আশ্রয় – ১১

এগারো

ক্রীক রোড থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে ঝোপঝাড় আর ভাঙাচোরা গাছপালার মধ্য দিয়ে ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের উদ্দেশে যাত্রা করল এরিখ যেখানে ওর মালপত্র লুকোনো আছে, আজকের রাতটা ও ওখানেই কাটাবে স্থির করেছে। পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হয়ে উঠেছে, ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ক্যানিয়নের দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। মেঘ জমেছে আকাশে। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। বিদ্যুৎচমকের সাথে সাথে মেঘ ডেকে উঠল গুড়-গুড় শব্দে। জিস্টারের গতি বাড়াল এরিখ, বৃষ্টি শুরু হবার আগেই ক্যানিয়নে পৌঁছতে হবে।

লম্বা গাছপালায় পরিপূর্ণ একটা ঢালে চড়ল জিস্টার। হাঁটতে লাগল দুলকি চালে গাছপালার ভেতর দিয়ে। আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, চকিত আলোয় ভূতুড়ে দেখাচ্ছে চারদিকের ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর গাছপালাকে।

ঢালের মাঝামাঝি একটা বুকসমান উঁচু লম্বাটে পাথর। ওটাকে পাশ কাটাবার সময় বিদ্যুৎ চমকাতেই এরিখ চোখের কোণে নড়াচড়াটা লক্ষ করল। সাথে সাথে রাশ টেনে পিছলে নামল ও ঘোড়া থেকে। পাছায় মনিবের মৃদু চাপড় খেয়ে বিপদের আভাস পেল শিক্ষিত ঘোড়া, সরে গেল একদিকে। এরিখ বিদ্যুৎবেগে খাপ থেকে অস্ত্র বের করল, ঘুরে বোল্ডারটার অপর পাশে চলে গেল ও। তারপর ধীরে ধীরে মাথা উঁচিয়ে পাথরটার ওপর দিয়ে তীক্ষ্ণচোখে তাকাল যেদিক থেকে নড়াচড়ার ক্ষীণ আভাস পাওয়া গেছে, সেদিকে। ঘন অন্ধকারে প্রথমে কিছুই দেখা গেল না। আবার বিদ্যুৎ চমকানোর অপেক্ষায় রইল ও।

ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। শুকনো ঝরাপাতা আর ঝোপঝাড়ের ওপর টুপটাপ আওয়াজ তুলল বৃষ্টির ফোঁটা। বিদ্যুৎ চমকাল আবার। চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে লোকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল এরিখ বাঁ দিকের একটা গাছের তলায়। পাথরের আড়ালে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ওদিকে এগোল ও, সোজাসুজি এসে আবার মাথা জাগাল পাথরের আড়াল হতে। জো রীভসের ঈষৎ বিকৃত মুখটা চিনতে পারল ও এবার। স্টক ডিটেকটিভের শরীর দু’পায়ে দাড়িয়ে নেই। ঝুলছে সামান্য উঁচু হয়ে গাছের ডাল থেকে। মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি ওপরে বাতাসে দুলছে ওর পা দুটো।

একটা তিক্ত অনুভূতি দলা পাকিয়ে উঠল এরিখের অন্তস্তল হতে। গলা পর্যন্ত এসে যেন আটকে গেল ওটা। অস্ত্রটা খাপে ঢুকিয়ে ছুরি বের করল ও, এগিয়ে গেল মৃতদেহের কাছে। দড়ি কেটে নামাল ওটাকে, আলগোছে ধরে রাখল যেন মাটিতে পড়ে না যায়, তারপর শিস দিল জিস্টারের উদ্দেশে। ঝোপেঝাড়ে মচমচ আওয়াজ তুলে ছুটে এল জিস্টার।

কাছে এসেই নাক ঝাড়ল ঘোড়াটা মৃতদেহের গন্ধ পেয়ে। দূরে সরে যাবার মতলব করতেই এরিখ কথা বলল ওর সাথে, মৃদুস্বরে আশ্বাস দিল। শান্ত হয়ে দাঁড়াল জিস্টার। এরিখ জো’র প্রাণহীন দেহটা ওর পিঠে তুলে বেঁধে নিল আড়াআড়িভাবে। পায়ের নিচে ঠাণ্ডা ধাতব কিছু একটা ঠেকতেই নিচু হয়ে তুলে নিল ওটা। জো’র শাপর্স, যেটা নিয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবত ডিটেকটিভ। শার্পসের ২৬’ লম্বা ব্যারেলটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। জিস্টারের পিঠে চড়ল এরিখ। বধ্যভূমি পেছনে রেখে যথাসম্ভব দ্রুত এগিয়ে চলল জিস্টার। বৃষ্টি আগের চেয়ে কমেছে কিছুটা।

যেখানে মালপত্র রেখেছিল, তার কাছাকাছি একটা গুহা খুঁজে নিল এরিখ রাত কাটাবার জন্যে। গুহার মুখে জিস্টারকে দাঁড় করিয়ে লাশ নামাল ওটার পিঠ থেকে, একটা তেরপলে মুড়ে মাটিতে শুইয়ে রেখে সিগার বানিয়ে জ্বালাল। তারপর ধূমপান করতে করতে জোর ব্যাপারটা ভাবতে লাগল।

সন্দেহ নেই, জো রীভসের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে গিয়েছিল কারও কাছে, বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতে শুনতে ভাবল এরিখ, কিন্তু কিভাবে? জো দক্ষ লোক ছিল, জানত কিসের বিরুদ্ধে কাজ করছে, অতএব সব রকমের সতর্কতা অবলম্বন করাটাই ছিল ওর পক্ষে স্বাভাবিক। তবু ওর পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় কি করে? এসোসিয়েশনের সাথে জড়িত লোকজন ছাড়া ওর পরিচয় আর কারও পক্ষেই জানা সম্ভব ছিল না। আর জো’র কাছে লেখা ওর চিঠিখানা যদি অন্য কারও হাতে পড়েও থাকে, তা থেকে ওর পরিচয় বের করা সম্ভব নয়। কারণ চিঠিটা সে কার কাছে লিখছে- তার উল্লেখ ছিল না। তাহলে? পরিচয় ফাঁস হবার শুধু একটাই কারণ থাকতে পারে—এবং সেটা হলো এসোসিয়েশনের মধ্যে এমন কেউ আছে, যে এসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে এবং যে নিজেই রাসলিঙের সাথে জড়িত। কে সে?

রুইন্স ক্যানিয়নের হাইড-আউটে বসে নাস্তা খেতে খেতে বলা জো রীভসের কথাগুলো মনে পড়ল ওর। নিজের বউ-বাচ্চার জন্যে এই দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটা স্বচ্ছল বর্তমান ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন ছিল ওর। কিন্তু সময় পেল না বেচারা। স্বপ্ন পূরণের আগেই ঘাতকের দড়ি চিরতরে ওর স্বপ্নের কণ্ঠরোধ করে দিয়েছে। এরিখ কষ্ট পেল ওর পরিবার পরিজনের কথা ভেবে। তাদের প্রিয় এই সৎ ও সুন্দর মনের মানুষটার মুখ থেকে আশা ও আশ্বাসের কথা আর কখনও শুনবে না তারা।

সিগারের শেষ অংশটা বুটের তলায় পিষে ফেলে গুহা থেকে বেরোল ও। জিস্টার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। এরিখ ঘোড়াটাকে কাছের একটা ওভার হ্যাঙ্গিঙের নিচে নিয়ে বাঁধল, তারপর গুহায় এসে শুয়ে পড়ল। ওর কাছ থেকে মাত্র পাঁচ ফুট দূরে জো’র মৃতদেহ।

এই অভিজ্ঞতা মোটেই নতুন নয় ওর জন্যে। ঘুম আসার আগে বাইরের বৃষ্টিভেজা অন্ধকারে চোখ রেখে চার বছরের যোদ্ধা-জীবনের কথা ভাবল ও।

সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা করতে বসল এরিখ। ছোট্ট করে আগুন জ্বালিয়ে কফি বানাল। নাস্তা শেষ করে কাপে কফি ঢেলে নিয়ে মাত্র মুখে তুলতে যাচ্ছে, এমন সময়, ওর কানের কাছেই, শোনা গেল গুলির শব্দটা। এরিখের হাতে কাপের হাতলটা রইল শুধু। গরম কফি ছিটকে পড়ল ওর কোলে। কাপটা চুরমার হয়ে গেছে।

মাটিতে ঝাঁপ দিল এরিখ, স্পেন্সারের দিকে হাত বাড়াল। দ্বিতীয় গুলিটা এসে লাগল ওর সামনে একটা পাথরের খাঁজে। গড়ান দিল ও, গুহামুখের একপাশে মানুষ সমান উঁচু একটা পাথরের আড়ালে চলে গেল। স্পেন্সারটা হাতে নিয়ে পাথরের আড়াল হতে মুখ বাড়াল সন্তর্পণে—ক্যানিয়নের কোথাও জীবনের চিহ্ন যেন নেই।

অপেক্ষা করল ও।

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। গুহার বিপরীত দিকে, কিছুটা দূরে ঝোপঝাড়ে ভর্তি ঢালমতন জায়গাটায় ক্ষীণ নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। কেউ একজন অধৈর্য হয়ে উঠেছে ওখানে, বুঝতে পারল এরিখ। অপেক্ষায় অভ্যস্ত নয় অদৃশ্য পিস্তলবাজ – নড়াচড়ার মাধ্যমে সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে ভাল করে। হাসল ও, আপনমনে। এ-ব্যাপারটায় ও আবার বন্দুকবাজের বিপরীত স্বভাবের। আপত্তি নেই ওর অপেক্ষায়। বিশেষ করে ইন্ডিয়ানদের মোকাবেলায় ও একদম পাথরের মতই স্থবির হয়ে যেতে পারে।

আবার নড়ে উঠল ঝোপটা। ধীরে-সুস্থে স্পেন্সারটা তাক করল এরিখ ঝোপ বরাবর, ট্রিগার টিপে দিল। ঝোপের ভেতর ককিয়ে উঠল কেউ একজন, খিস্তি ঝাড়ল।

কিছুক্ষণ চলে গেল এরপর চুপচাপ। সূর্য উঠে গেছে অনেকটা, ক্যানিয়নের পুবপাশের দেয়ালের ওপর দিয়ে ছটা পাঠাচ্ছে, একটু পরে নিজেই উঠে আসার পূর্বাভাস। ধোঁয়া উঠছে ভেজা ঝোপঝাড় আর স্যাঁতসেঁতে মাটি থেকে। একটা রাইফেলের নল উঁকি দিল ঝোপের ভেতর হতে। অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল এরিখ কিছুটা, গর্জন শুনে ঝট করে মাথা নিচু করল। পাথরের মাথায় ঘষা খেলো বুলেট, অজস্র পাথরকুচি ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেল ওটা পেছনে। ঘাড়ের অনাবৃত অংশে ঘষা খেলো এরিখ। হাত বুলাল জায়গাটায়, ধারাল পাথরকুচির আঘাতে ছড়ে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে।

নিজের ওপর বিরক্তিবোধ করল এরিখ, বাঁ দিকে চোখ ফেরাল। একটা উঁচু ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে আছে জিস্টার। সম্ভবত গুলির শব্দ শুনে বাঁধন খুলে পালিয়েছে। জিস্টারকে সতর্কভাবে ডেকে উঠতে শুনল এরিখ; তাকিয়ে রইল ও। একটু পরেই ঢিবির ওপাশ থেকে একটা ঘোড়াকে জিস্টারের কাছে আসতে দেখা গেল। ডাকল সেটাও, জিস্টারের সাথে ভাব বিনিময় করল। এরিখ চিনতে পারল ঘোড়াটা। লেইকারকে চড়তে দেখেছে ওটার পিঠে।

স্পেন্সার তুলল এরিখ একটা ওকোটিলা ঝোপের ভেতর থেকে ক্ষীণ ধোঁয়ার আভাস দেখতে পেয়ে। গুলি করল সে। পর মুহূর্তেই চোখের কোণে একটা হ্যাটের কার্নিস দেখতে পেয়ে স্পেন্সারের নল ঘুরিয়ে আবার ট্রিগার টিপল। গুলি বেরোল না স্পেন্সার থেকে। দ্রুত চেক করল ও অস্ত্রটা, হতাশ ভাবে মাথা নাড়ল, ‘ধ্যাত্তেরি, মেইন স্প্রিংটাই গেছে!’

ওর কথার প্রত্যুত্তরেই যেন ওদিক থেকে বুলেট বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। গুহার মুখে এবং দু’পাশের পাথরে বিধতে লাগল গুলি, ভেতরেও ঢুকল দু’একটা। জো রীভসের শরীরে গুলি বেঁধার শব্দ শুনল এরিখ, যেন কাদামাটির চাকে লাঠির গুঁতো দিচ্ছে কেউ।

‘যতই গুলি লাগুক,’ আপন মনে মন্তব্য করল এরিখ, এর চেয়ে আর বেশি কিছু হচ্ছে না ওর।’

গুহার ভেতরে জো’র তোবড়ানো ব্যারেলের শার্পসটার দিকে চাইল ও। ওটা দিয়ে দিনভর ঠেকিয়ে রাখা যেত আক্রমণকারীদের।

সূর্য ক্যানিয়নের দেয়াল পেরিয়ে অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে এখন। ক্যানিয়নের বাতাসে ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে ভাব আর নেই; উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ। ঝোপের ভেতরে গা ঢাকা দিয়ে আগের চেয়ে কাছে এসে পৌঁছেছে শত্রু। মাত্র শ’দেড়েক গজ দূর থেকেই শেষবার গুলি করেছে ওরা। জবাবে এরিখ ওর ডবল-অ্যাকশন স্টারের দুটো গুলি পাঠিয়েছে।

‘রাইফেল ব্যবহার করছে না ও!’ ডগের উল্লসিত চিৎকার শুনল এরিখ। ‘বাজি ধরতে পারি, গুলি ফুরিয়েছে ওটার।’

গুহামুখের সামনে সরু ঢালের ওপর পাথরে আছড়ে পড়ছে ডগ লেইকার আর ওক টিকাউর থেমে থেমে ছোঁড়া গুলি, পাথরের কুচি ছড়াচ্ছে চারদিকে

‘এগোও, ওক!’ ডগ চেঁচিয়ে উৎসাহ দিল টিকাউকে। ‘বাগে পেয়েছি এবার ব্যাটাকে।

অকেজো স্পেন্সারটার দিকে তিক্ত দৃষ্টিতে চাইল এরিখ। স্টারের আওতার বাইরে থেকে, খুব কাছ থেকে ওরা খেলছে ওকে নিয়ে। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ও; যে কোন মুহূর্তে ওদের এলোপাতাড়ি ছোঁড়া গুলির যে কোন একটাই ওর দফা চিরতরে রফা করে দিতে পারে। হঠাৎ আইডিয়াটা খেলল ওর মাথায়। শার্পসের মেইন স্প্রিংটা অক্ষত। কাজে লাগতে পারে ওটা।

গুহায় ঢুকল ও। কম্বলের পাশে রাখা বাকস্কিনের থলে আর শার্পসটা নিয়ে বেরিয়ে এল আবার। পাথরের আড়ালে বসে কাজ শুরু করল। স্পেন্সার খুলে ওটার ভেতর থেকে ভেঙে যাওয়া স্প্রিংটা তুলে নিয়ে ফেলে দিল এক পাশে। তারপর জো’র শার্পসের ব্রীচব্লক সরিয়ে ওটার মেইনস্প্রিং বের করে নিল। ঘামছে ও দরদর বেগে। অসহিষ্ণুহাতে মুখ মুছল। একটা গুলি এসে বিদ্ধ হলো গুহামুখে, আরও কিছু পাথরকুচি ছড়াল। এরিখ স্পেন্সারে লাগাল শাপসের মেইনস্প্রিংটা। সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলল ও, প্রচুর সময় নিয়েছে কাজটা।

‘গুলি করছে না ও!’ ডগের গলা শোনা গেল। বেঁটেটা আরও কাছে এসে পড়েছে এখন।

‘ফুরিয়ে গেছে নিশ্চয়,’ টিকাউর জবাব এল খানিকটা দূর থেকে।

‘হাহ্! বিশ্বাস নেই ওকে। ব্যাটা শেয়ালের চেয়েও চতুর, অনিশ্চিত কণ্ঠে মন্তব্য করল ডগ।

হাসল এরিখ, স্পেন্সারে গুলি ভরল। পাথরের মাথায় ঘষা খেয়ে আরেকটা গুলি চলে গেল ওর মাথার ওপর দিয়ে শিস কেটে। স্পেন্সারটা একপাশে রেখে স্টার রিলোড করল ও। ওটা একপাশে রেখে আবার স্পেন্সার তুলে নিল হাতে।

ডগ লেইকার উঠে দাঁড়িয়েছে ঝোপের ভেতর হতে। এরিখের নিষ্ক্রিয়তা ওকে দুঃসাহসী করে তুলেছে। কাঁধের ওপর থেকে রাইফেল বাগিয়ে ধরে গুহার দিকে তাকাল ডগ। এরিখ গুলি করল। খিস্তি আউড়ে ঝপ করে বসে পড়ল বেঁটে। এরকম আচমকা গুলির জন্যে তৈরি ছিল না বেচারা। আবার গুলি করল এরিখ ওর অবস্থান লক্ষ্য করে। বেগতিক দেখে শুয়ে পড়ল ডগ, পিছু হটল বুকে হেঁটে।

ওক টিকাউও গুলি ছুঁড়ছে অবিরাম। একটু ধাতস্থ হয়ে ডগও শুরু করল আবার। ক্যানিয়নের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল গুলির শব্দ। এরিখের মাথার ওপর দিয়ে পাথরে লেগে ছিটকে যাচ্ছে বুলেট, পাথরের কুচি ছড়াচ্ছে। বি-ঙ করে একটা গুলি পাথরে ঠিকরে ছুটে এল ওর দিকে, মাথার পাশ ছুঁয়ে চলে গেল পেছনে।

আগুন ধরে গেল এরিখের মাথায়। স্পেন্সারটা হাত থেকে পড়ে গেল। আহত জায়গাটায় হাত বুলাল ও। সদ্যসৃষ্ট ক্ষত থেকে রক্ত ছুটেছে অবিরল ধারায়। হাঁটুর ওপর ঝুঁকল ও, দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করার চেষ্টা করল।

একটা ছায়া পড়ল ওর সামনে। ঝট করে মাথা তুলল ও। টিকাউ, ওক টিকাউ—হাসছে দোআঁশলাটা। কুৎসিত হাসিতে দু’চোখের কোণ কুঁচকে গেছে ওর।

হেনরী রাইফেলটা গুহার দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখল টিকাউ। নিশ্চিন্ত বোধ করছে এরিখের হাতে অস্ত্র নেই দেখে। এরিখের স্পেন্সার কিংবা স্টার দুটোই ওর নাগালের বাইরে। টিকাউ মেক্সিকান চুচিলাটা বের করল কোমর থেকে। নোংরা একটা বুড়ো আঙুলে ধার পরীক্ষা করল ছুরিটার।

‘এইবার,’ নিচুস্বরে বলল টিকাউ। ‘এবার আর রক্ষা নেই তোমার, মিস্টার!’

এরিখের দিকে এগোল ও আস্তে আস্তে। এরিখ ওঠার চেষ্টা করতেই ওর পাঁজরে বুটের গুঁতো লাগাল। গড়িয়ে সরে যেতে যেতে দুর্বল দু’হাতে ওর গোড়ালি ধরে টান দিল এরিখ। গাল বকল দোআঁশলা, কোনমতে টাল সামলাল পিছিয়ে দেয়ালের সাথে ভিড়ে গিয়ে। এরিখ উঠে দাঁড়াল সেই ফাঁকে। ছুরিহাতে আঘাত হানতে উদ্যত লোকটার মুখোমুখি হলো। আশ্চর্য রকমের ক্ষিপ্রতার সাথে ওকে আঘাত করল টিকাউ। ওর বাম বাহু থেকে রক্ত বেরোল ফিনকি দিয়ে। টিকাউ হাসল। ‘মশকরা করলাম মাত্র!’ আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল।

নিচু হয়ে স্টারের দিকে ঝাঁপ দিল এরিখ। কিন্তু টিকাউ সাপের মতই ক্ষিপ্র, এরিখের হাত স্টারের কাছে পৌছার আগেই ওটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে, আঘাত করল ওর হাতে। আঘাতটাকে উপেক্ষা করে সোজা হয়ে দাঁড়াল এরিখ, মুখোমুখি হলো দোআঁশলার।

খালি হাতেই টিকাউ ভয়ঙ্কর, তায় আবার ওর হাতে ছুরি। কৌশল পাল্টাল এরিখ। ওকের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে ওর চারদিকে ঘুরতে শুরু করল সে, রেসলারের ভঙ্গিতে। উভয়ে উভয়ের দুর্বলতা খুঁজছে। নিঃশ্বাসে ফ্যাঁস-ফ্যাস শব্দ হচ্ছে এরিখের। একটা শীতল ভয়ের স্রোত শিরশির করে নামছে শিরদাঁড়া বেয়ে।

‘ভয় পাচ্ছ?’ ফ্যাসফ্যাসে গলায় প্রশ্ন করল টিকাউ। ‘চাইলে ব্যাপারটা সহজে চুকিয়ে ফেলতে পারি আমি। কিন্তু ওতে মজা পাওয়া যাবে না, না?’

ঝিক করে উঠল ওর ছুরির ফলা, পিছিয়ে গেল এরিখ চকিতে। টিকাউ দাঁত বের করে হাসল। সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে ওকে। নিজের বিজয় সম্পর্কে ও পুরোপুরি নিশ্চিত। এরিখকে নিয়ে খেলছে ও, বিড়াল যেমন মারার আগে ইঁদুরকে নিয়ে খেলে। নিচু স্বরে কথা বলল, ‘খুব শিগগিরই,’ জো রীভসের মৃতদেহের দিকে মাথা ঝাঁকাল ও, ‘আমাদের মৃত অ্যামিগোর সঙ্গী হতে যাচ্ছ তুমি।’

দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল এরিখ। ক্ষতস্থানের যন্ত্রণা, আতঙ্ক এবং পরিশ্রমে হাঁপাচ্ছে ও, ফুঁপিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। ক্রূর চোখে তাকাতে তাকাতে দ্রুত এগোল টিকাউ ওর দিকে। ঝপ করে মাথা নিচু করে বেরিয়ে এল এরিখ। টিকাউর ছুরির ফলা পাথরে লাগল ঘ্যাঁচ করে। ঘুরে আবার তাড়া করল সে এরিখকে। এরিখের চালাকি ক্ষিপ্ত করে তুলেছে তাকে। অন্ধের মত ধাওয়া করল সে নিরস্ত্র লোকটাকে। এরিখ ডান দিকে লাফ দিয়ে জো’র লাশ ডিঙিয়ে গেল। লাফ দিল টিকাউ নিজেও, জো’র পাশে চলে এল। ছুরি-হাতে ঘুরতে গিয়ে জো’র ঠাণ্ডা, শক্ত হয়ে যাওয়া পায়ের সাথে ধাক্কা খেলো। ভারসাম্য নড়ে গেল দোআঁশলার, জো’র লাশের পাশে পাথরের ওপর আছাড় খেয়ে পড়ল। বিদ্যুৎ বেগে লাফ দিল এরিখ একটু দূরে পড়ে থাকা জো’র অকেজো শার্পসটার দিকে, তুলে নিল ওটা, তারপর দুর্বল শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে আঘাত হানল টিকাউর খুলিতে। খুলি ফাটার শব্দের সাথে মিশে গেল রক্তপিপাসু লোকটার মরণ আর্তনাদ। মগজ ছিটকে বেরিয়ে এসে এরিখের মুখ ভরিয়ে দিল।

টিকাউর বিস্ফারিত চোখের দিকে তাকিয়ে বসে পড়ল এরিখ। রক্তাক্ত শার্পসটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিল। টিকাউর শরীরের মৃত্যুকালীন আক্ষেপ অসুস্থ করে তুলছে ওকে। ফুঁপিয়ে শ্বাস টেনে মুখ থেকে দু’হাতে রক্ত আর ঘাম মুছল ও, উঠে নিজের স্পেন্সারটা কুড়িয়ে নিল দোআঁশলাটাকে এখন আর ভয় করার দরকার নেই।

‘ওক!’ ডগ চেঁচাল ঝোপের ভেতর থেকে। ‘শেষ করেছ ওকে?’

‘ওক আর তোমার সঙ্গী হবে না, লেইকার।’ ডগের গলা শুনে ওর অবস্থান অনুমান করল এরিখ, গুলি ছুঁড়ল। ‘জো’র সঙ্গী হয়ে গেছে ও। তোমার ইচ্ছে আছে হবার?’

বোবা হয়ে গেল বেঁটে। এরিখ অপেক্ষা করল। কোন সাড়া-শব্দ নেই বেঁটের তরফ থেকে, যেন ডগ লেইকার বলে কেউ নেই ওখানে।

‘ভাগো এখান থেকে,’ খেঁকিয়ে উঠল এরিখ অদৃশ্য লোকটার উদ্দেশে, ‘ওর সঙ্গী হতে না চাইলে!’

‘তুমি শেষ করেছ ওকে?’ ডগ কথা বলে উঠল।

‘ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখো।’

চুপ হয়ে গেল লেইকার। পরপর দুটো গুলি পাঠাল এরিখ আগের লক্ষ্যে। ‘গেলে?’

কোন প্রত্যুত্তর এল না অপর পক্ষ থেকে। আবার গুলি করল এরিখ।

‘ঠিক আছে। যাচ্ছি আমি,’ কথা বলল লেইকার। ‘গুলি কোরো না।’

‘রাইফেলটা ওখানে ফেলে রেখে মাথার ওপর হাত দুটো তুলে দাঁড়াও, ‘ নির্দেশ দিল এরিখ। তারপর হাঁটতে শুরু করো পেছনে না তাকিয়ে। ওদিকের ঢিবিতে তোমার ঘোড়া আছে।’

‘হাহ্!’ শুকনো স্বরে মন্তব্য করল লেইকার। আর অমনি তুমি আমার পাছায় একটা গুলি ঢুকিয়ে দাও। বোকা পাওনি আমাকে।’

‘প্রাপ্তবয়স্ক হওনি এখনও, ব্যঙ্গ করল এরিখ। ‘আমি কি বলছি শোনো। নিরস্ত্র লোকের বুক-পাছা দুটোই সমান। থামল ও। ঠিক আছে। আমার পরামর্শ পছন্দ না-হলে চালিয়ে যাও। এক যাত্রায় দুই ফল হবে কেন? তাতে তোমার বন্ধু মিস্টার ওক টিকাউ নিশ্চয় মাইন্ড করবে।’

কিন্তু চালিয়ে যাবার প্রস্তাবেও সাড়া পাওয়া গেল না লেইকারের তরফ থেকে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল এরিখ, অধৈর্য হয়ে উঠল এরপর। ডাকতে যাবে আবার—এই সময় কথা বলে উঠল অপর পক্ষ। ‘গুলি ছুঁড়বে না তো?’

‘ব্যাত্তেরি, ব্যাটা ভীতুর আণ্ডা কোথাকার!’ বিতৃষ্ণ কণ্ঠে গাল বকল এরিখ। আর মাত্র এক মিনিট সময় দেব। এর মধ্যে দূর না-হলে মত পাল্টে ফেলব আমি।’

আস্তে আস্তে, যেন নিচ থেকে কেউ ঠেলে তুলে দিচ্ছে, উঠে দাঁড়াল ডগ লেইকার। দুই হাত কানের দুই পাশ ঘেঁষে আকাশের দিকে তোলা। এরিখের দিকে তাকাল ও একবার, তারপর হাঁটতে শুরু করল ঝোপের ভেতর দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে পিছু ফিরে চাইবার উপক্রম করতেই ওর মাথার ওপর দিয়ে একটা গুলি পাঠিয়ে দিল এরিখ। ‘পরেরটা কিন্তু ঠিকই পাছায় ঢুকবে, পিছনে ফিরতে চাইলে।

পড়ি কি মরি ছুটল বেঁটে, যেন ভূতে তাড়া করেছে—ঝোপের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল নিমেষে। অপেক্ষা করল এরিখ। কিছুক্ষণ পর ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল পাথুরে মাটিতে। চলে যাচ্ছে লেইকার।

শিস দিল ও। জিস্টারের খুরের শব্দ শোনা গেল আড়াল থেকে। একটু পরেই বেরিয়ে এল ঘোড়াটা। এরিখ গুহার পাশে একটা ঝোপের সাথে বাঁধল ওটাকে। ডগের ফেলে যাওয়া রাইফেলটা নিয়ে আসার কথা ভাবল একবার, পরক্ষণেই বাতিল করে দিল ইচ্ছেটা। দরকার নেই।

জো রীভসের মৃতমুখের দিকে তাকাল ও। ‘সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ, জো, বিড়বিড় করে বলল। ‘কথা দিচ্ছি, তোমার খুনের বদলা নেব।’

গুহার ভেতর থেকে মালপত্র বের করে এনে বাইরে জড়ো করল এরিখ। তারপর মৃতদেহদুটোকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল ভেতরে। আশপাশ থেকে ছড়ানো-ছিটানো পাথরখণ্ড কুড়িয়ে এনে গুহামুখটা বন্ধ করে দিতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগল ওর।

‘ঘুমোও, জো।’ কপাল থেকে ঘাম মুছে সিগার জ্বালাল ও। মৃত্যুর পরের জগৎটা সম্ভবত অন্য রকম। আশা করি, টিকাউ ওখানে আচরণ পাল্টাবে।’

জিস্টারের পিঠে মালপত্র চাপিয়ে নির্জন ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে একটা কথা মনে পড়ল এরিখের। টিকাউ গুহার ভেতর ঢোকার সময় ওর বুটের তলায় লেপ্টে থাকা মাটির দিকে নজর পড়েছিল ওর। হলদেটে কাদামাটি। ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের মাটির রঙ হলুদ নয়, কিছুটা লালচে। টিকাউর বুটে লেপ্টে থাকা মাটির রঙের সাথে এদিকে ওর দেখা অন্য কোন জায়গার মাটির রঙের মিল আছে কিনা মনে করতে চেষ্টা করল ও। গুহামুখ থেকে মাইলখানেক যাওয়ার পর হঠাৎ খেয়াল হলো। রুইন্স ক্যানিয়নের লাগোয়া পাহাড়ের মাটির সাথে মিল আছে টিকাউর বুটের তলায় লেগে থাকা মাটির। জায়গাটায় আরেকবার ভাল করে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিল ও। ডগ কিংবা টিকাউর কি দরকার ছিল ওখানে যাবার? ওদিকে ডব্লিউ বার র‍্যাঞ্চের কোন কাজ থাকার কথা নয়।

ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে জীবনের কোন আলামত আছে বলে মনে হলো না। নির্জন চারদিক। শুধু পাথুরে মাটিতে জিস্টারের শক্ত খুরের আওয়াজ ওকে নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতন রাখছে। আরও কিছুদূর এগিয়ে সদ্যভেজা মাটিতে গরুর পায়ের ছাপ দেখতে পেল ও।

শিস দিয়ে জিস্টারের পিঠ থেকে নামল এরিখ। ঘোড়াটাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দিয়ে মাটিতে ঝুঁকল। বড়সড় একটা গরুর পাল চলে গেছে এ পথ দিয়ে, আন্দাজ করল ও। ট্র্যাক ধরে পাথুরে জমিতে উঠে এল। পাথরের ওপর বুটের ঘষার শব্দে সচকিত হয়ে মাথা তুলতে যাবে, এ-সময় হুকুমটা এল, ‘নড়ো না, মিস্টার। যেখানে আছ, ওখানে দাঁড়াও মাথার ওপর দু’হাত তুলে!’

বিনাবাক্যব্যয়ে নির্দেশ পালন করল এরিখ, ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল ঝোপের আড়ালে একজন মেক্সিকানকে দেখতে পেল রাইফেল হাতে, সোজা ওর পেটের দিকে তাক করা অস্ত্রটা।

‘বস্!’ কাউকে ডাকল মেক্সিকান কাউবয়।

আড়াল থেকে আরেক জোড়া বুটের শব্দ শোনা গেল। পর মুহূর্তে বেরিয়ে এল ‘বস্’ লোকটা। চ্যানি বিয়ারি। ওর সুদর্শন মুখটা হাসিভরা।

‘ওয়েন!’ ডাকল চ্যানি। ‘যা ভেবেছিলাম।’ কাউহ্যান্ডকে নির্দেশ দিল ও, টম, সবাইকে নিয়ে এসো এদিকে। আমি দেখছি একে।’

ঝোপের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল টম। অস্ত্রহাতে বিয়ারি এরিখের পেছনে এসে ওর পিঠে ঠেসে ধরল নল। হোলস্টার থেকে ওর স্টারটা বের করে নিল। বসো, ওয়েন। জানোই তো কার হাতে পড়েছ। অতএব হাত নামিয়ে নিলে আমি আপত্তি করব না।’ তৃপ্তির হাসি হাসল ও। ‘তোমার সাথে অনেক কথা আছে।’

হাত নামিয়ে একটা পাথরের ওপর বসল এরিখ। চ্যানিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে সিগারেট রোল করতে করতে প্রশ্ন করল, ‘তোমার মতলব কী, বিয়ারি? জানতে পারি?’

চ্যানি বসল সামান্য দূরে। ‘কেন পারবে না?’ হাতের অস্ত্র নাড়াল সে। ‘কি করছিলে তুমি এখানে?’

‘এখানে কোথায়?’ এরিখ সিগারেট জ্বালাল।

‘ব্লু বার্ডসে?’ অসহিষ্ণু কণ্ঠে জবাব দিল চ্যানি।

‘থাকার জন্যে জায়গা খুঁজছিলাম।’

‘কারা আছে তোমার সাথে?’

‘কেউ না। আমি একা।’

‘শুধু একা না,’ মন্তব্য করল চ্যানি। ‘তুমি একজন মিথ্যেবাদীও।’

‘একটা সিক্সগান হাতে নিরস্ত্র কাউকে মিথ্যেবাদী বলার মধ্যে কোন ঝুঁকি নেই, না?’

‘তোমার মত,’ থুতু ছড়াল চ্যানি, ‘তিনজনকে আমি খালিহাতে সামলাতে পারি।’

‘হয়তো। তবে আমি আবহাওয়া বুঝে কথা বলি,’ হাসল এরিখ।

‘গরুগুলো কোথায়?’

‘কার গরু?’

‘আমাদের?’

‘তুমি তো দেখছি আচ্ছা গর্দভ!’ অবাক হবার ভান করল এরিখ। গরু তোমাদের আর খবর রাখব আমি, এটা কি করে ভাবছ?’

এরিখের স্টারটাই উঁচাল চ্যানি ওর দিকে। ‘শোনো। গতরাতে আমাদের বিশটা গরু চুরি হয়েছে। এখানে এসে ওদের ট্রেইল গায়েব হয়ে গেছে। তুমি এখানে ঘোরাঘুরি করছ। সঙ্গত কারণেই তোমাকে জিজ্ঞেস করব আমরা ওগুলোর ব্যাপারে। দেখো, আবার বলে বসো না যেন ওদের তুমি ডানা মেলে উড়ে যেতে দেখেছ ব্লু বার্ডস ক্যানিয়ন থেকে। তার চেয়ে বলো, কোথায় রেখেছ গরুগুলো।’

‘কী মুশকিল! আমি কি করে বলব?’

‘তুমি এই অঞ্চলে থাকছ কোন উদ্দেশ্যে? দু’জনকে খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত তুমি। ধরা পড়লে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। কেন লেজ তুলে পালাচ্ছ না?’

‘ওটা তো তুমি বলবেই,’ এরিখ বিতৃষ্ণ স্বরে জবাব দিল। ‘টোকারকে যে তুমি হত্যা করেছ, সেটা আমি জানি কি না।’

হাসল বিয়ারি। ‘ওটা তোমার দায়, আমার নয়। গাস আমার সাক্ষী।’

‘ওকে আমি সত্য বলতে বাধ্য করব।’

‘সে-সুযোগ পাচ্ছ নাকি?’ স্টারটা নাড়াল এরিখ।

‘পাব।’

‘দেখা যাবে!’ স্টারের মাযল দিয়ে নিজের চোয়াল চুলকাল চ্যানি। ভাল কথা, জেরির ব্যাপারে কি বক্তব্য তোমার? ডগ লেইকার আর ওক টিকাউ তো শপথ করে বলেছে যে, তুমি ওকে হত্যা করেছ।’

‘তাই!’

‘হ্যাঁ, তাই। এবার কি বলবে?’

মুখবন্ধ গুহায় জো রীভসের পাশে শোওয়া টিকাউর কথা ভাবল এরিখ। এ-জীবনে সে আর কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সাক্ষী হবার সুযোগ পাচ্ছে না।

পেছনে দু’জন লোক নিয়ে টম টিংকার ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। রস ম্যাস্টন আর পিট গুজম্যান হবে, ভাবল এরিখ। দু’জনের একজন বেঁটে আকৃতির; চ্যানিকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘রুইন্স ক্যানিয়নের ভেতর পর্যন্ত খুঁজে এলাম, বস্। ট্র্যাক আর গরু-দুটোই গায়েব।

‘বাদ দাও, পিট,’ চ্যানি ওকে বলল, ‘ওগুলো এখানে, ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের ভেতরে আছে এখনও। আমরা পিছু ধাওয়া করায় সরিয়ে নেবার সময় পায়নি ওরা,’ এরিখের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চাইল ও।

‘আমারও তাই ধারণা।’ রস ম্যাস্টন তার হ্যাট সরাল পেছনে। ‘তা ছাড়া, আমি মনে করি, ওরা ওগুলো ব্লু বার্ডসেই লুকিয়ে রাখে।’

‘চমৎকার মনে করতে পারো তুমি, রস!’ উপহাসের স্বরে বলল চ্যানি। ‘শুধু, কোথায় রাখে, সেটা দেখিয়ে দিতে পারো না।’

এরিখের দিকে চাইল বেঁটে গুজম্যান। ও হয়তো দেখিয়ে দিতে পারবে।’

‘রাজি হচ্ছে না ও।’

‘আমরা ওকে রাজি করাতে পারি। হাসল টম। ‘সহজ কাজ। দেখতে চাও, বস্?’

‘এখন না।’ চ্যানি মাথা নাড়ল। ‘আমি নিশ্চিত ও এখানে একা নয়। একা ওর পক্ষে অতগুলো গরু সামলানো সম্ভব নয়। ওকে রাজি করাতে চাইলে ওর সঙ্গীরা টের পেয়ে যাবে, নাক গলাতে চাইবে। তারচে’ ওকে পাইনস ভ্যালিতে নিয়ে যাই। ওখানে কেউ খুঁজতে যাবে না।’

এরিখকে ঘোড়ার পিঠে তুলে ঘোড়ার পেটের নিচে ওর দুই পা বাঁধা হলো। দুই হাতও বাঁধা হলো পিছমোড়া করে। টম টিংকার জিস্টারের লাগাম ধরার দায়িত্ব নিল। রুইন্স ক্যানিয়নের প্রবেশ-পথ পেরিয়ে যাবার সময় এরিখ ট্র্যাকগুলো দেখতে পেল আবার। ক্যানিয়নের ভেতর চলে গেছে। কিন্তু কোথায় গেছে? ভাবল ও। চুরি হয়ে-যাওয়া গরুর পাল পেছনে ট্র্যাক রেখে ব্লু বার্ডসের ভেতর দিয়ে রুইন্স পর্যন্ত আসে, তারপরই হাওয়া হয়ে যায় ট্র্যাকসহ। এরিখ তিক্ততার সাথে উপলব্ধি করল, এ ব্যাপারে প্রথম থেকে এ

পর্যন্ত একই জায়গায় ঘুরে মরছে ও। একচুলও এগোতে পারেনি সামনে।

দুপুরের দিকে পাইনস ভ্যালিতে পৌঁছল ওরা। এরিখের পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে ঘোড়া থেকে নামানো হলো ওকে, তারপর ধাক্কা মেরে কুটিরে ঢোকানো হলো। গুজম্যান আর টিংকারকে র‍্যাঞ্চে পাঠিয়ে দিল চ্যানি ওয়েন্ডিকে রিপোর্ট করার জন্যে, তারপর রসকে খাবারের আয়োজন করতে নির্দেশ দিল। সামান্য আয়োজন। রস স্টোভে সীমের বিচি গরম করল। নিজের থালায় খাবার নিয়ে খেয়ে নিল চ্যানি। খাওয়া শেষ করে রসকে বলল এরিখকে খাবার দিতে

‘শুধু শুধু খাবার নষ্ট!’ ঘোঁৎ করে উঠল রস।

‘খেতে দাও ওকে!’ ধমক লাগাল চ্যানি।

মেঝের ওপর থুতু ছড়াল রস ম্যাস্টন। পেটভর্তি খাবার এনে এরিখের সামনে রেখে ওর হাতের বাঁধন খুলে দিল। চ্যানি স্টার তাক করে রাখল ওর দিকে। খাবার শেষ করে সিগার ধরাল এরিখ। ওর ধূমপান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরল চ্যানি। শেষ হতেই ওর ইঙ্গিতে রস বাঁধল আবার এরিখকে। ওকে ভ্যালির শেষ প্রান্তের গরুগুলোর তদারকিতে পাঠিয়ে এরিখের মুখোমুখি হলো চ্যানি। ওর প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে কর্তৃত্বের ছাপ। ডাঁট দেখাচ্ছে সে, এরিখ বুঝতে পারল। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসল ও।

সিগারেট ধরাল চ্যানি। তারপর, ওয়েন! মত পাল্টেছ নিশ্চয় এতক্ষণে। কথা বলবে?’

‘আগে যা বলেছি, তাই বলব,’ জবাব দিল এরিখ। ‘তোমাদের হারানো গরুর খবর আমি রাখিনি।’

‘জো রীভসের সঙ্গে কাজ করোনি তুমি?’

বিস্ময় চাপল এরিখ। রীভসের সম্বন্ধে ও জানল কিভাবে? ‘কী, করোনি?’

‘না।’

‘ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত হারানো গরুর সাথে ওর গায়েব হয়ে যাবার সম্পর্ক রয়েছে।’

‘তুমি নিজেও তো কম জানো না দেখছি?’ ব্যঙ্গ করল এরিখ।

‘আরও জানব।’ গর্বের হাসি হাসল চ্যানি। ‘শিগগির এই জঘন্য চুরির রহস্যভেদ করব আমি। তোমাকে আর চ্যাপম্যানকে সন্দেহ করি, তোমাদের দু’জনকেই কথা বলাব।’

হাসল এরিখ। ‘সেই আনন্দেই থাকো। অচিরেই দেখতে পাবে জ্বলন্ত চুলোর ওপর বসে আছ তুমি। কিভাবে ভাবছ যে, জর্জ চ্যাপম্যান তোমার কথার জবাব দিতে ছুটে আসবে?’

থুতু ফেলল চ্যানি। ‘ঠিকই বলাব।’ ওর গলায় বড়াইয়ের সুর। ‘তুমি দেখতে পাবে না বলে দুঃখিত। তবে এখানকার সবচে’ বড় র‍্যাঞ্চটা যে চ্যানি বিয়ারির হবে, এটা জেনে যেতে পারো নিঃসংশয়ে। ক্রস অ্যারো খুবই সম্ভাবনাময় র‍্যাঞ্চ, ওয়েন।’

‘তাই? কিন্তু এটা তো ওয়েন্ডির র‍্যাঞ্চ। তোমার হচ্ছে কি করে?’

‘আমিই চালাচ্ছি এটা এখন। ওয়েন্ডিও চলবে আমার কথামত।

‘তুমি সেভাবেই এগোচ্ছ বটে!’ তিক্ত কণ্ঠে ওর সঙ্গে একমত হলো এরিখ। ‘আমাকে ভাগিয়েছ চালাকি করে। এরপর নিজের স্বার্থেই পছন্দমত কিছু খারাপ লোক ভাড়া করেছ। সত্যি সত্যিই ক্রস অ্যারো কবজা করবে তুমি।’

নিজের মাথায় টোকা দিল চ্যানি। খুশি হয়েছে সে। ‘আমি চালু লোক, ওয়েন। ভাল জিনিস দেখলেই চিনতে পারি। পেতেও চাই তা। তোমার মত জীবনভর তিরিশ ডলার মাস মাইনের চাকরি আমার পোষাবে না। বড় কিছু পরিকল্পনা ঘুরছে আমার মাথায়, সত্যিকার অর্থেই বড়। আমি ওয়েন্ডিকে বিয়ে করব—আর এই ম্যালোন অঞ্চলের সব চাইতে ডাকসাইটে ধনী হব।’

‘ওয়েন্ডি কি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে?

অসন্তুষ্ট হলো চ্যানি। ‘কেন হবে না? নিজের ভাল-মন্দ না-বোঝার মত নির্বোধ ও নিশ্চয় নয়।’

‘আমি জানি, ও তা বোঝে। এরিখ শুকনো স্বরে মন্তব্য করল।

ওর স্টারটা নাড়াল চ্যানি। ‘বাদ দাও। প্রচুর বকবক করা হয়েছে। এবার মুখ খোলো। শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে তোমাকে।’

‘আমি কিছুই জানি না।’

ডবল-অ্যাকশন স্টারটা কক করল চ্যানি। এরিখের বুক বরাবর সই করল। স্টারের মালটাকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বড় মনে হলো এরিখের 1 চ্যানি ঝুঁকল ওর দিকে। ‘সহজেই মেরে ফেলতে পারি তোমাকে। এ জন্যে আইনের কাছে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। দু’দুটো খুনের আসামী তুমি, আমার হাতে ধরা পড়ে পালাতে গিয়েছিলে, বাধ্য হয়ে গুলি করতে হয়েছে।’ হাসল ও এরিখের মুখের ওপর। ‘ভাগ্য আমার পক্ষে, ওয়েন। তবু তোমাকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি। আমার কাছে মুখ খুললে পঞ্চাশটা সোনার ঈগল পাবে, ঘোড়া পাবে আর পাবে এখান থেকে পালিয়ে যাবার সুযোগ। কি বলো?’

তিক্ত হাসি হাসল এরিখ। ‘তুমি একটা নোংরা শেয়াল। ধাপ্পা দিচ্ছ আমাকে। আমি যদি কিছু জানতামও, বলতাম না তোমাকে। কারণ সব কথা শুনে নেবার পর আমাকে গুলি করে একটু আগে বলা গল্পটা শুনিয়ে দেবে সবাইকে। তাতে তোমার সোনার ঈগল আর ঘোড়া দুটোই বেঁচে যাবে। আর আমি দেশ ছাড়ার বদলে দুনিয়া ছেড়ে যাব চিরতরে।’

গর্জন করে উঠল চ্যানির হাতে এরিখের ডবল-অ্যাকশন স্টার। এরিখের মাথার ওপর কাঠের দেয়াল ভেদ করে বাইরে চলে গেল বুলেট। কানে তালা লেগে ওর। ঠাণ্ডা চোখে স্টারের মুখ থেকে বেরনো ধোঁয়ার দিকে চাইল চ্যানি। ‘ভেব না মিস করেছি। পরের বার টের পাবে,’ গম্ভীর স্বরে বলল ও।

চ্যানির পেছনে দেয়ালের জানালায় একটা ছায়া দেখা গেল। পরমুহূর্তেই এরিখ লোকটাকে দেখতে পেল। অতি কষ্টে মুখের ভাব অপরিবর্তিত রাখল ও। লোকটা ঠোঁটে আঙুল চাপা দিয়ে আওয়াজ করতে নিষেধ করল ওকে। চ্যানির দিকে তাকাল ও।

‘ঠিক আছে। কথা বলব আমি,’ আপোষে এল ও।

‘গুডবয়!’ চ্যানি হাসল, বিজয়ীর হাসি। ‘গরুগুলো কোথায়?’

‘ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের এক জায়গায়।’

‘কিভাবে যেতে হবে ওখানে?’

‘আমি নিয়ে যাব তোমাদের।’

‘কতগুলো আছে ওখানে?’

‘পাঁচশোর মত হবে।’

মাথা দোলাল চ্যানি। রিস এসে পড়লেই যাব আমরা। খবরদার, ধাপ্পা দেবার চেষ্টা করলে কিন্তু সোজা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেব।’

সিক্সগানহাতে দরজায় এসে দাঁড়াল গাস ল্যামেল। ‘অস্ত্র ফেলে দাও! উঁহুঁ, নড়বার চেষ্টা কোরো না, বাছা। খুলি ফুটো করে দেব। ফেলে দাও ওটা হাত থেকে।’

মরা মানুষের মুখের মত শাদা হয়ে গেল চ্যানি বিয়ারির উজ্জ্বল মুখ। দ্রুত পরিস্থিতি বিচার করল ও। স্টারের মুখ ফিরিয়ে গাসকে গুলি করার আগে নিজেই গুলি খাবে ও-কিংবা ওয়েনকে গুলি করলেও। স্টারের বাঁট ছেড়ে দিল ও হাত থেকে, ঠকাস করে পায়ের কাছে পড়ল অস্ত্রটা।

‘হাত তোলো ওপরের দিকে। উঠে দাঁড়াও।’

গাসের আদেশ পালন করল চ্যানি। গাস এগিয়ে গিয়ে পাঁজরায় পিস্তল ঠেকিয়ে ওর কোমর থেকে হোলস্টার খুলে নিল। দূরে ফেলে দিল ওটা। পিস্তল তাক করে পিছিয়ে এসে কোমর থেকে ছুরি বের করে এরিখের হাতের বাঁধন কেটে দিল। উঠে দাঁড়াল এরিখ; স্টারটা তুলে নিল মেঝে থেকে।

‘নিজের মৃত্যু-পরোয়ানায় সই করলে, ল্যামেল,’ এতক্ষণে কথা বলল চ্যানি।

জবাবে একদলা থুতু ছড়াল গাস। ‘ওকে বাঁধো, এরিখ।’

এরিখ তাকে বাঁধা রশি দিয়েই বাঁধল চ্যানিকে। চ্যানির চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে। মুচকি হেসে ওকে উপেক্ষা করল এরিখ।

আবার থুতু ছড়াল গাস। ‘চলো, এরিখ,’ বলল ও, ‘বাইরে তোমার ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে।’

ঘোড়ায় চড়ে ভ্যালি থেকে বেরিয়ে এল ওরা। এরিখ সঙ্গীর অসংখ্য ভাঁজে ভরা কৃশ মুখটার দিকে তাকাল। ‘কেন এটা করতে গেলে, গাস?’

হাত নেড়ে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করল গাস। ওই বাকোয়াজ ছোঁড়াটা ক্রমশ অতিষ্ঠ করে তুলেছে আমাকে। তাছাড়া মিথ্যে কথা বলে তোমাকে ফাঁসানোর পর থেকে আমার ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ আমার মত বেজন্মা বুড়োদের জন্যে ঘুমটা খুব জরুরী। যা-ই হোক, আমি তোমার সাথেই থাকব, ওয়েন। র‍্যাঞ্চে ফিরছি না আর।

‘চলো,’ রাজি হলো এরিখ। ‘কিন্তু জানলে কি করে যে, আমি পাইল ভ্যালিতে আছি?’

‘গুজম্যান র‍্যাঞ্চে গিয়ে গল্প করেছিল।’

‘তারপর?’

‘আমি ভেবেছিলাম তুমি স্বর্গের টিকেট পেয়ে গেছ এতক্ষণে!’ হাসল গাস শব্দ করে।

আচমকা রাশ টানল এরিখ। ‘আমাদের সম্ভবত ওয়েন্ডির কাছে যাওয়া উচিত।’

‘না,’ মাথা নাড়ল গাস। ‘প্রয়োজন নেই। ও সব জানে।’

‘তুমি আমাকে সাহায্য করতে আসছ, ও জানত?’ এরিখ অবাক হলো।

‘হ্যাঁ!’ গাসও অবাক হলো। ‘ওই তো পাঠাল আমাকে।’

‘চলো, গাস। ক্রস অ্যারো থেকে ওই বেজন্মাগুলোকে দূর করে দিই।’

‘এখন না, এরিখ,’ গাস কোমল কণ্ঠে ওকে বোঝাল। ‘তোমার মনের অবস্থা বুঝি। কিন্তু আগে সময় আসুক। শুনলাম, তুমি নাকি টিকাউকে খুন করেছ। ডগ লেইকার খেপিয়ে তুলেছে ডব্লিউ বারের লোকদের। তোমাকে এই সময় র‍্যাঞ্চে পেলে র‍্যাঞ্চই আক্রমণ করে বসবে ওরা। একটু থামল গাস। ‘সত্যি সত্যি খুন করেছ তুমি ওকে?’

‘হ্যাঁ, গাস।’ বুড়োর যুক্তি উপলব্ধি করতে পারল এরিখ। শুকনো স্বরে বলল, ‘আমি ওকে খুন করতে না পারলে ওই আমাকে খুন করত।’

‘আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু ওরা করবে না।’

দ্রুতবেগে এগোল ওরা খাঁড়ি পেরিয়ে দক্ষিণে। এরিখ তার সঙ্গের বন্ধুবৎসল লোকটার দিকে চাইল আবার। ও সময়মত না এলে এতক্ষণে মরে পড়ে থাকত সে, নিজেরই অস্ত্র থেকে বেরোনো গুলিতে কপালে কিংবা বুকে ফুটো নিয়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *