনব্যবস্থা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক কাঠামো ন্যায়সংগত করতে পয়গম্বর মোজেস[৬] ‘Money aristocracy’ আইনটির প্রচলন করেন। সুদ-বাণিজ্য এবং ঋণী ব্যক্তির জমি দখল করাকে তিনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। তার আইনে চিরস্থায়ী আয়েশি জীবনের কোনো স্থান ছিল না। তিনি দখলদারদের হাত থেকে আত্মসাৎ হওয়া সকল জমি উদ্ধার করে জনসাধারণের মাঝে বণ্টন করেন। এ আইন ৫০ বছর স্থায়ী ছিল; যাকে বলা হয় ‘The Year of Jubilee’ ।

কিন্তু এমন আইন মেনে চললে তো আর রাজকীয় সম্পদের মালিক হওয়া যাবে না। তাই মোজেস মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তারা আবারও সুদ-বাণিজ্যে ফিরে আসে। মূলত, মুনাফার প্রশ্নে তারা কখনো আপস করতে রাজি ছিল না। তাই মোজেসের যেসব আইন অধিক মুনাফা অর্জনে প্রতিবন্ধক, সেগুলোর প্রতিটি তারা পালটে দেয়। ‘Law of Stranger’ নামে তারা নতুন একটি আইন তৈরি করে। এ আইন অনুযায়ী অন্যান্য সম্প্রদায়দের সাথে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হতো। যেমন : একজন অপরিচিত জ্যান্টাইলের সাথে সুদ-বাণিজ্য করা যাবে, কিন্তু নিজ ধর্মের ভাইয়ের ওপর কখনোই সুদের বোঝা চাপানো যাবে না।

ইতিহাস বলে, ইজরাইল সব সময় একটি শাষকরাষ্ট্র হতে চেয়েছে। তারা চেয়েছে, পৃথিবীর প্রতিটি রাজ্য তাদের কুর্নিশ করবে এবং তারাই হবে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! জ্যাকব[৭] থেকে শুরু করে সকল পয়গম্বর চেয়েছিলেন—ইজরাইল পৃথিবীর বুকে একটি ন্যায়পরায়ণ জাতি হিসেবে টিকে থাকবে। ওল্ড টেস্টামেন্টও ঠিক একই কথা বলে। তাহলে কেন তাদের এই অধঃপতন? তা কীভাবেই- বা ঘটল? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ক্যানানাইটদের[৮] যুগে।

আজ থেকে আনুমানিক ৩৯০০/৪০০০ বছর পূর্বে ইজরাইল, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডানসহ নীলনদের পূর্বাঞ্চলীয় অনেকটা অংশ জুড়ে ছিল ক্যানানাইটদের রাজত্ব। সে সময় পয়গম্বর আব্রাহামকে[৯] মেসোপটেমিয়ার কোনো এক স্থানে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করে ক্যানান ভূমিতে নিয়ে আসেন। আব্রাহাম যখন মেসোপটেমিয়ায় ছিলেন, তখনই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সাথে একটি সন্ধি করেন। বলা যেতে পারে, এটা ইজরাইল জাতির মূল সূচনালগ্ন। আব্রাহামের নিরানব্বই বছর বয়সে প্রভু তাঁকে দেখা দিলেন এবং বললেন—

‘আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তুমি আমার সাথে গমন করে পরিশুদ্ধ হও। আমি তোমার সাথে আপন নিয়ম স্থির করব এবং তোমার বংশকে অতিশয় বৃদ্ধি করব।’

আব্রাহাম তখন ভূমিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ঈশ্বর বললেন—

‘দেখ, আমি তোমার সাথে এই সন্ধি করছি, তুমি হবে বহু জাতির পিতা। তোমার নাম আর আব্রাম (মহাপিতা) থাকবে না; বরং হবে আব্রাহাম (বহুলোকের পিতা)। কারণ, তোমাকে বহু জাতির পিতা বানালাম। …এই সমগ্র ক্যানান দেশকে আমি তোমাকে এবং তোমার ভাবী বংশধরদের চিরস্থায়ী অধিকারার্থে প্রদান করব, আর আমি হব তাদের ঈশ্বর।’ Genesis 17:1-8

তারও অনেক আগে, সৃষ্টিকর্তা ঠিক এ রকমই একটি সন্ধি করেছিলেন পয়গম্বর নোয়াহের[১০] সাথে। পার্থক্য হলো—পয়গম্বর আব্রাহামের বংশধরদের যেখানে ক্যানানাইট ভূমির অধিকার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে পয়গম্বর নোয়াহের বংশধরদের সমগ্র বিশ্বের কর্তৃত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ক্যানানাইটরা হলো নোয়াহের কনিষ্ঠ পুত্র হ্যামের বংশধর। নোয়াহ সৃষ্টিকর্তার সাথে সন্ধি করেছিলেন—তাঁর বংশধররা কেবল তাঁরই উপাসনা করবে এবং তাঁর প্রণীত সকল আইনকানুন মেনে চলবে। কিন্তু সেই সন্তানেরা একসময় একেশ্বারবাদের কথা ভুলে গিয়ে পৌত্তলিকতায় মেতে ওঠে। তারা ঈশ্বরের আইন অগ্রাহ্য করে নিজেদের মতো আইন রচনা এবং বিভিন্ন ভাস্কর্যের উপাসনা করতে শুরু করে। যেমন : আনাথ—যুদ্ধ-বিগ্রহের কুমারী দেবী, আথিরাত—সমুদ্র পরিভ্রমণকারী, আত্তার—প্রভাতের দেবতা ইত্যাদি। তাদের এই পেগানবাদ[১১] ততদিনে ক্যানানসহ অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও আরও অনেক পাপকর্মের দরুন তারা একসময় সৃষ্টিকর্তার অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়।

অপরদিকে পয়গম্বর আব্রাহামের বংশধরদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাঁর পৌত্র জ্যাকবের অপর নাম ইসরাইল। এই নাম অনুযায়ী তাঁর ১২ পুত্র এবং তাদের বংশধরদের একত্রে বনি ইসরাইল বলা হয়। সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় ফেরাউনের রাজত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে জেরুজালেমে ফিরে আসার পর তাদের নিকট ঐশী বাণী আসে, তারা যেন ক্যানানাইটদের সেখান থেকে বের করে দেয়।

কিন্তু তারা এই নির্দেশ অমান্য করে। তারা এই অভিশপ্ত জাতির সম্পদ ও প্রাচুর্যের মোহে পড়ে যায়। এমন একটি জাতিকে নির্বাসিত করে তারা সম্পদের মহাসমুদ্র হাতছাড়া করতে চায়নি। অবাধ্যতার সূচনা এখান থেকে শুরু। ধীরে ধীরে তারা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বস্তুবাদী বিশ্বাসে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু স্বর্গীয় নির্দেশ অমান্য করার দরুন তাদের ওপর যে শাস্তি নেমে আসে, তা বহুকাল বয়ে বেড়াতে হয়। অনেকের ধারণা—এই ক্যানানাইটরাই আজকের ইহুদিদের সকল ক্ষমতা ও প্রাচুর্যতার মূল কারণ।

যাযাবর হলেও ব্যবসায়-বাণিজ্যের অগ্রদূত হিসেবে তারা যে পুরো পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে, তার কিছু নমুনা দেওয়া যাক। একসময় চায়নাতে তাদের একটি জনগোষ্ঠী ছিল। সেক্সনদের[১২] সময় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তারা দলবলে ইংল্যান্ডে হাজির হয়। পিলগ্রিম ফাদাররা[১৩] দক্ষিণ আমেরিকার প্লেমাউথ শিলায় আসার শত বছর আগ থেকে তাদের বণিকরা সেখানে রমরমা বাণিজ্য করত। ১৪৯২ সালে সেন্ট থমাস দ্বীপে তারা প্রথম চিনি কারখানা গড়ে তোলে। ব্রাজিলেও ছিল তাদের আফিম বাণিজ্য। তারা যে পৃথিবীর কোথাও চষে বেড়ানোর বাকি রাখেনি, তা ছোট্ট একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব; জর্জিয়াতে প্রথম যে সাদা বর্ণের শিশুটি জন্ম নেয়, সেও ছিল একজন ইহুদি—Isaac Minis।

ব্যবসায়-বাণিজ্যে নিত্য-নতুন কৌশল এবং উপকরণ উদ্ভাবনের প্রতিভা—সব যুগেই তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে থাকতে সাহায্য করেছে। আজকের দিনেও ব্যবসায়িক লেনদেনে এমন অনেক জিনিসের ব্যবহার হচ্ছে, যার প্রকৃত আবিষ্কারক তাদের-ই কোনো না কোনো সদস্য। যেমন : পৃথিবীর প্রাচীনতম বিল অব এক্সচেইঞ্জের আবিষ্কারক হলো—Simon Rubens। তা ছাড়া কাগজের নোট, ব্যাংক নোট, বিভাগীয় বিপণিবিতান, দ্বৈত্ব করব্যবস্থা ইত্যাদি তাদেরই আবিষ্কার।

‘Payable to Bearer (বাহককে প্রদেয়)’ নিয়ে মজার একটি গল্প আছে। সাধারণত ধনী ব্যবসায়ীদের শত্রুর অভাব হয় না। এ কারণে ইহুদিদের শত্রুর অভাব ছিল না। কেউ যেন তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নিতে না পারে, সেজন্য তারা সম্পদের পরিমাণ বা মালিকানা কখনো প্রকাশ করত না; বরং একজন বাহক-এর নামে এর মালিকানা গোপন রাখত। সে সময় তাদের সম্পদ জব্দ করা জলদস্যুদের জন্য বৈধ ছিল। তারা পণ্যের ওপর নিজেদের নাম না লিখে ‘Bearer bill’ ব্যবহার করত। তাই বোঝার কোনো উপায় থাকত না, কোনটা তাদের পণ্য আর কোনটা জ্যান্টাইলদের। তখন ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যক্তি- বিশেষকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করা হতো, কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক বাণিজ্যের চেয়ে পণ্যকেন্দ্রিক বাণিজ্যকে তারা অধিক গুরুত্ব দিত। কারণ, অর্থ পরিশোধের পূর্বে ক্রেতা সাহেবের মৃত্যু হলে বিক্রেতা কখনো সে অর্থ দাবি করতে পারবে না, কিন্তু পণ্যকেন্দ্রিক বাণিজ্যে ক্রেতা সাহেব মারা গেলেও বিক্রেতা অন্তত তার পণ্য দাবি করতে পারবে। নতুন এই পদ্ধতি ব্যবসায় জগৎকে অনেক নির্দয় করে তোলে। কারণ, তখন মানুষ ব্যক্তি- বিশেষের চেয়ে পণ্য-সম্পদ রক্ষায় অতি ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

আজকের যে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা, তার জন্মদাতা তো তারাই! তবে নিজেদের এ কীর্তি গোপন রাখতে ‘জ্যান্টাইল ফ্রন্ট’ নামে তারা নতুন এক কৌশল উদ্ভাবন করে। অর্থাৎ মুখোশ হিসেবে জ্যান্টাইলদের ব্যবহার করে, যেন ভেতরের মানুষটাকে কেউ চিনতে না পারে। এজন্য বিপণিবিতান, ব্যাংকিং কোম্পানি, সংগীতের দোকান, থিয়েটার হল ও মদের দোকানগুলোতে নিয়োজিত কর্মীদের অধিকাংশই খ্রিষ্টান, মুসলিম বা পেগানদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে। কিন্তু পেছন থেকে যে এগুলোর কলকাঠি কোনো ইহুদি বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী নাড়ছে, তা অনেকের পক্ষেই বোঝা অসম্ভব।

যে স্টক একচেঞ্জ শিল্পকে কেন্দ্র করে আজ প্রতিটি দেশ বড়ো বড়ো পুঁজিবাজার গড়ে তুলছে, তাও তাদের প্রতিভার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। বার্লিন, প্যারিস, লন্ডন, ফ্রাঙ্কফ্রুট ও হাম্বার্গারের প্রথম সব স্টক এক্সচেঞ্চের নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী তারাই। ভেনিস ও জেনওয়াককে তো বলাই হতো ইহুদিদের শহর। আধুনিক ব্যাংকিং শিল্পের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সেখানেই গড়ে ওঠে। তা ছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, ব্যাংক অব আমস্টারডাম, ব্যাংক অব হাম্বার্গ, ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম ইত্যাদি তাদেরই পরিকল্পনায় গড়ে উঠে, যা আজও টিকে আছে।

তারা পৃথিবীর যেখানে গিয়েছে, সেখানেই পুরো অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে একসময় স্পেন ছিল স্বর্ণ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। তাদের বের করে দিলে স্পেনের অর্থনীতি এমনভাবে ভেঙে পড়ে, যা আজও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইউরোপের অর্থনৈতিক ইতিহাস বিভাগের ছাত্ররা প্রায়ই একটা বিষয় ভেবে খুব অবাক হয়—বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু কেন বারবার পরিবর্তিত হয়েছে?

জ্যান্টাইলদের রক্ত যেন ইহুদিদের মাঝে প্রবেশ করতে না পারে, তাই বিয়ে-শাদির ব্যাপারে তাদের রয়েছে বিশেষ আইন। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন দলিল থেকে জানা যায়—তাদের সংগ্রহে এমন অনেক তথ্য থাকত, যা তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের কাছেও থাকত না। দূরদর্শী ক্ষমতার দিক দিয়ে তাদের সমতুল্য পৃথিবীতে আর কোনো জাতি ছিল না। ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে পৃথিবীর বিভিন্ন রাজ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা তারা পূর্বেই অনুমান করতে পারত। পরবর্তী সময়ে তা নিউজ লেটার আকারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করত। রাজ্য পরিচালনায় আগাম তথ্য যে কতটা মূল্যবান, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তাই এই অমূল্য তথ্যের প্রধান জোগানদাতা হিসেবে তারা সব সময়-ই কাজ করত; তা গুপ্তচর বৃত্তি করে হোক বা অন্য যেকোনো উপায়ে-ই হোক। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা ছিল তাদের আরেকটি কৌশল।

এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রতিটি রাষ্ট্রে ঋণ ব্যবস্থার এজেন্ট বনে যায়। গড়ে তোলে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। প্রতিটি রাষ্ট্রে তাদের কিছু এজেন্ট থাকত, যারা সেখানকার আর্থিক লেনদেনের হিসাব রাখত। প্রয়োজনে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে বড়ো অঙ্কের ঋণ দেওয়ার এখতিয়ার পর্যন্ত তাদের ছিল। তাদের বলা হতো ‘Court Jew’। পরে এই ঋণ প্রতিটি রাজা-বাদশাহর ওপর বিশাল অঙ্কের দায় হিসেবে চেপে বসত। তারা কখনো রাশিয়ান জনগণকে নিয়ে ভাবত না; বরং ভাবত কীভাবে রাশিয়ার সরকারকে কবজায় আনা যায়। একই পরিকল্পনা করত জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালিসহ পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রকে নিয়ে। খুব কৌশলে তারা এক রাজাকে অন্য রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দিত। ভয় ও কুসংস্কারের জাঁতাকলে কাবু করে রাখত প্রতিটি জাতিকে।

তবে এটা ঠিক যে, ব্যক্তি হিসেবে কিছু সৎ ও পরোপকারী ইহুদি সব যুগেই খুঁজে পাওয়া যাবে। শান্তির বাণী প্রচার করাই যে ইজরাইলের একমাত্র উদ্দেশ্য, এমন চেতনা কেবল তারাই লালন করে। তারপরও জাতিগতভাবে তাদের ওপর সাধারণ মানুষের যে বিদ্বেষ, তা কখনো বন্ধ হয়নি। তাদের নিয়ে একটি প্রবাদ আছে—

‘ইজরাইল অনেকটা আঙুর গাছের মতো; তার শাখা-প্রশাখা যতই কাটা হোক না কেন, তা আবারও গজাবে। কারণ, তার শেকড় রয়েছে মাটির অনেক গভীরে।’

আজকের যে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক, তার সূত্রপাত হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে জার্মান ইহুদি পরিবার রথসচাইল্ড হলো এই শিল্পের কান্ডারি। ইংল্যান্ড, ইটালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়াসহ আরও অনেক দেশে তাদের শাখা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। যখনই কোনো রাজার অর্থের প্রয়োজন হতো, তারা এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরবরাহ করত। আবার যদি কোনো রাজা মূল্যবান সম্পদ (স্বর্ণ, রৌপ্য, কপার ইত্যাদি) ব্যবহার না করে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে চাইত, তবে ব্যাংকারগণ চেকের মতো ছোট্ট একটি কাগজের টুকরো স্বাক্ষর করে সেই দেশের শাখায় পাঠিয়ে দিত। এই কাগজের টুকরো আজকের দিনে ব্যাংক চেক-এ রূপ নিয়েছে। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম যে সামরিক বাহিনী গঠিত হয়, তাতেও ছিল ইহুদিদের মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ।

বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক অফিস স্থাপনের ধারণা সর্বপ্রথম তাদের মাথা থেকেই উদ্ভাবিত হয়। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে যখন নতুন কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা দেখা দিত, প্রথম তারাই সে খবর পেত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ‘Peaceful Penetration’ নামে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার দরুন আমেরিকার বাজার জার্মানদের জন্য উন্মুক্ত হয়। এতে করে সে দেশের সাধারণ জনগণ লাভবান হয়েছে তা নয়। কারণ, পুরো ঘটনার আড়ালে ছিল সেখানকার ইহুদিরা। তারা জার্মানির নাগরিকত্বকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। সিন্ডিকেট উপায়ে প্রতিটি শিল্পের ওপর থাবা বসাতে শুরু করে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী নিরুপায় হয়ে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে আমেরিকা জার্মানি হতে প্রচুর তুলা আমদানি করে। আরও অনেক তুলা রপ্তানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তা আর রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। মালিক সমিতি এত তুলা নিয়ে কী করবে? সব তো নষ্ট হয়ে যাবে! ফলে তারা বাধ্য হয় তুলা নিলামে ওঠাতে। এ সময় লন্ডনে থাকা ইহুদিরা সেই পাহাড় পরিমাণ তুলা নিলামের ভিত্তিতে কিনে নেয়। তারা যে মূল্যে তুলা ক্রয় করে, তা ছিল আমেরিকান বাজারমূল্য থেকে অনেক কম। এর উদ্দেশ্য ছিল বাজারে তুলার দাম কমিয়ে আনা। ফলাফল তা-ই হলো; রাতারাতি তুলার দাম কমতে শুরু করে। এই সুযোগে তারা আরও অনেক তুলা কিনে বাজারকে তুলাশূন্য করে। বাজার খালি হওয়ার পর তারাই আবার তুলার দাম বাড়াতে শুরু করে। কারণ, বাজারে তুলার ছিটেফোঁটা পর্যন্ত ছিল না। তারা প্রচার করে—বাজারে তুলার খুবই অভাব, তাই তুলাজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বিশ্বযুদ্ধে তারা প্রচুর সম্পদের মালিক হয়ে যায়।

বিশ্ব অর্থব্যবস্থার বর্তমান প্রেক্ষাপট কতটা কঠিন রূপ নিয়েছে, তা সহজে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। নির্দয় পুঁজিবাজার কখনো শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে পারেনি। শ্রমিকদের শোষণের মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলগুলো সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। পুঁজিকে কুক্ষিগত করে স্বার্থান্বেষী মহল কুলি-মজুরদের পারিশ্রমিক পানির দরে নামিয়ে এনেছে। পুঁজিবাজার হলো শ্রমবাজারের ছাদস্বরূপ, কিন্তু এই ছাদ কখনো শ্রমজীবী মানুষের নিরাপদ আশ্রয় হতে পারেনি।

পুঁজি বলতে আমরা মূলত অর্থকে বুঝি, যা উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। আমরা ভুলবশত উৎপাদক গোষ্ঠী, ব্যবসায়িক ম্যানেজার ও চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাদ বলে থাকি। কিন্তু কীভাবে তাদের পুঁজিবাদ বলব, যখন তাদের ব্যবসায়িক পুঁজির জোগানদাতা অন্য কোনো বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী! মূলত এই বিনিয়োগকারীদের চাপে পড়ে উৎপাদক, ম্যানেজার এবং চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বভাবগত ভালো রূপ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পায়ের নিচে মাটি ধরে রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ মেটাতে তারা শ্রমবাজারের ওপর কঠিন রূপ ধারণ করে। ফলে পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজারের মধ্যে সব সময় বিরোধ লেগে থাকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ কখনোই সম্ভব নয়; যতদিন না বিশ্ব অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ এই স্বার্থান্বেষী মহল থেকে ছিনিয়ে আনা যাবে।

আজ পুরো পৃথিবী এমন কয়েকটি ভয়ংকর মতবাদে পরিচালিত হচ্ছে, যার অধিকাংশ‍ই আমাদের অজানা। যেমন : ‘সুপার ক্যাপিটালিজম’—যেখানে বলা হয় ‘স্বর্ণই প্রকৃত সম্পদ’। ‘সুপার গভর্নমেন্ট’ একটি পৃথক ও স্বাধীন সরকারব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য পৃথিবীতে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন না এই ভয়ংকর মতবাদ দুটোর অবসান ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজারের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে।

আমেরিকা আবিষ্কার

ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, আমেরিকা আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তবে এটা শেখায়নি, তিনি কাদের সহযোগিতায় এ দেশের সন্ধান পান।

আজ অবধি যে সকল ঐতিহাসিক সমুদ্র অভিযান মানুষকে নতুন সব জ্ঞান ও প্রাচুর্যতা এনে দিয়েছে, তার অর্ধেক সম্ভব হয়েছে কেবল ইহুদিদের জন্য। যাযাবর জাতি হওয়ায় ইহুদিদের একটি বিশেষ সুবিধা হলো—পৃথিবীর আনাচে-কানাচে কোথায় কী আছে, তা তারা খুব ভালো করেই জানে। তা ছাড়া সমুদ্রযাত্রায় মানুষ যেসব যন্ত্রপাতি বহুকাল ধরে ব্যবহার করেছে, তার অধিকাংশই ইহুদিদের আবিষ্কার। যেমন : ম্যাপ, কম্পাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি। এ কারণে সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তাদের মতো দক্ষতা আর কোনো জাতির ছিল না। এজন্য প্রতিটি দেশের নৌবিভাগে তাদের আলাদা কদর ছিল।

১৪৯২ সালের ২ আগস্ট ইহুদিদের তিন লাখ অধিবাসীকে স্পেন থেকে নির্বাসিত করা হয়। ঠিক তার পরদিন ৩ আগস্ট কলম্বাস তাদের মধ্যে একদল নাবিককে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমসমুদ্র পথে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীর সাথে সখ্যতার কথা কলম্বাস বহুবার নিজ মুখে স্বীকার করেছেন। নিজের নতুন সব অভিযান পরিকল্পনা এবং আবিষ্কারের কথা প্রথমে তিনি এ দলকে জানাতেন।

ছোটোকাল থেকেই শুনে আসছি, সমুদ্র অভিযানের প্রতি কলম্বাসের এতটা আগ্রহ দেখে রানি ইসাবেলা নিজের বহু স্বর্ণালংকার তাকে দান করে দিয়েছিলেন। সেই দানের অর্থে নির্মিত হয় জাহাজ, ক্রয় করা হয় প্রয়োজনীয় সব রসদপত্র। তবে এই দান যে তিনি এমনি এমনি করেননি, সেই তথ্য সহজে কোথাও উল্লেখ করা হয় না।

তৎকালীন স্পেন সাম্রাজ্যে রানি ইসাবেলার ঘনিষ্ঠ তিনজন ইহুদি উপদেষ্টার পরিচয় পাওয়া যায়। তারা হলেন—ভ্যালেন্সিয়ার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং রয়েল টেক্সাসের ইজারাদার Luis de Santagel, স্পেনের সরকারি কোষাধ্যক্ষ Gabriel Sanchez এবং রয়েল চ্যাম্বারলিনের সদস্য Juan Cabrero। মানুষের কল্পনাশক্তি কীভাবে প্রভাবিত করতে হয়, সেই জ্ঞান তাদের খুব ভালো করেই ছিল।

সে সময় স্পেনের অর্থনীতিতে খুব বাজে সময় যাচ্ছিল। বাণিজ্যে হিমশিম খাচ্ছিল বলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সম্পদের পরিমাণ কমতে থাকে। বিভিন্ন দেশ থেকে ধার-দেনা করে তাদের খাদ্য ক্রয় করতে হচ্ছিল। অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া তাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। সেকালে মানুষের মনে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তারা বিশ্বাস করত, নতুন কোনো ভূমি খুঁজে পেলে হয়তো গুপ্তধন পাওয়া যাবে। মূলত এটি ছিল ইহুদিদের দীর্ঘকালীন প্রোপাগান্ডার[[১৪] ফল। তারা সুকৌশলে রানির মগজে ও এ বিশ্বাসটি ঢুকিয়ে দেয়। তিনি ভাবেন, সত্যি যদি কলম্বাস নতুন কোনো ভূমি খুঁজে পায়, তবে অবশ্যই সেখানে অনেক ধন-সম্পদ পাবে; যা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই নিজের বহু স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে তিনি প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করেন। Luis de Santagel অভিযান শুরুর আগেই রানির নিকট অর্থের আবেদন করেন। তাকে ১৭,০০০ ইউরোপিয়ান স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হয় (১৯২৩ সালের ১,৬০,০০০ ডলার মূল্যের সমান), যা সম্পূর্ণ অভিযানের খরচের চেয়েও অনেক বেশি।

কলম্বাসের সঙ্গী হিসেবে জাহাজে ছিল উচ্চপদস্থ পাঁচজন ইহুদি নাবিক। তাদের পরিচয়-দোভাষী Luis de Torres, শল্য চিকিৎসক Marco, চিকিৎসক Bernal, Alonzo de la Calle ও Gabriel Sanchez। অভিযানের মাঝপথে Luis de Torres কিউবাতে নামেন। সেখানে তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তামাক চাষ শুরু করেন, আর রাতারাতি বনে যান তামাক শিল্পের সম্রাট।

Luis de Santagel ও Gabriel Sanchez এই অভিযানের ছুতোয় রানির কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নেয়, কিন্তু আমেরিকা আবিষ্কারের পর তারাই আবার কলম্বাসকে ষড়যন্ত্রের জালে আটকে ফেলে। Bernal এই কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উপদেষ্টাদের কথায় শেষ পর্যন্ত রানিও ক্ষেপে ওঠেন। কারণ, যে কল্পিত গুপ্তধনের লোভে তাকে আমেরিকা পাঠানো হয়েছিল, বাস্তবে তার কিছুই পাওয়া যায়নি। উলটো পুরো অভিযান আর্থিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তা ছাড়া রেড-ইন্ডিয়ানদের সাথে তাদের যুদ্ধ তখন চরমে। শেষমেশে এই বিখ্যাত নাবিকের স্থান হয় জেলখানায়।

এবার তারা ভাগ্যের সন্ধানে আমেরিকাকে নিয়ে পরিকল্পনা আঁটা শুরু করে। মূলত ইউরোপ, এশিয়া বা আফ্রিকার কোথাও দীর্ঘদিন থাকার সুযোগ পাচ্ছিল না; কিছুদিন পরপরই তাদের বিভিন্ন দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছিল। তাই তারা এমন একটি ভূমির সন্ধান করছিল, যেখান থেকে আর বের হতে হবে না। জেরুজালেম পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তা-ই হবে তাদের নিরাপদ আবাসভূমি।

শুরুতে তারা দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা করে, কিন্তু সে সময় ব্রাজিলের সাথে ডাচদের সামরিক রেষারেষি চলছিল বলে তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। পরে তারা ডাচদেরই একটি উপনিবেশের দিকে যাত্রা করে, যা আজ নিউইয়র্ক নামে পরিচিত। কিন্তু ডাচ গভর্নর Peter Stuyvesant এই অভিবাসী গোষ্ঠীকে সেখানে থাকার অনুমতি দেননি। তিনি তাদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, কিন্তু তারা আগে থেকেই নিজেদের সুরক্ষা বলয় তৈরি করে রেখেছিল। ফলে অভ্যর্থনা না জানালেও গভর্নর সাহেব তাদের একেবারে ফেলে দিতে পারলেন না। কিছু শর্তের বিনিময়ে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন। শর্তগুলো ছিল-

১. ডাচ কোম্পানিগুলোতে তাদের সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে।

২. সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

৩. পাইকারি শিল্পসহ সকল ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

সামান্য সুযোগ পেলে তারা কী করতে পারে, তা তিনি ভালো করেই জানতেন। তাদের কোনোভাবে আটকে রাখা যায় না। একদিকে আটকে রাখলে অন্য দিকে ঠিকই উপায় বের করে নেয়।

যখন ইহুদিদের নতুন কাপড়ের বাণিজ্যে একঘরে করা হলো, তখন তারা পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করল। মুহূর্তেই পুরাতন কাপড়ের বাণিজ্যে হইচই পড়ে গেল। এমন কাণ্ড দেখে সবাই অবাক। এটা কী করে সম্ভব! ইহুদিদের পণ্য বাণিজ্যে নিষিদ্ধ করা হলে—তারা ফেলে দেওয়া নষ্ট পণ্যকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করতে শুরু করে। পৃথিবীতে তারাই প্রথম জাতি, যারা ফেলে দেওয়া নষ্ট পণ্যের বাণিজ্য করেছে।

ইহুদিরাই প্রথম সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মালামাল উদ্ধারের (Salvage) ধারণা জন্ম দিয়েছে; বিষয়টি অনেকটা গুপ্তধনের মতো। তারাই শিখিয়েছে—কীভাবে পুরাতন কাপড় ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে পুরাতন পালক পরিষ্কার করতে হয় এবং কীভাবে কাজুবাদাম ও খরগোশের চামড়া ব্যবহার করতে হয়। পশমি শিল্পে তাদের আগ্রহ সব সময়ই অনন্য পর্যায়ের ছিল। বর্তমানেও এই শিল্প ইহুদিরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। পশমি পণ্য উৎপাদনকারী যেসব বড়ো বড়ো ব্র্যান্ড ও কোম্পানির নাম সচরাচর শোনা যায়, তাদের সিংহভাগ শেয়ার-ই এই বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কীভাবে নিজেদের আওতায় আনতে হয়, তা ইহুদিদের চেয়ে ভালো আর কেউ দেখাতে পারবে না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও Mr. Stuyvesant একসময় তাদের নিউইয়র্ক বন্দর ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে বাধ্য হন। তাদের চোখে এই অঞ্চলটি ছিল মর্তের স্বর্গ। তারা দলবেঁধে সেখানে পাড়ি জমাতে শুরু করে। এভাবে নিউইয়র্ক হয়ে উঠে তাদের সর্বাধিক জনবসতির শহর এবং আমেরিকার প্রধান আমদানি ও রপ্তানিবন্দর। কোনো ব্যবসায়ী এ বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে তাকে বন্দর মালিকদের কর (Tax) দিতে হতো। যেহেতু এই শহর তাদের প্রচুর ধন-সম্পদ এনে দিয়েছে, তাই তারা গর্ব করে বলত-হয়তো তাদের ধর্মে এ ভূমি সম্পর্কেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, আর এটাই হলো নিউ জেরুজালেম। যতদিন না তারা প্রকৃত জেরুজালেমে ফিরে যেতে পারছে, ততদিন পর্যন্ত এখানেই থাকবে।

George Washington-এর শাসনামলে আমেরিকায় তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪000, কিন্তু এদের সবাই ছিল সচ্ছল ব্যবসায়ী। আমেরিকা যেন ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পায়, সেজন্য Haym Saloman (একজন ইহুদি ব্যবসায়ী) তার সকল সম্পদ স্বাধীনতাযুদ্ধে বিনিয়োগ করে। বিনিময়ে আমেরিকান সরকার তাকে এবং তার জাতিগোষ্ঠীকে অবাধে বাণিজ্য করার লাইসেন্স দেয়। ফলে মুনাফা উপার্জনের পথে তাদের আর কোনো বাধাই থাকল না।

তাদের নিকট সম্পদ ও ব্যক্তিসত্তা দুটি আলাদা বিষয়। কেউ বিপদে পড়লে তারা অবশ্যই সহানুভূতি জানাবে, কিন্তু অর্থ দিয়ে সাহায্য করার ঘটনা খুবই কম।

মনে করুন, নিজের ভিটে বাড়ি বন্ধক রেখে আপনি তাদের কাছ থেকে কিছু ঋণ নিলেন এবং ব্যাবসার জন্য পণ্য কিনলেন, কিন্তু গুদামঘরে আগুন লেগে সব পণ্য পুড়ে গেল। পরিবার নিয়ে আপনার এখন পথে বসার অবস্থা। এমতাবস্থায় আপনি ঠিকই তাদের সহানুভূতি পাবেন, কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে আপনার ভিটে-বাড়ির দাবি ছেড়ে দেওয়া একেবারে অসম্ভব। তাদের চোখে It was only Business; তবে ব্যতিক্রমী কিছু উদাহরণ থাকতেই পারে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানিতে যে সুইটশপ[১৫] প্রতিষ্ঠা পায়, তা বহু আগেই নিউইয়র্কের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। আজকের দিনে সুইটশপকে তো সমাজব্যবস্থার অংশই বলা যায়। সবার ওপর প্রভুত্ব কায়েমের যে মনোভাব তারা যুগ যুগ ধরে লালন করে এসেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ আজকের শ্রমবাজার। তারা যা চেয়েছে, তাই হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছুই নেই। কারণ, এসব শিল্প- কারখানায় তারা যা-ই তৈরি করে, তা-ই আমাদের ক্রয় করতে হচ্ছে। তাদের পারিশ্রমিকের ওপর মুনাফা যোগ করে যখন বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তখন সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই এত সব কর্মসংস্থান করেও মানুষের আহার-বস্ত্র নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইহুদিদের মনে দেশপ্রেমের কোনো বালাই নেই। নাগরিকত্ব বিষয়টি তাদের কাছে মুনাফা উপার্জনের হাতিয়ার। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সবাই বিশ্বাস করে, আমেরিকা হলো খ্রিষ্টানদের দেশ। এ দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য সবকিছু তারা-ই পরিচালনা করছে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকা কোনো খ্রিষ্টান এ দেশের পণ্য হাতে পেয়ে এই ভেবে খুশি হয়—এটা হয়তো তার-ই কোনো ধর্মীয় ভাই তৈরি করেছে। কিন্তু ভালোভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, এ দেশের নামকরা প্রায় সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকই ইহুদি। জ্যান্টাইলদের কিছু শেয়ার থাকলেও তা পরিমাণে অনেক কম। প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদগুলো তো ইহুদিদের জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়! কী উৎপাদন করা হবে, কীভাবে ব্যাবসা পরিচালিত হবে এবং কীভাবে মুনাফা বণ্টন করা হবে, তার সবই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করে। American Importing Company’ ‘American Commercial Company’ নামগুলো ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হলো—আমেরিকার সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে না পারে এগুলো ইহুদিদের প্রতিষ্ঠান। যেসব শিল্পে তারা ইতোমধ্যেই একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো—

■ চলচ্চিত্রশিল্প

■ থিয়েটারশিল্প

■ চিনিশিল্প

■ তামাকশিল্প

■ মাংসশিল্পের ৫০ ভাগ

■ জুতাশিল্পের ৬০ ভাগ

■ পোশাকশিল্প

■ সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রশিল্প

■ অলংকারশিল্প

■ খাদ্যশস্য

■ বর্তমানে তুলাশিল্প

■ কলরাডো অঙ্গরাজ্যের ধাতু বিগলনশিল্প

■ ম্যাগাজিন প্রকাশনী

■ খবর প্রকাশনী

■ তরল পানীয়শিল্প

■ ঋণ ব্যবসায়

আজ তাদের যে সাফল্য, তা অগ্রাহ্য করার বিষয় নয়। তাদের পন্থা অনুসরণ করে যে কেউ-ই সম্পদশালী হতে পারবে। যেমন : বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়ানো, পণ্যকে ব্যবসায়ের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা, সুদের বিনিময়ে ঋণ দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু জ্যান্টাইলদের পক্ষে এসব কাজ গুছিয়ে করা অসম্ভব।

কেবল কৃষি কাজে ইহুদিরা কখনো সফল হতে পারেনি। কারণ, ইহুদিরা কায়িক শ্রম একদম-ই করতে পারে না। তারা হলো পরজীবী; বেঁচে থাকে অন্যের জীবিকা ভোগ করে। সারা বছর পরিশ্রম করে একজন কৃষক যে ফসল ফলাবে, তা তারা কেড়ে নিয়ে বাণিজ্য করবে। এ পর্যন্ত তারা বহুবার পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কৃষি উপনিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে এবং প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। তবে দুগ্ধ ও পশু পালন শিল্পে তারা যথেষ্ট উন্নতি করেছে।

আসলে মাটির সাথে তাদের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। তারা জন্মেছে শুধু বাণিজ্য করার জন্যই। এই ছোট্ট বিষয়টি-ই পরিষ্কার করে দেয়, কেন প্যালেস্টাইন নিয়ে তাদের এমন ব্যাকুলতা! প্যালেস্টাইনকে বলা হয় প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের বাণিজ্যিক দ্বার। এই ভূমিকে নিজেদের করে নেওয়ার অর্থ হলো—এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকা ও মেডিট্যারিয়ান সাগরের প্রধান বাণিজ্যিক হিসেবে নিজেদের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করা।

*

১. অ্যান্টি-সেমেটিক— ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব

২. বলশেভিক বিপ্লব- বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে এই বিপ্লবের সূচনা হয়, যার হাত ধরে কমিউনিস্ট সোভিয়েতের জন্ম হয়।

৩. রাবাই- ইহুদিদের ধর্মীয় গুরু।

৪. জ্যান্টাইল- ইহুদি ব্যতীত পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়কে জ্যান্টাইল বলা হয়।

৫. প্রুশিয়ান- প্রাচীন এক ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র, যা জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের সাথে মিশে গেছে।

৬. মোজেস- নবি মুসা

৭. জ্যাকব- নবি ইয়াকুব

৮. ক্যানাইটদের- বাইবেলে উল্লিখিত এক অভিশপ্ত জাতি।

৯. আব্রাহাম-পয়গম্বর ইবরাহিম

১০. নোয়াহ- পয়গম্বর নুহ

১১. পেগান—ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্ম ব্যতীত সব ধর্মকে পেগান বলা হয়। এ ছাড়াও যারা মূর্তি ও প্রকৃতির উপাসনাকারী, তাদেরকেও এ নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

১২. সেক্সন-ইউরোপিয়ান এক প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী, যারা আজ বিভিন্ন জাতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

১৩. পিলগ্রিম ফাদার-ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসনকালে প্রথমে যে ইংলিশ নাগরিকগণ আমেরিকায় বসতি স্থাপন করে, তাদের পিলগ্রিম ফাদার বলা হয়।

১৪. প্রোপাগান্ডা-কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য বা অবস্থানের দিকে জনমত তৈরির উদ্দেশ্য বা অবস্থানের দিকে জনমত তৈরির উদ্দেশ্যে যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এমন সব বিষয় প্রচার করা, যাতে সাধারণ জনগণের ধ্যানধারণা ওই একটি দিকে পরিচালিত হয়।

১৫. সুইটশপ-যেখানে নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রমিকদের দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি করিয়ে নেওয়া হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *