আস্তিনের তলায়
জানলা দিয়ে এক পলক তাকিয়ে অরণ্য দেখল ভিড় পাতলা হতে শুরু করেছে। সকলেই খুব হতচকিত। কিন্তু যে যত ওপর মহলের সে তত চুপচাপ। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অনেকের হাত মুখ নাড়া দেখতে পাওয়া গেল। বলছে কিছু। রামের মা সকালবেলায় দাঁতে দাঁত লেগে পড়েছিল, তারপর কাঁদতে আরম্ভ করে। এখন দেখা যাচ্ছে মাথায় জল থাবড়ে স্বতঃ প্রণোদিত হয়ে কাজে লেগেছে। একটু আগেই অরণ্যদের ঘরে ন্যাতা দিচ্ছিল। কারণটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। বড় ঘরের কত রকম কেলেঙ্কারি! ঘরে ন্যাতা দিতে দিতে, কি বাসন মাজতে মাজতে যতটা কানে তুলে নেওয়া যায়। পরে নিজেদের বস্তিতে গিয়ে ওরা পরস্পরের শোনা কথা এবং ধারণা বদলাবদলি করে নেবে। ওদের স্বামীরা, ছেলেরা বেশির ভাগই কান্তিভাই ভুলাভাইয়ের শ্রমিক। তারাও ফ্যাকট্রি থেকে আমদানি করবে কিছু তথ্য। টুকরো জুড়ে জুড়ে তৈরি হবে চীফ এঞ্জিনিয়ার সুমন্ত সাহেবের আত্মহননের কোলাজ। বাইরে চট করে কিছু বলবে না। কিন্তু চিত্রটা ওদের মনোমত হলেই যখন তখন আলোচনা করবে। মদ খেয়ে বউকে পেটাবার সময়ে কেউ কেউ হয়ত বলে ফেলবে সেনগুপ্ত সাহাবের অবস্থায় তাকে দেখতে চায় না কি তার বউ? সময় মতো খানা দেবে না; যখন তখন গোছ গোছ কাচের চুড়ি, বিলাইতি শাড়ি, রুপোর মটরদানা, তবু খুশ নেই। আড্ডা দিচ্ছে তো দিচ্ছেই!
একটা সিগারেট ধরিয়ে অরণ্য রান্নাঘর দিয়ে পেছনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। ব্রততী বসবার ঘরে, রামের মার সাহায্যে গোছগাছ করছে। পেছন দিকে বাগানটা সরু, লম্বাটে। ওদিকে বেশ কিছুটা দূরে শুরু হয়েছে পাশের বাড়ির সীমানা। ঘোষাল, তারপরে চৌধুরী, তারপর লাহিড়ি। যথেষ্ট ব্যবধান দুটো বাড়ির মাঝখানে। ডাকলেও চট করে শুনতে পাওয়া যাবে না। নিমগাছের ডালের ওপর কাকে বাসা করেছে। সুশ্রী দেখতে লাগছে জায়গাটা। দুটো নিমগাছ পরপর, মনে হয় একটা থেকেই ক্রমে দুটো হয়েছে। ডান দিকে ঈষৎ ফিরলে গাছ-গাছালির জাফরির মধ্যে দিয়ে রাস্তা দেখা যায়। রাস্তায় চিত্রবিচিত্র শাড়ির নক্শা দেখতে পেল অরণ্য। রায় মেমসাব আসছেন। দরজা বন্ধ করে এদিকে আসতে আসতে শুনতে পেল মিসেস রায় বলছেন—‘কি ভয়ঙ্কর না? ব্রততী একটু কফি খাওয়াতে পারিস? আগে অবশ্য একটু জল দিস! সকাল থেকে জলটুকু পর্যন্ত মুখে দিইনি। শুনে অবধি গা শিরশির করছে।’
রায় বললেন—‘তোমার আসবার দরকারটাই বা কি? মিন্টুরা একা রয়েছে! চলে যাও না! অন্য কোথাও এরকম ইনফর্ম্যাল হতে পারতে?’
মিসেস বললেন—‘আঃ থামো তো! এ সময়ে আবার ফর্ম্যালিটি! কি হরিব্ল্ ব্যাপার বলো তো?’
ব্রততীকে টেনে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন মিসেস রায়।
—‘তোকে কিছু একটা করতে হবে না। আমি কফি বানিয়ে নিচ্ছি’ ফস্ করে গ্যাস-লাইটারটা জ্বালালেন জয়ন্তী রায়।
ব্রততী মৃদুস্বরে বলল— ‘তোমার চোখ দিয়ে বড্ড জল পড়ছে জয়ন্তীদি। সরে এসো। আমি পারবো।’
কোমরের রুমাল তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জয়ন্তী বললেন—‘তোর ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে, সব ব্যাপারেই আমাদের হেল্প্ করা উচিত। হেলপ্ কি আমি করি না?’
—‘তোমার গলাও ভীষণ ভেঙে গেছে জয়ন্তীদি, বাথরুমে যাবে? একটু মুখ-টুখগুলো ধুয়ে এসো। এই দিক দিয়ে যাও’—ব্রততী মাঝের দরজাটা খুলে ধরল। ‘ওদিকে ওরা সব বসে আছে।’
মিসেস রায় চলে যেতে ব্রততী চার কাপ কফি তৈরি করে ফেলল। ড্রয়িং রুমে যখন এলো। মুখটুখ ধুয়ে মিসেস রায়ও সেখানে বসে।
ম্যানেজার বলছেন—‘এতদিনের চাকরি, এত ঘাটের জল খেয়েছি মুখার্জি এরকম ঘটনা আমি আর কখনও ফেস করিনি। রীতিমতো নার্ভ ফেল করছে আমার। কি কেলেঙ্কারি বলো তো?’
অরণ্য বলল—‘শুধু কেলেঙ্কারির দিকটাই দেখছেন পরমার্থদা, ট্রাজেডির দিকটাও দেখুন!’
জয়ন্তী বললেন—‘মুখার্জি ঠিকই বলেছেন। আপনার কি মনে হয়? আপনারা তো কাছাকাছি থেকে দেখেছেন?’
অরণ্য বলল—‘সত্যি কথা বলতে কি আমি এর মাথামুণ্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আপনি যে তিমিরে আমিও সেই তিমিরে। ভদ্রলোক একটু রিজার্ভড টাইপের ছিল। তবে এমনিতে খুব ভদ্র। দেখা হলেই উইশ করত। বাইরে থেকে একটু দাম্ভিক মনে হলেও আসলে বোধহয় লাজুক ছিল। মিশুক স্বভাব নয় বলে উন্নাসিক মনে হত, তাই না ব্রততী?’
ব্রততী অবসন্নভাবে ঘাড় নাড়ল।
রায় বললেন—‘ব্রিলিয়ান্ট কেরিয়ার মশাই। নিজের ফিল্ডে কোনদিন সেকেণ্ড হয়নি। রেকর্ড মার্কস। ইংলন্ড থেকে ডিগ্রি করে সেখানে কিছুদিন কাজ, তারপর চলে যায় মিড্ল ইস্ট। যে কোন কারণেই হোক ইদানীং আর বাইরে ভালো লাগছিল না, দেশে চলে এসেছে। ইনটারভিউয়ের সময়ে আমাকে তো তাই বলল। আমি তো সত্যি কথা বলতে কি, সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকতুম। এই বুঝি চলে গেল। এই বুঝি কেউ বেটার অফার দিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে গেল। ইন্টারভিউয়ের সময়ে ওরা এক্সপার্ট এনেছিল বিলিমোরিয়াকে, বলে গেল—“হী ইজ মেন্ট ফর ফার বিগার থিংস।” কেন যে অ্যাট অল এরকম একটা কোয়ায়েট জায়গায় এলো, তাই-ই মাথায় আসত না আমার। তোমার কি মনে হয় মুখার্জি?’
—‘আমি আর নতুন কি বলবো?’ কফিটা শেষ করে, কাপ নামিয়ে রাখতে রাখতে অরণ্য বলল—‘এই ক্যালিবারের ছেলেরা সাধারণত শহরে থাকতে চায়। বাইরে যেতে চায়। ও এলো বাইরে থেকে এই একমুঠো প্রাইভেট কনসার্নে। হয়ত খুব অ্যামবিশাস নয় পীস লাভিং। আমাদের এখানকার আবহাওয়া তো সব জায়গায় পাবে না! নয়ত দুবাই-এর ওরকম চ্যালেঞ্জিং ফ্যাবুলাসলি পেড জব ছেড়ে আসে?’
—‘আমাকে তো একটা কমপ্লিট ওভারহলিং-এর প্রোগ্রাম ধরিয়ে দিয়েছিল’—রায় হৃষ্ট গলায় বললেন—‘খুব সম্ভব ধাতটা ছিল ক্রিয়েটিভ। কিছু একটা নিজের মনের মতো করে গড়তে চাইত। ছোট জায়গায় হয়ত সে সুযোগ পাবে বলে মনে করেছিল। আমি লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছিলুম—‘ধীরে ধীরে সব হবে। আনহ্যাপি ফীল করার তো কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না। অ্যান্ড আই থিংক হী ওয়জ কোয়াইট স্যাটিসফায়েড উইথ দা টার্মস অ্যান্ড কণ্ডিশন্স্ উই অফার্ড হিম হিয়ার। আফটার অল মধ্যপ্রাচ্যের সুযোগ-সুবিধা তো আর ও এখানে এক্সপেক্ট করতে পারে না। তবে গভ্মেন্ট কনসার্নের থেকে জব স্যাটিসফ্যাকশন অনেক বেশি, কি বল, মুখার্জি?’
অরণ্য বলল—‘একশবার।’
মিসেস রায় এতক্ষণ ধৈর্য ধরে দুপক্ষের কথাই শুনছিলেন আর পারলেন না। বলে উঠলেন—‘আহা হা হা, কি বুদ্ধিই ছাই ধরো তোমরা তা-বড় তা-বড় এগজিকিউটিভরা। অফিস, ফ্যাক্টরি, প্রোজেক্ট! এসব ব্যাপার সব সময়ে নারীঘটিত হয়, কথায় বলে শেরশে লা ফাম, মানে লুক ফর দা উওম্যান। আচ্ছা ব্রততী, তুই তো ক্লোজ-আপ দেখেছিস? স্ত্রী কিরকম ছিল? খোলসা করে বল, দেখি!’
পুবের রোদের প্রথম ঝাপটাটা এখন ওদের জানলা থেকে সরে গেছে। সেখানে ছায়া। জানলা দিয়ে দেখা যায় দূরে একটা গুলঞ্চ গাছের ঈষৎ গোলাপি ফুলের পাত্র শূন্যের দিকে উঁচু করে ধরা। একটু তফাতে পাঁচটা বটল পাম। ফ্যাক্টরি এলাকার এই বিন্দুটা ব্রততীর খুব প্রিয়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা আস্তে আস্তে আবিষ্ট হয়ে আসে। কথা বলবার ইচ্ছে তার আদৌ ছিল না। অনেক চেষ্টায় মুখ ফেরাল। ঘরের মধ্যে তার চোখে অন্তত অন্ধকার। অন্ধকারে ভাসছে কতকগুলো কৌতূহলী মুখ। এই মুহূর্তে মনে হয় শুধু অনাবশ্যক নয়, অপবিত্র কৌতূহল। সানগ্লাস পরে দেখার মতো ছায়ার দিকে চেয়ে বলল—‘আমি তো বেশিদিন কাছ থেকে দেখিনি জয়ন্তীদি। চিনতুমই না। তুমিই তো চেনালে।’
জয়ন্তী রায় বললেন—‘সরি ব্রততী। আমি ভেবেছিলুম তোদের ভালো প্রতিবেশী হবে। এভাবে ঝাঞ্ঝাটে ফেলে যাবে ভাবিনি। যতটুকু দেখেছিস কি মনে হয় পারমিতা সেনগুপ্তকে?’
অরণ্য ভালোই বুঝতে পারছিল জয়ন্তী রায় কোনদিকে যেতে চান। মেয়েরা সেই জাতের, যারা সিদ্ধান্তগুলোতে আগে পৌঁছে যায় তারপর তথ্য-টথ্য তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যে তৈরি হয়। ব্রততী বলল—‘পারমিতাও ওঁর মতোই চুপচাপ ছিল, নিজের কাজ নিয়ে থাকতে ভালোবাসত বোধহয়।’
—‘সেল্ফ্ সেন্টার্ড বলছো?’ রায় বললেন।
—‘তা হয়ত নয়। এখানে তো এখনও ঠিক সেট্ল করেনি ওরা!’
—‘বছর ঘুরতে চলল, এখনও যদি সেট্ল্ করতে না পেরে থাকে তো আর কবে করতো? ইচ্ছে থাকলে তো? উইক-এন্ডে বাড়ি নেই কেন?’ মিসেস রায় যেন ব্রততীকেই ধমকে উঠলেন।
—‘ও তো কোনও উইক-এন্ডেই বাড়ি থাকে না! গানের কোর্স নিচ্ছে। একদিন বলছিল এবার শেষ করবই। এক সময়ে বোধহয় গান-টান খুব করত। আঁকাজোকাও করত। ওদের ঘরে যে দেওদারের পেন্টিংটা আছে সেটা বোধহয় পারমিতারই করা।’
—‘হুঁ আর্টিস্ট টেম্পারামেন্ট! স্বাধীনতা-প্রিয়। মেজাজী। খাঁচার পাখি থাকে সোনার খাঁচাটিতে, বনের পাখি থাকে বনে···মোটেই গুড কম্বিনেশন নয়···বুঝলে জয়ন্তী।’—মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন পরমার্থ।
জয়ন্তী অত্যন্ত অসন্তুষ্ট স্বরে বললেন—‘আমার ওকে বরাবর খুব স্ট্যাণ্ড-অফিশ্ লেগেছে। প্রথম দিন ফ্ল্যাট দেখাতে এলুম, কতক্ষণ একসঙ্গে থাকা, একবারও বললে না আমাকে পারমিতা বলুন, সারাক্ষণ বোকার মতো একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে মিসেস সেনগুপ্ত মিসেস সেনগুপ্ত করে গেলুম। ক্লাবে-ট্লাবে তো কখনোই আসত না। রূপের দেমাকে মটমট করছে। এখনও বাড়িতে ভাল ডাকা হয়নি। ভেবেছিলুম একেবারে মিন্টুর বার্থডে-পার্টিতে ডাকব। কিন্তু ওসব ছাড়ো। সম্পর্ক কেমন ছিল?’
ব্রততী হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘আচ্ছা জয়ন্তীদি। আমি কি করে বলব বলো তো? প্রথমত পরের ব্যাপারে আমার কৌতূহল বরাবরই কম। দ্বিতীয়ত ওরা এখানে থাকত কম। প্রতি শুক্রবার সেনগুপ্ত নিজে গাড়িতে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতেন। রবিবার বেশি রাত করে ফিরতেন দুজনে। শ্বশুরবাড়ি থেকে খেয়ে-টেয়ে আসতেন বোধহয়।
অরণ্য বলল—গত সপ্তাহেই তো সেনগুপ্ত রবিবার রাত্তিরে বাড়ি ফিরে বলল—আপনাদের খুব কষ্ট দিচ্ছি, না? পারমিতা সায় দিল—হ্যাঁ আপনাদের ওপর খুব অত্যাচার হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম না না, মোটে তো সাড়ে দশটা, আমরা এতো তাড়াতাড়ি শুই না···’
পরমার্থ বললেন—‘ওরা কি ডাকাত-টাকাতের মতো হল্লা করতে করতে আসত? তোমাদের ওপর অত্যাচারের প্রশ্ন উঠছে কেন?’
অরণ্য হঠাৎ চুপ করে গেল। ব্রততী বলল—‘ভীষণ ভুলো বলে ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবিটা ওরা আমাদের কাছে রাখত। প্রায়ই ওদের দরকার হত সেটা।’
পরমার্থ বললেন—‘আই সী।’
অরণ্য তাড়াতাড়ি বলে উঠল—‘বাইরে থেকে মিল অমিল কিছুই বিশেষ বোঝা যেত না বুঝেছেন পরমার্থদা। ব্রততী স্পেশ্যাল ডিশ-টিশ করলে অনেক সময়ে দিতে বলতুম। খুশি হত খুব। পারমিতা এসে পর দিন বলে যেত আপনার দৌলতে আমার কর্তার মুখটুখ বদলাচ্ছে একটু। আমার আবার রান্না-টান্না একেবারেই আসে না।’
অনাবশ্যক অনেক কথা বলে ফেলছে বলে মনে হল অরণ্যর। সে হঠাৎ ব্রেক-কষার মতো থেমে গেল।
জয়ন্তী চোখ বড় বড় করে বললেন—‘আই সী। তা কিছু রিটার্ন-টিটার্ন দিত না?’
—‘ও তো স্বীকারই করত রান্নায় ওর তেমন ইন্টারেস্ট নেই। একটা সুন্দর বাটিকের বুদ্ধ করে দিয়েছে। সেট অফ্ করবার মতো দেয়াল খালি করতে পারিনি এখনও—’ আস্তে গলায় বলল ব্রততী।
রায় বললেন—‘যা জানা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে নাথিং এগজ্যাক্টলি রং। তবে ফ্যাক্ট্স খুবই নন-কমিট্যাল। ইনভেস্টিগেশনে যা বেরোবে বেরোবে। আমাদের আর কি করার আছে? খুব স্যাড কেস। কোম্পানির রেপুটেশনও সাফার করবে।’
ম্যানেজার দম্পতি দ্বিতীয় দফা কফি খেয়ে চলে গেলেন। হাঁটতে হাঁটতে। বাঁ-দিকের রাস্তার মোড় ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফ্যাক্টরির দিকের রাস্তা দিয়ে মার্কেটিং ম্যানেজার চৌধুরীকে আসতে দেখল অরণ্য। দূর থেকে হাত নাড়ল, অর্থাৎ ওদের বাড়িই আসছে। ভুরু কুঁচকে গেল অরণ্যর। আর কতজনের কত জিজ্ঞাসার জবাব তাদের দিতে হবে!
চৌধুরী ঢুকেই বলল—‘ব্রততী কোস্ট ক্লিয়ার তো? কর্তা-গিন্নি চলে গেছেন? মোটা বাঘ! রোগা বাঘ!’ হাত পায়ের মজাদার ভঙ্গি করল চৌধুরী।
ব্রততী শুকনো মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল—‘কি মনে হচ্ছে?’
চৌধুরী বলল—‘এখনও বুনো-বুনো আঁশটে-আঁশটে গন্ধ পাচ্ছি বাবা। বেঘো-বেঘো গন্ধ! তোমার ভাইয়েরা কি চলে গেল নাকি?’ ব্রততী বলল—‘হ্যাঁ’।
—‘সে কি, ওদের কদিন থেকে যাবার কথা ছিল না? কখন গেল? আই মীন কবে?’
ব্রততী জবাব দিল না।
চৌধুরী বলল—‘ইস আলাপ হল না। ব্রিলিয়ান্ট থিঙ্কার্স শুনেছি। আজকের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। ভালো করে জমিয়ে আলাপ-সালাপ হবে। যদিও ব্রততী একবারও বলেনি। কি আর করা। এ ম্যাদামারা জায়গায় তো কথা বলবার মানুষ নেই! সরি ব্রততী, অরণ্য মুখার্জিকে মীন করিনি।’
এই জন্যেই চৌধুরীকে একদম পছন্দ হয় না অরণ্যর। সব সময়ে ছ্যাবলামো। যখন-তখন যাকে তাকে এমনি ঘনিষ্ঠ সম্বোধন! প্রথমেই অবশ্য সাফ সাফ বলে দিয়েছিল—‘আপনার গিন্নি আমার তিন বছরের জুনিয়র অরণ্যদা, আপনি-টাপনি বলছি না।’ এখন দ্যাখো, বাড়ির ওপর একটা মানুষ আত্মঘাতী হয়েছে আর উনি এসে বলছেন—‘তোমার ভাইয়েদের সঙ্গে আলাপ হল না।’ ক্যাড একটা।