শ্রীমতী মমতা সেনের বিবাহ-উপলক্ষে
আশ্রমের হে বালিকা,
আশ্বিনের শেফালিকা
ফাল্গুনের শালের মঞ্জরি
শিশুকাল হতে তব
দেহে মনে নব নব
যে মাধুর্য দিয়েছিল ভরি,
মাঘের বিদায়ক্ষণে
মুকুলিত আম্রবনে
বসন্তের যে নবদূতিকা,
আষাঢ়ের রাশি রাশি
শুভ্র মালতীর হাসি,
শ্রাবণের যে সিক্তযূথিকা,
ছিল ঘিরে রাত্রিদিন
তোমারে বিচ্ছেদহীন
প্রান্তরের যে শান্তি উদার,
প্রত্যুষের জাগরণে
পেয়েছ বিস্মিত মনে
যে আস্বাদ আলোকসুধার,
আষাঢ়ের পুঞ্জমেঘে
যখন উঠিত জেগে
আকাশের নিবিড় ক্রন্দন,
মর্মরিত গীতিকায়
সপ্তপর্ণবীথিকায়
দেখেছিলে যে প্রাণস্পন্দন,
বৈশাখের দিনশেষে
গোধূলিতে রুদ্রবেশে
কালবৈশাখীর উন্মত্ততা —
সে-ঝড়ের কলোল্লাসে
বিদ্যুতের অট্টহাসে
শুনেছিলে যে-মুক্তিবারতা,
পউষের মহোৎসবে
অনাহত বীণারবে
লোকে লোকে আলোকের গান
তোমার হৃদয়দ্বারে
আনিয়াছে বারে বারে
নবজীবনের যে আহ্বান,
নববরষের রবি
যে উজ্জ্বল পুণ্যছবি
এঁকেছিল নির্মল গগনে,
চিরনূতনের জয়
বেজেছিল শূন্যময়
বেজেছিল অন্তর-অঙ্গনে,
কত গান কত খেলা,
কত-না বন্ধুর মেলা,
প্রভাতে সন্ধ্যায় আরাধনা,
বিহঙ্গকূজন-সাথে
গাছের তলায় প্রাতে
তোমাদের দিনের সাধনা,
তারি স্মৃতি শুভক্ষণে
সমস্ত জীবনে মনে
পূর্ণকরি নিয়ে যাও চলে,
চিত্ত করি ভরপুর
নিত্য তারা দিক সুর
জনতার কঠোর কল্লোলে।
নবীন সংসারখানি
রচিতে হবে যে জানি
মাধুরীতে মিশায়ে কল্যাণ,
প্রেম দিয়ে প্রাণ দিয়ে
কাজ দিয়ে গান দিয়ে
ধৈর্য দিয়ে, দিয়ে তব ধ্যান, —
সে তব রচনা-মাঝে
সব ভাবনায় কাজে
তারা যেন উঠে রূপ ধরি,
তারা যেন দেয় আনি
তোমার বাণীতে বাণী
তোমার প্রাণেতে প্রাণ ভরি।
সুখী হও, সুখী রহো
পূর্ণ করো অহরহ
শুভকর্মে জীবনের ডালা,
পুণ্যসূত্রে দিনগুলি
প্রতিদিন গেঁথে তুলি
রচি লহো নৈবেদ্যের মালা।
সমুদ্রের পার হতে
পূর্বপবনের স্রোতে
ছন্দের তরণীখানি ভ’রে
এ প্রভাতে আজি তোরি
পূর্ণতার দিন স্মরি
আশীর্বাদ পাঠাইনু তোরে।