৪.
বাইরে ভোর হয়ে আসছিল। নার্সিং হোমের ওয়েটিং রুমে বসেছিল ওরা। শিখা, ফুচি, প্রদীপ, অন্যরা। দীপু ভেতরে ছিল ডাক্তারদের সঙ্গে। মেজ বৌ ছিল বাড়িতে, বাচ্চাদের আগলাতে।
ডাক্তার ব্যানার্জি এসে শিখাকে ডাকলেন।
ডাক্তার ব্যানার্জি ভণিতা না করেই বললেন, উই আর সরি। ইট ওয়াজ আ কেস অব পয়জনিং। পুরো চিকিৎসাই তো প্রথমে অন্য রকম হয়েছিল। দেরিও হয়ে গেছিল…
এখন আর কোনো কষ্টই নেই মিষ্টির।
সুধীনবাবু গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সুধীনবাবুর খুব কষ্ট হতে লাগল। কষ্টের মধ্যেই যেন হঠাৎ মনে হলো, ঘরময়, বাড়িময় তাঁর মস্তিষ্কময়ই ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে।
উনি দেখলেন, তাঁর ছেলেমেয়ে বৌমারা সকলেই ইঁদুর। তেমনই দৌড়াদৌড়ি করছে। তাঁর বাড়িতে, কলকাতা শহরের সব বাড়িতে যেন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ইঁদুরের বাস। ওরা নিরন্তর কুটি কুটি করে কাটছে। সম্পত্তি কাটছে, সম্পর্ক কাটছে, সুখ-শান্তি-ভালোবাসা, মায়া-মমতা-সততা সব কিছুই কাটছে। খাওয়ার লোভে নয়। শুধু কাটারই লোভে।
মেজ বৌমা বলেছিল, ইঁদুররা কিছু না কেটে বেঁচে থাকতে পারে না। ঈর্ষায় কাটছে, পরশ্রীকাতরতায় কাটছে, লোভে, ঘেন্নায় কাটছে, একে অন্যকে ইঁদুরগুলো; সর্বক্ষণ কুটুর্ কুটুর্ কুটুর্…
হঠাৎই তাঁর মনে হলো, এতগুলো ইঁদুরের মধ্যে উনি এত দিন ছিলেন কী করে?
একটা বিরাট চওড়া মসৃণ রাস্তা। কিন্তু সুন্দর গন্ধভরা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। কত ফুল, পাখি, প্রজাপতি। তাঁর হাতে স্টিয়ারিং। পাশে মিষ্টি বসেছিল। একটা সুন্দর হলুদ-সাদা ফুল-ফুল ফ্রক পরে।
সবে ভোর হয়েছে। ফুরফুর করে হাওয়া লাগছে গায়ে।
মিষ্টি বলল, ও দাদু। দিদার কাছে কখন পৌঁছব?
এই তো! পৌঁছে গেলাম বলে।
সুধীনবাবু বললেন, দিদা তোমাকে দেখে কী বলবে?
কী বলবে আবার? আদর করবে?
তুমি দিদাকে কী বলবে?
কিছু বলব না। আব্বা দেব।
দাদু একটা গল্প বলো না, যেতে যেতে। মিষ্টি বলল।
সুধীনবাবু বললেন, জানো দাদু; একজন বাঁশিওয়ালা ছিল। তার নাম হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা। সে না একদিন সব ইঁদুরকে বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে; বাজিয়ে…