ইন্দ্ৰলুপ্ত
(আবু সাঈদ আইয়ুবকে)
ঘরের দাওয়ায়, তেঁতুলের ছাওয়ায়, মাঠের হাওয়ায়
খাওয়া-দাওয়ায়
শান্তি নেই, গরমেরও ক্লান্তি নেই।
সবুজ ঘাস হল হলদে, তারপর ফিকে।
দস্যি কাল-বোশেখী বাঁশের বনে ত্রিবিক্রমে বিক্রমে
তাদের কোমর ভেঙে নামল মাঠে।
লাথি মেরে বেঁটিয়ে নিয়ে গেল তার শুকনো শেকড়
বেরিয়ে পড়ল শুভ্ৰ, উন্ম, নগ্ন মৃত্তিকা।
মাঠের টাক–
আমার টাকের মতো।
কলনের ঘন বনে
নিদাঘের তপ্ত কাফে কোণে
তুমি বসে আনমনে
—আমার চুলের ঘুঙুর তোমার নাচাল নয়ন নীল
কালোকে নীলোতে নাৎসি হারাতে পেল কি গোপন মিল?–
রাইনের ওয়াইনের মৃদু গন্ধ,
একচোখা রেডিয়োটা করে কটমট
ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘ফ্রল্যান, Gruless Gott!
বেতারের সুরাটা টাঙ্গো না ফক্স-স্ট্রট?’
চট করে চটে যাও পাছে!
তুমি রূপসিনী বন্দিনী
নরদেশী নন্দিনী।
তোমার প্রেম এল যে
শ্রাবণের বর্ষণের ধারা নিয়ে
চারদিকে টেনে দিয়ে
ঘনকৃষ্ণ সজল যামিনী যাননিকা।
সে বিরাট বিলুপ্তির বিস্মরণে
শুধু আমার চেতনার ছয় ঋতু
আর তোমার চেতনার চার ঋতুর বিজড়িত নিবিড় স্পৰ্শ–
লাল ঠোঁট দিয়া বঁধূয়া আমার
পড়িল মন্ত্র কাল
দেহলি রুধিয়া হিয়ারে বান্ধিল
পাতিয়া দেহের জাল।
মুখে মুখ দিয়া হিয়ায় হিয়ায়
পরশে পরশে রাখি
বাহু বাহুপাশে ঘন ঘন শ্বাসে
দেহে দেহ দিল ঢাকি।
হঠাৎ দামিনী ধমকালো
বিদ্যুৎ চমকালো
দেখি, নীল চোখ
কাতরে শুধাই একি
তোমার নয়নে দেখি,
তোমার দেশের নীলাভ আকাশ
মায়া রচিছে কি?
তোমার বক্ষতলে
আমার দেশের শ্বেতপদ্ম কি
ফুটিল লক্ষ দলে?
রাত পোহালি। বর্ষণ থেমেছে।
কিন্তু কোথায় শরতের শান্তি, হেমন্তের পূর্ণতা?
ঋতুচক্ৰ গেল উলটে–
যমুনার জলও একদিন উজান বয়েছিল।–
কোন ঝড় তোমাকে নিয়ে গেল ছিনিয়ে
কোন ঝড় আমাকে নিয়ে গেল ঝেঁটিয়ে?
বেরিয়ে এল মাঠের টাক,
আমার টাকা।
আমার জীবনে ইন্দু লুপ্ত
আমার কপালে ইন্দ্রলুপ্ত।।