সতেরো
জেমস ক্র্যামারের দোকানে ওরা চারজন। জেমস আর ওয়েন্ডিকে রাসলারদের আখড়া ভেঙে দেয়া থেকে শুরু করে রবার্ট বাটলারকে খুন করা পর্যন্ত ঘটনাগুলো সংক্ষেপে শুনিয়েছে এরিখ। অবাক হয়ে লক্ষ করেছে, অতগুলো খুন-জখমের কথা শোনার সময় ওয়েন্ডির মুখের রেখায় সামান্যতম কুঞ্চনও জাগেনি। আশ্বস্ত হলো সে। মেয়েটা বাস্তবতাকে বুঝতে শুরু করেছে তাহলে। উদ্যতফণা বিষধর সাপকে খুন করা কোনমতেই অপরাধ নয়। কিছু কিছু মানুষ আছে সাপের চেয়ে ভয়ানক। ওদের ব্যাপারে সে একই কথা খাটে, ভাবল এরিখ মনে মনে।
ওয়েন্ডির দিকে চাইল সে। মেয়েটি লক্ষ করছে ওকে। ‘আমার দায়িত্ব শেষ, ম্যাম,’ বলল সে। আস্তে আস্তে লোক যোগাড় করে নিতে পারবে তুমি। এবার তাহলে আমি বিদায় নিতে পারি?’
ওর চোখে চোখে তাকিয়ে রইল ওয়েন্ডি। শান্ত, গম্ভীর ওর ধূসর দু’চোখ। ‘কোথায় যাবে, এরিখ?’ মৃদুকণ্ঠে জানতে চাইল ও।
কাঁধ ঝাঁকাল এরিখ। তা কি করে বলি এখন?’ জবাব দিল, আমার তো যাবার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই।’ হাসল সে সামান্য। ‘জানোই তো একজন ভবঘুরে আমি, আশ্রয়হীন।’
হাসল ওয়েন্ডিও, একটু ইতস্তত করল। আশ্রয় হিসেবে ক্রস অ্যারো কেমন হবে বলে মনে হয় তোমার?
থমকে গেল এরিখ। এতদিন এটাই চেয়েছে সে মনে মনে। কিন্তু আজ— কোথায় যেন একটা বাধা। কয়েক মুহূর্তের জন্যে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল সে। তারপর চাইল ওয়েন্ডির চোখে। নাহ্। আমি বরং…’
‘চলে যাবে?’ মুখ শুকিয়ে গেছে ওয়েন্ডির
‘আমার চলে যাওয়াই উচিত। আমি কারও বোঝা হতে চাই না। আমি…আরে, ওয়েন্ডি, তুমি কাঁদছ কেন…প্লীজ, ওয়েন্ডি…’
দুই হাতের পৌঁছায় চোখের পানি মুছল ওয়েন্ডি, দু’পা এগিয়ে এল সামনে। ‘আমি যদি তোমাকে যেতে না দিই?’
এরিখের দুই হাত ধরল দুই বুড়ো। ‘আর আমরাও যদি না ছাড়ি?’
থতমত খেয়ে গেল এরিখ। ওর কাঁধে হাত রাখল ওয়েন্ডি। ‘তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম বলে আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি—ক্ষমা চাই, এরিখ। আর কোনদিন এমন ভুল হবে না, কথা দিচ্ছি…’
এরিখ অনুভব করল, সেই বাধাটা আর নেই।