আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়

আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়

আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি, আয়
প্রাণের বুলন্দ দরওয়াজায়,
‘তাজা-ব-তাজা’-র গাহিয়া গান
    চির-তরুণের চির-মেলায়!
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
যুবা-যুবতির সে দেশে ভিড়,
সেথা যেতে নারে বুঢ‍্‍ঢা পির,
শাস্ত্র-শকুন জ্ঞান-মজুর
যেতে নারে সেই হুরি-পরির
    শারাব সাকির গুলিস্তাঁয়।
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
সেথা হরদম খুশির মৌজ,
তির হানে কালো-আঁখির ফৌজ,
পায়ে পায়ে সেথা আর্জি পেশ,
দিল চাহে সদা দিল-আফরোজ,
    পিরানে পরান বাঁধা সেথায়।
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
করিল না যারা জীবনে ভুল,
দলিল না কাঁটা, ছেঁড়েনি ফুল,
দারোয়ান হয়ে সারা জীবন
আগুলিল বেড়া, ছুঁল না গুল, –
    যেতে নারে তারা এ-জলসায়।
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥

বুড়ো নীতিবিদ – নুড়ির প্রায়
পেল নাকো এক বিন্দু রস
চিরকাল জলে রহিয়া, হায়! –
কাঁটা বিঁধে যার ক্ষত আঙুল
    দোলে ফুলমালা তারই গলায়।
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
তিলে তিলে যারা পিষে মারে
অপরের সাথে আপনারে,
ধরণির ঈদ-উৎসবে
রোজা রেখে পড়ে থাকে দ্বারে,
    কাফের তাহারা এ-ঈদগায়!–
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
বুলবুল গেয়ে ফেরে বলি
যাহারা শাসায়ে ফুলবনে
ফুটিতে দিল না ফুলকলি;
ফুটিলে কুসুম পায়ে দলি
মারিয়াছে, পাছে বাস বিলায়!
    হারাম তারা এ-মুশায়েরায়!
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
হেথা কোলে নিয়ে দিলরুবা
শারাবি গজল গাহে যুবা।
প্রিয়ার বে-দাগ কপোলে গো
এঁকে দেয় তিল মনোলোভা,
    প্রেমের-পাপীর এ-মোজরায়।
    আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥

আসিতে পারে না হেথা বে-দীন
মৃত প্রাণ-হীন জরা-মলিন
নৌ-জোয়ানীর এ-মহ‍্‍ফিল
খুন ও শারাব হেথা অ-ভিন,
    হেথা ধনু বাঁধা ফুলমালায়!
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
পেয়ালার হেথা শহিদি খুন
তলোয়ার-চোঁয়া তাজা তরুণ
আঙ্গুর-হৃদি চুয়ানো গো
গেলাসে শারাব রাঙা অরুণ।
    শহিদে প্রেমিকে ভিড় হেথায়।
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥
  
প্রিয়া-মুখে হেথা দেখি গো চাঁদ,
চাঁদে হেরি প্রিয়-মুখের ছাঁদ।
সাধ করে হেথা করি গো পাপ,
সাধ করে বাঁধি বলির বাঁধ
    এ রস-সাগরে বালু-বেলায়!
    আয় বেহেশ‍্‍তে কে যাবি আয়॥

কলিকাতা
১ পৌষ, ১৩৩৩

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *