ইগড্রাসিল ও নয় দুনিয়া

ইগড্রাসিল ও নয় দুনিয়া

গাছেদের মধ্যে সর্ববৃহৎ, সবচেয়ে নিখুঁত ও সুন্দর এশ গাছ ইগড্রাসিল। এটি নয় দুনিয়ার মাঝখানে বেড়ে উঠেছে। নয় দুনিয়াকে একটির সাথে অন্যটিকে যুক্ত করেছে। ইগড্রাসিলের মগডাল আকাশের ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত। ইগড্রাসিলকে বলা হয় বিশ্ববৃক্ষ।

এটি এতই বড় যে, এর শিকড় তিনটি দুনিয়ার সাথে যুক্ত আছে, তিনটি ঝরনা থেকে গাছটি পুষ্টি পায়

সবচেয়ে গভীর মূলটি পৌঁছেছে পাতালে, নিলহাইমে, অন্য সকল দুনিয়া থেকে প্রাচীন সেই পাতাললোক। পাতাল লোকের মাঝখানে আছে সদা বহমান আর ক্রুদ্ধ কেটলির মতো শব্দ করা এক ঝরনা, নাম তার হেভেলগেলমির। এই পানিতে বাস করে নিদহগ নামের এক ভয়ানক ড্রাগন।

মূলের দ্বিতীয় শাখাটি গেছে তুষার দানবদের দুনিয়ায়, যেখানে আছে মিমিরের ঝরনা।

বিশ্ববৃক্ষ ইগড্রাসিলের মগডালে বসে অপেক্ষায় আছে এক বিশালাকৃতির ঈগল, যে অনেক গোপন কথা জানে। ঈগলের দুই চোখের মাঝখানে বাস করে একটি চিল।

বিশ্ববৃক্ষের ডালে বাস করে বাটাটস্ক নামের কাঠবিড়াল। সে গোরখাদক ড্রাগন নিদহগ আর ঈগলের মাঝে বার্তা আর গুজব আদান প্রদান করে। কাঠবিড়াল দুজনের কাছেই মিথ্যা বলে আর তাদের রাগিয়ে মজা পায়।

ইগড্রাসিলের সুবৃহৎ ডালে বাস করে চারটি হরিণ, যারা গাছের পাতা আর ছাল- বাকল খেয়ে বেঁচে থাকে। গাছের গোড়ায় বাস করে অসংখ্য বিষাক্ত সাপ, যারা সর্বদা গাছের মূলে ছোবল মেরে যাচ্ছে।

বিশ্ববৃক্ষতে চড়া সম্ভব। এই বৃক্ষ হতেই ওডিন নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন।

দেবতারা বিশ্ববৃক্ষে চড়েন না। তারা বাইফ্রস্ট নামের রংধনু সেতুতে করে নয় দুনিয়ার মাঝে ভ্রমণ করেন। শুধুমাত্র দেবতারাই রংধনুতে ভ্রমণ করতে পারেন। যদি কোনো তুষার দানব বা ট্রোল রংধনুতে চড়ে এসগার্ডে আসতে চায়, তাদের পা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নয়টি দুনিয়া আছে-

‘এসগার্ড’, এসিরদের দুনিয়া, যেখানে ওডিন বাস করেন।

‘এলফহাইম’-এ শুভ্র এলফরা বাস করে। শুভ্র এলফরা সূর্য আর তারাদের মতো সুন্দর হয়।

‘নিদাভেলির’-এ বামনদের বসবাস। তাদের কৃষ্ণ এলফও বলা হয়। তারা পাহাড়ের গভীরে বাস করে আর চমৎকার সব বস্তু তৈরি করতে পারে।

‘মিডগার্ড’ মানুষের দুনিয়া, যেখানে আমরা বাস করি।

‘যতুনহাইম-এ বাস তুষার দানব আর পাহাড়ি দানবদের।

‘ভানাহাইম’ ভানিরদের বসবাসের দুনিয়া। ভানিরেরাও দেবতা এবং তারা এসগার্ডের এসির দেবতাদের সাথে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ। অনেক ভানির দেবতা এসগার্ডেও বাস করে।

‘নিলহাইম’ অন্ধকার কুয়াশার জগত।

‘মাসপেল’ আগুনের দুনিয়া, যেখানে সুরটার অপেক্ষায় আছে।

আর আছে ‘হেল’ যেখানে মৃতরা যায়। যারা যুদ্ধে বীরের মৃত্যু লাভ করেনি, তারা হেলের বাসিন্দা হয়।

বিশ্ববৃক্ষ ইগড্রাসিলের মূলের শেষ শাখাটি গেছে দেবতাদের দুনিয়া এসগার্ডের এক ঝরনায়, যেখানে এসির দেবতারা প্রতিদিন সভা করে। দুনিয়ার শেষ দিনগুলোতে এখানেই দেবতারা মিলিত হবে আর রাগনারকের শেষ যুদ্ধের জন্য রওনা হবে। এই ঝরনাকে বলা হয় উর্দের ঝরনা।

তিন জ্ঞানী বোন ঝরনাটি দেখভাল করে, তাদের বলা হয় নর্ন। তারা বিশ্ববৃক্ষের মূলগুলোকে কাদা দিয়ে ঢেকে রাখে আর যত্ন করে। তিন বোনের এক বোনের নাম উর্দু, যে তোমার অতীত, তার সাথে থাকে আরেক বোন ভারদান্দি, যে তোমার বর্তমান, আছে আরেক বোন স্কুল্ড, যে তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তোমার জীবনে কী ঘটবে, সেটা নর্নরা নির্ধারণ করে।

এই তিন নর্ন বোন ছাড়াও আরো নর্ন আছে। দানব নর্ন আর এলফ নর্ন, বামন নর্ন আর ভানির নর্ন, ভালো আর খারাপ নর্ন। কিছু নর্ন মানুষকে ভালো জীবন দেয়, কেউ দেয় কঠিন জীবন, কেউবা দেয় স্বল্প বা জটিল জীবন।

নর্নরা উর্দের ঝরনায় বসে তোমার ভাগ্যকে নির্ধারণ করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *