ত্রিশ
মারিয়া ভেতরে ঢুকে দেখল চার্চ সম্পূর্ণ খালি। জানালার কাচ ভেদ করে আলো আসছে। মারিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি খালি ক্রস। বজ্র আর বিদ্যুতের রাতটির কথা মনে পড়ে গেল ওর। এখানে মানুষ আগে এমন কিছুর পুজো করতে যার অর্থ হয়তো তারা নিজেরাও জানে না।
সবার সামনে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল মারিয়া। এখানে যীশুর মূর্তি রাখা হয় যাকে সে বিশ্বাস করে, যদিও যীশুর কথা দীর্ঘদিন তার মনে পড়েনি।
হাঁটু মুড়ে বসল মারিয়া। সে ঈশ্বর, ভার্জিন মেরী, যীশু এবং সকল সেইন্টের কাছে প্রতিজ্ঞা করল আজ যাই ঘটুক না কেন সে কিছুতেই তার মত বদলাবে না এবং অবশ্যই এ দেশ ছেড়ে চলে যাবে। প্রতিজ্ঞা করল এ জন্য যে ভালোবাসার ফাঁদ সম্পর্কে তার খুব ভালো জানা আছে এবং জানে কত সহজে এ ফাঁদ নারীর মন বদলে দিতে পারে।
কিছুক্ষণ পরে কাঁধে একটি হাতের স্পর্শ পেল মারিয়া। সে হাতে মাথা রাখল।
‘কেমন আছ?’
‘ভালো,’ কণ্ঠে কোনও উদ্বেগ ফুটতে দিল না মারিয়া।
‘আমি ভালো আছি। চলো কফি খাই।’
হাতে হাত ধরে ওরা ত্যাগ করল গির্জা। যেন দীর্ঘদিন বাদে সাক্ষাৎ হয়েছে প্রেমিক যুগলের। মানুষজনের সামনে ওরা পরস্পরকে চুমু খেল। যদিও অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। কিন্তু গ্রাহ্য করল না কাউকে।
ওরা একটি ক্যাফেতে ঢুকল। আর দশটা ক্যাফের মতই এটাও। তবে আজকের বিকেলে অন্যরকম লাগল এটাকে। কারণ আজ ওরা একত্রিত হয়েছে এবং ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। ওরা জেনেভা নিয়ে গল্প করল, ফরাসী ভাষা শিখতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তা বলল মারিয়া, চার্চের সুন্দর জানালাগুলোর কথা উল্লেখ করল ধূমপানে বিষপান বলল ওরা, যদিও দু’জনেই ধূমপান করছে এবং এই বিষপান ত্যাগের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তাদের নেই।
মারিয়া বলল সে কফির দাম দিয়ে দেবে। র্যালফ মেনে নিল ওর দাবি। তারপর মারিয়াকে নিয়ে গেল চিত্র প্রদর্শনীতে। মারিয়া র্যালফের জগৎ সম্পর্কে জানল : শিল্পী, ধনী ব্যক্তিগণ যারা যতটা ধনী নয় কিন্তু প্রদর্শন করে তার বেশি, মিলিওনেয়ার, যাদেরকে দেখলে মনে হয় গরীব, মানুষজন এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলছে সেসব কথা কোনওদিন শোনেনি মারিয়া। সবাই পছন্দ করল মারিয়াকে। প্রশংসা করল তার ফরাসি বলার ঢং নিয়ে, জানতে চাইল কার্নিভাল, ফুটবল, ব্রাজিলীয় সঙ্গীত সম্পর্কে। এরা সবাই হাসিখুশি, বিনয়ী, চমৎকার স্বভাবের মানুষ।
প্রদর্শনী থেকে বেরিয়ে এল দু’জনে। র্যালফ বলল রাতে ক্লাবে যাবে সে মারিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। নিষেধ করল মারিয়া। রাতে সে ক্লাবে থাকবে না। সাপারের দাওয়াত দিল সে র্যালফকে।
দাওয়াত কবুল করল র্যালফ। পরস্পরকে বিদায় জানাল ওরা, কলোনির একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে ওরা সাপার করবে, তবে তার আগে র্যালফের বাড়িতে মিলিত হবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। কলোনির পাশ দিয়ে বহুবার ট্যাক্সি করে গিয়েছে মারিয়া, ইচ্ছে করেছে নামে। কিন্তু নামা হয়নি।
মারিয়ার হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার বান্ধবীর কথা। লাইব্রেরিতে যাবে ও। বান্ধবীকে জানাবে ও আর ফিরছে না।
.
ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে গেল মারিয়া। এ জ্যাম যেন চলবে অনন্তকাল ধরবে, কুর্দরা বিক্ষোভ করছে। এদের বিক্ষোভ শেষ হলে আবার চলতে শুরু করল গাড়ি। অবশ্য এখন হাতে সময় আছে মারিয়ার।
গন্তব্যে যখন পৌছুল মারিয়া; বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল ওটা।
‘মাফ করো, ভাই, আমি হয়তো খুব বেশি ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাই। আমার আসলে কোনও বান্ধবী নেই। তাই তোমার সঙ্গেই শুধু গল্প করি।’ মারিয়াকে বলল লাইব্রেরিয়ান।
লাইব্রেরিয়ানের কোনও বান্ধবী নেই? এতদিন একটা জায়গায় কাটাল সে, কাজের সুবাদে কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় তার, কাউকে সে পায়নি মন খুলে কথা বলার জন্য?
‘আমি ভগাঙ্কুর নিয়ে লেখা একটা রচনা পড়ছিলাম…’ অথচ এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তাই করেনি মারিয়া!
‘আমি অবশ্য আমার স্বামীর সঙ্গে উপভোগ করি সেক্স। মিলনের সময় খুব কমই পূর্ণতৃপ্তি পাই আমি, অর্গাজম হয়ই না বলতে গেলে। এটা কি স্বাভাবিক?’
‘তোমার কি মনে হয় কুর্দরা যে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছে তা স্বাভাবিক? যে মেয়েটি পালিয়ে গেল তার প্রেমিকের সঙ্গে তা কি স্বাভাবিক? জগতে অনেক কিছুই ঘটে তবে আমরা বিশ্বাস করি বা না করি তাতে কিছু এসে যায় না। এসবই স্বাভাবিক। যে সব প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়, আমাদের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যায় তা-ও আমাদের চোখে স্বাভাবিক হয়ে ধরা পড়ে।’
মারিয়া তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে দেখছে। এবং এই প্রথম মহিলার নাম জানতে চাইল সে। মহিলার নাম হেইডি। ত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবন তার। তবে দীর্ঘ এ সময়ে সে একবারও নিজেকে জিজ্ঞেস করেনি স্বামীর সঙ্গে যৌন মিলনে সে যে তৃপ্তি লাভ করে না এটা স্বাভাবিক কিনা।
‘আমি জানি না ওগুলো পড়া আমার উচিত হয়েছে কি না। হয়তো অজ্ঞতার মাঝে থাকাই ভালো ছিল, বিশ্বস্ত স্বামীর প্রতি আস্থা, লেকের পাড়ে বাড়ি, তিনটি সন্তান, একটি ভালো চাকরি, একজন নারীর আর কী চাই? কিন্তু তুমি এখানে আসার পরে, আমি যখন প্রথম বইটা পড়লাম, আমার জীবন কী এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম। সবার ক্ষেত্রেই কি এরকম ঘটে?
‘হ্যাঁ, তা তো ঘটেই,’ সামনে দাঁড়ানো মহিলা তার পরামর্শ চাইছে। নিজেকে বেশ বিজ্ঞ মনে হলো মারিয়ার।
‘আমাকে বিস্তারিত বলবেন?’
প্রশ্ন করল মারিয়া।
‘এসব বিষয় বোঝার জন্য তোমার বয়স খুবই কম। তবু আমার কথা তোমাকে বলছি কারণ যাতে আমার মত ভুল তুমি করে না বসো।’
‘আমার স্বামী কখনও আমার ভগাঙ্কুরের দিকে নজর দিলেন না কেন? কারণ তার ধারণা অর্গাজম ঘটে যোনিতে এবং উনি যা ভাবছেন তেমনটি ভান করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। হ্যাঁ, আনন্দ পাবার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, তবে ভিন্ন রকমের আনন্দ। যখন ওপরের অংশে ঘষাঘষি… আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছ?’
‘হুঁ।’
লাইব্রেরিয়ান তার ডেস্কের একটা বইয়ের দিকে ইংগিত করল, টাইটেল দেখতে পাচ্ছে না মারিয়া।
‘অনেক কিছুই আছে যার সঙ্গে ভগাঙ্কুর এবং জি-স্পটের সম্পর্ক রয়েছে। এগুলো অর্গাজমের জন্য জরুরি। কিন্তু পুরুষ ভাবে পেনিট্রেশন করলেই বুঝি সব হয়ে গেল। জি-স্পট কি তা জানো?’
‘জ্বী, আপনি সেদিন বলেছিলেন।’ চেহারায় নিষ্পাপ সারল্য ফুটিয়ে তুলল মারিয়া। ‘দোতলায়, জানালার পেছনে।
‘দ্যাটস রাইট!’ জ্বলে উঠল লাইব্রেরিয়ানের চোখ। ‘তোমার পুরুষ বন্ধুদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস কোরো। কেউ এর নামই শোনেনি। একজন ইতালিয়ান আবিষ্কার করেছেন ভগাঙ্কুর, আর জি-স্পট হলো কুড়ি শতকের আবিষ্কার। শীঘ্রি এটা হেডলাইনে পরিণত হবে। কেউ আর এটাকে অবজ্ঞা করতে পারবে না। তোমার কোনও ধারণা আছে আমরা কি বৈপ্লবিক সময়ের মধ্যে অতিবাহিত করছি দিন?’
ঘড়ি দেখল মারিয়া। হেইডি বুঝতে পারল দ্রুত কথা শেষ করতে হবে তাকে।
‘ড. ফ্রড একমত হননি কারণ তিনি নারী ছিলেন না এবং পুরুষাঙ্গের মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি লাভ করতেন বলে ভাবতেন নারীরও তৃপ্তির কেন্দ্র যোনি। খুব কম নারীই সত্যিকারের যৌন তৃপ্তি লাভ করে জীবনে। তুমি যদি যৌন তৃপ্তি না পাও তাহলে একটা পরামর্শ দিই : সঙ্গমের আসন বদলাও। প্রেমিককে নিচে শুইয়ে দিয়ে তুমি তার গায়ে উঠে বসবে; তোমার ভগাঙ্কুর তার শরীরে শক্তভাবে আঘাত করবে এবং তুমি অনেক বেশি আনন্দ পাবে।’
মারিয়া ভান করছিল সে মহিলার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে না। তাহলে সে একাই নয়! যৌন সমস্যা শুধু মারিয়ার একার নয়, আরও অনেকেরই আছে। মারিয়ার ইচ্ছে করল লাইব্রেরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। তার কাঁধ থেকে বিরাট একটা বোঝা নেমে গেছে। তার বয়স এখন অল্প, এ বয়সেই এমন একটা আবিষ্কার। ভাবা যায়! দারুণ একটা দিন কাটছে মারিয়ার। হেইডি ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে হাসল মারিয়ার দিকে তাকিয়ে।
‘পুরুষ হয়তো জানে না, তবে আমাদেরও ইরেকশন হয়। ভগাঙ্কুর শক্ত হয়ে ওঠে!’
মারিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল :
‘আচ্ছা, আপনি কখনও পরকীয়া করেছেন?’
লাইব্রেরিয়ানকে মনে হলো শকড হয়েছে। প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল সে।
‘ইরেকশনের প্রসঙ্গে আসি। তুমি জানো আমাদের ক্লিটোরিস রিজিড হয়ে যায়?’
‘জানি। ছোটবেলা থেকে জানি।’
লাইব্রেরিয়ানকে হতাশ মনে হলো। তবু বলে চলল সে :
‘যা হোক তুমি যদি ভগাঙ্কুরের চারপাশে আঙুল ঘষতে থাকো, তবে ক্লিটোরিসের মাথাটা বাদ দিয়ে, অদ্ভুত আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বললে অনেক কাজ দেয়।’
‘আপনার স্বামীর সঙ্গে কখনও খোলামেলা কথা বলেছেন?’
সরাসরি এ প্রশ্নটি আবার এড়িয়ে গেল হেইডি। বলল তখন পরিবেশ- পরিস্থিতি ভিন্ন রকম ছিল। এ মুহূর্তে সে তার আঁতেল অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী।
‘ভাবার চেষ্টা করো তোমার ভগাঙ্কুর যেন ঘড়ির কাঁটা এবং তোমার সঙ্গীকে বলবে কাঁটাটাকে এগারোটা এবং একটার ঘরের মধ্যে বারবার আগুপিছু করতে, বুঝতে পেরেছ!’
হ্যাঁ, মহিলা কী বলছে বুঝতে পারছে মারিয়া। তবে তার সব কথার সঙ্গে একমতও হতে পারছে না, যদিও বইতে সত্যি কথাই বলেছে। মহিলা ঘড়ি শব্দটা উচ্চারণ করার পরে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকাল মারিয়া। বলল তাকে এখন যেতে হবে। কারণ কাজে যোগদানের সময় হয়ে গেছে। মহিলা মারিয়ার কথা শুনেও যেন শুনল না।
‘ক্লিটোরিস নিয়ে লেখা এই বইটি তুমি নেবে?
‘নো, থ্যাংকস, আমার অন্য কাজ আছে। বই পড়ার সময় নেই।
‘তুমি কোনও বই-ই নিতে চাইছ না?’
‘না, আমি আমার দেশে ফিরে যাচ্ছি। তবে আমাকে বুঝতে পারার জন্য এবং আমাকে বিভিন্ন সময় বই ধার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের কখনও দেখা হয়ে যাবে।’
হ্যান্ডশেক করল ওরা, পরস্পরের সুখী জীবন প্রত্যাশা করল।
একত্রিশ
মারিয়া চলে গেল। হেইডি ঠাস করে চাপড় বসাল ডেস্কে। আফসোস হচ্ছে ওর। সুযোগ পেয়েও কেন মেয়েটার সঙ্গে নিজের দুঃখ-কষ্টের কথাগুলো ভাগ করে নিল না? মেয়েটা সাহস করে জানতে চাইল হেইডি কখনও তার স্বামী দ্বারা প্রতারিত হয়েছে কিনা অথচ এ প্রশ্নের জবাব সে এড়িয়ে গেছে। সে তখন নারীদের নতুন একটি জগৎ আবিষ্কার করছে- ভ্যাজাইনাল অর্গাজম হওয়া বা যোনি পথের তৃপ্তি পাওয়া একটি মেয়ের জন্য কতটা কঠিন?
‘আরে দূর, এটা কোনও ব্যাপারই না। পৃথিবী তো আর শুধু সেক্স নিয়ে নয়।’
‘না, সেক্স পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যদিও এর এখনও গুরুত্ব রয়েছে। নিজের চারপাশে চোখ বুলায় হেইডি; তাকে ঘিরে থাকা সহস্রাধিক বইয়ের বেশিরভাগ প্রেম-কাহিনী, আর গল্পগুলোও সব একইরকম, ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয়, তারা প্রেমে পড়ে, একে অন্যকে হারিয়ে ফেলে, পরে আবার খুঁজে পায়। দূর দেশ, ব্যথা-বেদনা, উদ্বেগ ইত্যাদির কথা বলা হয় বইতে, তবে খুব কম জনই প্রশ্ন করে : ‘এক্সকিউজ মী, স্যার, আপনি নারী শরীর নিয়ে লিখছেন না কেন? তাকে বুঝতে পারা যায় এমন কিছু নিয়ে লেখা হচ্ছে না কেন?’
হয়তো লোকের এ ব্যাপারে সত্যি কোনও আগ্রহ নেই। পুরুষ সবসময় মহত্ব দেখায়, যদিও তারা এখনও গুহাবাসী শিকারীর পর্যায়েই রয়ে গেছে, সন্তান উৎপাদনের ইনসটিংক্ট অনুসরণ করে চলেছে।
আর নারী? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানে হেইডি, কারও সঙ্গে পূর্ণ রতিতৃপ্তি পাবার আকাঙ্ক্ষা বড় জোর কয়েক বছর টিকে থাকে; তারপর এটা আস্তে আস্তে হ্রাস হয়ে যায়, কিন্তু এ নিয়ে কথা বলে না কেউ। কারণ প্রতিটি নারী মনে করে এটা তার একান্ত সমস্যা। তাই তারা মিথ্যা কথা বলে, ভান করে স্বামীর প্রতি রাতের মিলনেচ্ছা তাদের জন্য অত্যাচারের সামিল। আর মিথ্যা বলে আরেকটি নারীর ভেতরে জাগিয়ে তোলে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
নারীরা তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রবাহিত করে অন্য খাতে : সন্তান, রান্না, টাইম টেবিল, গৃহকর্ম, বিল দেয়া, স্বামীর পরকীয়া- যা তারা সহ্যও করে- বাইরে ঘুরতে যাওয়া, যেটা তারা নিজেদের চেয়ে সন্তানের জন্যই বেশি করে, তাদের নানান জটিলতা, এমনকী প্রেমও, তবে সেক্স নয়।
হেইডি ভাবে, ব্রাজিলীয় তরুণীর সঙ্গে তার আরেকটু খোলামেলা হওয়া উচিত ছিল। মেয়েটিকে তার ভারী সাদাসিধে নিষ্পাপ মনে হয়েছে, প্রায় তার মেয়ের বয়সীই বলতে গেলে, অথচ দুনিয়া কী জিনিস এখনও জানে না। মেয়েটি একজন অভিবাসী, বাড়ি থেকে বহু দূরে, ক্লান্তিকর একটা চাকরি করছে, অপেক্ষা করছে সুপাত্রের জন্য, যার সঙ্গে হয়তো রতি তৃপ্তি পাবার ভান করবে সে, মেয়েটি খুঁজছে নিরাপত্তা, এই রহস্যময় মানব জাতিকে সে জন্ম দেবে, তারপর ভুলে যাবে রতিতৃপ্তি, ভগাঙ্কুর এবং জি-স্পটের কথা। একজন ভালো স্ত্রী, ভালো মা হিসেবে সে লক্ষ রাখবে সংসারে যেন কোনও কিছুর অভাব না থাকে, মাঝে মাঝে গোপনে হস্তমৈথুন করবে, ভাববে এমন কারও কথা যার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হতো তার, সে মেয়েটির দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। এভাবে স্বাভাবিকতা বজায় রাখবে- স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য সবাই এমন উন্মাদ কেন?
এ কারণে হেইডি প্রশ্নটির জবাব দেয়নি : আপনি কখনও পরকীয়া করেছেন?
হেইডির জীবনে তার স্বামীই একমাত্র পুরুষ, যদিও সেক্স এখন তার কাছে অতীত মাত্র। তার স্বামী সঙ্গী হিসেবে চমৎকার, সৎ, উদার, রসিক, সংসার প্রতিপালনে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে, সবাইকে সে সুখী রাখতে চায়। মেয়েরা যেরকম পুরুষের স্বপ্ন দেখে, হেইডির স্বামী সেরকম একজন- আইডিয়াল স্বামী। তাই হেইডির মন খারাপ হয়ে যায় ভাবলে একদিন সে-ও পরপুরুষের কথা কল্পনা করেছিল।
পুরুষটির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মনে আছে হেইডির। সে ডাভোস শহরের টিলাগুলো থেকে ফিরছিল, হিমবাহের কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেন চলাচল। হেইডি বাড়িতে ফোন করে বলে দিয়েছিল যাতে কেউ তার জন্য দুশ্চিন্তা না করে। কয়েকটি পত্রিকা কিনে স্টেশনে বসে ছিল সময় কাটাতে।
এই সময় লোকটিকে লক্ষ করে হেইডি। তার পাশেই বসা ছিল সে। সঙ্গে রুকস্যাক এবং ব্যাগ। লোকটির চুলের রঙ ধূসর, রোদে পোড়া চামড়া, প্লাটফর্মে একমাত্র তাকেই মনে হচ্ছিল ট্রেন আসছে না বলে মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। বরং হাসিমুখে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছিল সে কারও সঙ্গে কথা বলার জন্য। হেইডি একটি পত্রিকা মেলে ধরেছিল পড়ার জন্য, এমন সময় লোকটি তার পাশে চলে আসে। হেইডি অন্যদিকে তাকাবারও ফুরসৎ পায়নি, লোকটিকে এড়িয়ে যাবার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
হেইডি মৃদু গলায় বলতে যাচ্ছিল পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা ছেপেছে, ওটা তার পড়া দরকার। তার আগেই লোকটি কথা বলতে শুরু করে। জানায় সে একজন লেখক, ডাভোসে একটা বৈঠক করে ফিরছে, ট্রেনের দেরী মানে সে বাড়ি যাবার ফ্লাইট মিস করবে। জেনেভা পৌঁছার পরে হেইডি কি তাকে একটি হোটেল খুঁজে দিতে সাহায্য করতে পারবে?
হেইডি লক্ষ করছিল তাকে : লোকটি জানে সে প্লেন মিস করছে, তাকে অস্বস্তিকর একটি ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, তারপরও সে এত হাসিখুশি থাকে কি করে?
লোকটি এমনভাবে আলাপ জুড়ে দিয়েছিল যেন তাদের পুরানো দোস্তী। সে কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছে তার বর্ণনা দিয়েছিল, বলেছিল রহস্যময় সাহিত্যের কথা, যেসব নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে তাদের কথা। হেইডি মাঝে মধ্যে মাথা দোলাচ্ছিল এবং তাকে কথা বলতে দিচ্ছিল। লোকটি ক্ষমাও চাইছিল বেশি কথা বলছিল বলে, হেইডির কথা শুনতে চাইছিল। হেইডি শুধু বলেছে : ‘আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, আমার মধ্যে বিশেষ কিছু নেই।’
হঠাৎ হেইডি আবিষ্কার করে সে আশা করছে ট্রেন যেন আর না পৌঁছায় স্টেশনে। লোকটির সঙ্গে কথা বলতে তার এতই ভালো লাগছিল। সে এমন কিছু জিনিস আবিষ্কার করছিল যা শুধু উপন্যাসে পড়েছে। যেহেতু লোকটির সঙ্গে আর দেখা হবার সম্ভাবনা নেই, সে সাহস করে বলতে শুরু করে যেসব বিষয়ে নিজের আগ্রহ রয়েছে, সেসব বিষয়ে। জানায় স্বামীর সঙ্গে তার তেমন বনিবনা হচ্ছে না, একটা কঠিন সময়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে তাদের দাম্পত্য জীবন। হেইডি জানতে চায় কী করলে সে তার স্বামীকে সুখী করতে পারবে। লোকটি হেইডিকে কিছু মজার পরামর্শ দেয়, শোনায় একটি গল্প, তবে হেইডির স্বামী প্রসঙ্গে কথা বলতে তার অস্বস্তি হচ্ছিল।
‘আপনি খুব দারুণ একজন নারী,’ লোকটি বলেছিল হেইডিকে, এমন কথা কেউ বলেনি হেইডিকে।
প্রত্যুত্তরে কী বলবে বুঝতে পারছিল না হেইডি। লোকটি লক্ষ করছিল বিব্রত বোধ করছে হেইডি। সে তক্ষুনি মরুভূমি, পাহাড়, হারানো শহর, ঘোমটা পরা নারী, যোদ্ধা, জলদস্যু, জ্ঞানীগুণী মানুষ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে চলে যায় প্রসঙ্গান্তরে।
ট্রেন এসে পড়েছিল। ওরা দু’জন বসেছিল পাশাপাশি। হেইডির মনে হচ্ছিল সে আর বিবাহিত নারী নয় যার লেকের পাড়ে বাড়ি আছে, রয়েছে তিনটি সন্তান। নিজেকে তার অ্যাডভেঞ্চারার মনে হচ্ছিল, যেন প্রথমবার যাচ্ছে জেনেভায়। সে পাহাড় এবং নদী দেখছিল, লোকটির পাশে বসে ভালো লাগছিল ওর। এই লোকটির সঙ্গে তার বিছানায় যেতে ইচ্ছে করছিল। লোকটি তাকে কথা বলে মুগ্ধ করে দিচ্ছিল। ওই সকালে আটত্রিশ বছরের হেইডির কাছে মনে হচ্ছিল গোটা দুনিয়া বদলে গেছে, লোকটি তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে; দারুণ লাগছিল হেইডির।
হেইডির বয়স এখন পড়ন্ত শরতে, যখন সে ভাবছে সে যা চেয়েছে তা পেয়েছে, এমন সময় এ লোকটির আবির্ভাব ঘটে ট্রেন স্টেশনে এবং সে হেইডির জীবনে প্রবেশ করে কোনওরকম অনুমতির তোয়াক্কা না করে।
ওরা জেনেভায় নেমে পড়েছিল। হেইডি লোকটিকে একটি হোটেলে নিয়ে যায় (সস্তা হোটেল, বলেছিল লোকটি। কারণ সে পরদিন সকালেই চলে যাবে এবং সুইটজারল্যান্ডের বিলাসবহুল হোটেলে রাত কাটানোর মত পয়সা তার নেই); লোকটি হেইডিকে তার ঘরে যেতে অনুরোধ করে প্রত্যাশামত রুম পাওয়া গেছে কিনা দেখার জন্য। হেইডি তার প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারা ঘরে ঢুকেই বন্ধ করে দেয় দরজা, চুমু খেতে থাকে উন্মাদের মতো, লোকটি টান মেরে খুলে ফেলে হেইডির পোশাক এবং- ডিয়ার গড!— নারী শরীরের সবকিছুই ছিল তার চেনা।
সারা বিকেল অসংখ্যবার ওরা প্রেম করেছিল। সাঁঝবেলায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও বলতে হয়েছিল হেইডিকে : আমি বাড়ি যাব। আমার স্বামী অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
লোকটি একটি সিগারেট ধরিয়েছিল, নীরবতার মাঝে কেটে গিয়েছিল কয়েকটি মুহূর্ত। তবে ওদের কেউ পরস্পরকে ‘বিদায়’ বলেনি। হেইডি বিছানা ছেড়েছে, পেছন ফিরে তাকায়নি আর।
এই লোকটির সঙ্গে আর দেখা হবে না হেইডির। তার পড়ন্ত শরৎ বেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য সে বিশ্বস্ত স্ত্রী, গৃহবধূ, স্নেহময়ী মা, কর্তব্যনিষ্ঠ চাকুরের ভূমিকা থেকে সাধারণ নারীতে পরিণত হয়েছিল।
তার স্বামী কয়েকদিনই বলেছে হেইডিকে তার কেমন অন্যরকম লাগছে, সুখী না দুঃখী বুঝতে পারছিল না নাকি সে। তবে সপ্তা খানেকের মধ্যে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে।
‘মেয়েটাকে আমি বললেই পারতাম,’ ভাবে হেইডি। ‘তবে ব্যাপারটা হয়তো সে বুঝতে পারত না। কারণ সে এখনও এমন এক জগতে বাস করে যে জগতের মানুষ তার কাছে বিশ্বস্ত এবং প্রেমময়।’
.
মারিয়ার ডায়েরি থেকে :
আমি জানি না সে রাতে সে আমাকে দেখে কী ভেবেছিল। দরজা খুলে দেখেছিল দু’হাতে দুটো সুটকেস নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি দোরগোড়ায়।
‘ডোন্ট ওরি,’ বললাম আমি। ‘আমি থাকতে আসিনি। আমরা কি সাপারে যেতে পারি?
সে কিছুই বলল না, শুধু লাগেজ জোড়া নিয়ে নিল আমার হাত থেকে। ‘কী হচ্ছে?’ কিংবা ‘তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছি, এ ধরনের কোনও বাক্য না বলে সে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগল, আমার শরীর স্পর্শ করছিল সে। আমার বুক, কুঁচকি ছুঁয়ে যাচ্ছিল তার হাত যেন এ মুহূর্তটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিল সে এবং ভয় পাচ্ছিল ভেবে মুহূর্তটি কোনওদিন আসবে না। সে আমার জ্যাকেট খুলে ফেলল, খুলল আমার ড্রেস, সম্পূর্ণ নগ্ন করে ফেলল আমাকে, এবং ওই হলঘরে, কোনওরকম প্রস্তুতি ছাড়াই, নিয়ম কানুনের ধার না ধেরে, কাজটা ভালো কী মন্দ বিবেচনা না করে, সদর দরজায় তখন হু হু করে বইছে শীতল সমীরণ, আমরা প্রথমবারের মত প্রেম করতে শুরু করলাম। ভেবেছিলাম ওকে থামতে বলি, আরামদায়ক কোনও জায়গা খুঁজে নিই প্রেম করার জন্য যাতে আমাদের সংবেদনশীলতার প্রখর রাজ্য আবিষ্কারের সময় পেয়ে যাই, একই সঙ্গে আমি চাইছিলাম ও আমার ভেতরে প্রবেশ করুক, কারণ ও-ই আমার জীবনে একমাত্র পুরুষ যার ওপর কখনও আমি আবিষ্কার ফলাতে যাইনি, যাবও না কোনওদিন। এ কারণেই আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে আমি ভালোবাসতে পারি এবং পেতে পারি অন্তত একটি রাতের জন্য যে রাতটি কোনওদিন আমার জীবনে আসেনি, কোনওদিন আসবে ও না হয়তো।
ও আমাকে শুইয়ে দিল মেঝেতে, আমি প্রস্তুত হবার আগে, উত্তেজিত হবার আগেই আমার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করল। ব্যথা পেলেও তা আমলে নিলাম না। বরং উপভোগ করলাম ব্যথাটা। কারণ সে পরিষ্কার বুঝতে পারছিল আমি তার এবং এজন্য আমার অনুমতির প্রয়োজন হয়নি তার। আমি ওখানে গিয়েছিলাম তাকে কিছু শেখাতে নয় কিংবা এটাও প্রমাণ করতে নয় যে আমি অন্য যে কোনও নারীর চেয়ে সংবেদনশীল এবং যৌনকাতর। আমি ওখানে গিয়েছিলাম ‘হ্যাঁ’ বলতে। হ্যাঁ, তুমি আমার সঙ্গে প্রেম করতে পার।
প্রাচীনতম আসনে আমরা উপগত হই— আমি তার নিচে, আমার দু’পা ছড়ানো, সে আমার ওপরে কোমর নাড়ছে, পুরুষাঙ্গ ঢোকাচ্ছে এবং বের করছে, আমি তার দিকে তাকাই। গোঙানি বা শীৎকারের ভান করি না আমি। চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি প্রতিটি সেকেন্ড স্মরণে রাখার জন্য, দেখি তার চেহারার পরিবর্তন, আমার চুল মুঠো করে ধরেছে সে, আমাকে কামড় দিচ্ছে, চুমু খাচ্ছে। কোনও আদর নেই, কোনও প্রস্তুতি নেই, নেই সফিস্টিকেশন, সে স্রেফ আমার শরীরের মধ্যে এবং আমি তার আত্মার মাঝে।
সে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। দ্রুত এবং ধীরে, কখনও বা থেমে গিয়ে লক্ষ করছিল আমাকে, তবে আমি ব্যাপারটা উপভোগ করছি কিনা জানতে চায়নি। কারণ ও জানত একমাত্র এভাবেই ওই মুহূর্তে আমাদের দু’জনের আত্মার যোগাযোগ ঘটেছে। তার কোমরের গতি দ্রুততর হয়ে উঠল আমি বুঝতে পারছিলাম এগারো মিনিটের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। কিন্তু আমি চাইছিলাম এর যেন অবসান না ঘটে, অনন্তকাল ধরে চলে। কারণ দারুণ লাগছিল আমার। ওহ্, ঈশ্বর- সত্যি, দারুণ লাগছিল আমার। পুরোটা সময় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে ছিলাম দু’জনে। একটা সময় লক্ষ করলাম চোখে কেমন ঝাপসা দেখছি, আমরা যেন একটা ডাইমেনশনের মধ্যে প্রবেশ করছি যেখানে আমি মা, বিশ্ব মাতা, যেখানে দেখছি ব্রহ্মাণ্ড, প্রিয়জনদের, প্রাচীন সময়ের পতিতাদের, যাদের কথা বলেছিল সে আমাকে খোলা অগ্নিকুণ্ডের সামনে বসে।
আমি দেখলাম তার হয়ে আসছে। আমার হাত চেপে ধরল জোরে, ভয়ানক বেগে কোমর তুলছে সে, আর তখন সে চিৎকার করে উঠল— না, সে গুঙিয়ে ওঠেনি, দাঁতে দাঁত ঘষেনি, সে স্রেফ চিৎকার করে উঠল। গর্জে উঠল পশুর মত! আমার মনে হলো তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা না জানি আবার পুলিশে খবর দেয়। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ অসীম সুখের জোয়ারে ভাসছিলাম আমি, কারণ সময়ের যখন শুরু হয়েছিল তখন এমনটাই ঘটেছিল, যখন প্রথম পুরুষ প্রথম নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং প্রথমবার মত মিলিত হবার সময় তারাও এরকম চিৎকার দিয়ে উঠেছিল।
তারপর তার শরীর এলিয়ে পড়ল আমার গায়ে, মনে নেই কতক্ষণ সে ওভাবে শুয়ে ছিল, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম আমরা; আমি তার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম, এরকমটি করেছিলাম এর আগে মাত্র একবার, সেই রাতে, হোটেল রুমের অন্ধকারে। টের পাচ্ছিলাম তার হৃৎপিণ্ডের উন্মাদের মত ধুকপুকানি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে; সে আমার গায়ে হাত বোলাতে লাগল, আমার শরীরের সবগুলো লোম দাঁড়িয়ে গেল।
শরীরের সমস্ত ওজন চাপিয়ে দিয়েছিল সে আমার গায়ে। এবার গড়িয়ে সরে গেল। আমরা পাশাপাশি শুয়ে থাকলাম। দৃষ্টি নিবদ্ধ ছাদের দিকে, দেখছি ঝাড়বাতি এবং তার জ্বলন্ত তিনটে ভালব।
‘শুভ সন্ধ্যা,’ বললাম আমি।
সে আমার দিকে সরে এল যাতে তার বুকে মাথা রাখতে পারি। দীর্ঘসময় আদর করল সে আমাকে, তারপর বলল, ‘শুভ সন্ধ্যা।
প্রতিবেশীরা নিশ্চয় সব টের পেয়েছে,’ বললাম আমি। এরপর কী বলব ভেবে পেলাম না। কারণ ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ জাতীয় কথা বলার কোনও মানে হয় না। সে জানে আমি তাকে ভালোবাসি, আমিও জানি। ‘দরজা দিয়ে প্রবল ঠাণ্ডা বাতাস আসছে,’ বলল সে। ‘ভালোই লাগছে।
‘চলো, কিচেনে যাই।
সিধে হলাম আমরা। লক্ষ করলাম সে এমনকী ট্রাউজারও খোলেনি, গায়ে যেমন পোশাক ছিল তেমন আছে, শুধু প্যান্টের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে পুরুষাঙ্গ। আমি জ্যাকেট পরলাম। গেলাম কিচেনে। সে কিছু কফি বানাল; ধ্বংস করল একজোড়া সিগারেট। আমি একটা খেলাম। টেবিলে বসে সে বলল, ‘ধন্যবাদ,’ মুখে নয়, চোখ দিয়ে।
আমিও বললাম, ‘ধন্যবাদ।’ তবে আমার মুখও বন্ধ রইল।
অবশেষে সাহস করে সুটকেসের কথা জিজ্ঞেস করল সে।
‘আমি কাল দুপুরে ফিরে যাচ্ছি ব্রাজিলে।
‘যেয়ো না,’ বলল সে।
‘কিন্তু আমাকে যেতেই হবে।’
যদি না যাই সে ভাববে আমাদের এ সম্পর্ক স্থায়ীত্বে মোড় নেবে। কিন্তু তা হবার নয়; এটা একটি তরুণী মেয়ের স্বপ্নের অংশ বিশেষ যে দূর দেশে বাস করে, যে বড় একটি শহরে আসে, মুখোমুখি হয় নানান প্রতিকূলতার তবে খুঁজে পায় তার ভালোবাসার মানুষটিকে, আমার কঠিন সময়ের সুখী সমাপ্তি এভাবেই ঘটছে, ইউরোপের কথা যখন মনে পড়বে আমি মনে করব সেই মানুষটির কথা যার প্রেমে পড়েছিলাম এবং যে সবসময় আমার থাকবে, কারণ আমি তার আত্মার মাঝে প্রবেশ করেছি।
ওহ্, র্যালফ, তোমার ধারণা নেই আমি কতটা ভালোবাসি তোমাকে। হ্যাঁ, তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি আমি। এত ভালো জীবনেও কাউকে বাসিনি। এজন্যই চলে যাচ্ছি আমি। কারণ যদি এখানে থাকি, আমার স্বপ্ন রূপ নেবে বাস্তবে, আকাঙ্ক্ষার ওপর অধিকার জন্মাবে, তোমার জীবনটাকে চাইব আমার মত করে… সংক্ষেপে ভালোবাসার সবকিছুর রূপান্তর ঘটবে ক্রীতদাসত্বে। তার চে’ এই-ই ভালো- স্বপ্ন স্বপ্ন হয়ে থাকুক।
তোমার তো রেতঃপাত হয়নি,’ বলল সে, প্রসঙ্গান্তরে যেতে চাইল সে সাবধানে। আমাকে হারাতে ভয় পাচ্ছে ও, ভাবছে আমার মত বদলানোর জন্য সারাটা রাত পাবে।
‘না, হয়নি, তবে অনেক আনন্দ পেয়েছি।
‘কিন্তু তোমার অর্গাজম হলে ভালো হতো।’
‘অর্গাজম হবার ভান করতে পারতাম তোমাকে খুশি করার জন্য। কিন্তু তা চাইনি আমি। র্যালফ হার্ট, তুমি আমাকে সাপোর্ট দিয়েছ, সাহায্য করেছ। হ্যাঁ, অর্গাজম হলে ভালো হতো, তবে হয়নি। তবে ওই শীতল মেঝে, তোমার উষ্ণ শরীর, যে শক্তিতে তুমি আমার ভেতরে প্রবেশ করেছিলে, সবই ভালো লেগেছে আমার।
‘আমি আজ লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম বই ফেরত দিতে। লাইব্রেরিয়ান জানতে চেয়েছিল আমি আমার পার্টনারের সঙ্গে সেক্স নিয়ে কথা বলি কিনা। আমি ভাবছিলাম তাকে জিজ্ঞেস করি : কীসের পার্টনার? কী ধরনের সেক্সের কথা আপনি বলছেন? কিন্তু জিজ্ঞেস করিনি। কারণ মহিলার সঙ্গে রেগে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না আমার। মহিলাকে বেশ ভালো লাগে আমার।
‘জেনেভায় আসার পরে সত্যিকার অর্থে দু’জন পার্টনার পেয়েছি আমি : একজন আমাকে জাগিয়ে তুলেছিল। অপরজন তুমি যে আমাকে অনুভব করতে শিখিয়েছে আমি পৃথিবীর একটা অংশ। আমি তোমাকে শেখাতে চাই আমার শরীরের কোথায় স্পর্শ করতে হবে, কতটা চাপ প্রয়োগ করতে হবে, কতক্ষণ ধরে এবং আমি জানি এটাকে তুমি সমালোচনা হিসেবে নেবে না বরং আমাদের মধ্যেকার যোগাযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে ব্যাপারটিকে। ভালোবাসার আর্ট তোমার পেইন্টিংয়ের মতো, এতেও কলা কৌশলের দরকার হয়, প্রয়োজন হয় ধৈর্য এবং সবার ওপরে প্রাকটিস। এর মধ্যে দরকার ঔদার্য, সাহস।’
আমার ভেতরকার শিক্ষকটি আবার ফিরে আসছিল। যদিও আমি এটা চাইছিলাম না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে জানে র্যালফ। সে তিন নম্বর সিগারেটটি ধরাল। বলল : ‘প্রথমত, তুমি আজ রাতে এখানে থাকছ।’
অনুরোধ নয়, এটা একটা আদেশ।
‘দ্বিতীয়ত, আমরা আবার প্রেম করব, তবে এবারে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছাড়া, তীব্র কামনা নিয়ে। আর সবশেষে বলতে চাই, তুমি পুরুষদের ভালো বুঝতে পার বলে আমি তোমাকে পছন্দ করি।’
পুরুষদের ভালো বুঝতে পারি? আমি প্রতিটি রাত তাদের সঙ্গে কাটাই : শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়, ইহুদি, মুসলিম, ক্যাথলিক, বুদ্ধিস্ট। র্যালফ এ কথা জানে না?
‘হ্যাঁ, তুমি পুরুষদের ভালো বুঝতে পার, আমার চেহারায় সন্দেহ ফুটে উঠেছে দেখে কথাটা আবার বলল র্যালফ। ‘তুমি তোমার ফিমেল সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কথা বল, তোমার শরীর খুঁজে দেখতে আমাকে সাহায্য কর, তুমি ধৈর্য ধর, সময় নাও। এসব ব্যাপারে আমি একমত। কিন্তু তোমার কি কখনও এরকম মনে হয়েছে যে আমরা আলাদা?
‘আমাদের যখন পরিচয় হলো, তোমাকে আমি অনুরোধ করেছিলাম আমাকে সেক্স শেখাতে, কারণ সকল যৌন কামনা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কেন জানো? কারণ নির্দিষ্ট একটা বয়সের পরে প্রতিটি যৌন সম্পর্কের অবসান ঘটেছিল ক্লান্তি এবং হতাশায়। কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম যে নারীদেরকে আমি ভালোবাসি তারা আমাকে যে পরিমাণ তৃপ্তি দিয়েছে আমি তেমনটি দিতে পারিনি তাদেরকে।
‘আমার সাহস হয়নি বলতে : তোমার শরীর দেখাও। কিন্তু তোমার সঙ্গে যখন পরিচয় হলো, তোমার ভেতরে আলো দেখলাম, তোমাকে তৎক্ষণাৎ ভালোবেসে ফেললাম। এবং ভাবলাম জীবনের এই সন্ধিক্ষণে নিজের প্রতি এবং যে সব মহিলাদের আমার পাশে চেয়েছি তাদের প্রতি সৎ হলে আমার হারাবার কিছু নেই।’
সিগারেটটার স্বাদ দারুণ লাগছিল মুখে। ওকে মদ দেব কিনা ভাবছিলাম, কিন্তু আলোচনার সুতো ছিঁড়ে যাবার ভয়ে উঠলাম না।
‘পুরুষ কেন কেবল সেক্সের চিন্তাই করে? কেন তুমি যা করেছ তা করে না এবং আমার অনুভূতির ধার ধারে না?’ ‘তোমাকে কে বলল আমরা শুধু সেক্স নিয়ে চিন্তা করি? বরং বছরের পর বছর আমরা নিজেদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে সেক্স আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পতিতা কিংবা কুমারীর কাছ থেকে প্রেম করতে শিখি; যারা শুনতে চায় তাদেরকে বলি আমাদের গল্প। তবে একটা কথা কি জানো? আমরা আসলে কিছুই বুঝি না। আমরা ভাবি সেক্স এবং রেতঃপাত একই জিনিস। কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা শিখতে পারি না কারণ নারীদের বলার সাহস হয় না: তোমার শরীর দেখাও। আমরা শিখতে পারি না কারণ নারীদের বলার সাহস হয় না : এই আমি। আমরা আটকা পড়ে থাকি প্রাচীন সারভাইভাল ইন্সটিংক্টের মাঝে। তুমি জানো পুরুষের কাছে সেক্সের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কী?
টাকা অথবা ক্ষমতা, ভাবলাম আমি। তবে মুখে বললাম না কিছুই।
‘স্পোর্ট। কারণ পুরুষ আরেকটি পুরুষের শরীর বুঝতে পারে। খেলাধুলা হলো দু’টি শরীরের সংলাপ যা পরস্পরকে বুঝতে পারে।’
‘তুমি পাগল হয়ে গেছ।’
‘হতে পারে। তবে আমি ভুল বলছি না। তুমি যাদের সঙ্গে বিছানায় গেছ সে সব পুরুষের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে কখনও ভেবেছ?’
ভেবেছি। তারা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সবাই ভীতুর ডিম।’
‘আসলে ওরা সত্যি জানে না ওরা কী করছে। ওরা শুধু জানে সমাজ, বন্ধু-বান্ধব এবং নারী ওদের কী বলছে এবং সেটাই ওদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্স, সেক্স, সেক্স। এটাই জীবনের ভিত্তি। এটাই তারা ভাবে।
.
যথেষ্ট হয়েছে। আমি ওকে সেক্সের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম নিজেকে প্রটেক্ট করার জন্য। এখন দেখছি সে-ও একই কাজ করছে। আমরা একে অন্যকে যতই প্রভাবিত বা মুগ্ধ করার চেষ্টা করি না কেন, কাজটা নেহায়েত বোকার মত হয়ে যাচ্ছে।
শুরুতে সবকিছুই ছিল ভালোবাসা এবং সমর্পণের বিষয়। তারপর আবির্ভাব ঘটল সাপের। সে ইভকে বলল : তুমি সমর্পণ করেছ কী হেরে যাবে। আমার ক্ষেত্রেও এখন তা- ই ঘটছে— স্কুলে পড়ার সময় স্বর্গ থেকে আমাকে টেনে নামানো হয়, তারপর থেকে, আমি সাপকে বলার উপায় খুঁজছি যে সে ভুল বলেছে। কিন্তু শেষে দেখেছি সাপের কথাই ছিল ঠিক।
আমি উবু হয়ে বসলাম। র্যালফের পোশাক খুললাম একে একে। ওর পুরুষাঙ্গ ঘুমিয়ে আছে। শান্ত, অনুত্তেজিত। আমি ওর পায়ে চুমু খেতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সাড়া দিতে লাগল র্যালফের পুরুষাঙ্গ। হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম ওটা। তারপর মুখে পুরে নিলাম। লক্ষ করলাম উত্তেজিত হয়ে উঠছে ও। আমার স্তন বৃন্তে হাত বোলাতে লাগল। বোঁটার চারপাশে আঙুল দিয়ে বৃত্ত আঁকছে যেভাবে হোটেল রুমের অন্ধকারে বসে করেছিল। আবার দু’পায়ের ফাঁকে ওকে যেন গ্রহণ করি তা-ই চাইছে।
আমার গা থেকে জ্যাকেট খুলল না র্যালফ, টেবিলের ওপর উপুড় করে শোয়াল তবে পা এখনও মেঝেতে। পেছন থেকে ও এবার প্রবেশ করল। এবারে আস্তে আস্তে, কোনও তাড়া নেই। কারণ আমাকে হারাবার ভয় নেই ওর। র্যালফও বুঝতে পারছে এটা একটা স্বপ্ন, সব সময় স্বপ্ন হয়েই থাকবে, কখনও মোড় নেবে না বাস্তবে।
আমি ওর পৌরুষের স্পর্শ পেলাম শরীরের ভেতর। ওর হাত খেলা করছে আমার বুকে, আমার নিতম্বে, এমনভাবে স্পর্শ করছে আমাকে যেভাবে নারীই কেবল জানে স্পর্শ করতে। আমি তখন বুঝতে পারলাম আমাদের আসলে জন্ম হয়েছে পরস্পরের জন্য।
র্যালফ যখন আমার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করছে এবং আমাকে স্পর্শ করছে, তখন অনুভব করলাম এটা শুধু আমাকে নিয়েই করছে না ও, সারা ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে করছে। হঠাৎ বিরতি দিল র্যালফ। ওর হাত অবশ্য দ্রুত নড়াচড়া করে চলছে আমার গায়ে। ইতিমধ্যে একবার দু’বার নয়, পরপর তিনবার রাগ মোচন হয়ে গেছে আমার, ইচ্ছে করল ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিই কারণ তৃপ্তির বেদনা এমন প্রচণ্ড যে রীতিমত লাগছিল আমার। কিন্তু নিজেকে সংযত করলাম : ব্যাপারটা এরকমই ভেবে গ্রহণ করলাম আমি, এভাবে আবার রতিতৃপ্তি পাব আমি, একবার, দু’বার, তিনবার…
…হঠাৎ এক ধরনের আলোর বিস্ফোরণ ঘটল আমার ভেতরে। আমি যেন আর আমি নই, সবাইকে ছাড়িয়ে গেছি। তার হাতের ছোঁয়ায় চতুর্থ বার অর্গাজম হলো আমার, আমি এমন একটা জায়গায় প্রবেশ করলাম যেখানে শুধুই শান্তি। পঞ্চমবার রাগমোচনে আমি যেন ঈশ্বরকে জানতে পারলাম। তখন টের পেলাম সে আমার ভেতরে? আমি শীৎকার করে উঠলাম। ওহ্, গড! এবং নিজেকে সমর্পণ করলাম স্বর্গ অথবা নরকে; কোথায় জানি না।
ওটা স্বর্গ। আমি পৃথিবী, পাহাড়, বাঘ, নদী, যে নদী প্রবাহিত হয় লেকে, লেক, যা হয়ে ওঠে সাগর। দ্রুত শরীর দোলাচ্ছে র্যালফ, বেদনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুখ, আমি বলতে পারতাম, ‘আমি আর সইতে পারছি না, কিন্তু বলাটা উচিত হতো না, কারণ তখন আমি এবং সে মিলে হয়ে উঠেছিলাম একজন।
যতক্ষণ ইচ্ছে তাকে আমার শরীরে প্রবেশ করতে দিলাম, তার নখ বসে গেল আমার নিতম্বে, আমার মুখ নিচু হয়ে আছে কিচেন টেবিলের ওপরে, ভাবছিলাম প্রেম করার জন্য পৃথিবীতে এরচে’ ভালো জায়গা হয় না। ক্যাচকোচ শব্দ করে উঠল টেবিল, তার নিশ্বাস হয়ে উঠল দ্রুততর, তার নখের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছি আমি, যোনি দিয়ে প্রবলভাবে ধাক্কা দিচ্ছি তার পুরুষাঙ্গে, মাংসের সঙ্গে ঘষা খাচ্ছে মাংস, হাড়ের সঙ্গে হাড়, আবার রেতঃপাত হতে চলেছে আমার, ওর ও।
‘কাম অন!’
সে জানে সে কী বলছে, আমি জানি চরম মুহূর্ত উপস্থিত; আমার গোটা শরীর হঠাৎ ঢিলে হয়ে আসে— আমি আর কিছু শুনছিলাম না বা দেখছিলাম না- আমি শুধু অনুভব করছিলাম।
‘কাম অন!’
একই সঙ্গে দু’জনের হয়ে গেল। এ এগারো মিনিট নয়, এ হলো অনন্তকাল, আমরা যেন স্বর্গের বাগানে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। আমি নারী এবং পুরুষ, সে নারী এবং পুরুষ। কতক্ষণ এরকম চলছিল জানি না, তবে সবকিছু যেন নীরব হয়ে গিয়েছিল, যেন ব্রহ্মাণ্ড এবং জীবন পবিত্র, নামহীন, সময়হীন কিছুতে রূপান্তর ঘটেছে।
কিন্তু প্রত্যাবর্তন ঘটল সময়ের। তার চিৎকার শুনতে পেলাম আমি। আমিও তার সঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম।
টেবিলটা মেঝেতে ঠকঠক শব্দ তুলবে। কে কী ভাবল তা মোটেই গ্রাহ্য করছি না আমরা।
হঠাৎ আমার শরীর থেকে বিযুক্ত হলো সে, হেসে উঠল। আমি ফিরলাম তার দিকে। আমিও হেসে উঠলাম পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলাম যেন জীবনে এই প্রথম দু’জনে প্রেম করেছি।
‘আমাকে দোয়া করো,’ বলল সে।
আমি তাকে দোয়া করলাম। যদিও জানি না ঠিক কী করছি। ওকেও বললাম আমাকে দোয়া করতে। সেও করল। বলল, দোয়া করছি এই নারীকে যে অনেক ভালোবাসতে পারে।’ এত ভালো লাগল ওর কথাগুলো! আমরা আবার পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলাম। ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।
দু’জনের কেউই ক্লান্ত নই। লিভিং রুমে চলে এলাম আমরা। সে একটা রেকর্ড চালিয়ে দিল। তারপর আগুন জ্বালল ফায়ার প্লেসে, আমার জন্য খানিক ওয়াইন ঢেলে দিল। এরপর একটা বই খুলে আবৃত্তি করতে লাগল :
A time to be born, and a time to die;
A time to plant, and a time to pluck up that which
is planted;
A time to kill, and a time to heal;
A time to break down, and a time to build up;
A time to weep, and a time to laugh;
A time to mourn, and a time to dance;
A time to cast away stones, and a time to gather
stones together;
A time to embrace, and a time to refrain form
embracing;
A time to ge, and a time to lose;
A time to keep, and a time to cast away;
A time to rend, and a time to sew;
A time to keep silence, and a time to speak;
A time to love, and a time to hate;
A time of war, and a time of peace.
ওর আবৃত্তি শুনে মনে হলো এ যেন বিদায়ের কবিতা। তবে আমার জীবনের মধুরতম বিদায়।
ওকে আবার আলিঙ্গন করলাম আমি। সে-ও জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমার আগুনের পাশে, কার্পেটের ওপর শুয়ে রইলাম। তৃপ্ত এবং সন্তুষ্ট।
তুমি একটা পতিতার প্রেমে পড়লে কেন?’
‘আমি ওই সময় বুঝতে পারিনি। তবে তখন থেকে বহুবার ভেবেছি বিষয়টা নিয়ে। ভেবে দেখলাম তোমার শরীর তো আর শুধু আমি জানছি না, কাজেই তোমার আত্মা আমার জয় করতে হবে।
‘তুমি ঈর্ষান্বিত হওনি?’
‘তুমি বসন্তকে বলতে পার না : ‘তুমি এসো, যতদিন সম্ভব থাকো।’ তুমি শুধু বলতে পার ‘তুমি এসো, তোমার আশা দিয়ে আমাকে আশীর্বাদ করো এবং যতদিন পারো থাকো।’
কথাগুলো হারিয়ে গেল বাতাসে। কিন্তু আমি কথাগুলো শুনতে চাই। ওর-ও বলার প্রয়োজন আছে। আমার ঘুম আসছে। জানি না কখন ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলাম, না, কোনও মানুষ নয়, দেখলাম সুগন্ধীর মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছি আমি।
বত্রিশ
ঘুম থেকে জেগে মারিয়া দেখে খোলা জানালা দিয়ে রোদ আসছে। সে সিধে হলো, পা বাড়াল কিচেনের দিকে। কফি বানাল। হলঘরে তাকাতে চোখে পড়ল সুটকেস দুটো। সে ইচ্ছে করলে এখানে থেকে যেতে পারে। তার তো হারাবার কিছু নেই। তার কাল রাতে শোনা কবিতার দুটি ছত্র মনে পড়ল : A time to weep, and a time to laugh.
তবে এ কবিতার আরেকটি লাইন ও চমৎকার : ‘a time to embrace, and a time to refrain from embracing’
কফি বানিয়ে কিচেনের দরজা বন্ধ করল মারিয়া। ফোন করে ট্যাক্সি পাঠাতে বলল। কাপড় পরল, সুটকেস নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আশা করেছিল র্যালফ জেগে উঠবে এবং তাকে থেকে যেতে বলবে।
কিন্তু ঘুম ভাঙল না র্যালফের। বাইরে, ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে মারিয়া, এক জিপসী এগিয়ে এল হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে 1
‘নেবেন একটা?’
মারিয়া একটা তোড়া কিনল। শরৎ আসছে, গ্রীষ্ম বিদায় নিচ্ছে, ফুলগুলো তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জেনেভার ক্যাফেগুলোর বাইরের টেবিলগুলো আবার ভরে উঠবে লোকে, লোকারণ্য হয়ে উঠবে পার্ক, মানুষ যাবে সূর্য স্নানে। তবে মারিয়ার এতে কিছু এসে যায় না : সে চলে যাচ্ছে কারণ যাওয়াই মনস্থির করেছে সে এবং এজন্য আফসোসের কোনও কারণ নেই। এয়ারপোর্টে চলে এল মারিয়া, আরেক কাপ কফি পান করল, অপেক্ষা করতে লাগল প্যারিসের ফ্লাইটের জন্য। সারাক্ষণ মন আচ্ছন্ন থাকল র্যালফের চিন্তায়। হয়তো সে যে কোনও মুহূর্তে হাজির হয়ে যাবে বিমান বন্দরে। ঘুমাবার আগে মারিয়া তাকে বলেছিল কোন্ ফ্লাইটে সে যাচ্ছে। সিনেমায় সবসময় এরকম ঘটে : একেবারে শেষ মুহূর্তে নায়িকা প্লেনে চড়তে যাচ্ছে এমন সময় নায়ক ছুটে আসে তার কাছে, নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, ফিরিয়ে নিয়ে যায় তার নিজের জগতে। তারপর পর্দায় ফুটে ওঠে ‘সমাপ্ত’ কথাটি। এবং দর্শক জানতে পারে এরপর থেকে নায়ক-নায়িকা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে।
‘ছবি কখনও বলতে পারে না আগামীতে কী ঘটবে,’ ভাবল মারিয়া। নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে ও। সিনেমায় আসল সত্য কখনও দেখায় না। বাস্তব পৃথিবী শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায় সিনেমা। সিনেমা নিয়ে না ভাবাই ভালো।
মারিয়া পত্রিকা পড়তে লাগল। একে একে তিনটা পত্রিকা শেষ করল সে। অবশেষে তার ফ্লাইটের কথা ঘোষণা করা হলো। প্লেনে উঠে পড়ল মারিয়া। যখন সীটবেল্ট বাঁধছে তখনও নায়কের আগমনের কথা কল্পনা করছিল ও। ভাবছিল এখন ওর কাঁধে হাত পড়বে, সে ঘুরে দেখবে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে র্যালফ।
কিন্তু কিছুই ঘটল না।
জেনেভা থেকে প্যারিসে যাবার স্বল্প দূরত্বটুকু বিমানে বসে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল মারিয়া। বাড়ি ফিরে কী বলবে ঠিক করেনি এখনও। তবে ওর বাবা নিশ্চয় মেয়েকে ফিরে আসতে দেখে খুশি হবেন।
প্লেন অবতরণ করার সময় ঝাঁকি খেয়ে ঘুম ভেঙে গেল মারিয়ার অনেকক্ষণ ধরে রানওয়েতে গড়াল বিমান। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট মারিয়াকে এসে বলল ওকে টার্মিনাল বদলাতে হবে। কারণ ব্রাজিলগামী প্লেন ছাড়বে টার্মিনাল ‘F’ থেকে, মারিয়া আছে টার্মিনাল ‘C’ তে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই : দেরি হবে না বিমান ছাড়তে, মারিয়ার হাতে সময়ও থাকছে প্রচুর। মারিয়া যদি গন্তব্যে যেতে না পারে, গ্রাউন্ড স্টাফ তাকে চিনিয়ে দেবে রাস্তা।
মারিয়া ভাবল একটা দিন সে প্যারিসে কাটিয়ে দেবে কিনা। কয়েকটা ছবি তুলবে। লোকজনকে বলতে পারবে সে প্যারিসেও গিয়েছে। তবে চিন্তা করার জন্য সময় দরকার ওর, একা থাকা দরকার, গত রাতের স্মৃতি মনের গভীরে পুঁতে রাখবে মারিয়া যাতে যখন ইচ্ছা জাগিয়ে তোলা যায় স্মৃতিগুলোকে। হ্যাঁ, একটা দিন প্যারিসে থাকলে মন্দ হয় না। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে জিজ্ঞেস করল ব্রাজিলের পরবর্তী ফ্লাইট কখন।
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট মারিয়ার টিকেট দেখতে চাইল। বলল ওর যাত্রা বিরতি করার কোনও অবকাশ নেই। মারিয়া নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিল একাকী এত সুন্দর শহর দেখতে গেলে বরং হতাশই হবে সে।
প্লেন থেকে নামল মারিয়া। গেল সিকিউরিটি চেকিংয়ে। তার লাগেজ সরাসরি পরের প্লেনে চলে যাবে। কাজেই জিনিসপত্র নিয়ে চিন্তা করতে হবে না মারিয়াকে।
খুলে গেল দরজা। বেরিয়ে এল যাত্রীরা। কোলাকুলি করল তাদের পরিবারের সঙ্গে। মারিয়া দৃশ্যটা না দেখার ভান করল যদিও ভেতরে একাকীত্ব বোধটা ঠিকই জেগে উঠছে।
‘প্যারিস সব সময় আমাদেরই থাকবে।
পেছন থেকে ভেসে এল একটা কণ্ঠ। এ কণ্ঠ ট্যুরিস্ট গাইড কিংবা ট্যাক্সি ড্রাইভারের নয়। গলাটা শুনে কেঁপে গেল মারিয়ার পা।
‘প্যারিস সবসময় আমাদেরই থাকবে?
‘এটা আমার প্রিয় একটি ছবির উদ্ধৃতি। তুমি আইফেল টাওয়ার দেখবে?’
ও, হ্যাঁ, অবশ্যই দেখবে মারিয়া। র্যালফের হাতে একগুচ্ছ গোলাপ, চোখে জ্বলজ্বল করছে আলো, যে আলো প্রথম দিন দেখেছিল মারিয়া, যখন ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে বাইরে বসিয়ে ওর ছবি আঁকছিল র্যালফ।
‘তুমি এখানে এলে কী করে?’ জিজ্ঞেস করল মারিয়া। নিজের বিস্ময় ও আনন্দটুকু গোপন করল না। জবাবের প্রত্যাশাও সে করে না। তার এখন শুধু দরকার নিশ্বাস নেয়ার জায়গা।
‘জেনেভা এয়ারপোর্টে দেখলাম পত্রিকা পড়ছ। তোমার কাছে আসতে পারতাম। কিন্তু আমি আসলে তটা রোমান্টিক নই। ভাবলাম প্যারিস যাবার নেক্সট শাটল ট্রেনটা ধরি। এখানে ঘণ্টা তিনেক ঘুরে বেরিয়েছি, বারবার অ্যারাইভাল স্ক্রিনে তাকিয়েছি কখন তোমার প্লেন আসবে, কিছু ফুল কিনলাম, ‘ক্যাসাব্লান্ধা’ ছবিতে রিক তার প্রেমিকাকে যা বলেছিল তোমাকে তা-ই বলব ভাবলাম। এবং তোমার চেহারায় ফুটে উঠুক চাইলাম নিখাদ বিস্ময়। আমি নিশ্চিত তুমি এমনটাই আশা করেছিলে, আমাকে প্রত্যাশা করছিলে। সিনেমার মতো আমরাও রোমান্টিক হতে পারি, কী বলো?’
কী বলবে ভেবে পেল না মারিয়া। ভাবল কপালে যা-ই লেখা থাকুক, আবার সে ঝুঁকিটা নেবে।
মারিয়া চুমু খেল র্যালফকে, সিনেমা পর্দায় ‘সমাপ্ত’ লেখার পরে কী ঘটে তা এখন তার কাছে অর্থহীন।
তবে, কেউ যদি কখনও মারিয়ার গল্প বলতে চায় সে অনুরোধ করবে শুরুটা যেন হয় রূপকথার গল্পের মতো :
এক দেশে ছিল এক….
* * *
সমাপ্ত
.
ইলেভেন মিনিটস সম্পর্কে পাঠক-প্রতিক্রিয়া
পাওলো কোয়েলহো’র বইগুলো সারা বিশ্বে পেয়েছে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা। তাঁর বই চল্লিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘ইলেভেন মিনিটস’ও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বই সম্পর্কে তাঁর ভক্ত-পাঠকরা নানান প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এখানে ইন্টারনেট থেকে পাওয়া বাছাইকৃত কিছু পাঠক-প্রতিক্রিয়া ছাপা হলো।
এ বই পড়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে!
— জাভা
.
হাই… এই প্রথম বই সমালোচনার মত কঠিন একটি কাজ করছি আমি। আমি জানি বিশ্লেষণের জন্য সৃজনশীলতা দরকার, যা আমার নেই… তবু লেখার চেষ্টা করছি… ইলেভেন মিনিটস পড়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে! দারুণ!
পড়তে খুব মজা লাগল
–কোজিন
.
শুরুটা তেমন ভালো লাগেনি… বরং বিরক্তিকরই মনে হয়েছে। হয়তো আপনার বইটা ছুঁড়ে ফেলতেই ইচ্ছে করবে… কিন্তু মূল চরিত্র যখন পতিতাবৃত্তিতে প্রবেশ করে, গল্পে শুরু হয়ে যায় চমক। তখন পড়তে খুব মজা লাগে… দ্য আলকেমিস্ট-এর মতই মজার বই এটা।
আমার বান্ধবীর জন্য…
–ডাক্লানফ
.
আমার বান্ধবী এ বইটি আমাকে পড়তে বলেছিল। প্রাপ্ত- বয়স্কদের জন্য চমৎকার একটি বই ইলেভেন মিনিটস। এক কথায় চমৎকার একটি উপন্যাস! সুপার!! যারা সেক্স আবিষ্কার করতে চায় তাদের জন্য এ বই। আমি এ লেখকের অন্যান্য বইগুলোও কিনব।
কখনও সমাপ্ত হবার নয় ইলেভেন মিনিটস
–অমিত সিনহা
.
আমার প্রিয় লেখক পাওলো কোয়েলহো। তাঁর সব বই আমি পড়েছি। ইলেভেন মিনিটস পড়ে মনে হয়েছে এ গল্প যেন কখনও শেষ হবার নয়। দারুণ!
–অর্পণ রজনী
.
পাওলোর গল্প বলার দুর্দান্ত স্টাইলটি এ বইতে খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। মারিয়া নামে এক পতিতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এ কাহিনী। সেক্স-এর পবিত্র দিকটি নিখুঁতভাবে উঠে এসেছে বইতে। তবে একে ইরোটিক বলা যাবে না। এটি একটি দারুণ বই! নিজেকে আবিষ্কার করার বই
–শ্ৰী নিধিলব
.
‘এক দেশে ছিল এক পতিতা, নাম তার মারিয়া’ গল্পের এ শুরুটাই দারুণভাবে নাড়া দেয় পাঠককে। এ যেন নিজেকে আবিষ্কার করার বই…
শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
–জোসেফ অ্যালেক্স
.
এক দেশে ছিল এক পতিতা। নাম তার মারিয়া। গল্পের শুরুটা এরকম। হ্যাঁ, এটি এক পতিতার কাহিনী। আমি ব্যাঙ্গালোর-এর এমজি রোডের ফুটপাথ থেকে বইটি কিনেছি। বইয়ের নামটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাস। কোয়েলহোর সেরা বই।
–দ্য গুড ডাক
.
আমি মনে করি ইলেভেন-মিনিটস পাওলো কোয়েলহোর সেরা বই। আমি তার আলকেমিস্ট পড়েছি। ওই বইটি ছিল দারুণ, অতুলনীয়। তাঁর ভেরোনিকা ডিসাইডস টু ডাইসহ অন্যান্য বইগুলো পড়েছি। তবে আমাকে সবচেয়ে ছুঁয়ে গেছে ইলেভেন মিনিটস। যৌনতার খোঁজে
— নিকুঞ্জস
.
পাওলো কোয়েলহোর খুব একটা ভক্ত কোনওকালেই ছিলাম না আমি। তবে গত সপ্তাহে ভ্রমণ করতে গিয়ে ইলেভিন মিনিটস-এ একদম ডুবে যাই আমি। এর আগে দ্য আলকেমিস্ট, ভেরোনিকা ডিসাইডস টু ডাই পড়েছি ভালো লাগেনি। তবে এ বইটি খুব ভালো লেগেছে।
অসাধারণ!
–ডিএস প্রবীণ
.
ইলেভেন মিনিটস পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি যেন মরুভূমির মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছি মরুদ্যানের খোঁজে। হ্যাঁ, চূড়ান্তে যখন পৌঁছাবেন, কিছু একটা পাবেন আপনি। আমার অনেকদিন লেগেছে বইটি শেষ করতে। কারণ প্রতিটি পাতা আয়েশ করে পড়েছি। এত সুন্দর লেখা… ধরলে শেষ না করে ওঠার উপায় নেই
—শিল্পা বৈদ্য
.
হাই! আমি স্যার পাওলো কোয়েলহোর একজন অন্ধ ভক্ত। সেই আলকেমিস্ট থেকে… আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি ইলেভেন মিনিটস তাঁর মাথার মুকুটে একটি সাফল্যের পালক গুঁজে দিয়েছে। মারিয়া, তার নিয়তি… স্বপ্নের রাস্তায় যাত্রা… নতুন দিকে যখন মোড় নেয় জীবন… সব মিলে এ বই ধরলে শেষ না করে ওঠার উপায় নেই। আরেকখানা মাস্টারপিস
— স্যার গেজ
.
বিখ্যাত লেখক কোয়েলহোর আরেকখানা মাস্টারপিস ইলেভেন মিনিটস। এ লেখকের হাতে জাদু আছে, আছে অসম্ভব সারল্য, তিনি এমন কিছু দিয়েছেন যাতে বিস্তৃত হয়ে ওঠে জীবন। যদিও মূল চরিত্র এক পতিতার…
বিশ্ৰী বই
–আকিলা
.
এটা একটা বই হলো? সেক্স নিয়ে বই লিখলেই তা বিরাট কিছু হয়ে যায় না। জ্যাকি কলিন্সের বইতেও প্রচুর সেক্স থাকে। কিন্তু কোয়েলহো যখন সেক্স নিয়ে লেখেন তখন তা বোল্ড হয়ে যায়!
নাহ্, ইলেভেন মিনিটস আমার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
প্রেমের যন্ত্রণাকাতর অভিজ্ঞতা
–মানসুজি
.
শনিবার সন্ধ্যায় আমি ইলেভেন মিনিটস পড়া শুরু করি। বিশ্বাস করুন, বই শেষ না করে উঠতে পারিনি। এমনই ধরে রেখেছে আমাকে! আলকেমিস্ট-এর পরে কোয়েলহো’র পড়া দ্বিতীয় বই এটা। এ যেন প্রেমের যন্ত্রণাকাতর এক অভিজ্ঞতা।
ভিন্নরকম
— ম্যানি
.
পাওলো কোয়েলহো নিঃসন্দেহে আমার প্রিয় লেখকদের একজন। আলকেমিস্ট এবং ভেরোনিকা ডিসাইডস টু ডাই’র পরে ইলেভেন মিনিটস একেবারেই ভিন্নরকম একটি উপন্যাস মনে হয়েছে আমার কাছে।
নারীমন বুঝেছেন কোয়েলহো
–অ্যানোথেরিডা
.
নারীমন চমৎকার বুঝতে পারেন পাওলো কোয়েলহো। ইলেভেন মিনিটস তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নারীদের কোয়েলহোর চেয়ে কেউ ভালো বুঝতে পারেন না। যেন মেয়েদের মনের মধ্যে বাস করেছেন তিনি! সাহসী অনুসন্ধান
— বীরাত্মাচন্দ
.
এক সাবেক পতিতার সত্যি জীবন কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে ইলেভেন মিনিটস-এর গল্প। এক নিস্পাপ কিশোরীকে নিয়ে গল্পের শুরু। মেয়েটি সফল সম্পর্ক অনুসন্ধান করে। কোয়েলহো সাহসিকতার সঙ্গে এই অনুসন্ধান করেছেন।
ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা
–ঋতু
.
পাওলো কোয়েলহোর ভক্তদের তাঁর লেটেস্ট বই ইলেভেন মিনিটস ভিন্নরকম একটি অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। দারুণ লিখেছেন লেখক, সব ধরণের কোয়ালিটি থাকে বলেই তিনি এত বিখ্যাত। অভিভূত হইনি
—জিন্দাল
.
আমি ইন্ডিয়া টুডে বুক ক্লাব-এর সদস্য। এ ক্লাবের মাসিক বই সমালোচনায় সম্পাদক ইলেভেন মিনিটস-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাই আগ্রহ নিয়ে বইটি কিনি আমি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোয়েলহো আমাকে অভিভূত করতে পারেন নি।
শক্তিশালি উপন্যাস
–নিধি
.
বর্তমান বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় লেখক পাওলো কোয়েলহো। তাঁর ইলেভেন মিনিটস নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালি উপন্যাস। সাহসী একটি বিষয় নিয়ে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেছেন-সেক্স! এ বইতে তিনি সেক্সের নানান দিক নিপুণ দক্ষতায় তুলে এনেছেন।
এক অন্যরকম অনুভূতি—যৌনতার পবিত্রতা!পড়তে ভীষণ ভাল লাগল।