ইন্টারভ্যু

ইন্টারভ্যু

‘ইন্টারভ্যু’ নামক চরম বেইজ্জতির মস্করা যে কত নব নব রূপে প্রকাশিত হয় তার বর্ণনা আরেক দিন দেব। ‘দেশে’ এই মর্মে একাধিক চিঠি বেরিয়েছে, এবং আগে-ভাগে কাকে চাকরি দেওয়া হবে সেটা ঠিক করে নিয়ে যে চোট্টামির ইন্টারভ্যু-প্রহসন করা হয় তারও বর্ণনা এ চিঠিগুলোতে ও আমার সতীর্থের মূল প্রবন্ধে আছে। তবে এ বাবদে শেষ কথা বলেছে আমার এক তুখোড় তালেবর ভাগিনা। ডাঙর নোকরি করে, ঢাউস যা গাড়ি ব্যাঙ্ক দিয়েছে তার ভিতর। এক পক্ষে মা-সহ তার তিন মাসী, অন্য পক্ষে তার তিন মামী রীতিমতো ব্যূহ নির্মাণ করে কাশ্মির-শিয়ালকোট-কচ্ছের রনের(১) রণমোহড়া দিতে পারেন (বলা বাহুল্য মামীরাই হারেন, কারণ তাঁরা এসেছেন তিন ভিন্ন ভিন্ন পরিবার থেকে)। ভাগিনাটিকে প্রায়ই ইন্টারভ্যু নিতে হয়– অর্থাৎ সিটস অন দি রাইট সাইড অব দি টেবল। একদিন বেজায় উত্তেজিত হয়ে সে আমাকে একটি কর্ম-খালির বিজ্ঞাপন পড়ে শোনালে। তাতে ওমেদারের বয়স কত হবে, কী কী পাস থাকা চাই, এপেনডিকসের দৈর্ঘ্য তার কতখানি হবে, তার পরিবারে নিদেন কটা খুন হয়ে থাকা চাই ইত্যাদি বেবাক বাৎ ছিল। ভাগিনা তার পর ভ্রুকুঞ্চিত করে খানিকক্ষণ খুঁত খুঁত করে বললে, ‘খাইছে! ফোডোগেরাপ দ্যাওনের বাৎ বেবাক ভুল্যা গ্যাছে। হুইডার তলায় লেখা থাগব, “None need apply whose appearance does not resemble the above photograph.” কী কন, মামু?’ আমি আর কী বলব? এটা করলে তো অত্যন্ত সাধু জনোচিত আচরণ হত। এর চেয়ে ঢের নাস্টি (ইচ্ছে করে ন্যাষ্টি উচ্চারণ করতে, সে উচ্চারণে ঘেন্নাটার খোলতাই হয় বেশি যেমন ‘পিশাচ’ বা ‘পিচাশ’ না বলে সর্বোৎকৃষ্ট হয় ‘পিচেশ’ বললে!) উদাহরণ আমি এটা জানি।

ফার্সির লেকচারার নেওয়া হবে। আমাকে স্পেশালিস্ট হয়ে যেতে হবে। আমি বেকসুর না-মঞ্জর করে দিলুম। যদিও চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে মনে হল না, এর ভেতরে কোনও নষ্টামি আছে। তবু, আমি এই ‘জামাই ঠকানো’র– সুনন্দের ভাষায়– ফিকিরি-মস্করার হিস্যেদার হতে চাইনে। দু দিন পর মৌলানা আজাদ ফোন করে জানতে চাইলেন, আমি যেতে আপত্তি করছি কেন? তখন বুঝলুম, উনিই আমার নাম স্পেশালিস্ট রূপে প্রস্তাব করেছিলেন এবং এখন আমি সেটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃত হচ্ছি বলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে সেটা জানিয়ে ফরিয়াদ করেছেন–। মৌলানার পাণ্ডিত্যের প্রতি আমার অসাধারণ শ্রদ্ধা ছিল। তাই কাঁচুমাচু হয়ে এই ইন্টারভ্যু বাবদে পরীক্ষক হিসেবেই, আমার পূর্ব পূর্ব নোংরা (ন্যাষ্টি!) তজরুবা-অভিজ্ঞতা জানালুম। দেখি, মৌলানা সমুচাহ্ ওয়াকিফ-হাল! কোনও প্রকারের তর্কাতর্কি না করে বললেন, আপনি গেলে ওরা সোজা পথে চলবে। যদি অন্যায় আচরণ দেখেন, আমাকে জানাবেন। ইন্টারভ্যুতে যেসব অনাচার হয় তার কোনও বিচার নেই বলে, আমি টেবিলের কি এদিকে কি ওদিকে কোনও দিকে বসতে চাইনে (পেত্যয় না। পেলে শ্রীযুক্ত কালিদাস ভশ্চাযকে শুধোন!); কিন্তু এক্ষেত্রে মৌলানা আমার কাছ থেকে অনাচার-সংবাদ পেলে যে ওদের কান মলে দেবেন সেই ভরসায় গেলুম।

আমার সঙ্গে আরেকটি স্পেশালিস্ট ছিলেন। বাকিরা পাকা মেম্বার। তাদের একমাত্র কামনা, কাম খতম করে বাড়ি ফেরার। বিশেষত ‘লেড়ে’র ব্যাপার– চাকরিটা মিম্বরুল্লা পেল, না মৃদম খান পেল সে নিয়ে তাদের ‘মাতাব্যাতা’ হবে কেন, ছাই!

তবু ভদ্রতার খাতিরে তাঁরা দু-একটি প্রশ্ন শুধোলেন। সে ভারি মজা। যেমন ‘আপনার মাদ্রাসায় ইংরেজিও পড়ানো হত?’– কথাবার্তা অবশ্য আংরেজিতেই হচ্ছে। কারণ প্রশ্নকর্তারা ফারসি ও ফরাসির তফাৎ জানেন না।

‘জী, হ্যাঁ।’

‘কী পড়েছেন?’

‘জী রাসকিনের “সিসেম অ্যান্ড লিলিজ”, মিলটনের “এরিয়োপেজি—”

 ‘শেকসপিয়র?’

‘জী।’

‘কী?’

‘হ্যামলেট’।

এবারে প্রশ্নকর্তা দারুণ উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘বাব্বা, বাব্বা! বেশ, বেশ। সুপ্রস্তাব!’

তার পর তিনি সোৎসাহে আরম্ভ করলেন, হ্যামলেটের আত্ম-আর্তনাদ– সলিলকি– “To be or not to be” তাকিয়ে আছেন কিন্তু আমার দিকে, ওমেদারের দিকে না– আমার অপরাধ? ইংরেজি খবরের কাগজেও একটা অত্যন্ত বেকার খবর বেরিয়েছে, আমার কী একটা বই কী যেন একটা প্রাইজ পেয়েছে, এবং স্বয়ং রাষ্ট্রপতি নাকি আমাকে প্রাইজটি দেবেন স্বহস্তে! আমাকেই ইমপ্রেস করা তখন তাঁর জীবন্মৃত্যুর চরম কাম্য–বলা তো যায় না, এখন থেকেই যদি রীতিমতো আমাকে তোয়াজ করে ইমপ্রেস করা যায় তবে আমি হয়তো প্রাইজ নেবার সময় কানে কানে রাষ্ট্রপতিকে বলে দেব, ‘হুঁজুরের আন্ডার-সেক্রেটারি অনন্তভূত-পরাশরলিঙ্গমকে এখন একটি প্রমোশন দেওয়া উচিতস্য উচিত!’ অবশ্য সেটা সেরকম মোকা নয়। কিন্তু বলা তো যায় না– যদি হয়েই যায়। নেপোলিয়ন (আজকালকার ‘জ্ঞানী’রা যাকে নাপোলেও বলেন, যেন আমাদের মতো সে-যুগের রাম-পন্টকরা খাঁটি উচ্চারণ জানত না বলে বাংলাতে তদনুযায়ী সঠিক বানান লিখতে পারেনি!) বলেছেন, অসম্ভব বলে কিছুই নেই। নিশ্চয়ই তিনি জানতেন, কখন কীভাবে কাকে লুব্রিকেট– তেলাতে হয়!

তা সে যাই হোক, আমাকে ন’সিকে ইমপ্রেস করে হকচকিয়ে দেবার পর ওমেদারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বাকিটা কও কী? “Or to take arms against a sea of-” বাকিটা বলে যাও তো?’

কালো চামড়ার তৈরি সর্বোৎকৃষ্ট স্প্রিং-সম্বলিত, পঞ্চাধিক ক্যুশনবিজড়িত গভীর আরামকেদারার তলা থেকে তিনি হাস্যরসের তুফানে ওঠা-নাবা করতে করতে বার বার বলেন, ‘তার পর কী, go on! ইউ সেড ইউভ রেড হ্যামলেট against a sea of troubles– আরও সাহায্য করলুম তোমাকে। বাকিটা বলে যাও!’ আবার তিনি সোফাতে বৃন্দাবনের রসরাজসুলভ হিন্দোল-দোলে দুলতে লাগলেন।

আমি তাজ্জব! বেচারি ওমেদার এসেছে ফার্সি ভাষায় মেস্টারির চেষ্টায়। আঁ পাসাঁ, বেচারি একটুখানি ইংরেজি শিখেছিল বটে, কিন্তু সেইটেই তার ফর for, সেইটেই তার piece de resistance, সেইটেই তার বলতে গেলে, কিছুই নয়– ইংরেজির মাধ্যমে ফার্সি পড়াতে গেলে যতখানি ইংরেজি জানবার প্রয়োজন তার চেয়েও সে বেশি জানে সেটা তো ইতোমধ্যে তার কথাবার্তাতেই প্রমাণ হয়ে গেছে। তা সে যাকগে। ওমেদার বেচারি তো ঘেমে-নেমে ঢোল। আমি তখন তার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললুম, ‘ওরকম নার্ভাস হবেন না। আপনি কতখানি ইংরেজি জানেন না-জানেন তার গুরুত্ব সামান্যই। ওটা আপনি ভুলে যান। এবারে চলুন ফার্সিতে। সেইটে কিন্তু আসল। ওই যে আপনার সামনে ফার্সি বই কয়েকখানি রয়েছে তারই যে কোনও একখানা থেকে কয়েক লাইন পড়ুন– প্রথম আপন মনে চুপে চুপে, পরে আমাদের শুনিয়ে। অনুবাদ? না, না, অনুবাদ করতে হবে না। আপনার পড়ার থেকেই তো বুঝে যাব, আপনি ফার্সি বোঝেন কি না। আর যেটা পড়বেন তার দু-একটা শব্দ আপনার জানা না থাকলে কোনও ক্ষতি নেই। সবাই কি আর সব ফার্সি শব্দ জানে? তা হলে দুনিয়াতে অভিধান লিখত কে, পড়ত কে? তা সে যাক। আমার আর কোনও প্রশ্ন-ট্রশ্ন নেই।’

এবারে ছেলেটার– হ্যাঁ, আমার ছেলের বয়সী– মুখে শুকনো হাসি ফুটল; একটুখানি ভর্সা পেয়েছে। সেই হ্যামলেটওলা লোকটিও আসলে কিন্তু মানুষ ভালো। পাঁচটা কুশন দুলিয়ে ঠাঠা করে হেসে উঠলেন। বললেন– তাঁরই হ্যামলেটের স্মরণে ‘জন্টিস্ ডিলেড হয়নি। হা হা, হা হা।’

ছেলেটি সুন্দর উচ্চারণে গড় গড় করে ফার্সি পড়ে গেল। কাশ্মিরি ব্রাহ্মণসন্তান; এবং পরে দেখা গেল, আরও হিন্দু ওমেদার ছিল। ফার্সি আবহাওয়াতে আপন ঠাকুন্দার কাছে লেখাপড়া শিখেছে। চেয়ারম্যান বললেন, ‘আপনি এখন যেতে পারেন!’ ছেলেটি সবাইকে মুসলমানি কায়দায় সেলাম জানালে, আমার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার একটু শুকনো হাসি হাসতে গিয়ে থেমে গেল– কী জানি ওটা ঠিক হবে কি না, যদি ওতে করে নম্বর কাটা যায়। আমি মনে মনে বললুম’ মারো ঝাড়ু, স্লা নোকরি ওর উসকি ইন্টারভ্যু পর।

উঁহু! এটা শেষ নয়, এটা আরম্ভ মাত্র। ছেলেটির সেলামপর্ব শেষ হওয়ার পূর্বে আমার সঙ্গে দ্বিতীয় স্পেশালিস্টটি বললেন, ‘একটু বসুন’–এবং সঙ্গে সঙ্গে আপন পকেট থেকে একটি চিরকুট বের করে তার হাতে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’।

হায় বেচারা ক্যান্ডিডেট! ভেবেছিল তার গব্বযন্তনা শেষ হল। এখন এ আবার কী ফাঁসি! বেচারি পর্চাখানির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। স্পেশালিস্ট দশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর গুতোচ্ছেন, ‘পড়ুন। পড়ছেন না কেন?’ ছেলেটি হোঁচট ঠোকর খেতে খেতে খানিকটা পড়ল। স্পেশালিস্ট বললেন, ‘অনুবাদ করুন।’ রাম পাঁঠা! পড়ার কায়দা থেকেই তো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে পাঠ্যবস্তু তার এলেমের বাইরে, তবে স্যাডিস্টের মতো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা কেন।

ছেলেটা নড়বড়ে পায়ে বেরিয়ে গেল।

আমি পৰ্চাটির জন্য স্পেশালিস্টের দিকে হাত বাড়ালুম। তিনি ‘কুছ নহি, কুছ নহি’ বলে সেটি পকেটে পুরে নিলেন। দুসরা ক্যান্ডিডেট এল। এবারে হ্যামলেটের বদলে গ্রে’র কবিতা। সর্বশেষে আবার ওই অভিনয় সেই পর্চা নিয়ে। আমি স্পেশালিস্টের উদ্দেশে মনে মনে বললুম, ‘তুমি ব্যাটা খোট্টা মুসলমান, আম্মো হালা বাঙাল পাঁতি ল্যাড়ে! দেখাচ্ছি তোমাকে।’ এবারে ক্যান্ডিডেট পর্চাটি যেই ফেরত দিতে যাচ্ছে অমনি, তৈরি ছিলুম বলে, আমি সেটা নিয়ে নিলুম। ওমা! যত পড়ি, আগা-পাস্তালা ঘুরিয়ে দেখি, ততই কোনও মানে ওৎরায় না। ইতোমধ্যে আরেক ওমেদার এসে গেছে এবং চসার না পৌন্ড কী যেন আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। আমার দৃষ্টি ওই পর্চাটির দিকে নিবদ্ধ।

ইয়াল্লা! অব্‌ সমঝলন বা। যে দু লাইন কবিতা ছিল সেটা অনেকটা আমাদের

হরির উপরে হরি
হরি বসে তায়
হরিকে দেখিয়া হরি
হরিতে লুকায়!

‘হরি’ শব্দের কটা মানে হয়, আমি সত্যই জানিনে– কান ছুঁয়ে বলছি। কিন্তু ছিঃ। কারও বাংলা জ্ঞানের পরীক্ষা যদি নিতান্তই নিতে হয় তবে এই ধরনের ‘জামাই-ঠকানো’ কবিতাই কি ন্যায্যতম, প্রশস্ততম!!

কিন্তু এহ বাহ্য।

পরে, অন্তত আমি বুঝতে পারলুম দই খাচ্ছেন কোন রমাকান্ত আর বিকার হচ্ছে কোন গোবদ্দনের।

দু-একটি পাকা মেম্বরও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ব্যাপারটা কী। লেখাপড়ায় এক-একটি আস্ত বিদ্যাসাগর বলেই ওঁদের নাসিকায় থাকে সারমেয়বিনিন্দিত গন্ধসন্ধানী অন্ধিসন্ধি।

ক্যান্ডিডেটের পরে ক্যান্ডিডেট– কেউ ভালো, কেউ মন্দ, কেউ মাঝারি, সংসারে যা হয়–ইন্টারভ্যু স্বয়ংবরে আমাদের মতো ইন্দুমতীর সামনে স্বপ্রকাশ হলেন। কিন্তু সবাই মার খেলেন, ওই পর্চাটুকুর সামনে, ওই চিরকুটটি সব্বাইকার ওয়াটারলু।

ইতোমধ্যে কী আশ্চর্য, কী তিলিস্মাৎ– একটি ওমেদার পর্চাটি পাওয়া মাত্রই সেটি গড়গড়িয়ে পড়ে গেল, আদ্যন্ত! যেন তার প্রিয়ার আড়াইশ’ নম্বরি প্রেমপত্র।

***

ইন্টারভ্যু শেষে লাঞ্চ। সরকারি লাঞ্চকে আমি বলি লাঞ্ছনা। অবশ্য সর্বোচ্চ মহলে নয়। সেখানে লাঞ্চের অজুহাতে আপনার জন্য পেলেটে করে রোলস-রইস গাড়ি আসতে পারে তন্বঙ্গী পরী-পয়করী চালিতা। ড্রাইভারিণীটি ফাউ, থ্রোন ইন্ ফর গুড মেঝার!

পালাবার চেষ্টা করার সময় ধরা পড়লুম সেই পঞ্চ-কুশন-মর্দন মহাজনের হাতে! বললেন, ‘হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ, আপনাদের ওই স্পেশালিস্টটি আপন ওমেদারকে একটু ভালো করে রিহার্সেল করালেন না কেন? ও যদি সাতবার ঢোঁক গিলত, এগারোবার হোঁচট খেয়ে খেয়ে চিরকুটটির কবিতা পড়ত, তবে হয়তো, আমাদেরও বিশ্বাস জন্মত, সে ওই কবিতাটি ইতোপূর্বে কখনও দেখেনি।’
 ৩০।১০৬৫

———- ১. আমার যদ্দুর জানা, কচ্ছবাসীরা জায়গাটার নাম কচ্ছি বা গুজরাতি বা কাঠিয়াওয়াড়িতে বানান করে কচ্ছের ‘রন’—‘রান’ বা ‘রাণ’ নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *